একটা বেডসিন থাকবে

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি
লিখেছেন পান্থ রহমান রেজা (তারিখ: রবি, ০৫/০৭/২০০৯ - ৭:৩৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আপনারদের রবি ভাইয়ের গল্প এর আগে বলেছিলাম। ওই যে ছবির হাটে, প্রেমিক- প্রেমিকার ঝগড়ার যে গল্পটি আপনাদের বলেছিলেন। তবে এই গল্প রবি ভাইয়ের নয়, তার বন্ধু আলী নেওয়াজকে নিয়ে। সেও রবি ভাইয়ের মতো ডিজিটাল চলচ্চিত্র নিয়ে ভাবছে, স্বপ্ন দেখছে একটা ডিজিটাল সিনেমা বানানোর। ছবির হাটে একদিন আড্ডা দিচ্ছি। রবি ভাইয়েরাও যে পাশে গপসপ করছেন, তা খেয়াল করিনি। রবি ভাই ডাক দেন। কাছে গেলে আলী নেওয়াজের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। পরিচয় দেয়ার সময় রবি ভাই বলেন, চিনে রাখ এই আলী নেওয়াজরে। ও একদিন বাংলাদেশের সেরা সিনেমা পরিচালক হবে। তখন তো পাত্তা পাবি না। এখনই একটু চিন-পরিচয় করে রাখ। পরে সবাইকে বলতে পারবি।

সেদিনই প্রথম আলী নেওয়াজের সাথে পরিচয় হয়। বিকেলটা ছিল ম্লান, গুমোট বাঁধা। ভ্যাপসা গরমে গা ভিজে জবজবে অবস্থা। আলী নেওয়াজের দিকে হাত বাড়িয়ে দিই। হালকা-পলকা একটা হাত। বিশ্রীভাবে হাতে নীলচে রগ জেগে আছে। আলী নেওয়াজ বেশ আন্তরিক। তাই সে বিখ্যাত হলেও পাত্তা পাওয়া যাবে না, আমার এমনটি মনে হয় না। বেশ সাদাসিধা ধরনের লোক সে। কথা বলায়ও তেমন স্মার্ট নয়। নিচু স্বরে কথা বলে। আর ভীষণ রকম অর্ন্তমুখী। একটা বক্তব্য পরিষ্কার করতে গিয়ে আরেকটা বিষয়ে ঢুকে পড়ে আসল বক্তব্যটাই আউলিয়ে ফেলে। এইসব ব্যাপার-স্যাপার দেখে আমার মনে হয় না, সে সেরা সিনেমা নির্মাতাদের একজন হতে পারবে। কথাবার্তায় চতুরতা না থাকলে এই যুগে বড় কেউকেটা হওয়া যায়! তবে সিনেমা নিয়ে তার স্বপ্নটা যে খাঁটি সে ব্যাপারে সন্দেহ নাই। আর এই স্বপ্নের পেছনে সে পরিশ্রম দিচ্ছে, তার সাথে দু’দিন মিশলে আপনিও মানবেন। একটা সিনেমা বানানোর স্বপ্নে কত রাত যে নির্ঘুম গেছে! স্ক্রিপ্ট লিখতে কতবার কাটাকুটি করে কত পৃষ্ঠা যে পাঁচতলার বারান্দা থেকে উড়িয়ে দিতে হয়েছে!

একদিনের কথাই বলি। দুপুরবেলা। ঢাকা মেডিকেল থেকে ফিরছি আমি আর মাসুদ। মাসুদের এক আত্মীয় অসুস্থ। রক্ত দিতে গেছিলাম। মাথার উপরে কটকটে রোদ। রিক্সা চারুকলা পাস করতে করতে দেখি, আলী নেওয়াজ সামনের ফুটপাতে বসে আছে। একা। ‘আরে নেওয়াজ ভাই যে, তা এই দুপুরে রোদ মাথায় নিয়া কী করতেছেন?’ একবার আমার দিকে উদাসীনভাবে তাকান। তারপর খানিকক্ষণ চুপ করে বসে থাকেন। মুখ দিয়ে কোনো কথা জোটে না। যেন আমি তার ধ্যানমগ্ন মুডটা নষ্ট করে দিয়েছি। তবে খানিকক্ষণ পরেই তার নীরবতার অবসান ঘটে। তিনি বলেন, ‘বুঝলা পান্থ, হাই নুন ছবিতে এরকম একটা দৃশ্য আছে। দুপুরবেলা। রোদ বেশ তাতিয়ে উঠেছে। একটা রেলস্টেশনে সবাই অপেক্ষা করছে ট্রেনের। কিন্তু ট্রেন আসছে না। ওদিকে ঘড়ির কাঁটা ঢং ঢং করে বাজছে। ঢং ঢং করে ঘণ্টা বাজার দৃশ্যটা বারে বারে দেখাচ্ছে। আর লোকজনের উদ্বিগ্ন চোখ মুখ। বুঝলা, এই দুপুরের রোদ দেখে সেই সিনেমার কথা মনে পড়ল। উফ, কী বলবো, তোমাকে!’

এতক্ষণের কথাবার্তায় আপনার হয়তো মনে হতে পারে, আলী নেওয়াজ বুঝি আর্ট ফিল্ম করার স্বপ্ন দেখছে। এই ফিল্ম দিয়ে সে বিদেশ থেকে পুরস্কার-টুরস্কার জিতে প্রথম আলোর আনন্দ পাতায় ঢাউস একখান ইন্টারভিউ দিবে। এই ইন্টারভিউ আর পুরস্কার জেতার খবর পড়ে সবাই তাকে অন্যরকম চোখে দেখবে। এরকম যদি আপনি ভেবে থাকেন, আপনার ভাবনায় আমাকে খানিকটা হস্তক্ষেপ করতেই হচ্ছে। সরি! আলী নেওয়াজের স্বপ্ন এমন নয়। দারিদ্র্য, মুক্তিযুদ্ধ, এসিড সন্ত্রাস, নারী নির্যাতন আর বন্যা-খরাকে পুঁজি করে তথাকথিত আর্ট ফিল্ম বানিয়ে বোদ্ধাদের দৃষ্টি আর্কষণ করতে চায় না সে। সে আসলে আমাদের শহরে জীবনের নানা জটিলতাকে, সেই জটিলতার ঘূর্ণিপাকে পড়ে মানুষজনের ক্রমশ একা হয়ে যাওয়ার দৃশ্যটি দৃশ্যমান করতে চায়। আমার-আপনার মনে হতে পারে, এই স্বপ্নটা তেমন আর কী স্বপ্ন। এতো খুব সহজ। আমরা শহুরে লোকেরা তো এই দৃশ্যের ভেতর দিয়েই যাচ্ছি। শুধু সেখান থেকে তুলে আনলেই হয়। কিন্তু এই তুলে আনার কাজটা কিছুতেই আমাদের দৈনন্দিন জীবনের মতো করে তুলে আনতে পারছে না আলী নেওয়াজ। সেজন্য সে দিস্তার পর দিস্তা কাগজ শেষ করছে। তবে আমরা জানি, আলী নেওয়াজ একদিন তা তুলে আনতে পারবে। অন্তত যেখানে তার বন্ধু জুবায়ের আহসান আছে। ওহ্ হো, আপনাদের তো জুবায়ের ভাইয়ের কথা বলা হয়নি। যদিও এই গল্পে জুবায়ের ভাইয়ের পরিচয় অতটা জরুরি নয়। তাকে ছাড়াও গল্প হু হু করে এগিয়ে যেতে পারে। তবে তার কথা যখন এসেছে, একটুক্ষণ দাঁড়িয়ে তার সাথে হ্যান্ডশেকটা করেই যাই, কী বলেন?

জুবায়ের ভাই অবশ্য শিল্প সাহিত্যের লোক নন। একটা বায়িং হাউজে কাজ করেন। মার্চেন্টডাইজার। সারাক্ষণ দৌড়াদৌড়ির চাকরি। সেই চাকরি থেকে বাসায় ফেরেন রাত ১০/১১টায়। তারপর খেয়েদেয়ে আলী নেওয়াজকে ফোন দেন। প্রতিদিনই তার একই রুটিন। রাতে খেয়ে আলী নেওয়াজকে ফোন দেয়া। আর আলী নেওয়াজের কাছ থেকে স্ক্রিপ্টের অগ্রগতি শুনে তাকে উস্কে দেয়া। অথবা বলা, ‘দোস্ত, এই ঘটনাতো আমরা বাস্তবে এভাবে ঘটতে দেখি। তুই কি একটু ক্রসচেক করবি। আর বেশি ভাবিস না, দেখিস একদিন হয়ে যাবে। লেগে থাকলে সব হয়। আর তোকে তো বলছিই, আকরাম আংকেলের সাথে এই লাইনে অনেকের পরিচয় আছে, তিনি একটা কিছু করে দিতে পারবেন।’

জুবায়ের ভাইয়ের এরকম উৎসাহে আলী নেওয়াজ ভরসা পায়। আর সেই ভরসাতেই সে স্ক্রিপ্ট নিয়ে কাটাছেঁড়া করে। এমনকি যার এই স্ক্রিপ্টে হিরোইন হয়ে উঠার একটা সম্ভাবনা ছিল, কাটাছেঁড়ায় সেই বীথি চরিত্রটিকেও বাদ দেয়। বীথিকে বাদ দিতে আলী নেওয়াজের অবশ্য খুব কষ্ট হয়। কান্নাও পায়। এই বীথির সাথে একসময় একটা উষ্ণ সম্পর্ক ছিল। কিন্তু সামাজিক কিছু ব্যাপার-স্যাপার মেনেই বীথি আজ প্রবাসী কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের ঘরণী। তবে লেখক মাত্রই কসাই, নির্মোহ সত্যবাদী, এই সত্যের মাঝেই আলী নেওয়াজ সান্ত্বনা খুঁজে পায়। খুঁজে পায়, না আশ্রয় খোঁজে তা অবশ্য আলী নেওয়াজ না বললে পরিষ্কার হয় না। তবে আলী নেওয়াজ এ বিষয়ে মুখ খুলবে আমরা যারা আলী নেওয়াজকে চিনি, তারা এই বিশ্বাস আনতে পারি না। এটা আপনারাও জানেন অবশ্য। কেননা, আলী নেওয়াজ যে চূড়ান্ত অর্ন্তমুখী মানুষ, সেটা আপনারা ইতিমধ্যেই জেনেছেন। তবে বীথির কথা না জানলেও ফারজানা নাজের কথা আমরা একটু পরেই জানবো। যদিও ফারজানা নাজ এই গল্পে একটা আলগা চরিত্র হিসেবে এসেছে।

ফারজানা নাজ মেয়েটা কেমন তা আলী নেওয়াজও ঠিক বুঝতে পারে না। অথচ তার সাথে আজ চার বছর ধরে প্রেম চলছে। এই সময়ের মধ্যে তার তো বুঝে যাওয়ার কথা। কিন্তু ঘটনা ঘটেছে উল্টো। এই চার বছরে ফারজানা আরো বেশি বদলে গেছে। আরো বেশি জটিলতর হয়ে উঠেছে। এটা অবশ্য আলী নেওয়াজের ভাষ্য। আমাদের এই ভাষ্যের ওপরেই আপাতত বিশ্বাস রাখতে হচ্ছে। কেননা, এ গল্পে নামের উল্লেখ ছাড়া যেহেতু ফারজানা নাজ বিষয়ে আর কোনো কিছু আমরা জানি না। ফারাজানা নাজের সাথে প্রথম পরিচয়ের ছবি আলী নেওয়াজের স্পষ্ট মনে আছে। তার মনে পড়ে, ফিল্ম সোসাইটিতে যেদিন ফারজানার সাথে পরিচয় হয়, তখন সে এমনটা ছিল না। তখন সে থার্ড ইয়ারে পড়ে। বন্ধুদের সাথে দল বেঁধে সিনেমা দেখতে এসেছিল। সেবার ফিল্ম সোসাইটি কুরোশাওয়াকে নিয়ে একটা ফিল্ম উৎসবের আয়োজন করে। শো শুরু হওয়ার আগে কুরোশাওয়ার ছবির নন্দনতত্ত্ব নিয়ে কিছু কথা বলতে হয়েছিল আলী নেওয়াজকে। ওই বক্তব্য শুনেই শো শেষে ফারজানা এসে পরিচিত হয়েছিল আলী নেওয়াজের সাথে। ততদিনে বীথি চলে গেছে। বীথির চলে যাওয়ার কষ্টটা সারাক্ষণ কাঁটা হয়ে বাজে। তবে ফারজানার যেচে পরিচয় হওয়ার আগ্রহটাই আলী নেওয়াজের বুকের ভেতরটা মোচড়ে উঠে। ফলে সে প্রেমের দিওয়ানা হয়ে পড়ে। ফারজানার তরফ থেকেও সাড়া মেলে। কারণ মিডিয়ার লোকদের প্রতি একটা ফ্যাসিনেশন তার ভেতরে আগে থেকেই ছিল। যদিও সে নিজে এই লাইনে কিছু একটা করবে এমনটা কখনো ভাবেনি। তার লাইন ছিল ভিন্ন। মার্কেটিং এ বিবিএ শেষ করে একটা মাল্টিন্যাশনালে চাকরি করবে, কয়েক বছর পর ম্যানেজার পজিশনে চলে যাবে, গাড়ি হবে, ফ্ল্যাট কেনার চেষ্টা করবে, এমন একটা স্বপ্ন দেখতো ফারজানা। এই স্বপ্ন তেমন বড় কোনো স্বপ্ন নয়, বিশেষত বিবিএ, এমবিএ করে যারা চাকরিতে যায়। ফারজানা নাজ তেমনটাই মনে করে। কিন্তু মুশকিল হয়েছে আলী নেওয়াজকে নিয়ে। ফারজানা নাজ ভালো করেই জানে এই স্বপ্ন সফল করতে একজন তেমন পার্টনার তার চাই। আলী নেওয়াজ কি তেমন পার্টনার হতে পারবে? ফারজানা নাজ ভেবে কুল পায় না। কারণ আলী নেওয়াজের সমস্ত স্বপ্ন সিনেমা নিয়ে। তাই একটি টেলিকম কোম্পানিতে সদ্য এক্সিকিউটিভ হিসেবে যোগ দেয়া ফারজানা নাজের স্বপ্নটা শুরুতেই তেরছাভাবে হোঁচট খেয়ে পড়ে থাকে। সে কারণে আলী নেওয়াজকে অনেকভাবে বোঝানোর চেষ্টা করে, ফিল্মের স্বপ্ন বাদ দিয়ে একটা চাকরি নিয়ে গৃহচারী হওয়ার চাপ দেয়। প্রতিবার আলী নেওয়াজ ফসকে যায়। অপেক্ষার প্রহর শেষে হাই নুনের হুইসেল বাজিয়ে ট্রেন আসার দৃশ্যটি বারবার ফিরে আসে তার কাছে।

ফসকে যাওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে আলী নেওয়াজের। তার স্ক্রিপ্ট ফাইনাল হয়েছে। আকরাম আংকেলের সাথে পরিচয়ও করিয়ে দিয়েছে জুবায়ের ভাই। আকরাম আংকেল আশ্বস্ত করেছেন সব হয়ে যাবে। তার বন্ধু ইকবাল হাসান এখন দেশের বাইরে। সে একজন নামকরা প্রডিউসার। বক্স অফিস হিট কয়েকটা ছবিতে টাকা ঢেলেছে। আকরাম আংকেলের কাছের বন্ধু। আকরাম আংকেলের কথা তিনি ফেলতে পারবেন না। তাছাড়া আংকেল নিজেই বলেছেন, সে যখন আশ্বস্ত করতেছে, তাহলে ধরে নিতে হবে কাজ অর্ধেক হয়ে গেছে।

কাজ অর্ধেক হয়ে গেছে, আমরা কী আর চুপচাপ বসে থাকতে পারি। একটু তো পান-টান করতেই হয়। তো একটু পিকক থেকে ঘুরে আসি। তবে যাওয়ার আগে রবি ভাই সমকালের বিনোদন সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী আর সাপ্তাহিক ২০০০-এর নুরুজ্জামান লাবুকে ফোন করে নিয়ে আসে। আমাদের মধ্যবিত্ত জীবনের ঘরোয়া জটিলতা নিয়ে এতো সুন্দর একটা ছবি নির্মাণ হতে যাচ্ছে, তার নিউজ পত্রিকায় যাবে না, তাই কী হয়!

পরেরদিন পত্রিকায় নিউজ বের হয়। সাথে ইনসার্ট করা আলী নেওয়াজের হাস্যোজ্জ্বল মুখ। নাকের ডগায় চশমা ঝুলানো। বিনোদন পাতায় এমন ছবি দেখতে খ্যাতিমান পরিচালক পরিচালকই লাগবে, তাই না? তবে আলী নেওয়াজের নিজের কী মনে হয়, তা অবশ্য জানা যায় না। সকালে পরিচিত অনেকের ফোনে তার মোবাইল ফোনটা ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

সপ্তাহ দুয়েক পরে ইকবাল হাসান দেশে ফেরেন। তারও দুইদিন পরে আকরাম আংকেলের ফোন আসে। ইকবাল হাসানের অফিসের ঠিকানা দিয়ে দেখা করার সময়টা জানিয়ে দেন। জুবায়ের ভাইকে না পেয়ে রবি ভাইকে নিয়ে আলী নেওয়াজ ইকবাল হাসানের কাকরাইল অফিসে যান। বেশ পরিপাটি করে সাজানো অফিস রুম। ইকবাল হাসানকেও বেশ আন্তরিক মনে হয়। তিনি জানান, স্ক্রিপ্টটা তার পছন্দ হয়েছে। আপনার কাজটা বেশ অন্যরকম হবে। গতানুগতিক ধারার ফর্মুলা সিনেমা না। নাগরিক জীবনের এই জটিল বিষয়গুলো আপনি সুন্দরভাবে তুলে এনেছেন। একে যদি ঠিকঠাকমতো ভিজুয়ালাইজড করা যায়, তবে একখান সেই রকম সিনেমা হবে বলতে বলতে ইকবাল হাসান বুড়ো আঙুল তুলে থাম্বস আপ দেখান।

ইকবাল হাসানের কথা শুনে আলী নেওয়াজ উচ্ছ্বসিত হয়। ওদিকে রবি ভাই, আলী নেওয়াজের থাইতে চাপর মেরে অভিনন্দিত করে। ইকবাল হাসান আবার বিরতি দিয়ে বলেন, ‘আমি এই সিনেমা প্রডিউস করতে চাই। যত টাকাই লাগুক। তবে ইয়ে, আলী নেওয়াজ, জানেননি তো, এতো টাকা ইনভেস্ট করবো, সেটা উঠে আসার একটা গ্যারান্টিতো থাকা চাই। এজন্য আমি ভাবছি, একটা বেডসিন রাখবো। আপনি একটু দেখুন না কোথাও বেডসিন ঢুকানো যায় কী’না। বোঝেন ই তো, বেডসিন থাকলে দর্শকরা ছবি দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়বে। আর যদি বেডসিন না রাখতে পারেন, তবে দেখেন অন্য কেউ প্রডিউস করে কী’না।’

আলী নেওয়াজ আর রবি ভাই পরস্পর মুখ চাওয়াচাওয়ি করে।


মন্তব্য

নিবিড় এর ছবি

কেন যে আমাদের স্বপ্ন গুলা এমন বেডসিনের কাছে থমকে যায়। গল্প ভাল লাগছে পান্থ ভাই। আপনার দেখি চুলের সাথে সাথে হাতও পাঁকছে চলুক


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

ওই মিয়া আমার চুল পাকছে কে কইলো তোমারে। বিয়ের বাজারে আমার বারোটা বাজিয়ে দিতে চাও নাকি! চোখ টিপি

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

বড় সাইজ দেখে এড়িয়ে যাচ্ছিলাম। কী মনে করে পড়া শুরু করলাম। তোমার লেখার কোয়ালিটি দিন দিন ১০মাইল করে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

হেহেহেহে পিপিদা।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

হুমম। বেডসিন থাকা খুব জরুরি। না থাকলে অন্তত একটা বৃষ্টিভেজা গান আর একটা গুণ্ডা-কর্তৃক-নায়িকাকে-তুলে-নিয়ে-যাওয়া সিন তো রাখতেই হবে। নাইলে ছবি চলবে কীভাবে? ইকবাল হাসান তো বেশ বাস্তব বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ। চোখ টিপি

গল্প ভাল্লাগছে। তবে একটু তাড়াহুড়াতে শেষ হলো না?

অফটপিক: আপনি অ্যাম্নে চারুকলার দিকে নজর দিছেন কেন? ঢাকা শহরে আর কোনো জায়গা নাই? দাঁড়ান, চারুকলার সামনে দিয়া যাতে আর রিক্সা না চলে, সেই ব্যবস্থা করতেছি চিন্তিত

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

সেইদিন দুপুরবেলায় চারুকলায় তো টুশির সাথে আপনাকেও দেখছি। কিছু তো কই নাই। আপনার প্রেমপর্বেও ডিস্টার্ব করি নাই। তাইলে এমুন করেন ক্যান। দেঁতো হাসি

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

আপনার আসলে চোখের ডাক্তার দেখানো লাগবে মন খারাপ

নিবিড় এর ছবি

চারুকলা আর টিউশনী সব গল্পই আমার স্টকে আছে তাই বালকদ্বয় সাবধান দেঁতো হাসি


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

কেন যে আমাদের স্বপ্ন গুলা এমন বেডসিনের কাছে থমকে যায়।

হায়রে বেডসিন!... নিবিড় ভাইয়া ঠিকই বলেছেন... মন খারাপ

--------------------
কালো যদি মন্দ তবে
কেশ পাকিলে কান্দ কেনে?

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

নিবিড় ভাইয়া ঠিকই বলেছেন... এইপর্যন্ত ঠিক আছে। কিন্তু আপনার সিগনেচারে এসে তো নিবিড়ের শেষের কথাটুকু মনে পড়ে দুঃখ পাইলাম। হাসি

এনকিদু এর ছবি


পাঁচ


একটা গান ছিল -
" একটা দুষ্টু সিন ঢোকান দাদা, একটা দুষ্টু সিন "

গানটার কথা মনে করিয়ে দিলেন ।


টেলিকমের চাকরি মানেই কাঁচা টাকা ? ফ্ল্যাট, গাড়ি বাড়ি ?


আমিও একদিন আপনার গালি খাব মনে হচ্ছে ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

০. ধন্যবাদ।
১. দুষ্টু গানটা ভালো পাই।
২. অনেকের সেরকম ধারণা। ফারজানা নাজ সেরকম একজন পাবলিক।
৩. কেনু কেনু কেনু?

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি
মণিকা রশিদ এর ছবি

অনেক কিছু মনে ভাবছিলাম গল্পটি নিয়ে, সাজিয়ে লিখে উঠতে পারছিনা। ভালোলাগা জানিয়ে গেলাম।খুউউউউউব ভালো লাগলো।
.....................................
......সবটুকু বুঝতে কে চায়!

----------------------------------------------
We all have reason
for moving
I move
to keep things whole.
-Mark Strand

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

লিলে প্রকাশ না করতে পারলেও আপনার ভালোলাগাটুকুর পরিমাপ আমি ঠিকই বুঝেছি, উপলদ্ধি করে নিতে পেরেছি। ভালো থাকুন আপনি।

দুর্দান্ত এর ছবি

ডিলিটেড সিন সহ বড়গল্পরূপ চাই।

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

ধন্যবাদ দূর্দান্ত ভাইয়া, উপন্যাস চাননি বলে! চোখ টিপি

মামুন হক এর ছবি

ভালৈছে। এখন থেকে আমিও বেডসিন ওয়ালা গল্প লেখা শুরু করব ভাবছি দেঁতো হাসি
ভালো কথা প্রেমিক প্রেমিকারে পার্টনার ডাকা শুরু করছে কবে থেকে আমাদের দেশে?

এনকিদু এর ছবি

এখনো শুরু হয়নাই । পান্থ নিজে ব্যক্তিগত ভাবে শুরু করেছে হয়ত ।

তবে আপনি তরুন সমাজকে সাঁকো দেখিয়ে দিয়েন না, সাবধান ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

রণদীপম বসু এর ছবি

মনে মনে যারে লাইফ-পার্টনার বানাইবার খেয়াল, প্রকাশ্যে না হয় পার্টনার ডাকলোই ! এতে অর্ধেক কাম আগাইয়া গেলো না !
নাহ্, লোকগুলা বুইড়া হইয়া যাইতেছে, অথচ পোলাপাইন পান্থর বুদ্ধিটাও এখনো রপ্ত করতে পারলো না ! আমি হতাশ ! এরা কুনুদিনই পান্থর মতো .... প্রেমিক হইতে পারবো না।

গল্প এবং চারুকলার আশেপাশে পুটুরপাটুর ভালোই আগাইতেছে দেখছি ! চালাই যান পান্থ। কারো কথা শুইনেন না !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

রণ দা, চারূকলার দখলদারিত্ব অতন্দ্র প্রহরী'র হাতে। তবে মাঝে মাঝে তার শ্যালিকাদের সাথে আড্ডা দিতে আমি আর নিবিড় সেখানে যাই। দেঁতো হাসি

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

ও, তাই না?! তারপর দৌড়ানি খায়া যে জান নিয়া পালান, সেইটা আর কইলেন না? চিন্তিত

নিবিড় এর ছবি

সাবধান পান্থ ভাই রেগে টং প্রহরী ভাইয়ের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেজ শালীর দিকে নজর দিলে কিন্তু ভাল হবে না চোখ টিপি


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

ছায়ামূর্তি [অতিথি] এর ছবি

দারুণ হচ্ছিলো, বস। চলুক
দুম কইরা শেষ কইরা দিলেন।

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

শ্যাষ হইয়া যে গ্যালো! হাসি

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- বেডসিন ছাড়া সিনেমা বানাইলে সেই সিনেমা অন্তত একজন দর্শক কম পাবে। এখন আমারে, হাম্বলী, উইথ ডিউ রিসপেক্ট কেউ জিজ্ঞেস করবেন না, "কে সেই দর্শক!" তাহলে কিন্তু আমি মোটেও নিজের নাম মুখে আনবো না!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

চিন্তিত...

থাক জিগাইলাম না... চোখ টিপি

--------------------
কালো যদি মন্দ তবে
কেশ পাকিলে কান্দ কেনে?

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

আমিও জিগাইলাম না।

রায়হান আবীর এর ছবি

শেষ প্যারার আগ পর্যন্ত দারুন লাগছিল। শেষ প্যারায় এসে গল্পটার ভালো লাগাটা আর থাকলো না। প্রেডিক্টেড। একটা দুষ্টু সিন ঢোকান না দাদা, দুষ্টু সিন ঢোকান [[আমার আগেই কদু ভাই বলে দিল]]

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

ঞঁ!!! মন খারাপ

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

প্রগতির বুলির সাথে ঠাকুরমার ঝুলি না থাকলে কী আর প্রডিউসার লগ্নি করবে? লেখাটা যথারীতি পান্থীয়।

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

প্রগতির বুলির সাথে ঠাকুরমার ঝুলি না থাকলে কী আর প্রডিউসার লগ্নি করবে
সিমন ভাই, মন্তব্যে পাঁচতারা।

অনিকেত এর ছবি

পান্থ, বস, তুমি পারোও ভাই----!!!

অন্যদের কথা জানিনা, আমার কিন্তু এই গল্পের উপসংহার -এর ধরণটা তুমুল লাগল।

চমৎকার একটা গল্প উপহার দেবার জন্যে বিশ লক্ষ তারা----!!

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

হায় হায় অনি ভাইয়া, এতো তারা আমি এখন কই রাখবো। সাথে একটা গুদামঘর দিলে ভালো হইতো না। চোখ টিপি

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

তাহ'লে নাও, আকাশটাই দিয়ে দিলাম আমরা তোমাকে। দেঁতো হাসি
___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

হায়, ফারজানা নাজনীন, হায়!!!

লেখা তোফা হইছে, পান্থ!
____________
অল্পকথা গল্পকথা

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

ফারজানা নাজ (নাজনীন) আবার কী করলো আপনারে? চিন্তিত

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালোলেগেছে পান্থ। গল্পটা যেভাবে শেষ হলো কেন যেন মনে হচ্ছে সেটাও জরুরি ছিলো। শেষের পরেই গল্পটা নিয়ে ভাবনার একটা জায়গা তৈরি হয়েছে। আর অতিথি আমিও দ্রুত, খুব দ্রুত নতুন লেখা পাবো আশা করছি।

এরকম চমৎকার একটা গল্প লেখার ইচ্ছেটা বাড়িয়ে দিলা ভাই!!!

আশরাফুল আলম রাসেল

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

ইশশ...

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

রানা মেহের এর ছবি

এই গল্পটা খুবই ভালো পান্থ
আপনার বর্ণনা দুর্দান্ত
তবে শেষটা ছাড়া।
শেষের এই জায়গাটা বোধহয় একটু বেশীই চর্চা হয়ে গেছে
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

বেশ যাচ্ছিল একটা জিনিস, একটা পান্থ পান্থ জিনিস, - পান্থ'র গল্প পড়া মানে শহর-গ্রামে রোদ-বৃষ্টিতে সৃষ্টি-কৃষ্টিতে রিকশা-সিএনজি-তে চাক্ষুস ঘুরে ঘুরে বেড়ানো - শেষের ট্যুইস্টে (হ্যাঁ, যদিও প্রেডিক্টেবল ছিল, বরং অবভিয়াস ছিল, কারণ গল্পের নামই দিছো 'একটা বেডসিন থাকবে', তারপরও, গল্পের গঠনে যেহেতু এইটাই শেষোদ্দিষ্ট চটকনা-প্রয়াস!) এইবার এসে পান্থ নিজেই যেন ট্যুইস্টেড হয়ে অন্য কেউ হয়ে গ্যালো!
আসো তো পান্থ, তুমি আর আমি এইটা নিয়ে একটু মুখ চাওয়াচাওয়ি করি! চোখ টিপি
___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

লাস্টে খুব তাড়াহুড়া হইছে। এছাড়া গল্পটা ভালো লাগছে। আপনার এই স্টাইলটা ভালোই লাগে। কিন্তু এই স্টাইলরে বড় করা যাবে না মনে হয়... একঘেয়েমি আসতে পারে।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

কীর্তিনাশা এর ছবি

পুরো গল্পটা দুর্দান্ত লাগলো।

পান্থ চালিয়ে যান, দাদা হাসি

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

তানবীরা এর ছবি

শিমুলকে ধন্যবাদ গানটার লিঙ্ক দেয়ার জন্য।
পান্থ, গল্পের নামটা যদি অন্য কিছু হতো তাহলে শেষের আন্দাজতো কেউই করতে পারতো না। আবার তোমার গল্পটাও হয়তো এতো চলতো না।
কিন্তু বরাবরের মতো লেখায় ঝাজা

---------------------------------------------------------
রাত্রে যদি সূর্যশোকে ঝরে অশ্রুধারা
সূর্য নাহি ফেরে শুধু ব্যর্থ হয় তারা

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

সাইফুল আকবর খান এর ছবি

তানবীরা বলেছেন-
পান্থ, গল্পের নামটা যদি অন্য কিছু হতো তাহলে শেষের আন্দাজতো কেউই করতে পারতো না। আবার তোমার গল্পটাও হয়তো এতো চলতো না।

কমেন্টে ঝাজা। চলুক হাসি
___________
স্বাক্ষর?!
মাঝেসাঝে বুঝতে পাই- আমি
নিরক্ষর!

___________
সবকিছু নিয়ে এখন সত্যিই বেশ ত্রিধা'য় আছি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।