একটি অসভ্য ও প্রবল সাম্প্রদায়িক জাতি

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি
লিখেছেন মৃত্যুময় ঈষৎ [অতিথি] (তারিখ: শনি, ৩১/১০/২০১৫ - ১০:০১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মুক্তচিন্তক গবেষক, বিজ্ঞানী, লেখক, ব্লগার, অনলাইন এক্টিভিস্টদের অন্তঃত মানুষ বা প্রাণি মনে করে, সকল শ্রেণি-পেশা-চিন্তা-সম্প্রদায়ের নাগরিকের জীবনের ন্যূনতম নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ এই আওয়ামী লীগ গঠিত সরকারের উচিৎ ব্যর্থতা স্বীকার করে নিয়ে বিশেষ টাস্ক ফোর্স গঠন করে এই ধরণের হত্যাকান্ডগুলোকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া। এবং বিভিন্ন সময়ে হত্যাকাণ্ড ঘটার পূর্বে, পরে তাদের কোন কোন সিদ্ধান্ত-উক্তি-কার্যক্রম হত্যাকারীদের উৎসাহিত করেছে, নিরব সমর্থন দান করেছে, এই অমানবিক নির্মম আচরণ চিহ্নিত করা। তারজন্য জনগণের কাছে ভুল স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করা এবং ভুল সংশোধন করে দৃপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা দেওয়া সংবিধান সকল নাগরিকের সমান মর্যাদা এবং জীবনের নিরাপত্তা সংরক্ষণ করে সে মুসলমান-হিন্দু, আস্তিক-নাস্তিক যেই হোক। এবং দেশের ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বৃহৎ প্রতিষ্ঠান সকল কিছু অসাম্প্রদায়িক চেতনায় পরিচালনা করতে হবে। সকল ধর্ম, ধর্মের অনুসারীরা রাষ্ট্রের চোখে সমান। কারো বিশেষ অনুভূতি রক্ষা বলে আলাদা কিছু থাকবে না। ৫৭ ধারা বাতিল করা হবে।

যে হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটেছে তার বিচার প্রক্রিয়া অতিদ্রুত সম্পন্ন করতে হবে। সক্রিয়ভাবে যারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত নয় কিন্তু মাস্টারমাইন্ড তাদেরকেও বিচারের আওতায় আনতে হবে। দ্রুত বিচার শেষে প্রাপ্ত রায় দ্রুত কার্যকর হলে সমাজে এই বার্তা যাবে যে এধরণের অপরাধে শাস্তি সুনিশ্চিত। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনির গাফিলতিগুলো খুঁজে বের করে তার সংশোধন করতে হবে। অতিসক্রিয় হয়ে দোষীদের আটক করে দ্রুত বিচার সম্পন্ন করতে হবে। কিছুবছরের জন্য অপেক্ষাকৃত ঝুকিপূর্ণ এলাকা/প্রতিষ্ঠান/বাড়ি চিহ্নিত করে তাতে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা উচিৎ, অন্তঃত সিসিটিভির আওতায় দ্রুত নিয়ে আসা উচিৎ। তাতে হত্যাকাণ্ড ঠেকানো না গেলেও খুনীকে দ্রুত আইডেন্টিফাই ও গ্রেপ্তার করা সহজ হবে।

যে সৃষ্টিশীল, কর্মঠ, মেধাবী, জ্ঞানতাপস তরুণ লেখক, গবেষক ও ব্লগারদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে, তাদের পরিবারকে শোকের সাগরে নিমজ্জিত করা হয়েছে, বাবা মাকে সন্তানহারা করা হয়েছে, স্ত্রীকে স্বামীহারা করা হয়েছে, সন্তানকে পিতৃহারা করা হয়েছে তার বুদ্ধিবৃত্তিক, সামাজিক ও পারিবারিক ক্ষতি নিরূপন করা সম্ভব নয়। তাদের হাতে যে উজ্জ্বল আলোক বর্তিকা ছিল তা নিভিয়ে দিতে শ্বাপদদের জড়-নির্বোধ চাপাতির যেই আস্ফালন তা কোন সু্স্থ মানুষের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। একজনের পর একজনকে ক্রমান্বয়ে হারিয়ে বুক-হৃদয় শোকের পাথর হয়ে গেছে। শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে আমাদের সকল শক্তি দিয়ে প্রতিবাদ করতে হবে, কলম চালাতে হবে, আলোর পথের দিশারী যাদের হত্যা করা হলো তাদের অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে হবে। তাদের লিখিত বিষয়গুলোতেই অর্থাৎ ধর্মের অসংলগ্নতা, ধর্মীয় বিশ্বাস-উপাদান-আচারের সমালোচনা, বিজ্ঞান, যুক্তিবাদ, মানবিকতা, অসাম্প্রদায়িকতা, সাম্যবাদ, নারীবাদ, সংখ্যালঘু ও সমপ্রেমীদের অধিকার সংরক্ষণ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এইসব ইস্যুতে অসংখ্য লেখা লিখতে হবে, গবেষণা করতে হবে, আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে। এর কোন বিকল্প নেই। প্রতিবাদের মাধ্যমে, লেখনীশক্তির মাথ্যমে ন্যায় বিচার আদায় করে নিতে হবে, সরকারকে বাধ্য করতে হবে।

টাস্ক ফোর্সের উচিৎ হবে সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা যে কোন প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করা যেখান থেকে জঙ্গিভাবাপন্ন উপাদানের সরবরাহ করা হয় এবং একজন মানুষের অনুভূতি নিয়ে খেলে তাকে জঙ্গি-হত্যাকারী বানায় বা এই ধরণের মুক্তচিন্তার মানুষকে হত্যা করা জায়েজ বা উচিৎ এই ধারণায় বিশ্বাসী করে গড়ে তুলে। সেগুলো নির্ণয় করে তা সংশোধনের জন্য যাবতীয় ইফর্ট দিতে হবে শত বাধা আসলেও। রাষ্ট্রযন্ত্রকে নিজে থেকে বুঝে নিতে হবে কোনটা মানবিক, কোনটা যুক্তিযুক্ত, কোনটা সাম্য।

প্রাথমিক শিক্ষা, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রমে পাঠ্যক্রমকে অসাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির আদলে ঢেলে সাজাতে হবে। শিক্ষার্থী জীবনচলার শুরু থেকেই যেন নিজের ধর্মের দূষিত উপাদানকে চিহ্নিত করতে পারে, অন্য ধর্মকে শ্রদ্ধা করতে শিখে এবং নাস্তিকতাকে সাধারণ স্বাভাবিক মতবাদ হিসেবে বুঝতে ও সম্মান করতে শিখে। ধর্মীয় বা ঈশ্বরের চিন্তার আলোকে সে যেন কোনভাবে মানুষকে বিভাজন না করে, বৈষম্য না করে, উত্তম-অধম জ্ঞান না করে।

জাতিগতভাবে উপরের এই উত্তরণটি দরকার কারণ এই যে বিশেষ একটি চিন্তা চেতনার মানুষগুলোকে নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট বিরতিতে একই পদ্ধতিতে হত্যা করা হচ্ছে সেটা নিয়ে সিংহভাগ জনতার কোন অনুকম্পা নাই, সিম্প্যাথি নাই। তারা স্বর তুলছে না, তারা এড়িয়ে যাচ্ছে। অনেকে নিরব থেকে মনে মনে সমর্থন দিচ্ছে। প্রতিবাদ করছে না। অথচ এতগুলো মানুষকে হত্যার পর একটি সভ্য, শিক্ষিত ও মানবিক জাতির টনক নড়ে যাবার কথা, তাদের প্রতিবাদমুখর হবার কথা, সমস্যার মূল উৎপাটন করার কথা, সর্বোপরি সবার ভিক্টিমদের পাশে এসে দাঁড়ানোর কথা। আমরা এধরণের যৌক্তিক আচরণ তো দেখছিই না, বরঞ্চ বিপরীতটাই বেশি দেখছি।

ইতিহাসের পাতায় একটি অসভ্য, সাম্প্রদায়িক, অসহনশীল, প্রতিক্রিয়াশীল, প্রবল রক্ষণশীল, উগ্র ধর্মান্ধ জাতি হিসেবে আমাদের নাম চিরস্থায়ীভাবে লিপিবদ্ধ থাকবে।


মন্তব্য

অন্যকেউ এর ছবি

মৃষৎ আপনাকে ফেসবুকে আওয়ামী লীগের ধামা যেভাবে ধরতে দেখা যায় তাতে কেউ কেউ আপনি ছিপি গ্যাং কিনা তাই নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলো।

যাক গিয়ে, একটা গুরুত্বপূর্ণ দাবি আপনি করেননি। আমি যুক্ত করে দেই,
বাংলাদেশ আওয়ামীগের নাম বদলে 'বাংলাদেশ আওয়ামী মুসলিম লীগ' করা হোক। ভণ্ড সেকুলারের চেয়ে প্রকাশ্য ধর্মান্ধ অনেক নিরাপদ।

অন্যকেউ এর ছবি

আর প্লিজ কথায় কথায় জাতিকে গালি দেবেন না। জাতি কিন্তু তাদের কাজটা করেছে। ‘সেকুলার' আওয়ামীলীগকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় এনেছে।
-কেন?
-এই আশায় যে আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করে এ দেশে মুক্তচিন্তা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, প্রগতি, প্রবৃদ্ধি ইত্যাদির ধারক বাহক হবে। এবং মানুষের জানমালের নীরাপত্তা দেবে। সকল সুস্থ গণতন্ত্রে ভোটের মাধ্যমেই জনগণের ইচ্ছা অনিচ্ছা প্রকাশিত হয়। এখন আপনি আবার জাতিকে কুৎসিত গালি দেবেন- কেন তারা সরকারকে এটা করতে বাধ্য করছে না, ওটা করতে বাধ্য করছে না। এসব খুবই খেলো দেখাচ্ছে।

মনে রাখবেন আমরা পরাধীন দেশে বাস করি না। ইংরেজ বা পাকিস্থানী শাসনের সময় যে নূন্যতম অধিকার আদায়ের জন্যও ঘাটে মাঠে আন্দোলন করা লাগত। কিংবা স্বৈর শাসনের সময়ও। সেই রাজনৈতিক স্টান্ডার্ড তো এখন থাকার কথা না। এখনও কেন একই রকম আন্দোলনের দায়িত্ব আপনি জাতির উপর চাপাবেন? কেন কুৎসিত গালি দেবেন?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।