গুগল কথন (বোনাস) - টেস্টিং অন দ্য টয়লেট আর কুকুর সমাচার

রাগিব এর ছবি
লিখেছেন রাগিব (তারিখ: রবি, ২৫/১০/২০০৯ - ২:৫৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

(বছর দুয়েক আগে গুগল কথন সিরিজে অনেকগুলো পোস্ট লিখেছিলাম, আমার গুগলে ৩ মাস কাজ করার অভিজ্ঞতা নিয়ে। আজ নতুন করে সিরিজটা পড়তে গিয়ে দেখলাম, অনেক কাহিনীই বাদ পড়ে গেছে। তাই এই বোনাস পোস্ট। আগের পোস্টগুলোর লিংক পাবেন এই পোস্টের শেষে।)
---

টেস্টিং অন দ্য টয়লেট

auto

গুগলের অনেক কিছুই বেশ ইন্টারেস্টিং, সাধারণ কোম্পানি যেভাবে কাজ করে, তার পুরা উলটা দিকে অনেক কাজ করতে তাদের আগ্রহ বেশি। আসলে এখানে কাজ করা প্রচন্ড মেধাবী প্রোগ্রামারদের চিন্তাধারাও একটু অন্যরকম। তারই একটা উদাহরণ হলো "টেস্টিং অন দ্য টয়লেট" হাসি

ভয় নেই, এখানে টেস্টিং বলতে কোড পরীক্ষা নীরিক্ষাকেই বোঝানো হয়েছে। গুগলের বিভিন্ন প্রোগ্রামের কোড প্রতিনিয়তই পরীক্ষা করে চলতে হয়, যাতে করে কোনো বাগ ঢুকে না পড়ে। সেই টেস্টিং এর ব্যাপারে কর্মীদের সচেতন করার জন্যই গুগলের টেস্ট ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপের আইডিয়া - টয়লেটে টেস্ট করা।

আইডিয়াটা এই রকম, টয়লেটে প্রত্যেকেই যায়, এবং কম বেশি সময় ব্যয় করে। টয়লেটে মূল কাজ ছাড়া করার বেশি কিছু থাকেনা, তাই বন্ধ দরজা বা দেয়ালের দিকে তাকিয়ে সময় নষ্ট করার বদলে সেই সময়টাতেও মাথা ঘামানো, কিংবা বুদ্ধিতে শান দেয়া ভালো।

তাই গুগলের প্রতিটি টয়লেটের সামনে, দরজার পেছনে প্রতি সপ্তাহে কিছু টিউটোরিয়াল থাকতো। এক পাতার এই টিউটোরিয়ালে কোড ডিবাগিং এবং টেস্ট সম্পর্কে খুব ছোট্ট কিন্তু কার্যকর কিছু সবক দেয়া হতো। একটা উদাহরণ পাবেন এখানে ।

গুগলের টয়লেটগুলোও ছিলো অত্যাধুনিক। না, ইন্টারনেট ব্রাউজের সুযোগ ছিলো না তখন পর্যন্ত, কিন্তু সবকিছু ইলেক্ট্রনিক ছিলো, সিট গরম থেকে শুরু করে সব কিছু কন্ট্রোল প্যানেল দিয়ে নিয়ন্ত্রন করা চলতো। এ অবশ্য ২০০৭ এর কথা -- গত ২ বছরে হয়তোবা ইন্টারনেট সংযোগও দিয়ে ফেলেছে সেখানে।

হাজার হোক, গুগল বলে কথা ...

---

কুকুর সমাচার

auto
গুগলের নতুন কর্মীদের শুরুতেই জানানো হয়, গুগল হলো "ডগ কোম্পানি", মানে পোষা প্রাণী হিসেবে কুকুর ওদের কাছে খুব প্রিয়। অফিসের ভেতরে কুকুর নিয়ে আসতে মানা তো নেই-ই, বরং অনেক ক্ষেত্রে কুকুর সাথে নিয়ে আসতে উৎসাহিত করা হয়। কারণ হিসেবে যা বলা হয় তা হলো, কুকুরকে ঘরে একা ফেলে আসলে কুত্তা-মালিকের মন পড়ে থাকবে সেখানে, তার বদলে কুকুর ধারে কাছে থাকলে বিপুল উৎসাহে কুত্তা-মালিক কাজ করতে থাকবে, মন ভালো থাকবে ইত্যাদি।

আমি আবার কুকুর হতে ১০০ হাত দূরে চলি, ৫ বছর বয়সে কুকুরের কামড় খেয়ে ১৪টা ইঞ্জেকশন দেয়ার পর থেকেই। তার পরেও কুকুর হতে রক্ষা নেই, অফিসের মার্কিনী কর্মীদের বিভিন্ন আকারের (দৈত্য থেকে শুরু করে বামনাকার) কুকুর সারাক্ষণ দেখতে হয়।

তো, এই কুকুর নিয়েই হলো একবার মজার কাণ্ড, গুগলের ক্যাফের ব্রেকফাস্ট করে আমি তার উচ্ছিষ্ট অংশ ফেলেছি ট্র্যাশক্যানে, দরজার পাশেই। এমন সময় করিডোর দিয়ে যাচ্ছিলো এক কুকুর, মানে কুকুরের মালিক কুকুরকে নিয়ে যাচ্ছিলো। কিন্তু কুকুরটা ছোটখাটো গরু আকারের, মানে বিশাল বড়, আর তার মালিক ক্ষীনদেহী এক মেয়ে, তাই কুত্তা মিঞাই মালিককে নিয়ে যাচ্ছিলো বলা চলে। সব ঠিকঠাকই চলছিলো, কিন্তু বিপত্তি বাধলো আমার দরজার পাশ দিয়ে যাবার সময়ে। কুত্তা মিঞা যেই না ট্র্যাশে ফেলা খাবারে গন্ধ পেলো, টেনে হিঁচড়ে মালিককে নিয়ে এলো দরজার দিকে। আমি তো পর্বতসম সেই কুত্তাকে দেখে চেয়ার থেকে পড়ে যাবার উপক্রম করছি, পালাবার পথও খোলা নেই, একটাই দরজা রুমে। বিব্রত মালিক কুকুরকে ধমক দিয়ে মিনিটখানেক ধস্তাধস্তি করে সরিয়ে নিয়েগেলো, সে অবশ্য টেরও পায়নি কেনো কুত্তা মিঞার এতো আগ্রহ। মিনিট দশেক পরে, পুরো ভবন এক চক্কর দিয়ে আবার যখন এসেছে আমার রুমের সামনে, আবারও কুত্তা মিঞার নাকে গেলো গন্ধ, ব্যস আবারো সে দিলো ঝাঁপ।

মার্কিনীদের কুত্তাপ্রীতি দুনিয়াতে সবচেয়ে বেশি, কুত্তাকে দেখে পালালে উলটো কুকুর মালিকেরা রাগ করে। আমি না পারছি পালাতে, না পারছি লাঠি দিয়ে কুত্তা খেদাতে। এই রকম করে করে বার তিনেক হবার পরে কুত্তা মালিকের বোধোদয় হলো, কুত্তার ক্ষিদে পেয়েছে তা নিয়ে গেলো অন্য জায়গায়। আর ১৪ ইঞ্জেকশনের অভিজ্ঞ আমিও হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম।

গুগল অবশ্য বিড়ালদের অতো পছন্দ করতো না, হাজার হলেও ডগ-প্রিয় কোম্পানি। তাই বিড়াল মালিকদের সাবধান থাকতেই হতো, বিপুল সংখ্যক কুকুরদের আনাগোনা থেকে বিড়ালদের বাঁচাতে।

(ছবি, গুগলের টয়লেটের কন্ট্রোল প্যানেল (ফ্লিকার, টেড)। এবং গুগলের এক কর্মীর পোষা কুকুর, অফিসের পাশে রোদ পোহাচ্ছে, (আমার মোবাইলে তোলা)।


মন্তব্য

রাগিব এর ছবি

আগের পর্বগুলোর লিংক

(১)
,
(২),
(৩),
(৪),
(৫),
(৬)

----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | কুহুকুহু

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

রাগিব এর ছবি

অন্য ব্লগে পূর্বে প্রকাশিত হয়েছে বলে এখানে এই পোস্টটি নিজের পাতায় দেয়া হলো।

----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | কুহুকুহু

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

হা হা .. মজা পেলাম। বাকী গুলোও পড়তে হবে। (কয়েকটা মনে হয় পড়েছিলাম, সেসময় খুবই ব্যস্ততায় যাচ্ছিল বলে মনে হয় সব পড়া হয়নি। পয়েন্ট অফ ইনফ্লেকশন যাকে বলে, সেরকম অবস্থা ছিল)

নীড় সন্ধানী এর ছবি

‍‌সবচেয়ে উর্বর চিন্তাভাবনাগুলোর উৎপত্তি কোন কোন সময় টয়লেটেই হয়। আমার ক্ষেত্রে অন্ততঃ। ভাবতাম ওটা আমার বদঅভ্যাস। যাক এতদিন শান্ত্বনা পেলাম যে গুগলও সেটা জানে। সেই কারনে
গুগল ডিজিটাল টয়লেট বানিয়ে সেই আইডিয়াগুলোকে ছেঁকে ডেস্কে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেছে। কোন সন্দেহ নেই এটা সের্গেই ব্রিনের রাশিয়ান বুদ্ধি। আর বুদ্ধি থাকলে কি না করা যায়! হাসি

-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

রাগিব এর ছবি

নীড় সন্ধানী লিখেছেন:
‍‌সবচেয়ে উর্বর চিন্তাভাবনাগুলোর উৎপত্তি কোন কোন সময় টয়লেটেই হয়।

ঠিক, আমারও একই ধারণা। হাসি

----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | কুহুকুহু

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

তাসনীম [অতিথি] এর ছবি

সত্য...আমারো তাই বিশ্বাস বাথরুম বেশ creative জায়গা, রাগিব তোমার google কথন ভালো লেগেছে...এই যুগে এমন নবাবী হাল google এর পক্ষেই সম্ভব।

ঢাকার চটপটি এনে পেট খারাপ করে বাথরুম সফর দীর্ঘায়িত করার idea টা google কে দেওয়া যায়...হয়ত আরও দারুন কিছু বের হবে। আমি ভীষণভাবে গুগল আর ওপেনসোর্স প্রেমী।

উদ্ভ্রান্ত পথিক এর ছবি

টয়লেটে আসলেই পুরা সময় হুদাই বসে থাকা লাগে! গুগলের এই আইডিয়াটা দারুন দেঁতো হাসি

---------------------
আমার ফ্লিকার

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।