আয়তন

রাহিন হায়দার এর ছবি
লিখেছেন রাহিন হায়দার [অতিথি] (তারিখ: শনি, ২১/১১/২০০৯ - ৬:৩৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আকাশের রঙ গাঢ় ছাই। দূরে কোথাও দরজা লাগে সশব্দে, হতে পারে জানালা। একটা সাদা পলিথিন ব্যাগ ইতস্তত উড়তে উড়তে জানালাগুলোর পাশ দিয়ে চলে যায়, তারপর বেঁধে যায় কোন বৈদ্যুতিক তারে। তারপর একটা মৃদু কিন্তু গম্ভীর শব্দ, গুরগুর গুরগুর। উৎসুক মানুষেরা ঝুলবারান্দায় এসে দাঁড়ায়। বয়ে যায় এক দমকা ঠান্ডা বাতাস। আবার কোথায় কী যেন পড়ে বিকট শব্দে। রিকশাচালকেরা জোরে জোরে প্যাডেল মারে, সাথে অবিরত বেল। কোন কারণে তাদের চোখেমুখে এক অদ্ভূত আনন্দ খেলা করে। নিশাচরেরা আলোর স্বল্পতায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়। কিছু মানুষও আছে তাদের দলে। প্রহর বোঝা যায় না বলে ঘড়ির অনভ্যাসের জন্য কিছুটা অনুতাপ হয় তাদের। রসিকেরা শোনে, "তোমার খোলা হাওয়া"। প্রকৃতি এখন অতি সতর্ক, হরিণশাবকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে চিতাবাঘ যেমন।

শহর সময় নষ্ট করে না, প্রস্তুতি নেয়। সে কিছু আভরণ খুলে ফেলে, কিছু বদলায়। অপেক্ষিত তবু আসেনা। শহর এমন ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিতে অভ্যস্ত। সমস্ত উত্তেজনা আড়াল করে সে বসে থাকে। অপেক্ষা করতে করতে যখন সে ধৈর্য্যের শেষ সীমানায়, তখন হঠাৎ ধুলো উড়তে শুরু করে। সে এসেছে অবশেষে। গাছপালা নুয়ে পড়ে তাকে অভিবাদন জানায়। কেউ বা অতি ভক্তিতে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে। তার সম্মানে পথশিশুরা রাজপথের পাশে খেলা দেখায়, নাচে। পথচারীর এত কিছু ভালো লাগে না। সে আশ্রয় নেয় চায়ের দোকানে, বা যেখানে পারে, যেভাবে। ছুটে চলা যানগুলোর চোখগুলো জ্বলে ওঠে।

কোন এক যুগল এমন ক্ষণে রিকশার পর্দার দৈর্ঘ্য মাপে। উষ্ণতা ভাগ করে নেবার ছল করে দু'জনে। রিকশার ফাঁকফোকর দিয়ে যখন পানির ছাঁট আসে তখন আরো ঘন হয় তারা। তিনচাকার গতি মন্থর হয়ে আসে। রিকশাচালক ডান পায়ে বাম পায়ে শরীরের ভর অদলবদল করে টেনে যায় তবু হাওয়ার বিপরীতে। সে অভিজ্ঞ। যাত্রীদ্বয়ের এমন সহসা কণ্ঠপতনের মানে সে জানে। ইচ্ছা করেই একটা প্রাসঙ্গিক গান ধরে সে। কাজ হয়। যুগল আবার স্বাভাবিক ভঙ্গিতে কথা বলতে শুরু করে।

ব্যক্তিগত রথের যাত্রীরা এসব কিছুই শোনে না, দেখে না। তারা হঠাৎ সপাৎ সপাৎ শব্দ শুনে চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে ওয়াইপারের নাচানাচি। এই তাহলে দেরীর কারণ! শহর আবারও গালি খায়। আজ অবশ্য গালাগাল ভাগ করে নেবার এক সঙ্গী আছে তার। মধ্যবিত্ত পাড়াতে ঢুকে পড়া রথগুলো সমস্বরে চিৎকার করতে থাকে। বিশুদ্ধ বাংলায় গালি খেয়ে রথচালকেরাও তাদের শিকড় জানিয়ে দেয় মুখের ভাষায়, যান্ত্রিক চিৎকারের সাথে সমতালে। এ তাদের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। রথের যাত্রীরা এমনটা করতে পারে না। প্রয়োজনও হয় না। তাদের আছে বেতনভুক্ত মুখপাত্র।

একসময় আগন্তুক চলে যায়। সন্ধ্যা নামে, পানি নামে না। রাস্তায় ভিড় বাড়ে, সাথে শব্দ। নগরবাসীরা এতে বহুকাল ধরে অভ্যস্ত। তারা ছলাৎ ছলাৎ শব্দ তুলে পথ চলে। রথ পথ মেপে চলে না, তাই খন্দভরা পানি চাকার হুকুমে অপ্রস্তুত করে দেয় পথচারীদেরকে। রথের দলকে দোষ দেয়া যায় না। তারা শুধু শূন্যস্থান পূরক, যেমন আজকের আগন্তুক। পার্থক্য কেবল দুই শূন্যস্থানের আয়তনে, ধারণক্ষমতায়।


মন্তব্য

হিমু এর ছবি
রাহিন হায়দার এর ছবি

ধন্যবাদ হিমু ভাই! লইজ্জা লাগে দেঁতো হাসি

...........................................
তবু ধুলোর সাথে মিশে যাওয়া মানা

অতিথি লেখক এর ছবি

দুর্দান্ত সুন্দর রাহিন ভাই !বেশী ভালো লেখায় আবার বেশী কিছু বলতে সাহসে কুলোয় না.... *তিথীডোর

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

আপনার আগের লেখাগুলোর ভাষা থেকে ভিন্ন ভাষা। ভালো।

নুহিন এর ছবি

রাহিন ভাই, বলার অপেক্ষা রাখেনা এই লেখার মান কোন পর্যায়ে। আরো লিখুন। বেশি ভালো হয়েছে লিখাটা। সচলে আমার প্রথম লেখাটার নাম ছিল "শূন্যস্থান নিয়ে আমার যত কনফেশন"। ওটার কথা মনে পড়ে গেলো।

শুভ হোক।

ভ্রম এর ছবি

চমৎকার লেখা!... খুব ভালো লাগলো।

অতিথি লেখক এর ছবি

দুবার পড়লাম।ভাল লাগল।

স্বপ্নদ্রোহ

shanita এর ছবি

odvut sundor

মৃত্তিকা এর ছবি

অ-সাধারণ বর্ণনা, ভাষা এবং বিষয়।
খুব, খুব ভালো লাগলো!

সাইফ তাহসিন এর ছবি

হেব্বি ওজনদার লেখারে ভাই, ভালো লেগেছে খুব। আগে লেখতেন নাকি ভাই?
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদ্বপি গরীয়সী

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

কাক বালক এর ছবি

অসাধারণ লেখা রাহিন ভাই। বাঁশিতে তো আগেই দিওয়ানা ছিলাম এখন লেখাতেও হলাম। ভালো থাকবেন।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

দুর্দান্ত লেখা। খুবই ভালো লাগলো। হাসি

আনন্দ [অতিথি] এর ছবি

রক্ত কথা বলবে জানা ছিল। সুর তুলবে আশা ছিল। তবে শুরুতেই এমন ধ্রুপদী গাইবে - মাথায় ছিল না।

মাইনষের কথায় কান দিস না। লেখা ভাল হচ্ছে। লিখে যা।

অতিথি লেখক এর ছবি

রাহিন ভাই, লেখাটা দূর্দান্ত হয়েছে।
বর্ণনাটা অসামান্য লেগেছে।
আপনারে দিয়াই হবে রে ভাই। হাসি
তাঁরা দাগানোর সামর্থ নাই, কিন্তু আপনার এই লেখায় তাঁরা দাগাইতে খুব ইচ্ছা করতাসে।
/
ভণ্ড_মানব

...অসমাপ্ত [অতিথি] এর ছবি

চমৎকার লেখা। ...মুগ্ধ পাঠক হলাম।

ভূঁতের বাচ্চা এর ছবি

সচলে তোমাকে দেখে অনেক খুশি হলাম রাহিন।
আরো ভাল লাগল লেখাটা পড়ার পর।
ভাল থেকো, শুভকামনা রইল।
--------------------------------------------------------

--------------------------------------------------------

রাহিন হায়দার এর ছবি

আমারও খুব ভালো লাগলো। আপনাকে চিনি কি?

...........................................
তবু ধুলোর সাথে মিশে যাওয়া মানা

রাহিন হায়দার এর ছবি

সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। দেঁতো হাসি

..............................................
তবু ধুলোর সাথে মিশে যাওয়া মানা

সমুদ্র এর ছবি

রাহিন, দারুণ্‌ লিখছো! তোমার তো দেখি প্রতিভার ছড়াছড়ি হাসি
চালায় যাও!!

"Life happens while we are busy planning it"

রাহিন হায়দার এর ছবি

কন আপনারে একটু ধার দেই। বদলে একটু ইউরোপ ঘুরায়ে দেখাইয়েন। দেঁতো হাসি

________________________________
তবু ধুলোর সাথে মিশে যাওয়া মানা

সমুদ্র এর ছবি

ওইটাতো মিয়া এমনিই দেখামু, ধারদেনা লাগবে না হাসি

"Life happens while we are busy planning it"

খেকশিয়াল এর ছবি

অসাধারণ!

------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

শান্ত [অতিথি] এর ছবি

সব কিছুই চমতকার। মুগ্ধ হলাম লেখাটা পড়ে।

বইখাতা এর ছবি

ভালো লাগলো।

অতিথি লেখক এর ছবি

রাহিন ভাই, আপনার লেখায় মন্তব্য করার সামর্থ্য আমার নাই। তবে, শহরবন্দী মেঘ শুনতে শুনতে লেখাটা পড়তেসিলাম। অসাধারণ লাগলো অনুভুতিটা।

অতিথি লেখক এর ছবি

চমৎকার লেখা!বিশেষ করে ভাষাটা দারুন!*্নক্ষত্র

**না এর ছবি

ছোট ছোট লাইন দিয়ে লেখার বুদ্ধিটুকু বাবার কাছ থেকে পেয়েছেন, তাই নয় কী???
এমন লেখা পড়তে এতো দারুন লাগে!!

অন্য রকম সুন্দর হয়েছে লেখা টা !!

ভালো থাকবেন !

ধুসর গোধূলি এর ছবি
রাহিন হায়দার এর ছবি

আবারও অনেক ধন্যবাদ সবাইকে, পড়ার ও মন্তব্যের জন্য!! দেঁতো হাসি

________________________________
তবু ধুলোর সাথে মিশে যাওয়া মানা

ওডিন এর ছবি

বৃষ্টির ঘ্রাণ পাওয়া যাচ্ছে ভাই। চমৎকার।

---------------------------------------------
ফুল ফোটে? তাই বল! আমি ভাবি পটকা। চিন্তিত

শাহান এর ছবি

অসাধারণ লাগলো।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।