যুক্তরাষ্ট্র : যে দেশে 'মে দিবস' উপেক্ষিত !

রণদীপম বসু এর ছবি
লিখেছেন রণদীপম বসু (তারিখ: শনি, ০২/০৫/২০০৯ - ৮:৪৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

[লেখাটি 'মে দিবসে' দিতে পারি নি সেটা কি আমার দোষ ! সময়মতো মশলা-পাতি জোগাড় করতে পারিনি, তো আমি কী করবো !]

১৮৮৬ সালে শিকাগোর হে মার্কেটে দৈনিক শ্রমঘণ্টা কমিয়ে দিনে আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে বিক্ষুব্ধ মিছিলে পুলিশের গুলিতে নিহত শ্রমিকদের আত্মত্যাগকে সম্মান জানাতে বিশ্বব্যাপি পহেলা মে’র দিনটিকে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে বেছে নেয়া হয়।

auto

জাতিসংঘও এ দিনটিকে অনুমোদন করে। শ্রদ্ধাজ্ঞাপনকারী প্রায় সব রাষ্ট্রগুলোতে দিনটিকে সরকারিভাবে ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। অথচ যে দেশে এই মে দিবসের সৃষ্টি, যুক্তরাষ্ট্র, সেখানে শ্রমিকরা একতরফা দিনটিকে পালন করলেও সরকারিভাবে নাকি মে দিবস পালিত হয় না ! ওখানে যে দিনটিকে লেবার ডে হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হয় তা হচ্ছে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সোমবার। মজার ব্যাপার, সেপ্টেম্বরের এই দিনটি হচ্ছে গ্রীষ্মকালকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় জানানোর দিন। এ দিনটিকে আবার শ্রমিক ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ সবাই একত্রে পালন করে থাকে।

auto

১৮৮৬ সালে হে মার্কেটের এই ঘটনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ধনিক শ্রেণীর পক্ষ হতে শ্রমিকদেরকেই বেশি দায়ী করা হয়। শ্রমিক সমাবেশ থেকে পুলিশের ওপর নিক্ষিপ্ত বোমায় একজন পুলিশ মারা যায়। এবং এ কারণেই পুলিশ শ্রমিকদের ওপর গুলি চালাতে বাধ্য হয় বলে দাবী করা হয়। পুলিশের গুলিতে অনেক শ্রমিক হতাহত হলেও মেথিয়াস জে ডিগান নামের নিহত সেই পুলিশের স্মরণে ১৮৮৯ সালে হে মার্কেট স্কোয়ারে একটি মনুমেন্ট নির্মাণ করা হয়। সেদিন অর্ধশতাধিক পুলিশ আহত হয় এবং এ ঘটনাকে পুলিশের নথিতে দাঙ্গা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়।

auto

ডিগানকে খুন করার জন্য যে বিচারের আয়োজন করা হয়, সেই বিচারে সাতজনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হলে বিশ্বব্যাপি শ্রমিক জনগণ মিছিল-সমাবেশের মাধ্যমে এর প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। পরে তিনজনের মৃত্যুদণ্ড রহিত করা হলেও বাকি চারজন স্পাইস, পারসন্স, ফিশার ও এঞ্জেল'কে ১৮৮৭ সালের ১১ নভেম্বর প্রকাশ্যে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ফাঁসির রজ্জু গলায় পরার সময় এই সাহসী বীরেরা আন্তর্জাতিক বিপ্লবী সঙ্গীত গাইতে থাকেন।
auto

শিকাগোর ফরেস্ট পার্কে জার্মান ওয়াল্ডহেইম কবরস্থানে যেখানে তাঁদেরকে সমাহিত করা হয়, ১৮৯৩ সালে সেখানে তাঁদের স্মরণে একটি মনুমেন্ট নির্মাণ করা হয়। আর একশ’ বছর পরে এসে ভাস্কর আলবার্ট ওয়েইনার্ট নির্মিত এই মনুমেন্টকে যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ন্যাশনাল হিস্টরিক ল্যান্ডমার্ক হিসেবে ঘোষণা করে।
এখন তাহলে প্রশ্নটা থেকেই যায়, মে দিবসের কী হবে ?
[ছবি: ইন্টারনেট]
(more picture)


মন্তব্য

রণদীপম বসু এর ছবি

পহেলা মে তারিখে 'সমকালে'র চার নম্বর পৃষ্ঠায় অন্যদৃষ্টি কলামে আলী আহমদ-এর 'মে দিবসের দেশে' লেখাটি পড়েই কৌতুহলী হয়েছিলাম।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

একজন [অতিথি] এর ছবি

ভাল লেগেছে। তবে আর একটু বিস্তারিত হতে পারত।

রণদীপম বসু এর ছবি

লগ্ন পেরিয়ে খুব তাড়াহুড়া করেছিলাম। তাই সংক্ষিপ্তভাবে লেখার চেষ্টা করেছি।
ধন্যবাদ আপনাকে।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

কল্পনা আক্তার এর ছবি

রণদা, দিনটা পহেলা সেপ্টেম্বর না সেপ্টেম্বর এর প্রথম সোমবার কে লেবার ডে হিসাবে পালন করা হয়। এবং এই দিবসটি ১৮৮২ থেকে পালন করা হচ্ছে।

........................................................................................................
সব মানুষ নিজের জন্য বাঁচেনা


........................................................................................................
সব মানুষ নিজের জন্য বাঁচেনা

রণদীপম বসু এর ছবি

ধন্যবাদ তথ্যটির জন্য।
আমি যেখান থেকে এ তথ্য পেয়েছি সেখানে ওইরকম ছিলো। অন্তর্ভুক্ত করছি।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

অনিকেত এর ছবি

রণদা, লেখাটার জন্যে ধন্যবাদ!
পুলিশের ঘটনাটা জানা ছিল না।

আমার কাছে মার্কিনীরা হল মার-কিনি= এরা বিশ্ব জুড়ে মানুষ মারে আর টাকা না থাকলেও জিনিস কেনে। এদের এখানে মে-দিবস পালন হবে না---সেটা বলাই বাহুল্য।

রণদীপম বসু এর ছবি

ঠিকই বলেছেন অনিকেত দা'।
আর মার্কিনীদের বহুরূপী চরিত্রটা নিচের মন্তব্যে খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন নীড় সন্ধানী।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

নীড় সন্ধানী এর ছবি

মে দিবসের চেতনার আদি সুত্রপাত হয় অষ্ট্রেলীয় শ্রমিকদের কাছ থেকে ১৮৫৬ সালে। পরে ১৮৮৬ সালে শিকাগোর শ্রমিকরা আন্দোলনে যোগ দিলে হত্যাকান্ডে গড়ায় ব্যাপারটা। উস্কানির দায়টা শ্রমিকদের দেয়া হয় যদিও, পুলিশের দিকে বোমাটা কে ছুড়েছিল সেই রহস্য কখনোই উদঘাটিত হয়নি।

মে দিবসের ঘটনা ছিল অত্যাচারী শাসক ও বেনিয়াদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের বহিঃপ্রকাশ। বেনিয়াদের উত্তরাধিকারীরাই মার্কিন সরকারে অধিষ্টিত হয়েছে পরবর্তী কালে। তাই মে দিবস যুক্তরাষ্ট্রে পালিত হবার কোন কারন নেই। তারা আমাদের শিল্প কারখানায় মে দিবস পালিত হচ্ছে কিনা খেয়াল রাখে, কিন্তু নিজেদের ব্যাপারে চুপ। যেমন ইপিজেডে ট্রেড ইউনিয়ন চালুর জন্য তারা উচ্চকন্ঠ। আবার এস এস এ যখন চট্টগ্রামে প্রাইভেট পোর্টের আবেদন করেছিল, সেখানে অন্যতম শর্ত ছিলে সেই পোর্ট ট্রেড ইউনিয়ন মুক্ত এলাকা হতে হবে।

এই হল বহুরূপী মার্কিন নীতি।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

রণদীপম বসু এর ছবি

খুব ভালো বলেছেন। ধন্যবাদ। চলুক

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

মো আতাউর রহমান এর ছবি

আপনার তথ্য ভিত্তিক লেখাটা পড়লাম। অসাধারণ !
আপনি একজন সৃষ্টিশীল মানুষ। আমরা সাধারণ মানুষেরা একটি ঘটনাকে যেভাবে প্রত্যক্ষ করি বোধ করি একজন লেখক তা করে ভিন্ন আংগিকে এবং গভীর ভাবনা দিয়ে। তার এই ভাবনার মধ্যে ভিন্ন অনুভব থাকে। এই অনুভব ও ভাবনায় তাকে লিখতে উদ্দুদ্ধ করে। আর এখানেই সাধারণ মানুষ থেকে সে হয় আলাদা।
ধন্যবাদ আপনাকে।
শুভেচ্ছান্তে
আতাউর

রণদীপম বসু এর ছবি

ধন্যবাদ আতাউর ভাই।
লেখকদের জন্য আপনার কথাটার সাথে সহমত পোষণ করছি। কিন্তু আমার জন্য প্রশংসাটা একটু বেশি হয়ে গেলো না ! হা হা হা !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

শাহিদ এর ছবি

[restrict][/restrict]

আপনার কল্যানে দুর্লভ সংবাদ ও মূল্যবান ছবি দেখার সুযোগ পেলাম।আপনাকে ধন্যবাদ।

রণদীপম বসু এর ছবি

আমাকে লজ্জা দেবেন না প্লীজ ! আসলে তথ্য-প্রযুক্তির অনিঃশেষ চেইনে কৌতুহলী পাঠক আমি হয়তো ছোট্ট একটা রিং-এর কাজ করেছি। এতটুকুই ।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

চলুক

রণদীপম বসু এর ছবি

চলুক

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আমি ২০১৩ সালে আমেরিকার 'লেবার ডে' তে শিকাশো শহরে উপস্থিত ছিলাম। কৌতুহলবশত ঐ দিন সকালে 'হে মার্কেট' চত্তরে গিয়ে কিছু ছবিও তুলেছিলাম। সচলেই 'হে মার্কেট-ছবিব্লগ' শিরোনামে আমার একটা লেখা আছে।
http://www.sachalayatan.com/vabna/50107

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।