| হ্যান্ডবিল : ভূমিকম্পে করণীয় |

রণদীপম বসু এর ছবি
লিখেছেন রণদীপম বসু (তারিখ: বুধ, ০৬/১০/২০১০ - ১০:৫৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

 …

সকালে দৈনিক পত্রিকাটা খুলতেই ছোট একটা রঙচঙে কাগজ চোখে পড়লো। একটা হ্যান্ডবিল। ‘ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে সচেতন হোন’ শিরোনামে বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি কর্তৃক প্রচারিত একটি জনসচেতনতামূলক উদ্যোগ। দৈনিকের ভেতরে বিভিন্ন সময়ে এরকম বিজ্ঞাপন প্রচার আরো হয়েছে। সেগুলোতে একবার হালকা চোখ বুলিয়ে গুরুত্ব না দিয়েই ফেলে দিয়েছি। কিন্তু এবারেরটিকে গুরুত্ব না দিয়ে কি কোন উপায় আছে ? বিশেষ করে এই ইট-সিমেন্টের অপরিকল্পিত জঞ্জাল নগরীগুলোতে খাঁচাবদ্ধ ইঁদুরের মতো ভয়ঙ্কর আতঙ্কগ্রস্ত নাগরিক জীবনে যখন প্রতিমুহূর্তের অনিশ্চয়তায় সারাক্ষণ ব্যতিব্যস্ত থাকতে হয় !

ইদানিং ব্লগে ভূমিকম্পে করণীয় এবং সম্ভাব্য ভয়াল মানবিক বিপর্যয় নিয়ে বেশ কিছু চমৎকার বিশ্লেষণী লেখা ও প্রতিবেদন পড়ার সুযোগ হয়েছে। ওগুলো পড়ে সত্যি বলতে কি, নিরূপায় নাগরিক হিসেবে নিজের অসহায়ত্বকেই আরো বেশিভাবে আবিষ্কার করেছি আর আতঙ্কে আরো বেশি করে জড়োসড়ো হয়েছি কেবল। আমার আশঙ্কার কারণ একটাই। অত্যন্ত লোমহর্ষক কল্পনায় আমি দেখতে পাই পূর্ণ মাত্রার একটা ভূমিকম্প হলে বর্তমান বাস্তবতায় এই ঢাকা নগরীর মাত্র ত্রিশ ভাগ ভবন বা স্থাপনাও যদি ভেঙে পড়ে, তাহলেও যে বিপর্যয় নেমে আসবে তাতে প্রথম ধাক্কায় আনুমানিক যে লক্ষাধিক লোক কিছু বুঝে ওঠার আগেই দুর্ভাগ্যজনকভাবে মারা যাবে, শেষপর্যন্ত তাঁরাই হয়তো মহাভাগ্যবান হবে ! কেননা, এমন ভূমিকম্প উত্তর একটা ভয়ঙ্কর বিপর্যস্ত নগরীতে  পানিহীন, বিদ্যুৎহীন, গ্যাসহীন, খাদ্যহীন, চিকিৎসাহীন, আশ্রয়হীন, যোগাযোগহীন, উদ্ধারহীন এরকম অসহনীয় অবস্থায় সবকিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়া ভয়াল পরিস্থিতিতে যাঁরা বেঁচে থাকবে, তাঁরা কি সত্যিই বেঁচে থাকবে ! এ যে মৃত্যুরও বাড়া ! ধুঁকে ধুঁকে মরা ! এই বেঁচে থাকার দুঃস্বপ্নের চাইতে হয়তো মৃত্যুই একমাত্র পরিত্রাতা হবে তখন !

সকালের খবরে চোখ বুলাবার আগেই হাতে উঠে আসা এই হ্যান্ডবিলটা পড়ে আমি আবারো আতঙ্কিত হলাম আমার সম্ভাব্য না কি অনিবার্য গন্তব্যের কথা ভেবে ! ওটাতে ভূমিকম্পের আগে, ভূমিকম্পের সময় এবং ভূমিকম্পের পরে আমাদের করণীয়গুলো পয়েন্ট আকারে সহজভাবে তুলে ধরা হয়েছে। আমরা কিভাবে কতটুকু সচেতন হবো জানি না, তবে বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির এই উদ্যোগটিকে আমি অভিনন্দিত করি এজন্যেই যে, একটা অনাকাঙ্ক্ষিত প্রাকৃতিক দুর্যোগে কিভাবে আমরা সাধারণ নাগরিকরা কতোটা অসহায় বিপর্যস্ত হয়ে যেতে পারি তার আলামতগুলো কল্পনা করে আমাদের নিজস্ব কৃতকর্মের জন্য অন্তত আফসোসটুকু জেগে উঠবে ! তবুও ‘বেটার লেট দ্যান নেভার’ ! তাই অফিসের স্ক্যানারটার সহায়তায় এই হ্যান্ডবিলটার স্ক্যান-কপির সাথে ব্যক্তিগত অনুভবের দু’পয়সা যোগ করে সবার সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করলাম। (ছবিতে ক্লিক করে করণীয়গুলো নিজে আত্মস্থ করুন এবং দয়া করে অন্যকে আত্মস্থ করার সুযোগ করে দিন।)

শেষকথা হিসেবে স্কুলমাস্টারের সেই উপদেশটা বয়ান করি। আতঙ্কের সময় প্রধান করণীয় হলো আতঙ্কগ্রস্ত না-হওয়া !


মন্তব্য

শিশিরকণা এর ছবি

অনেকদিন আগে ভারতীয় টিভি চ্যানেলে একটা বিজ্ঞাপন দেখেছিলাম এরকম, একজন ডাক্তার, দোকানদার, গৃহিনী এরকম সাধারন মানুষ কয়েকজন, হঠাৎ কোন খান থেকে দুর্যোগের ঘোষণা শুনে একটা নিওনরঙা জ্যাকেট বের করে গায়ে দিলো, তারপর বাক্স/ ড্রয়ার খুলে ব্যান্ডেজ/ টর্চ লাইট ইত্যাদি ইমার্জেন্সি সাপ্লাই বের করে নিয়ে রওনা হলো দুর্গতদের সাহায্য করতে। এরা সবাই স্বেচ্ছাসেবী উদ্ধারকর্মী, স্বপ্রণোদিত হয়ে ট্রেনিং নিয়েছেন।

সবাইকে সচেতন করা হয়ত সম্ভব নয়। কিন্তু এরকম একটা সেচ্ছাসেবক উদ্ধারকর্মী দল যারা বিপদে কি করতে হবে তার জন্য প্রস্তুত থাকবে, তারা অন্যদের সাহায্য করতে পারবে। এরকম একটা গ্রুপ কি তৈরি করা যায়? পাড়ায় বা একটা এপার্টমেন্ট বিল্ডিং এ ২-৩ জন করে থাকলেই যথেষ্ট। শুরু হতে পারে ফেসবুক গ্রুপ হিসেবে আগ্রহীদের নিয়ে।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

স্ক্যানের জন্যে চলুক

ভবিতব্য ভাবছি শুধু...
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

হ্যান্ডবিলটি শেয়ার করার জন্য আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

স্বাধীন এর ছবি

বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটিকে ধন্যবাদ এই হ্যান্ডবিলটি বিলি করার জন্য আর রণ'দাকে ধন্যবাদ বিষয়টি আমাদের জানানোর জন্য।

নাজনীন খলিল এর ছবি

শেয়ারের জন্য ধন্যবাদ।

দ্রোহী এর ছবি

চমৎকার এই উদ্যোগের জন্য বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটিকে ধন্যবাদ। চলুক

সচলে তুলে দেবার জন্য রণদাকে ধন্যবাদ। হাসি


কাকস্য পরিবেদনা

মাহবুব রানা এর ছবি

পশ্চিম জাপানের শিকোকু আইল্যান্ডে বসে ভুমিকম্পের প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরাও। ফিলিপিন প্লেট প্রতি বছর কয়েক সেন্টিমিটার করে ইউরেশিয়ান প্লেটের নিচে চলে যাচ্ছে এবং একটু একটু করে শক্তি জমা হচ্ছে। গড়ে ১০০ বছর পরপর এই শক্তি মুক্ত হয় আর সেই সাথে জন্ম নেয় একটা করে বড় ভুমিকম্পের (জাপানিজ ভাষায় 'নানকাই জিসিন')। শেষবার হয়েছিলো ১৯৪৬ সালে, কিন্তু সেটির মাত্রা বেশি না হওয়ায় শক্তিও খুব বেশি মুক্ত হয়নি। কাজেই পরবর্তী 'নানকাই' আরো একশ বছর অপেক্ষা নাও করতে পারে। আজ অথবা কালও হতে পারে। এই ভুমিকম্পের মাত্রা হবে সাড়ে ৮, স্থায়ী হবে ১০০ সেকেন্ড, আর সাথে থাকবে ৩ মিটার উচু সুনামি। স্থানীয় প্রশাসনের প্রস্তুতি ব্যাপক। হাজারখানেক বিদেশীদের জন্য ৬ ভাষায় 'কি করনীয়' ব্রোশার বানিয়েছে, প্রতি বছর ড্রিল হচ্ছে। স্কুলে স্কুলে বাচ্চাদের শেখানো হচ্ছে কি করতে হবে। সিটি অফিস থেকে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। আমরা সাগরপাড়ের বাসিন্দা হওয়ায় বেশিরভাগ 'করনীয়' সুনামি বিষয়ক। বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য না হওয়ায় বস্তারিত লিখছি না। তবে একটা কথা বলি, রাস্ট্রের দিকে না তাকিয়ে থেকে নিজের জীবন বাচাঁতে নিজেদেরকেই উদ্যোগি হতে হবে। প্রত্যেক পরিবারের অন্তত একজন যেন ভুমিকম্পের সময় এবং তার পরের করনীয় সম্পর্কে অবগত থাকেন।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

ইয়ে, রণদা -
ভূমিকম্প প্রতিরোধে ইয়োগা কিছু করতে পারবে না? চোখ টিপি

[রাগ করলে , আগাম ক্ষমাপ্রার্থী] হাসি

রণদীপম বসু এর ছবি

হাঁ শিমুল, উপায় তো আছেই !
পারফেক্টলি শবাসনে ডুবে যাবেন। ভূমিকম্প কেন, পৃথিবী চুরমার হয়ে গেলেও কিছুই টের পাবেন না ! হা হা হা !

(অনিবার্য কারণে দু'দিন অনলাইনে না থাকায় উত্তর দিতে দেরি হয়ে গেলো বলে দুঃখিত!)

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।