| ঘড়ায়-ভরা উৎবচন…|১৫১-১৬০|

রণদীপম বসু এর ছবি
লিখেছেন রণদীপম বসু (তারিখ: শনি, ০৮/০১/২০১১ - ১:০৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সতর্কতা:

ধর্মীয় বিশ্বাস ও সংস্কার বা মুক্তচিন্তা বিষয়ে যাঁদের সংবেদনশীলতা রয়েছে,

তাঁদের জন্য অস্বস্তিকর হতে পারে।

(১৫১)
অসার জিহ্বা ভাষাকে মুক্ত করতে অক্ষম বলেই
বোবার চোখ ভাষার রুদ্ধতাকে বাঙ্ময় করে তোলে।

(১৫২)
খ্যাতি ও ক্ষমতা কুড়ানোর চতুর পদ্ধতি হলো পুরস্কার দেয়া।
পুরস্কার পেতে হয়তো ন্যূনতম যোগ্যতা থাকতে হয়,
পুরস্কার দেয়ার জন্য কোন যোগ্যতার দরকার হয় না।
পুরস্কার বারবার পাওয়া যায় না, কিন্তু বারবার দেয়া যায়।

(১৫৩)
যোগ্যতা অর্জনের আগেই কোনকিছু দ্রুত পাওয়ার ইচ্ছা মানুষকে অপরাধপ্রবণ করে তোলে।
আর খ্যাতির লিপ্সায় অপরাধপ্রবণ মানুষ সুকুমার বৃত্তি হারিয়ে শেষপর্যন্ত নিঃস্ব হয়ে যায়।
এজন্যেই শিল্প-সাহিত্যের অঙ্গনে নিঃস্ব মানুষের আনাগোনা বেশি হয়ে থাকে।

(১৫৪)
শর্তহীন আনুগত্য মেরুদণ্ডহীনতা, তবে মেরুদণ্ডধারী মানে অবিশ্বস্ত নয়।
ব্যক্তিত্বহীন লোক হয় অনুগত ; ব্যক্তিত্ববান থাকে বিশ্বস্ত।

(১৫৫)
ঘটনা একটা বিষয়, কিন্তু বিষয় কোন ঘটনা নয়।
যোগ্য ব্যক্তির পুরস্কৃত হওয়া কোনো বিষয় নয়, না-হওয়াটাই বিষয়;
আর অযোগ্য লোকের পুরস্কার না-পাওয়া কোনো বিষয় নয়, পাওয়াটাই ঘটনা।

(১৫৬)
অযোগ্যের দেয়া পুরস্কার যোগ্য-ব্যক্তিকে অপমান করে;
পুরস্কার প্রত্যাখ্যানের যোগ্যতা যোগ্যকে যোগ্যতম করে তোলে।

(১৫৭)
যে রচনা নতুন কোনো প্রশ্নকে আমন্ত্রণ জানায় না
তা বড়জোর নিবন্ধ হতে পারে, প্রবন্ধ নয়।

(১৫৮)
কবিতায় রসের খোঁজ পায় তারা, যারা তার অর্থ বুঝতে উঠেপড়ে লাগে না,
শুধু উপলব্ধি জাগিয়ে তোলে।
আর কবিতার ম্যাজিকটা বুঝে ফেলে তারাই যারা এর অর্থহীনতা আবিষ্কার করে।
দুর্ভাগা মানুষের কাছে কবিতা অর্থহীন।

(১৫৯)
দার্শনিকতার সাথে পাণ্ডিত্যের কোনো সম্পর্ক নেই;
শিশুর মতো প্রশ্ন আর কৌতুহলের কলগুঞ্জনই দার্শনিকতা।
দার্শনিক যেখানে অনায়াসে শিশু হয়ে যান, পণ্ডিত সেখানে অক্ষম।

(১৬০)
ভুল করে যে ভুল করে, সে হৃদয়বান; সংশোধন তার আয়ত্তেই থাকে।
যে ভুল করে না কখনো, সে হৃদয়হীন; সংশোধনের অযোগ্য।


[১৪১-১৫০][*][১৬১-১৭০]


মন্তব্য

অপছন্দনীয় এর ছবি

এইবারে বেশীরভাগই মাথার উপর দিয়ে গেলো :(।

রণদীপম বসু এর ছবি

বাঁচা গেলো ! মাথার ভেতর দিয়ে গেলে সব কিছু আউলা করে কী সমস্যাটাই না হতো !! হা হা হা !!!

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

অতিথি লেখক এর ছবি

১৫৩,১৫৫, ১৬০ দুর্দান্ত!

রণদীপম বসু এর ছবি

ধন্যবাদ।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাল লাগলো। ১৬০ নম্বরটা মনে ধরলো সবথেকে বেশি।
একটু অফটপিক একটা প্রশ্ন করি, মুসা ইব্রাহিম কি উনার ছবি প্রদর্শন করেছিলেন শেষ পর্যন্ত? ১৫৩ নম্বরটা পড়ে কেন যেন প্রশ্নটা উদয় হোল।
-রু

রণদীপম বসু এর ছবি

উৎবচন-সূত্র কোন ব্যক্তিবিশেষকে কেন্দ্র করে রচিত হয়নি। চলমান বাস্তবতা আর চিরায়ত মানবিক বোধের অসংগতি বা সীমাবদ্ধতাগুলোকে তীর্যক আলোয় দেখার চেষ্টা করা হয়েছে কেবল। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

অতিথি লেখক এর ছবি

দাদা, ১৫৮ এর কথা বলছি-
অর্থ না বুঝে উপলব্ধি জাগাবো কী করে। হাসি

রণদীপম বসু এর ছবি

কেন মিষ্টি তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা না জেনেও জিহ্বায় চেখেই মধুর মিষ্টত্বের স্বাদ নেয়াটা বোধয় নিরাপদ উপলব্ধি। অন্তত আমার মতো বোকাদের জন্য। জীবনানন্দ খুব একটা বুঝি না আমি, অথচ একটা বিভ্রমের মধ্যে ডুবে থাকতে ভালোই লাগে আমার। সবকিছু সবার জন্যে হবে এমন তো নয়, কী বলেন !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

বরাবরের মত। দারুণ!

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

রণদীপম বসু এর ছবি

উৎবচনের কোন বৈজ্ঞানিক সূত্র কি আছে, রতন ?

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

১৫২ নং টা বেশি ভালো লাগলো!

রণদীপম বসু এর ছবি

কী ব্যাপার পান্থ ! পুরস্কার একটা চালু কইরা দিবেন নাকি !!

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

আপনার নাম লিখুন এর ছবি

(১৫১)
আমরা শুধু মুখে নয় চোখেও কথা বলি।

(১৫২)
জীবনের অর্থ খুঁজে পাওয়ার সরল পদ্ধতি হলো আনন্দ দেয়া।
আনন্দ পেতে হয়তো ন্যূনতম যোগ্যতা (ভাগ্য) থাকতে হয়,
আনন্দ দেয়ার জন্য কোনো যোগ্যতার দরকার হয় না।
আনন্দ বারবার পাওয়া যায় না, কিন্তু বারবার দেয়া যায়।

(১৫৩)
কোন অর্থে নিঃস্ব? টাকা-পয়সার দিক থেকে হলে ঠিকাছে। না হলে কথা আছে...

(১৫৪)
একমত। কিন্তু ব্যক্তিত্ববান কি অনুগত হতে পারে না?

(১৫৫)
চলুক

(১৫৬)
অযোগ্য ব্যক্তিকে দেয়া হলে পুরস্কার নিজেই অপমানিত হয়;
পুরস্কার প্রদান নয়, প্রত্যাখ্যানের যোগ্যতাই যোগ্যতার মাপকাঠি।

(১৫৭)
যে বচন নতুন কোনো প্রশ্ন নয়, বরং একগুচ্ছ প্রশ্ন তৈরি করে?
তা কেবল বচন নয়, উৎবচন। দেঁতো হাসি

(১৫৮)
কবিরা কি তাহলে দুর্ভাগা? চিন্তিত

(১৫৯)
দার্শনিকতার সাথে পাণ্ডিত্যের কোনো বিরোধও নেই;
শিশুর মতো প্রশ্ন আর কৌতূহলের ফলশ্রুতিই পাণ্ডিত্য।
শিশুরাও দার্শনিক, তবে তাদের পণ্ডিত হতেও বাধা নেই।

(১৬০)
যে ভুল স্বীকার করে না, সে হৃদয়বান হলেও সংশোধনের অযোগ্য।

কুটুমবাড়ি

রণদীপম বসু এর ছবি

আপনার মন্তব্যগুলোও তো --বচন হয়ে গেছে ! এগুলো থেকেই মনে হয় আরো কিছু উৎবচনের জন্ম হবে !! যেমন-
(১৫১) আমরা কথা বলি চোখে; মুখ তার অনুবাদ করে।
(১৫২) আনন্দ পেতে না জানলে আনন্দ দেয়া যায় না।
(১৫৩) অর্থহীনতার সবচাইতে বড় অর্থ হলো এর কোন অর্থ না থাকা।
(১৫৪) বিশ্বস্ততায় থাকে বিশ্বাসের শক্তি ও দায়বদ্ধতা; আনুগত্যে থাকে ক্ষমতার কাছে নতজানুতা।
(১৫৬) পুরস্কারের নিজের কোন যোগ্যতা নেই; অর্পিত ব্যক্তির যোগ্যতা দিয়েই পুরস্কারের মূ্ল্যমান নির্ধারিত হয়।
(১৫৭) অর্থ না হলে বচন হয় না; প্রশ্নবিদ্ধতা না থাকলে উৎবচন হয় না। (এইখানে একটা গোপন হাসির ইমো হবে)
(১৫৮) দুর্ভাগ্যকে বরণ করতে না জানলে কবি হওয়া যায় না।
(১৫৯) না-জানার প্রশ্নে যিনি সর্বদাই উন্মুখ, তিনিই দার্শনিক; আর জানার বিজ্ঞতায় যিনি নতজানু, তিনি পণ্ডিত।
(১৬০) যে ভুল স্বীকার করতে জানে না, সে কখনোই হৃদয়বান হয় না।

এই জন্মচিৎকারগুলোই হয়তো কোন এক সিরিজে নবজাতক উৎবচন হয়ে আসতে পারে।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

কৌস্তুভ এর ছবি

চলুক

শুরুতে অসার হবে নাকি অসাড়?

অতিথি লেখক এর ছবি

অসাড়=সাড়া দেয় না। অসার=সার নেই যাতে। অসাড় জিহ্বাকে অসার বলা যায় বোধ হয়। চিন্তিত

কুটুমবাড়ি

রণদীপম বসু এর ছবি

ওটা অসাড়-ই হবে। আমিই বানানে ভুল করেছি। ধন্যবাদ ভুল ধরিয়ে দেয়ার জন্য। সাথে ভুল শব্দটারও চমৎকার একটা অর্থবোধ তৈরি করার জন্য কুটুমবাড়িকে অভিনন্দন।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

বাণী চিরন্তণ হাসি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

রণদীপম বসু এর ছবি

ধন্যবাদ নজু ভাই !
বাণী কখনোই চিরন্তন হয় না, যতক্ষণ না তা মানুষের বোধে স্থায়িত্ব পায়।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

অতিথি লেখক এর ছবি

জাস্ট অসাধারণ...
ঘটনা একটা বিষয়, কিন্তু বিষয় কোন ঘটনা নয়।
যোগ্য ব্যক্তির পুরস্কৃত হওয়া কোনো বিষয় নয়, না-হওয়াটাই বিষয়;
আর অযোগ্য লোকের পুরস্কার না-পাওয়া কোনো বিষয় নয়, পাওয়াটাই ঘটনা।

-আদু ভাই

রণদীপম বসু এর ছবি

ধন্যবাদ।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

Rabbi  এর ছবি

হুমায়ুন আজাদের প্রবচন গুচ্ছ----------মনে পড়ছে

রণদীপম বসু এর ছবি

ধন্যবাদ রাব্বি। হুমায়ুন আজাদের প্রবচনগুচ্ছের কথা মনে যখন পড়লোই, তাহলে এখান থেকে পড়ে নেন আরেকবার !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

মাহবুব লীলেন এর ছবি

বুঝছি
আপনি কোন জায়গায় পুরস্কার পাইতে পাইতে গিয়া ছ্যাকা খাইছেন
আমাগোরে বলেন কী পুরস্কার চান
কালকেই কাঁটাবন থাইকা একখান মেডেল বানাইয়া ঝুলাইয়া দিমু আপনের গলায়

রণদীপম বসু এর ছবি

সর্বনাশ ! পুরানা দিনের ব্যবসার কথা এখনো ভুলতে পারেন নাই !! সবকিছু কি আর সহজে ভুলা যায় !!!

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

নতুন উপলব্ধির খোরাক!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

রণদীপম বসু এর ছবি

ধন্যবাদ।
আসলে চিরায়ত কিছু উপলব্ধিকে নতুনভাবে টোকা দেয়া !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।