| ঘড়ায়-ভরা উৎবচন…|২৪১-২৫০|

রণদীপম বসু এর ছবি
লিখেছেন রণদীপম বসু (তারিখ: বুধ, ১২/১২/২০১২ - ১০:১৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


(২৪১)
অন্ধবিশ্বাস কোন বিশ্বাস নয়, এতে যুক্তিবোধ নেই;
অন্ধভক্তও প্রকৃতপক্ষে ভক্ত নয়,
কারণ তাদের কোন বিবেচনাবোধ থাকে না।

(২৪২)
সাধারণ মানুষ কখনো ইতিহাস বিকৃত করে না;
নির্লজ্জ ফায়দার লোভে জ্ঞানপাপীরাই ইতিহাস বিকৃতিতে নামেন।

(২৪৩)
ঝগড়াটে মেয়েদের স্মৃতিশক্তি হয় প্রখর;
পুরুষের ক্ষেত্রে ঠিক তার উল্টো।

(২৪৪)
সাহিত্যে কল্পনা মূখ্য হলেও ইতিহাসে কল্পনাবিলাসের স্থান নেই;
সাহিত্যক্ষুধা ও মোহে ইতিহাস সম্ভ্রম হারায়।

(২৪৫)
চাইলেই কেউ নষ্ট হতে পারে না;
নষ্ট হতেও সুযোগের দরকার হয়।

(২৪৬)
নিজেকে ত্যাগী বঞ্চিত রেখে অন্যকে সুযোগ ও সাচ্ছন্দ্য দেয়ার মধ্যে
যতই ভাববাদী মাহাত্ম্য থাক্, ট্র্যাজেডি হচ্ছে
একজীবনে বস্তুগত সুখ ও সমৃদ্ধিহীন ত্যাগীজীবন চাপা পড়া বঞ্চনারই ইতিহাস।
যাকে মানুষ প্রশংসা করে, কিন্তু কামনা করে না।

(২৪৭)
ক্ষমতা আর পাগলামি একে অন্যের পরিপুরক;
এতে যা-খুশি করার স্বাধীনতা পাওয়া যায়।

(২৪৮)
রান্নাকে সুস্বাদু করতে কিছু কূটকৌশলের দরকার হয়; তাই
রন্ধনপটুরা কূটকৌশলী হয়।

(২৪৯)
পাগলের সাথে সহাবস্থানই পাগলের চিকিৎসকদের ট্র্যাজেডি;
ক্রমে ক্রমে এরা সুস্থ পরিবেশ থেকেই বিচ্ছিন্ন হয়ে যান।

(২৫০)
সময়কে প্রকৃষ্টভাবে ব্যবহারের উপায় হচ্ছে সময় ভুলে যাওয়া;
মানুষ যতক্ষণ সময় সম্পর্কে সচেতন থাকে
ততক্ষণ সময় তার কাজে আসে না।

[২৩১-২৪০][*][২৫১-২৬০]


মন্তব্য

দীপ্ত এর ছবি

সবগুলোতেই ধাক্কা আছে, উৎবচনে যা থাকতে হয়। শেষটা খুবই ভালো লেগেছে।

রণদীপম বসু এর ছবি

ধন্যবাদ।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

সৌরভ  এর ছবি

ভালো লাগলো। শুধু ২৪৫ এর সাথে একমত হতে পারলাম না। ভালো হবার মতোই, যার নষ্ট হবার কৌতূহল থাকে, সে বোধহয় সুযোগ করেই নিতে পারে। ২৪৬ চরম।

রণদীপম বসু এর ছবি

নষ্ট হবার ক্ষেত্রে আপনি কিন্তু আমার বক্তব্যের বাইরে যান নি। হা হা হা ! এক্ষেত্রে মনে হয় সুযোগ করে নেয়া যায় না, সুযোগ পেতে হয়। তখনই সুযোগ নেয়া না নেয়ার বিষয় থাকে।
এই জগতে আমরা অধিকাংশ ভালো লোকেরাই কিন্তু সুযোগের অভাবেই চরিত্রবানের সার্টিফিকেট নিয়ে আছি, সেটাও ভুলে গেলে চলবে না ! হা হা হা !!

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

তাপস শর্মা এর ছবি

২৪৫, ২৪৭ - বেশী ভালো লেগেছে। তাছাড়া উদবচন বরাবরের মতোই দারুণ

০২
একটা দ্বিমত আছে। ''সাধারণ মানুষ কখনো ইতিহাস বিকৃত করে না;/ নির্লজ্জ ফায়দার লোভে জ্ঞানপাপীরাই ইতিহাস বিকৃতিতে নামেন।'' -- আপনি যে অর্থে বলতে চেয়েছেন সেটা ধরতে পেরেছি। তবে মনে হয় এটা সম্পূর্ণ অর্থে বলা নয় ? তাই কি ? কেননা সাধারণ মানুষের দ্বারাও ইতিহাস ভয়ানকভাবে বিকৃত হয়

রণদীপম বসু এর ছবি

আপনার দ্বিমতকে শ্রদ্ধা জানিয়েই আপনার দ্বিমতের সাথেই আমি দ্বিমত পোষণ করি।
সাধারণ মানুষ আসলেই কি ইতিহাস বিকৃত করে ? না কি তাদের অজ্ঞতা প্রসূত ভুল ইতিহাস বয়ান করে, সেটা ভাবতে হবে। ইতিহাস বিকৃতিতে সাধারণ মানুষ কখনোই কর্তার ভূমিকায় থাকে না। যারা বিকৃত করে, তারা জেনেশুনে উদ্দেশ্যমূলকভাবেই তা করে। এবং সাধারণ মানুষ এই বিকৃতির শিকার হয়ে যায়।

অনেক ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

অতিথি লেখক এর ছবি

সবকটাই খুব ভালো লাগলো- জীবন্ত এবং প্র্যাকটিক্যাল।

--------------------------------------------------------

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই

রণদীপম বসু এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে।
(তবে আপনার অতিথি পরিচয়ের মধ্যেও যে একটা নিজস্ব পরিচয় আছে, সেটা মন্তব্যের কোথাও লিখে প্রকাশ করলে ভাব বিনিময়টুকু আরেকটু সাবলীল হতে পারে বলে মনে হয়। আশা করি পরবর্তীতে তা ভেবে দেখবেন। )

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

উত্তম জাঝা!

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

রণদীপম বসু এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

অতিথি লেখক এর ছবি

নিজেকে ত্যাগী বঞ্চিত রেখে অন্যকে সুযোগ ও সাচ্ছন্দ্য দেয়ার মধ্যে
যতই ভাববাদী মাহাত্ম্য থাক্, ট্র্যাজেডি হচ্ছে
একজীবনে বস্তুগত সুখ ও সমৃদ্ধিহীন ত্যাগীজীবন চাপা পড়া বঞ্চনারই ইতিহাস।
যাকে মানুষ প্রশংসা করে, কিন্তু কামনা করে না।

এইটা সবচাইতে বেশী ভালো লাগসে। বাকীগুলোও দারুণ!!

ফারাসাত

রণদীপম বসু এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

চলুক চলুক
২৪১,২৪৭,২৫০ খুব ভালো লাগল।

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

রণদীপম বসু এর ছবি

আপনাকেও চলুক চলুক

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

শিশিরকণা এর ছবি

দারুন একটা সিরিজ।
২৪৩- লিঙ্গভিত্তিক সোজা উপসংহার তানার দিন গেছে গা। ঝগড়াটে মাত্রই প্রখর স্মৃতিশক্তির অধিকারী হয়, তবে অপ্রয়োজনীয় জিনিস তারা বেশি মনে রাখে।
২৪৬,২৫০- ভালো।
২৪৯- পাগলের সাথে থাকাই আজকাল বেশি সুখকর। গেঞ্জাম কম।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

রণদীপম বসু এর ছবি

একটা বিষয় হয়তো পরিষ্কার করতে পারি নি যে, ২৪৩ নম্বরটা আসলে লিঙ্গভিত্তিক প্রপঞ্চ নয়, এটা আসলে প্রকৃতিভিত্তিক মনোজাগতিক বিশ্লেষণের প্রচেষ্টা। আমি নিজেও লিঙ্গভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি বিরোধী।
বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় নারী ও পুরুষের মনোজাগতিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াগুলি আসলে চলমান ব্যবস্থারই অসংগতি। সামাজিক কাঠামো যাকে যে অবস্থানে রেখেছে বা থাকতে বাধ্য করেছে, সেটারই উপযোগ হিসেবে যে সংবেদনের সৃষ্টি হয়, মূলত তা থেকেই এ পাঠ নেয়া। জানি না আপনাকে বোঝাতে পারলাম কিনা।

আর পাগলের বিষয়টাতে আপনার উপলব্ধির সাথে আমারও দ্বিমত নেই। কেননা, পাগল হলো প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সংগতিহীন সত্তা। এখন প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গিটাই যদি অসংগতিপূর্ণ হয়, তাহলে কে কাকে পাগল বলবে !! এসময়ে আমরা যাদেরকে পাগল বলি, তারা আসলে সমাজের জন্য ক্ষতিকারক নয়। যারা ক্ষতিকারক তাদেরকে আমরা পাগল বলি না। মাঝে মাঝে নিজেকেই তো পাগল মনে হয় !!

মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

প্রথমটা নিয়া কথা আছে, আমার বরং উলটা মনে হয়, অন্ধবিশ্বাসই একমাত্র বিশ্বাস। কারণ যুক্তি প্রমাণের ধার ধারলে আর বিশ্বাস করার দায় থাকে কী?

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

রণদীপম বসু এর ছবি

আপনার বক্তব্য একদিক থেকে অবশ্যই যৌক্তিক।
তবে আমি একটু তির্যক দৃষ্টিতে বিষয়টাকে অন্যরকমভাবে দেখার চেষ্টা করেছি কেবল।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

স্যাম এর ছবি

উত্তম জাঝা!

রণদীপম বসু এর ছবি

আপনাকেও উত্তম-(মধ্যম জাঝা) ! হা হা হা !!

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

ভালো লাগলো উৎবচন।
বহুদিন পরে, বহুপথ ঘুরে।

রণদীপম বসু এর ছবি

কানে কানে বলি ! আসলে আজাইরা কাজে পড়ে আছি তো, তাই ফাঁকিবাজের তালিকা এড়ানোর অপকৌশলে মাঝে মাঝে এরকম পোস্ট দিয়ে বসি ! হা হা হা !!

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

সাহিত্যে কল্পনা মূখ্য হলেও ইতিহাসে কল্পনাবিলাসের স্থান নেই;
সাহিত্যক্ষুধা ও মোহে ইতিহাস সম্ভ্রম হারায়।

হুমায়ূন আহমেদের একটা কথা অনেকেই কোট করেন - তোমরা ইতিহাস লেখ আর আমি সাহিত্য লিখি - বা এরকম একটা কথা।
এ বক্তব্যের দারুণ জবাব হতে পারে এ উৎবচন। চলুক

রণদীপম বসু এর ছবি

বিষয়টা আসলে একটু জটিলই। কেননা, সাহিত্য আসলে এক ধরনের দায়বদ্ধতাই। আর ইতিহাসাশ্রিত সাহিত্যে এই দায়বদ্ধতা কোনভাবে ক্ষুণ্ন করার অধিকার কারো থাকতে পারে না। এরকম সাহিত্যে নতুন কোন চরিত্র সৃষ্টি করে উদাহরণস্বরূপ মিরজাফরের বেঈমানির প্রতিক্রিয়ার চরিত্রটির বহুমাত্রিক প্রতিক্রিয়ার ইচ্ছেখুশি রূপায়ন তৈরি করতে পারেন, কিন্তু মিরজাফরকে কেউ যদি সাহিত্যে আত্মত্যাগী দেশপ্রেমিক বানিয়ে ফেলেন, তাহলে তো ইতিহাসকে ধর্ষণ করাই হবে !
ইতিহাসে যার যা চরিত্র নির্ধারণ হয়ে গেছে, তাকে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আলোকপাত করা যেতে পারে, কিন্তু ইতিহাসের চরিত্রটি পাল্টে ফেলাকে কোনভাবেই বৈধতা দেয়ার উপায় নেই। তাই সাহিত্য লিখি বলে নিজে যতো দিগম্বরই হয়ে যান না কেন, ইতিহাসে হাত দেয়া মানেই যে অন্য অনেকের সম্ভ্রমের এলাকায় ঢুকে যাওয়া, সেটা যে সাহিত্যিক ভুলে যাবেন তাকে গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়া ছাড়া সভ্য মানুষের তো ভিন্ন কোন পথ থাকে না !

ধন্যবাদ শিমুল।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

পথিক  এর ছবি

সবগুলোই দারুণ। তবে ২৪৬ এবং ২৫০ নম্বর বেশি ভালো লেগেছে।

রণদীপম বসু এর ছবি

ধন্যবাদ।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

সৈয়দ নাঈম গাজী এর ছবি

২৪৭ খুব ভাল লাগল…
আর বাকিগুলোর কথা নাই বললাম…

রণদীপম বসু এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে।
আসলে উৎবচনের লক্ষ্য হলো আমাদের অভ্যস্ত চিন্তাস্রোতের মধ্যে একটু অন্যরকম খোঁচা দিয়ে আমাদের ভাবনাটাকে ফের একবার আলোড়িত করার একটা ভিন্নমুখি চেষ্টা।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

তারেক অণু এর ছবি

অন্ধবিশ্বাস কোন বিশ্বাস নয়, এতে যুক্তিবোধ নেই;
অন্ধভক্তও প্রকৃতপক্ষে ভক্ত নয়,
কারণ তাদের কোন বিবেচনাবোধ থাকে না।
উত্তম জাঝা!

রণদীপম বসু এর ছবি

অণু, এই জিনিস এতো হাইলাইট করে পছন্দ করছেন ভালো কথা ! এইবার খোঁজ নেন, ভক্ত সংখ্যা কী পরিমাণ হারাইলেন ! হা হা হা !

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।