সেন্ট্রাল আফ্রিকার মালাউইতে এক ঝোড়ো রাত এবং রিলিফ ডিস্ট্রিবিউশন

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি
লিখেছেন রাতঃস্মরণীয় [অতিথি] (তারিখ: রবি, ২৪/০৪/২০১১ - ৪:২১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

Malawi people

(এটা আমার স্বল্পদৈর্ঘের কর্মজীবনের অন্যতম স্মরণীয় একটা ঘটনা। মালাউইর সামান্য কিছু ছবি আমার কাছে থাকলেও অপ্রাসাঙ্গিক বিধায় দিলাম না। ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত কিছু ছবি থাকলেও তা পুরোনো ল্যাপটপ ক্র্যাশ করার সাথে সাথে বিলা হয়ে গেছে। তখন তো আর ফেসবুক ছিলোনা। যদি কোন ছবির প্রিন্ট কখনও খুঁজে পাই তখন এখানে জুড়ে দেবো। লেখাটা মনে হচ্ছে একটু বড়োই হয়ে গেলো। অগ্রীম ক্ষমা চেয়ে রাখছি সেজন্যে যদি লেখার দৈর্ঘ্য বিরক্তিউৎপাদক হয়।)

২০০৬এর এপ্রিল। তারিখ সঠিক মনে পড়ছেনা। আমি তথন মধ্য আফ্রিকার দরিদ্রতম দেশ মালাউইতে কাজ শুরু করেছি। এই দেশ এমনই এক দেশ যা বিগত বছরের পর বছর ওয়ার্ল্ড হাংগার ম্যাপে প্রথম পাঁচ দেশের মধ্যে থাকে। এছাড়া দেশটা চরম এইচআইভি ঝুঁকির মধ্যে আছে। একটা সূত্রে জেনেছিলাম যে ওদের সেসময়কার মোট জনগোষ্ঠির ১৩.৬০ শতাংশ এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত। দারিদ্র্যের এতো প্রকট রূপ আমি এখনও আমার জীবনে আর দেখিনি আর সম্ভবত দেখবোওনা। এদেশের অধিকাংশ মানুষ দিনে মাত্র একবার খেয়ে এবং এক গ্লাসেরও কম পানি পান করে বছরের পর বেঁচে থাকে। গোটা দেশের ইকনোমিক টার্ণওভারের ৯৮ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে গুজরাটী বংশোদ্ভূত মালাউইয়ানরা। এরা কতো বড়লোক, দেখলেও বিশ্বাস করা যায়না। আমার বসের সাথে পূর্বপরিচিতের সুবাদে কাসেম (Kassam) পরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠতা হয় এবং তাদের বাড়িতে দেখেছি ৫০ কেজি বস্তার ১৮-২০ বস্তা ১০০ ডলারের বিলস্‌ সবসময়ে ফেলে রাখে কনটিনজেন্সি হিসেবে। এরা ড্যামের পাশ ঘেষে পাহাড় কিনে এমন জায়গায় বাড়ি তৈরী করেছে যে আর কারও বাপের সাধ্য নেই ওদের বাড়ির পরে আর বাড়ি তৈরী করে। কাসেম পরিবারের বাবা গাফফার কাসেম একসময়ে তার রপ্তানী অর্ডারগুলোর অনেককিছুই বাংলাদেশ থেকে তৈরী করাতেন, যেমন কাপড়ের ব্যাগ, কাগজের ঠোঙা, ইত্যাদি। আর তার বড় ছেলের শ্বশুরবাড়ি ময়মনসিংহে। নিচের ছবিদুটো প্রথমটা আমার বাসার কম্পাউন্ডের এবং দ্বিতীয়টা কাসেমদের বাড়ির বারান্দায় দাঁড়িয়ে।

যাক, যেজন্যে এ লেখা, সেটায় চলে যাই। আমি তখন একটা আন্তর্জাতিক এনজিওর এ্যাকটিং কান্ট্রি ডিরেক্টর সেখানে। চরম খরাপিড়িত দেশেটা যখন সামান্য কিছু ফসল ফলিয়ে আশায় বুক বাঁধছিলো, ঠিক তখনই বুনো হাতির দঙ্গলের মতো প্রবল পাহাড়ি ঢল আর বন্যা এসে হারভেষ্টের ঠিক আগের মুহুর্তে সবকিছু তছনছ করে দিয়ে চলে গেলো। আগের ইনটেরিম কান্ট্রি ডিরেক্টর আমাকে চার্জ বুঝিয়ে দিয়ে চলে গেছে এবং পরেরজন করে আসবে তার ঠিক নেই। রিক্রুটমেন্ট প্রক্রিয়া কেবল শুরু হয়েছে। আমার কাছে আনরেস্ট্রিকটেড ফাণ্ডের কিছু টাকা ছিলো যেটা ব্যায় করার জন্যে আমাদের পরিকল্পনা ছিলো যে যদি কোনওভাবে কিছু ফুডস্‌ বা নন ফুডস্‌ রিলিফ পাওয়া যায় তবে তা বিতরণ করা। দু’টো এলাকায় উপকারভোগীর তালিকা চুড়ান্ত করা ছিলো যাতে করে রিলিফ পেলেই আমরা সাথে সাথে বিতরণে নেমে যেতে পারি।

গুজরাটী বিগ শটদের সংস্থা মালাউই মুসলিম এ্যাসোসিয়েশনের কর্ণধার মি. সিদাত হঠাৎই একদিন ফোন করে ৬০ মেট্রিক টন মেইজ দিতে চাইলেন। আমি সানন্দে তাকে সন্মতি জানালাম। তখন অফিসে আমরা মাত্র দু’জন কর্মী। কান্ট্রি অফিসের জন্যে রিক্রুটমেন্ট শুরু হয়নি, কেবলমাত্র নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। আমার সাথে তরুন এক ইজিপশিয়ান-বৃটিশ হিশাম বিন মোহামেদ আবদেল রহমান এল ফায়েদ, সংক্ষেপে হিশাম এল ফায়েদ এবং তারথেকেও সংক্ষেপে হিশাম। তার ভাষ্যমতে হ্যারডসের মালিক মোহামেদ এল ফায়েদ হচ্ছে তার দাদা, বাবার কাকা। এবং ডোডি এল ফায়েদ হচ্ছে তার বাবার কাজিন। হিসাম এ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংএ ঈর্ষণীয় সাফল্য নিয়ে বিএসসি সম্পন্ন করে তারপর ডেভলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিংএ মাস্টার্স করেছে। বর্তমানে সে বোয়িং-এ মোটামুটি ভালো একটা পদে কাজ করছে। হিশামের সাথে বসে ডিস্ট্রিবিউশন প্লান ঠিক করলাম। ঠিক হলে যে আমরা সকালে ব্লানটায়ার থেকে রওনা করে মাংগোচি’র একটা গ্রামে প্রথম বিতরণ সারবো তারপর সালিমা’র একটা গ্রামে দ্বিতীয় বিতরণ সেরে রাতে হলেও ফিরে আসবো। হিশাম রিলিফ ওয়ার্কে অনভিজ্ঞ এবং এর আগে সে মাত্র একটা ছোট্ট বিতরণকাজে অংশ নিয়েছিলো কান্ট্রি ডিরেক্টরের সাথে। পক্ষান্তরে আমি এখানে নতুন মানুষ। এলাকা চিনিনা-জানিনা। আর রিলিফ বিতরণ বেশ একটা জটিল কাজ। তাই একটু চিন্তিতও ছিলাম। হিশাম দুই গ্রামের হেডম্যানদের সাথে মোবাইলে কথা বলে বিতরনের সময় এবং জায়গা ঠিক করে নিলো। দাতাসংস্থা জানালো যে মাংগোচিতে একটা নির্দিষ্ট গ্যাস স্টেশনের সামনে দুটো মেইজ বোঝাই ৩০ টনার্স ট্রাক আমাদের অপেক্ষায় থাকবে।

হিশামের নামে ব্যাংক থেকে পর্যাপ্ত পরিমান এ্যাডভান্সের টাকা তুলে রাখলাম আগের দিন। তারপর আমরা ভোর রাতে মাংগোচির উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম। দূর্গম এলাকার জন্যে উপযোগি একটা ৪৫০০ সিসির ফোর বাই ফোর ল্যাণ্ড ক্রুজার জিপে আমরা চারজন। ড্রাইভার রশিদ, আরেকজন ড্রাইভার আলফ্রেড যাকে নিলাম আমাদের সহযোগিতা করার জন্যে, হিশাম আর আমি। ব্লানটায়ার থেকে ৪ ঘন্টার পথ মাংগোচি। মাংগোচি পৌছবার পর ট্রাক দুটোর দেখা পেলাম। যে ট্রাকটায় মাংগোচির জন্যে রিলিফ, তার ড্রাইভারকে আমাদের পূর্বনির্ধারিত গ্রামের দিকে যেতে বললেই বাধলো এক বিপত্তি। সে বেঁকে বসলো। সে জানালো যে তাকে যে তেল দেওয়া হয়েছে তাতে সে মাংগোচি সদর থেকে এক ইঞ্চিও সামনে বাড়বে না। তাকে অন্যত্র নিতে হলে তেল ভরে দিয়ে তারপর নিতে হবে। আমি এধরণের সমস্যার সাথে পরিচিত। দাতাকে ফোন করলে তিনি বললেন যে আপাতত তোমরা তেল ভরে দিয়ে দাও আর রিসিট নিয়ে নিও। পরে আমরা এটা সেট্‌ল করে ফেলবো। ড্রাইভারকে তেল নিতে বলে হিশামকে বললাম তেলের দাম দিয়ে দিতে। এমন সময়েই এক বিরাট ধাক্কা।

হিশাম টাকা আনতে ভূলে গেছে। সে এ্যাডভান্সের টাকা তার বিছানার মাথার কাছে গুছিয়ে রেখেছিলো কিন্তু আসার সময় সে টাকা আনতে আর খেয়াল ছিলো না। কি মহা এক বিপদ। আমি সবসময় বাইরে গেলে কিছু ক্যাশ সাথে রাখি। সেভাবে আমার কাছে কিছু ব্যাক্তিগত টাকা আছে কিন্তু তাতে তেল যদিও নেওয়া যেতে পারে কিন্তু অন্য খরচগুলোর কি হবে, যেমন স্থানীয় বিতরণ শ্রমিকদের মজুরী, আমাদের খাওয়াদাওয়া, জিপের তেল, টোলস, ইত্যাদি। একটু দুরে সরে গিয়ে একটা বিড়ি ধরিয়ে দ্রুত ভাবতে শুরু করলাম যে কি করা যায়। দ্রুত ফোন করলাম আমাদের এক বন্ধু মালইউর ট্রান্সপোর্ট টাইকুন মুনাফকে। মুনাফ লেক মালাউইর পাড়ঘেষে অবস্থিত মালাউইর সবথেকে বড় রিসর্ট সান-এন-স্যাণ্ডস এর মালিক। ৯৬০ মিটার বিচজুড়ে অবিশ্বাস্যরকম বিশাল তার এই রিসর্ট। ওটা মাংগুচি সদর থেকে ২৭ কিলোমিটার দুরে। মুনাফ আমাকে বললো ওর রিসর্টে গিয়ে রিসর্টের জিএম বেলা’র কাছ থেকে টাকা নিয়ে আসতে। হিশাম ঝিম মেরে পড়ে থাকলো। আমি ওকে বললাম যে ভূল হতেই পারে। এটা তোমার জন্যে একটা লারনিং। মন খারাপ করার কোনও প্রয়োজন নেই। তবুও সে আমার সাথে গেলোনা। আমি আমার টাকা থেকে ট্রাকের তেলের বিল দিয়ে হিশামকে বললাম ডিস্ট্রিবিউশন পয়েন্টের দিকে এগোতে। আমি টাকা নিয়ে এসে ওদের সাথে পয়েন্টে মিলিত হবো। ডিস্ট্রিবিউশন পয়েন্টটা মাংগোচি এবং মুনাফের রিসর্টের পথের মাঝখানে পড়ে।

রশিদকে তাড়া লাগাতে হলো গাড়ি জোরে চালানোর জন্যে। চল্লিশের আগপিছের বয়সী সুন্দরী-লাস্যময়ী-চোখে কথা বলা-গুরুনিতন্বিনী-সুবক্ষা পর্তুগীজ নারী ইজাবেল, সংক্ষেপে বেলা আমার অপেক্ষাতেই ছিলো। নিয়ে গেলো তার অফিস রুমে। নিজে ঠোঁটে একটা বেনসন গুঁজে আমার দিকে একটা বাড়ালো। চা, কফি না ঠাণ্ডা জানতে চাইলো। আমি চা বললাম। এরপর বেলা তার ড্রয়ার খুলে একগোছা কোয়াচা আমার দিকে বাড়িয়ে দিলো। কোয়াচা হচ্ছে মালাউইয়ান মুদ্রা। আমাদের টাকার প্রায় অর্ধেক মানের। আমি মুনাফের কাছে চেয়েছিলাম ২৫,০০০ কিন্তু বেলা আমাকে দিলো ৫০,০০০ কোয়াচা। আমি একটু আশ্চর্য হলে বেলা বললো পুরোটা রেখে দিতে, কিপ ইত এজ এ কনতিনজেন্সি মেজার। বেলার কাছে টাকাটা একনলেজমেন্টের জন্যে একটা রিসিট চাইলে সে সারা শরীর দুলিয়ে অট্টহাসিতে ভেঙে পড়লো। ইউ ম্যান, তুমি আমার মালিকের 'বেস্ত ফেরেন্দো', এটাতো তোমারই 'রিসরতো'। তুমি টাকা একনলেজ করতে চাইলে তো আমার চাকরীই থাকবেনা। তেল মি ম্যান হোয়াত এলজ দু ইউ ওয়ান্তো ফ্রম মি? দিস বেলা ইজ অলওয়েজ এ্যাত ইউর সার্ভিসো। কথা না বড়িয়ে বেলাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। এবার আর রশিদকে জোরে চালানোর কথা বলতে হলোনা। রশিদ ডিস্ট্রিবিউশন পয়েন্টের লোকেশন জানতো, ওটা একটা গ্রাম্য হাইস্কুল। সেখানে পৌঁছে দেখি একটা মানুষও সেই শুধু আমাদের ট্রাক আর হিশাম ছাড়া। হিশাম জানালো যে সমস্ত গ্রামের মানুষ একটা ফিউনারেলে গেছে। সেখানে দুপুরের খাওয়া সেরে তবেই তারা ফিরবে। হেডম্যান ফোনে ক্ষমা চেয়ে বললো যে ফিউনারেলের বিষয়টা তার খেয়াল ছিলো না। তবে সে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে যে তারা যেনো খাওয়াদাওয়া সেরে মাংগোচি সদরের জেলা প্রশাসন অফিস সংলগ্ন যে মাঠ আছে সেখানে গিয়ে জমায়েত হয়। আমি সত্যিই বিরক্ত হলাম এবার। এই আধপেট খাওয়া মানুষগুলো, যার ৯০ শতাংশেরও বেশি নারী, এবং অবশিষ্ঠেরা বৃদ্ধ, এই ১৩-১৪ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে সেখানে যাবে তারপর ৫০ কেজি মেইজের বস্তা মাথায় নিয়ে পায়ে হেঁটে নয়তো কোন খালি ট্রাকে চড়ে গ্রামের কাছে ফিরবে। ভাবছিলাম যে আমাদের ট্রাকটা বিতরণ শেষে যদি কিছু মানুষকে গ্রামে পৌঁছে দিয়ে যেতো। কিন্তু তা অসম্ভব। প্রায় ৬০০ মানুষ, সবাই নারী বা বৃদ্ধ। কাকে রেখে কাকে নেবে। চিন্তাটা সাথে সাথেই বাতিল করে দিলাম। এতে করে একটা ভজঘট হয়ে যেতে পারে।

ফিরে চললাম মাংগোচি সদরের দিকে। সোজা চলে গেলাম ডিসি অফিসের মাঠে। আমি গাড়ি থেকে নেমে ট্রাকে উঠে বসে থাকলাম আর বাকীদের পাঠালাম লাঞ্চ করতে। আমার ভালো লাগছিলো না তাই গেলাম না। ওরা অস্বাভাবিক দ্রুততায় লাঞ্চ শেষ করে ফিরে আসলো। আর এদিকে গ্রামবাসীরাও এক-দুজন করে আসতে শুরু করলো। মাঠের অন্য পাশ লাল-সাদা লোগো অঙ্কিত ত্রিপলে মোড়া আরেকটা ৩০ টনার্স দাঁড়িয়ে। আমাদের একজন ট্রাকের ড্রাইভারের কাছ থেকে শুনতে পেলাম যে ভোররাত থেকে ওই ট্রাকটা ওখানে দাড়িয়ে আছে কিন্তু সাথে কোনও লোকজন নেই ট্রাকের ড্রাইভার ছাড়া। ওদের বেনিফিশিয়ারীরা সেই সকাল থেকে বসে আছে। খিদেয়-তৃষ্ণায় কাতর। বাচ্চারা খিদেয় চেচাচ্ছে-কাঁদছে। কিছু অস্থির লোক পরিকল্পনা করছে ওই ট্রাকের মালামাল লুট করার। সমূহ বিপদের আশংকা। ৭-৮ ঘন্টা ধরে ৪০০-৫০০ জন অপেক্ষমান ক্ষুধার্ত মানুষের সামনে দিয়ে অন্যদের রিলিফ বিতরণ করে চলে যাবো, একটা বিরাট ঝুঁকি নিতেই হচ্ছে। হেডম্যান এসে জানিয়ে গেলো যে প্রায় সবাই চলে এসেছে। মাঠ লোকে লোকারণ্য এখন।

হেডম্যান, রশিদ, আলফ্রেড আর দুজন স্থানীয় ভলান্টিয়ার গ্রামবাসীদেরকে মহল্লা অনুযায়ী বিভক্ত হয়ে আলাদা আলাদা গাছের নিচে বসতে বললো। আমি লক্ষ্য করলাম যে সেখানে একটা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ বয়ষ্ক এবং অনেক নারী গর্ভবতী এবং অনেকের পিঠে-কাঁখে বাচ্চা আছে। আমি হেডম্যানকে বললাম আরও চারজন ভলান্টিয়ার জোগাড় করতে যারা এইসব মানুষের বস্তাগুলো দ্রুততার সাথে বিতরণ এলাকার সীমানার বাইরে দিয়ে আসবে। এতে করে বিতরণের গতি ঠিক থাকবে এবং ওদের দূর্ভোগ একটুখানি হলেও কমবে। ট্রাকের দুইপাশে দুটো বুথ করে বিতরণ শুরু করলাম। আমার টার্গেট হচ্ছে যতো তাড়াতাড়ি বিতরণ শেষ করা যায়। সম্ভাব্য লুঠতরাজের আশংকা। প্লাস, পাহাড়ী পথ বেয়ে সালিমায় যেতে হবে। সালিমার হেডম্যান হিশামকে বারবার ফোন দিচ্ছে। আমি নিজে দুই বুথেরই লাইন ঠিক রাখার কাজ করতে থাকলাম।

দ্রততার সাথে বিতরণ শেষ করে কয়েকশো ক্ষুধার্ত-অপেক্ষমার চোখের সামনে থেকে বিদায় নিলাম।

এবারের গন্তব্য সালিমা’র একটা গ্রাম। মোজাম্বিকের সীমান্তে অবস্থিত জেলার একটা গণ্ডগ্রাম। পাহাড়ি দূর্গম পথ বেয়ে অনেকটা পথ গিয়ে তারপর সমতল রাস্তা ধরে যেতে হবে সেখানে। প্রায় পুরোটা রাস্তাই মোজাম্বিকের বর্ডার ঘেষে চলতে হবে। জিপে চড়লাম আমি আর আলফ্রেড, হিশাম ট্রাকে। দু’জন দুই গাড়িতে উঠলাম যাতে দুই গাড়ির মধ্যে সমন্বয় করতে পারি। জীপ স্বভাবতই আগে চলবে এবং ট্রাক পিছনে। হঠাৎ করেই উঠলো প্রচণ্ড ঝড়। চারদিক অন্ধকার হয়ে আসলো। কড়কড় শব্দে একটার পর একটা বাজ পড়তে লাগলো। এরই মধ্যে হেডলাইট জ্বালিয়ে আমরা এগোতে লাগলাম। এবার আমরা দুই গাড়িই একসাথে চলছি। মড়মড় করে গাছ ভেঙে পড়ছে, বাজ পড়ার শব্দে গাড়ি দুলে উঠছে। মোবাইলেরও নেটওয়ার্ক ফেল করছে। সাথে কোন স্যাটেলাইট ফোনও নেই। এক জটিল অবস্থায় পড়েছি। সামনে কিচ্ছু দেখা যাচ্ছেনা। রশিদ খুবই আস্তে আস্তে গাড়ি চালাচ্ছে। আমি যা বোঝার বুঝে ফেলেছি। হিশামকে যে বলবো হেডম্যানকে ফোন করে বিতরনের প্রোগ্রাম আজকের জন্যে বাদ দিতে কিন্তু নেটওয়ার্ক না থাকায় তা’ও পারছি না। এভাবে ঘন্টাখানিক চলার পর সমতলের দেখা পেলাম, কিন্তু প্রচণ্ড ঝড় আর মুষলধারে বৃষ্টি। আর তার উপরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। রাস্তাঘাটে একটা জনমনিষ্যি নেই। আচমকা একটা দুটো ট্রাক চোখে পড়ছে কিন্তু ওগুলো রাস্তার পাশে পার্কিং করে দাঁড়িয়ে আছে।

মাঝারি গতিতে আমরা চলছি। অনেক্ষণ চলার পর হঠাৎ দেখি অচেনা ভাষায় কিছু লেখা একটা ইণ্ডিকেটর বোর্ড। খাইছে আমারে, এ তো মনে হচ্ছে পর্তুগীজ ভাষায় কিছু লেখা। তাহলে কি আমরা মোজাম্বিকের মধ্যে ঢুকে পড়েছি! রশিদ এবং আলফ্রেডও আতঁকে উঠলো। সাথে সাথে আমরা গাড়ি দাঁড় করালাম। ট্রাকের ড্রাইভার নেমে এসে নিশ্চিত করলো যে আমরা মোজাম্বিকের ভিতরে অনেকদুর ঢুকে পড়েছি। সে অনেকবার হর্ণ বাজিয়ে, হেডলাইটের সংকেত দিয়েও যখন আমাদের দাঁড় করাতে পারেনি, তখন সে সিদ্ধান্ত নেয় আমাদের পিছনে পিছনে ঢুকে পড়ার। কোনও বিপদ-আপদ হলে যাতে সে ম্যানেজ করতে পারে। বিপদজনক সরু রাস্তায় সে ওভারটেক করার ঝুঁকি নেয়নি। এবার ফিরতে হবে কিন্তু বিপদ হলো যে আমাদের ৩০ টনার্স ঘোরানোর মতো পর্যাপ্ত জায়গা সেখানে নেই। আবারও এগিয়ে চলা। অন্তত ৮ কিলোমিটার যাওয়ার পর একটা সমতল জায়গা পাওয়া গেলো ট্রাক ঘোরানোর মতো। ট্রাকের ড্রাইভার এবার বললো যে সে ফেরার পথে সামনে থাকবে। মোজাম্বিকের সীমান্তরক্ষীরা ট্রাকের উপর গুলি চালাবে না। এই ট্রাকগুলো দুদেশেই যাতায়ত করে। তবে জিপের ক্ষেত্রে অতোটা নিশ্চিন্ত হওয়া যাবেনা। এবার চললাম ট্রাককে অনুসরন করতে করতে। অবশেষে নির্বিঘ্নে মোজাম্বিকের বর্ডার পার হয়ে আবার মালাউইতে প্রবেশ করলাম। ঝড় এবার একটু কমছে, তারপরও মোজাম্বিকের সীমান্ত চৌকিতে একটা মানুষও দেখলাম না। সম্ভবত ঝড় শুরু হতেই ওরা নিরাপদ আশ্রয়ে গিয়ে উঠেছে। আমরা রাস্তার পাশে গাড়ি থামিয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম যে যেহেতু মোবাইলের নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছেনা, সেক্ষেত্রে জিপ নিয়ে আমি আগে গিয়ে ডিস্ট্রিবিউশন পয়েন্টে যাবো। তারপর গ্রামবাসীদেরকে প্রকৃত ঘটনা জানাতে হবে এবং পরদিন সকালে আসার জন্যে বলতে হবে।

মেইন রোড থেকে সরু কাচা রাস্তা চলে গেছে গ্রামের দিকে। এখান থেকে আমাদের গন্তব্য গ্রামটা প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে। হিশাম নিশ্চিত করলো যে সে মেইন রোডের মোড়টা ভালোমতোই চেনে সুতরাং সে ট্রাকের ড্রাইভারকে গাইড করে চলে আসতে পারবে। বিদায় নিয়ে দ্রুতগতিতে আমরা এগিয়ে চললাম। মেইন রোড থেকে কাঁচা রাস্তায় ঢুকলাম। রাস্তা কাঁচা হলেও সমস্যা নেই, কাঁকরযুক্ত মাটিতে চাকা স্কীড করেনা। আমরা যখন গন্তব্য গ্রামে পৌছলাম তখন বৃষ্টির শেষ, আকাশে একফালি চাঁদ। মোবাইলের নেটওয়ার্কও আসছে আর যাচ্ছে। বাজারে ঢোকার মুখেই একটা পুলিশ ফাঁড়ি। হেডম্যানকে বাজারেই পেলাম। চিকন লিকলিকে, ছয়ফুটের উপরে লম্বা। একটা ঘরের বারান্দায় গ্রাম্য রেষ্টুরেন্টে বসে কথা বলছে। সাথে স্থানীয় ফাঁড়ির সহকারী সাব ইন্সপেক্টর, হেডমাস্টার, কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যাক্তি। আমাদের ঘামে এবং বৃষ্টিতে ভেজা বিদ্ধস্থ অবস্থা দেখে তারা যা বোঝার বুঝে নিলো। ওরা আমাদের একধরণের স্থানীয় প্রণালীতে তৈরী রুটি এবং চা দিয়ে আপ্যায়ন জানাতে চাইলো। চা তো তখন অমৃত। কটু গন্ধযুক্ত এবং অতিরিক্ত চিনি দেওয়া একমগ চা, তা’ই যেনো আমার কাছে অমৃত। আগেরদিন রাতে সর্বশেষ খাবার খেয়েছি, প্রায় ২৪ ঘন্টা হতে চললো। খিদের বোধ প্রায় নেই বললেই চলে। রুটিটা চায়ের সাথে খেলাম। এতো সুস্বাদু খাবার বোধ হয় এ জীবনে কমই জুটেছে। হেডম্যান গ্রামবাসীদেরকে ফিরে যেতে বলেছে এবং বলেছে পরদিন সকালের সম্ভাব্য বিতরনের কথা। আমরা পরদিনের প্ল্যান নিয়ে কথা বলছিলাম। ঠিক হলো যে ট্রাক রাতে পুলিশ ফাঁড়িতে থাকবে নিরাপত্তার বিষয়টা ভেবে। গ্রামে যেহেতু থাকার মতো কোনও ব্যবস্থা নেই তাই আমরা সালিমার দিকে যেতে কাছাকাছি কোনও একটা হোটেলে রাত কাটিয়ে সকালে ফিরে আসবো। হঠাৎ করেই হিশামের ফোন। সে পথ হারিয়ে ফেলেছে। মেইন রোড থেকে কোন কাঁচা রাস্তায় ঢুকতে হবে তা গুলিয়ে ফেলেছে কারণ মেইন রাস্তা থেকে একের পর এক অনেকগুলো কাঁচা রাস্তাই ঢুকেছে ভিতরের গ্রামগুলোর দিকে। হাইওয়েতে কোনও দোকান বা মানুষও নেই যার কাছ থেকে ওরা ডাইরেকশন নিতে পারে। হেডম্যান ভাঙা ভাঙা নেটওয়ার্কের মধ্যে ফোনে ড্রাইভারকে পথ বোঝাতে লাগলেও এক পর্যায়ে তা ব্যার্থতায় রূপ নিলো। আমি সাথে সাথে রশিদকে গাড়ি দিয়ে পাঠিয়ে দিলাম। এদিকে সময় কেটে যাচ্ছে কিন্তু হিশামের আর কোনও ফোন পাই না। মোবাইল হাতে ধরে নেটওয়ার্ক খুজতে লাগি, পেলেই হিশামকে ফোন করি। রশিদ এবং হিশাম তখনও পরষ্পরের দেখা পায়নি। আবার রেস্টুরেন্টে এসে বসলাম। পুলিশ অফিসার বললো যে আমরা এতো কষ্ট না করে রিলিফের মেইজগুলো তাদের হাতে দিয়ে চলে যেতে পারি এবং তারা বিতরণ শেষ করে টিপসইয়ের মাষ্টাররোল আমাদের কাছে ব্লানটায়ারে পৌছে দেবে। আমি একবাক্যে তার কাছে দুঃখপ্রকাশ করলাম। হেডম্যানও ঠিক তাকে সমর্থন করলো না।

সিদ্ধান্ত নিলাম যে মেইন রোডের দিকে এবার হাঁটা ধরবো। সবাই অবাক হয়ে গেলো আমার হাঁটার কথা শুনে। একরকম জোর করেই রুটি আর চায়ের বিল দিয়ে দিলাম। ঠিক হলো হেডম্যান আমাদের সাথে যাবে। এখন আবার টিপটিপ বৃষ্টি শুরু হলো। পরনের জিনস আর মোটা গেঞ্জি ভিজে একাকার। হাটছি তো হাটছি। হেডম্যান আর আলফ্রেডের সাথে যা মনে আসছে তাই নিয়ে কথা বলছি। প্রায় ৪ কিলোমিটার পথ এসেছি। এসময়ে হিশামের ফোন। সে জানালো যে রশিদ এবং সে পরষ্পরের দেখা পেয়েছে এবং আমাকে অনেক্ষণ ধরে কল করার চেষ্টা করে পাচ্ছিলোনা। তারা এখন গ্রামের দিকে ঢুকতে যাচ্ছে। আমি সাথে সাথে মানা করে দিলাম। পুলিশের ধান্ধা আমার কাছে ভালো মনে হয়নি। ট্রাককে মেইন রোডেই রেখে আমি রশিদকে জিপ দিয়ে পাঠিয়ে দিতে বললাম। আর হিশামকে ট্রাকেই থাকতে বললাম। আরও প্রায় ২০ মিনিট হাঁটার পর হেডলাইটের চোখ ধাঁধানো আলোয় রশিদ তার আসার বার্তা জানান দিলো। আমরা চললাম মেইন রাস্তার দিকে।

হিশাম তার দুঃখপ্রকাশ শুরু করার আগেই আমি ওকে হার্ড ওয়ার্কের জন্যে ধন্যবাদ দিলাম। ট্রাকের ড্রাইভার অনুরোধ করলো তাদের মালিককে ঘটনা জানাতে; কারণ তার রাতেই ফিরে যাওয়ার কথা কিন্তু সে তা পারছে না। অতিশয় ভদ্রলোক ট্রাকের মালিক। আমাদের সবকথা শুনে বুঝলো। সাথে সাথে এও জানালো যে তারা যে বাড়তি ভাড়া চার্জ করবে তা আমাদের দাতার কাছে থেকে বুঝে নেবে। রশিদ অত্যন্ত ক্লান্ত, আলফ্রেডও তাই। আমি গায়ের গেঞ্জিটা খুলে কোমরে বাঁধলাম। সারা গা ঘামে চটচট করছে। রশিদকে রিলিফ দিয়ে আমিই ড্রাইভিং সিটে বসলাম। আলফ্রেড গিয়ে বসলো ট্রাকে আর হিশাম আসলো জিপে। ট্রাকের ড্রাইভার জানালো যে এখান থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার সোজা চালিয়ে গেলে হাতের বা দিকে একটা হোটেল পড়বে, নামটাও বলে দিলো। আমরা আগে গিয়ে বসতে পারি যতক্ষন না তারা আসছে। গর্জে উঠলো ৪৫০০ সিসির এঞ্জিন। দুই মিনিটের মধ্যে গাড়ি ফিফথ গিয়ারে এনে ছুটতে লাগলাম। এসি বন্ধ করে দিয়ে জানালা খুলে দিয়ে চুলে বাতাস খাওয়াতে লাগলাম। ফাঁকা হাইওয়েতে গাড়ি ছুটতে লাগলো ১০০-১২০ বা আরও বেশি গতিতে। দেখা পেলাম হোটেলটার। হাইওয়ে থেকে টার্ণ করে বাঁয়ের রাস্তায় গাড়ি ঢুকিয়ে হোটেলটার সামনে এসে দাঁড়ালাম। একতলা এল আকৃতির একটা দালান। সামনে আর একটা একতলা যেটা রেস্টুরেন্ট কাম হোটেলের রিসেপশন। ভিতরের উঠোনে বেশ কয়েকটা ট্রাক আর গাড়ি। বুঝলাম ব্যবসা এদের ভালোই চলছে। রেস্টুরেন্টে কয়েকটা মেয়ে বসে ঝিমোচ্ছিলো। আমাদের দেখে তারা একটু আড়মোড়া ভেঙে উঠলো। একটু মিষ্টি হাসিও বিনিময় হলো। এরা সকলেই স্বল্পমূল্যের যৌনকর্মী। ট্রাকার্সদের জন্যে এদেরকে রাখা হয়। নিচের ছবিতে হিসাম আর আমি সেই হোটেলের সামনে।

ট্রাক এসে আমাদের সাথে যোগ দিলো। ড্রাইভার ভিতরের উঠোনে ট্রাক পার্ক করে রেখে রেষ্টুরেন্টে আসলে আমরা খেতে বসলাম। সীমা সাথে মুরগি। সীমা হচ্ছে মেইজ ফ্লাওয়ারের খামির তবে আমাদের রুটির খামির থেকে আর একটু নরম। যারা মেইজের সাথে তেমন পরিচিত না তাদেরকে বলছি, মেইজ (Zea mays) হচ্ছে ভূট্টার অন্য একটা নাম। আফ্রিকায় যে মেইজ আমি দেখেছি তার দানাগুলো আকারে আমাদের পরিচিত ভূট্টার দানা থেকে বেশ বড়। এটার আটা অনেক আফ্রিকান দেশের অন্যতম প্রধান খাদ্য। রেস্টুরেন্টটা অত্যন্ত অপরিষ্কার, টেবিলে মাছি ভরা, ঝোল পড়ে তেল চিটচিটে হয়ে আছে। সারা মেঝে মুরগিতে হেগে রেখে গেছে। রোগা শুটকো দু’টো কুকুর শুয়ে আমাদের দিকে কুৎকুৎ করে লালচে চোখে তাকাচ্ছে। আমি যে কাজ করি তাতে এই ধরণের পরিবেশের সাথে আমার মাইণ্ডসেট আছে, তাই সমস্য হয়না। হিশামের হলো বিপদ। বেচারার কাঁদো কাঁদো অবস্থা। বৃষ্টিতে ভিজেছে, নামাজ মিস হয়েছে, তারপর এই পরিবেশ আর এই খাবার। আমি ওকে একটু সহজ করার জন্যে বললাম যে তুমি যদি চাও, প্লেইনটি অব এ্যাম্যুজমেন্টস আর এ্যারাউণ্ড। এ্যাম নট গনা টেল ইওর লাভিং ওয়াইফ এনিথিং। বলে যৌনকর্মীদের দিকে একটা চোখ টিপলাম। হিশাম তো লজ্জায় লাল। মুরগির গোশতে কোন স্বাদ পদার্থ বলে কিছু নেই। লোহার মতো শক্ত। একটু পেয়াজ আর কাঁচামরিচ মেখে খাবারটাকে ঝাল ঝাল করে কপকপ করে খেয়ে নিলাম। এবার আমাকে নেয়া হলো শোবার ঘরে। ছোট্ট একটা রুম, তাতে একটা চৌকি ফেলা। মশারী টানানো আছে। রুমে কোনও টয়লেট নেই। বাইরে দুটো টয়লেট আছে মাত্র। গর্তের উপরে কনক্রিটের স্লাব সেট করা। হাগুর পরে খরচযোগ্য পানির কোনও ব্যবস্থা নেই তবে দুই ড্রাম ভরা গোসলের পানি রাখা আছে। বাতিল নিউজপেপার টুকরো টুকরো করে রাখা টিস্যু পেপারের বিকল্প হিসেবে। মালাউই বা কেনিয়ায় দেখেছি টয়লেটগুলোতে হ্যাণ্ড শাওয়ার বা পানি খরচের ব্যবস্থা থাকেনা। যার পানির দরকার তাকে নিজে থেকেই ব্যবস্থা করে নিতে হয়। অন্যেরা হাগু করে টিস্যু পেপারের ক্বুলুপ দিয়েই সারে। হোটেলের ম্যানেজার বললো রাতে যদি কিছু প্রয়োজন হয় তবে বারান্দায় লোক বসা থাকবে, তাকে বললেই চলবে।

বিছানায় শুয়ে বলিস সাইজ করতে গিয়ে দেখি বালিশের নিচে এক বাক্স কনডম রাখা। পরে জানলাম যে এই কনডমগুলো এনজিওকর্মীরা ফ্রি দিয়ে যায়। স্থানীয় প্রশাসন হোটেলগুলোর জন্যে এই ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে। হালকা ঘুম ঘুম এসেছে। এমন সময়ে হৈ-হল্লার শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো। বোরোবো কি বেরোবোনা ভাবতে ভাবতে দরজা খুলে বেরোলাম। গেষ্ট এসেছে এবং তাদের গাড়ি রাখতে পারছেনা। ওরা বলছে আমাদের ট্রাক সাইজ করে রাখতে যাতে তারা তাদের সেডান পার্ক করতে পারে। দরজায় আঘাত পড়তেই ট্রাকের ড্রাইভার ভিতর থেকে জানান দিলো যে সে এখন কোনক্রমেই বাইরে আসবে না। যার গাড়ি পার্ক করার প্রয়োজন সে যেনো জায়গা খুঁজে নেয়। অগত্য আলফ্রেড অনেক কসরত করে জিপটাকে সরিয়ে তারপর সেডানটাকে জায়গা করে দিলো। সবাই শান্ত হলো। আমি আবার রুমে ঢুকে গেলাম। কিছুক্ষণ পর পিসু করার জন্যে বাইরে বেরিয়ে দেখি বারান্দায় একটা চেয়ার নিয়ে সেই মেয়েদের একজন বসে। আমি ফেরার পথে মেয়েটা আমাকে আঙুলের ইশারা করে জানতে চাইলো সেক্স করবো কি না। আমি তাকে থ্যাংকস দিয়ে আবার রুমে ঢুকে গেলাম। এক্সট্রা কোনও কাপড় সাথে নেই তাই দিগম্বরের বেশেই শুয়ে পড়লাম। ঘুমিয়ে পড়ার আগে বারান্দায় চাপা কথোপকথোন শুনতে পেলাম তারপর দুজোড়া পায়ের শব্দ শুনতে পেলাম ঢুকে গেলো পাশের কোনও একটা রুমে। বেলার কথা মনে করতে করতে চোখ জুড়ে ঘুম নেমে আসলো, “কিপ ইত এজ এ কনতিনজেন্সি মেজার”।

সকালে উঠে তাড়াহুড়োয় নাস্তা সেরে রওনা করলাম গ্রামের দিকে। সেখানে পৌছে দেখি লোকে লোকারণ্য। স্থানীয় একটা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের আঙিনায় আমাদের ডিস্ট্রিবিউশন হবে। আগের দিন এই বেচারারা অনেক্ষণ বসে থেকে চলে গেছে তাই সিদ্ধান্ত নিলাম যে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব বিতরণ শেষ করতে হবে। দুই বুথের জন্যে ট্রাক থেকে বস্তা নামাতে চারজন লোক লাগবে কিন্তু শেষ পর্যন্ত লোক আছে দুইজন। আমি আর ট্রাকের ড্রাইভার লেগে গেলাম। আমরা বস্তা ধরে তুলে নিচে দিতে লাগলাম। যারা সমর্থ, সরাসরি তাদের মাথায় আর অন্যদের জন্যে নিচের ভলান্টিয়ারদের মাথায়। প্রায় ৩০০ বস্তা এভাবে পাস করলাম। বিতরণ শেষে সামান্য কিছু উদ্বৃত্ব ছিলো। মন না চাইলেও ওগুলো ফিরিয়ে নিয়ে আসতে হবে। হেডম্যান অনুরোধ করলেন তাকে কিছু দিতে, বিনীতভাবে প্রত্যাখ্যান করতে হলো। ভলান্টিয়ারদের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটলো।

এবার ফেরার পালা। উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমরা ফিরে চললাম ব্লানটায়ারের দিকে। পথে এক পুলিশ চেকপেষ্টে একটা ট্রাক থেকে ঘুষ নেওয়ার সময় হিশাম ছবি তুলে ফেলায় আবার এক ঝামেলা বাধলো। পুলিশ তো হিশামকে এ্যারেষ্ট না করে ছাড়বেই না। পরে পুলিশকে পাশে ডেকে নিয়ে এক মন্ত্রীর রেফারেন্স দিয়ে তবেই মুক্তি মিললো, হিশামের ক্যামেরার ফিল্মটাও বাঁচলো। এরপর দুপুরের দিকে ফিরলাম নিজের ডেরায়। ক্লান্ত, বিধ্বস্থ কিন্তু সফল মিশন শেষে পরিতৃপ্ত এক মন নিয়ে।

090402_malawi_kids

ছবিসূত্র শুরুরটা
ছবিসূত্র শেষেরটা


মন্তব্য

ফাহিম হাসান এর ছবি

লেখাটা একটু বড় কিন্তু পড়তে ভালো লাগলো। টাইপোগুলো ঠিক করে নিন।

বিছানায় শুয়ে বলিস সাইজ করতে গিয়ে দেখি বালিশের নিচে এক বাক্স কনডম রাখা। পরে জানলাম যে এই কনডমগুলো এনজিওকর্মীরা ফ্রি দিয়ে যায়।

ফিক করে হেসে ফেললেও মনে হল কাজটা আসলে খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশেও ফ্রি কনডম সরবরাহ করা উচিত।

ছবি না দেখাতে আফসোস হল খুব।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

ধন্যবাদ ফাহিম ভাই। সময় করে ওগুলো ঠিক করে নিতে হবে। মালাউইতে যেভাবে এইচআইভি বাড়ছে তাতে এছাড়া সরকার আর কিইবা করতে পারে। আমি সানজে (Nsanje) নামের একটা ছোট্ট জেলা চিনি যেখানে ৯৫% মানুষ এইচআইভি আক্রান্ত হয়ে গেছে।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

চল্লিশের আগপিছের বয়সী সুন্দরী-লাস্যময়ী-চোখে কথা বলা-গুরুনিতন্বিনী-সুবক্ষা পর্তুগীজ নারী ইজাবেলা, সংক্ষেপে বেলা আমার অপেক্ষাতেই ছিলো।

একালের কালিদাসের বর্ণনায় 'নিম্ন নাভি' কিম্বা 'বিম্বের সুপক্ক ফল' থাকে না বুঝি? ইজাবেলার একখানি ছবি দিতে পারতি, ছোটো! মিলিয়ে দেখতাম সত্যিই ও কতটুকু,

তন্বি, শ্যামা আর সূক্ষ্ম দন্তিণী, নিম্ন নাভি, ক্ষীনমধ্যা জঘনগুরু বলে মন্দলয়ে চলে চকিত হরিণীর দৃষ্টি অধরে রক্তিমা পক্ক বিম্বের যুগল স্তনভারে ঈষৎ নতা, সেথায় আছে সে – সেই বিশ্ব স্রষ্টার প্রথম যুবতী প্রতিমা।
--কালিদাস

হঠাৎ করেই উঠলো প্রচণ্ড ঝড়। চারদিক অন্ধকার হয়ে আসলো। কড়কড় শব্দে একটার পর একটা বাজ পড়তে লাগলো। এরই মধ্যে হেডলাইট জ্বালিয়ে আমরা এগোতে লাগলাম। এবার আমরা দুই গাড়িই একসাথে চলছি। মড়মড় করে গাছ ভেঙে পড়ছে, বাজ পড়ার শব্দে গাড়ি দুলে উঠছে। মোবাইলেরও নেটওয়ার্ক ফেল করছে। সাথে কোন স্যাটেলাইট ফোনও নেই। এক জটিল অবস্থায় পড়েছি। সামনে কিচ্ছু দেখা যাচ্ছেনা। রশিদ খুবই আস্তে আস্তে গাড়ি চালাচ্ছে। আমি যা বোঝার বুঝে ফেলেছি। হিশামকে যে বলবো হেডম্যানকে ফোন করে বিতরনের প্রোগ্রাম আজকের জন্যে বাদ দিতে কিন্তু নেটওয়ার্ক না থাকায় তা’ও পারছি না। এভাবে ঘন্টাখানিক চলার পর সমতলের দেখা পেলাম, কিন্তু প্রচণ্ড ঝড় আর মুষলধারে বৃষ্টি। আর তার উপরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। রাস্তাঘাটে একটা জনমনিষ্যি নেই। আচমকা একটা দুটো ট্রাক চোখে পড়ছে কিন্তু ওগুলো রাস্তার পাশে পার্কিং করে দাঁড়িয়ে আছে।

পুরো লেখায় বর্ণনা অনেক খোলতাই মেলেছে, বিশেষ করে এই বর্ণনা তো ছবির মতো।

অনেক্ষণ চলার পর হঠাৎ দেখি অচেনা ভাষায় কিছু লেখা একটা ইণ্ডিকেটর বোর্ড। খাইছে আমারে, এ তো মনে হচ্ছে পর্তুগীজ ভাষায় কিছু লেখা। তাহলে কি আমরা মোজাম্বিকের মধ্যে ঢুকে পড়েছি!

সিয়েরালিয়নের 'কেনেমা' সীমান্তে একটি রেডিও অনুশীলন করতে গিয়ে আমিও লাইবেরিয়া সীমান্তে ঢুকে পড়েছিলাম। তখন সিয়েরালিয়নে স্পেশাল কোর্ট বসিয়ে লাইবেরিয়ার বর্তমানে পতিত কিন্তু সেই সময় বহাল তবিয়তে ক্ষমতায় অধীষ্ঠিত প্রেসিডেণ্টের বিচার করবার পাঁয়তারা চলছে। সীমান্তে অহরহ উত্তেজনা ও গোলাগুলি। আমাকে মুরগীর বাচ্চার মতো আটকে রাখলে কিছুই করার ছিল না। গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠা সে অভিজ্ঞতার কথা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

ইজাবেলার ছবি এখানে দিয়ে আমার বসের চল্লিশোর্ধ চিত্তের চাঞ্চল্য বাড়াতে চাইনা! আসলে বস ছবি ছিলো কিন্তু তা হারিয়ে গেছে। তবে মনের চোখে সে এখনও সন্মূখে সদা বিরাজ করে।

আপনার অভিজ্ঞতাগুলো অনেক টাফ, জীবন মৃত্যর মাঝে দোলে।

একালের কালিদাসের বর্ণনায় 'নিম্ন নাভি' কিম্বা 'বিম্বের সুপক্ক ফল' থাকে না বুঝি?

হো হো হো বস, সেপর্যন্ত যেতে পারলে ঠিকই বর্ননা ঠুকে দিতাম।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

সুপ্রিয় দেব শান্ত (অতিথি) এর ছবি

ভালো লাগলো। তবে ভাষাটা পুরোপুরি সাবলীল মনে হলো না।

সুপ্রিয় দেব শান্ত

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে। আমি এক শখের লেখিয়ে, লেখালেখির কৌশল রপ্ত হয়নি। মনে যা আসে তা'ই ঢেলে দেই। আর আসলে ভাষাগত বিষয়গুলো নিয়ে চর্চা করার মতো পর্যাপ্ত সময়ও তেমন হয়না কর্মব্যাস্ততার মাঝে।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

 শুভাশীষ মনি এর ছবি

খটকা লাগলো এখানে - গুজরাটী বংশোদ্ভূত " মালাউইয়ানরা " !! বাকিটুকু বেশ লাগলো,আরো লিখুন.

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

ধন্যবাদ। এরা মালাউইর গুজরাটী কম্যুনিটির সেকেণ্ড বা থার্ড জেনারেশন।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

মুস্তাফিজ এর ছবি

আমাদের জন্য কোন রিলিফ নাই?

...........................
Every Picture Tells a Story

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

বস, কম্বল-ঢেউটিনের জমানা তো খতম, আপনারে কি রিলিফ দিমু? হো হো হো

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

মুস্তাফিজ এর ছবি

এয়ার টিকিট হাসি

...........................
Every Picture Tells a Story

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

দেশে ফিরে একলগে টিকিট কাটমু। আপনে গন্তব্য ঠিক করেন। হাসি

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

 শুভাশীষ মনি এর ছবি

ওহ,বুঝতে পেরেছি,ঘুম থেকে উঠেই লেখাটা দেখলাম,পড়লাম,মালাউনরা...মাফ করবেন..

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

নো প্রবলেম, মাঝে মাঝে এটা আমারও হয়।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

 অর্ক এর ছবি

ইশ ! আপনার মত যদি একটা লাইফ হত !! খুবই এডভেঞ্চারাস !! খুব ভাল লাগল। আরো লিখুন !!

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

ধন্যবাদ আপনাকে।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

দময়ন্তী এর ছবি

আপনি মোটামুটি সারা পৃথিবী ঘুরেছেন তাই না? সবুজ সবুজ হিংসে শয়তানী হাসি

-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

আপনাকে ধন্যবাদ দিদি। খুব যে বেশি ঘুরেছি তা কিন্তু না তবে মনটা দূর্গতদের জন্যে সবসময় পোড়ে। তাইতো সোমালিয়া, আফগানিস্তান বা পাকিস্তানের মতো অশান্তভূমিতেও চলে যাই। আর আফ্রিকার জন্যে আমার সবসময় একটা টান কাজ করে। আপনার হিংসেতেই আমার প্রেরণা।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

কৌস্তুভ এর ছবি

আপনাকে দিক্কার! এইরকম একটা থ্রিলিং লেখা ইবুকের জন্য দিলে কত ভাল হত!

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

আপনার দিক্কার মাথাপেতে নিয়ে প্রীত হলেম কৌস্তুভ ভাই। লেখা দিতে তো চেয়েছিলাম। নজরুলের কাছ থেকে দুই দিনের টাইম এক্সটেনশনও নিয়েছিলাম। কিন্তু তারপর ঢাকা-ব্যাংকক-লাহোর ফ্লাই করে ফের লাহোর-ইসলামাবাদ বাস জার্ণি করে সকাল বেলায় বাসায় পৌঁছে একঘন্টা পরে আবার জরুরী অডিট মিটিং, এক সপ্তাহ ছুটির পর ক্যাচ-আপ, এইসব বালছাল করতে করতে আর লিখতে বসতে পারিনি। দেখি আবার এরকম একটা মওকা মেলে কিনা। মন খারাপ

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

ভাল্লাগলো যথারীতি
Zikomo হাসি

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

আপনাকেও Zikomoqambiri হাসান ভাই। হাসি

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

তাসনীম এর ছবি

মালাউই সম্বন্ধে কিছুটা জানতাম, দক্ষিণ আফ্রিকিয় এক সহকর্মী থাকার সুবাদে।

গতকালই পড়েছিলাম মোবাইল ডিভাইসে। এখন ভালোলাগা জানিয়ে দিচ্ছি হাসি

পৃথিবী চষে বেড়ানোর কাজ পাওয়ার সৌভাগ্য কয়জনের হয়?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

ধন্যবাদ ব্রাদার। কখোনো স্বাক্ষাত হলে আরও বলবো। যেমন, আমার বাসার কম্পাউণ্ডের এক গার্ড রোজ ১০ মাইল পায়ে হেঁটে ডিউটিতে আসেতো-যেতো, দিনে মাত্র একবেলা খেয়ে। আমার স্ত্রী গৃহকর্মী মেয়েটাকে দিয়ে মাঝে মাঝেই বয়ষ্ক মানুষটাকে দু'টো খেতে দিতো। ঘোলা ঘোলা চোখদুটোও তার চিকচিক করে উঠতো খাবারটুকু পেয়ে।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

মেইজ কী তা জিজ্ঞেস করতে যাবো, দেখি শেষের দিকে এসে বলেছেন।
লেখাটা একটানে পড়লাম। খুবই ইন্টারেস্টিং অভিজ্ঞতা।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

ধন্যবাদ আপু। কিভাবে যেনো কর্ণের প্রতিশব্দ মেইজ আফ্রিকায় বাসা বেঁধে ফেলেছে। আমি যতগুলো আফ্রিকান দেশে গিয়েছি, দেখেছি মেইজের দানাগুলো আমাদের পরিচিত ভূট্টার দানা থেকে অনেক বড়ো। মেইজ পেষাই করার পরে সুক্ষ্ম চালুনিতে ছেঁকে তিনটে ক্যাটেগরিতে ভাগ করা হয়। সবথেকে ভিতরের অংশের মিহি গুড়োটাকে বলে মেইজ ক্রিম, এটা অনেক দামি এবং বড়লোকেরা খায়। ছাকুনিতে এর পরেরটা মধ্যবিত্তরা খায় এবং সবশেষে বাইরের অংশের গুড়োটা গরীব মানুষেরা খায়। পরের দুটোকে বলে মেইজ ফ্লাওয়ার। এই মেইজ ফ্লাওয়ারকে মালাউইয়ার ভাষায় বলে সীমা, কেনিয়ান ভাষায় বলে উগালি।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

বাইরের গুঁড়াটার ফুড ভ্যালু বেশি হতে পারে অবশ্য! খোসাতেই নাকি সব ভিটামিন থাকে বলে যে!

অট: বানানের জন্যে আমি অভ্রের নতুন ভার্শনের স্পেল চেকারটা ব্যবহার করি। লেখা হলে এমএস ওয়ার্ডে চেক করে নেই।]

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

খোসাতেই নাকি সব ভিটামিন থাকে বলে যে!

আমার যে কি বিপদ বলেন তো যাযাপু! বেল আর কাঠাল হচ্ছে আমার প্রিয় ফল। চিন্তিত

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

আসমা খান, অটোয়া। এর ছবি

চমৎকার লেখা।খুব আগ্রহ নিয়ে পড়লাম।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

ভোলা এর ছবি

লেখাটা ভাল লেগেছে। উত্তেজনাকর এক অভিজ্ঞতা হয়েছে আপনার। আর্ত মানবতার সেবা এবং লেখা চলতে থাক।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

ধন্যবাদ ভোলাদা। আশীর্বাদ করবেন।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

বেশ কিছু হারিয়ে যাওয়া পুরানো ছবি বাসায় রাফিনের গেমসের ডেস্কটপ থেকে হঠাৎই পেলাম। এর জন্যে অবশ্য ক্রেডিট ছোট্ট রাফিনকে আর ওর বন্ধুকেই দিতে হয়। ওর এক বন্ধু ছবিগুলোকে স্কীনসেইভার হিসেবে সেট করে দিয়েছে। সেদিন বাড়ি গিয়ে হঠাৎই এই ছবিগুলোর দেখা পেলাম। পিচ্চি পোলাপান অনেক স্মার্ট।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

তানিম এহসান এর ছবি

একদম ধারাবর্ণনার মত করে পড়ে গেলাম, জানলাম, শিখলাম এবং আপনার লেখার আরো ভক্ত হয়ে গেলাম।

কিন্তুক একটা জিনিস খুব খোঁচাইতেছে, একটা ছবিতে হাতে একখান বালিশসহ আপনি এবং হিসাম দাড়ায়া আছেন ক্যামরার দিক মুখ কইরা, হিসামের উর্ধাঙ্গ কাপড়ে কাপড়ে সয়লাব কিন্ত আপনারগুলা নাই, কোন মারামারির ঘটনা ঘটছিলো নিকি ভাই? দেঁতো হাসি

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

মারামারি ঘটেনাই রে ভাই। ঘুমাইতে গিয়া দেখি বালিশ আছে একখান। পাতলা বালিশে শুইতে অসুবিধা হয় আর তার উপর একখান হইলে তো কথাই নাই। বাইরাইছিলাম আরেকখান বালিশ নিতে। দেখি হিসাম সামনে খাড়াইয়া আছে। খেয়াল কইরা দ্যাখেন, আমার কাপড় কিন্তু মধ্যাঙ্গে বান্ধা আছে।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

তানিম এহসান এর ছবি

তাইতো এবং খুব টাইট কইরাই বান্ধা মনে হইতেছে। আগে দেখি নাই কেন, পোড়া চোখতো দেখি খালি উর্ধাঙ্গেই মনোযোগী ছিলো, খুবই খারাপ কথা, নজর কা মামলা হ্যায়!! তবে হিসামকে দেখে খুবই নিপাট ভদ্রলোক মনে হয়েছে।

মালাউই নিয়ে আর লিখলেননা কেন ভাই?

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

নজরের ফাইন টিউন করেন, সব ঠিক হয়ে যাবে। উর্ধাঙ্গ, নিম্নাঙ্গ, পশ্চাৎদেশ, সবদিকে নজর যাবে। চিন্তার কিছু নাই। চোখ টিপি

মালাউইর আরেকটা লেখা আছে। পরে একসময়ে পোস্টাবো।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

Mahabub Alam এর ছবি

Ex.........Advantage and Learning.......

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

থ্যাংকস আ লট।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

তাওহীদ আহমদ এর ছবি

অসাধারণ লেখা। খুব ভালো লাগলো। হাসি

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

ধন্যবাদ তাওহীদ আহমদ।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।