মিউনিখপঞ্জী

রিম সাবরিনা এর ছবি
লিখেছেন রিম সাবরিনা [অতিথি] (তারিখ: মঙ্গল, ২৬/০৭/২০১১ - ৮:০৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মিউনিখ শহর আজকে লন্ডন হয়ে গেছে। সকাল থেকে টিপির টিপির বৃষ্টি। আকাশে সূর্যের ‘স’ও নাই। সব মিলিয়ে কেমন একটা বিষণ্ণ পরিবেশ। কিছু কাজ জমে আছে, যেগুলি আজকে শেষ না করলেই নয়। তারপরও কেন যেন ইচ্ছা করছে না। মেঘলা দিনের অলসতা আমাকে কব্জা করে ফেলেছে। এই কব্জায় আটকা পড়ে আমার যে খুব খারাপ লাগছে, তা না। কিন্তু অস্থির লাগছে। অস্থিরতা বিড়ালের বাচ্চা না যে কোলে নিয়ে পুষতে হবে। এটাকে তাড়াতে হবে। এক কাপ মিন্ট চা বানালাম খুব আয়োজন করে। চায়ের সাথে টা হিসেবে বাদামের কোটা। যেনতেন বাদাম না। বাদামের গায়ে ওয়াসাবি’র কোটিং। ওয়াসাবি হল জাপানিজ হর্সর‍্যাডিশ। চরম ঝাল। এই ঝালের কোনো মা-বাপ নাই। আমি আবার ঝালখেকো মানুষ। মিন্ট চায়ের সাথে ওয়াসাবি দেয়া বাদাম খেতে ভালোই লাগছে। কিন্তু অস্থির ভাবটা কমছে না। কিছু একটা নিয়ে চিন্তা করতে হবে।

মিসেস বিটনারের গাড়ির আওয়াজ পাচ্ছি। টেনিস কোর্ট থেকে ফিরল বোধহয়। তার বন্ধু-বান্ধবের অভাব নাই। তারা সপ্তাহান্তে একজোট হয়ে আড্ডা দেয়। এখন আর তাদের টেনিস খেলা হয় না। কারো হাটু ব্যাথা, কারো হার্টের সমস্যা। তবুও টেনিস কোর্টের পাশে বসে কফির কাপে আড্ডাটা ভালোই জমে। আমার এত কিছু জানার কারণ হল আমাকে একদিন ধরে নিয়ে গিয়েছিল মিসেস বিটনার। আমি একটু বেশি মাত্রার ঘরকুনো। এটা তার চোখে পড়ার পর থেকে আমাকে জোর করে এদিক সেদিক নিয়ে যাওয়াটা সে একটা দায়িত্ব হিসেবে নিয়ে নিয়েছে। এই বাড়িতে ভাড়া থাকি আজকে প্রায় চার মাস। মিসেস বিটনারও ভাড়া থাকেন। উনি ফার্স্ট হ্যান্ড ভাড়াটে। আমি সেকেন্ড হ্যান্ড। ওনার ভাড়া করা একতলার একটা রুম নিয়ে আমার রাজত্ব। রাজত্ব বলছি একারনে যে নিজের রাজত্ব ছাড়া কেউ এত এলোমেলো থাকার সাহস পায় না। প্রথম প্রথম ঘরটা সুন্দর করে গুছিয়ে রাখতাম। এখন আর সম্ভব না। সময়ের অভাব। মুশকিল হচ্ছে প্রায়ই ঘরে ফিরে দেখি বিছানাপত্র সুন্দর করে ভাঁজ করে রাখা। বুঝতে অসুবিধা হল না কার কাজ। এক সন্ধ্যায় মিসেস বিটনারকে বললাম, “দেখো, কোন দরকার নাই কষ্ট করে আমার জিনিসপত্র গোছগাছ করা। এটা তো আমি নিজেই করতে পারি।” কয়েকদিন পর আবিষ্কার করলাম বাথরুমে আমার চুল মোছার তোয়ালেটা ধুয়ে ভাঁজ করে রাখা। মহা যন্ত্রণা। কিন্তু বুঝলাম, বলে লাভ নাই। জার্মানদের মাথায় কিছু একটা ঢুকে গেলে সেটা থেকে বের করা মোটামুটি অসম্ভব ব্যাপার। মাঝখান থেকে আমার মধ্যে ভাড়াটে ভাব চলে গিয়ে একটা পোষ্য-পোষ্য ভাব চলে এসেছে। মিসেস বিটনার আমার রুম ভ্যাকিউম ক্লিনার দিয়ে ক্লিন করে দেয়, তোয়ালে ধুয়ে দেয়, বিছানাপত্র পর্যন্ত ঠিকঠাক করে দেয়, পোষ্য-পোষ্য না লাগার তো কোনো কারন নাই।

সেদিন বুধবার রাতে খেয়ে দেয় থালাবাটি ডিশ ওয়াশারে ঢোকাচ্ছে, এমন সময়ে সে হন্তদন্ত হয়ে এসে বলল, “এই উইকএন্ডে কি তোমার টাইম হবে? তাহলে চল চাইনিজ খেয়ে আসি। একজনের পয়সায় দুইজন খাওয়া যাবে-এই অফারটা আবার দিচ্ছে ওরা।” তাকিয়ে দেখলাম তার হাতে কুপন। এর আগে তার সাথে বার দুয়েক যাওয়া হয়েছে ওই রেস্তোরায়। আমার ধারণা মাসে একবার রেস্তোরাটা কুপন ছাড়ে আর মিসেস বিটনার খবরের কাগজ থেকে কুপন কেটে বসে থাকে দ্বিতীয় কাউকে যোগাড়ের ধান্দায়। আর গত কয়েক মাস যাবত এই দ্বিতীয় কেউটা হচ্ছি আমি! যাইহোক, আজকে আমার খাদ্যভাগ্য মনে হয় ভালোই যাবে। আমি খুব আগ্রহ নিয়ে রেডি হচ্ছি। বিষণ্ণ সন্ধ্যাটাকে আর বিষণ্ণ মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে সয়াসসের ঘ্রাণে ভরপুর এক চাইনিজ সন্ধ্যা!

--রিম,
রোববার,
২৪/০৭/২০১১


মন্তব্য

ফাহিম হাসান এর ছবি

আমার রুম মেইট চাইনিজ। সয়াসহ আরো নানা রকমের সসে চাইনিজ রান্না খেতে দারুণ লাগে। আপনার দিঙ্গুলি এত চট করে শেষ হয়ে যায়! আরেকটু বর্ণনাসহ লিখুন। পরের পোস্ট যাতে মোটাতাজা হয়।

সজল এর ছবি

বেশ টানটান লেখা। আপনার লেখা এই প্রথম পড়লাম, পড়তে ভালো লাগলো।

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

guest_writer এর ছবি

ভালো লিখেছ রিম। তোমার লেখা আমি বেশ আগ্রহ নিয়ে পড়ি এবং মজা পাই।। লেখা চলুক আপু।

ওয়ায়েস।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আরামেই আছেন দেখি...

আমারো অগোছালো রোগ আছে, আর আমার আশেপাশের লোকজনের খালি গোছানো রোগ। কিন্তু আমার সমস্যা হইলো অগোছালো থাকলে আমি প্রয়োজনীয় জিনিস খুব আরামে খুজেঁ পাই, গোছালে আমি কিছুই খুজেঁ পাই না ঠিকমতো... তাই সবাইরে হাতে পায়ে ধরে অনুরোধ করতে হয় ভাই, আমার ঘরটা গোছানোর দরকার নাই... এইটা গোয়াল ঘরই থাকুক। এইখানে ভদ্রলোকদের আসনের দরকার নাই...

কিন্তু হয় উল্টা... বাড়িতে সাজানো গোছানো একটা বসার ঘর রাখছি... আরামের সোফা ডিভান দিছি... কিন্তু তবু যেই আসে, টুক করে আমার গোয়াল ঘরে ঢুকে ফ্লোরে বসে যায়... ঠেলে ধাক্কায়েও বসার ঘরে পাঠাতে পারি না...
তখন বুঝি গোছানোর চেয়ে অগোছানোর কদর বেশি... কিন্তু বুঝি না, তাইলে মানুষ অতো হাঙ্গামা করে গোছগাছ করে কেনু কেনু কেনু?

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অপছন্দনীয় এর ছবি

হেহে, আমারো একই সমস্যা ছিলো। গোয়ালঘরের মধ্যেও যা খোঁজার আমি ঠিকই খুঁজে পাই, কিন্তু মা যদি একবার ওটা গুছিয়েছে তো আর কিছুই খুঁজে পাই না।

আশালতা এর ছবি

দারুন লেখা। কিন্তু এতো ছোট কেন ? মন ভরে নাই মন খারাপ

----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি

মুস্তাফিজ এর ছবি

চাইনীজ খাবারের প্রতি একটা দুর্বলতা সবসময়ই। খাবারটা কেমন ছিলো জানালেন না।

...........................
Every Picture Tells a Story

কৌস্তুভ এর ছবি

মজা পেলাম। ভালো করে চাইনিজ খাইদাই করুন। দেঁতো হাসি

shoptorshi এর ছবি

bhalo laglo....

তানিম এহসান এর ছবি

বাহ! হুট করে শেষ হয়ে গেলো! বিষন্নতা তাহলে চাইনিজ খাবারের ডাকেও চলে যায় চোখ টিপি

গোছানোর ব্যাপারে নজরুল ভাই এর সাথে চরম সহমত এবং রাতঃসরনীয় রাতের কান্ডারীর সাথেও থাকলাম! সব গোছানো মানুষের গোছানো ঘর অগোছালো করে দিতে ইচ্ছে করতেসে এখন, এইরকম একটা ফাইজলামী ইচ্ছা যে কেমনে মনের ভেতর পয়দা হয় আর তাতে বাতাসও দিতে কেন যে ইচ্ছা করে চাল্লু

বন্দনা- এর ছবি

খুব মজা লাগলো আপনার দিনপঞ্জি।

Aparna  এর ছবি

রিম আপু লেখাটা দারুন লাগলো। যদিও এ্কটু তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেলো !

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

বেশ লেখা তবে আকারে ‌ছোট। বার্লিনের দিনপঞ্জি আরো চাই।

কেমন আছেন আপনি?

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

ধুসর গোধূলি এর ছবি

অই ব্যাটা, বাল্লিন কো আর মিউনিখ কো! ইনি কি উটপোঁদশুভ্র নাকি যে কায়জার্সলাউটার্নে বইসা কোলনের ম্যাচের লাইভ রিপোর্ট লেইখা পাঠাইবো আলুতে!

ফালতু পাঠক এর ছবি

ভাই আমি কায়জার্সলাউটার্নে থাকি, এত সিটি থাকতে আপনে কায়জার্সলাউটার্নের উদাহরণ দিছেন (নাকি সত্যি এমন ঘটছিল?) তাই হটাত করে চোখ আটকে গেল, আর বাংলাতে কখনো এই সিটির নাম দেখিনাই তাই কেমন অদ্ভুত ও লাগলো ৷ আপনি কি এখানে থাকেন বা কখনো এখানে থাকতেন বা এসেছিলেন কখনো?

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

ভাড়াটে ভাব চলে গিয়ে পোষ্য পোষ্য ভাব আসার ব্যাপারটাতে মজা পেলাম। হাসি

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

রিম সাবরিনা এর ছবি

সবার মন্তব্য পড়ে খুব মজা লাগলো। বড় করে লিখব আগামীতে...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।