কালাধুঙ্গির আতঙ্ক-১

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি
লিখেছেন আব্দুল গাফফার রনি [অতিথি] (তারিখ: রবি, ১৯/০৪/২০১৫ - ৬:৩১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

২ মে
গ্রীষ্মের সকাল। গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। আমার বাড়ি এককোণে দেড়শ বছরের পুরোনো একটা ইঁদারা। গাছপালায় ছাওয়া উঠোন। চেয়ার পেতে বসে আছি ইঁদারার পাশে। উপভোগ করছি গ্রীষ্ম প্রভাতের মাদকতা। এমনিতে ল্যারেটরি ছেড়ে ফাঁকায় বেরুনো তেমন হয়ে ওঠে না। কিন্তু জানালা গলে আসা মিষ্টি বাতাসের হাতছানি উপেক্ষা করতে পারলাম না।
জগমোহন চা আর খেজুর গুড়ের মুড়কি দিয়ে গেল। হকার দিয়ে গেল পত্রিকা। ভোরের প্রাণ জুড়ানো বাতাস, গরম চা, খেজুর গুড়ের মাখানো মুড়কি আর খবরের কাগজ-- সব মিলিয়ে অসধারণ ব্যাপার! অবশ্য যদি ভালো খবর কিছু থাকে। আজকাল যা হচ্ছে দেশে। শুধু দুর্নীতি, সড়ক দুর্ঘটনার খবরে ভরা থাকে খবরের কাগজগুলো। লিডারদের হামবড়েঙ্গা জাতীয় গলাবাজী তো আছেই। রাজনীতির খবরগুলো এড়িয়ে চলি। বরং দেশ-বিদেশের বিচিত্র খবরগুলোই আমাকে বেশি টানে।
একেবারে প্রথম পাতায় আমার চোখ আটকে গেল। ‘কালাধুঙ্গির আতঙ্ক!’ এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম খবরটা--
‘ভারতের উত্তরাখণ্ডেডর কালাধুঙ্গিতে মানুষখেকো আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এলাকাবসীরা জানিয়েছে হঠাৎ করেই নাকি একটা কেঁদো বাঘ পাহাড়ী উপতক্যা ধরে নেমে অজ্ঞাতনামা এক যুবককে তুলে নিয়ে পালিয়ে যায়। এ বিষয়ে নৈনিতাল ফরেস্ট রেঞ্জার অমরেশ দেশাই জানিয়েছেন, গত বিশ বছরে এ ঘটনা এই প্রথম। তবে হতভাগা লোকটার কোনো পরিচয় মেলেনি।’

আমার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য কালাধুঙ্গি নামটাই যথেষ্ট ছিল। মানুষখেকোটা বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে । ‘কালাধুঙ্গি’, ‘মানুষখেকো’ শব্দগুলো মনে আবেগের ঝড় বইয়ে দিল। আবহমান বাংলার অজপাড়াগাঁ, নদী ঝোপ-জঙ্গল, মাঠ-ঘাট যেমন মিশে আছে আমার সত্তায়। তেমনি কালাধুঙ্গি, নৈনিতাল, গাড়োয়াল, হরিদ্বার, চম্পাবত, রানীক্ষেত, আলামোড়া, রুদ্রাপ্রয়াগ, কুমায়ুন, কেদারনাথ, অমরনাথ নামগুলো যেন আমার বুকে বাড়ি মারে। ইছামতী, কপোতাক্ষের মতো অলকানন্দা, মন্দাকিনী নদীগুলোর ধারা যেন বয়ে গেছে আমার পুরোনো বাড়িটার পাশ দিয়ে। ভারতের উত্তরাখেণ্ডর এই পাহাড়ী এলাকার প্রতিটা উপত্যকা, নদীর বাঁক, জঙ্গলের প্রতিটা পরত যেন হাতের তালুর মতো চেনা আমার। কখনও যাইনি, তবু চেনা! চিনিয়েছেন শৈশব কৈশরের এক জাদুকর। জিম করবেট।
খবরটা বিস্তারিত জানার জন্য কোলকাতার বন্ধু বনরাজ পাণ্ডেকে ফোন করেছিলাম। ও আমাকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করল।

৩ মে
আজকের খবর, আবারও কালাধুঙ্গিতে মানুষখেকোর শিকার হয়েছে একজন। এবারও ভিকটিমের নাম পরিচয়-অজ্ঞাত। তবে আতঙ্কে হিম হয়ে গেছে এলাকার লোকজন।

৪ মে
এবার রানীক্ষেতে মানুষখেকোর শিকার এক মহিলা। যথারীতি নাম পরিচয় অজ্ঞাত। স্থানীয় লোকজন শুধু দেখছে কীভাবে তাদের সামনে থেকে মানুষখেকো মানুষ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কাকে নিচ্ছে এটা নির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারছে না। কারণ যে গ্রামে বা অঞ্চলে এই ঘটনা ঘটছে সেখানকার কোনো মানুষ নিখোঁজ হয়নি।

৫ মে
গ্রিষ্মের ভ্যাপসা বিকেল। আমি ইঁদারাটার পাশে পায়চারী করছিলাম। কিছুতেই মাথায় আসছে না করবেটের দেশে এসব কী হচ্ছে। করবেট ন্যাশনাল পার্ক এখন সংরক্ষিত বন। এর বাইরে কোথাও বাঘ বা চিতা আছে বলে জানা নেই। অথচ একের পর এক মানুষ খেকোর আক্রমণে দিশেহারা বৃহত্তর কুমায়ুনের সাধারণ মানুষ।
বাঘে মানুষ মারছে অথচ পায়ের চিহ্ন রেখে যাচ্ছে না। তারচেয়েও আজব ব্যাপার এতগুলো ঘটনা পরপর ঘটে গেছে কিন্তু একজন ভিক্টিমেরও পরিচয় জানা যায়নি। যারা দেখেছে তারা কেউ বলতে পারছে না মানুষখেকো কাকে নিচ্ছে।
হঠাৎ টেলিফোনের রিং বেজে উঠল। হেঁকে বললাম, ‘জগমোহন, দেখো তো কার ফোন?’
দুমিনিটের মাথায় ফিরে এল জগমোহন। বলল, ‘সাহেব পাণ্ডেবাবুর ফোন।’
দৌড়ে গিয়ে হোল্ড করা রিসিভারটা কানে ঠেকালাম। ‘পাণ্ডে, কী খবর, বল।’
‘জামিল, তুমি কোলকাতায় আসতে পারবে কয় ঘণ্টার মধ্যে?’ ফোনের ওপাশ থেকে বলল বনরাজ পাণ্ডে।
‘শোন পাণ্ডে। ইন্ডিয়ান অ্যাম্বাসির শাখা এখন আর দর্শনায় নেই। আমাকে ঢাকায় যেতে হবে। ৭২ ঘণ্টার আগে কোলকাতার গাড়িতে উঠতে পারব বলে মনে হয় না। কিন্তু আমি কোলকাতায় গিয়ে কী করব?’
‘মানুষখেকোর ব্যাপারটা আমার কাছে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। সাধারণ শিকারি বা গোয়েন্দারা ফেল মেরেছে। ভেবে দেখেছ, এতগুলো মানুষ চোখের সামনে থেকে নিঁখোজ হয়ে গেল, অথচ কে নিখোঁজ হচ্ছে তার কোনো হদিস নেই। শিকারীও কোনো আলামত রেখে যাচ্ছে না। লোকজন তো ভয়ে অস্থির। তাদের ধারণা অপদেবতার রোষে পড়েছে এলকাবাসী। কারও নিস্তার নেই। এ ঘটনার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা না দিতে পারলে সাধারণ মানুষ আতঙ্কেই মারা পড়বে। তুমি দেরি করো না জামিল।’

১০ মে
স্বপ্নের ঘোরে ডুব দিয়েছিলাম। স্বপ্নই বা বলি কেন? করবেটের স্বর্গরাজ্যকে একটু আগেভাগে দেখা। হয়তো বাস্তবের সাথে মিলবে না। এতদিন কল্পচোখে যা দেখছি, তারই পুর্নমঞ্চায়ন স্বপ্নে। পাণ্ডের ডাকে বিরক্ত হলাম। এত সুন্দর স্বপ্ন ভেঙে দিল ব্যাটা! বিরক্তি ভরা চেহারা নিয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিলাম ওকে। হঠাৎ জানালা দিয়ে বাইরের দিকে চোখ পড়ল। ওয়াও! প্রকৃতির পরতে পরতে কত সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে, এক ঝলকেই তার কিছুটা আন্দাজ করতে পারলাম। একটু আগে বনরাজকে ধমক দিতে যাচ্ছিলাম, এখন কৃতজ্ঞতা বোধ করছি ওর প্রতি।
‘কোথায় এলাম?’
‘লালকুঁয়া এসে গেছি। নামতে হবে।’
ঘড়িতে চোখ রেখে দেখি, সাড়ে সাতটা বাজে। মিষ্টি একটা দিনের শুরু হলো করবেটের স্বপ্ন রাজ্যে। ট্রেন থেকে নামলাম, প্লাটফর্মে। হকার দৌড়ে এলো, ‘পেপার! পেপার!’
হিন্দি আর ইংরেজি পেপার সব। টাইমস অব ইন্ডিয়ার একটা কপি কিনলাম। রাজনীতির খবরে ঠাঁসা প্রথম পাতা। বলিউডের রসালো খবরও রয়েছে। আট নম্বর কলামের একেবারে নিচে আরেকটা শিরোনাম -- ‘এবার স্বয়ং করবেটের শহরে বাঘের আক্রমণ!’
নৈনিতাল। সৌন্দর্যের নীলভূমি। সেখানেই আক্রমণ! কোনওরকম নাস্তা সেরে বাসে চড়লাম। গন্তব্য নৈনিতাল। এমনিতেও ওখানে যেতাম। মানুষখেকো আগ্রহটা বাড়িয়ে দিল। কুমায়ুনের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছি বটে। তবে করবেটের কুমায়ুনের সাথে এর মিল পাচ্ছি না। কোথায় সেই জঙ্গল? বন্যপ্রাণী থাকার তো প্রশ্নই ওঠে না।
কাঠগোদাম ছাড়িয়ে স্বস্তি পেলাম। অবশেষে মিলল আসল কুমায়ুনের দেখা। হিমালয়ের পাহাড়ি পথ ধরে বাস ছুটছে দুর্দান্ত গতিতে। দুপাশে পাহাড়। ছোট-বড়। দূরের পাহাড়গুলো যেন পাহাড় নয়। আকাশের গায়ে হেলান দিয়ে আছে পাঁংশুটে মেঘ! এভারেস্ট দেখিনি আমি। কিন্তু পৃথিবীর বিশালত্ব কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারছি আজ।

সকাল নটা নাগাদ পৌঁছে গেলাম। ঢোকার পথে একটা নালা। নীবরে জল গড়াচ্ছে। হঠাৎ সামনে পড়ল বড় একটা বাঁক। বাঁকটা ঘুরতেই যেন আচমকা বনপথ থেকে ঢুকে গেলাম নৈনিতাল শহরে।
নৈনিতাল বিখ্যাত তার তাল বা লেকের জন্য। ছবিতে কতবার দেখেছি নৈনিতালের এই বিখ্যাত লেকগুলো, একবারেই চিনে ফেললাম। এই নৈনিতালে ছিল করবেটের গ্রীষ্মকালীন বাড়িটা। জানি না এখনও আছে কিনা। থাকার ব্যবস্থা হয়েছে হোটেলে। হাত-মুখ ধুয়ে হালকা নাস্তা সেরে শুয়ে পড়লাম। লম্বা ঘুম। উঠলাম একেবারে বিকেলে। টুরিস্টের ভিড়ে গিজ গিজ করছে নৈনিতাল শহর। পা ফেলার জো নেই কোথাও। পাণ্ডেকে বললাম, ‘মানুষখেকোর কথা এরা কেউ কি শোনেনি। টুরিস্টরদের কি ভয়-ডর নেই কিছু?’
‘ভাইরে, এটা অত্যাধুনিক যুগ।’ বলল পাণ্ডে। ‘মানুষখেকো, ভৌতিক ঘটনা--এসব গুজব শহুরে-বিদেশি পর্যটকদের কৌতূহলই শুধু বাড়ায়, শিরদাঁড়ায় কাঁপন তুলতে পারে না। ভয়ে কেবল স্থানীয়দেরই অধিকার।’
‘চলো না স্থানীয়দের ডেরায় যাই।’ প্রস্তাব দিলাম আমি। ‘চেনো তুমি?’
‘হুঁ,’ জবাবে বলল পাণ্ডে। ‘চিনি, তবে এখন গিয়ে লাভ হবে না। লোকজন সব বাইরে। কুলি-মজুরের কাজ করে। দিনে পাওয়া যাবে না এদের। বরং রাতে চলো, দারুণ অভিজ্ঞতা হবে। ততক্ষণে শরহটাতে একটু ঢুঁ মেরে নেওয়া যাক। রেঞ্জার অমরেশ দেশাইয়ের সাথে দেখা করে আসি।’

টুরিস্টদের ভিড়ে গিজ গিজ করছে শরহটা। উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিম--ভারতের সব এলাকার লোক তো আছেই, ইউরোপ আমেরিকার সাদা চামড়ার টুরিস্টদেরও অভাব নেই। তবে সবার ভেতর কেমন যেন ভীতি কাজ করছে।
রাতের নৈনিতাল সৌন্দর্যের পসরা সাজিয়ে যেন অপেক্ষা করছে টুরিস্টদের চোখ জুড়াবার জন্য। এক রাতের ব্যবধানে আবহাওয়া যে এতোটা বদলে যেতে পারে তা কল্পনাতেও ছিল না। বনরাজ পাণ্ডের কথামতো গরম কাপড় নিয়েছিলাম। ভাগ্যিস নিয়েছিলাম! নইলে কনকনে ঠাণ্ডায় স্রেফ জমে যেতাম। বড় রাস্তার মোড় থেকে একটা ছোট পথ ভেতরে ঢুকে গেছে। শুল্কপক্ষের গোল চাঁদ বসে আছে আকাশের গায়ে। মেঘ নেই। ঠিকরে পড়া আলোয় অপার্থিব সৌন্দর্যের অবতারণা।
কিছুক্ষণ হাঁটার পর পেলাম স্থানীয়দের ডেরা। প্রদীপের নিচে যেমন অন্ধকারের বাস, ঝাঁ চকচকে নৈনিতালের অন্দরটাও তেমন। একবিংশ্ব শতাব্দীর শান-শওকত সেভাবে স্পর্শ করতে পারেনি স্থানীয়দের বসতিতে। বেশির ভাগই কাঁচাবাড়ি। দুয়েকটা যা পাকাঘর আছে, তাদেরও হতশ্রী অবস্থা। ঘিঞ্জি বাজার। নালা-নর্দমা, নোংরা ঘরদোর। ছেলেপুলেদের হুটোপুটি। হারিকেন বা কুপি জ্বালিয়ে পড়তে বসেছে ছোট বাচ্চারা। উচ্চস্বরে পড়ার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। বাংলাদেশের পল্লীর চেয়ে আলাদা যেটা নজরে পড়ল, সেটা আস্তাবল। ঘোড়ার। বাংলাদেশ হলে এর জায়গায় থাকত গরুর গোয়াল। গোয়াল এখানেও আছে, তবে আস্তাবলই বেশি।
ভিড়ে গেলাম বুড়োদের জলসায়। তিন রাস্তার মোড়ে বড় এক গাছের নিচে আগুন জ্বলছে। কুণ্ডলির চারপাশ ঘিরে বসেছে বুড়োর দল। দূরে আরেকটা কুণ্ডলি দেখছি। উত্তরের জঙ্গলের দিকে। তবে আমরা সেদিকে না গিয়ে এই কুণ্ডলিটার দিকে এগোলাম। কুণ্ডলির লালচে আলো ম্লান করতে পারেনি উছলে পড়া জোসনাকে। আমাদের দেখে ৭০-৭৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ মুখ খুলল। হিন্দিতে। আমি হিন্দিটা বলতে পারি কাজ চালানো গোছের। তার প্রশ্ন ছিল, ‘বাবু সাব বাড়ি কোন দেশে?’
পাণ্ডে হিন্দিতেই জবাব দিল, ‘আমি বিহারী, আমার এই বন্ধু বাঙালি। মানে বাংলাদেশি।’

বাঙালি শুনে ৮০-৮৫ বছরের এক বুড়ো উৎফুল্ল হয়ে ভাঙা ভাঙা বাংলায় বলল, ‘বাঙালদেশি সাব! হামি এক সময় বাঙালদেশে ছিলাম।’ তারপর বৃদ্ধ তার ফেলে আসা অতীতের অনেক গল্প বলল। সামরিক জীবন, সংসার জীবন, দুঃখ, সুখের স্মৃতি এককার হয়ে জোসনার আবছা আলোর সাথে মিশে এককার হয়ে গেল। গলা ধরে এসেছে লোকটার। আমি প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্য বললাম, ‘জিম করবেট সম্পর্কে বলুন।’
‘সাধুবাবার কোথা বোলছেন!’ লোকটার চোখ-মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। করবেটকে এলাকার লোক সাধুবাবা বলে, সেকথা জানতাম। কিন্তু লোকটার পরের কথা শুনে চমকে উঠলাম। ‘সাধুবাবা আমাকে বহুত পেয়ার করতেন।’
‘পেয়ার করতেন! তারমানে করবেট আপনাকে চিনতেন?’

‘চিনতেন! বোলেন কী বাবুসাব! তিনি আমাকে একটা রাইফেল উপহার দিছিলেন।’ বলে হাঁকল লোকটা, হিন্দিতে, ‘এই ঝাণ্ডু, আমার রাইফেলখানা নিয়ে আয় তো।’
আমার দিকে ফিরে বললেন, ‘কানওয়ার সিংয়ের নাম শুনছেন বাবুবাস?
‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, শুনেছি মানে!’ উত্তেজিত গলায় বললাম আমি।
‘উনি তো আমার চাচাজি। হামার পিতাজিকা বোড় ভাই।’
‘কুঁয়ার সিংয়ের ভাইপো আপনি!’
এ যে দেখি চমকের পর চমক! ততক্ষণে ঝাণ্ডু নামের ছেলেটা চলে এসেছে বন্দুক হাতে। দোনালা বন্দুক। বন্দুকটাতে পরম আদরে হাত বোলাতে বোলাতে বৃদ্ধ বলল, ‘এই বন্দুক নিয়ে আমি সাধুবাবার সাথে শিকার করেছি।’
‘বন্দুকটা আমি নিলাম বৃদ্ধের হাত থেকে।’ এই বন্দুকে করবেটের ছোঁয়া আছে, ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। তার ওপর এমন একজনের সাথে কথা বলছি যে নাকি করবেটের সাথে শিকার করেছে। সত্যিই নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছে।
বললাম, ‘সিংজি আপনার নামটা কিন্তু এখনও বলেননি।’
‘দেখো কাণ্ড, এত কথা বোললাম, নাম ভি বোলা হয়নি। আমার নাম বুধা সিং আছে বাবুজি।’ বলে হেঁকে আবার ঝাণ্ডুকে ডাকলেন বুধা সিং। বন্দুকটা ওর হাতে দিয়ে বললেন, ‘বাবু সাবদের জন্য চায়ের ব্যবস্থা কর।’
চা খেতে খেতে বুধা সিংয়ের গল্প শুনছিলাম। হঠাৎ একটা শোরগোল উঠল উত্তরের ওই কুণ্ডলি থেকে। আমাদের কুণ্ডলি থেকেও চেঁচিয়ে উঠল করণ সিং নামের এক বৃদ্ধ, ‘ওই যে, ওই যে, বাঘ! একটা লোককে উঠিয়ে নিয়ে গেল।’
সবাই মিলে ছুট দিলাম উত্তরের বনের দিকে। ওই কুণ্ডলিটার কাছে।
..চলবে..

এই সিরিজের অন্যগল্প : বিষ্ণুপদের বিড়াল, অন্য পৃথিবী, কিউপিড ব্যালান্স, জামিল ও অদৃশ্য মানব, ভিনগ্রহের পাণ্ডুলিপি-১, , , ,


মন্তব্য

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

রহস্য বা কল্পগল্প একবারে পড়তে ভালো লাগে।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

ধন্যবাদ, আমারও ভালো লাগে, তাই দুটোকে মেলাবার চেষ্টা করেছি, দেখাযাক পাঠক শেষ পর্যন্ত কীভাবে নেন

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

অতিথি লেখক এর ছবি

(Y)। ‘নৈনিতাল’ নামটাই ভালো লাগার জন্য যথেষ্ট, সেই ছোটবেলায় কৃষণ চন্দরের ‘মিস নৈনিতাল’ প্রথমবার পড়ার সময় থেকেই নামটা অসাধারণ লাগে আমার। অবশ্য সেই নৈনিতালের সাথে এই নৈনিতালের মিল নেই মোটে... আপনার লেখাটা দারুণ।

দেবদ্যুতি

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

ধন্যবাদ, যাওয়ার খুব ইচ্ছা ছিল। কিন্তু সাধ কবে মিটবে জানি না। ভ্রমণ কাহিনীর সাহায্য নিয়েই এই লেখা এগিয়েছে।

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

মরুদ্যান এর ছবি

পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম খারাপ না। চলুক।

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন।

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

এক লহমা এর ছবি

চলুক।
ভালো লেগেছে, একটা ব্যাপার ছাড়া। কালাধুঙ্গি নামটা চোখে পড়লে মানুষখেকোর কথা মনে আসবে সেটা স্বাভাবিক কিন্তু মানুষখেকোর আবির্ভাবের কথাটা বাড়তি 'পাওনা'! একই ভাবে পরবর্ত্তীতে কাগজ পড়ার প্রেক্ষিতে বাঘের আক্রমণ-এর খবর এর 'শিরোনাম উৎসাহী করে তুলল'। শব্দচয়ন এবং কথার সুর অস্বস্তিকর লেগেছে।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

ঠিক বলেছেন দাদা, শব্দচয়নে আরও সচেতন হওয়া উচিৎ ছিল। ধন্যবাদ আপনার পরামশের জন্য, সেই সাথে পড়ার জন্যও

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনি লিখা গুলো কি ওয়ার্ড ফাইল করে দেন?
এ‌্যানি মাসুদ

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

আপনার কথাটা ঠিক বুঝলাম না এ্যানি।

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার কোন লিখা যদি সংরক্ষন করতে চায়? সেক্ষেত্রে কিভাবে করব?

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

লেখা কীভাবে সংরক্ষণ করতে হয় সেটা আমি জানি না। তবে কিওয়ার্ডের যেকোনও শব্দ গুগলে বসিয়ে সার্চ দিলেই ওই কিওয়ার্ডের সব লেখা পেয়ে যাবেন। আর আমার সব লেখা খুঁজে পেতে হলে আমার ব্লগে যেতে হবে। যেমন লেখার নিচেয় পাবেন ‘আব্দুল গাফফার রনি এর ব্লগ’ নামে একটা অপশন। ওখানে ক্লিক করলে আমার সব লেখা পাবেন।

----------------------------------------------------------------
বন পাহাড় আর সমুদ্র আমাকে হাতছানি দেয়
নিস্তব্ধ-গভীর রাতে এতোদূর থেকেও শুনি ইছামতীর মায়াডাক
খুঁজে ফিরি জিপসি বেদুইন আর সাঁওতালদের যাযাবর জীবন...
www.facebook.com/abdulgaffar.rony

অতিথি লেখক এর ছবি

ধন‌্যবাদ আপনাকে।
এ্যানি মাসুদ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।