জামিল ও অদৃশ্যমানব

অতিথি লেখক এর ছবি
লিখেছেন অতিথি লেখক (তারিখ: বিষ্যুদ, ১০/০৫/২০১২ - ৯:৩০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ল্যাবরেটরিতে বসে একমনে কাজ করছেন ড. জামিল। হঠাৎ জগমোহন ঢুকল। জামিল মুখ তুলে তাকালেন ওর দিকে।
'সাহেব, ভীমকে দেখেছেন?' ওর চেহারায় উৎকণ্ঠা।
'না।' এক শব্দে জবাব দিলেন জামিল।
'সকাল থেকে ওকে খুঁজে পাচ্ছি না। কোথায় যে গেল!'
'চিন্তা করো না জগমোহন। সেখানেই থাক, ঠিক ফিরে আসবে।'
জামিলের আশ্বাসে সন্তুষ্ট হতে পারল না জগমোহন। একরাশ উৎকণ্ঠা নিয়েই বাইরে বেরিয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর ভীমের গম্ভীর হাঁক শুনতে পেলেন জামিল, 'ঘেউ...উ...উ...ঘেউ!'
এরপর দুপদাপ পায়ের আওয়াজ। জামিল বুঝলেন হাঁক লক্ষ্য করে কুকুরটার ঘরের দিকে ছুটছে জগমোহন। তারপর একটা আতঙ্কিত চিৎকার। জগমোহনের। 'সাহেব ভূত...ভূত..ভূ..!'
থেমে গেল চিৎকার। খারাপ কিছু ঘটে গেছে বুঝে জামিলও ছুটলেন সে দিকে। জগমোহন বেহুঁশ হয়ে পড়ে আছে। চোখে মুখে তীব্র আতঙ্কের ছাপ। ঠিক তখনই আবার কুকুরটার মৃদু হাঁক, 'ঘেউ... ঘেউ...কুঁই...কুঁই...'
চোখ তুলে তাকালেন ড. জামিল। ভীমকে যে খুঁটিতে বাঁধা হয় সেই দিকে। শিকলটা আছে। টান টান হয়ে। হাওয়ায় ভেসে! যেন কুকুরটা বাঁধা আছে তাতে। কিন্তু আসলে কুকুরটা নেই। আবার শব্দ হলো সেখান থেকে, 'কুঁই...কুঁই...।'

দুই
টানা বারো ঘন্টা পর জ্ঞান ফিরছে জগমোহনের। ভয়ে পেয়ে এতক্ষণ অজ্ঞান থাকার কথা নয়। আসলে জামিলই ওকে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছিলেন। বিজ্ঞানীদের ধারকাছে কমবুদ্ধির মানুষ থাকা এই এক বিপদ। না বুঝেই গবেষণায় বাগড়া দেয়। তাই ওকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা ছাড়া জামিলে গত্যন্তর ছিল না। ওকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে জামিল তার বাকি কাজটুকু সেরেছেন। জামিল নতুন গবেষণাটা চালিয়েছিলেন তার প্রিয় ককুর ভীমের ওপর। অদৃশ্য করার গবেষণা। ফল পেয়েছেন চমৎকার!
প্রথম ইনজেকশনটা পুশ করার পর ভীম অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল। দ্বিতীয়টা পুশ করতেই ফিরে এসেছে স্বরূপে। মাঝখানের সময়টুকুতে জামিল পরীক্ষা করে দেখেছেন অদৃশ্য ভীম দেখতে পাচ্ছে কিনা। এখানেও সফল। অদৃশ্য প্রাণী দেখতে পায় নাÑ বিজ্ঞানীদেরএতোদিনের শক্ত ধারণা ভাঙতে পেরেছেন তিনি। অবশ্য এর জন্য কাঠ-খড়ও পোড়াতে হয়েছে। নইলে অদৃশ্য ভীম অন্ধই হতো।

তিন
ল্যাবরেটরিতে বসে নিবিষ্ট মনে কাজ করছেন জামিল। এক কাপ চা আর একটা খাম হাতে নিয়ে ঢুকল জগমোহন। জামিল চায়ে চুমুক দিতে দিতে খামের ওপর চোখ বুলালেন। তুরস্কের ইস্তাম্বুল থেকে এসেছে চিঠিটা। পাঠিয়েছে ড. বারিক আলি। বারিক আলিকে জামিল ভালোকরেই চেনেন। অসাধারণ প্রতিভা। কিন্তু মানবিক গুণ বিকৃত। বিজ্ঞান আর প্রতিভাকে টাকা আয়ের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে লজ্জাবোধ নেই একটুও। জামিল খামের এক পাশটা ছিঁড়ে চিঠিটা মেলে ধরলেন।

ড. জামিল
আশা করি চিনতে পারছেন। খবর পেলাম সম্প্রতি আপনি অদৃশ্য মানবের ত্রুটিমুক্ত একটা ফর্মুলা আবিষ্কার করেছেন। আপনার প্রতিভার সম্পর্কে আমার ধারণা অনেক উঁচু। বিশ্বাস করি একমাত্র আপনিই পারেন অদৃশ্য মানবের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে। যাই হোক, এই ফর্মূলাটা আমি চাই। এর জন্য যেকোনো মূল্য দিতে রাজি আছি। আপনার ইতিবাচক জবাব আশা করছি।

ইতি
বারিক আলি
ইস্তাম্বুল, তুরস্ক
চিঠির শেষ বাক্যটা প্রচ্ছন্ন হুমকি। জামিল ভালো করেই জানেন, ফর্মূলা হাতে পাওয়ার জন্য লোকটা মরিয়া হয়ে উঠবে। তাই বাড়তি সতর্কতার ব্যবস্থা করলেন। আর ফর্মূলা বিক্রির কথা চিন্তাই করতে পারেন না জামিল। বারিক আলির মতো লোক হলে তো কথায় নেই। সে যদি একবার অদৃশ্য হতে পারে এইচ.জি ওয়ালসের অদৃশ্যমানব গ্রিফিনের চেয়েও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে।
আসলে অদৃশ্য মানবের প্রথম ধারণাটা আসে শত বছর আগে ব্রিটিশ লেখক এইচ.জি ওয়েলেসের মাথায়। সেই ধারণা থেকেই ইনভিজিবল ম্যান নামের এক চমৎকার উপন্যাস লেখেন তিনি। পরবর্তীতে জার্মান শরীরতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ডব্লু স্পালটোহেলজ প্রমাণ করেন আসলেই প্রাণীদেহকে অদৃশ্য করা সম্ভব। এজন্য প্রাণীদেহে আলোর প্রতিসারঙ্ক হতে হবে বাতাসে আলোর প্রতিসারঙ্কের সমান। অর্থাৎ আলো যেমন বাতাস ভেদ করে যায় তেমনি করে অদৃশ্য মানবের দেহ ভেদ করেও যেতে হবে। আলো কাচ ভেদ করে যেতে পারে। কিন্তু বাতাসের মতো এতখানি নয়। তাই কাচ স্বচ্ছ হলেও দেখা যায়।
জামিল মিথাইল স্যালিসাইলেট দ্রবণের সাথে আরো কয়েক রকম দ্রবণ সাথে মিশিয়ে একটা ইনজেকশন বানিয়েছেন। এই ইনজেকশন পুশ করলেই যেকোনো প্রাণীর অদৃশ হয়ে যাবে। মানে প্রাণীদেহের প্রতিসারঙ্ক বাতাসের সমান হবে আরকি। সেই কাজটি তিনি করেছিলেন ভীমের গায়ে ইনজেকশন পুশ করে। তাই ভীম অদৃশ্য হয়ে যায়। অদৃশ্য ভীমের চিৎকার শুনে ভূত ভেবে ভয় পেয়ে যায় জগমোহন।
আপাত দৃষ্টিতে কাজটা যত সহজ মনে হচ্ছে অতটা কিন্তু সহজ ছিল না। কারণ একটা বড় ত্রুটি আছে প্রক্রিয়ায়। এইচ.জি ওয়েলস অত্যন্ত চতুরতার সাথে উপন্যাসের কাহিনি এমন ভাবে নির্মাণ করেছিলেন যেন সাধারণ পাঠকের চোখ ত্রুটির দিকে না যায়। যে মানুষকে অন্য কেউ দেখতে পায় না সে নিজেকে কীভাবে দেখবে? বড় প্রশ্ন? তারচেয়েও বড় প্রশ্ন, অদৃশ্য মানব কি আদৌ দেখতে পাবে?
যে মানুষের সর্বাঙ্গ স্বচ্ছ বা অদৃশ্য সেই মানুষের গায়ে যে আলো পড়বে সেই আলোর সবটুকু তাকে ভেদ করে বেরিয়ে যাবে। কোনো প্রাণী যখন তখন তার চোখের লেন্স দিয়ে ঢোকা আলোক রশ্মি মস্তিষ্কের বিশেষ এক পর্দায় প্রতিবিম্ব গঠন করে। অদৃশ্য মানষের ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব নয়। তাই সে নিজেকে তো দেখতেই পাবে না, উপরোন্তু জগতের সবকিছুই তার কাছে অদৃশ্য থেকে যাবে। ঠিক এই বিষয়টা নিয়ে বেশি খাটতে হয়েছে জামিলকে।
সরাসরি অদৃশ্য মানুষকে দিয়ে পৃথিবী দেখোনোর চেষ্টা না করাই ভালো। তাই তিনি অনুসরণ করেছেন বাদুড়ের পথচলার সিস্টেম। মস্তিষ্কের বিশেষ একটা অংশকে করে দিয়েছেন অতিশক্তিশালী সাউন্ডসেন্সর। এটা বিশ্লেষণ করে আল্টাসনোগ্রাফির মতো প্রাণীর মস্তিষ্কে কাল্পনিক ছবি তৈরি করতে পারে। সেটা পুরোপুরি দেখার মতো ব্যাপার না হলেও এর কাছাকাছি।
ভীমও অদৃশ্য অবস্থায় এই পদ্ধতি ব্যবহার করে সবকিছু দেখতে পেয়েছে। কিন্তু এতো পরিশ্রমের একটা আবিষ্কার কেড়ে নেওয়ার জন্য হাঁ করে বসে আছে বারিক আলি। 'ব্যাটাকে একটা উচিৎ শিক্ষা না দিলেই নয়!' ভাবলেন জামিল। ঠিক তখনই টেলিফোনটা বেজে উঠল। ক্যালিফোর্নিয়া থেকে মাইকেল ক্রিস্টফারের ফোন। এ মাসের ২৭ তারিখে সান্তা মনিকায় বসছে ১৭তম ক্যালিফোর্নিয়া বৈজ্ঞানিক সম্মেলন। জামিল রাজি থাকলে আগামী কালই প্লেনের টিকিট আর নগদ কিছু ডলার পাঠিয়ে দেয়া হবে বলে জানালেন ক্রিস্টাফার। ভিসা পৌঁছে দেবে অ্যামেরিকান অ্যাম্বাসির লোক। জামিল এক কথায় রাজি হয়ে গেলেন।

চার
সান্তা মনিকা মিউজিয়াম হলে চলছে সম্মেলন। জামিল অভ্যাগত অতিথিদের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলেন। দুই সাঁরি পেছনেই বসে আছে বারিক আলি। চোখে দুষ্টুমি ভরা হাসি। হাসির অর্থ বুঝতে বেগ পেতে হলো না জামিলের।
কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হলো বক্তব্য। বিশ্বের বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীরা তাদের নতুন নতুন আবিষ্কার নিয়ে আলোচনা করলেন। জামিলের পালা শুরু হলে, তিনি ‘অন্য পৃথিবী’র রোমাঞ্চকর অভিযানের গল্পটা বললেন। মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনলেন বিজ্ঞানী স্রোতারা। গল্প শেষ হলো। কিন্তু স্রোতারা সন্তুষ্ট নন। তারা 'অদৃশ্য মানব' গবেষণার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চান।
'দেখুন! ইচ্ছা থাকলেও এখনি সবটুকু জানাতে পারছি না। আমার পেছনে ফেউ লেগেছে। ফর্মূলাটা সে চায়। কিন্তু এই ফর্মূলা নিয়ে কেউ যদি অদৃশ্য হয়ে অপরাধকাণ্ডে লিপ্ত হয়, কী হবে ভেবে দেখেছেন? তাই আমি অদৃশ্য মানবের পেপারটা পড়তে চাই না। আশা করি আমাকে ক্ষমা করবেন। তবে এটুকু বলি, ত্রুটিমুক্ত অদৃশ্য মানব তৈরি সম্ভব।'
দর্শক-স্রোতারা অতৃপ্ত হলেও জামিলের কথা বুঝলেন। তুমুল হাততালি দিয়ে তাকে অভিনন্দিত করা হল।

পাঁচ
হোটেলে বিশ্রাম নিচ্ছেন জামিল। কলিংবেল বেজে উঠল।
'ক?'
'দরজা খুলুন।' গম্ভীর কন্ঠের আওয়াজ এলো। 'আমরা এফবিআই-এর লোক।'
সন্দেহ থাকলেও করার কিছু নেই। দরজা খুলে দিলেন। হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকল পাঁচ সাতজন মিলিটারি স্বাস্থের লোক। লিডার গোছের লোকটা পকেট থেকে এফবিআই-এর কার্ড বের করে জামিলের সামনে ধরল।
'আমাকে কী করতে হবে?' বললেন জামিল।
'আমাদের সাথে যেতে হবে। পৃথিবীর জন্য হুমকি এমন একটা ফর্মূলা তৈরি করেছেন আপনি। বলতে পারেন সে অপরাধেই গ্রেফতার করা হলো আপনাকে।'
'গ্রেফতার!'
'প্লিজ কথা বাড়াবেন না, আসুন।'
জামিল বললেন, 'আমার বন্ধুদের অন্তত ফোন করে একবার জানাই।'
'সে সুযোগ আপনি ওখানেও পাবেন। চলুন এখন।'
জামিল কথা বাড়ালেন না। চুপচাপ তাদের অনুসরণ করলেন। নিচে দাঁড়িয়ে কালো গ্লাসের একটা লাল ফেরারি। তাকে নিয়ে তিনজন উঠল সেই গাড়িতে। বাকিরা আরেকটায়।
গাড়ি চলছে ঝড়ের বেগে। হঠাৎ পেছন থেকে একদলা কাপড় এসে জামিলের নাকমুখ চেপে বসল। কী ঘটল তার বুঝে ওঠার আগেই জ্ঞান হারালেন।

ছয়
চোখ মেলে নিজেকে আবিষ্কার করলেন বিছানায়। প্রথম কিছুই মাথায় ঢুকল না জামিলের। ধীরে ধীরে মনে পড়ল সব। কোথায় আছেন জানার জন্য চারপাশে নজর বুলালেন। বিরাট এক হলরুম। চারকোণা বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতিতে ঠাসা। তারমানে ল্যাবরেটরি। এর কাছে জামিলের ল্যাবরেটরি স্রেফ ভিক্ষুকের ঝুলি! ইংরেজি ক্যালেন্ডারের পাশাপাশি আরবী ক্যালেণ্ডারও ঝুলছে দেয়ালে। ঠিক মাঝ বরাবর বড় ঘন্টাওয়ালা একটা দেয়াল ঘড়ি। ওটার সাথে হাতঘড়ির সময় মিলিয়ে নিশ্চিত হলেন, তুরস্কে বারিক আলির ল্যাবরেটরিতে বন্দী তিনি। তার ধারণা প্রমাণ করতেই ইলেক্ট্রিক সিকিউরড দরজা খুলে ল্যাবরেটরিতে ঢুকল বারিক আলি। একা।
'ড ইভিনিং মি. জামিল।' মিষ্টি একটা হাসি উপহার দিয়ে বলল বারিক আলি।
'এর মানে কী বারিক? আমাকে এফবিআই-এর লোক দিয়ে এভাবে ধরে আনলেন কেন?'
'ও কথা বলে লজ্জা দেবেন না জামিল। কী করার ছিল বলুন? আপনি আমার চিঠির জবাব দিলেন না। কত টাকা চান সেটাও যদি অন্তত জানাতেন? পরে বুঝেছি টাকা দিয়ে জামিলকে কেনা যায় না। তাই অনুপায় হয়ে এফবিআই-এর নাটক করেছি। আশা করি আপনার প্রাণের মূল্যটা আপনি বোঝেন। নিজের জন্য না হোক, পৃথিবীর স্বার্থেই আপনার বেঁচে থাকার দরকার রয়েছে। ভালোই ভালোই অদৃশ্য মানবের ফর্মূলটা দিয়ে দিলে আবার গবেষণাগারে ফিরে যাবেন। টাকাও পাবেন প্রচুর।'
জামিল ও বারিক আলির তর্কযুদ্ধ শুরু হলো। এক সময় থামলেন উভয়েই বারিক আলি বলল, 'ঠিক আছে, অনেক হয়েছে। বিশ্রাম করুন। খাওয়া দাওয়া করুন। কাল সকালে আবার কথা হবে।'

ছয়
অবশেষে জামিল রাজি হয়েছেন। প্রয়োজনীয় ক্যামিক্যাল সব ল্যাটরেটরিতেই আছে। জামিল বলছেন শুনে শুনে বারিক আলি ইনজেকশন বানাচ্ছেন। সোয়া এক ঘন্টা পর তৈরি হলো অদৃশ্য হওয়ার ইনজেকশনটা। আরো এক ঘন্টা লাগল অদৃশ্য থেকে দৃশ্যমান হওয়ার ইনজেকশন তৈরি করতে।
সব ঠিকঠাক মতো হয়ে গেলে বারিক আলি নিজের গায়ে ইনজেকশন পুশ করে অদৃশ্য হতে শুরু করল। ধীরে ধীরে তার কাঠামোটা মিলিয়ে গেলো শূন্যে। ঠিক তখনই একটা গায়েবি চিৎকার শুনতে পেলেন জামিল। ভয় মেশানে চিৎকার, 'জামিল! আমি দেখতে পাচ্ছি না কেন? কী করেছেন আপনি? ফর্মূলায় গড়বড় করেছেন? বেঈমান! প্রতারক!'
হুরমুড় করে ল্যাবরেটরির জিনিসপত্র মেঝেয় পড়তে লাগল। ফানেল, জার, ব্রুস্টার, প্রিপেট টিউব ভাঙ্গার শব্দ হলো।
'উঃ মরে গেলাম! শয়তান! ইবলিস!'Ñ এ জাতীয় নানান গায়েবী চিৎকার।
এদিকে মুচকি মুচকি হাসছেন জামিল। জোরে জোরে বললেন, 'মতিভ্রমের শাস্তি! দাঁড়াও এখনো বাকি আছে অনেক।'
হয়েছে কী, ড. জামিল যখন ফর্মূলাটা বলছিলেন, বারিক আলি ইনজেকশন তৈরি করছিল, তখন মিথাইল সলিসাইলেটে দ্রবণের সাথে আরো যে দ্রবণ মেশানোর কথা বলেছিলেন জামিল সেগুলোর কোনো কার্যকারিতাই নেই। ফলে যেটা তৈরি হলো সেটা ওয়েলস-স্পালটোহেলজের সেই পুরোনো ক্যামিক্যল। ফলে বারিকের মস্তিষ্কে বিশেষ সাউন্ড সেন্সরটা তৈরি হয়নি। তাই স্বাভাবিক শব্দ শুনতে পেলেও দেখার মতো কোনো ব্যাপার আদৌ ঘটেনি তার ক্ষেত্রে। সুতরাং সে অন্ধ হয়ে গেছে!
জামিলের মোবাইলফোনটা আগেই ছিনিয়ে নিয়েছে বারিক আলির লোক। তাই ল্যাবরেটরির ফোন ব্যবহার করেই কথা বললেন তুরস্কের বাংলাদেশী দূতাবাসে। অনুরোধ করলেন আসার সময় পুলিশ যেন রং আর পিচকিরি নিয়ে আসে।

সাত
পুলিশ রং পিচকিরি নিয়ে হাজির। জামিল শব্দের উৎস অনুসরণ পিচকিরি দিয়ে রং ছিটালেন সেদিকে। ছেঁড়া ছেঁড়া ভাবে স্পষ্ট হতে শুরু করল একটা রঙিন মানবদেহ। পুলিশের দল হতভম্ব। জামিল তাদেরকে অনুরোধ করলেন রংয়ের ভেতর থেকে জন্ম নেয়া মানুষটার হাতে হ্যান্ডক্যাপ পরাতে।
..........................
আব্দুল গাফফার রনি


মন্তব্য

চরম উদাস এর ছবি

ভালো লাগলো হাততালি । গল্পে কিছুটা প্রোফেসর শঙ্কুর ছাপ পেলাম। ডক্টর জামিল সিরিজের আরও এরকম লেখা পড়তে চাই।

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
আরো আরো জামিল আসছে।

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

জামিল সিরিজের প্রথম গল্প, 'ভিনগ্রহের পাণ্ডুলিপ' ধারাবাহিকভাবে সচলায়তনে পোস্ট কতে চাই- পাঠকদের সমর্থন চাই, কর্তৃপক্ষের মন্তব্য চাই...

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

সিরিজ অব্যাহত থাকুক

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

কোলাকুলি
রাখার যথসাধ্য চেষ্টা করব।

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

অব্যাহত রাখার চেষ্টা করব। আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

নিলয় নন্দী এর ছবি

হুম! ভালো হচ্ছে।
চলুক।
চলুক

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

লইজ্জা লাগে আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

নিলয়দা, আপনার আপনার মন্তব্য আমার জন্য অনেক বড় সনদ।

মাহ্‌মুদ এর ছবি

গল্পটি ভালো লাগলো। "ভিনগ্রহের পাণ্ডুলিপি" আশা করি "ব্যোমযাত্রীর ডায়েরী" (শঙ্কু) এর মতই আনন্দদায়ক হবে!

আপনার এই লেখাটি পড়ে কলেজ জীবনে (নটর ডেম কলেজ) পদার্থবিজ্ঞান প্রথম সাময়িক পরীক্ষার কথা মনে পরে গেল, সুশান্ত স্যার আর ফাদার পিশোতো মিলে এই সমস্যা টাই তুলে দিয়ে বলতেন যুক্তি সহ ব্যাখ্যা করার জন্য, " অদৃশ্য মানুষ কি দেখতে পায়? তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।"

আপনার দেওয়া যুক্তি-ই খাতায় লিখেছিলাম !

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

"ব্যোমযাত্রীর ডায়েরী''-এর মতো আনন্দদায়ক হবে কিনা জানি না। তবে চেষ্টার কোনো কমতি থাকবে না। তবে চুপি চুপি একটা কথা বলি, আপনি আবার পাঁচকান করবেন না- "ভিনগ্রহের পাণ্ডুলিপি" এডিট করে এর জঞ্জাল দূর করেছেন কিন্তু সচলায়তনের অন্যতম সেরা সায়েন্স ফিকশনিস্ট নিলয় নন্দী!

@ভাই মাহমুদ আপনার স্মৃতি উস্কে দিতে পেরে আমারও খুব ভাল লাগছে।

নিলয় নন্দী এর ছবি

চিন্তিত
প্রয়োজন ছিল না রনি।
কতজনকে কতভাবে সাহায্য করতে হয়, এসব মনে রেখে লাভ নেই।
আপনার আর কিছুটা অভিজ্ঞতা বাড়ুক, নিজেই বুঝতে পারবেন।
আমার দেখানো সমস্যাগুলো ঠিক করেছিলেন আশা করি।

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

করেছিলাম। @ এই সাহায্য করার সময় বা মানসিকতা ত সবার থাকে না নিলয়দা।

তাসনীম এর ছবি

চলুক

ভালো লাগলো।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

বন্দনা এর ছবি

বাহ আপনি তো বেশ লেখেন রনি। ইদানীং সচলে বেশ রহস্য আর সাইফাই টাইপ গল্প আসছে। আশা করি সামনে আর ও এমন সাইফাই আসবে।

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
আরো আসবে আশা রাখি অন্তত...

প্রদীপ্তময় সাহা এর ছবি

অসাধারণ হয়েছে। চলুক
আরও আসুক এরকম গল্প।

নিলয়দাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবার জন্যে।
আর রনি, আপনাকে বলি, সাহায্য করার মানসিকতা যেমন সবার থাকে না, তেমনি কৃতজ্ঞতা স্বীকারের মানসিকতাও কিন্তু সবার থাকে না। তাই আপনাকেও ধন্যবাদ। গুরু গুরু

আর আখেরে লাভ তো আমাদেরই। চালিয়ে যান। হাততালি

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-
আসবে, জামিল সিরজ তার বাচ্চা-কাচ্চা নাতি-পুতি নিয়েই আসবে...
কোলাকুলি

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

এইচ, জি, ওয়েলস তার বইতে এতো ফাঁকফোকর রাখসে, পড়ার সময় বুঝি নাই তো! চিন্তিত

গল্প ভালো লাগসে। হাসি
পরেরটার অপেক্ষায় থাকলাম।

"অনুপায়" শব্দটা পড়ে মনে পড়লো, একবার এক স্টুডেন্ট ক্লাসে এই শব্দটা বলার পর "নিরুপায়" শব্দটা মনে পড়তে আমার তিনদিন সময় লাগসিলো। দেঁতো হাসি

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

এটাই তো এইচ, জি, ওয়েলস-এর কারিশমা। তাঁর গল্পের জাদুতে পাঠক বুঁদ হয়ে থাকে, ফাঁক-ফোঁকর দেখবে কখন? গল্প শেষ হলেও তিনদিন মুখে লেগে থাকে তার স্বাদ। ত্রুটির দিকে নজর দেবে কখন?

শাফায়েত এর ছবি

ছোটো আরেকটা সমস্যা আছে। বারিক আলি কি গায়ের জামাকাপড় খুলে নিয়েছিলো?

ভালো লাগল।

আব্দুল গাফফার রনি এর ছবি

দারুন প্রশ্ন! আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা- তবে বারিক আলি নিজেই যেহেতু আদৃশ্য হতে চেয়েছিল, তা আদৃশ্য হওয়ার আগে নিজেই হইত ও কাজটি সেরে ফেলেছিল...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।