জামাত শিবিরকে নিষিদ্ধ করুন

সজল এর ছবি
লিখেছেন সজল (তারিখ: শনি, ১৬/০২/২০১৩ - ১:২২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ইউরোপের যেকোন দেশের যেকোন রাস্তায় দাঁড়িয়ে নাৎসীদের গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে মানবাধিকারে চুপচুপে দুইটা কথা বলে দেখুন। গণতন্ত্রের ধ্বজ্জা উড়ানো ইউরোপিয়ানরা গণতন্ত্রের ফ্ল্যাগস্ট্যান্ড খুলে সেটা আপনার পিছনে ঢুকিয়ে দিবে। মানবাধিকার বেঁচে খাওয়া আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর কাছে গিয়ে কান্নাকাটি করুন নাজীদের রাজনীতি করার অধিকার দিচ্ছেনা অমুক সরকার, তমুক সরকার বলে, হলোকাস্টের বান্ডিল বান্ডিল ইতিহাস গিলিয়ে খাইয়ে তারপর আপনার নামে তারা একটা ভীষণ নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়ে দিবে।

বিশ্বযুদ্ধের ৫/৬ বছরে সারা পৃথিবী জুড়ে সংগঠিত হলোকাস্টে প্রাণ হারিয়েছিল প্রায় ষাট লক্ষ মানুষ, যাদের জাতিগত পরিচয় ছিল ইহুদী। সেই গণহত্যার স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হিসাবেই নাৎসীবাহিনীর মূল হোতাদের যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী ভূমিকার বিচার হয়েছিল সংক্ষিপ্ততম সময়ের মাঝে। ইউরোপ জুড়ে নিষিদ্ধ হয়েছিল নাৎসীদের রাজনীতি। বেশিরভাগ দেশ জুড়ে হলোকাস্ট ডিনায়ালকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বিবেচনা করা হয়। আর মূল হোতা দেশ জার্মানিকে ক্ষতিপূরণ সহ নানা শাস্তি ভোগ করতে হয়। বিশ্বের মাতবরেরা এই গণহত্যার তীব্র নিন্দা জানায়, এবং এর অবসানে তারা সামরিক ভাবে এগিয়েও আসে।

পাশের মহাদেশ এশিয়ার ছোট দেশ বাংলাদেশে যখন মাত্র পঁচিশ বছরের ব্যবধানে আরেকটি ভয়াবহ গণহত্যা সংঘটিত হয়,যেখানে মাত্র ৯ মাসে ত্রিশ লক্ষ মানুষ নিহত হয়, বিশ্ব বিবেক পিংপং খেলা আর সামরিক অস্ত্রের বাণিজ্যে ব্যস্ত ছিল। বাংলাদেশ ভারত সীমান্তের শরণার্থী শিবিরে যখন কয়েক লাখ শিশু অপুষ্টিতে, অনাহারে আর বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছিল, তখন মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তেমন উঁচু কণ্ঠ শোনা যায়নি। খুব সম্ভবত গরীব দেশের মানুষ মারা গেলে মানবাধিকার লংঘিত হয় না। ৭১এর রক্তের সাগরের বিনিময়ে আমরা যখন স্বাধীনতা পাই, আমাদের হাতে বন্দী হয় ৯৫ হাজার পাকিস্তানী সৈন্য, যার মধ্যে ১৯৫ জন ছিল যুদ্ধাপরাধের সুস্পষ্ট অভিযোগে অভিযুক্ত, তখন জেনেভা কনভেনশন বগলে চেপে হাজির হয় বিশ্বের যত মানবাধিকার সংস্থা।

এই সুস্পষ্ট বৈপরীত্য কেন? মানবাধিকার কেনার টাকা আমাদের নেই বলে? ত্রিশ লাখ লোকের রক্ত আর চার লাখ ধর্ষিতার অশ্রুতে ভেজা মাটিতে পা দিয়ে হাঁটার সময় আমাদের কি মনে হয় এই আন্তর্জাতিক সংস্থা কিংবা বাইরের মোড়লদের আমাদের পুছার সময় নাই। আমাদের হিসাব গুলো চুকিয়ে দেয়ার সময় এইসব মানবাধিকার বেঁচনেওয়ালাদের তোয়াক্কা করে কেন আমরা চলি?

স্বাধীনতার পরপর জামায়াত সহ সকল ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছিল গোলাম আজম সহ প্রায় নব্বই জন স্বাধীনতা বিরোধীর। বঙ্গবন্ধুর অনেক দোষ ছিল, কিন্তু উনার এটুকু সাহস ছিল জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করার, সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠা করার। যে আদর্শ ৭১ এ রক্তগঙ্গা বইয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ জুড়ে, সেই আদর্শকে নিষিদ্ধ করতে আমাদের স্বাধীনতার স্থপতিদের চিন্তা করতে হয়নি এক মূহুর্তও।

মাঝখানে হাটুবাহিনীর শাসন আর বিএনপির কাঁধে সওয়ার জামাতের সরকার এসেছে, এদের কাছে আমাদের চাইবার কিছু ছিল না। কিন্তু দুই তৃতীয়াংশের উপর জন সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকার যখন জামায়াতে আত্মীভূত বিএনপি'র মতামত সহ জাতীয় ঐক্যমত প্রতিষ্ঠা করার টাল বাহানা দেখায় জামাত শিবিরকে নিষিদ্ধ করতে গিয়ে, তখন এক দলা ঘৃণা গলায় উঠে আসে। সংবিধান সংশোধনের নামে নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে নিজের সুবিধামত কাটাছেড়া করতেতো বিএনপি'র মতামত চাইতে হয়নি। নিজের সুবিধার সময় জনগণের ম্যান্ডেট কাজে লাগানো যায়, আর জনগণের দাবী মানতে গেলেই জাতীয় ঐক্যমতের টাল বাহানা!

আজ জামাত শিবির বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়ে এসেছে যে লেখালেখি আর গণজাগরনে অংশ নেয়ার অপরাধে একজন ব্লগারকে জবাই করে তার বাসার সামনে ফেলে রেখে যায়। ওদের ছুড়ি আর চাপাতির ধার কিন্তু কমছে না, পরবর্তী সুযোগে ওরা শুধু আম পাবলিককেই জবাই করবে না, ওদের ছুরির মুখ থেকে বাঁচার জন্য আওয়ামী লীগ পরিচয়ও কিন্তু সাহায্য করবে না।

আওয়ামী লীগ সরকারকে বলছি, দয়া করে গত নির্বাচনের ইশতেহারটা পড়ুন, জনগণের ম্যান্ডেটের পরিমাণটা আবারো মনে করুন আর চোখ রাখুন শাহবাগ চত্বরে পরিণত হওয়া সারা বাংলাদেশের বিক্ষুব্ধ তারুণ্যের দিকে। জামাত শিবিরকে নিষিদ্ধ করুন অচিরেই, বিক্ষুব্ধ জনতা হয়ত জামাত শিবির নিষিদ্ধে আর খুব বেশি দিন আপনাদের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকবে না। সুযোগটা কাজে লাগান, আমাদের সমর্থন আপনাদের সাথেই আছে।


মন্তব্য

কৌস্তুভ এর ছবি

১০০% সত্যি।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

এক্ষুনি জামাত নিষিদ্ধ করা হোক।

মনি শামিম এর ছবি

এক্ষুনি জামাত নিষিদ্ধ করা হোক।

এক্ষুনি।

টিউলিপ এর ছবি

পুরো লেখাতেই সহমত।

___________________

রাতের বাসা হয় নি বাঁধা দিনের কাজে ত্রুটি
বিনা কাজের সেবার মাঝে পাই নে আমি ছুটি

অয়ন এর ছবি

বোকাচোদা বাঙালী এখনো ধর্মের দোহাই দিয়ে মানুষ হত্যা সমর্থন করে।

তানিম এহসান এর ছবি

একদিন দেরি মানে দেশটাকে এক বছর পিছিয়ে দেয়া।

বিচার শুরু করতে দেরি করেছিলো সরকার, ট্রাইব্যুনালের জনবল দেয়া হয়নি, মামলার সাক্ষীদের নিরাপত্তা দেয়া হয়নি ঠিকমত, রাজনৈতিক পাশা খেলায় এইসব ভুলের মাসুল আমাদের কতদূর দিতে হয় তা ইতিহাস বলে দিবে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

চলুক

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ধুসর জলছবি এর ছবি

আওয়ামী লীগ সরকারকে বলছি, দয়া করে গত নির্বাচনের ইশতেহারটা পড়ুন, জনগণের ম্যান্ডেটের পরিমাণটা আবারো মনে করুন আর চোখ রাখুন শাহবাগ চত্বরে পরিণত হওয়া সারা বাংলাদেশের বিক্ষুব্ধ তারুণ্যের দিকে। জামাত শিবিরকে নিষিদ্ধ করুন অচিরেই, বিক্ষুব্ধ জনতা হয়ত জামাত শিবির নিষিদ্ধে আর খুব বেশি দিন আপনাদের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকবে না। সুযোগটা কাজে লাগান, আমাদের সমর্থন আপনাদের সাথেই আছে।

১০০% সহমত। চলুক

চরম উদাস এর ছবি

চলুক

ন এর ছবি

শুধু জামাত-শিবির নিষিদ্ধ করলেই হবে না, এমন ব্যবস্থা করতে হবে যেন তারা অন্য কোন নামেই রাজনীতি করতে না পারে। ছালে-বালে নির্বংশ হয়।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।