দেশ থেকে ফিরে (২০১৫)

সজল এর ছবি
লিখেছেন সজল (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৯/১০/২০১৫ - ৯:২১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

যোগাড়যন্তর

শিকড় উপড়ানো আর শিকড় গাঁথার দুই অসম্ভব কাজের টানাপোড়েনে দিন কাটে আমার। দেশ ছাড়ার পাঁচ বছর হয়ে গেলেও তাই ভোররাতের স্বপ্ন নিজের অস্তিত্বকে নড়বড়ে করে দেয়। মিষ্টি খাবার বালখিল্য স্বপ্নে গভীর নিশ্চিত ঘুম থেকে হঠাৎ করে হারিয়ে যাই অন্য সময়ে। ঘুম ভাঙতে ভাঙতে মনে হয় যেতে হবে হবিগঞ্জের বাণিজ্যিক এলাকার গোপাল মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে। কয়েক সেকেন্ড ধরে পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিচার করে বুঝতে পারি আমি হবিগঞ্জে নেই। ধ্যুত্তেরি বলে গজরাতে থাকি, এখন আবার সায়েদাবাদে গিয়ে বাস ধরতে হবে। তারপর পুরোপুরি সজাগ হয়ে বুঝতে পারি ৫ বছর কেটে গেছে, আমি এখন ঢাকাতেও নেই। শোবার ঘরে স্তুপ করে রাখা জামা-কাপড়, কয়েকদিন ধরে জমানো কফির কাপ, বিশাল টেবিল সব হঠাৎ করে যেন নাই হয়ে যায়, আর আমি অন্ধকারে বসে থাকি স্তব্ধ হয়ে। ঘন্টাখানেক কাটলে, গৌরি সেনের অবতার ক্রেডিট কার্ডের উপর ভরসা করে সামারের শেষ তিন সপ্তাহের জন্য দেশে আসা-যাওয়ার টিকেট কিনে ফেলি।

হাতে কয়েক মাস সময় আছে, পরে জানালেই হবে এই ভেবে ভেবে প্রোফেসরকে দেশে যাওয়ার কথা জানাতে জানাতে শেষমেষ দেশে যাওয়ার মাত্র দুই সপ্তাহ বাকি। গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্টদের ছুটিতে যাওয়ার কথা শুনে প্রোফেসরদের খুশি হওয়ার নিয়ম নেই, তাই সে “ঠিক আছে যাও, তবে আগে বলা উচিত ছিলো” বলে গোমড়া মুখে অনুমতি দিলো। সাথে শর্ত জুড়ে দিলো পুরা সামার জুড়ে কী কী করেছি তার একটা বোধগম্য বিবরণ লিখে যেতে। শুধু তাই না, ফিরে এসে পরের সেমিস্টারে কী কী যুগান্তকারী রিসার্চ করব সেটার প্রস্তাবনা লিখে যেতেও বলা হলো। ভবিষ্যতের কথা লিখা তেমন সমস্যা না, সামান্য কল্পনাশক্তি থাকলেই হয়, সায়েন্স ফিকশনের সংখ্যাতো আর এমনি এমনি এত বেশি না। সমস্যা দাঁড়ায় সামার জুড়ে কী করেছি, তার খতিয়ান তৈরী করতে গিয়ে। সাইকেল চালানো, ছবি তুলা, ঘুরাঘুরি করা এই রকম কিছু কাজের হদিশ পেলেও বিক্রয়যোগ্য কোন কাজের কোন হিসাব পাচ্ছিলাম না। শেষ পর্যন্ত যেসব পেপার যেসব নিয়তে ডাউনলোড করে এক পৃষ্ঠা করে পড়েছি, আর যেসব কোডের ফরম্যাট ঠিকঠাক করেছি সেগুলাকেই একটু বেশি বেশি করে লিখে যাবার আগের রাত পুরোটা জেগে প্রোগ্রেস রিপোর্ট একটা দাঁড় করানো গেলো। তার পরে দিনভর মিটিং এ নকল-উৎসুক মুখে বসে থেকে, আর বিকালে পুরো গ্রুপের সামনে একটা দুর্বোধ্য পেপার প্রেজেন্ট করে প্যাকিং চূড়ান্ত করার সময় আসে।

বারবারের ফেলে আসা শহর
হবিগঞ্জ শহরকে আমার বার বার ফেলে আসার শুরু মেট্রিক পরীক্ষার পর থেকেই। তবু সেই শহরে আমার বার বার ফিরে যাওয়া। বাড়ি বলে যে ধারণাটা, তার পুরোটা জুড়েই হবিগঞ্জ। আমরা চার ভাইবোন নানা শহরে ছিটকে গেলেও আমাদের বাড়ি ফেরা হতো এই হবিগঞ্জেই, যেখানে বাবা তার আপাত অটল গাম্ভীর্য আর মা তার সহজ খুশী নিয়ে অপেক্ষায় থাকতো আমাদের মাঝে কেউ কেউ কিংবা সবাই আসবে। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে নানা দেশে ছড়িয়ে পড়লেও এতদিন আমাদের ফিরে যাওয়ার যায়গা সেই হবিগঞ্জই ছিলো। ছোট বোন পড়াশুনা আপাতত শেষ করে ঢাকায় চলে আসার কারণে পরিবারের অবশিষ্ট সদস্যরা একসাথে মিলে থাকার সিদ্ধান্ত নিলে আমার বাড়ি এবার সরে যায় ঢাকায়। এবার তাই বাড়ি পৌঁছাই ঢাকায়।

পেছনের টানে হবিগঞ্জ ঘুরতে যাই দিন পাঁচেকের জন্য। বরাবরের মত মামা বাড়ির গ্রামে আর ঘুরতে যাওয়া হয় না। স্কুল বন্ধুদের সাথে টুকটাক ঘুরি, বুঝতে পারি সুর কেটে গেছে কিছুটা ওদের মাঝেও। আমাদের শহর খোয়াই নদীর পাড়ে। শহর ঘেঁষেই তিনটা ব্রিজের কোন একটা ধরে নদী পেরিয়ে গেলেই উঠে পরা যায় বানিয়াচঙের রাস্তায়। ভাটি এলাকার বর্ষা ছয় মাসের নীচে যায় না বলে সেই রাস্তা মূলত এগিয়ে যায় দুই পাশের ডুবা মাঠ-ঘাট-ক্ষেত আর ভেসে থাকা গ্রামের সারির মাঝ দিয়ে। নৌকাভ্রমণের নিয়তে আমরা গয়নাঘাট কালাডোবাতে হাজির হই টমটমে করে। ঘাটের সাথে গড়ে উঠা হাটের মাঝ দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে নজরে পড়ে বাচ্চাদের ঘুড়ি ওড়ানো। কিছু ডুবানো নৌকা, মাঝিদের মাছ ধরা, কিছু পালতোলা নৌকা। হাটের দোকান থেকে চা এনে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে খেতে খেতে চলে নৌকা ভাড়া করার দাম-দর। অপ্রতুল নৌকা, আকাশছোঁয়া ভাড়া আর সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসা সব মিলিয়ে আমরা পানির দিকে মুখ করে হাওর থেকে উঠে আসা বাতাসে গল্প করার সিদ্ধান্ত নেই নৌকাভ্রমণের বদলে। হাটেঘাটের সব দোকানের ঝাঁপিতে নজরে আসে প্রিয় নায়িকা মাহিয়া মাহির সিনেমার পোস্টার।

অনেক দিন ধরেই শুনছি আশেপাশে নাকি সেই রাজকীয় এক হোটেল বানানো হয়েছে গ্র্যান্ড সুলতান নামে, মূলত শ্রীমঙ্গলের পাহাড়ি এলাকায়। সেই হোটেলে এমনিতে ঘুরতে যাওয়া এক হ্যাপার ব্যাপার। গেইটে গিয়ে মিথ্যেমিথ্যি বলতে হয় আমরা স্ন্যাক্স খেতে এসেছি, তার পর হোটেলের ডাইনারে গিয়ে সত্যি সত্যি চড়া দামের কিছু জিনিস কিনে খেতে হয়। তার পর হোটেলের নানা জায়গা ঘুরে দেখা যায়, যদিও বেশিরভাগ জায়গায় হোটেলের গেস্ট না হলে যাওয়া যায় না। পথে পুলিশ গাড়ী থামায় রিকুইজিশনের দাবী নিয়ে, ড্রাইভারের কাকুতি-মিনতিতে আড়ালে গিয়ে তার কিছু টাকা রিকুইজিশন করে ছাড় দেয় গাড়ী। গেটে যাওয়ার পরে দারোয়ানেরা ঝামেলা করতে থাকলে আমাদের ড্রাইভার জানায় আমরা বড় ম্যাডামের ছেলে মেয়ে, ম্যাডাম আজকে আসতে পারে নাই। বেশকিছু টাকার শ্রাদ্ধ করে ছোট টিলার ঢালে বানানো গলফ কোর্স, টেনিস কোর্ট দেখে, কয়েকটা কফি আর কেইক খেয়ে, শেষে জায়গায় জায়গায় সালামের উত্তর টাকা দিয়ে দিয়ে বের হই এই টাকাখেকো জায়গা থেকে। হবিগঞ্জ ফেরার আগে মাধবপুর লেক ঘুরে আসি। লেইকভর্তি শাপলা দেখে মন ভালো হয়ে যায়। ফেরার পথে চা-শ্রমিক ভর্তি লরি দেখিয়ে আমাদের ড্রাইভার “সিনারি, ছবি তুলেন” বললে বিবমিষায় ক্যামেরা সরিয়ে রাখি।

জার্নি বাই ট্রেইন
ষোল বছর বয়সে ঘর ছাড়ার পরে যে যান আমাকে বারে বারে ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে সে হচ্ছে ট্রেইন। বৈধ-অবৈধ নানা উপায়ে ছুটি আদায় করে গোপীবাগ থেকে রিকশা নিয়ে কমলাপুরে পৌঁছে যাওয়া, আমার সিটে আগে থেকেই বসে পড়া যাত্রীর সাথে মৃদু বচসা করে সিট আদায় করা, ডিমসিদ্ধওয়ালা থেকে শুরু করে আমড়া বিক্রেতা সবার কাছ থেকেই খাবার কিনে খাওয়া, ট্রেইনের কামরাগুলোর মাঝ দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে “যার চোখ তাকে আর মনে পড়ে না…” শোনা - সব কিছু মিলিয়ে সে এক অলৌকিক যাত্রা ছিলো। হবিগঞ্জ থেকে ঢাকা ফেরার পথে হঠাৎ করে নস্টালজিয়া তাড়া করে, সবাইকে মোটামুটি জোর করেই রাজী করাই ট্রেইনে জার্নির জন্য।

শায়েস্তাগঞ্জ জাংশন থেকে ট্রেইনের জন্য অপেক্ষা করতে করতে যাত্রীদের জটলা দেখি। সময়ের বেশ কিছু পরে ট্রেইন আসলে লাগেজ হাতে নিয়ে দৌড়ে কোন রকমে শেষ দিকের বাংলা হরফের কোন একটা কামরায় উঠি। দুই সারি সিটের মাঝের সামান্য ফাঁকা লাইন ধরে নিজেদের সিটে যেতে হবে। সেই জায়গাটুকু ধরে ট্রেইনভর্তি নানা লোক নানা অ-দরকারি আলাপে ব্যস্ত, কেউ বা নিজের সিট ছেড়ে হাত পা টানা দিতেই দাঁড়ানো। নতুন স্টেশন থেকে নতুন যাত্রীরা উঠে তাদের সিট পর্যন্ত যাবে এমন অ-গুরুত্বপূর্ণ কাজের প্রতি কারো মনোযোগ দেয়ার কোন তাড়া দেখা গেলো না। গুটি গুটি পায়ে এগুচ্ছি, পেছনে আমাদের পরিবারের আরো ৫ জন। এমন সময় চাচাতো ভাই শুভ্র বলে উঠলো “এত বড় শরীর নিয়ে করো কী!”। গত বছর দুয়েকের যথেচ্ছা অনিয়মের ফলে সেই রকম দশাসই আকার বানিয়েছি, এবং কথায় কথায় মোটা বলে নানা লোকের কাছে নিয়মিত গঞ্জনা সহ্য করছি। শুভ্রের এই কথায় মনে হলো এই তো রিডেম্পশনের সুযোগ। হাতের লাগেজটা দুই হাতে মাথার উপর তুলে জোরে হাঁক ছাড়লাম, “এই পথ ছাড়েন”। আমার চিৎকার কামরার এক মাথা থেকে আরেক মাথা পর্যন্ত যেতে যেতেই মাঝের লোকেরা দুই পাশে সুড়সুড় করে সরে গিয়ে মাঝের পথ চমৎকার ফাঁকা করে দিলো। মোজেসের ফোরাত দুই ভাগ করার দৃশ্য যেন চোখের সামনে দেখতে পেলাম। শরীরের ওজন শব্দের পিছনে এত ভারী হয়ে কাজ করলো যে, আমি চকিতে নিজের টু প্যাক শরীরের দিকে প্রশংসার চোখে তাকিয়ে নিলাম।

নিজের ক্যামেরা নষ্ট, তাই ভাইয়ের দশাসই ক্যামেরাটা জুমলেন্স সহ নিয়ে ঘুরছিলাম সাথে। ট্রেইনের জানালা দিয়ে দ্রুতগতির শাটারস্পিডে আশে পাশের মাঠ-ঘাট-বাজারের ছবি তুলে যাচ্ছিলাম। একটু পর পর নানা খাবারের ফেরীওয়ালাদের কাছ থেকে ভয়ে ভয়ে কিছু খাবার কিনে দেখছিলাম, কিন্তু সদ্য ঘরছাড়া কিশোর যে বিস্ময় আর আনন্দ খুঁজে পেতো সেটা নতুন করে খুঁজে ফিরা যে কী বিড়ম্বনার ব্যাপার! মাথায় জড়ানো পাটের চুল ওয়াল মাটির বানানো এক পুতুল নিয়ে আমাদের কামরায় আসে এক ফেরীওয়ালা। চোখের পলকে তার জাদুকরী হেয়ারব্যান্ড পরিয়ে তার মর্মর মেয়েবান্ধবীর চুলের স্টাইল বার বার পালটে দিয়ে সবার চোখ চড়কগাছ করে দিচ্ছিলো। জাদুকরী হেয়ারব্যান্ডওয়ালা চলে যেতেই হাজির হয় একতারা নিয়ে অদ্ভুত স্বর আর সুরের এক গায়ক। অনেক পুরনো বটগাছের খোড়লের মধ্য দিয়ে বের হওয়া আওয়াজ যেন তার গান, সাথে নিয়ে আসে কত কত বেদনা।

কোন একটা স্টেশনে থেমে ছিলো ট্রেইন, ছাড়তেই কামরার মন্ত্রমুগ্ধ পরিবেশে ছেদ ঘটে আমার মায়ের আর্তচিৎকারে। জানালা দিয়ে কেউ একজন তার গলার হার ধরে টান দিয়েছে, হারের সামান্য অংশ নিয়ে যেতে পারলেও গলায় দিয়ে গেছে নখের আঁচড়। আমার নরম-সরম মা মিনিট খানেকের মাঝে সহজ হয়ে গর্ব ভরে বলতে থাকে এই হারের উপর এই নিয়ে তৃতীয়বার টান পড়লো, কেউই নিয়ে যেতে পারেনি। আধ ঝিমিয়ে যাওয়া কামরা সজাগ হয়ে উঠে এই সাময়িক উত্তেজনায়, আর সবাই মিলে নিজেদের দেখা একই রকম ঘটনার রোমন্থন করতে থাকে। আমি কেন জানি নিস্পৃহ থাকি পুরো ঘটনায়, আর ঘুমিয়েও পড়ি কিছুক্ষণের মাঝে। বেশ কিছুক্ষণ পরে কে যেন কাঁধ ঝাকিয়ে ঘুম থেকে তুলার চেষ্টা করে যায়। চমকে উঠে তাকিয়ে দেখি মুখের উপর ঝুঁকে আছেন এক বয়স্ক লোক, সে জরূরী সুরে অভিযোগ জানায়, “ঘুমিয়ে যে কত ছবি তুলার সুযোগ মিস করছেন! জানালা দিয়ে দেখেন ওরসের কত সুন্দর নৌকা!”। সত্যিই নানা রঙের সালুতে জড়ানো, পতাকায় মোড়া সারি সারি নৌকা হাইওয়ের দুইপাশের নদীতে। ঘুমভাঙা আলসেমিতে নিজে তেমন নড়াচড়া না করে জুম করে যতটুকু ছবি তোলা যায় দুই দিকের জানালায় সেটা তুলি। ফটোগ্রাফি অনুরাগী ভদ্রলোক এতে খুশি হোন না, আমাকে তাড়া দেন ওই পাশের জানালায় গিয়ে ভালো করে ছবি তুলতে। আমি লেন্সের জুম করার ক্ষমতার খুদরতি বয়ান দিয়ে তাকে আশ্বস্ত করি।

খোলা জানালা
আমার দশ বছরের চেনা শহর ঢাকা, আমার সত্যিকার ভাবে বেড়ে উঠার শহর ঢাকা। তবু ৫ বছরের অপরিচয়ে অসহ্য ঠেকে এই শহর। এত ভীড় ঠেলে কোথাও যাওয়া যায় না, এত গরমে বাইরে গিয়ে কোথাও দুই মিনিট দাঁড়িয়ে থাকা যায় না। গাড়ী নিয়ম মানে না, মানুষ গাড়ীর অস্তিত্ব স্বীকার করতে চায় না। শহরে ডাস্টবিনের অস্তিত্ব প্রায় নেই, মানুষ শহরটাকেই ডাস্টবিন বানিয়ে ফেলেছে। আমি জানি এসব অস্বস্তিই ৫ বছরের অতি আরামে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ার প্রতিক্রিয়া, প্রবাসীদের দেশ নিয়ে নাক সিটকানোর চিরায়ত লক্ষণ। নিজের রূপান্তরে একটু দুঃখ পাই, অপরাধবোধও হয় খানিক।

তবু এই শহর জুড়ে অনেক চমৎকার মানুষকে চিনি যাদের সাথে পরিচয় হয়েছে মূলত আন্তর্জালের মাধ্যমে। বর্ণা’পুর বিয়ের অনুষ্ঠানের সময় মিলে যায় আমার দেশে যাওয়ার সময়ের সাথে। সেখানে গিয়ে দেখা হয় দুনিয়ার ভবঘুরে তারেকাণুর সাথে। নজরুল ভাই, নুপূরাপু হাজির তাদের হবু ফটোগ্রাফার কন্যা নিধিকে নিয়ে। সিমন ভাই, গুলশান আপু হাজির ছোট তান্তাকে নিয়ে। স্কুটিবিপ্লবের জননী তৃষিয়া আর তার বিখ্যাত স্কুটির সাথেও দেখা হয়, তবে রাতের বেলা স্কুটিতে চড়ে বিখ্যাত হওয়ার সাহস আর হয় না। 'প্রফেসর ডয়েলের মস্তকের' অনুবাদক সহৃদয় খেয়াদি বাঁচান বিয়ের আসরে আমার চিরায়ত অস্বস্তির হাত থেকে, শুরু থেকেই গল্পগুজব করে। বর্ণা’পু আর তার হাসিখুশি বর কার্লোসকে বিদায় জানিয়ে আমরা জমায়েত হই নজরুল ভাইয়ের বাসায় আড্ডা দিতে, গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডা ঢাকার প্রায় বন্দী অবস্থার মাঝে আসে খোলা জানালা হয়ে।

কিছু দিন পরে তান্তার হাতেখড়ি উপলক্ষে সিমন ভাইয়ের বাসায় হাজির হই। হঠাৎ করে সবাই তান্তার সায়েন্টিস্ট চাচ্চু হিসাবে সম্ভাষণ করা শুরু করলে অনেকদিনের আইডেন্টিটি ক্রাইসিস কাটিয়ে নিজেকে সায়েন্টিস্ট হিসাবে গ্রহণ করে ফেলি। তান্তাকে হাতে-খড়ি দিয়ে পেটভর খেয়ে রাতের রাস্তায় ছোটবোনের পাহারায় বাসায় ফিরতে ফিরতে ঢাকার রাস্তাঘাটও ভালো লাগতে থাকে।

ভীতু পর্যটক
যদিও আমি চুনোপুঁটি ব্লগার, মূলত দৈনন্দিন অ-গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়েই ব্লগ লিখি, সেও কালেভদ্রে; তবুও বছর কয়েক আগে উগ্র নাস্তিকতার দিনগুলোতে, যখন রক্ত আরেকটু গরম ছিলো, ভয়ে ভয়ে কিছু প্রায় নাস্তিক ব্লগ লিখে ফেলেছিলাম। সাথে মুক্তিযুদ্ধের মত তামাদি বিষয় নিয়ে ফেইসবুক পাড়ায় নিষ্ফলা তর্কও কম করিনি। কার্মা নামের প্রতিশোধপরায়ণ কুকুরী কিছুই ভুলে না। আর শাহবাগের সেই অবিশ্বাস্য জাগরণের পরে যখন জামাত রক্ষার জন্য ধর্মাবতার হয়ে হেফাজতের রাতারাতি অভ্যুত্থান ঘটল আর একটা স্বতস্ফূর্ত গণজাগরণের সুযোগে মাটি ফুঁড়ে উদয় হওয়া নেতারা যখন তাদের নিজ নিজ পরিধেয় খুলে তাদের মুসলমানিত্বের দৈর্ঘ্য দেখানো শুরু করলেন, বাংলাদেশ জুড়ে নাস্তিক আর মুক্তচিন্তার পক্ষের ব্লগাররা হয়ে উঠলেন চাপাতির সহজ লক্ষ্য। সেই বাস্তবতাকে মাথায় রেখে, আর সাম্প্রতিক কালে মাসকাবারি কোপানোর ঘটনার প্রেক্ষিতে দেশে যাওয়ার ব্যাপারটা খুব অন্তরঙ্গ কয়েকজনকে বাদে কাউকে জানানো হয়নি।

তবু ধারণা ছিলো একটু লো প্রোফাইল রেখে চলাফেরা করলে আমি স্বাভাবিক ভাবেই চলাফেরা করতে পারব। দেশে পৌঁছানোর কয়েক দিনের মাথায় নিলয় নীলকে কুপিয়ে মারার পরে একটু হতবুদ্ধি হয়ে পড়ি। একবার অমানুষের মত সান্ত্বনা নেয়ার চেষ্টা করি মাসে একজনের বেশি তো আর কোপ খাবে না, সেই হিসাবে আমার চিন্তার কোন কারণই নেই। তবু মনের গভীরে জাঁকিয়ে বসা ভয় কাটে না। বাসার দারোয়ানকে বারবার করে বলে দেই ভিজিটরদের পরিচয় ভালোমত না জেনে এবং আমাদেরকে কনফার্ম না করে যেন কাউকে বাসায় না পাঠায়। শুভাকাঙ্খীরা পরামর্শ দেন তাড়াতাড়ি দেশ ছেড়ে চলে যেতে। ভিসা রিনিউয়ালের জন্য পাসপোর্ট আটকে আছে অ্যামেরিকান অ্যাম্বেসিতে, তাই সেই চিন্তাও হালে পানি পায় না। পুরান ঢাকা আর ধানমণ্ডি এলাকা ঘুরে ঘুরে পছন্দের সব রেস্টুরেন্টে খেয়ে বেড়াব এটা ছিলো বিশ দিনের প্ল্যানের অর্ধেকের মত। সব প্ল্যান গুটিয়ে বাসার মাইল খানেক ব্যাসের মাঝে নিয়ে আসি। রাতে নীলক্ষেতে যেতে হয় একবার, মনের অজান্তে কিছুক্ষণ পর পর আপনা থেকেই মাথা ঘুরে যায় পিছনে। ব্লগার বন্ধুদের একটা আড্ডায় যাওয়ার কথা নিলয় নীলের ঘটনার দিনই রাতে, সব শুনে বেঁকে বসে আমার ভাই-বোন। শেষে আমার বডিগার্ড হয়ে রওয়ানা দেয় আমার ছোটবোন। দুই/তিন দিনের এই ভীতু চলাফেরার পরে ঠিক করি আপন শহর হবিগঞ্জে ঘুরে আসব সপ্তাহ খানেকের জন্য।

ঢাকা ফিরে এসেও মূলত বাসায় বসে আর পরিবারের সাথে আড্ডা দিয়ে বাকি দিনগুলা কাটিয়ে দেই। ফিরতি ফ্লাইটে উঠার পর সবাই মিলে তোলা একটা বিদায়ী ছবি দেশে আসার প্রথম কোন প্রমাণ হিসাবে দিই ফেইসবুকে। নিজের দেশে এসে এত ভয়ে ভয়ে চলার কথাই কি ছিলো! বিদেশের আরামে বসে দেশ নিয়ে সমালোচনার কোন অধিকার নেই সে নানা মাধ্যমে নানা লোকের কাছ থেকেই শুনেছি, মেনেও চলছি বেশ কয়দিন। বিদেশের আরামে বসে দেশ নিয়ে অভিমান করা যাবে কিনা সেই বিষয়ে কোন ফতোয়া শুনিনি বলে সেটাও প্রকাশ করছি না, আর যে দেশ বিশ্বাসের সংখ্যালঘুত্বের জন্য নিজের নাগরিককে তাকে নিজের ঘর ভাবতে দেয় না, তাকে নিয়ে অভিমানও কি করা যায়!

এবং বিদায়
ভিসা রিনিউ হতে হতে ভয় ভয় ভাবটাও বেশ সহনীয় হয়ে আসে। কিন্তু বিশ দিনের ছুটি ততদিনে শেষের পথে, সময় আসে আবারো ফিরে আসার। অনেক কিছু করার ছিলো, ছিলো অনেক সম্পর্ক ঝালাই করার। কিন্তু আলসেমি আর অবসাদের পাল্লায় পড়ে প্রায় কিছুই করা হয় না। ফিরে আসার প্রস্তুতি মানে দেশ থেকে নিতান্তই অ-জরুরি কিছু কেনাকাটা, তাও করা হয় না।

বিদায় নেয়ার সময় ঘনিয়ে এলেই মায়ের মুখ থমথম করতে থাকে, বোকা মহিলা কান্না চাপারও তেমন চেষ্টা করে না। আমি শক্তপোক্ত মানুষ, বাকিদের সাথে মিলে মাকে নানা মজার কথায় চেষ্টা করি হাসানোর । এয়ারপোর্টে একটু আগে আগে পৌঁছে গিয়ে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তাড়াতাড়ি এয়ারপোর্টের ভিতরে হারিয়ে যেতে ইচ্ছা করে। হাজার সতর্কতার পরেও তবু মায়ের কান্না থেকে মুক্তি নেই। ঠিক আর কতোবার বিদায় নিলে বিদায় সহনীয় হবে কে জানে!

দেশ থেকে ফিরে (২০১২)

ঋণস্বীকারঃ বানান ঠিক করে দেয়ার জন্য তিথীডোরকে ধন্যবাদ দিয়ে শেষ করা যাবে না।


মন্তব্য

নীলকান্ত এর ছবি

home is not always where the heart is


অলস সময়

সজল এর ছবি

বাড়ি আর কোথাও নেই।

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

তাসনীম এর ছবি

দেশের গল্প সব সময়েই ভালো লাগে, এটাও ব্যতিক্রম না।

একটা সময় ছিল সদল-বদলে মানুষজন এয়ারপোর্টে এসে বিদায় জানাতো। এখন একাই এয়ারপোর্টে আসি, প্রিয়জনেরা টেক্সটে বিদায় জানায়। যানজটে স্থবির এই শহরে সম্ভবত সবচেয়ে কার্যকর ব্যবস্থা এটাই। এয়ারপোর্ট থেকে ভাইবারে মেয়েদের কল দিলে উল্লসিত কন্ঠে ওরা ঘোষণা দেয় - ড্যাড ইজ কামিং ব্যাক হোম ইন ২৪ আওয়ারস।

মাঝে মাঝে মনে হয় আমার দেশ কোনটা? প্রায় বিশ বছর পরেও ভোর রাতে যে আমাকে ঘুম ভাঙিয়ে দিয়ে যায় সেটা, নাকি যেইখানে আমার অপেক্ষাতে কেউ বসে আছে সেটা? নাকি দুটোই। কিন্তু বাস্তবিক দিনের শেষে আমি টের পাই কোনটাই আমার দেশ না - দেশ ছাড়া মানুষ আসলে উদ্বাস্তু, কেউ নৌকা করে সাগর পাড়ি দেয় আর কেউ প্লেনে করে দেয়, এইটুকু পার্থক্য।

দেশ আসলে সামান্য একটা জায়গা, খুব সহজেই হারিয়ে যেতে পারে।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

সজল এর ছবি

ধন্যবাদ তাসনীম ভাই। বাড়ি আসলেই হারিয়ে যায়।

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

যাদেরকে এই নিরন্তর ত্রাসের মধ্যে বাস করতে হচ্ছে এবং এখানেই বাস করতে হবে। যারা চাইলেও নিজেদের চলাচলের সীমাটাকে খাটো করে আনতে পারে না। যারা নিজের জন্মস্থানে বাস করেও নিজের ভালোবাসার জায়গাগুলোতে যেতে পারে না। যাদেরকে প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়ে যায়, অপমান করে খালের এই পাড়ের নানা মাপের ক্ষমতার নানা প্রকার গোষ্ঠী। যাদেরকে কথা শোনায় খালের ঐ পাড়ে থাকা অভিমানহতরা, যারা মনে করে এরা সুবিধাবাদী-সুশীলের মতো আচরণ করছে, যথেষ্ট জোরালো প্রতিবাদ করছে না। আমি ভাবি, এই 'যমের অরুচী' লোকগুলোর দেশ কোনটা? কারা তার আপন মানুষ? তার নিঃশ্বাস ফেলার জায়গাটা কোথায়?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সজল এর ছবি

পাণ্ডব'দা, সবাইকেই নিজের উত্তর নিজেই খুঁজে নিতে হয় নিশ্চই। খালের ওই পাড়ে থাকা যারা কথা শোনায়, তাদের মাঝে কি আমি পড়ি?

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

না, তার মধ্যে তুমি পড়ো না। পড়লে অমন প্রসঙ্গে তোমাকে সরাসরিই জানাতাম।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

তারেক অণু এর ছবি

এই তো গড়গড় করে লেখা বেরোচ্ছে! আরেকটু ঝাকুনি দিয়ে গ্রান্ড ক্যানিয়ন আর হেমিংওয়ের বাড়িও বেড়িয়ে আসুক।

সজল এর ছবি

এক পৃথিবী লিখব বলে... মন খারাপ
কোন এক দিন!

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

অতিথি লেখক এর ছবি

একটু আগেই ফোনে মায়ের সাথে ঝগড়া করলাম । মাঝে মাঝে মনে হয় হাজার হাজার মাইল দূরে থেকে কেন ফোনে ঝগড়া করি। আবার মনে হয় এই ঝগড়াটা করে হয়তো কাছে থাকার একটা কৃত্রিম অনুভুতি তৈরি হয়।

মামুনুর রশীদ
==========
হাজার মানুষের ভিড়ে আমি মানুষেরেই খুজে ফিরি

সজল এর ছবি

যেভাবে ভালো থাকা যায় হাসি

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

তিথীডোর এর ছবি

ক। চমৎকার লেগেছিলো পড়তে। চলুক

খ। প্রথম যখন দেশ ছেড়ে আসি, জেদের বশেই বোধহয়, একটুও কাঁদিনি। এবার ছুটি কাটিয়ে ফেরার সময় খারাপ লাগছিলো বেশ। মা আর খালারা ছিলেন, এয়ারলাইন্সে চাকরির সুবাদে ছোট ভাই পাশে ছিলো একদম সিটবেল্ট আটকানোর আগ পর্যন্ত। বারবার মনে হচ্ছিলো, কেন যাচ্ছি এদের সবাইকে ছেড়ে!

গ। পড়ালেখা তো করেন না, লেখালেখিটা অন্তত নিয়মিত কৈরেন। চাল্লু

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

সজল এর ছবি

থ্যাংকস এডিটর! দেখি কোনটা নিয়মিত করা যায়।

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

আব্দুর রহমান এর ছবি

অনেক খুঁজে একখানা বানান ভুল বের করলাম।

আমার সিটে আগে থেকেই বসে পড়া যাত্রীর সাথে মৃদু বৎসা করে সিট আদায় করা

। বচসা হবে। লেখা ভালো লাগলো।

------------------------------------------------------------------
এই জীবনে ভুল না করাই সবচেয়ে বড় ভুল

তিথীডোর এর ছবি

বচসা হবে।

বৎসা হচ্ছে মেয়ে, ফিমেল চাইল্ড/ডটার। ব্যাকরণ বইতে একটা এক কথায় প্রকাশ ছিলো বোধহয়, 'মৃতবৎসা'।
সরি, গুলিয়ে ফেলেছিলাম। থ্যাঙ্কিউ। হাসি

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

আব্দুর রহমান এর ছবি

আমি কিন্ত খোঁচানোর জন্যে ভুল ধরিনি খুকি। মৃতবৎসা -মৃত সন্তান প্রসব করে যে।

------------------------------------------------------------------
এই জীবনে ভুল না করাই সবচেয়ে বড় ভুল

তিথীডোর এর ছবি

ভুল রয়ে গেছে জেনে খেপিনি তো। হাসি
খুকি শুনে খেপলাম। সচলায়তনের বদৌলতে জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে এমন শিশুসুলভ ইমেজ দাঁড়িয়ে গেছে, এ গেবনে বিয়েশাদি করতে পারবো বলে মনে হয় না।

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

মৃত বৎসা আর মৃদু বচসা!!
তিন গোয়েন্দা সিরিজের "বুদ্ধির ঝিলিক" মনে পড়ে গেল। চোখ টিপি

বাল্যবিবাহের আগাম অভিনন্দন দেঁতো হাসি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সজল এর ছবি

ঠিক করে দিলাম। অনেক ধন্যবাদ হাসি

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

মাসুদ সজীব এর ছবি

শিকড় ছেড়ে দূরে থাকা মানুষদের জন্যে দেশ আর তার স্মৃতিকথন বোধহয় সবচেয়ে প্রিয়, এই লেখাটিও তাই। দেশ ছেড়ে থাকা, প্রিয়জন ছেড়ে আসার চেয়েও যে কষ্টটা এখন প্রগাঢ় হয়েছে ব্লগারদের জন্যে সেটি হলো নিজের আগমন কিংবা প্রস্থান কোনটাই আর কাউকে জানানোর উপায় নেই। চুপিচুপি, লুকোচরি আর ভয়ে ভয়ে থাকতে হবে নিজের জন্মভূমে এর চেয়ে কষ্টকর অনুভূতি কি আছে? তাই দেশ ছাড়ার বেদনার চেয়ে এই বেদনাই এখন অতল মনে হয়। ভালোথাকুন সজল দা, ভালোথাকুক আমাদের প্রিয় জন্মভূমি। হাসি

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

সজল এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

যে দেশ বিশ্বাসের সংখ্যালঘুত্বের জন্য নিজের নাগরিককে তাকে নিজের ঘর ভাবতে দেয় না, তাকে নিয়ে অভিমানও কি করা যায়!

মন খারাপ

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

সজল এর ছবি

যস্মিন দেশে যদাচার হাসি

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

আপাতত এর ছবি

অফটপিকঃ গাম্ভীর্য বানান ভুল আছে। অতিরিক্ত য-ফলা দেওয়া হয়েছে। ঠিক করে দিয়েন। বাংলা বানান দেখে দেখে শেখা ভালো, তাতেও ভুল কম হয়। তবে এর সাথে সাথে ব্যাকরণটাও বুঝে নিলে বানান আর ভুল হবে না কখনই। কারণ যে তদ্ধিত প্রত্যয়টা জানে সে একবার য দেবার পর কখনই আরেকটা য-ফলা দিবে না। তাই বানান এক্সপার্টদের একটু ব্যাকরণটাও ঝালাই করে নিলে ভালো হয়।

তিথীডোর এর ছবি

জ‌য় গুরু! আপনি আছেন বলেই আমরা আছি।
অফটপিকে ৭ লাইন, অনটপিকে ১ শব্দও খরচ করলেন না দেখে মনে বেতা পেলাম। যাকগে।

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

সজল এর ছবি

ঠিক করলাম। এখন কি আর নতুন করে ব্যাকরণ পড়ার সময় আছে, দেখে দেখে শেখাই ভরসা। তদ্ধিত প্রত্যয়ের ব্যাপারটা কী?

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

অতিথি লেখক এর ছবি

এতদিন পড়তে পারিনি, আজ পড়লাম মাত্রই। দারুণ লিখেছেন, নিযুত নিযুত স্মৃতি আর অনুভূতির চমৎকার বয়ান এই লেখা চলুক

দেবদ্যুতি

সজল এর ছবি

ধন্যবাদ দেবদ্যুতি!

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

রানা মেহের এর ছবি

এইসব পড়লে সব ছেড়েছুড়ে দেশে চলে যেতে ইচ্ছে করে মন খারাপ

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

সজল এর ছবি

চলে যান, কী আছে? বাড়ির কান্ধায় সিলেট দেঁতো হাসি

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।