জীবের বিলুপ্তি ৭ঃ বিলুপ্ত প্রাণী ফিরিয়ে আনা নিয়ে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিনের পাঠক মন্তব্যসমূহ

সজীব ওসমান এর ছবি
লিখেছেন সজীব ওসমান (তারিখ: মঙ্গল, ২৪/০৯/২০১৩ - ৯:৪৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

জীবের বিলুপ্তি সিরিজের লেখাটা শেষ করেছিলাম। এখানে একটু ফলোআপ।

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিন জানতে চেয়েছিল 'বিলুপ্ত প্রাণী ফিরিয়ে আনা' বা 'de-extinction' নিয়ে পাঠকরা কি মনে করেন। অনেক পাঠকই মতামত জানিয়েছেন। গত আগষ্ট মাসের (২০১৩) সংখ্যাটিতে (ছবিটা এপ্রিল মাসের সংখ্যার) প্রকাশ হয়েছে সেগুলি। পড়তে পড়তে মনে হল বেশ চমৎকার কিছু ভাবনা। কিছু কিছু বিষয় সচলায়তনের পাঠকরাও তুলেছিলেন, সেগুলি মিলে গেছে। আমার এই সিরিজের পাঠকদের সামনেও সেগুলি তুলে ধরছি। (কিছু মন্তব্য হুবহু কপি করিনি।)

এলিসন মেয়ার্স
ফ্রিভিল, নিউইয়র্ক

শুধুমাত্র 'ক্লোনিং করে বিলুপ্ত প্রাণী ফিরিয়ে আনা যায় কিনা' সেটা দেখতে এসব প্রাণী ফিরিয়ে আনার চিন্তা শুধু অবাস্তব এবং অপচয় নয়, বরং পুরোপুরি অন্যায়। মানুষ দিনদিন বাঘ, হাতি, তিমিসহ আরও কত জীবের সংখ্যা পৃথিবী থেকে কমিয়ে আনছে অঙ্গ কেটে নেয়ার জন্য বা বাসস্থান নির্মানের জন্য। তাই, কোন বিলুপ্ত প্রাণীকে শুধুমাত্র চিড়িয়াখানায় রাখার জন্য বা তাদের জন্য অসুবিধাজনক পরিবেশে সংগ্রাম করার জন্য ফিরিয়ে আনা ব্যাপারটা শুধুমাত্র নিষ্ঠুরই নয়, বরং মানুষের 'মানব-কেন্দ্রিক পৃথিবী' চিন্তাধারারই ফসল।

এন্থনি বার্গ
মেডিসন, উইসকনসিন

যারা ডারউইনের বিবর্তনতত্ত্ব এবং শ্রেষ্ঠতমের টিকে থাকার মাধ্যমে প্রাকৃতিক নির্বাচন বোঝেন তারা এটাও বোঝেন যে, কালের বিবর্তনে জীবের যেমন উদ্ভব হবে তেমন বিলুপ্তিও ঘটবে। মানুষ এই ধারার শুধু একটা প্রজাতি মাত্র। আমরা অন্য যেকোন জীবের মতই বিপন্ন। শুধুমাত্র কোন একটা ভাইরাস, বা কোন প্রলয়ঙ্কারি মহাকাশীয় ঘটনা আমাদেরকে চীরতরে মুছে দিতে পারে। যদিও আমরা মনে করি মানুষই পৃথিবীতে সবচেয়ে বুদ্ধিমান এবং বুঝদার প্রাণী, তার মানে এই নয় যে আমাদের বিলুপ্তি হতে পারেনা। কোন প্রজাতি মরবে বা বেঁচে থাকবে সেটা আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনা। তবে যদি আমরা চেষ্টা করি, তবে হয়তো শুধুমাত্র ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করতে পারি।

কেনেথ জনসন
লরেন্সভিল, জর্জিয়া

ফিরিয়ে আনাটা দারুণ হবে। কিন্তু Australopithecus, Homo habilis এবংHomo erectus দের ব্যাপারে কি হবে? আমরা কি তাদের চিড়িয়াখানায় ভরে রাখবো? যদি আমরা এদেরকে মেরে ফেলি তবে সেটা কি খুন বলে গণ্য হবে? তারা কি মানুষ, নাকি অন্য কিছু? তারা কি চাকরি করতে পারবে? ছাত্রবৃত্তি বা সামাজিক সুবিধা নিতে পারবে? যদিও এদের বুদ্ধিমত্তা, সংস্কৃতি এবং ভাষা বুঝতে পারাটা গুরুত্বপূর্ণ হবে।

টম মরুকিয়ান
নর্থ ফোর্ট মেয়ার্স, ফ্লোরিডা

আমার মাথায় একটা সম্পূর্ণ অন্য চিন্তা এসেছে। প্রথমে আমরা যেসব প্রাণী এখনও বেঁচে আছে তাদের রক্ষার চিন্তা করতে পারি। আমরা কি গন্ডারের শিং বা হাতির দাঁত ক্লোন করতে পারিনা? তারপর এসব অঙ্গের বাজার ক্লোন করা অঙ্গ দিয়ে ভরিয়ে দিলে এসবের জন্য প্রাণী হত্যা আর হবেইনা!

কেনেথ একটারবার্গ
হ্যাসলেট, মিশিগান

বেশ কিছু বছর ধরেই দেখছি পরিবেশে যে ঘটনাই ঘটছে তার প্রধান খলনায়ক হিসেবে মানুষকেই দোষারোপ করা হচ্ছে। একজন পশুচিকিৎসক হিসেবে আমি জিনেটিক্স, রোগবালাই, শিকার, খাদ্যের উৎস, যৌণ মিলনের সুবিধা ইত্যাদি জিনিসের সমন্বয় একটি প্রাণীর বেঁচে থাকার কারন হিসেবে দেখি। তাহলে কেন প্রায় প্রত্যেকটি প্রবন্ধেই মানুষকেই অপরাধী হিসেবে দেখানো হয়? আপনি যদি চিন্তায় সত্যিই একজন ডারউইনিয়ান হন তবে মনে রাখবেন- এটা হল 'যোগ্যতমের বিজয়'- যার মানে যখন মানুষ পৃথিবীতে ছিলনা তখনও কিছু প্রাণী বিলুপ্ত হয়েছে।

জুডিথ এনট্রোবাস
নিউ ইয়র্ক, নিউ ইয়র্ক

বিলুপ্ত প্রাণী ফিরিয়ে আনা খুব বাজে একটা বুদ্ধি। কারনগুলি স্পষ্ট। বর্তমানে বেঁচে থাকা জীবগুলিকে বাঁচিয়ে রাখার মত পর্যাপ্ত খাবারই আমাদের হাতে এখন নাই। আমরা 'অঙ্গের জন্য প্রাণী হত্যা' কখনই বন্ধ করতে পারবোনা। আমরা মাছশিকারীদের জালে আটকে যাওয়া অনাকাঙ্খিত মাছও বাঁচাতে পারবোনা।

নেট কিপার
টলেডো, ওহায়ো

এটা জীববিজ্ঞানকে প্রাচুর্য দেবে সত্যিই, কিন্তু কতদিন ধরে আমরা ফিরিয়ে আনা প্রাণীদের বাঁচিয়ে রাখতে পারবো? ক্লোনিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটা জীবের পুরো পপুলেশান এর যায়গায় মাত্র একটা দুইটা হয়তো ফিরিয়ে আনবো। ছোট পপুলেশানের ঝামেলা হল তাদের মধ্যে এমন জিনেটিক ব্যাপার নেই যা দিয়ে প্রাণীগুলি এখনকার পরিবেশে অভিযোজিত হবে, যার ফলে তারা আবার বিলুপ্ত হয়ে যাবে।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

যারা বিলুপ্ত হয়ে গেছে তাদের ফিরিয়ে আনার কোন যুক্তি আমি দেখিনা,এটা অনেক জটিল এবং ব্যয় সাপেক্ষ একটি দীর্ঘ মেয়াদি প্রক্রিয়া।আর সাফল্যের সম্ভবনা শতভাগ নিশ্চিত নয়।তারচেয়ে যারা টিকে আছে তাদের জন্যে নিরাপদ আবাস ভূমি,খাদ্য আর অবাদ বিচরনের পরিবেশ তৈরী করা বেশী গুরুত্বপূর্ণ।বিলুপ্তদেরকে ফিরিয়ে আনার চেয়ে সংকটাপন্ন,বিপন্ন,বিলুপ্ত প্রায় দের কে নিয়ে কাজ করা উচিত।আর জেনেটিক গঠনে পরিবর্তন নিয়ে আসতে না পারলে বিলুপ্তরা আবারো বিলুপ্ত হয়ে যাবে টিকে থাকার সংগ্রামে পরাজিত হয়ে।কারন টিকে থাকার জন্যে অভিযোজন ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।পরিবর্তিত পরিবেশে টিকে থাকার যোগ্যতাই হলো ডারউইনের মূল তত্ত্ব।যোগ্যতা অর্জন করতে হয়,যোগ্যতা আনায়ন সম্ভব নয়।

মাসুদ সজীব

সজীব ওসমান এর ছবি

আমার মতে ডারউইনিয়ান চিন্তাধারায় শুধু ব্যাপারটা দেখলে চলেনা। এখানে মানুষ হিসেবে দায়িত্ব এড়ানো যাবেনা। যেমন আমরা নিউক্লিয়ার বোমা ফাটিয়ে বলতে পারি না যে, 'দেখি কতটা জীব যোগ্যতম হিসেবে টিকে থাকে'। তবে ডারউইন ভাবতেন অকস্মাৎ গণবিলুপ্তি সম্ভব নয়। এই পর্বটাতে চোখ বুলাতে পারেন।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হাততালি

আমার মাথায় একটা সম্পূর্ণ অন্য চিন্তা এসেছে। প্রথমে আমরা যেসব প্রাণী এখনও বেঁচে আছে তাদের রক্ষার চিন্তা করতে পারি। আমরা কি গন্ডারের শিং বা হাতির শুঁড় ক্লোন করতে পারিনা? তারপর এসব অঙ্গের বাজার ক্লোন করা অঙ্গ দিয়ে ভরিয়ে দিলে এসবের জন্য প্রাণী হত্যা আর হবেইনা!

এই কমেন্টের প্রেক্ষিতে জানতে চাইছি- এইরকম আংশিক ক্লোন কি করা যায়?

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

স্পর্শ এর ছবি

যায়। যেমন প্রতিস্থাপনের জন্য মানুষের নানান অংগ-প্রত্যঙ্গ। এবং জুতা, ব্যাগ বানানোর জন্য প্রাণীর চামড়া বানাচ্ছে এরা। http://www.youtube.com/watch?v=7gXq1ml6B1E


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

সজীব ওসমান এর ছবি

চলুক

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অতিথি লেখক এর ছবি

এটা জীববিজ্ঞানকে প্রাচুর্য দেবে সত্যিই, কিন্তু কতদিন ধরে আমরা ফিরিয়ে আনা প্রাণীদের বাঁচিয়ে রাখতে পারবো? ক্লোনিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটা জীবের পুরো পপুলেশান এর যায়গায় মাত্র একটা দুইটা হয়তো ফিরিয়ে আনবো। ছোট পপুলেশানের ঝামেলা হল তাদের মধ্যে এমন জিনেটিক ব্যাপার নেই যা দিয়ে প্রাণীগুলি এখনকার পরিবেশে অভিযোজিত হবে, যার ফলে তারা আবার বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

এটা কিন্তু একটা মোক্ষম কথা।

তাহসিন রেজা

সজীব ওসমান এর ছবি

হুমম।

অতিথি লেখক এর ছবি

বিলুপ্ত প্রাণীকে ফিরিয়ে এনে শোকেসে সাজিয়ে রাখা! এই কথা তো মাথায় আসে নাই কখনো। বরাবরই উৎসাহী ছিলাম যে ম্যামথ, ডোডো আবার পৃথিবীতে ফিরে আসতে পারে। নাহ!!! এত্ত ভেজাল ক্যান?

একটু উল্টো প্রসঙ্গ। জীবের বা জীবনের বিলুপ্তি নয় উৎপত্তি সংক্রান্ত।Life on Earth 'came from space' say scientists এখানে তারা বলছেন যে তারা এমন কিছু পেয়েছেন যাতে মনে হচ্ছে জীবনের উৎপত্তি পৃথিবীর বাইরের কোনো উৎস থেকেও হতে পারে। গবেষনা চলছে- চলুক। বিতর্কও হচ্ছে। পৃথিবীর বাইরের উৎস বলেই হয়তো আবার independent একে 'এলিয়েন' বানিয়ে ফেলছে।

কিপিটাপ... চলুক

কড়িকাঠুরে

সজীব ওসমান এর ছবি

প্যানস্পারমিয়া বেশ কিছুদিন আগে থেকে চলে আসা থিওরি এবং বিতর্ক। পক্ষে বিপক্ষে বহু যুক্তি আছে।

কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ।

তারেক অণু এর ছবি
সজীব ওসমান এর ছবি

ধন্যবাদ

তাসনীম এর ছবি

চলুক

প্রথম আলোর পাঠকরা মনে হয় ন্যাশানাল জিওগ্রাফিক পড়ে না - পড়লে আরও এন্টারটেইনিং কমেন্ট পড়ত দেঁতো হাসি

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হো হো হো

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

কড়িকাঠুরে  এর ছবি

হো হো হো

সজীব ওসমান এর ছবি

- ম্যামথের মাংস খেতে কেমন হবে
- ডোডো'র ডিমের হালি কত হতে পারে
- হোমো হাবিলিস এর বাবা মা থাকবে কিনা, না থাকলে তাদের জন্য এতিমখানা কে তৈরি করবে

ইত্যাদি?

এস এম নিয়াজ মাওলা  এর ছবি

প্রতিটি কমেন্টই আসলে ভেবে দেখার মতো। আমাদের দেশের পত্রিকার পাঠকেরা এতোটা সচেতনভাবে কমেন্ট করে না বোধহয়!

-নিয়াজ

সজীব ওসমান এর ছবি

হুমম।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।