বাংলাদেশে জিএমও ভীতি: ট্রান্সজেনিক শস্যের গবেষণা অবশ্যই কোম্পানির বাইরে গিয়ে করতে হবে

সজীব ওসমান এর ছবি
লিখেছেন সজীব ওসমান (তারিখ: মঙ্গল, ১৮/০২/২০১৪ - ৬:০৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কিছুদিন আগে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট David Skorton বিজ্ঞানীদের সুখপাঠ্য প্রবন্ধ লেখা কেন জরুরী তা নিয়ে সায়েন্টিফিক আমেরিকান পত্রিকায় একটি প্রবন্ধ লেখেন। তিনি সেখানে বলছেন, বিজ্ঞানীদেরকে শুধু বিজ্ঞানচর্চা করলেই চলবেনা, বরং সাধারন মানুষের কাছে তার ফলাফলকে, অর্জিত জ্ঞানকে এমনভাবে পৌঁছে দিতে হবে যে তারা ব্যাপারটা সম্বন্ধে একটা মোটামুটি এবং সঠিক ধারনা পান। আর তাই বিজ্ঞানীদের লেখালিখির হাত ভাল হওয়া প্রয়োজন, বিশেষ করে সাধারন সাহিত্য লেখার জন্য।

বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে বৈজ্ঞানিকভাবে ভুল ধারনা পোষণ করেন বিশ্ববাসী। এর মধ্যে আছে জিনেটিকালি মডিফাইড অর্গানিজম (জিএমও), আবহাওয়ার পরিবর্তন, টিকা বা ভ্যাক্সিন এবং সাধারন-চিকিৎসা ব্যবস্থা ইত্যাদি নিয়ে সম্পূর্ণ ভ্রান্ত বা আধো-সত্য ধারণা। স্বাভাবিকভাবেই, বিশ্বের অন্য স্থানগুলির মত বাংলাদেশেও সাধারন মানুষ জিএমও নিয়ে বিভিন্ন ভুল ধারনা পোষণ করেন। সম্প্রতি বিটি বেগুনকে নিয়ে আন্দোলনগুলি লক্ষ্য করলে সেটা সুস্পষ্ট হয়। কিন্তু, বিজ্ঞানীরা যদি ব্যাপারগুলিকে পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে সাধারন মানুষের মাঝে পৌঁছে দিতে পারতেন তবে হয়তো এমনটা হতোনা।

কিন্তু শুধুই কি এটাই কারন হতে পারে জিএম বিরোধীতার?

সম্প্রতি বাংলাদেশের কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারি’র সঙ্গে জিএমও জায়ান্ট কোম্পানি মনসান্টোর একটি চুক্তি থেকে উদ্ধৃতি জিএম-বিরোধী বাংলাদেশী গোষ্ঠির একজনের কাছ থেকে খুঁজে পেলাম। জিএম শস্য বিটি বেগুনের উপর সেই চুক্তি। কোম্পানি কেন্দ্রিক জিএম শস্য উৎপাদন হওয়ায় বীজের নিরাপত্তা নিয়ে তাই জনমনে সংশয় তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। আমার আগের লেখাটিতে সেটা উল্লেখও করেছিলাম। কিন্তু যেসব স্বাস্থ্যঝুঁকির কারন দেখিয়ে মানুষের মনে ভয় ধরানোর চেষ্টা করা হয় সেগুলির বেশিরভাগই ভ্রান্ত বা মিথ্যা প্রচারণা। সুবিখ্যাত নেচার পত্রিকা ২০১৩ সালের একটি সংখ্যায় জিএম শস্যকেন্দ্রিক বির্তকগুলি নিয়ে কিছু নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। প্রাসঙ্গিক হওয়ায় সেই সংখ্যাটির সম্পাদকীয়টি এখানে অনুবাদ করে দিলাম।

টিকা

জিএম: জিনেটিকালি মডিফাইড, জিনগত পরিবর্তন করে যেই জীব তৈরি করা হয়। সাধারনত কৃত্রিমভাবে পরীক্ষাগারে জিন পরিবর্তন করা হয়ে থাকলে তাকে জিএম বলে।
ট্রান্সজেনিক: যে জীবে অন্য কোন জীবের জিন প্রবেশ করানো হয়েছে। ব্যাপারটা করানো হয় জিনের পর্যায়ে পদ্ধতি অবলম্বন করে। জিএম শস্যকে ট্রান্সজেনিক বলা যায়।
ব্রিডিং: কৃত্রিম উপায়ে একটি জীবের সঙ্গে অন্য জীবের যৌণকোষের মিলন ঘটানো। ট্রান্সজেনিক উপায়কে সাধারনত ব্রিডিং বলেনা।
জৈবপ্রযুক্তি বা বায়োটেকনোলজি: জৈব বস্তু নিয়ে বা জৈব বস্তুর উপর প্রযুক্তির ব্যবহার।

ট্রান্সজেনিক শস্যের (জিএম) গবেষণা এই সংক্রান্ত গবেষণার উন্নতির স্বার্থে অবশ্যই কোম্পানির বাইরে গিয়ে করতে হবে

প্রায় ৩০ বছর আগে প্রথমবারের মত এমন একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রকাশিত হয় যেখানে কোন একটি জীবের কার্যকরী জিনকে অন্য একটি উদ্ভিদে প্রবেশ করানোর প্রক্রিয়া দেখানো হয়েছে। আর এই সাফল্য বায়োটেকনোলজির এক নতুন দিগন্তের সূচনা করে, যেটা দিয়ে আমরা যেমনটা চাই তেমন কোন গুণ বা ক্ষমতা একটি উদ্ভিদে ঢুকিয়ে দিতে পারছি, বিশেষ করে যেসব উদ্ভিদ খাদ্য উৎপাদন করে তাদের ভেতর। জিনেটিকালি মডিফাইড [Genetically modified (GM)] বা জিএম শস্য জীবনকে সহজতর করা এবং পরিবেশকে আমাদের চাহিদামত তৈরি করার সম্ভাবনা নিয়ে এসেছিল।

১৯৮৩ সালের এই সম্ভানাময় আবিষ্কারের পরে, জৈবপ্রযুক্তি বা বায়োটেকনোলজি কোম্পানিগুলি জিএম শস্য তৈরি করা শুরু করে দিল এবং এটা বিনিয়োগকারীদের দারুণভাবে আকর্ষণ করলো। যেমন, ক্যালিফোর্নিয়ার উদ্যোক্তা ক্যালগিন তৈরি করলো Flavr Savr টমেটো, যেটা পেঁকে যাওয়ার পরেও খুব নরম হয়ে যায়না, যেটা একটি স্যুপ তৈরি করার কোম্পানিকে (Campbell Soup Company) উৎসাহিত করলো বিনিয়োগে এবং উৎপাদনে সহায়তা করতে। অনেকের মতই ক্যাম্পবেল এই টমেটোর সম্ভাবনা নিয়ে বেশ চমৎকৃত এবং আশাবাদী ছিল, কারন এই টমেটো শস্যক্ষেতেই পাকিয়ে সেটা ট্রাকে করে সুপারমার্কেট এবং সেখান থেকে খাবার টেবিল পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া যাবে আকৃতিতে তেমন কোন পরিবর্তন বা ভর্তা না বানিয়েই।

১৯৯২ সালের শুরুতে, পর্যবেক্ষকগণ হিসেব করে দেখলেন যে সহসাই খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের ছাড় পাবে এই টমেটো এবং প্রতিবছর প্রায় ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজার অপেক্ষা করছে জিএম টমেটোর জন্য। কিন্তু শুরুর ১০ বছরেরও কম সময়ে, তার শৈশবেই, জিএম শস্য কঠিন সময়ের মুখোমুখি হল। যেটার শুরু হয়েছিল অপার সম্ভাবনা নিয়ে সেটা ধীরে ধীরে শয়তান-খাদ্য হিসেবে চিহ্নিত হতে লাগলো। ইউরোপের গ্রাহকেরা জিএম জায়ান্ট মনসান্টোর আগ্রাসী মার্কেটিং পদ্ধতির সমালোচনায়া মুখর হয়ে উঠলেন। Flavr Savr টমেটো US Food and Drug Administration এর অনুমতি পেতে ১ বছরের বেশি সময় লাগছিল এবং তখন ক্যাম্পবেল কোম্পানি ঘোষণা দিল যে তারা এই টমেটো দিয়ে স্যুপ বানানোর কোন প্রচেষ্টাই করবেনা, জনগণের সম্মতি ছাড়া। কোন জিনিসটা তাহলে ভুল হয়েছিল? একজন পর্যবেক্ষকের মতে জৈবপ্রযুক্তি শাখা তার গ্রাহককে প্রস্তুত করতে ব্যর্থ হয়েছে: ‘এখন, তারা বুঝছে যে আসলে তাদেরকে এবিষয়ে অজ্ঞ জনগণকে সুন্দরভাবে বোঝাতে এবং শেখাতে হবে।’

Flavr Savr টমেটো ১৯৯৪ সালে অনুমতি পেয়েছিল, কিন্তু কোনদিন বাজারের মুখ দেখেনি। এরমধ্যে, জৈবপ্রযুক্তির কারখানাগুলি তাদের কৌতুহল (জিন প্রযুক্তি) খাবার সুস্বাদু করে এমন পদ্ধতি থেকে এমন শস্যের দিকে ঝোঁকালো যারা অধিক মাত্রায় ফলনশীল হয়। আগাছানাশক-প্রতিরোধী এবং পোকা-প্রতিরোধী শস্য আমেরিকা এবং এক ডজনেরও বেশি অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে। জিএম জীব এবার কৃষি পদ্ধতি হিসেবে আত্মপ্রকাশের চেষ্টা করে।

অনেক জায়গাতেই, যেখানে জিএম শস্য রোপন করা হতো, সেখানে তারা অন্য শস্যকে প্রায় পুরোপুরি প্রতিস্থাপিত করে দিল। উৎপাদন এবং লাভ বেড়ে গেল, কৃষকেরা সাধারনভাবে খুশিই ছিলেন ট্রান্সজেনিক বীজকে গ্রহণ করে এবং কীটনাশকের পরিমান এবং ধরন কমিয়ে এই প্রযুক্তি পরিবেশের উপর বেশ ভাল প্রভাব রাখছিল।

কিন্তু তারপরও, জিএম শস্য অবশ্যই সাধারনের মানুষের খুব কাছে যেতে পারছিল না। অপরিচিতি এবং ‘অপ্রাকৃতিক’ জিনিসের প্রতি ভয় এবং স্বাস্থ্য বা পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাবের ভয়, এসব বারবারই জিএম শস্য গ্রহণে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল; বিশেষ করে ইউরোপে, যেখানে প্রতিবাদী জনতা এমনকি পরীক্ষাগারের পরীক্ষার উপাত্তগুলিকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি জিএম শস্য ব্যবহার করা দেশ আমেরিকাও ফের প্রতিরোধের শিকার হচ্ছিল, জিএম শস্যকে সঠিকভাবে চিহ্নিত (labelling) করে বাজারে ছাড়ার দাবীতে।

কিন্তু ১৯৯৩ সালের পর্যবেক্ষক, জিএম শস্যকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য যিনি বলেছিলেন মানুষকে শিক্ষিত করে তোলার কথা, তার কথা আর পরবর্তী সময়ের জন্য খাটছেনা। কারন মানুষের কাছে জিএম শস্য সম্বন্ধে অসংখ্য বিভিন্নধরনের খবর বা তথ্য আসতে শুরু করলো- পক্ষে-বিপক্ষে দুই দিকেই, যার বেশিরভাগই ভুলে ভরা। কিন্তু এই তথ্যগুলির মধ্যে এমন কিছু ভুল তথ্য আছে যেগুলি খুবই সংবেদনশীল এবং ভুয়া বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা দিয়ে প্রমাণিত হিসেবে দেখানো এবং খুব নিশ্চয়তার সঙ্গে ভুল তথ্য দিয়ে উপস্থাপন করা। যখনই কোন জিএম শস্যের খবর দেয়া হয় তখন যদি বিকৃতিকৃত তথ্যসহ দেয়া হয় তবে খুব ভালভাবেই জিএম শস্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করা যায়, আর এই উপায়টি বেশ ভালই কাজ করছে।

ভুল তথ্য দিয়ে শক্তিশালী হয়ে বিতর্ক যারা করছেন তারা রাস্তাঘাট, সুপারমার্কেট এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে ছেয়ে ফেলেছেন। খাবারের মত এমন একটি সংবেদনশীল এবং মানুষের কাছে আদরনীয় বস্তু যেটা মানুষ নিজেরা খায় এবং তাদের শিশুকে খাওয়ায়, তার মধ্যে যদি সংশয় ঢুকিয়ে দেয়া যায় তবে সেই সংশয়টিই সবসময় জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা। আর এই ভয়টি বীজ কোম্পানিগুলোর প্রতি অবিশ্বাসের সঙ্গেও যুক্ত। জিএম শস্যকে সমর্থন করা আপাতভাবে দেখা যাচ্ছে একটি অলাভজনক কাজ: সু-বিজ্ঞানের জন্য হাত তোলা এবং তার সাফল্যের পেছনে দাঁড়ানো অবশ্যই বিবেচনা করা যায়, কিন্তু কোন মুনাফা-লোভী কর্পোরেশানকে সমর্থন জানানো মোটেই সুবিধাজনক নয়।

তথাপি, জিএম শস্য নিয়ে চলমান এবং উন্নত হতে থাকা গবেষণার পেছনে দাঁড়ানোরও যথেষ্ট কারন আছে। জিনগত পরিবর্তন এমন একটি প্রযুক্তি যার মাধ্যমে বাজারজাতকরণের দিকে উন্নতি খুব দ্রুত ধাবিত হয়েছে। আর এটা বেশিরভাগ গবেষণাকেই লাভজনক খাতের দিকে নিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। বীজ-ব্যবসার বাইরে বৃহদাকারের গবেষণা প্রকল্প তৈরি না হলে এই ধরনের প্রযুক্তির উন্নতি শুধু মুনাফা-নিয়ন্ত্রিত খাতের দিকেই যাবে। আর এটা ৩০ বছর আগে জৈবপ্রযুক্তি যেই উন্নতির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল সেটাকে সীমাবদ্ধ করে দেবে। জিএম শস্যের জৈবপ্রযুক্তির যেই সম্ভাবনার মধ্যে ছিল পৃথিবীর ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাকে খাওয়ানোর জন্য শস্যের উৎপাদন, কৃষির কারনে পৃথিবীর পরিবেশের ক্ষতি কমানো এবং খাদ্যকে আরও সুস্বাদু এবং সুদৃশ্য করে তোলা। ট্রান্সজেনিক প্রযুক্তি কোনভাবেই এই লক্ষ্য অর্জনে একমাত্র সহায়ক হতে পারেনা, কিন্তু ৩০ বছর আগের গতানুগতিক ব্রিডিং পদ্ধতিতে গতি সঞ্চার এবং সুনির্দিষ্টতা প্রদান করতে পারে, যেই গতানুগতিক ব্রিডিং পদ্ধতির মানুষ আজও অনুসরণ করে চলেছে।


মন্তব্য

স্পর্শ এর ছবি

সম্পাদকীয়র শিরোনামে,

"উন্নতির স্বার্থে অবশ্যই কোম্পানির বাইরে গিয়ে করতে হবে"

বলা হলেও, ভিতরে এই কোম্পানিবিষয়ক বিপদের কথা ব্যাখ্যাকরা হয়নি।

জিএম ফুড নিয়ে আমার কোনো প্রেজুডিস নেই। তবে মনসান্টো বা এই ধরনের বড় করপোরেট, পুরো দেশকে জিম্মি করে ফেলতে পারে, কপিরাইট, ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি, হেন তেন নানান ট্রিক্স খাটিয়ে।

যেখানে জিএম শস্য রোপন করা হতো, সেখানে তারা অন্য শস্যকে প্রায় পুরোপুরি প্রতিস্থাপিত করে দিল।

এই বিষয়ক নীতিমালা তাই খুব সতর্কতার সাথে প্রণয়ন করতে হবে।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

সজীব ওসমান এর ছবি

সম্পাদকীয় বিধায় খুব বেশি ব্যাখ্যা করা হয়নি। মূল লেখাটির নিচে গেলে দেখতে পাবেন কয়েকটি বিষয় নিয়ে সুনির্দিষ্ট লেখা সেখানে আছে।

দ্বিতীয় উদ্ধৃতির 'প্রতিস্থাপন'টা কৃষক নিজেই করেছেন, একটু পরিষ্কার হওয়ার জন্য বলে রাখলাম।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

সজীব ওসমান এর ছবি

এখন কাজে আছি। বাসায় গিয়ে দেখবো ভিডিও। কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ। হাসি

সজীব ওসমান এর ছবি

দারুণ লেকচার। সবার দেখা উচিত। আমি এই সিরিজের পরের লেখাটাও একটা এডিটোরিয়ালে অনুবাদ করছি। মানুষকে বোঝানোর জন্য যে যারা জিএমও'র স্বপক্ষে বলছেন তারা প্রমাণ নিয়ে চিন্তাভাবনা করে বলছেন। বাংলায় এমন লেখা থাকা জরুরী। এইসব বিরোধীতাকে প্রশ্রয় দিতে থাকলে একসময়ে যেকোন প্রযুক্তির বিরুদ্ধেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চেষ্টা করবে। দেখা যাক।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

জিএমও চোখ বন্ধ করে বুকে জড়িয়ে ধরায় আমার আপত্তি আছে। বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদী কোনো গবেষণা ছাড়াই। এখানে একটি রিপোর্ট দিলাম এ বিষয়ে।

http://www.cbsnews.com/news/study-says-genetically-modified-corn-causes-tumors-but-other-scientists-skeptical-about-research/

সজীব ওসমান এর ছবি

ভুয়া বিবেচনায় এনে আপনার উল্লেখকৃত পরীক্ষাটির নিবন্ধকে মূল বিজ্ঞান পত্রিকাটি থেকে তুলে নেয়া হয়েছিল। হাসি

বিজ্ঞানীরা বলছেন স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্বন্ধে এখন পর্যন্ত বেশিরভাগ পরীক্ষাই ইচ্ছাকৃত মিথ্যা তথ্যে ঠাঁসা। যেই উদাহরণ দিলেন সেটার মতই। আরেকটি লেখা আসছে।

আপনার উল্লেখকৃত পরীক্ষায় কিকি সমস্যা সেটা দেখতে চাইলে আমার আগের লেখাটি পড়তে পারেন

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

কিন্তু স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই এরকম প্রমানও কিন্তু জিএমও প্রবক্তারা দিচ্ছেন না।

সজীব ওসমান এর ছবি

আমার মতে তারা দিচ্ছেন ভালভাবেই। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া এবং পপুলার পত্রিকার প্রচারণার চাপে সেগুলি চোখে পড়ছেনা। উদাহরণ স্বরূপ আপনি ভুল পরীক্ষার ফলাফলকে এখানে উল্লেখ করলেন। জিএমও নিয়ে গুগল খুঁজলে দেখবেন এর বিরুদ্ধে শখানেক লেখা। প্রচারণা ভুল তথ্যে করা হলে এই ব্যাপারটা হয়। আমার এই নিবন্ধে এই ব্যাপারটা একটা অংশে ছিল। তবে আমি আরেকটি লেখা লিখছি, সেখানে কারা জিএমও'র পক্ষে বলছেন সেই নামগুলি দেখে কিছুটা বিবেচনা করতে পারেন। প্রত্যেকটা জিএমও খাবার যেই পরিমান পরীক্ষার মধ্য দিয়ে ছাড়পত্র পায় সাধারন, মানে প্রাকৃতিক কোন বিষাক্ত খাবারে আমরা সেটা বিবেচনাই করিনা। এভাবে পরীক্ষার মাণদন্ডকে পাশ করে আসাটা তো একটা প্রমাণ, তাইনা?

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি নিজে এসব খুব একটা বুঝি না, অনেক ক্ষেত্রেই উইন-উইন সিচুয়েশন থাকতে পারে,
তবে, বীজের অধিকার মনসান্টো টাইপের কম্পানিরা নিয়ে গেলে সেটা খুব একটা ভালো লাগবে।

এ বিষয়ে আমি নিজেও খুব একটা নিশ্চিত না কোন পথে গেলে সবার ভালো হবে।

[মেঘলা মানুষ]

সজীব ওসমান এর ছবি

সেটাই।

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

প্রয়োজনীয় লেখা। চলুক

সজীব ওসমান এর ছবি

ধন্যবাদ

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

যে কোন গবেষণায় কোন কোম্পানী অর্থায়ণ করলে অথবা কোন প্রকার সহযোগিতা করলে সেখানে একটু হলেও নাক কুঁচকানোর ব্যাপার থাকবে। এমনটাই হবার কথা। কারণ, কোম্পানীর কাজ হচ্ছে সে যে খাতেই বিনিয়োগ করুক না কেন, আজ হোক কাল হোক, বা সোজা রাস্তায় হোক আর ঘুরানো রাস্তায় হোক সে খাত থেকে তার লাভ আসতেই হবে। এই লাভটা সবসময় থোক টাকায় নয়।

অন্য দিকে সরকারী ব্যবস্থাপনা ও অর্থায়ণে গবেষণার সীমাবদ্ধতা অনেক। প্রথমত, রাষ্ট্রের সম্পদের সীমাবদ্ধতা; দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রীয় নীতির পরিবর্তন; তৃতীয়ত, আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থা; চতুর্থত, সরকারের নিজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের চাপ। তাই বেসরকারী উদ্যোগে গবেষণার বিকল্প নেই। অর্থাৎ, কোম্পানীর হাত থেকে বাঁচার উপায় নেই।

যে কোন গবেষণার ফলাফলকে বাজারজাত করার ব্যাপারে বিপণনকারীর কর্মকৌশল লক্ষ করলে গবেষণার ফলাফলে নৈতিকতার অবস্থান কিছুটা বোঝা যায়। যখনই কেউ 'আয় তোকে বুঝিয়ে ছাড়ি' স্টাইলে বিপণন শুরু করেন, তখনই বুঝতে হবে ডালে 'কুছ কালা' নয় ডাল বলে যেটা চালানো হচ্ছে সেটা আসলে ভেচ। একই কথা 'এইটা এক চামুচ খাইলে সাতদিন আর কিছু খাওন লাগবো না' জাতীয় বিপণন কৌশল ব্যবহারকারী বিষয়ের জন্যও প্রযোজ্য।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সজীব ওসমান এর ছবি

কোম্পানি তার স্বার্থ দেখবেই। তাই আমি মনে করি বিরোধী পক্ষের আন্দোলনটা ভুল জায়গায় হচ্ছে। মনগড়া স্বাস্থ্যঝুঁকির গল্প না ফেঁদে বরং বীজের স্বত্ত্ব নিয়ে আন্দোলন জোরদার করা উচিত। তবে হয়তো পাবলিক ফান্ডিং এর দিকে ব্যাপারটা যেতে সহজতর হবে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।