মানুষের মদাসক্তির বিবর্তনিক ইতিহাস

সজীব ওসমান এর ছবি
লিখেছেন সজীব ওসমান (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৪/১২/২০১৪ - ৩:৫৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মানুষের মাতাল হওয়ার স্বভাব এসেছে কোথা থেকে ভেবে দেখেছেন? অবশ্য মদাসক্তি শুধু মাতাল হওয়াকেই বলেনা। মাতাল না হয়েও মানুষ মদ্যদ্রব্যের প্রতি আসক্ত হতে পারে। কিন্তু এর শুরু কোথায়? ভেবে দেখার বিষয় যে শুধু মানুষ নয়, অন্যান্য প্রাণীরাও মাতাল হয়। তবে তারা যে মানুষের মত মদ্যপানীয় তৈরি করে পান করে এমন নয়। মাঝেমধ্যেই শোনা যায় পাহাড়ি অঞ্চলে হাতিরা ঘরে বানিয়ে রাখা মদ্য পানের জন্য বাড়িঘর ভাঙচুর করে। হাতি মাতাল হতে ভালবাসে, তেমনি ভালুক, বানর এবং অন্যবহু প্রাণীই। বানরপ্রধান এলাকায় দেখা যায় মানুষের হাত থেকে মদ্যপানীয় ছিনিয়ে নিতে। তবে বন্য প্রাণীর মাতাল হওয়ার সবচেয়ে সহজ এবং সুলভ উপায় হল পাকা ফল খাওয়া।

মদ্যপানীয়ের যে রাসায়নিকটির জন্য মানুষ মাতাল হয় সেটা হল এলকোহল। তবে যেকোন এলকোহল নয়, পানীয়তে থাকা এথানল (ethanol) এর কারনে। এথানল তৈরি হয় কোন শর্করা জাতীয় দ্রব্যের গাঁজন বা ফারমেন্টেশান এর ফলে। এটা একটা রাসায়নিক প্রক্রিয়া যার প্রোডাক্ট বা উপজাতগুলির একটি হল এথানল। তো, ফল পাকার সময় কাঁচা ফলের একধরনের শর্করা, স্টার্চ ভেঙে তৈরি হয় অন্য ধরনের শর্করা, সাধারনভাবে যাদেরকে শুগার বলে (ছোট শর্করা বলা যায়)। আর পেকে যাওয়া ফলের এই শর্করাকে অণুজীবেরা ভেঙে তৈরি করে এথানল নামের এলকোহল। অর্থাৎ, আপনি যদি কখনও পাকা ফল খেয়ে থাকেন তবে দাবী করতে পারবেন না যে আপনি এথানল খাননি। তবে, পাকা ফলে এথানলের পরিমান খুবই কম থাকে (ফল বিশেষে বিভিন্ন হয়)। বাজারে প্রচলিত ফলের জুস (যদি ফল দিয়ে বানানো হয়) এও তাই কিছু পরিমান এলকোহল থাকে।

মদ্যপানীয় তৈরিও করা হয় একই নিয়ম মেনে। অনেক শর্করা আছে এমন কোন ফল বা খাদ্য নিন, ছত্রাক দিয়ে বা প্রাকৃতিকভাবেই গাঁজাতে থাকুন। কিছুদিন পরে মদ্যপানীয় পেয়ে যাবেন। বিভিন্ন ফল বা খাদ্যদ্রব্য বা উদ্ভিদ ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনে মদ্য তৈরি করা হয় যেখানে এলকোহলের পরিমান থাকে বিভিন্নরকম।


শর্করা (গ্লুকোজ) থেকে ছত্রাক (ঈষ্ট) দ্বারা এথানল তৈরি। আপনি হয়তো বিভিন্ন খাবার তৈরিতে খাবারকে ফোলানোর জন্য ঈষ্ট ব্যবহার করেন। এই বিক্রিয়ায় তৈরি কার্বন ডাই অক্সাইড তৈরি হওয়ার ফলে এই ফোলানো ভাবটা আসে, সেইসঙ্গে আপনার খাবারে এথানলও কিন্তু তৈরি হচ্ছে! (ছবিসূত্র: http://fyi.uwex.edu/)

মানুষ যখন পানীয়ের মাধ্যমে এথানল গ্রহণ করে তখন এই এথানল রক্তের মাধ্যমে আমাদের মস্তিষ্কে যায় এবং নিউরন কোষের মধ্যে যোগাযোগকে শিথিল করে দেয়। ফলে আমরা বেশ ফুরফুরে, হালকা হালকা ভাব বোধ করি। খুব বেশি মাত্রায় এলকোহল গ্রহণ বিষাক্রিয়ার তৈরি করে। কিন্তু, মানুষের দেহ কিছু পরিমান এলকোহল সহ্য করতে পারে। ধন্যবাদ দিতে হয় এলকোহল ডিহাইড্রোজিনেজ (alcohol dehydrogenase) নামক একটি এনজাইম বা উৎসেচক কে। এরা রক্তের মধ্যে থাকা এলকোহল ভেঙে ফেলে। একটা হিসাব দেই, প্রায় ৪০০ মিলিলিটার এর রাম বা হুইস্কির মধ্যে থাকা এলকোহল (৪০ শতাংশ এলকোহল) পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় করতে আমাদের দেহের ২৪ ঘন্টার একটু বেশি সময় লাগে। কিন্তু প্রশ্ন হল, এলকোহল ডিহাইড্রোজিনেজ মানুষের শরীরে আসলো কিভাবে? কতদিন ধরে আমাদের জেনোমে বহন করছি এই জিন?

প্রথম প্রশ্নটার উত্তর সহজ, বনে থাকা অবস্থায় পাকা ফল খেয়ে এলকোহলের বিষক্রিয়ার হাত থেকে বাঁচতে আমাদের দেহে এই এনজাইম উদ্ভব হয়েছিল। কিন্তু তার মানে এই না যে আধুনিক Homo sapiens এর মধ্যেই জিনটি উদ্ভব হয়েছে। বনে বনে চড়ে বেড়ানো আমাদের অতি আদি কোন পূর্বসূরীর কাছ থেকে এই জিন প্রবাহিত হয়ে বিবর্তনিক ধারায় আসতে পারে আমাদের দেহে। সাম্প্রতিক একটি গবেষণা বলছে (সূত্র ২, ৩) শুধু আগেই নয়, বরং যখন Homo sapiens আবির্ভূতই হয়নি, সেই ১০ মিলিয়ন বছর আগে প্রথম মানব-পূর্বসূরিদের জেনোমে দেখা দেয় এই জিন। আর সেই জিনটি এখনও রয়ে গিয়েছে বিধায়, এবং সংখ্যায়-কাজে সমৃদ্ধ হয়েছে বিধায় বিবর্তনিকভাবেই মানুষ যে মাতাল হতে পছন্দই করবে সেটা আর অদ্ভুত কী!


ডানে গাঁজানো ফল দেখতে পাচ্ছেন। অতিপুষ্টিকর না হলেও আমাদের পূর্বসুরিগণ এসব ফল খেয়ে দেখতেন এবং হয়তো মাতলামিও করতেন! (ছবিসূত্র: http://omnifeed.com/)

যেই এলকোহল ডিহাইড্রোজিনেজ জিনটিকে নিয়ে বিজ্ঞানীরা কাজ করেছেন তাকে বলে ADH4। ধারনা করা হত মানুষের দেহে এই জিনটি এসেছে মানুষ যখন প্রথম খাদ্য ফারমেন্টেশান বা গাঁজানো আরম্ভ করে, অর্থাৎ মাত্র ৯০০০ বছর আগে থেকে। দুধে থাকা ল্যাকটোজ হজমের জিনটিও একইরকম সময়ে এসেছে প্রমাণিত। তাই, উপরের দাবীটি খুব অযৌক্তিক ছিল না। প্রাচীন মিশরীয় পাত্রে এলকোহলের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে। তাদের চিত্রকর্ম জুড়েও আছে মদ্যপানীয়র উপস্থিতি। কিন্তু ২৮ ধরনের প্রাইমেট (গরিলা, শিম্পাঞ্জী, মানুষ ইত্যাদি প্রাণী) কে নিয়ে নতুন গবেষণাটি বলছে এই ADH4 জিনটির একটি আদিরূপ পাওয়া যেত ৫০ মিলিয়ন বছর আগের প্রাইমেটদের মধ্যে যা মৃদু পর্যায়ের এলকোহলকে পরিপাক করতে পারতো। কিন্তু ১০ মিলিয়ন বছর আগে এই জিনের উন্নত ভার্শন আবির্ভূত হয়, যা আগের জিনটি চেয়ে ৪০ গুণ বেশি সক্ষমতার সাথে এলকোহল হজমে সাহা্য্য করে। মানে আমাদেরকে আরও বেশি পরিমান এলকোহল সহ্য করতে সাহায্য করেছে। এই পরবর্তী জিনটিই আমাদের আধুনিক ADH4 জিনের পূর্বসূরি। এই নতুন ভার্শনটা কিন্তু শিম্পাঞ্জীদের মধ্যে দেখা যায়না।

কারণটা কী? ১০ মিলিয়ন বছর আগে, পৃথিবী উত্তপ্ত অবস্থা হতে ঠান্ডা হয়ে এসেছে বহুদিন আগেই। গাছগাছালি, ফলে-ফুলে সমৃদ্ধ তখন পৃথিবী। প্রাইমেটরা পাকা ফল খাওয়া শুরু করেছে। গাছ থেকে পড়ে থাকতো অনেক পাকা ফল, যেখানে ব্যাকটেরিয়া শর্করা থেকে এথানল তৈরি করতো। কিন্তু, ADH4 প্রোটিনটিতে মিউটেশান না হলে এইসব পাকা ফল অল্প খেয়েই প্রাইমেটরা মাতাল হয়ে যেত এবং বেশি খেতে পারতো না। অর্থা আমাদের আদি পূর্বসুরি প্রাইমেটদের মধ্যে থাকা নতুন ADH4 জিনটি আমাদের বিবর্তনকে প্রভাবিত করেছে। আর সেজন্যই বলছি, মাতলামি আমাদের বিবর্তনের সঙ্গে জড়িত।

এবার আসি আরেকটা মজার তথ্যে। এলকোহল ডিহাইড্রোজিনেজ এনজাইম এর কয়েকটা ভার্শন মানুষের মধ্যে পাওয়া যায়। তার একটির নাম ADH1B। কিন্তু প্রায় সকল জাপানি, কোরিয়ান এবং চীনা মানুষের মধ্যে এই জিনটির ভিন্ন ভার্শন থাকে- ADH1C। এলকোহল ডিহাইড্রোজিনেজ যখন এলকোহলকে পরিপাক করে তখন এরা এলডিহাইড (aldehyde) নামক একটি রাসায়নিক তৈরি করে। অতিমাত্রায় এলডিহাইড আমাদের শরীরের জন্য বিষাক্ত। এশিয়দের এই ভিন্ন জিনটি অন্য ভার্শনটির চেয়ে এলকোহলকে ৪০-১০০ গুণ বেশি মাত্রায় বিষাক্ত এলডিহাইডে পরিনত করে। ব্যাপারটা আসলে এলকোহলকে অতিদ্রুত মাত্রায় পরিপাক করে এই জিনটি। যার বিষাক্ত বাইপ্রোডাক্ট এলডিহাইডকে আমাদের শরীর অতদ্রুত বের করে দিতে পারেনা। ফলে মদ্যপানে এলডিহাইডজনিত বিষক্রিয়া হয় উত্তর-পূর্ব এশিয়ার মানুষদের মধ্যে। সেজন্য পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের চেয়ে কম মাত্রায় মদ্যপান করতে পারে জাপানি, চিনা এবং কোরিয়ান রা।


অল্প মদ্যপানেই এমন রক্তাভ বর্ণধারন করেন কিছু এশিয় মানুষ। (ছবিসূত্র: http://dujs.dartmouth.edu/)

সূত্র:
১. http://icb.oxfordjournals.org/content/44/4/315.full
২. http://news.sciencemag.org/biology/2014/12/ability-consume-alcohol-may-have-shaped-primate-evolution
৩. http://www.livescience.com/48958-human-origins-alcohol-consumption.html
৪. http://en.wikipedia.org/wiki/Alcohol_flush_reaction

পুনশ্চ: শিরোনামটা পরিবর্তন করা হয়েছে।


মন্তব্য

মেঘলা মানুষ এর ছবি

আগ্রহোদ্দীপক বিষয়। এশিয়ার কিছু জাতির এই বিষয়টা জানা ছিল না।

সজীব ওসমান এর ছবি

হাসি

মেঘলা মানুষ এর ছবি

এখন তো কোন চাইনিজ/জাপানিজ/কোরিয়ান কারো চামড়া লাল হতে দেখেলেই সন্দেহ হবে চিন্তিত

রকিবুল ইসলাম কমল এর ছবি

লেখাটা পড়ে এই ভিডিও ক্লিপটার কথা মনে পড়লো তাই এখানে এমবেড করে দিলাম। না দেখলে মিস! দেঁতো হাসি

মন মাঝি এর ছবি

ক্লিপটা দেখে দারুন মজা পেয়েছি - হো হো করে না হেসে পারিনি! গড়াগড়ি দিয়া হাসি
তবে এটা বোধহয় "মঞ্চস্থ", বাস্তব না। মজা করার জন্যই করা হয়েছে হয়তো। সূত্র-১ এবং সূত্র-২

****************************************

সজীব ওসমান এর ছবি

দেঁতো হাসি

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

তথ্যসমৃদ্ধ লেখা আর কমল ভাইয়ের ভিডিও ক্লিপ দুটোই দারুণ।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

সজীব ওসমান এর ছবি

ধন্যবাদ

অতিথি লেখক এর ছবি

নতুন অনেক তথ্য জানা গেল। ধন্যবাদ

অতিথি লেখক এর ছবি

নতুন অনেক তথ্য জানা গেল, ধন্যবাদ।

দেবদ্যুতি রায়

সজীব ওসমান এর ছবি

হাসি

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

বাহ, ঝরঝরে ভাষায় চনমনে পোষ্ট! পড়ে আরাম পেলুম!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

সজীব ওসমান এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

হাসিব এর ছবি

সেজন্য পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের চেয়ে কম মাত্রায় মদ্যপান করতে পারে জাপানি, চিনা এবং কোরিয়ান রা।

আমাদের কী অবস্থা?

সজীব ওসমান এর ছবি

আমাদের অবস্থা ওরকম না, ওই জিনের ব্যতিক্রমটা আমাদের দেহে খুঁজে পাওয়া যায়না। তাই আমরা তাদের চেয়ে বেশি সহ্য করতে পারার কথা।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার লেখায়, মানুষ মাতলামি কেনো ভালোবাসে সেটা পরিষ্কার হোলো না। আপেলের ছবির উপরের প্যারায় লিখেছেন

পাকা ফল খেয়ে এলকোহলের বিষক্রিয়ার হাত থেকে বাঁচতে আমাদের দেহে এই (জিন) উদ্ভব হয়েছিল।

বিষক্রিয়া থেকে রক্ষা পাওয়াই যদি মূল উদ্দেশ্য হয়, তাহলে

আর সেই জিনটি এখনও রয়ে গিয়েছে বিধায়, বিবর্তনিকভাবেই মানুষ যে মাতাল হতে পছন্দই করবে সেটা আর অদ্ভুত কী!

এই ডিসিশনে আসা যায় কী?

---যান্ত্রিক বাঙালি

সজীব ওসমান এর ছবি

'মাতলামি ভালবাসে' এটা আমি আসলে বলতে চাইনাই, বরং বলছি এলকোহলের প্রতি আসক্তি বা ভাললাগা টা কোথা থেকে এসেছে।
এই ডিসিশানে আসা যায় কয়েকটা কারনে-
১। যেহেতু এলকোহল ভাল লাগার একটা ভাব তৈরি করে, এবং এটা বিষাক্ত নয় সেহেতু মানুষ এলকোহল গ্রহণ পছন্দ করবে
২। প্রথম বিষক্রিয়াটা ছিল কারন জিনটি ছিলনা। যেহেতু নতুন জিনটি এলকোহলকে সহ্য করতে সক্ষম করেছে আমাদের সেহেতু এলকোহলকে আর এড়িয়ে যায়নি প্রাইমেটরা। আর তারই ধারাবাহিকতায় থিতু হওয়া মানুষেরা গাঁজন শুরু করে পানীয় উৎপাদন করে। আর অল্পপানে যেহেতু বিষক্রিয়া হচ্ছেনা সেহেতু এলকোহল ভাললাগার অনুভূতি থেকে মাতাল হওয়ার জন্য পজিটিভ ফিডব্যাক হিসেবে কাজ করে।

অতিথি লেখক এর ছবি

বুঝতে পেরেছি।

----যান্ত্রিক বাঙালি

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

বেশ দারুন লাগলো বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষনের আলোকে লেখাটি যদিও আমার বিজ্ঞানবোধ বেশ কম এবং এসংক্রান্ত ব্যাকগ্রাউন্ড নেই। তবে একজন অবসরপ্রাপ্ত মদ্যপায়ী হিসেবে আমার কিছু অবজারভেশন শেয়ার করতে পারি। বলে রাখি আমি কখনোই বিয়ার বা ওয়াইনের ভক্ত ছিলাম না। আমি হার্ড লিকার পান করেছি। আমি পাঁড় পানাসক্ত ছিলাম এমনটি নয় তবে আমি মদ্যপান উপভোগ করতাম।

যদি প্রশ্ন করেন আমি মদ্যপান করেছি কেনো! এর সোজা উত্তর ড্রাঙ্ক হওয়ার জন্য। একে বাংলায় মাতাল বলতে পারেন বা অন্যকিছুও বলতে পারেন। তবে 'মাতাল' শব্দটির প্রতিটি মদ্যপায়ীর কাছে সম্ভবত নিজস্ব সংজ্ঞা আছে এবং একটা থ্রেশহোল্ডও আছে। সাধারণত, যারা মদ্যপান করে না তাদের মনে মাতাল বলতেই ভেসে ওঠে মদ খেয়ে হৈ-হল্লা কর, গালি দেওয়া, স্ত্রীকে প্রহার করা একশ্রেণীর মন্দ লোকের কথা। হ্যাঁ, পরিবারে ও সমাজে অশান্তির সৃষ্টিকারী এরা অবশ্যই মন্দ লোক। কিন্তু এরাই তো সব নয়, আরও মাতাল আছে। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আপনার থ্রেশহোল্ড। আপনি নিজেকে কতোটুকু লাগাম ছাড়া করবেন এটি। নিজের ধারণক্ষমতার বাইরে পান করলে আচরণে ও শরীরে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য। যারা মদ খেয়ে ন্যুইসেন্স তৈরী করে তারা আসলে নিজের টলারেন্স লেভেলের বাইরে পান করে। অনেকের ক্ষেত্রেই দেখেছি থ্রেশহোল্ডের বাইরে যেতে যেতে ক্রমশঃ তাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে এবং সমাজে মাতাল বলে (অপঃ)পরিচিতি লাভ করে। বলে রাখি, অনেক লোক আছে যারা সামান্য পান করেই মাতালের অভিনয় করে।

আমি খেয়াল করে দেখেছি এমবিটিআই অনুযায়ী যারা এক্সট্রোভার্ট টাইপের, তারা ড্রাঙ্ক হওয়ার পর সাধারণত জোরে কথা বলে, জোরে হাসে, অপরকে কথা বলতে দেয় না। পক্ষান্তরে, ইন্ট্রোভার্ট টাইপের লোকজন গভীর ভাবনায় ডুবে যায়, চাপা কিন্তু ভারী স্বরে কথা বলে, অপরের কথা শোনে। তাই, পানকারীকেই তার শারিরীক সক্ষমতা ও রিয়্যাকশনের ধরন বিচার করে ঠিক করতে হয় তার থ্রেশহোল্ড, কতটুকু পান করবে এবং কতটুকু রিয়্যাক্ট করবে। বাস্তবতা হচ্ছে, সমাজে কারও একবার যদি 'মাতাল' বলে পরিচিতি জুটে যায়, মদ ছাড়লেও তার মাতাল নাম ঘোচে না।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

সজীব ওসমান এর ছবি

একেবারেই একমত। মদ্যপান বিষয়গুলোতে কনজারভেটিভ সমাজে মদ্যপান এবং মাতালামি কে সমার্থক হিসেবে দেখা হয়। তবে এই লেখার জন্য 'মাতালামি'র চেয়ে উপযুক্ত ব্যবহার মনে হয় 'মদাসক্তি বা মদকে ভাললাগা' শব্দগুলি। আমার পর্যবেক্ষণ হল স্বাভাবিক অবস্থায় কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীণতা (পাগলামি অর্থে নয়) মদ্যপানের পরে প্রকটভাবে প্রকাশ পায়।

মাসুদ সজীব এর ছবি

পাঁচতারা। অনেক দিন ধরে ভাবছিলাম অ্যালকোহল নিয়ে একটা পোষ্ট দিবো চিন্তিত কিন্তু আইলসেমী আর ব্যস্ততার কারনে হয়ে উঠেনি। আপনার গোছানো লেখাটা সেই কাজ থেকে আমায় উদ্ধার করলো। বিজ্ঞান পড়তে ভালু পাই, আপনাকে নিয়মিত নীড়পাতায় দেখতে চাই। শুভেচ্ছা হাসি

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

সজীব ওসমান এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ। লিখে ফেলেন। একেকজনের একেকরকম ভার্শন থাকে। ইন্টারেষ্টিং হওয়ার কথা। একটা জিনিস শেয়ার দেই দেখেন:

পদার্থবিদ লিও জাইলার্ড এবং তার সাথে বন্ধুর কথোপকথন-
লিও: ডায়েরি লেখা শুরু করবো চিন্তা করতেসি
বন্ধু: ক্যান?
লিও: এমনি, প্রকাশ করার জন্য না। শুধু খোদাকে আমার জীবন সম্পর্কে জানানোর জন্য।
বন্ধু: খোদা কি তোমার জীবন সম্পর্কে জানেনা ভাবসো?
লিও: না, মানে আমার ভার্শনটাতো জানেনা!

স্যাম এর ছবি

চলুক চলুক

সেজন্য পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের মানুষের চেয়ে কম মাত্রায় মদ্যপান করতে পারে জাপানি, চিনা এবং কোরিয়ান রা

জাপানীদের কথা জানিনা তবে চীনা এবং কোরিয়ানদের ব্যাপারে উল্টোটাই দেখেছি! চীন এর পাব এ দেখেছি ওরা আমাদের মত ১টা/২টা বিয়ার কেনেনা - ১ বা ২ ক্রেট করে অর্ডার করে। আর কোরিয়ানদের দুইবেলাই প্রচুর বিয়ার এবং সোজু এখনো পান করতে দেখি।

চীন এর ব্যাপারে পান্ডব দার মতামত কি?

সজীব ওসমান এর ছবি

জিনেটিক্স ভিন্ন কথা বলছে। তবে আপনি যাদেরকে দেখেছেন তাদের মধ্যে হয় জিন ব্যতিক্রমটি নাই, বা অন্যভাবে এটাকে দমন করা হয়েছে। এব্যাপারে আমার দেখা অভিজ্ঞতাও আপনার চেয়ে ভিন্ন। তবে আমি শুনেছি জাপানিরা প্রচুর পান করতে পছন্দ করে, তবে হয়তো একসাথে অনেক এলকোহল গ্রহণ করেনা।

স্যাম এর ছবি

হেহেহে - জিনেটিক্স ঠিকই আছে! পাবে দেখা লোকজন মনে হয় সারা পৃথিবীতেই উলটা ডেটা দেয়ার কথা চোখ টিপি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।