ইউনেস্কো বিজ্ঞান সমাচার ২০১৫ - বাংলাদেশ প্রসঙ্গে

সজীব ওসমান এর ছবি
লিখেছেন সজীব ওসমান (তারিখ: মঙ্গল, ০৮/১২/২০১৫ - ১০:২২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গত ২০ বছর ধরে ইউনেস্কো পৃথিবীব্যাপি বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং উদ্যোগের হাল নিয়ে সমাচার প্রকাশ করছে। নাম ইউনেস্কো সায়েন্স রিপোর্ট বা ইউনেস্কো বিজ্ঞান সমাচার। ২০ বছরে মোট ৫ টি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, সবচেয়ে সম্প্রতিটা এই বছরের, গত ১০ নভেম্বর প্রকাশিত, নাম ইউনেস্কো সায়েন্স রিপোর্ট: টুয়ার্ডস ২০৩০। ইউনেস্কো ইনস্টিটিউট ফর স্ট্যাটিসটিক্স এর সংগৃহিত তথ্য দিয়ে পৃথিবীর দেশগুলি বিজ্ঞান গবেষণায়, প্রযুক্তিগতভাবে এবং উদ্যোগ গ্রহণে কতটুকু এগুলো, তাদের সার্বিক অবস্থা কিরকম, লক্ষণ বা ট্রেন্ড কী সেসব নিয়ে তথ্য প্রকাশ করে সমাচারটি এবং উন্নতির উদ্দেশ্যে উপদেশও প্রদান করে। বিভিন্নদেশের বিশেষজ্ঞগণ মিলে এই সমাচার প্রকাশ করেন পৃথিবীকে কয়েকটি অঞ্চলে ফেলে, বাংলাদেশ পরেছে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে। সমাচারটি থেকে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং উদ্যোগে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরছি। যারা বিস্তারিত জানতে আগ্রহী তারা এই লিংক থেকে পুরো সমাচারটি ডাউনলোড করে নিতে পারেন

[বড় করে দেখতে ছবিগুলিতে ক্লিক করুন]

প্রথমেই দেখে নেই শিক্ষায় দক্ষিন এশিয়ার দেশগুলি কে কতটুকু ব্যয় করে। হিসেবটা করা হয়েছে মোট জিডিপি'র শতাংশ ব্যয় হিসেবে। কমলা বারের গ্রাফটিতে দেখছেন দেশগুলির শিক্ষাব্যয়। বাংলাদেশ জিডিপি শতাংশে সবচেয়ে কম ব্যয় করা দেশগুলির একটি। নীল বারগ্রাফে দেখছেন শিক্ষাব্যয়ের কত শতাংশ উচ্চশিক্ষায় ব্যয় করে দেশগুলি। ভারত সবচেয়ে বেশি করে উচ্চশিক্ষায়।

শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ছাত্রসংখ্যায় বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং শ্রীলংকার মধ্যে তুলনা করা হয়েছে। স্নাতক / মাস্টার্স এর ভর্তিসংখ্যা তুলনায় পিএইচডি ভর্তির সংখ্যা সবচেয়ে কম বাংলাদেশে। উচ্চশিক্ষায় গুরুত্ব কম দেয়ার উদাহরণ এটা।

আবার কোন দেশে বিজ্ঞানের কোন বিভাগে কতজন উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন তার তুলনা দেখতে পাবেন নিচের ছবিতে। স্বাস্থ্যগবেষণায় সবচেয়ে বেশি ছাত্রছাত্রী দেখা যাচ্ছে। চিন্তা করছি ২০০৯ এবং ২০১২ সালের মধ্যে সংখ্যাটার খুব বেশি কোন পরিবর্তন হলনা কেন কয়েকটি বিভাগে? এই হিসেবটা থেকে আমার মূল তথ্যসংগ্রহের গলতি মনে হচ্ছে। হয়তো বাংলাদেশ থেকেই এই পরিসংখ্যানের ভুলতথ্য দেয়া হয়েছে। আর বাংলাদেশ থেকে সত্যিই কি প্রতিবছর ৭০৯০ জন পিএইচডি তে ভর্তি হন? লক্ষ্য করলে দেখবেন ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত পিএইচডিতে যেই সংখ্যাটা বেড়েছে তার প্রায় পুরোটিই ইঞ্জিনিয়ারিং এর অবদান। অন্যান্য বিভাগে তেমন কোন উন্নতি নাই এইক্ষেত্রে।

প্রতি একশ জনে মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের হিসেব পাবেন নিচের ছবিতে। প্রযুক্তি এবং উন্নয়নের মাপকাঠি হিসেবে ব্যবহার করা হয় এমন হিসেব।

গত ২০১০ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত প্রাইভেট সেক্টরে কতটুকু ব্যয় গবেষণা এবং উন্নয়নে হয়েছে তার হিসেব দিচ্ছে নিচের ছবি:

আর এখানে দেখা যাচ্ছে দেশ থেকে প্যাটেন্ট করা প্রযুক্তির হিসেব:

এবার আসি বিজ্ঞান গবেষণালব্ধ ফলাফল প্রকাশের হিসেবে। প্রকাশণা সংখ্যায় পাকিস্তানের উন্নয়ন বাংলদেশের সঙ্গে প্রায় তুলনাই করা চলেনা।

ন্যানোটেকনোলজি গবেষণার প্রকাশণায়ও পাকিস্তান এগিয়ে:

বিজ্ঞান প্রকাশণার আরেকটি হিসেব। সঙ্গে জি২০ দেশগুলির সঙ্গে তুলনা:

বিজ্ঞান, মানবিক এবং সবাজবিজ্ঞানে প্রকাশণাগুলি বিভিন্ন দেশে কিভাবে বন্টিত সেটার হিসেব:

সমন্বিত গবেষণায় দেশগুলির যোগাযোগ যেসব দেশের সঙ্গে:

এবং বেশিরভাগ প্রকাশণাতেই বিদেশী গবেষণার সাহায্য লেগেছে বেশিরভাগ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির।

এই লেখায় আমি খুব বেশি বিশ্লেষণে যাইনি। পরের কোন লেখায় হয়তো করবো। এই প্রবন্ধের উদ্দেশ্য হল ইউনেস্কোর মূল সমাচারটি থেকে বাংলাদেশকে হাইলাইট করে সংরক্ষিত করা। পরের সমাচার আবার বেরুবে ৫ বছর পরে। তখন এই হিসেবগুলির সঙ্গে মিলিয়ে দেশের বিজ্ঞান গবেষণার উন্নয়নটা বোঝা যেতে পারে।

এই প্রসঙ্গে আগের লেখা


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। সঙ্গে বিশ্লেষণ থাকলে ভালো হতো। অবশ্য এ তথ্য সামনে থাকলে তা যেকোনো সময়ই সম্ভব।

ধন্যবাদ।

স্বয়ম

সজীব ওসমান এর ছবি

চলুক

অতিথি লেখক এর ছবি

লেখাটি পড়ে খুব দুঃখ পেলাম। ভেবেছিলাম সাম্প্রতীক মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের বহুল ব্যবহারে অন্তত বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে, কিন্তু ভুল। উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রেও আমার মনে হয় আমাদের দেশের অগ্রগতি হয়েছে অনেক কিন্তু এই পরিসংখ্যান যা বলছে তার সাথে নিজের চিন্তা-ভাবনাকে মেলাতা পারছিনা কিছুতেই।
ফ্রিল্যান্সিং পেশায় যেখানে আমাদের দেশের তরুণরা ভারতীয়দের সাথে পাল্লা দিচ্ছে যেখানে ভারত ও বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারী, উন্নতি, উচ্চশিক্ষার এই ব্যপক পার্থক্য অবাক করে দিচ্ছে।

সদস্য নামঃ ব্লগারাদিত্য

---------------

সজীব ওসমান এর ছবি

হুমম। আগের লেখাটিতে উচ্চমানের বিজ্ঞান গবেষণার দৈন্যতাও প্রকটভাবে দেখতে পাবেন।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হুমম

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।