মঞ্জুরী কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশী বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মান এবং কিছু পরিসংখ্যান

সজীব ওসমান এর ছবি
লিখেছেন সজীব ওসমান (তারিখ: বুধ, ২৯/১১/২০১৭ - ৩:৩৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রতিবছর বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সার্বিক অবস্থা নিয়ে একটা প্রতিবেদন বের করে। এটাকে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি নিয়ে সবচেয়ে অফিশিয়াল প্রতিবেদন বলা চলে। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির হাল, বিশেষ করে গবেষণার হাল নিয়ে আমার আগ্রহের দরুন আমার হাতে আসা ২০১৫ সালের প্রতিবেদনটি (সেপ্টেম্বর, ২০১৬ তে প্রকাশিত) বেশ আকর্ষনীয় মনে হলো। প্রতিবেদনটিতে বিশ্বিবদ্যালয়ের বিভিন্নরকম পরিসংখ্যান দেয়া আছে যা দেশের সার্বিক শিক্ষার পর্যায় বুঝতে আমাদের সাহায্য করতে পারে। আমি সেখান থেকে আমার আগ্রহের কয়েকটা বিষয় তুলে ধরলাম। বিশেষ করে কয়েকটি পরিসংখ্যান খুবই আগ্রহ উদ্দীপক এবং দেশের সার্বিক শিক্ষাব্যবস্থা এবং মান নিয়ে প্রশ্ন জাগায়।

মোট বাজেট এবং গবেষণা ব্যয়

বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলির বাজেট প্রায় ৩৮০ কোটি টাকা থেকে ৮০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত রয়েছে। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক বাজেট সবচেয়ে বেশি, ৩৭৭ কোটি টাকা। ব্যয়ও কাছাকাছি। আমি প্রতিবেদনের বিভিন্ন অংশের ছবি সঙ্গে দিয়ে দিচ্ছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যয় এবং মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা থেকে বোঝা যায় মাথাপিছু বিশ্ববিদ্যালয়গুলি শিক্ষার্থী পিছু কত টাকা ব্যয় করে।

প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি আয় করে নর্থ সাউথ (২৮৯ কোটি টাকা), দ্বিতীয় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল (২২০ কোটি টাকা), তৃতীয় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় (২০০ কোটি টাকা)। তাদের আয় দিন দিন বাড়ছে। অর্থাৎ লাভজনক ব্যবসা।

গবেষণায় সবচেয়ে বেশি যেই বিশ্ববিদ্যালয় ব্যয় করে সেটা কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নয়। এমনকি দ্বিতীয় এবং তৃতীয় অবস্থানেও কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নাই! প্রথম ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, বার্ষিক ব্যয় ২৬৯৯ লক্ষ টাকা। এরপর ইন্ডেপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এবং ইউনিভার্সিটি অফ লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ যথাক্রমে ৮৮১ এবং ৫১২ লক্ষ টাকা খরচ করে।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় - ২২১ লক্ষ টাকা, দ্বিতীয় অবস্থানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় - ১০৮ লক্ষ টাকা।

গবেষণায় সবচেয়ে কম ব্যয় করা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে আছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, যাদের গবেষণায় বার্ষিক ব্যয় যথাক্রমে ০ এবং ০ টাকা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক গবেষণায় ব্যয় ১০ লক্ষ টাকা। একটা বিখ্যাত তথ্য আছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে। এর গবেষণায় বার্ষিক ব্যয় যত, ঠিক তত টাকাই উপাচার্যের বার্ষিক আপ্যায়ন ব্যয় (এই তথ্য প্রতিবেদনে নাই, অন্য খবর থেকে নেয়া)। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীপিছু মাত্র ৪১ টাকা বছরে ব্যয় করে গবেষণায়।

প্রকাশনা

মনে করা যেতে পারে গবেষণায় ব্যয় অনুযায়ী আউটপুট, যেমন প্রকাশনা একই অনুপাতে হবে। কিছু ক্ষেত্রে এই অনুমান সঠিক। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সবচেয়ে বেশি প্রকাশনা করেছে। ২১০ লক্ষ টাকা ব্যয় করে বার্ষিক প্রকাশনা ২১০টি। অর্থাৎ প্রতি প্রকাশনায় খরচ হয়েছে ১ লক্ষ টাকা।

অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যাপারটা এতোটা সমানুপাতিক নয়। যেমন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বার্ষিক ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয় করে প্রকাশনা করেছে ১৬৪ টি, আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১০৮ লক্ষ টাকা ব্যয় করে প্রকাশনা করেছে ১২৩ টি। সেহিসেবে জাবির আউটপুট হলো বেশি কার্যকরী।

দেশের মূল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে প্রকাশনায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা সবচেয়ে করুণ। তাদের ২০১৫ সালের প্রকাশনা ০ টি। কৌতুকজনকভাবে, বার্ষিক শূণ্য টাকা ব্যয় করে শাহাজালাল এবং ইসলামী বিশ্বিবদ্যালয়ের প্রকাশনা যথাক্রমে ৭টি এবং ৯টি।

অন্যদিকে, সবচেয়ে বেশি প্রকাশনা তৈরি করা বিশ্ববিদ্যালয়ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলি। সর্বোচ্চ ৩৬৭ টি প্রকাশনা করেছে ডেফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়। আগ্রহজনকভাবে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আউটপুট এতোটা ভালো নয়। আড়াই হাজার লক্ষ টাকা বার্ষিক গবেষণায় ব্যয় করে তাদের প্রকাশনা ১৫৫ টি।

উচ্চতর গবেষণায় ভর্তি

মোটামুটিভাবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বিবদ্যালয়গুলি বাদে বাকি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে কলা অনুষদে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী (স্নাকোত্তর) ভর্তি হয়। বিজ্ঞান অনুষদের চাইতে বেশি। প্রতিবেদনে জীববিজ্ঞানকে আলাদা অনুষদ হিসেবে ধরা হয়েছে, মানে বিজ্ঞান অনুষদের বাইরে। তারপরও, মোটমাট বিজ্ঞানে কলা অনুষদের চেয়ে কম শিক্ষার্থী ভর্তি হয়।

এবার আসি উচ্চতর গবেষণায়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে এমফিল এবং পিএইচডিতে মোট ভর্তি হয়েছেন/আছেন ২১৭৬ জন শিক্ষার্থী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী উচ্চতর গবেষণায় রত। প্রায় ক্ষেত্রেই আসনকৃত সংখ্যার চেয়ে ভর্তির সংখ্যা বেশি দেখাচ্ছে। এটা কী কারনে সম্ভব সেটা আমি বুঝিনি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭ জন উচ্চতর গবেষণায় ভর্তি হলেও ২০১৫ সালে একটা প্রকাশনাও কিভাবে তৈরি হলোনা সেটা আমার বোধগম্য নয়। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উচ্চতর গবেষণায় ভর্তির সংখ্যা আমি প্রতিবেদনে খুঁজে পাইনাই।

উচ্চতর ডিগ্রীধারী শিক্ষকশিক্ষিকার সংখ্যা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডিধারী শিক্ষকশিক্ষিকার সংখ্যা সর্বোচ্চ। কিন্তু মোট শিক্ষকের তুলনায় কতজন পিএইচডিধারী সেই হিসেব করলে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে থাকে। তাদের অর্ধেকেরও বেশি শিক্ষকশিক্ষিকা পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেছেন। সেতুলনায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হারটা করুণ। এক তৃতীয়াংশের মতো শিক্ষকশিক্ষিকা পিএইচডি করেছেন। শাবির ক্ষেত্রেও একইরকম।

বিদেশী শিক্ষার্থীর সংখ্যা

বাংলাদেশে মোট ৫৯৩ জন বিদেশী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পড়েত এসেছেন। সংখ্যাটা দিন দিন বাড়ছে, যেটা আশার কথা। যেমন, ২০০৯ সালে সংখ্যাটা ছিলো ৩৯০। কিন্তু এই বৃদ্ধির হার আনুপাতিক না, ২০১১ তে কমে ২১০ হয়ে যায়। তবে আমার ধারণা দেশের গুটিকয় প্রতিষ্ঠানে এই বিদেশী শিক্ষার্থীরা আসেন। যেমন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচুর নেপালী ছাত্রছাত্রী এসে ভর্তি হন শুধুমাত্র ফরেস্ট্রি ইনস্টিটিউটে, আর কোন বিভাগে না। মেডিকেল কলেজগুলিতেও অনেকে পড়তে আসেন। কোন দেশ থেকে কতজন শিক্ষার্থী কিসে পড়তে আসছেন জানতে পারলে ভালো হতো। আবার দেশের স্থিতিশীলতা এই সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করবে বলে মনে করি।

শিক্ষার্থীদের পরিসংখ্যান

৩৪টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট পড়ুয়ার সংখ্যা প্রায় আড়াই লক্ষ। সবচেয়ে বেশি ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করছেন কলা এবং মানবিকে, তারপর সামাজিক বিজ্ঞান এবং তারপর বিজ্ঞান, কৃষি, চিকিৎসা এবং প্রযুক্তি। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের (৩৪ টি এবং উন্মুক্ত এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় একসাথে) মোট প্রায় ১৩ শতাংশ বিজ্ঞান বিষয়ক কোন কিছু নিয়ে পড়ছেন।

দুঃখজনক ব্যপার হলো এখনও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে মাত্র ৪১ শতাংশ মেয়ে এবং ৫৯ শতাংশ ছেলে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। ব্যাপারটা এক্সট্রিম পর্যায়ে যায় বুয়েটের ভর্তির ক্ষেত্রে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাত্র ২০ শতাংশ মেয়ে। এই বৈষম্যমূলক অনুপাতটার দ্রুত পরিবর্তন প্রয়োজন বলে মনে করি।

তবে কোন এক কারণে ২০১২ সালে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যাও ১৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছিল। তারপর থেকে অবশ্য উর্ধ্বগতি বিদ্যমান। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো ২০০৭ সালে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮১৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

মন্তব্য

বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরী কমিশন কর্তৃক এরকম বার্ষিক প্রতিবেদন তৈরি নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবী রাখে। কিন্তু আমি প্রতিবেদনটিতে কয়েকটা বিষয়ের সংজ্ঞা এবং উপস্থাপন আরেকটু বিস্তারিত আশা করছিলাম। উদাহরণ দেই -

প্রথমেই মনে হলো যে এই প্রতিবেদনটির কিছু জিনিস খুব একটা পরিষ্কার না। যেমন, প্রকাশনা বলতে কী বোঝায়? আমার পরিচিত মানুষজনই ২০১৫ সালে প্রকাশনা করেছেন (বই এবং নিবন্ধ) যা এখানে পরিগণিত হয়নাই। সেজন্য বিষয়টা কিভাবে নির্ধারিত সেই বিষয়ে আমার প্রশ্ন ছিলো। প্রতিবেদনের কোথাও প্রক্রিয়া বা মেথড লেখা নাই, যেটা হতাশ করেছে।

খবরে প্রকাশিত আগের কিছু রিপোর্টের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির বাজেটের অমিল আছে। যেমন - খবরে প্রকাশিত হয়েছিলো বাজেটগুলি এরকম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৪৫০ কোটি টাকা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ৩৯১ কোটি টাকা। এই প্রতিবেদন ভিন্ন কথা বলছে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বাজেটের পরিমানটা কিভাবে নির্ধারিত হয় চিন্তা করছি। শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী সংখ্যা? না ছাত্রসংখ্যা? না অন্যকিছু? যেহেতু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাজেটের ৮০ শতাংশের বেশি বেতন-ভাতায় যায় সেহেতু শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যাটাকেই নিয়ামক অনুমান করছি।

আবার একটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট কত সেটা জানাটা আমার কাছে কৌতুহলকর ছিলো। কিভাবে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ২৬ কোটি টাকা তাদের গবেষণায় ব্যয় করছে এবং কী কী খাতে ব্যয় করছে সেটা বোঝাটা দরকার। তাদের আউটপুটগুলি কিধরনের? তারা কোন কোন বিষয় নিয়ে গবেষণা করে? পিএইচডি ছাত্র কতজন? কিছুই বুঝতে পারিনাই।

একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কিভাবে গবেষণায় শূণ্য টাকা ব্যয় করতে পারে? মঞ্জুরী কমিশনের কি কোন নিয়ম বাঁধা নাই? আবার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ক্ষেত্রে এবং প্রাইভেটের ক্ষেত্রে গবেষণা ব্যয় কি একইরকম ক্রাইটেরিয়া দিয়ে পরিসংখ্যানে ব্যবহার করা হয়েছে?

তবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলির জন্য এই সুপারিশটা ভালো লেগেছে। হাসি

যাই হোক। প্রতিবেদনের বেশ কিছু অংশ আমি এখানে আলোচনা করিনাই। সেগুলো নিয়ে কেউ আগ্রহী হলে ডাউনলোড করে পড়ে দেখতে পারেন। লিংক - http://www.ugc.gov.bd/en/home/downloadfile/24 কেউ যদি আমার বুঝতে না পারা অংশগুলি ধরিয়ে দেন তবে খুশি হবো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সিরিজের আরও লেখা এখান থেকে পড়তে পারেন (, , )। বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট বাজেটের আরও বেশি সংখ্যক অর্থ কেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলি গবেষণায় ব্যয় করতে পারেনা সেটা সত্যিই ভাবার বিষয়। জ্ঞান তৈরির ব্যাপারটুকু বাদ দিলেতো বিশ্ববিদ্যালয় থাকার কোন দরকার নাই। গবেষণাটাই যদি না থাকে তবে কলেজে স্নাতক/মাস্টার্স করতে দোষ কী? বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে গবেষণার গুরুত্ব সরকার যদি না বোঝে তবে দেশের উন্নতি মুখের কথাই থাকবে। অন্যদিকে নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করেও কোন লাভ নাই। বরং দারুণ এফিশিয়েন্ট, সেশনজটহীন কলেজ তৈরি করা প্রয়োজন যেন দেশের বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রী সুযোগ পায় পড়াশোনার। আর দ্রুত পাশ করে চাকরি করতে পারে।

প্রতিবেদনটি আমার নজরে এনেছেন সচল ওমর শেহাব। তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ।


মন্তব্য

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

ভালো কিন্তু মন খারাপ করা একটা লেখা।

বাংলাদেশের গবেষণার পরিস্থিতি লজ্জাজনক। এটা বোধহয় অর্থনৈতিক সমস্যার চাইতে বেশি মানসিক সমস্যা। কারন খুব অল্প খরচেও খুব ভালো গবেষণা করা যায় (গবেষণার ক্ষেত্র হিসেব না করেই বলছি)। কিন্তু কোথাও কোনো গবেষণার সংস্কৃতিই নেই! কী আশ্চর্য!

শাবিপ্রবি'র চিত্রটা দেখে জাফর ইকবাল স্যারের জন্য মন খারাপ হলো। বেচারা নিজেই গবেষণা করা দরকার বলে বলে ক্লান্ত বোধহয় এখন।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

সজীব ওসমান এর ছবি

আমি মনে করি কয়েকটা পরিসংখ্যানে বড়সড় কোন গন্ডগোল আছে। হয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলি তাদের তথ্য ঠিকমত দেয়নাই, অথবা ইউজিসি ঠিকমত পর্যালোচনা করেনাই। শাবিপ্রবির গবেষণা ব্যয় নিয়ে সেটা মনে হয়েছে। তবে একমত, সার্বিক পরিস্থিত অতি করুণ।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক গবেষণায় ব্যয় ১০ লক্ষ টাকা। একটা বিখ্যাত তথ্য আছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে। এর গবেষণায় বার্ষিক ব্যয় যত, ঠিক তত টাকাই উপাচার্যের বার্ষিক আপ্যায়ন ব্যয়

দেশের মূল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে প্রকাশনায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা সবচেয়ে করুণ। তাদের ২০১৫ সালের প্রকাশনা ০ টি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দুটো তথ্য খুব স্বাভাবিক এবং স্বভাবের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাজকর্ম দেখলে মনে হয় এরা জানেই না বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ কী? স্কুল মাস্টারি আর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারি যে আলাদা জিনিস সেটা মনে হয় এদের মাথায় নেই। স্কুল-কলেজের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল পার্থক্য যে উচ্চশিক্ষার সাথে গবেষণাও যুক্ত আছে, সেটাও মনে হয় ভুলে বসে আছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা বিভাগের উদাহরণ দেই। বিগত দশ বছরে ওই বিভাগের কোন শিক্ষকের কাছে উচ্চশিক্ষা/গবেষণার কোন সুযোগ আসেনি। সম্প্রতি সেই বিভাগে এক তরুণ শিক্ষক (সে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রও ছিল) বিদেশের খ্যাতনামা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার দুর্লভ সুযোগ পেয়ে বিভাগীয় অনাপত্তিপত্র ইত্যাদি নিয়ে ভিসার আবেদন করলো। ভিসা হয়ে যাবার পর শিক্ষাছুটির আবেদন করলো ওই শিক্ষক। কিন্তু তার আবেদন প্রত্যাখ্যাত হলো কেননা চাকরীর মেয়াদ দুবছর পূর্ণ হতে আরো ছ'মাস বাকী। অতএব শিক্ষাছুটি দেয়া যাবে না। চাকরীর মেয়াদ দুই বছর পূর্ণ করতে গেলে ভিসার মেয়াদ, উচ্চশিক্ষার সুযোগ কোনটাই থাকে না। তাকে বলা হলো- এখানে চাকরী করার জন্য তোমাকে নেয়া হয়েছে, উচ্চশিক্ষা বা গবেষণার জন্য নয়। ভেবেচিন্তে সেই তরুণ চাকরী বাদ দিয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে চলে গেল।

জ্ঞান তৈরির ব্যাপারটুকু বাদ দিলেতো বিশ্ববিদ্যালয় থাকার কোন দরকার নাই। গবেষণাটাই যদি না থাকে তবে কলেজে স্নাতক/মাস্টার্স করতে দোষ কী?

বাংলাদেশে গণহারে মাস্টার্স পড়ে সবাই। চালু আছে বলে পড়ে সবাই। এই পড়াটা কী কাজে আসে আমি জানি না। সাধারন জীবিকার জন্য মাস্টার্স করার কোন দরকার দেখি না। রসায়নে মাস্টার্স করে ব্যাংকে কিংবা এমবিএ পাশ করে গার্মেন্টসে চাকরী এমনই তো এদেশে হরদম। ওই শেষ দুবছর আগাগোড়াই সরকারী অর্থের অপচয়। এদেশে মাস্টার্সের পড়াটা এমন কোন যত্নেও পড়ানো হয় না। যেমন চোদ্দ ক্লাসের পরে ষোল ক্লাস পড়লাম, বয়স বাড়ালাম, এটুকুই শুধু। সরকার চাইলে এ খাতে খরচ কমাতে পারে। চাকরীদাতারা মাস্টার্স চায় কেরানীর পোস্ট হলেও। এই ডিগ্রীটাকে এত সস্তা আর কোন দেশে দেখা হয় বলে জানা নেই।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

সত্যপীর এর ছবি

সাধারন জীবিকার জন্য মাস্টার্স করার কোন দরকার দেখি না।

সহমত।

..................................................................
#Banshibir.

অতিথি লেখক এর ছবি

“সাধারন জীবিকার জন্য মাস্টার্স করার কোন দরকার দেখি না। “

উচ্চশিক্ষার সাথে মানুষের দক্ষতার সম্পর্ক আসলে অমন সরলরৈখিক নয় যতটা সাধারণ ভাবনায় মনে হয়। এমন নয় যে উচ্চশিক্ষা আমাদের দক্ষতা বাড়ায়। মানুষ দিনের শেষে কাজ শেখে কাজ করতে করতেই। স্পেন্সের খুব বিখ্যাত একটা পেপারে এই বিষয়ে চমৎকার একটা কথা বলা হয়েছে।

উচ্চশিক্ষা আসলে চাকরি প্রার্থীর সামর্থ (দক্ষতা নয়, বরং দক্ষতা অর্জনের জন্য যা প্রয়োজন) সম্পর্কে চাকরি দাতাকে একটি ধারণা দেয়। যে মানুষটা আর সব কিছুর হাতছানি উপেক্ষা কয়েকটা বছর বাড়তি লেখাপড়া করলেন তার শেখার সামর্থ্য অন্যদের চেয়ে বেশি (স্পেন্সের মতে)। চাকরি দাতা চাকরি প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতার চাইতে শেখার আগ্রহ এবং উদ্যমটাকেই গুরুত্ব দেয়। উচ্চশিক্ষার সার্টিফিকেটটা তাই সেই আগ্রহ আর উদ্যমের একটা সিগনাল ছাড়া আর কিছুই নয়।

একটা সময় বি এ পাশ করা ছিল পুল সিরাত পার হবার মতো একটি ব্যাপার। সিগনাল হিসেবে বি এ সার্টিফিকেট তাই খুব শক্তিশালী ছিল।

তবে সিগন্যালের ব্যাপারটি চাকরিদাতা যেমন মাথায় রাখেন, তেমনি চাকরিপ্রার্থীও বোঝেন। একটা সময় সবাই হুমড়ি খেয়ে উঠে পড়ে লাগলেন বি এ পাশ করতে। শেষমেশ সিগনাল হিসেবে বি এ পাশ তার উপযোগিতা হারালো। নতুন বেঞ্চমার্ক হয়ে গেলো মাস্টার্স। নয়ের দশকে আমরা দেখলাম আরেকটা বেঞ্চমার্ক, বি বি এ/এম বি এ। এই সিগনাল এখন টিমটিম করে কোনমতে টিকে আছে। গুণী লোকে অবশ্য অনেক আগেই টের পেয়েছিলেন। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের চায়ের দোকানের মনির মামা যেমন, বি বি এর উত্থানের সেই স্বর্ণ যুগেই তিনি সামনে যা দিনকাল আসছে তাতে করে দোকানের ক্যাশ সামলানোর জন্য বি বি এ পাশ দেওয়া কাউকে না নিলে আর চলবে না একদিন।

বেঞ্চমার্ক সময়ের সাথে বদলায়, আর তাছাড়া ক'বছর পড়লাম সেটিই যে সামর্থের একমাত্র সিগন্যাল তা নয়। কোথায় পড়লাম, কী পড়লাম, কার কাছে পড়লাম সে সব বিষয়ও রয়েছে। রয়েছে আরও অনেক কিছু। স্পেন্সের তত্ত্ব উচ্চশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা বোঝার জন্য প্রাথমিক একটা সোপান।

তত্ত্বতো আর মানুষকে বলে দেয়না কী করতে হবে, মানুষ কী করে সেটাকে বোঝার জন্যই তত্ত্বের আমদানি। সময়ের সাথে সাথে তত্ত্বও তাই পরিমার্জিত হয়, পরিবর্ধিত হয়, কখনো কখনো বদলেও যায়।

আপনার লেখাটির জন্য অনেক ধন্যবাদ সজীব ওসমান।

---মোখলেস হোসেন

অতিথি লেখক এর ছবি

উচ্চশিক্ষার সাথে মানুষের দক্ষতার সম্পর্ক আসলে অমন সরলরৈখিক নয় যতটা সাধারণ ভাবনায় মনে হয়। এমন নয় যে উচ্চশিক্ষা আমাদের দক্ষতা বাড়ায়। মানুষ দিনের শেষে কাজ শেখে কাজ করতে করতেই। স্পেন্সের খুব বিখ্যাত একটা পেপারে এই বিষয়ে চমৎকার একটা কথা বলা হয়েছে।

পড়ে দেখতে হচ্ছে ।

উচ্চশিক্ষা আসলে চাকরি প্রার্থীর সামর্থ (দক্ষতা নয়, বরং দক্ষতা অর্জনের জন্য যা প্রয়োজন) সম্পর্কে চাকরি দাতাকে একটি ধারণা দেয়।

ইন্টারেস্টিং মন্তব্য । চাকরীর ইন্টারভিউ প্যানেলে বেশ কয়েকবারই বসেছি এবং সেটা সবসময়ই দেশের বাইরে । কখনো বেশি দিন পড়ার জন্য বা ডিগ্রীর জন্য কাউকে বোনাস পয়েন্ট দিয়েছি বলে মনে পড়ে না । বিষয়টা কি শুধু বাংলাদেশ সীমাবদ্ধ বলে মনে করেন ?

আমার তো মনে হয় বাংলাদেশে অনেক ক্ষেত্রেই পড়ার বা জানার তাগিদের চেয়ে সামাজিক/পারিবারিক চাপ, বেকারত্বের বাস্তবতা মোকাবেলা করার ভয় ইত্যাদি কারনে লোকে মাস্টার্স পড়ে ।

মামুনুর রশীদ [ ভবঘুরে শুয়োপোকা ]
========================
mamun babu ২০০১ at gmail.com
হাজার মানুষের ভিড়ে আমি মানুষেরেই খুজে ফিরি

শেহাব এর ছবি

খুবই দরকারী আলোচনা। লেখচিত্রগুলো শিক্ষার্থীপিছু পরিসংখ্যান দিয়ে তৈরি করা হলে ভাল হত।

নোমান জাহাঙ্গীর  এর ছবি

সাস্টে গবেষণা ব্যয় শূন্য জিনিসটা ঠিক নয়। নিশ্চয় ইউজিসির তথ্যে ত্রুটি আছে। তবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা, সামাজিক বিজ্ঞান ও ব্যবসায় প্রশাসন স্কুল থাকার যৌক্তিকতা হাস্যকর। এটা না হয়েছে বিজ্ঞানের বিশ্ববিদ্যালয় না হয়েছে কলার বিশ্ববিদ্যালয়। জগাখিচুড়ি পাকিয়ে গবেষণা মান বৃদ্ধি করা যায়না। প্রতি দুই সেমিস্টার অন্তর "সেমিনার পেপার" তৈরির নামে কপি-পেস্ট পেপার আদৌ কোনো কাজে আসেনা। তাছাড়া ন্যূনতম যে বরাদ্দ (৩০০-৫০০/-) তাও বিভাগ হাপিশ করে দেয়। এই হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থা।

মন মাঝি এর ছবি

৩০০-৫০০/- কিসের জন্য বরাদ্দ? চা-বিড়ি?

****************************************

অতিথি লেখক এর ছবি

তবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কলা, সামাজিক বিজ্ঞান ও ব্যবসায় প্রশাসন স্কুল থাকার যৌক্তিকতা হাস্যকর। এটা না হয়েছে বিজ্ঞানের বিশ্ববিদ্যালয় না হয়েছে কলার বিশ্ববিদ্যালয়। জগাখিচুড়ি পাকিয়ে গবেষণা মান বৃদ্ধি করা যায়না।

দুনিয়াতে মনে হয় খুব কমই কেবল বিজ্ঞান প্রযুক্তি পড়ার জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় বানানো হয় । হাতে গোনা অল্প কয়টা টিকে আছে । শুধু ভারতবর্ষেই এই অভ্যাসটা রয়ে গেছে । একই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান এবং কলার পড়াশোনা বা গবেষনা হতে পারে না এমনটা মনে হবার কারন কি ?

মামুনুর রশীদ [ ভবঘুরে শুয়োপোকা ]
========================
mamun babu ২০০১ at gmail.com
হাজার মানুষের ভিড়ে আমি মানুষেরেই খুজে ফিরি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।