ঋতুর 'উৎসব'

মনি শামিম এর ছবি
লিখেছেন মনি শামিম [অতিথি] (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৬/০৬/২০১৩ - ৪:২৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

t37085jh6pn

উৎসবের শুরুটা এভাবে।

"আমার মামার বাড়ির এই পুজোটা দেড়শো বছরের পুরণো। শুনেছি আমার মার ঠাকুর্দার আমলে এই পুজোয় নাকি দারুণ জাঁকজমক হত। এক হাজার টাকার বাজি পুড়ত, দু হাজার লোক খেত, জার্মানি থেকে প্রতিমার গয়না আসত। এই বাড়ির প্রতিমা চিরকালই একরকম, ট্র্যাডিশনাল স্টাইলের, এক চালার। সুকুমার সেনের বইতে মোস্ট প্রবাব্লি আছে, এক চালার ঠাকুর মানেই যৌথ পরিবারের প্রতীক। কোনও এক বছর নাকি মার ঠাকুর্দা ভীষণ প্যাট্রিয়টিজম থেকে ট্র্যাডিশনাল স্টাইল না করে এক ভারত মাতার মডেলের প্রতিমা গড়েছিলেন, তাই জন্য ব্রিটিশ সরকার রেগে গিয়ে তাঁর রায়বাহাদুর টাইটেল কেড়ে নেয়। এই পুজোর বাসনগুলি নাকি সত্যজিৎ রায়ের দেবী ছবিতে ব্যাবহার করা হয়েছিল, সেইসময় সত্যজিৎ রায় নাকি একবার এসেছিলেন এই বাড়িতে, মা তখন খুব ছোট। এখন এই বাড়িতে কেবল আমার দিদা থাকেন, পুজোয় আমার মায়েরা চার ভাই বোন তাঁদের ফ্যামিলি নিয়ে আসেন। এই বছরটা খুব স্পেশাল। আমার মাসিমনি কেয়া, মার ছোট বোন, বিয়ের তিন বছর পর এই প্রথম পুজোয় এসেছে গতকাল রাতে। আজ পঞ্চমী। বংশীদা এ্যাজ ইউজুয়াল এখনও ঠাকুর কমপ্লিট করেনি, বুম্বার সাথে বকে যাচ্ছে, ঠিক যেন জয় বাবা ফেলুনাথের ওপেনিং সিন।"

কথাগুলি জয়ের, ওর ভিডিওর ধারাভাষ্য। জয় পারুলের ছেলে, চমৎকার ভিডিও করে। চলচ্চিত্র নিয়ে পড়ার খুব শখ। তবে বাবা মিহির তাকে এমবিএ পড়ার জন্য বিদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। জয় এবারের পুজোয় ভিডিও করছে এই উৎসবের। জয়ের বড় মামার কন্যা শম্পার সাথে তাঁর একটা সম্পর্ক রয়েছে, দাদা দিদির বাইরেও একটা সম্পর্ক। পারুল চমৎকার গান করে, আজকাল এফ এম রেডিওতেও তাঁর গান বাজে। বুম্বার বাবা এই বাড়ির ছোট ছেলে। উনার নামটা ঠিক মনে পড়ছে না। ভালো চাকরি করতেন, ভালো মাইনেও পেতেন। বিয়ে করেছেন বড়লোক বাড়ির "স্পয়েল্ড" এক কন্যাকে। তা মনিকার একটু ভাব আছে বটে তবে তাঁর কিনা হার্ট অফ গোল্ড। নিয়ম করে এই বাড়ির কর্ত্রীর সেই একমাত্র খোঁজ খবর নেয়। কিছুদিন হল ছোট ছেলের চাকরি নেই। বেতন নেই। ধার কর্জ করে চলছে। স্ত্রীকে বলেন নি বটে, তবে মনিকা জানেন। কিন্তু কষ্ট পাবেন বলে কেউ কাউকে এই নিষ্ঠুর সত্য প্রকাশ করতে চান না।

পারুল এই বাড়ির বড় কন্যা, এই গল্পের অন্যতম মূল পাত্রী। ছোটবেলায় এই বাড়িতে আশ্রয় পাওয়া পিসতুতো ভাই শিশিরের সাথে প্রেম ছিল তাঁর। তবে চালচুলো নেই বলে প্রেমের কথা চাউর হতেই এ বাড়ির হর্তাকর্তারা তাঁকে খেদিয়ে বের করে দেন, পারুলের ঘরের দরজায় খিল দিয়ে। পরে পারুলের বিয়ে হয় এক ব্যাবসায়ির সাথে যিনি প্রায়ই পারুলকে এ নিয়ে কথা শোনান। রাইম করে ব্যাঙ্গ করেন, ভাইয়া হুয়া সাঁইয়া! এবারের পুজায় বিদেশে থাকার কারণে তিনি এখানে আসেন নি। এসবই জয় জানে। মার অসহায়ত্ব তাঁকে পীড়া দেয়।

শম্পার বাবা এ বাড়ির বড়ো ছেলে। মার সাথে এবারের পুজায় তারা একটি বিষয়ে সিদ্ধান্তে আসতে চান। কলকাতার অদূরে তাঁদের বাড়ি। এত বড় বনেদি বাড়িতে মা ছাড়া আর কেউ থাকেন না। তাঁকে দেখারও তেমন কেউ নেই। এক উঠতি ব্যাবসায়ি যিনি কিনা আর কেউ নন, স্বয়ং শিশির, এই বাড়ির দাম বলেছেন কুড়ি লাখ।বাড়ি বেচার ব্যাপারে সকলেরই কম বেশী আগ্রহ আছে। এক সময় যাঁর কিছুই ছিলনা, এখন তিনি লব্ধ প্রতিষ্ঠিত প্রোমোটার। এই বাড়ি কেনার ব্যাপারে অনেকের সাথে কথা বলেছেন, চিঠি দিয়েছেন। এবারের পুজোয় এই বাড়ি বিক্রি নিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছানো দরকার। অভিমানী পারুল ভুলতে পারেন নি অতীত। যাকে এই বাড়ি থেকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছিল তাঁর কাছে বাড়ি বিক্রি করতে তাঁর আত্মসম্মানে বাঁধে। মনের গহীন কোনে প্রাক্তন প্রেমিকের প্রতি এক ধরণের বেদনাও কি বহন করেন পারুল? একদিন শিশির আসেন এই বাড়িতে। দেখাও হয় পারুলের সাথে। খুব কম কথা হয়, কিন্তু নিস্তব্ধতা জানান দিয়ে যায়, স্মৃতির ভার অসহ কিন্ত অমলিন।

বাড়ির ছোট কন্যা কেয়া। এই গল্পের আরেক প্রধান পাত্রী। প্রেম করে বিয়ে করেছেন আর্ট কলেজে পড়া সুদর্শন যুবককে। ছেলে রাজনীতি করতেন। চাল চুলো নেই তেমন। কেয়ার অনুরোধে রাজনীতি ছেড়েছেন ঠিকই তবে মদের ভেতর পেতে চান শান্তির খোঁজ। বিয়েতে কারো মত ছিলনা বলে এই বাড়িতে তাঁর যাতায়াত নেই। এটাই তাঁদের এ বাড়িতে একসাথে প্রথম পুজো। কেয়া চাকরি করেন। সংসার চলে তাঁর টাকাতেই। ইদানিং এই দম্পতির ঝগড়া চরমে উঠেছে। ছাড়াছাড়ি হতে কেবল বাকি। পঞ্চমীতে এসেছেন বটে জামাই, ঝগড়া করে চলে যান পরের দিনই। বাড়ি বিক্রি হয়ে গেলে তাঁদের ডিভোর্স হলে কেয়া থাকবেন কোথায়? এ নিয়েও বাড়ির মানুষের টেনশন রয়েছে। অষ্টমীর দিন জয়ের ভাষ্যমতে, "আজ অষ্টমী। সকাল থেকে আকাশ পরিষ্কার। বাড়িতে যথারীতি লোকজন, হৈ চৈ, অষ্টমীর অঞ্জলি হয়ে গেছে। আচ্ছা, মেসোমনি যে তিন বছর পর পুজোর ভেতর প্রথম এসেছিল আবার চলেও গেল পুজোর আগে আর তাতে করে আলটিমেটলি পুজো বাড়িতে যে কোনও ডিফারেন্স হলনা সেটা কি উৎসবের নিয়ম না জীবনের?" তবে জয়ের মেসোমনি এসেছিলেন। অষ্টমীর দিন জ্বর মাথায় নিয়ে দিব্যি এসেছিলেন এই বাড়ির ছোট জামাই। আর তাতেই হয়ত শেষ রক্ষা হয়েছিল তাঁদের বৈবাহিক জীবনের।

এসব নিয়েই আটপৌরে সাদাসিধে এক যৌথ পরিবারের গল্প ও চলচ্চিত্র "উৎসব।" সাধারণ কিছু ঘটনার সমষ্টি, কিন্তু অসাধারন উপস্থাপনার নৈপুণ্যে ভাস্বর। এ এমন একটি চলচ্চিত্র যা দেখতে শুরু করলে আর ওঠার জো নেই। সহজ সরল উপস্থাপনা, যেখানে ঘটনার ঘনঘটা নেই কিন্তু আছে ঋজু এবং টানটান উপস্থাপন। এইযে পুরনো বাড়ি বেঁচে দিয়ে বড় শহরে ফ্ল্যাট উঠছে, শেকড় ছিঁড়ে ছিঁড়ে যাচ্ছে প্রোমোটারদের কাছে, আবার এরই মাঝে চলছে সম্পর্কের পালাবদল, ভাঙ্গা গড়া, তারপরেও জীবনের বহমান ধারা থেমে নেই। সেখানে উৎসব আছে, আনন্দ আছে, আছে একসাথে বেঁচে থাকার আকুতি।

উৎসব মুক্তি পায় ২০০০ সালে। এর আগেই ঋতুপর্ণর সিগনেচার চলচ্চিত্র উনিশে এপ্রিল, দহন, অসুখ এবং বাড়িওয়ালী মুক্তি পেয়েছে। ইতিমধ্যেই ঋতুপর্ণ চলচ্চিত্র জগতে নিজের আসন পাকা করে ফেলেছেন। তাঁর চলচ্চিত্রের বিশিষ্ট ভাষা, নির্মাণের নিজস্বতা মধ্যবিত্ত বাঙালি দর্শকদের আকৃষ্ট করে ফেলেছে। তাঁর চলচ্চিত্রে সঙ্গীতের ব্যাবহার, সংলাপের চাতুর্য, এবং বাঙময় আবহ নিরমানে পারদর্শিতা আর পরিমিতি সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। আর তাঁর সব বৈশিষ্ট্য এই "উৎসব" এ এসে যেন পূর্ণতা পেয়েছে। উৎসব দেখে সত্যজিতের শাখা প্রশাখার আবহ মনে আসে। দাম্পত্য জীবনের ভাঙ্গা গড়া, সম্পর্কের উত্থান পতন, পরিস্থতির অসহায়ত্ব, উৎসবের আবহ এবং জীবনের চলমান প্রক্রিয়া এমন দক্ষ শিল্পির মত ফুটিয়ে তুলেছেন ঋতুপর্ণ যে বিস্মিত হতে হয়। আর কি চমৎকার অভিনয়ই না করেছেন সবাই। কে জানতো ঋতুপর্ণা এমন অভিনয় করতে পারেন? মমতা, প্রসেঞ্জিত, মাধবী, বরুণ চন্দ, সবাই যেন নিজেকে ছাড়িয়ে গেছেন। সংলাপ নির্ভর এই চলচ্চিত্রকে অভিনয় দক্ষতায় সবাই যেন মহিমান্বিত করেছেন। ঋতুপর্ণ নাকি তাঁর চলচ্চিত্রে নারী চরিত্রগুলিকে নতুন করে বিশিষ্ট ভাবে উপস্থাপন করেছেন। সেটা উৎসব চলচ্চিত্রে পারুল এবং কেয়ার চরিত্র দেখলে বোঝা সম্ভব। দুটি চরিত্রই যেন পুরো চলচ্চিত্রে দ্যুতি ছড়িয়েছে। আমরা বিস্ময়ের সাথে দেখি তাঁদের সমর্পণ, তাঁদের আকাংখা, তাঁদের প্রেম, তাঁদের অটুট আত্মসম্মান বোধ। তাঁদের প্রেমে কোলাহল নেই, আছে বিসর্জন, আছে সম্মান পাবার দুর্মর আকাংখা। এই শক্তি যেন তাঁদের অন্তর্গত।

স্রষ্টার মৃত্যু নেই। আছে প্রস্থান। ঋতুপর্ণ তাঁর সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে আমাদের মাঝে বর্তমান থাকবেন। বাঙালি তাঁর চলচ্চিত্র দেখবে উৎসবে, আনন্দে, বেদনায়। আর থাকবে তাঁর লিখিত চলচ্চিত্রের অসামান্য কিছু সংলাপ। এমনই একটি সংলাপ শুনি উৎসব চলচ্চিত্রে বাড়ির ছোট জামাইয়ের কণ্ঠে দশমীর দিন ভাসানের পর।

"সিগ্রেট কিনতে গিয়ে ঘাটের কাছে দাঁড়িয়েছিলাম কিছুক্ষণ সন্ধেবেলা । কত ঠাকুর ভাসান গেল, একটার পর একটা, একেকটা ঠাকুর ভাসান যায় আর কতগুলো ছেলে ঝাঁপিয়ে কাঠামোগুলিকে জল থেকে তুলে নিয়ে আসে। সামনের বছর ওরই ওপর নতুন করে ঘর বাঁধবে। সাইক্লিং, রিসাইক্লিং। দি লেটেস্ট থিওরি অফ এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ।" কেয়া জিজ্ঞেস করে, "তাঁর সাথে দুর্গা পুজোর কি সম্পর্ক?" উত্তরঃ "বেসিক্যালি মিন টা তো এক। খড় আর বাঁশটা বাদ দিলে বাকী থাকে জল আর মাটি। সেই জল আর মাটি দিয়ে ঠাকুর গড়ে ভাসান দিলে আবার জল আর মাটি হয়ে যায়। কন্সট্রাকশন, ডিকন্সট্রাকশন। কন্সট্রাকশন, ডিকন্সট্রাকশন। কন্সট্রাকশন............"


মন্তব্য

মসীলক্ষণ পণ্ডিত এর ছবি

বাঙলা চলচ্চিত্রে কত নতুন নতুন, অথচ যেসব আমাদের নিত্যদিনের, বিষয়কে কত শৈল্পিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করেছেন ঋতুপর্ণ ঘোষ । কত সাবলীলভাবে সম্পর্কগুলোর ভিতরে ঢুকে দেখিয়েছেন । তাঁর চলে যাওয়াটা খুব অসময়ে হল !
চমৎকার লেখাটির জন্য ধন্যবাদ ।

মনি শামিম এর ছবি

ধন্যবাদ মসীলক্ষন পণ্ডিত। আপনার লেখা কই? লেখা ছাড়ুন জলদি।

মসীলক্ষণ পণ্ডিত এর ছবি

সকলেই এত এত লিখেছে, আমি পড়ে শেষ করতে পারি না । পড়তে বসেই সময় শেষ, লিখব কখন ?! তাছাড়া আমি ভীষণ আইলসা (প্রধানতম কারণ) ! দেঁতো হাসি

মনি শামিম এর ছবি

তারপরেও লিখবেন। পড়ার বিষয়গুলি, জানার বিষয়গুলি বিনিময় না করলে কেম্নে কি? আলসেমি ঝেড়ে একটু জেগে উঠুন দিকিনি এবার!

মসীলক্ষণ পণ্ডিত এর ছবি

ইয়ে মানে ... জেগে উঠি না যে একেবারে তা নয় । জেগে উঠে ভাবি কী কী লিখব, ভাবতে ভাবতেই ঘুম এসে যায় হাসি এত ঘুমাতে পারি আমি ! খাইছে

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

তন্ময় হয়ে দেখছিলাম ছবিটা কোন এক চ্যানেলে, শেষের দিকে এসে চলে গেল কারেন্ট। দর্শককে একটুও বোর না করে এমন আকর্ষনীয় ঢংয়ে গল্প বলা আর কার ছবির দেখেছি ঠিক মনে করতে পারছি না। আপনার মূল্যায়নও হয়েছে অসাধারন!

আব্দুল্লাহ এ.এম.

মনি শামিম এর ছবি

ধন্যবাদ আব্দুল্লাহ। ভালো থাকুন। উৎসব আসলেই তন্ময় হয়ে দেখার মতন চলচ্চিত্র।

কাজি মামুন এর ছবি

আমার দেখা ঋতুপর্ণের প্রথম ছবি। টিভিতে দেখেছিলাম। আর বুঝে গিয়েছিলাম, কেন ঋতুপর্ণ এত বিখ্যাত!
ঋতপর্ণের অকাল মৃত্যুতে বাংলা চলচ্চিত্রের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল, যেমনটা হয়েছিল তারেক মাসুদের অকাল মৃত্যুতে! যেমনটা হয়েছিল জহির রায়হানের মৃত্যুতে! আশ্চর্য হলেও সত্য, এরা অকালে চলে গেলেও যে কটি কাজ করে গিয়েছেন, তাই চিরদিন বেঁচে থাকবে, বাঙ্গালির মননশীলতার অফুরন্ত প্রেরণা হয়ে !

মনি শামিম এর ছবি

কাজি মামুন। কি অদ্ভুত এক ব্যাপার বলুন তো? উৎসব আমারও দেখা ঋতুপর্ণের প্রথম চলচ্চিত্র। টিভিতে দেখা। এই চলচ্চিত্র দেখার পরই তাঁর আর বাকি চলচ্চিত্রগুলি একটানে দেখা শেষ করি।

তারেক অণু এর ছবি

দেখি নাই, ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করছে ।

নেটে লিঙ্ক থাকলে ইনবক্স করেন।

মনি শামিম এর ছবি

ইউটিউবে দশটি পার্ট এ ভাগ করে দেয়া আছে। টরেন্ট এও পাবি মনে হয়। দেখিস। উৎসব ঋতুপর্ণর অমর সৃষ্টি।

মনি শামিম এর ছবি

এই চলচ্চিত্রের সঙ্গীত নিয়ে কিছুই বলা হয়নি দেখে একটু খারাপ লাগছে সবজান্তা। আপনি জানেন কিনা জানিনা, শ্রাবণী সেন মূলত এই চলচ্চিত্রে প্রথম প্লে ব্যাক করেন, অমল ধবল পালে লেগেছে গানটি গেয়ে। এবং এরপরই রবীন্দ্র সংগীতে তিনি জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। আর একটা ব্যাপার খেয়াল করেছি। জয়ের ধারাভাষ্য যতবার এসেছে, ততবারই মন উদাস করা যন্ত্রসঙ্গীতের ব্যাবহার দেখি এখানে। এক ধরনের করুণ রাগ ব্যাবহার করা হয়েছে মনে হয়। আর কন্সট্রাকশন ডিকন্সট্রাকশন এর সেই সংলাপটি আমারও খুবই প্রিয়। এইজন্যই পুরো সংলাপটি এখানে জুরে দিয়েছি। এই সংলাপের আড়ালেও যন্ত্রসংগীতের অভিনব একটা যোগ তৈরি করা হয়েছে। মনে হচ্ছে যেন কবিতা। সঙ্গম হচ্ছে, ঠাকুরের ভাসান যাচ্ছে, সংসারে-জগতে নির্মাণ বিনির্মাণের খেলা চলছে, এ যেন এক অবিরাম যাত্রা, যার কোনও শেষ নেই।

সবজান্তা এর ছবি

সিনেমাটা শেষবার দেখেছিলাম মনে হয় বছর তিন চার আগে, কিছুই আর মনে নাই অতো ডিটেইলে। তবে অমল ধবল পালে লেগেছে শুনে এতো মুগ্ধ হয়েছিলাম! আর শ্রাবণী সেনের নামও সম্ভবত সে-ই প্রথম শোনা।

অবশ্য প্রায় একই মাত্রার মুগ্ধতা ছিলো অর্পিতা পালকে দেখার পর- দুর্দান্ত সুন্দরী!

সবজান্তা এর ছবি

এই সিনেমাটা আমার ভীষণ পছন্দের। এর অন্যতম কারণটা একান্ত ব্যক্তিগত, সিনেমার সঙ্গে নিজেকে রিলেট করতে পারা। আমার পৈত্রিক বাড়িতে, মানে আদিভিটায়, দুর্গা পূজার চল প্রায় দেড়শ বছর ধরে (মাঝে স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং তার পরবর্তীকালীন এক-দুই বছর বাদে)। ব্যক্তিগত বিশ্বাসে নিরীশ্বর হলেও, উৎসবের আমেজ আমাদের বিশাল একান্নবর্তী পরিবারে যে আনন্দ এখনো নিয়ে আসে প্রতিবছর, তার ছাপ আমি সিনেমাটিতে দেখেছিলাম। তাই শুরুতেই বেশ আপন মনে হয়েছিলো।

ঋতুপর্ণের প্রথম জীবনের এই সিনেমাগুলির একটা চমৎকার দিক হলো, সাধারণ মানুষের জীবনের জটিলতাগুলি নিয়ে তিনি কাজ করেছেন। এই দ্বন্দ্ব, জটিলতাগুলি প্রায় সব পরিবারেই দেখা যায়- তাই সিনেমা যতোই এগুতে থাকে, নিজেকে আরো বেশি খুঁজে পাই।

লেখার একদম শেষে যে লাইনটা লিখলেন- কনস্ট্রাকশন, ডিকনস্ট্রাকশন... এইটা সম্ভবত সিনেমাতে আমার সবচে পছন্দের দৃশ্য এবং সংলাপের একটা। যতোদূর মনে পড়ে এই কথাটুকু সঙ্গমকালীন সময়ে বিড়বিড় করতে থাকে প্রসেনজিৎ। এই দৃশ্যটা আমার কাছে অসাধারণ রকমের গভীর মনে হয়েছে। তৈরি করা, এবং ভেঙ্গে ফেলে ভিতরটুকু দেখা (ডেস্ট্রাকশন না কিন্তু!)। এই সিনেমার ব্যাপারে ভাবলে এখনো এই দৃশ্যটার কথা আমার মাথায় আসে।

পছন্দের পরিচালক এবং সিনেমা নিয়ে লেখার জন্য ধন্যবাদ। লেখা ভালো লেগেছে।

বন্দনা এর ছবি

খুব ভাললাগা একটা মুভি, আপনার রিভিউ ও ভাল লেগেছে।

মনি শামিম এর ছবি

ধন্যবাদ বন্দনা। আসলে ঠিক রিভিউ তো লিখিনি। অনেকটা স্মৃতিচারণ বলতে পারেন। প্রিয় পরিচালকের জন্য খানিক সম্মান প্রদর্শনের আকাংখা কার না জাগে, বলুন?

প্রদীপ্তময় সাহা এর ছবি

হাততালি

মনি শামিম এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

"উৎসব" আমার খুবই প্রিয় একটা সিনেমা। আমি এটা প্রথম দেখি মনে হয় দুই বা তিন বছর আগে। ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি থেকে ফেরার পরপরই। এ কারণেই বোধ হয় কাহিনির সাথে খুব করে রিলেট করতে পেরেছিলাম নিজেকে। উৎসবমুখর পরিবেশের মাঝেও একটা পরিবারের সদস্যদের অন্তর্দ্বন্দ্ব, ছোট-বড় সব সমস্যা ঋতুপর্ণ এত বাস্তবসম্মতভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলেন যে একবারও মনে হয়নি আরোপিত কোনো কাহিনি দেখছি।

রিভিউটা ভালো লাগল।

মনি শামিম এর ছবি

ধন্যবাদ অতন্দ্র প্রহরী।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।