বন ও কোলনঃ জার্মানিতে ঘুরাঘুরি-২

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: বুধ, ১৮/০৭/২০০৭ - ৭:৩৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পরেরদিন নাস্তাটা হলো জমজমাট। টেবিল উপচে পড়ছিলো নানারকম খাবার। জার্মানের খুব সুস্বাদু বিচিত্র রকমের ব্রেড, এর সাথে বিভিন্ন রকমের চিজ, প্যাটে, সালামি খেয়ে আমরা দিনের যুদ্ধের জন্য তখন তৈরি। কিন্তু এ্যানাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে জিগি। তাই আমাদের সাথে যাবে শুধু হেলেন। auto দল দেখে আর বেড়ানোর লোভে রোজিও কাজ বাদ দিয়ে ভিড়ে গেলো। ওরাই এখন আমাদের গাইড। কিন্তু জার্মানির রেলপথ ও সময়সূচি সম্পর্কে তাদের ধারণা কম। বেশিরভাগ সময় তারা গাড়িতেই ঘুরাঘুরি করে। তবু হেলেন-রোজিই আমাদের ভরসা। তবে যখন দেখলাম জার্মানিতে লেখা ট্রেনের টাইমটেবিল ওরা ঠিকমত পড়তে পারছে না তখনই বুঝে গেলাম দুশ্চিন্তা নিয়ে দুশ্চিন্তার দিন আজ না।

বন হয়ে ভুলভাল ঘুরে আমরা শেষে কোলন পৌঁছালাম। ডয়েচে ভেলের ফারুক ভাই আর মাসকাওয়াথ আহসান ছিলেন স্টেশনে। আড্ডা জমে গেল স্টেশনেই। আড্ডা ভেঙে সুরভি, আমি আর রোজি গেলাম শহর দর্শনে। বাকীদের আড্ডা নদীতীর ঘুরে ক্যাফেতে। শহর মানে সেই জোড়া গির্জার সামনের খোলা জায়গা। হাতে খুব বেশি সময় নেই। auto দর্শনীয় স্থান হিসেবে রোমান-জার্মান একটা যাদুঘরকেই আমরা বেছে নিলাম। গুহাবাসী মানুষ যে কত সহস্র বছর আগে অদ্ভুত সুন্দর সুন্দর ডিজাইনের অলংকার, তৈজসপত্র তৈরি করেছে দেখে লজ্জা পেলাম। গুহাবাসী মানুষকে হরে-দরে বন্য বর্বর বলাটা বন্ধ করতে হবে। ওদের তৈরি কিছু অলংকার তো এখনও বাজারে বেরুলে কাড়াকাড়ি পড়ে যাওয়ার কথা। অলংকার, বাসন-কোসন, বা হাতিয়ারের ডিজাইন যা এখনও বাজারে চলে তাতো দেখি গুহা আমলের।

auto যাদুঘর থেকে বের হয়ে দেখলাম পর্যটকে এলাকা ভরে গেছে। খোলা জায়গা পাওয়া জ্যাজ দিয়ে গলা সাধছে একদল তরুণ। রিকশাও দেখা গেল গোটাকয়েক। auto স্কুল থেকে শিশুদের দল এসেছে। ছোট-খাটো বিভিন্ন ভাস্কর্যের সামনে তাদের দাঁড় করিয়ে বক্তৃতা দিচ্ছে তাদের শিক্ষকেরা। পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট এসেছিলেন এই শহরে, তার বিশাল ছবি এখনও ঝুলছে। কার্ল মার্কসের দেশে খৃস্টধর্মের মেলা দেখে বুকের ভেতরে সূক্ষ্ম একটা খোঁচা লাগলো। ফরহাদ-মণি সিংহকে মাফ করে দিলাম। auto বেঁধে দেয়া এক ঘন্টা ফুরাতেই আমরা যুক্ত হলাম মূল দলের সাথে। ফারুক ভাইয়ের কল্যাণে দুপুরের খাবার হলো তাজমহল রেস্টুরেন্টে। বাঙালি খাবার। ফারুক ভাই বিদায় নিলেন তারপর। মাসকাওয়াথের নেতৃত্বে আমরা আবার ট্রেনে চড়লাম বনে যাবো বলে।

auto উদ্দেশ্য ছিলো বিথোফেন মিউজিয়ামে যাওয়া। কিন্তু পাঁচটা বাজতেই সেটা বন্ধ। মিউজিয়ামের জানালা গলে ভেতরের দৃশ্য আর ফুটপাথে বিথোফেনের ছবিই ভরসা। কাছেই একটা টাউন কাউন্সিলের বিল্ডিং, ফল-সব্জির বাজার। জার্মান শহরগুলো একেবারেই কাঠখোট্টা, যুদ্ধবিধ্বস্ত। সে তুলনায় রাজধানীতে চোখ কিছুটা আরাম পাচ্ছিল। বন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশ ঘেঁষে আমরা নদীর তীরে একটা উঁচু জায়গায় গেলাম। auto নিচের নদীকে সাক্ষী রেখে মাসকাওয়াথ আমাদের জন্য নিলো জার্মানের স্বাদু বিয়ার। নদীতীর, সন্ধ্যারাতের সূর্যের নরোম আলো, মৃদু বাতাস; আমরা ভুলে গেলাম ঘড়ির সময়। auto

স্টেশনে ফিরেই আতংক দেখলাম হেলেনের চোখে। ছোট্ট শহর ইজালনে যাওয়ার পরের ট্রেন রাত এগারোটায়। মাঝরাত পার হয়ে যাবে পৌঁছাতে পৌঁছাতে। ইজালনের কাছাকাছি আরেকটা শহরে যাওয়া যায় ঘুর পথে। দৌড়ে গিয়ে উঠলাম আমরা ট্রেনে। ট্রেনের কর্মচারি যা বললো তার মানে দাঁড়ায় আমাদের সিদ্ধান্ত ভুল। আবার লাফিয়ে নামলাম। ট্রেন টাইমটেবিল দেখে আবার হিসাব কষে যখন সিদ্ধান্ত নিলাম না এই ট্রেনেই যেতে হবে, তখন ট্রেনের দরজা বন্ধ হয়ে গেল।

auto টিকেট কাউন্টারে পরামর্শ দেয়ার কেউ নেই। ট্রেনের ম্যাপ নিয়ে নিজেরাই অংক কষে চড়ে বসলাম একটা ট্রেনে। কিন্তু কোনো অংকই কাজ দিলো না। ইজালনের কাছাকাছি একটা বড় স্টেশনে যখন আমরা পৌঁছালাম তখন রাত একটা। ভাগ্য আমাদের খুব ভালো যে একটা সেভেন সিটার ট্যাক্সি পাওয়া গেলো। তবে সারাদিনের ট্রেনে ঘুরাঘুরিতে যা খরচা হয়েছিলো ট্যাক্সি ড্রাইভারই একাই সমান নিয়ে গেলো। auto ঘরে ফিরে দেখলাম আমাদের জন্য না হোক বউয়ের জন্যও দুশ্চিন্তা করছিল না জিগি। ভুলভাল গাইড হওয়ার প্রায়শ্চিত্ত করতে হেলেন আর রোজি ঝাঁপিয়ে পড়লো রান্নাঘরে। ফলাফল আধঘন্টার মধ্যে খাবার টেবিল আবার ভরে উঠলো খাবারে।


মন্তব্য

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

ধুসর বাক্সগুলোর জায়গায় ছবি থাকার কথা। সম্পাদনা ক্লিক করলে তাই দেখায়। কিন্তু এখানে ছবি দেখা যাচ্ছে না।
এ্যাডমিনের জন্য অপেক্ষা ছাড়া উপায় কি।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

হাসান মোরশেদ এর ছবি

এয়া কেয়া হাল হে?
-----------------------------------
'পড়ে রইলাম বিধির বামে,ভুল হলো মোর মুল সাধনে'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ঠিক করে দিলাম। এ নিয়ে একটা ছোট্ট টিউটোরিয়াল প্রকাশ করব।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

ছবি একটা হারিয়ে গেছে দেখছি। মানও বেশ খারাপ। তবু দেখা যাচ্ছে এই অনেক। ধন্যবাদ এসএম৩। ছবির ক্যাপশনগুলো দেখছি না।
শুধু টেকস্ট নিয়েই সচল থাকতে হবে দেখছি।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

নজমুল আলবাব এর ছবি

কত ঘুরা ঘুরেরে...

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

পড়ে ভালো লাগলো। সাথের ছবিগুলোও।
_________________________
'আজকে না হয় ভালোবাসো, আর কোন দিন নয়'

টুটুল এর ছবি

ভাবতেছি পাসপোর্ট ও করব না... এমন সুন্দর বর্ণনা পড়া মানেই নিজের উপস্থিতি টের পাওয়া

ধন্যবাদ
___________________________
"Intelligence is like an underwear. It is important that you have it, but not necessary that you show it........"

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

জার্মান রেলের ব্যবস্থাপনা তো আরো ভালো হওয়ার কথা। তবে কানেকশন বা ট্রেনের সময় দেখার কাজটা বেরোনোর আগে ইন্টারনেটে দেখে নিলে হিসেবে সুবিধা হয়। এছাড়া প্রায় প্রত্যেক স্টেশনেই ইনকর্মেশন আর টিকেটের জন্য ভেন্ডিং মেশিন থাকে(বেস্ট অপশন)। প্লাটফর্মেও কাগজে টাঙ্গানো সময়সূচী আছে। একটু চটপটে হলে ইনফর্মেশন সব হাতের নাগালে। আপনাদের গাইডকে ফাইন করা হোক। হাসি

আর ছবির কোয়ালিটি খারাপ আসার জন্য ফাইন করা হবে এসএম৩ কে।

তবে আলটিমেটলি তাদের সব অপরাধই মাফ করা হল এত ঝরঝরে একটা ভ্রমণ কাহিনী আমাদের হাতে পৌঁছাতে অবদানের জন্য।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

অতিথি এর ছবি

জার্মান ট্রান্সপোর্ট ব্যসস্হা আমার দেখা সবচে বেষ্ট। জাপানের পরেই এদের অবস্হান। জার্মানিতে ভ্রমনের জন্য বাস,ট্রাম,আন্ডারগ্রাউন্ড সহ অন্যান্য ট্রেন বেশ ভালো। গাড়ি নিয়ে ঘুরতে গেলে কিছুই দেখা যায় না। এদের প্রায় প্রত্যেকটা শহরেই বাস,ট্রাম,আন্ডারগ্রাউন্ড, ট্রেন পাওয়া যায়।

বন তো এখন আর রাজধানী নেই। কোলনে দেখার অনেক কিছু আছে।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- সবই দেখলাম, পড়লাম এবং জানলাম, আর ছোট্ট একটা হ্রস্বশ্বাস ছাড়লাম!!
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

অমিত এর ছবি

জার্মান বিয়ার !! ( এই কথাটার ব্যাকগ্রাউন্ডে একটা করুণ সুর বাজবে)
____ ____________________
suspended animation...

ফারুক হাসান এর ছবি

কত ঘুরা ঘুরেরে...

-----------------------
এই বেশ ভাল আছি

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

ফাহা, ঘুরার কি দেখলেন। আগামী সামার আসতে দেন। জিপসি হয়া যামু।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

সুমন চৌধুরী এর ছবি

সামার তো চলিতেছে...
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

এই সামারে লন্ডনের বৃষ্টিতে বন্যা হয়ে গেলো।
ইউরোপে তো সূর্যের তাপে মানুষ মারা যাচ্ছে।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

থার্ড আই এর ছবি

মাশকাওয়াথ ভাই প্রায়ই বলতেন,জার্মানীতে যেতে, সময় হয়না। এবছর না হোক নেক্স ইয়ার অবশ্যই যাবো। মারদাঙ্গা লিখা টা আকর্ষন বোধ আরো বাড়িয়ে দিয়েছ। ছবি গুলো লিখার মান অনেক বাড়িয়েছে।

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।