কলকব্জা সহ গল্প : শিরোনাম পাঠকের জন্য উন্মুক্ত

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: রবি, ২২/০৭/২০০৭ - ২:০৮পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

auto

১.
এই আয়নার সামনে দাঁড়ালে লুই বোর্হেসের কথাটাই পরিত্যাজ্য মনে হওয়ার সম্ভাবনা নিরানব্বই ভাগ। জ্বি না, লুই বোর্হেস এই গল্পের চরিত্র না।তিনি একজন লেখক। তার নাম লেখার শুরুতেই দেয়ার কারণ গল্পের কাহিনী না। বরং গল্পটা পাঠকের কাছে পৌঁছানোর গেরিলা কৌশল এটা । যে সাহিত্য সাময়িকীর পাতার জন্য এই গল্প আমি লিখছি তার সম্পাদক গল্প লেখককে টেবিলের সামনে বসায়ে অতি অবশ্যই বোর্হেস নিয়া দুইটা কুইজ জিজ্ঞেস করবেন। তারপর একটা যাদুবাস্তব হাসি দেবেন। সেই হাসির অর্থ হলো বোর্হেস পড়ো না - গল্পকার হতে আসছো, গল্প লেখা এতো সোজা না চান্দু।

কিন্তু তিনি নিজেও যে বোর্হেস ঠিকমত পড়ছেন এইটা আমার মনে হয় না। তবে এই বিষয়ে বাহাস করলে তিনি চটবেন আর আমার গল্পের স্থান হবে ওয়েস্ট পেপার বাসকেট। নিজের গল্পের বিষয়ে নিষ্ঠুরতা আমার পোষায় না। তাই বোর্হেসের নাম দিয়াই বিসমিল্লাহ। তবে সরাসরি উদ্ধৃতি না দিয়া তার উদ্ধৃতির বিপক্ষে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিছি। তবে একশ’ ভাগ না বলে নিরানব্বই ভাগ বলছি। সমালোচকরা প্যাঁচ মাইরা ধরলে ঐ একভাগ হাতে থাকলো।

উদ্ধৃতিটা সরাসরি দেয়া যাইতো। ইংরেজি ভাষায় ইটালিকে বাঁকা কইরা। কিন্তু এতো সরাসরি দিলে নিজেরে মফস্বল কলেজের বাংলার পরফেসার মনে হয়। তারা লেখেন: শেলি বলেছেন, “Our sweetest songs are those that tell of our saddest thaughts.”।এক্কেবারে প্রশ্নোত্তরে উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা সাহিত্য। এইসব রচনা লেখক যেকোনো বিষয় নিয়া লেখতে গেলে প্রথমে বাণী চিরন্তনীর বই খুইলা একটা কোটেশন দেন। কোটেশনের সাথে পরে আর আলোচনার মিল খুঁইজা পাওয়া যায় না। তবে মিল না পাওয়াটাও একটা পোমো কায়দা। এই কায়দা গল্প লেখায়ও নাজিল হয়া গেছে।

পাঠকদের চেনাজানা কোটেশন হইলো ক্লিশে; গন্ধ করে। কোটেশনের বদলে কবিতার চরণ দিলে পাঠক আন্দোলিত হয় বেশি। লেখককের সম্পর্কে তার শ্রদ্ধা গিয়া কপালে ঠেকে। তবে পাঠ্যপুস্তকের চেনা জানা রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্তের কবিতা দিলে কিন্তু ফল উল্টায়া যাবে। দিতে হবে চে গুয়েভারা, হো চি মিন, কার্ল মার্কস এরকম কবিতা ছাড়া অন্যক্ষেত্রে বিখ্যাতদের অপ্রকাশিত পান্ডুলিপি’র লেখা। পাওয়া একটু কঠিন।

তবে বিকল্প একটা ব্যবস্থা আছে। নিজেই কবি ও কবিতা আবিষ্কার করা। অসম্ভব কিছু না। রবীঠাকুর বৈষ্ণব কবিতা লিখছিলেন ভানুসিংহ ঠাকুরের নাম দিয়ে। তারপর লুকাইয়া রাখছিলেন ঠাকুর বাড়ির লাইব্রেরিতে। ভলতেয়ার তো বহু ঠেলা ধাক্কার পর খ্যাতি, সম্মান পান ‘কাদিদ’ লেখে। তিনি ঘোষণাও দিছিলেন এটা জার্মান লেখক ড. রালকের বইয়ের ফরাসি অনুবাদ। পরে দেখা যায় এই নামে কোনো বই নাই, এমন কোনো জার্মান লেখকও নাই। অপ্রকাশিত পান্ডুলিপির বঙ্গানুবাদের খোঁজে কলকাতা যাওয়ার চাইতে এইটা সোজা। একটা গল্পে আমিও দিলাম এলাহী ভরসা কইয়া। শুরুতেই বোল্ড অক্ষরে একটা কবিতা; ল্যাটিন আমেরিকার শহীদ গেরিলা কবি এনরিকো গার্সিয়ার:

“দল বেঁধে আসছে হিংস্র হায়েনার দল/ জমাট অন্ধকারে যদিও সবই দৃষ্টির অতীত/ ভরা বন্দুক নিয়েও নি:শব্দ ঝিম মেরে থাকি/ মাত্রা গুনে শব্দ বদলাই সদ্য লেখা চরণের/ ডানের ঝোঁপেই আহত নিরস্ত্র কমরেড/ বিভ্রান্ত করে ভুল পথে পাঠাতে হবে ওদের/ নতুবা ঝাঁকে ঝাঁকে ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে আসবে হায়েনার ব্রিগেড/ শেষ আস্তানাও যাবে তাদের কামানের গোলায়/ সতর্ক চোখ-কান, গুলি ভরা বন্দুক/ তবুও হায়েনাদের চোখকে ভাবি রাতের জোনাকি/
বিপ্লব মানে ঠা ঠা গুলির উল্লাস নয়/ অস্ত্র নিশ্চুপ হলেই জানা যায় বিপ্লব সফল”।

কবিতার শেষে একটা তারকা চিহ্ন। নীচে টিকা। * এটাই শহীদ এনরিকো গার্সিয়ার শেষ কবিতা। ‘কমান্ডার সারাক’ নামে গেরিলা যুদ্ধে যাওয়া এই মেধাবী চিকিত্সক আহত কমরেডের জন্য ওষুধ আনতে গিয়ে ধরা পড়েন। বিনা বিচারে ফায়ারিং স্কোয়াডে সরকারী সেনাদলের হাতে তার মৃত্যু হয়।

গল্পটা ঐ সপ্তাহেই গেলো। গল্পের চাইতে টিকা অবশ্য বেশি হিট হইছে। আর পরের সপ্তাহে সম্পাদকের পীড়াপিড়িতে এনরিকোর পাঁচটা কবিতার অনুবাদও দিতে হলো। সাহিত্য সম্পাদক এখনও এনরিকোর কবিতা কৌশল নিয়ে আলোচনা করেন আমার সাথে। তবে অনুবাদগুলো মূল কবিতার প্যাশন সম্পূর্ণ আনতে পারেনি, এই অনুযোগও তিনি প্রায়ই আমাকে জানান। আমি কখনও তার কথায় সম্মতি জানাই কখনও জানাই। না। সম্মতিটা নির্ভর করে ঐ সপ্তাহে আমার লেখা ছাপা হয়া গেছে না হবে এইটার উপর।

সুতরাং এইবার আশা করি আমাকে পার করবেন লুই বোর্হেস ।

(চলবে?)


মন্তব্য

ঝরাপাতা এর ছবি

অবশ্যই চলবে। গেরিলা টেকনিক সফল হয়েছে।


রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

হাসিব এর ছবি

কথা ১১০% ঠিকাছে । বুগবুগ করে অনেক কাহিনীই মনে পড়ে সেটা আঙ্গুলের ডগায় চলে আসতেছে । ঝগড়া করার বা বাধানোর সময়ের অভাবে চাইপা গেলাম ।

আর ভালো কথা, আপনার জন্য রইলো

অরূপ এর ছবি

জাঝা

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

ঝরাপাতা, প্রথম পাঠক হিসেবেই আপনি বলেছেন চলবে। সুতরাং চালিয়েই দেবো ভাবছি। কিছু সমালোচনাও দরকার ছিল। কিছু বুদ্ধি পরামর্শ। পরের বার মন্তব্যে নির্ভয়ে দিতে পারেন।

হাসিব, চাইপা যাওনটা কি ঠিক। এই ইন্টারনেটের সুযোগে, ব্লগের চান্স নিয়া মনের কথাটাই যদি মনে কব্বর দেন তালে এতো খাটাখাটনির কি মানে হইলো। ক'ন ক'ন একটু গলা খাঁকারি দিয়া ঝাইড়া ঝুইড়া কন। দেখবেন হালকা লাগবো।
আর আপনার জাঝা কিন্তু অরূপ কপি করছে।

অরূপ, কপি করছো জাঝা!
বুঝবা হেসে মজা!
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

হাসিব এর ছবি

জিনিসটা অরূপকামালস্কির কপিরাইট । মাইরা দেওন হইছে ।


আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে

??? এর ছবি

আচ্ছা... জাঝা মানে কি?

নজমুল আলবাব এর ছবি
নজমুল আলবাব এর ছবি

সবাই উত্তম জাঝা দিতাছে। আমি পারিনাই। কেন পারলামনা? মন খারাপ এর প্রতিবাদে ফাঁকা একটা কমেন্ট দেয়া হল।

নজমুল আলবাব এর ছবি

এইটা কি? কেমনে এই জাঝা আসল? আমি দেইনাই? আল্লাহ এইটা কি জ্বিনের আছরররররররররররররররররর, আমি নাইইইইইইইইইইইইইইইই

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

হুমম।
সবাই দেখি উত্তম ঝাজা নিয়া পড়লো। উল্টায়া লেখলাম যাতে ফ্লাশ না করে। কিন্তু সুমন রহমানের মত আমারো প্রশ্ন এই শব্দযুগলের কি কোনো নির্দিষ্ট অর্থ আছে?

যাক ঝাজার কারণে আমার লেখা নিয়া কেউ মন্তব্য করে না। বিষয় কী?
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

হাসিব এর ছবি

জাঝাকাল্লাহ খায়রান
লিংক ১
লিংক ২


আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে

নজমুল আলবাব এর ছবি

বস, আপনেকি আগের বাড়ির বিষয় আসয় বিস্মৃত হয়েছেন? সেখানে প্রশংসা করতে গিয়ে যখন ভাষা খুজে পাওয়া যেতনা তখন কবি জারির এর আশ্রয় নেয়া হত। তিনিই এই শব্দবন্ধের পয়দাকারী হাসি

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

কবি জারীর তো দেখি এক কবিতা লেইখা বাংলার কাব্য-ইতিহাসে আসন পাক্কা করে ফেলেছেন।
এই বাড়িতেও তিনি সমান রঙিলা।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

একমাত্র ঝরাপাতা ছাড়া কেউ তাইলে এইটা চলার পক্ষে না।
তাইলে শুধু ঝরার জন্য আর পরের কিস্তি নামাইতে লাগতো না।

পরিশ্রমটা বাইচা গেলো। চোখ টিপি
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

অরূপ এর ছবি

আমি তো বাই ডিফল্ট পক্ষে ছিলাম
না লিখলে কইলাম গুল্লি

নজমুল আলবাব এর ছবি

পরের পর্ব না দিলে বড়ভাই খবর আছে কইলাম।

দ্রোহী এর ছবি

ওয়াও...


কি মাঝি? ডরাইলা?

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

আলবাব না হয় পত্রিকার সম্পাদক, খবর সে করতেই পারে।
অরূপ দেখি বিপ্লবী বিড়াল দিয়া হুমকি দেয়।

দ্রোহী পর্যন্ত ওয়াও বইলা আঁতকাইয়া পালায়া গেছে।
আমি কী করি?
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

অমি রহমান পিয়াল এর ছবি

এই শোমচৌরে কি আমি চিনি!


তোর জন্য আকাশ থেকে পেজা
এক টুকরো মেঘ এনেছি ভেজা
বৃষ্টি করে এক্ষুনি দে তুই
বৃষ্টি দিয়ে ছাদ বানিয়ে শুই


তোর জন্য আকাশ থেকে পেজা
এক টুকরো মেঘ এনেছি ভেজা
বৃষ্টি করে এক্ষুনি দে তুই
বৃষ্টি দিয়ে ছাদ বানিয়ে শুই

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

বিবাহের পর পিয়ালের একি হাল।
মানুষ চিনতে অসুবিধা হচ্ছে দেখছি।

মন্তব্য যদি লেখা নিয়া হয় তবে পরিষ্কার করেন।

আর যদি এইটা ছবি নিয়া হয় তবে তাও কন।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

এই সিরিজটা পড়ছি। চলুক।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।