জামিন-প্রার্থী মুক্ত অর্থনীতি শেষমেশ জনগণের কান্ধে

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: শনি, ২৭/০৯/২০০৮ - ৩:৪০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বাজার আর তার মুক্ততা নিয়ে এতকাল মুক্তবাজারের যেসব গুণমুগ্ধ অর্থনীতিবিদরা প্রেমগাঁথা লিখেছেন তারা এখন একটু ফাটকে আছেন। এতসব কাহিনী-কেচ্ছার পর বাজারকে কিনা এখন জনগণের জামিনে মুক্ত হতে হবে। বাজারের মান-সম্মান বোধহয় আর থাকলো না।

বুশ ও তার পারিষদ তেমন একটা পরিকল্পনা নিয়েই কংগ্রেস-সদস্যদের সাথে দেন-দরবার করছেন। ওবামা-ম্যাককেইনও নির্বাচনী বাক-যুদ্ধ স্থগিত রেখে আলোচনার টেবিলে বসেছেন।

অর্থনীতির জটিল ব্যাখ্যা বাদ দিয়ে বললে, মুক্ত বাজার বলতে আমরা বুঝি রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণহীন অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। যেখানে বাজার নিজেই নিজের ভালো-মন্দের দেখভাল করে। ভোক্তার চাহিদা আর সরবরাহের ওপর নির্ভর করে ওঠা-নামা করে দাম। অন্যদিকে দামের সাথে সঙ্গতি রেখে ওপর-নীচ করতেই পারে সরবরাহ ও চাহিদা। সব মিলিয়ে সিস্টেম হিসেবে বাজার নিজেই সয়ম্ভু তাতে রাষ্ট্রের নাকগলানো অপ্রয়োজনীয় – এই হচ্ছে মুক্ত বাজারের প্রবক্তাদের বুলি। মানতে আমাদেরও কোনো অসুবিধা নাই। কেউ নিজে চলতে পারলে তাকে পরাধীন করে লাভ কি। রাষ্ট্রের আরো নানা কাজ আছে।

সুতরাং লিম্যান ব্রাদার্স বা বড় বড় অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের কর্তারা কত বড় বড় বোনাস পকেটে ঢুকাচ্ছেন তা দেখে আমাদের চোখ টাঁটালেও আপত্তিও কিছু করি নাই। যার ধর্ম তার কাছে রাষ্ট্রের কী বলার আছে। কিন্তু সম্প্রতি এরকম প্রতিষ্ঠানগুলো যখন হুড়মুড় করে পড়তে শুরু করলো তখন দেখি বাজার দৌড়ে এসেছে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের কাছেই। জনগণের টাকা ঢেলে নাকি তাদেরকে বাঁচাতে হবে। মহামতি বুশ ও তার সাঙ্গোপাঙ্গোরা বিলিয়ন-বিলিয়ন ডলারের উদ্ধার পরিকল্পনাও তৈরি করে ফেলেছেন।

এই যে জনগণের কান্ধে এসব প্রতিষ্ঠান অকস্মাৎ সওয়ার হলো সেসব প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আগে কেন রাষ্ট্রকে টুঁ শব্দ করতে দেয়া হলো না। এসব প্রতিষ্ঠানের সিইওরা যে পকেটে ফি-বছর মিলিয়ন মিলিয়ন বোনাস পুরলেন সে মাল কি তারা আর বের করবেন না। অন্তত: এই নিদানের কালে। কিংবা রাষ্ট্র যদি ভবিষ্যতে এসব প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা-বোনাসের বিষয়ে খবরদারি করতে চায় তখন তারা না করবেন কী যুক্তিতে? অথবা জনগণের টাকা ঢেলে বড় বড় বেতনের কর্মকর্তাদের চাকুরি নিরাপদ করার পর তারা এসব ট্যাক্সের টাকায় বোনাস নেবেন কি না তা দেখবে কে?

কোনো কোনো মিডিয়া দেখি আবার মাটি খুঁড়ে বের করছে কোথায় কোন স্কুলে এসব প্রতিষ্ঠান কত দান করতো তার হিসাব। অর্থাৎ এসব প্রতিষ্ঠান যে মুনাফামুখি তা নয় এদেরও সামাজিক ভূমিকা আছে তার একটা চিত্র তুলে ধরার অপচেষ্টায় এখন মিডিয়ালারও নেমেছে। একই রসুনের কোয়া যে।

যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জীবনে খারাপ ও ভালো দুধরনের ঋতুই আসবে –এটাই বাস্তবতা। ভালো সময়ের মুনাফার কিছু ভাগ দিয়ে খারাপ সময় গুজরান করাটাই ভালো প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা। এতো অর্থনীতিতে আনপড় লোকদেরও ঠোঁটস্থ। কিন্তু মুক্তবাজারের ভ্যানগার্ড এসব প্রতিষ্ঠানরা সুসময়ের সব ঘি-মাখন চেটেপুটে খেলেন আর দু:সময়ে জনগণের কান্ধে তুলে দিলেন মুক্তবাজারের ইনজুরড বডি।
কোনো এক রিপাবলিকান মার্কিন সিনেটের তো উষ্মা প্রকাশ করে বললেনই, রাষ্ট্রকে এসব প্রতিষ্ঠানের ভুলের দায়িত্ব নিতে হবে কেন? আমরা কি স্যোসালিস্ট দেশ নাকি?

আহমেদেনিজাদ অবশ্য তালি বাজাচ্ছেন সার্কাস দেখে। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন এই শুরু হলো মার্কিনিদের পতনের সময়। তবে শুধু আম্রিকা নয় আমার উদ্বিগ্নতা জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য দরকারি অর্থ দিয়ে বড় বড় বাণিজ্য-বেসাতির এরকম ভর্তুকি দেয়ার চল শুরু করায়। যেখানে কৃষকদের ভর্তুকি দিতে গেলে আমাদেরকে বিশ্বব্যাংক শাসাতো – সেখানে লাটদেরকে অর্থ জোগান দেয়ার ক্ষেত্রে দেখি সুশীলরা নীরব। বরং উল্টা ধুয়া ধরেছেন যাতে এসব ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো ফের পরের ধনে পোদ্দারি করতে পারে।

সর্বশেষ খবর: বুশের রেসকিউ প্ল্যানে বাগড়া দিয়েছে রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্যরাই। ভেস্তে গেছে ওবামা-ম্যাককেইন আলোচনা।


মন্তব্য

তানবীরা এর ছবি

ভেস্তে যাক, পোদ্দারীর মজা টের পাক ঃ-}

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

হিমু এর ছবি

দ্য শক ডকট্রিনের লেখিকা নাওমি ক্লাইনকে দেখলাম বিল মার এর উপস্থাপনায় জনপ্রিয় টক শো রিয়েল টাইমে এসে একে "ক্রাইবেবি ক্যাপিটালিজম" বলছেন। সুদিনের সময় ডিরেগুলেশন করতে সরকারের ওপর চাপপ্রয়োগ, আর দুর্দিনে নাকে কেঁদে জনগণের ঘাড়ে চাপা।


হাঁটুপানির জলদস্যু

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

এ বোধহয় আদর দেখানো হয়ে গেলো। আহ্ণাদ করে কাঁদে না কাঁদে না বলার মত।
তবে পুঁজিবাদের ক্ষেত্রে এটাই বোধহয় রূঢ় সত্য যে, পুঁজিবাদে ব্যবসায় মুনাফা হলে তা ব্যক্তির, আর লোকসান হলে তা সমাজ বা রাষ্ট্রের।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন... ...সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

রণদীপম বসু এর ছবি

তবে পুঁজিবাদের ক্ষেত্রে এটাই বোধহয় রূঢ় সত্য যে, পুঁজিবাদে ব্যবসায় মুনাফা হলে তা ব্যক্তির, আর লোকসান হলে তা সমাজ বা রাষ্ট্রের।

একটিমাত্র বাক্যে পুঁজিবাদের চেহারার জুতসই প্রকাশ।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।