দিনের শ্লেট: ৩ অগাস্ট ২০০৭: পূর্ব লন্ডন

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: শনি, ০৪/০৮/২০০৭ - ১:৪১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

auto

১.
সপ্তাহের সাতদিনই তারা আছে। পাবের সামনে, ছাতার নীচে। ছাতা আরো বেড়ে আজ দেখি পাঁচটা হয়েছে। বাসা থেকে বেরুলেই চোখে পরে এই আড্ডার ফটোগ্রাফ। মহারাণীর মতো এরাও বেকার, সরকারের খাতায় আছেন। সারাদিন ধরে হাতে এক পাইন্ট বিয়ার। কাউকে চুমুক দিতে কখনও দেখি না। আড্ডাটা অবশ্য চলে হাউ-কাউ করে। পাব কথাটা এসেছে পাবলিক হাউস থেকে। সে বিবেচনায় পানের চেয়ে হল্লা বেশি হতেই পারে। আড্ডাটা এখন অবশ্য পাবের বাইরে। খোলা জায়গায়, ছাতা টানিয়ে। ভিটামিন ডি সেবন উদ্দেশ্য না। ইংল্যান্ডে পাব এখন ধূমপানমুক্ত। সুতরাং ধুঁয়াপায়ীরা খোলা হাওয়ায় নিকোটিন ছড়াচ্ছে এখন। ক’দিন পর এদের উপর এনভায়রনমেন্টাল ট্যাক্স বসবে। অন্তত: আমার ধারণা তাই।

২.
জাবড়ে ধরে চুমু খাচ্ছে এক যুগল। বাজির ঘর উইলিয়াম হিলের সামনে। বয়স ত্রিশ-চল্লিশের ঘরে। সচরাচর এমন দেখা যায় না। ভালবাসাবাসিতে টিনেজরাই বেপরোয়া। পোষাক দেখে বুঝা যাচ্ছে দারিদ্র্য রেখার এক সুতা উপরে আছে এরা। বাজির ঘোড়া জিতে গেছে বলে হয়তো এমন উচ্ছাস। ঠিক এই দৃশ্যকে ব্ল্যাক আউট করে চোখের সামনে দিয়ে চলে গেলেন একজন বুরখা পরিহিতা। শুধু চোখটুকু দেখেই বুঝতে পারছি স্বজাতির। টিশার্ট জিন্স পরা ছেলেটা অবশ্য একদম ইউরোপিয়ান কায়দার। “আউক্কা ভাইছাব, তাজা সব্জি আনছি”- আসলেই তাজা। শিম আর ক্যাপসিকাম কিনলাম। পাশেই বাংলাদেশের একটা ছেলে টয়লেট্রিজ বেচে। ঢাকার ছেলে কিন্তু সিলেটি শিখে ফেলেছে। আমাকে অবশ্য কবিতা আবৃত্তির গলায় প্রশ্ন করলো - “ভালো আছেন”? আমি ওর মুখের দিকে তাকাই না। সাবান টুথপেস্ট সস্তায় দিচ্ছে কিনা দেখি। জবাব দেই, “হ্যা ভালো”।

৩.
বাচ্চারা ঝাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে বইয়ের ফাঁকে ফাঁকে। ক’দিন আগে রাতেও নাকি ওরা ছিল। যেদিন হ্যারি পটার প্রকাশ হলো। রাত দুটা পর্যন্ত লাইব্রেরির কর্মচারিরা ওদেরকে হ্যারি পটার পড়ে শুনিয়েছে। আহা, আমরা এমন শিশুকাল পাইনি। লাইব্রেরিতে একরাত কাটাতে দিলে হয়তো কৃতজ্ঞতায় শহীদুল্লাহ হয়ে যেতাম। মাত্র সেদিন বই নিয়ে গেছি। আজ আইডিয়া স্টোরে আসার কোনো দরকার ছিল না। বই রিনিউ করতে পারছি না তাই এলাম। কাউন্টারে বাঙালি একটা ছেলে দাঁড়ানো। কথা ইংরেজিতেই হচ্ছে। বল্লাম, বইটা সম্ভবত: আমি জমা দিয়েছি। সুতরাং সাড়ে চার পাউন্ড ফাইনটা অহেতুক। এক কথাতেই সে মেনে নিল। “যদি বইটা পাও ফেরত দিয়ে যেও”। আমি জবাব দেই “অবশ্যই”। ফাইনটা কেটে দিলো। কতো বিশ্বাস এই দেশটায়। এই বাঙালি ছেলে বাংলাদেশে হলে আমাকে এই বিশ্বাস কিছুতেই করতো না। বইয়ের দাম নিয়েই ছাড়তো।

৪.
একটা চক্কর দিলাম। বইয়ের তাক দেখলে লোভ তো হয়ই। অনেকগুলো বই বাসায়। পড়া হয়নি। তবু একটা বই দেখে তুলে নেই। পরের বার এসে নাও পেতে পারি। অমর্ত্য সেনের, “দি আর্গুমেন্টেটিভ ইন্ডিয়ান”। আজিজে যারা আড্ডা দেয় তারা নাকি বইয়ের চেয়ে ফ্ল্যাপ পড়ে বেশি। আমি প্রচ্ছদ তুলে ধরি চোখের সামনে। পেছনের প্রচ্ছদে পেলাম কফি আনানের উদ্ধৃতি:

By showing that the quality of our lives should be measured not by our wealth, but by our freedom, his writings have revolutionized the theory and practice of development.

আর প্রচ্ছদটা? বারমাস্যা সিরিজ থেকে নেয়া। কাংরার রাজার সৌজন্যে। ১৭৯০ এর অসাধারণ জলরং। নাহ, গর্ব করার মত অমর্ত্য ছাড়াও জিনিস আছে।


মন্তব্য

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

বিশ্বাস, অনর কোড... এই ব্যাপারগুলো যদি দেশে মানতো!

দিগন্ত এর ছবি

ভাল বইটা কিন্তু কিছুটা একঘেয়ে।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

ধন্যবাদ ইশতি।
দিগন্ত, আপনার পড়া হয়েছে যখন তখন একটা আলোচনা দিন। আমি পড়েই না হয় অংশ নিলাম।
নিশ্চিত অনেকের কাজে আসবে এরকম আলোচনা।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

আমিও স্লেট লিখুম। অ্যাঁ.. অ্যাঁ...

নাহ ভাল লাগছে কিন্তু।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

হাসান মোরশেদ এর ছবি

পড়ছি ।
-----------------------------------
'আমি ও অনন্তকাল এইখানে পরস্পর বিস্ময়ে বিঁধে আছি'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

কনফুসিয়াস এর ছবি

ঐ ছেলেটার মুখের দিকে তাকালেন না কেন? বিশেষ কোন কারণ?
-যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

ছাত্র হিসেবে এসেছে, তারপর পড়ালেখা বাদ দিয়ে স্ট্রিট মার্কেটে খোলা দোকান দিয়েছে। ওর বোন মনে হয় ফাইন্যান্স করেছে। ওর বোনকেও দেখি প্রায়।
প্রথমদিন পরিচয় হওয়ার পর থেকেই দেখেছি সহজ হতে পারে না। আমিও সহজ হতে পারি না। কিন্তু আসা-যাওয়ার পথের উপর। কিচ্ছু করার নেই। তাই কোনোরকমে আশে-পাশে তাকিয়ে জায়গাটা পার হয়ে যাই।

-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।