বাংলাদেশ এখনঃ শাসনসংকট ও জাতির মনোভাব - একটি গবেষণা প্রচেষ্টা (২য় পর্ব)

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন শোহেইল মতাহির চৌধুরী (তারিখ: মঙ্গল, ০৭/০৮/২০০৭ - ৬:০১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

auto

দেশে এখন আপদকালীন সরকার। স্বল্পমেয়াদী অন্তর্বর্তীকালীন এই সরকার শাসন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে নির্দিষ্ট কিছু লক্ষ ও উদ্দেশ্য নিয়ে। এককথায় তাদের উদ্দেশ্য চিহ্নিত করা যায় এভাবে-
“দুর্নীতিবাজদের হাত থেকে রাজনীতি ও গণতন্ত্রকে উদ্ধার করা এবং নিরপেক্ষ, অবাধ ও কালোটাকার প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সত্ জনপ্রতিনিধিদের কাছে দেশপরিচালনার ভার তুলে দেওয়া”।

এই উদ্দেশ্য যে মহত্ তা কেউ অস্বীকার করবেন না। কিন্তু বর্তমান সরকারের সব পদক্ষেপ এই উদ্দেশ্য ও লক্ষ বাস্তবায়নকে মাথায় রেখেই করা হচ্ছে - এ কথা মানতে চাইছেন না অনেকে। এই সরকারের কর্মকান্ডের সমর্থক রয়েছেন অনেক। বিরুদ্ধেও আছেন অনেক। সেনাবাহিনী এই সরকারের নেপথ্য শক্তি। ৩ আগস্ট (দৈনিক যুগান্তর) সেনাপ্রধান এই সরকারের বিরোধিতাকারীদের চিহ্নিত করে দাবী করেছেন, “একশ্রেণীর রাজনৈতিক দল এ সরকারকে নাজেহাল করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে”।

auto
সেনাপ্রধানের এই বক্তব্য সম্ভবত: সুবিবেচনাপ্রসূত নয়, যদিও একশ্রেণীর শব্দটি বসিয়ে তিনি অভিযুক্তদের ভিন্নভাবে চিহ্নিত করতে চেষ্টা করেছেন তবুও পরিষ্কার বুঝা যায় তার আঙুল রাজনৈতিক দলগুলোর দিকেই উত্তোলিত। বর্তমানের সরকারের একপ্রান্তে সেনাবাহিনী আর আরেকপ্রান্তে রাজনৈতিক দলের অবস্থান- এমনভাবে পরিস্থিতিকে চিহ্নিত করা রাষ্ট্রের ভবিষ্যতের জন্য এক ভীষণ অদূরদর্শিতা। বস্তুত: কারা এই সরকারের পক্ষে, কোন শ্রেণী, কোন গোষ্ঠী তাদের সমর্থক ও কারা বিরোধী পক্ষ ইত্যাকার আলোচনায় বিবাদ যতটা বাড়ে সুফল ততোটা পাওয়া যায় না। সে পথে হাঁটার ইচ্ছাও আমাদের নাই।

আমরা বরং দেখতে চাই এই সরকারের কর্মকান্ড ও তার পরিপ্রেক্ষিতে জনগণের মতামত ও ভাবনা-চিন্তার হালচাল। দেশের জনসাধারণের বড় একটা অংশই এই সরকারের ক্ষমতারোহনকে স্বাগত: জানিয়েছেন। বড় একটা অংশ এদের অবস্থান ও পদক্ষেপকে সমর্থন করেন। কিন্তু সবাই একমাত্র একটি কারণে এই সমর্থন করেন না। সমর্থনও স্থির কোনো বিষয় নয়, ভাবনা, চিন্তার পরিবর্তনের সাথে সাথে, সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ড ও তার স্বরূপ স্পষ্টতা পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সমর্থন বা বিরোধিতারও পরিবর্তন ঘটছে বা ঘটে।

সমর্থনের (বা বিরোধের) কারণগুলো ভিন্ন ভিন্ন হওয়াই স্বাভাবিক। আবার কারণগুলোও মানুষভেদে নিশ্চয়ই বিচিত্র চিন্তা-ভাবনা-যুক্তি-বুদ্ধি থেকে আসা। কিন্তু সমর্থকদের মূল চাওয়াটা হচ্ছে, এই সরকার সফল হোক। (এই প্রসঙ্গে মনে করতে পারি যে, আইন উপদেষ্টা বলেছেন এই সরকারকে ব্যর্থ হতে না দেয়াটা জাতির দায়িত্ব। তাদের কথার সমর্থক নিশ্চয়ই আছেন অনেক। অথবা তার যুক্তিতেই হয়তো কিছু সমর্থক বেড়েছে।)।

অন্যদিকে দেশের নাগরিকদের সব শ্রেণী, গোষ্ঠী, গোত্রের মধ্যেও বর্তমান আপদকালীন সরকার বিরোধী মনোভাবের লোকও নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে। তারাও আবার ভিন্ন ভিন্ন ভাবধারা, চিন্তা, আদর্শের কারণে বর্তমান সরকারের কর্মকান্ডের বিরোধিতা করছেন, এটা ধরে নেয়া যায়। তারা হয়তো সেনাপ্রধানের অভিযোগ অনুযায়ী বর্তমান সরকারকে নাজেহাল করতে চাইছেন। অথবা বলা যায়, তারা নিজেরাই হয়তো নাজেহাল হওয়া অবস্থান থেকে নিজেদের উত্তরণ চাচ্ছেন।

auto
কোন্ ব্যক্তি, কোন্ শ্রেণী, কোন্ গোষ্ঠী এই আপদকালীন সরকারের ব্যর্থতা বা সাফল্য চাইছেন তা জানার জন্য এই গবেষণার উদ্যোগ নেয়া হয়নি। আমরা বরং জানতে চাই কোন ভাবনাধারার ও কোন কোন ভাবনা-সূত্রের কারণে বাংলাদেশের মানুষ এখন আলাদা তাঁবুতে অবস্থান নিচ্ছেন। অর্থাত্ এই আলোচনায় শ্রেণী, গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করার চেয়ে ভাবনাধারা ও সূত্রগুলোকে চিহ্নিত করাই মৌল উদ্দেশ্য।

এই পর্বে আমরা দুটি বিপরীত মুখী ভাবনাধারার রূপ চিহ্নিত করতে চেষ্টা করি। ( মূলত: একটি টেবিলের দুটো কলাম হিসেবে এগুলো আমি সাজিয়েছিলাম। কিন্তু এখানে টেবিল দেয়া যায় না। তাই একটা কলাম বোল্ড আর একটাকে ইটালিক করে দিলাম, বুঝার সুবিধার্থে।)

auto

ক. আপদকালীন সরকার-বিমুখী ভাবনাধারাঃ
“ত্রুটিমুক্ত ভোটার লিস্ট তৈরির মাধ্যমে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও মুক্ত নির্বাচন অনুষ্ঠান করে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তির কাছে দ্রুত ক্ষমতা হস্তান্তর করাই আপদকালীন সরকারের প্রধান দায়িত্ব হওয়া উচিত।“

মূলভাবনা ভাবনা-সূত্র
গণতন্ত্র মৌলিক অধিকার ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে স্থগিত রেখে শাসন প্রক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদী হলে তা সৈ্বরাচার তৈরি করে।

গণতন্ত্র সংবিধান অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে দায়িত্ব ও মেয়াদ তার চেয়ে বেশি দায়-দায়িত্ব পালনের চেষ্টা হবে বর্তমান সরকারের ক্ষমতার অপব্যবহার।

গণতন্ত্র এই সরকার সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত অনিয়মতান্ত্রিক সরকার। অনিয়ম দিয়ে নিয়ম প্রতিষ্ঠা করা যায় না।

গণতন্ত্র এই সরকার অসাংবিধানিক। দ্রুত সাংবিধানিক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া উচিত।

গণতন্ত্র এই সরকারের কার্যক্রমে রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টি হতে পারে যা থেকে জিহাদী সন্ত্রাস আবার মাথাচাড়া দিতে পারে।

গণতন্ত্র ত্রুটিযুক্ত গণতন্ত্র দিয়ে (১৯৯১-২০০৬) বাংলাদেশ ১৫ বছরে অতীতের সামরিক/ আধা সামরিক শাসনকালের (১৯৭৫-১৯৯০) চেয়ে বেশি উন্নতি করেছে।

গণতন্ত্র সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত গণতন্ত্র একটা সোনার পাথর-বাটি, এরকম কিছু প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে বাংলাদেশের বহু-দলীয় গণতন্ত্রই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বাংলাদেশের অবস্থা হবে পাকিস্তান, মিশর, সৌদিআরব, লিবিয়া, ইরাক, আফগানিস্তানের মত টোটালিট্যারিয়ান।

দু:শাসন সরকারী গোয়েন্দা ব্যবহার করে ক্ষমতাসীনরা রাজনৈতিক দলগুলোর বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করছে। বড় দলগুলো ভাঙতে চাচ্ছে তারা। নতুন দল তৈরি করার চেষ্টাও করছে তারা।

দু:শাসন সংস্কারের কথা বলা রাজনৈতিক নেতাদের ক্ষেত্রে এবং বড় দুই দল ছাড়া অন্য রাজনৈতিক নেতাদের ক্ষেত্রে সরকারের সন্দেহজনক ছাড় দেয়ার নীতি দেখা যাচ্ছে

(অসম্পূর্ণ) (অসম্পূর্ণ)

(পাঠকের মতামত যুক্ত হলেই সম্পূর্ণতা আসবে গবেষণাটিতে।)

auto

খ. আপদকালীন সরকার-মুখী ভাবনাধারাঃ

“দুর্নীতিবাজদের হাত থেকে রাজনীতি ও গণতন্ত্রকে উদ্ধার করা এবং নিরপেক্ষ, অবাধ ও কালোটাকার প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সত্ জনপ্রতিনিধিদের কাছে দেশপরিচালনার ভার তুলে দেওয়াটা এখন রাষ্ট্রের দায়িত্ব।”।

মূলভাবনা ভাবনা-সূত্র
ঐতিহাসিক এই সরকার দেশকে একটা সংঘাত থেকে বাঁচিয়েছে। একে নির্বিঘ্নে দায়িত্ব পালন করতে দেয়া উচিত।

ঐতিহাসিক মানুষ সংবিধানের জন্য নয়, সংবিধান মানুষের জন্য। সুতরাং অসাংবিধানিক হলেও এই সরকার জাতির পক্ষেই কাজ করছে।

গণতন্ত্র বড় রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরের অগণতান্ত্রিক কাঠামো ও পরিবারতন্ত্রই দেশের সবচেয়ে বড় শত্রু ।

দুর্নীতি রাজনৈতিক দলগুলো দুর্নীতিবাজের আখড়া হয়ে গেছে। কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষেই দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব না।
(অসম্পূর্ণ) (অসম্পূর্ণ)
(পাঠকের মতামত যুক্ত হলেই সম্পূর্ণতা আসবে গবেষণাটিতে।)

উপরে ক ও খ শিরোনামের অধীনে আমি দুই পক্ষের চিন্তা ও ধ্যান-ধারণার কিছু সূত্র একত্রিত করেছি। এগুলোর বাইরে অজস্র সূত্র আছে যা সাধারণ জনগণকে এই দুই পক্ষের কোনো একটি ধারণার পতাকার নিচে জড়ো করছে। পাঠকের কাছে প্রত্যাশা মন্তব্যে সেই সূত্রগুলো যোগ করবেন। সেই সাথে অন্যান্য মতামতও।

ছবি: ড. শহীদুল আলম


মন্তব্য

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

আগের পোস্টে হাফ মন্তব্য মাইরা ভাগছি। এইবার ওই কাম করলে দৌড়ানি খাবো। সো, পরে। আগে বিজ্ঞজনেরা বলুক।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

সবজান্তা (অচল - বর্ত্মানে পাইপলাইনে) এর ছবি

ধন্যবাদ শোমচৌ, আরেকটি চমৎকার লেখার জন্য।

শুরুতেই বলতে হয়, আমি নিজেও ব্যক্তিগত ভাবে এই সরকার সফলতা চেয়েছিলাম শতভাগ।কিন্তু সত্যিকার অর্থেই এখন আর পূর্ণ ভরসা রাখতে পারছিনা।

বর্তমান সরকার এর শুরু টা খুব ক্যারিশমাটিক হয়েছিল, এতে কোন সন্দেহ নেই। যদিও প্রধান উপদেষ্টা ছাড়া আর তেমন বড় মাপের কোন ব্যক্তিত্ব উপদেষ্টা প্যানেলে নেই (আগের বারের তুলনায়), তার পরও রাতারাতি স্টার প্লেয়ারদের চৌদ্দ শিক এর ভেতরে ঢোকানো মুখের কথা না।

কিন্তু খটকা লাগলো শুরুতেই, এত কিছুর হোতা মওদুদ এর বিরদ্ধে কিনা মাদক রাখার অভিযোগ? তারেক রহমান এর বিরুদ্ধে কিনা মামুলি এক কোটি টাকা ছিনতাই এর অভিযোগ ! এই ধাক্কা কাটতে না কাটতেই, পরিষ্কার হল সরকার আসলে বড় দল গুলোকে ভাঙ্গার কাজেই বেশি ব্যস্ত। এবং সেই সাথে নোবেল জয়ী "শক্তিমান" ইউনুস সাহেব কিংবা কামাল হোসেন এর মত "অজনপ্রিয় রাজনীতিকদের" দিয়ে জাতীয় সরকার গঠণ এর চেষ্টা। সেই চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর পর ই, পতিত রাজনীতিবিদ কোরেশী কে দিয়ে সেই কাজ করানো। এই সবই কি যথেষ্ট প্রশ্নের উদ্রেক করে না ?

আমরা চেয়েছিলাম এই সরকার রাজনীতির দুর্বৃত্তায়নকে রোধ করবে,তার মানে এই না যে কোন প্রি-প্রেস্ক্রাইবড দল কে ক্ষমতায় আনতে হবে !!

যদি ধরেই নেই, এ সরকার গনদাবীর সরকার, তবে তার কাজ করার কথা বৃহত্তর জনগন এর স্বার্থে। পাটের বিরদ্ধে জিহাদ ঘোষনা করে, তার পরেই ৪ টি পাটকল বন্ধ ঘোষণা কি জিহাদ নাকি আত্নসমর্পণ তা পরিষ্কার না ! এর পর তো "আল্লাহর রহমত" সংক্রান্ত সেই "আলতাফীয় বক্তব্য" আছেই।

কয়লা নীতি নিয়ে পূর্ববর্তী সরকারগুলো যথেষ্ট লুকছাপা করত, কিন্তু এই সরকার ও কি কম যাচ্ছে? সাপ্তাহিক ২০০০ এর কয়লা নীতি বিষয়ক গোলটেবিল এর আলোচনা পড়লেই তা বোঝা যায়।বিশ্বব্যাংক , এ ডি বি এর প্রেসক্রিপশন এখন দেশ এ অনেক তাড়াতাড়িই বাস্তবায়িত হচ্ছে।

দ্রব্যমূল্য এর পাগলা ঘোড়াকে এই সরকার থামাতে তো পারেই নি, উল্টা আরও বেড়েছে। সেই দিন দেখলাম কাঁচা মরিচ এর দাম ২০০ টাকা কেজি।

এই সরকারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ হচ্ছে জামাত তোষণের। জঙ্গীবাদ, ধর্ম ব্যবসা, সাম্প্রাদায়িক দাঙ্গা সহ হেন কোন কুকর্ম নেই , যা জামাত করেনি ( যুদ্ধ অপরাধ তো বললাম ই না)। অথচ উপদেষ্টা বলেন, হয়ত তারা কোন দুর্নীতি করেনি।
ভাববার বিষয় বটে!!

আরো কিছু বিষয় বাদ গেলো। সময় পেলে আরেকদিন লেখব ( কারন কালকে আমার একটি পরীক্ষা !! )।

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

উপরে ক ও খ শিরোনামের অধীনে আমি দুই পক্ষের চিন্তা ও ধ্যান-ধারণার কিছু সূত্র একত্রিত করেছি। এগুলোর বাইরে অজস্র সূত্র আছে যা সাধারণ জনগণকে এই দুই পক্ষের কোনো একটি ধারণার পতাকার নিচে জড়ো করছে। পাঠকের কাছে প্রত্যাশা মন্তব্যে সেই সূত্রগুলো যোগ করবেন। সেই সাথে অন্যান্য মতামতও।
পাঠক মন্তব্য কই ?

-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

'ক' ধারার ৬ষ্ঠ পয়েন্টটা নিয়ে সন্দেহ আছে আমার, আগের ১৫ বছরের তুলনায় ৯১-০৬ এর ১৫ বছরে শুধু একটা সেক্টরেই খুব উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়েছে, তা হলো মতপ্রকাশের সৃাধীনতা।

অন্যকিছুতে তেমন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি, বরং বলতে পারেন ব্যাবসায়ী, সন্ত্রাসী আর দূর্ণীতিবাজদের দৌরাত্ন অনেক বেড়ে গ্যাছে।

'খ' ধারার পক্ষে যেটা বলা যায়, যেজন্য সাধারণ মানুষ এখনও এই সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে তাতে নিচের পয়েন্টগুলো তুলে ধরা যায়

১: বি এন পি আর আওয়ামীলীগ মিলে গত তিন টার্মেই মানুষের মনে একটা ব্যাডসার্কলের জন্ম দিয়ে দিয়েছিল, যেটা হলো,
এদের যেই ক্ষমতায় আসুক দলীয় ছত্রছায়ায় অবাধ চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, দূর্ণীতি এসব চলবেই, খালেদা গেলে হাসিনা আসবে, হাসিনা গেলে খালেদা আসবে, কিন্তু যেই আসুক চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, দূর্ণীতি এসবের হাত থেকে রক্ষা পাবার কোন সমাধান মানুষ খুঁজে পাচ্ছিলনা!! এটা ছিল সবচেয়ে বড় সংকট, আর বি এন পি'র ২য় মেয়াদটা ভয়টা আরো বাড়িয়ে দিয়েছিল। কারণ, এবার তাদের সেচ্ছাচারিতা (বানান ঠিক করতে পারছিনা) আগেরবারকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল। মানুষ বোকা না, তারা বোঝে আওয়ামী লীগ আসলেও একই ঘটনা ঘটবে, এর মধ্যে ২৮ অক্টোবরের শোডাউন মানউষের সেই আশংকাকেই বাড়িয়ে তুলেছিল। কাজেই এই সংকট থেকে উত্তরণের কোন পথ মানউষের সামনে ছিলনা, যাদের হাত ধরে এমন উত্তরণ পাওয়া যায় তাদের বিরুদ্ধেই যে লড়তে হবে।
এমতাবস্থায়, যদি এই 'ব্যাড-সার্কল ক্রাইসিস' থেকে মুক্তি পেতেই হয় তখন আর্মি ছাড়া আর কোন পথ আছে জনগনের কাছে? তারওপর ডিসেম্বর ০৬ এর শেষ থেকে জানু্যারী ০৭ এর শুরুর দিকটায় দুই দলের গোয়ার্তুমি একদম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়, মানুষ বুঝতে শুরু করে যে একটা ইনফিনিটি লুপে তারা ঢুকতে যাচ্ছে। কারণ, ২২ শে জানুয়ারী ভোটে বি এন পি ক্ষমতায় যেত অবভিয়াসলি, তখন আওয়ামী লীগের আন্দোলন আরও চরম আকার নিত, আগের ৩/৪ মাস এদের এসব কর্মকান্ড দেখে মানুষ তিক্তবিরক্ত হয়ে উঠে (কারণ ১৫ বছরের অভিজ্ঞতায় মানুষ বুঝে বি এন পি যতই সংবিধান মানার কথা বলুক, আর আওয়ামী লীগ যতই সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলুক, সবই তাদের নিজেদের নেতানেত্রীদের জন্য, ক্ষমতায় যাবার জন্য; দুই দলেরই আসল চেহারা মানুষের কাছে পুরোপুরি উন্মুক্ত তখন)
তাই, ২২ শে জানুয়ারীর পর অনন্তকালের জন্য দেশ এক অস্থিরতায় ঢুকতে যাচ্ছে, এটা মানুষ বুঝতে পারছিল -- এই অনন্তকাল হতে পারে ১ মাস, আবার হতে পারে ৪/৫ বছর; সাধারণ মানুষের পক্ষে তখন 'এই দেশ ছাড়ার পরিকল্চনা করা ছাড়া কিছুই করার নাই' এমন অবস্থা। সেসময়ে যেকোন সমাধান সে আঁকড়ে ধরবে, যেখানে অন্ততঃ সে একটা রোডম্যাপ দেখতে পাবে। এজন্যই বর্তমান অস্থায়ী সরকার ২ বছরের মতো একটা এ্যাবসার্ড সময়কাল ক্ষমতা ধরে রাখার ইচ্ছে প্রকাশ করার পরও মানুষ কিছু বলেনি।

২: মানুষ আসলেই থিওরিটিকাল সাইডগুলো দেখেনা, দেশের গনতন্ত্রের ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে এতে ডক্টর চৌধুরী যতটা চিন্তিত হবেন সাধারণ মানুষ তার ধারেকাছেও হবেনা। তার প্রয়োজন নিত্যদিন বেঁচে থাকা, সেখানে সন্ত্রাস, দূর্ণীতি, দ্রব্যমূল্য এসব প্রধান। দ্রব্যমূল্য ধরে রাখতে না পারলেও, বি এন পির গত আমলে করমাগত দ্রব্যমূল্যের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে থাকা মানুষ এত সহজে অতিষ্ঠ হয়ে উঠবেনা, তবে এটা ঠিক যে তার এক্সপেক্টেশন পূরণ হয়নি। কিন্তু সেই ক্ষোভটা ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে এই সরকারের দূর্ণীতিবিরোধী ক্যারিশম্যাটিক কর্মকান্ডে। ব্যাড-সার্কল তৈরী করা ঐ দুই রাজনৈতিক দলের একেকজন পান্ডার ধরাপড়া সাধারণ মানু ষের জন্য যথেষ্ট এক্সাইটিং, সময়ে সময়ে এই সরকার সাধারণ জনগনকে সেই এন্টারটেইনমেন্ট দিয়ে যাচ্ছে।
তারা জানে, দুই পক্ষের যাকেই ধরা হোক সাধারণ মানুষ তো খুশী হবেই, অন্যপক্ষের সমর্থকরাও খুশী হবে।

আজ শেখ হাসিনার গ্রেপ্তারে যারা মুখের হাসি ধরে রাখতে পারছেনা তারা হয়ত কয়েকমাস আগে তারেক জিয়ার গ্রেফতারে 'এই সরকার অবৈধ' টাইপের চিন্তাভাবনা করেছিলেন। আবার হয়ত সেপ্টেম্বরের আগেই যখন খালেদাকে ভরা হবে লালাদালানে, তখন তাদের হাসি নিভে যাবে। ব্যাপারটা সম্পুর্ণ ভাইস ভার্সা। এই সরকার এই ঘুটিটা খুব ভাল খেলছে। কোন একটা পক্ষকে লম্বা সময় ধরে ক্ষেপে উঠতে দিচ্ছেনা।
আবার যেমন ধরুন, অপেক্ষাকৃত কম শক্তিওলা রাজনৈতিক দলগুলোকে এরা ঘাঁটাচ্ছেনা, জাপা-জামাতকে ধরছেনা কারণ জানে এদের ধরার মধ্যে কারিশমাও নেই, এদেরকে ইনট্যাক্ট রাখলে এরা আন্দোলন করে কিছু করতে পারবে তা-ও না।
তবে আমার ধারনা, অবস্থা বেশী বেগতিকে গেলে তারা ৭১ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করতে পারে, সেব্যাপারে কলম দিয়ে চাপ প্রয়োগ করা উচিত সবার এখন থেকেই, সিরিয়াসলি! (আমি কি বেশী পজেটিভ? হতে পারে হো হো হো

দুবছর পর কি হবে বলা যাচ্ছেনা, তবে মাইনাস টু টা আমাদের জন্য এখন আসলেই দরকার। মাইনাস টু পারসোন না, মাইনাস টু ফ্যামিলি। নাহলে সেই ইনফিনিট লুপের ভূত আবার ব্যাক করবে।

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

মাত্র দুজন সক্রিয় অংশগ্রহণ করলেন। কিন্তু আমি যা চাইছি তা পাচ্ছি না।

ক ও খ-তে আপদকালীন সরকারের মূল উদ্দেশ্যের পক্ষে বিপক্ষে মানুষের অবস্থান নেয়ার পেছনে মানুষ কি যুক্তি ভাবছে তা দেয়া আছে।
আমি চাইছিলাম, ব্লগার বা পাঠকরা তাদের যুক্তিটা যোগ করবেন। যে ভাবনায় তারা কোনো এক পক্ষকে সমর্থন করেন।

সবজান্তা ধন্যবাদ, আপনার মন্তব্যে বুঝা যাচ্ছে আপনি সময় ও সমস্যাকে চিহ্নিত করতে পারছেন। তো যে দুই ভাগের কথা বললাম আমি, সেই দুই ভাগের চিন্তা হিসেবে আপনার যুক্তিগুলোকে যদি ভাগ করে দিতেন তবে আমি ক ও খ টেবিলটা ভরাট করতে পারি।

জ্বিনের বাদশা, ক ধারার ৬ষ্ট পয়েন্ট নিয়ে সন্দেহ থাকার কিছু নেই। আপদকালীন সরকারের কর্মকান্ডের বিপক্ষে যাদের অবস্থান তাদের যুক্তি এটা। আমি সংবাদপত্র থেকে সংগ্রহ করেছি। এটা সত্য না মিথ্যা তা বিষয় নয়। এটা কিছু মানুষ ভাবছে এটা আমি বুঝতে পারি।

আপনার ভাবনা বা আপনার মতে মানুষের ভাবনাকে যদি ক বা খ-এর টেবিলে যুক্ত করে দিন তবে সুবিধা হয়।

উভয় পক্ষের ভাবনাকেই সাজাতে চাই পাশাপাশি তারপর দেখতে চাই, বিরোধী দুই ভাবনার মাঝে মিল আছে নাকি কিছু। কিছু কি মেলানো যাবে? মেলানো যায়?

ধন্যবাদ। আরো সক্রিয় অংশগ্রহণ চাচ্ছি।

-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

নজমুল আলবাব এর ছবি

পড়েছি। মুগ্ধ হয়েছি। ভেবেছি। কিন্তু ভাবনাটাকে আচ্ছন্ন করে ব্যাক্তি আলবাব। যে এই সরকারের দ্বারা সরাসরি আক্রান্ত। তাই ক কিংবা খ নিয়া তার কোন বক্তব্য নাই। তার চিন্তা এবং চেতনায় আগামীকালের কোর্ট, উকিল, মুহুরি এবং প্রায় পঙ্গু আহমেদ নূর

ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

১১ ঘন্টা আগে নজমুল মন্তব্য করেছিলেন। তারপর আর কোনো মন্তব্য না।
সচলেরা কি অচল হয়ে গেলেন নাকি?
কত্তো সহজ একটা প্রশ্ন। ক ও খ দুটো সাজানো টেবিলে শুধু আপনাদের ভাবনা যোগ করবেন।
তাও রাজি না?
কি বিস্ময়?
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

হাসান মোরশেদ এর ছবি

ডঃ চৌধুরী প্রস্তাবিত গবেষনাপত্রটিতে চোখ রাখছি শুরু থেকেই । মন্তব্য করা হয়নি কারন,গবেষনা প্রস্তাবনার সীমবদ্ধতা । আমি যে মনোভাব পোষন করি, তা আপনার প্রস্তাবিত ক কিংবা খ এর মধ্যে পড়েনা ।

আমি কোন অবস্থাতেই,কোন পরিস্থিতেই পরোক্ষ কিংবা প্রত্যক্ষ সামরিক শাসনের বিরোধী । আপনার 'ক' প্রস্তাবনায় যে আশাব্যঞ্জক দাবী উপস্থাপন করা হয়েছে যে সেনাবাহিনী সুষ্ঠু ভোটার তালিকা প্রনয়ন করে নির্বাচন আয়োজন করে,নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর সুবোধ বালকের মতো ব্যারাকে ফিরে যাক । পুরো বিষয়টাই তো ইউটোপিয়া । সেনাবাহিনীকে নিয়ে এরকম ভদ্রগোছের আশাবাদ বিপদ্দজঙ্ক বোকামী,বোকামী যে তা ক্রমশঃস্পষ্ট হয়ে উঠছে । আরো স্পষ্ট হবে আগামী দিনগুলোতে ।

'খ' প্রস্তাবনা তো রীতিমত লুনাটিক ।
দুর্নীতির কথা যদি বলা হয়,সেক্টরভিত্তিক দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ হোক । গত ৩৬ বছরের সামরিক খাতের ব্যায়গুলো তদন্ত হোক । তদন্ত হোক সামরিক সরঞ্জাম ক্রয়ের হিসাবনিকাশ । মিগ কিংবা ফ্রিগেট ক্রয় কি সেনা,নৌ,বিমান বাহিনীর অগোচরে হয়? প্রতিরক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীর বিরুদ্ধে যদি মামলা হয়,তবে তাদেরকে কেনো জবাব্দিহী করতে হবেনা?
গত কয়েকসরকারেই দেখা গেছে সদ্য অবঃ প্রাপত সেনা কর্মকর্তারা নির্বাচনী মনোনয়ন পেয়েছেন । আমরা জেনেছি বিশাল অংকের বিনিময়ে দলগুলো মনোয়ন বিক্রি করেছে,আমরা দেখেছি প্রার্থীরা আরো বিশাল অংক ব্যয় করেছেন নির্বাচনে । সদ্য অবঃ সামরিক অফিসাররা এতো টাকা কোথায় পেলেন?
রাজনৈতিক দলগুলো অগনতান্ত্রিক সন্দেহ নেই । রাজনৈতিক দলের অগনতন্ত্র থেকে জাতি মুক্তি পাবে সামরিক বাহিনী কর্তৃক প্রনীত গনতন্ত্র দ্বারা!
একুশ শতকের সেরা ফ্যান্টাসী মঞ্চায়িত হচ্ছে বাংলাদেশে ।

-----------------------------------
'আমি ও অনন্তকাল এইখানে পরস্পর বিস্ময়ে বিঁধে আছি'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

পাঠককে বুঝাতে ব্যর্থ হয়েছি। হাসান মোরশেদের মন্তব্য পড়েই বুঝলাম।

মোরশেদ লিখেছেন, আমি যে মনোভাব পোষণ করি তা ক ও খ-এর মধ্যে পড়ে না। একটিকে বলছেন ইউটোপিয়া আরেকটিকে লুনাটিক।

প্রথমে পরিষ্কার করা দরকার এই ক ও খ আমার তৈরি করা বিভাজন নয়। যদি বাংলাদেশের বর্তমান সরকার সম্পর্কে সবাইকে মন্তব্য করতে বলি তবে যে দুটো ভাগ তৈরি হবে এর পক্ষে ও বিপক্ষে তাই হচ্ছে ক ও খ।

ক-তে আছে এই সরকার যাদের অপছন্দ তাদের কথা। খ-তে সরকারের বিপক্ষের লোকদের কথা।

এই সরকার ও বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে মন্তব্য করলেই আমি তা ক ও খ-এর যেকোনো একটা ভাবনা-সূত্র হিসেবে তালিকায় যোগ করে দিতে পারবো।

যেমন হাসান মোরশেদের সর্বশেষ মন্তব্য:

রাজনৈতিক দলের অগনতন্ত্র থেকে জাতি মুক্তি পাবে সামরিক বাহিনী কর্তৃক প্রনীত গনতন্ত্র দ্বারা!
একুশ শতকের সেরা ফ্যান্টাসী মঞ্চায়িত হচ্ছে বাংলাদেশে ।

এই মন্তব্য মূলত: ক ভাগে চিহ্নিত অন্যসব ভাবনা-সূত্রের মতই।
হাসান মোরশেদ কি আপত্তি তুলবেন এই কথায়?
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।