শবের শহরে

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি
লিখেছেন ত্রিমাত্রিক কবি (তারিখ: বুধ, ১৮/০৩/২০১৫ - ১০:০৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমাদের কানে কত কথা আসে, গান ভেসে যায়,
কত আকাঙ্ক্ষা! তড়িৎ নেশায় –
এখনও অনেক দুপুর অবধি একা বসে থাকি।
বিষণ্ণ রোদ, অযথা সময় –
আমাদের নয়। সুষুপ্ত সব দ্রোহে কুৎসিত উল্লাস-দিন –
হয় না সহ্য। আমাদের মতো স্মৃতিবিব্রত সুলভ শরীর – হয় সুপাচ্য।

কে ওখানে বসে বুড়ো হয় একা? আমাদের মতো মৃতের শহরে –
চাষবাস নেই। পুরোনো ফসল ঘরে তুলবার আয়োজন খুব।
নতুন এখানে মৃতদেহ নিয়ে ধুঁকে ধুঁকে বাঁচে, বিবশ স্বপ্নে।
এখানে এখন মৃতরাই বাঁচে, সংখ্যায় বাড়ে যৌন জননে।
যৌনতা ছাড়া প্রজনন নেই। এখানে সফল – অবশ শবেরা।

কত কোলাহল পুরোনো কথার, বুড়ো মগজের জং ধরা রব।
সত্য এখানে নিত্য গোপনে বাঁচে না বোধ হয় (আলোর অভাবে),
মিথ্যারা সব ফুলে ফেঁপে বাড়ে যৌন জননে, গুজবে গুজব।

তবুও অনেক দুপুর অবধি একা বসে থাকি, কি জানি কী হয়!
জানি এ ভ্রান্তি, হয়ত তবুও আমাদের মতো নয় এ সময়।

তুমি তো আজকে বেছেই নিয়েছ সহজ শত্রু!
কত আততায়ী এমনি খুঁজছে ওদেরকে, জানো!
পারলে দাঁড়াও আমাদের মতো সনামে, সমুখে,
বুলেট-বিদ্ধ হতেও কিন্তু, কিছুটা সাহস ঠিক লেগে যায় –
জানি পারবেনা। কৃতিত্ব নাও ছিপি আঁটা কোনো বোতলেতে বসে;
পেছনে সেপাই, রাজ স্বাক্ষর – সেসব গুনেছ, তুলেছ ফসল,
নিয়েছ পক্ষ, যেখানে সহজ ফসলের ঘ্রাণ –
এমনিতে এসে দিয়ে যায় ধরা।
পারলে দাঁড়াও স্রোতের সমুখে, নিজ নামে এসে। তুমি কোন বাড়ি?

তবু অজস্র ভুলের দেয়ালে সত্যের কিছু খুন ঝিকমিক,
তোমরাও পাবে যে দলেই থাকো সত্য খুনের তীব্র ঝিলিক।
ছিপি খুলে দাও, মুক্ত বাতাস প্রবাহিত হোক। ঝড় ঝাঁপটায় –
কিছুটা স্রোতের বিপরীতে হোক তোমাদের জয়।

যেখানে রাত্রি যতটা আঁধার জেনো বারবার –
সেখানেই ভোর ততটা নিকট। যতটা ঝড়ের ঝাঁপটা বাতাস –
তত বেশি সব দুর্বল গাছ –
ভেঙে পড়ে যাক, ছিপি খুলে যাক, উড়ে যাক সব –
বদ্ধ বাতাস। বোটকা গন্ধ –
ভেসে যাক স্রোতে। কিছুটা দুপুর গোধূলি রঙের বিকেলের দিকে –
প্রবাহিত হোক। কিছুটা রাত্রি ভোরের যাত্রা পথের সমুখে –
থমকে দাঁড়াক, ভেঙে পড়ে যাক।

তোমার আমার ভাগ্যের রেখা মেলেনি কখনো, মিলবার নয়,
তবুও অনেক রাত্রি অবধি একা বসে থাকি, কি জানি কী হয়!


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

বেশি বেশি চেষ্টা করি বলেই হয়তো কবিতা বুঝি না এখনও, বুঝতেই পারি না। তবু ভালো লাগলো খুব, কী করি বলুন তো?

তোমার আমার ভাগ্যের রেখা মেলেনি কখনো, মিলবার নয়,
তবুও অনেক রাত্রি অবধি একা বসে থাকি, কি জানি কী হয়!

দেবদ্যুতি

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

না বোঝাতে পারার ব্যর্থতার দায় সম্পূর্ণই আমার। তারপরেও যেহেতু ভালো লেগেছে, আমার পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানুন।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার কবিতার কথা নয়, আমি বোধহয় কবিতাই বুঝি না কোনো!

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

সত্য এখানে নিত্য গোপনে বাঁচে না বোধ হয়

মন খারাপ

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

মন খারাপ

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

রানা মেহের এর ছবি

কৃতিত্ব নাও ছিপি আঁটা কোনো বোতলেতে বসে;
পেছনে সেপাই, রাজ স্বাক্ষর – সেসব গুনেছ, তুলেছ ফসল,
নিয়েছ পক্ষ, যেখানে সহজ ফসলের ঘ্রাণ –
এমনিতে এসে দিয়ে যায় ধরা।
পারলে দাঁড়াও স্রোতের সমুখে, নিজ নামে এসে। তুমি কোন বাড়ি?

এই লাইনগুলো অনেক ভাল লাগলো।
সাথে পুরো কবিতাটাও

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ, রানা আপু হাসি

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অনিকেত এর ছবি

ভালো লাগল বস---
শুভেচ্ছা অফুরান!

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

ধন্যবাদ বস। ভালো থাকেন!

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

এক লহমা এর ছবি

চলুক
"যেখানে রাত্রি যতটা আঁধার জেনো বারবার –
সেখানেই ভোর ততটা নিকট।" --- আঁধার এখনো আরো অনেক বাড়বে বলেই মনে হয় মন খারাপ

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

নাশতারান এর ছবি

সুন্দর হয়েছে

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

ধইন্যবাদ হাসি

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

পারলে দাঁড়াও স্রোতের সমুখে, নিজ নামে এসে।

চমৎকার লাগলো কয়েকটি লাইন। ধরে ধরে আর বললাম না কবি।
(বিষণ্ণ, সনামে, দাড়াক- টাইপো কি?)

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

'দাড়াক' তো অবশ্যই টাইপো। 'সনামে' মানে নামসহ বোঝাতে চেয়েছি, 'স্বনামে' লিখলে সম্ভবত নিজ নামে বোঝাতো। বিষণ্ণ কী হবে? চিন্তিত

আর মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ। ভালো থাকুন।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

বাসায় তখন ভাঙা দেখাচ্ছিল আমার পিসিতে, এখন অফিসে ঠিক লাগছে। কৃতজ্ঞতা।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

উপনদ এর ছবি

শবের শহরে’র শ্রদ্ধেয় কবি, অনেক শুভেচ্ছা। কবিতাটি পাঠ করে সখ্যতার আকাঙ্খা অনুযায়ী ‘শুভেচ্ছা’র বহর একেবারেই খাটো হলো; উপায় নেই, ছোট্ট এ শব্দটির প্রাণ ‘শবের শহরে’র অধিবাসী পাঠক আমি আর কতোই বড় করে উপলব্ধির শক্তি ধরে রাখতে পেরেছি! ওতেই চলুক আপাতত।

কবিতা কী তা না জেনেই পাঠ করি; যেমন করে জীবন কী—না জেনেই ধারণ করি, বেঁচে থাকি। কবিতা হয়তো জীবনের মতোই বিস্তৃত আর গভীর! আমি আর একবার অভিভূত হলাম; প্রা্য়ই হই। অনেক শক্তি নিয়ে আপনি ‘শবের শহর’-এ বেঁচে আছেন—বোঝা যায়। আপনার কবিতার হৃদয়ে বেদনার বিধুর ব্যাপ্তির মাঝেও উপলব্ধির তীব্রতায় ঝাঁঝালো খুব। এখনই আমি তার সব তুলে ধরতে পারবো না—মে তো গেলো আমার দিক থেকে যতোটুকু বার পাঁচেক পড়ার পর অনুভব করতে পেরেছি তার দিক থেকে কথা; তাছাড়া, আপনার নিজের এবং আর কারো প্রখরতর মেধা আর উন্নততর উপলব্ধির মানদণ্ডে বস্তুর তালিকা কত বড় আর বিশ্লেষণ কত চমতৎকৃত হতে পারে তার শেষ নেই। একটি ঐতিহ্যিক গর্বোন্নত সংস্কৃতি বিবর্তনিক অবক্ষয় ভয়াবহভাবে আমাদের কৃড়ে কুড়ে খায়, যেখানে একা পথে মুখোমুখি দুটো পিঁপড়ের মতো আপনার মুখে মুখ রেখে ক্ষাণিক থেমে সুর মেলাই আপনার সুরে ‘আমাদের মতো স্মৃতিবিব্রত সুলভ শরীর—হয় সুপাচ্য।’

পরের লইনটি জীবনানন্দ দাশ-এর ‘বুড়ো হযে গেছো তুমি এই বুড়ি পৃথিবীর মতো’ এক শিহরণ আনে মৃত্যুর কাছাকাছি একটি ঊষর প্রান্তরে; যেখানে ‘চাষবাস নেই। পুরোনো ফসল ঘরে তুলবার আয়োজন খুব।’ হযতো বহুদিন খর তাপে ক্ষীণ ‘নতুন এখন মৃতদেহ নিয়ে ধুঁকে ধুঁকে বাঁচে, বিবশ স্বপ্নে।’ এভাবেই আমি পা পুড়ে পুড়ে এগুতে পারি ... দিনভর নিরন্তর ক্লান্তির ধকলে তবু ... থাক এখন। শুধু শেষ করি শেষ মুগ্ধকর আপনার সেই আশাবাদ দিয়ে:
‘যেখানে রাত্রি যতটা আঁধার জেনো বারবার—
সেখানেই ভোর ততটা নিকট।’
চমৎকার! এগুলো দুর্লভ প্রেরণার উৎস, আমাদের সমৃদ্ধি। অনেক ভালো থাকবেন। অনেক ধন্যবাদ।

[আমি এই প্রথম, এখানে মন্তব্য করার চেষ্টা করছি, সবাই দেখুক না দেখুক বড় বিষয় নয়, মডারেটরগণ দেখতে পান এটা উদ্দেশ্য; তা ঠিক যায়গায় লিখলাম কিনা সেই সংশয় থেকে আমি এখানকার মন্তব্যটুকুই নিচেও কপি করে দিলাম, যেখানে ঠিক হয়।]

অতিথি লেখক এর ছবি

তুমি তো আজকে বেছেই নিয়েছ সহজ শত্রু!- বাহ ভালো লাগলো। আরো কিছু ভালো লাগা আছে। সমগ্রের ভালো লাগা উদ্ধৃতিতে খণ্ডিত হয়।

মাত্রাবৃত্তইতো? ৬ এর চাল। নাকি?

স্বয়ম

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

এই জায়গাগুলো একটু আবার একটু পরখ করে দেখুন তো!

পেছনে সেপাই, রাজ স্বাক্ষর – সেসব গুনেছ, তুলেছ ফসল,

তবু অজস্র ভুলের দেয়ালে সত্যের কিছু খুন ঝিকমিক,

তত বেশি সব দুর্বল গাছ

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভেসে যাক স্রোতে। কিছুটা দুপুর গোধূলি রঙের বিকেলের দিকে –
প্রবাহিত হোক। কিছুটা রাত্রি ভোরের যাত্রা পথের সমুখে –
থমকে দাঁড়াক, ভেঙে পড়ে যাক।

অতিথি লেখক এর ছবি

শবের শহরে
“আমাদের কানে কত কথা আসে, গান ভেসে যায়,
কত আকাঙ্ক্ষা! তড়িৎ নেশায় “

কবিতা পাঠ করি মনের খোরাকের জন্য। আপনার কবিতাটা পড়ে একটু খোরাক পেলাম। ধন্যবাদ

-------------
রাধাকান্ত

অতিথি লেখক এর ছবি

দুপুরে আবার রাত্রেও অনেকটা সময় শবের শহরে একা বসে থেকে অসহ্য উল্লাস দিনের পরেও রত্রি শেষে রামধনু সকালের মুখ চেয়ে থাকা। কবির সাথে সেই আশাতে আমরাও থাকি তবে।
খুব ভাল লেখা।
------------------------------------------
ইচ্ছে মত লিখি।
http://icchemotolikhi.blogspot.in/2015/05/for-blogger-to-blogger.html

Sagar এর ছবি

কবিতা পরে কবি হতে ইচছা করে। খুবই সুনদর হয়েছে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।