মানুষ চায়ের দোকানে, বিকেলের ফুটবল মাঠের আড্ডায়, প্রোফাইল পিকচারে, ব্লগ-ফেসবুক নোটের মিথ্যা আস্ফালনে ভুলিয়ে দিতে পারে সবাইকে। কিন্তু প্রশ্নটা দিন শেষে আমি নিজেই নিজেকে ছুঁড়ে দেই। তুমি উপন্যাস লিখবে কেনো ? তুমি কি সেটা লিখতে প্রস্তুত ? অথবা কখনো তুমি কি যোগ্য হবে সেটার, আদতে ?
আমি বারংবার নিজেকে প্রশ্ন করি। জবাব পাই আবছা আবছা, অনেকটা যন্র্পপ্রকৌশল পড়াকালীন ব্যবহারিক পরীক্ষার চূড়ান্ত উত্তরপত্রের মতোই। হ্যাঁ, লিখতে সকলেই পারে। আমিও পারি। আজিমভের গল্পের সেই মস্তিষ্কে তার জুড়ে দেওয়া বানরের মতোই টাইপরাইটার বা কী-বোর্ডে চলতে পারে আমার হাত।
অনুভব করি, আমার দৌড় ব্লগ-ফেসবুকের ওই টুকটাক গল্প প্রচেষ্টা পর্যন্তই। সেইসব কিলোবাইটের দুয়েক ফোঁটা হয়তো কখনো কদাচিৎ পাঠককে বিভ্রান্ত করে ফেলতে পারে কয়েক মুহুর্তের জন্যে। কিন্তু উপন্যাস তো তা নয়। উপন্যাসের ব্যাপ্তি অনেক বড়। তার সন্ধানে কী-বোর্ড চাপা তীব্র শীতের রাতে হাফ হাতা শার্ট গায় চড়িয়ে নদী তীরে দাঁড়িয়ে নৌকার জন্যে অপেক্ষা করার মতোই। কষ্টের, একাকীত্বের, রাত ফুরোলেও দৈবের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকার।
মানুষকে তার সামর্থ্যের শেষ পরীক্ষাটাও দিতে হয় নিজের কাছেই। আমি সেই পরীক্ষায় বসবো স্থির করি। শুরু হয় প্রস্তুতির পালা। একে জিজ্ঞাসা, ওকে টোকা দেওয়া, তাকে ফেসবুকে গুঁতো।
ইতিহাস খুব অদ্ভূত। তরলের মতো পাত্র ভেদে তার আকার বদলায়, তবে আয়তন গ্যাসের মতো স্থির। সেটাকে বাস্তব কাহিনীর কঠিন রুপ দেয়ার কাজটা জটিল।
যা লেখা হয়, তার সবটাই কেটে দেওয়ার মতো। অজস্র বানানে ভুল, অগণিত ফাঁকফোকর।
পাণ্ডুলিপি টুকটাক পড়তে দেই। একে, ওকে, তাকে। মানুষ প্রতি আমি বিশ্বাস হারাই না কখনো, পরিচিতের দল এতো আগ্রহে এমন সমস্ত শ্রমসাধ্য কাজ করে দেয় অকারণ ভালোবাসার বশবর্তী হয়- মানুষের উপর বিশ্বাস আমি হারাতে পারি না।
কিন্তু মাঝে মঝেই থেমে যাই পৃথিবীর রুঢ়তায়, স্বদেশের মাৎস্যন্যায় আবর্তনে।
দেশ দখল করে নিতে চায় সাম্রাজ্যবাদী প্রতিবেশী, উলটো রাজার দেশের কারসাজি সরস্বতীর অফিসে, নদী ভরা মাছের জায়গা দখল করেছে জাল ফেললেই উঠে আসা লাশ। ফেসবুকের কৃত্রিম নলখাগড়ার মাঝে কোথায় হৃদয়ের চর ? আবুল হাসানের সহযাত্রী হয়ে উঠি আমি। কার কাছে যাবো, আহত বাতাসের এ শহরে সবকিছু অতীত হয়ে যাওয়া ইতিহাসের এক টুকরো গল্পের জায়গা কোথায় ?
আমার পাণ্ডুলিপির খসড়া তাই ইতস্ততঃ নাচে ব্যালে নর্তকীর মতো।
গভীর রাতে নজরুল ভাই হয়তো বার্তা দেন কোনো তথ্যসূত্র উল্লেখ করে। পাণ্ডবদা হয়তো সিধু জ্যাঠার রীতিতে উপদেশ দেন পথ বাতলে। কোঞ্চিপায় চা খেতে খেতে মৃদুভাষী নিবিড় ভাই হয়তো আমায় শেখান ইতিহাসের নানা পাঠ। এবং ভালোবাসার দাবিতে মনে করিয়ে দেন সেই অনুচ্চারিত প্রশ্নটি। লেখা কতদূর ?
চূড়ান্ত হতাশার মাঝে আবিষ্কার করি, এই সময়ে কতগুলো টাইপকরা অক্ষর আর বর্ণসমষ্টি নিতান্ত অনাহূত সিন্ডারেলা। এ শহরে কোথাও শান্তি নেই, থেমে থাকা নেই। এ শহরের কোনো ইতিহাস নেই, কোনো গৌরব নেই।
অথচ আমার বেছে নেওয়া পটভূমির নায়কেরা কত অবিশ্বাস্য পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে এসেছেন অতীতে। তারা মানুষ ছিলেন, তাদের মানুষী দুর্বলতা ছিলো। তারা অনেক হেরে গিয়েও হারটা স্বীকার করেন নি। উপন্যাসের নাটুকে নায়কদের সাধ্য কী আমাদের সেই ইতিহাসের নায়কদের কীর্তি স্পর্শ করে !
আমার উপন্যাস লেখা হয় না, সময়ের জালে আটকে যায়। আমি আমার নায়কদের মতো নই। আমি তাদের মতো হতে চাই, নিদেনপক্ষে তাদের চেষ্টাটা স্পর্শ করতে চাই। আমার সেটা হয়ে ওঠে না।
মন্তব্য
হতাশ হয়ো না যদি মুমিন হও।
কাজ জারি রাখো। অনেকদিন ধরে আশা নিয়ে বসে আছি কিন্তু!
উপন্যাস লেখা নিয়ে মার্কেসের কথাটা মনে পড়লো "Ultimately, literature is nothing but carpentry. With both you are working with reality, a material just as hard as wood."
বই আকারের কিছু লেখা ম্যারাথন দৌড়ের মত। একই উপন্যাস দরকার হলে কয়েকবার করে কেটে দিয়ে গোড়া থেকে পুরোটা আবার লিখতে পারার মানসিক জোর থাকা লাগে…
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
হতাশ না হয়ে আসলে পারি না চারপাশ দেখে। জীবনটা বইয়ের পৃষ্ঠা বা ডকুমেন্টারিতে দৃঢ়তম স্বরে বলা কোনো প্রেরণা দেয়া বাণী না। বাস্তব আসলে একদম বাস্তবের মতো।
বইমেলায় পাচ্ছি তাহলে ?
জানি না শিমুল ভাই। আসলেই জানি না।
জাল ছিঁড়ে ফেলা আপনার জন্য কোন ব্যাপারই না!
অদ্রোহকে আপনিই না বিছানা থেকে ঘুমন্ত অবস্হায় ফেলে দিয়েছিলেন? ঘুমিয়েই যে এতটা পারে জেগে সে পারবে শতগুণ বেশি। আপনি এমন বিরাট একটা যজ্ঞে সামিল হয়েছেন জেনে খুব ভালো লাগলো সিহান! সফল হোন এই কামনা।
টানা লিখেন, ছোট ছোট খণ্ড আকারে ব্লগে দেওয়ার দরকার নাই অনেকদূর লেখার আগে। পাঠকের মন্তব্যে দিকচ্যুত হওয়ার ছোট সম্ভাবনা আছে। আদ্ধেক লিখে তারপরে অল্প অল্প করে দেন দিতে হইলে। পাঠকের মন্তব্যে লেখা যেরকম ধারালো হইতে থাকে দিনে দিনে সেইরকম লেখা আটকায়াও যায় মাঝেমধ্যে।
..................................................................
#Banshibir.
শুভকামনা রইল। হবে।
এইসব কথা সুহানের মুখে মানায় না। ধানাই পানাই বাদ দিয়ে নেক্সট বইমেলায় বইটা বাজারে আনো। অপেক্ষায় থাকলাম।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
৫ বছর ধরে একটা উপন্যাস লিখলেও কোন সমস্যা নাই। হতাশ হয়ো না বন্ধু
_____________________
Give Her Freedom!
যে লেখক এমন করে ভাবেন, তার প্রতি আপনা-আপনি পাঠকের শ্রদ্ধা তৈরি হয়! জন্ম নেয় আস্থা!
.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল
অণুদার মতো কয়েকটা ভ্রমণ দিয়ে আসেন দেখবেন মাথা পরিষ্কার হয়ে যাবে আর লেখাও একটা আকার ধারণ করবে।
ভালো কিছুর জন্যে দীর্ঘকাল অপেক্ষা করতে কষ্ট নেই। অপেক্ষায় থাকলাম আপনার উপন্যাসের।
মাসুদ সজীব
উপন্যাস লেখা বড় খাটনির। তবে একবার লিখে ফেলতে পারলে আপনি সেই বিরল শ্রেণীতে ঢুকে পড়লেন যেখানে ঢোকার স্বপ্নটাও বেশীর ভাগ লোকের পক্ষে দেখা সম্ভব নয়। আপনি ইতিমধ্যেই সেখানে ঢুকে গেছেন। এখন ত শুধু একটু ঝেড়ে-মুছে প্রকাশ করে ফেলা - হয়ে যাবে। অবশ্য, আপনার যদি মনে হয় সবটাই ফেলে দিয়ে আবার নুতন করে লিখবেন, তা হ'লে ভালই ব্যথা আছে। তবে সেই লেখাটাকে দ্বিতীয় উপন্যাস ধরে এগিয়ে যেতে পারেন। একবার যখন পেরেইছেন, আবারো পারবেন। না লিখে লাভ কি, লিখতে যখন পারেন, কি বলেন?
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
লিখুন, লিখতে থাকুন এবং প্রকাশ করুন। অপেক্ষায় আছি।
গোঁসাইবাবু
সুহান,
এ বছরে আমার পড়া সেরা কবিতাগুলোর একটা এটা। হ্যাঁ কবিতাই!
ব্লগজগতে তোমার মতো ভাষা ও বানানসচেতন লেখক খুব কমই দেখেছি। এই লেখায় একটা ছোট্ট টাইপো আছে- "দূর্বলতা"- শুধরে নিও ভাই।
হয়ে যাবে। চিন্তা নেই।
ঠিক করছি। থাঙ্কিউ
গর্ভযাতনা সফল হবে সুহান -- অনেক শুভ কামনা!
এই কথাটা দারুণ লাগলো ---
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
হয়ে যাবে নিশ্চিত। দারুণ কিছুর প্রতীক্ষায়
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
হবে না মানে? হতেই হবে! হবেই হবে!
****************************************
উপন্যাস পড়ার জন্য অধীর আগ্রহে বসে রইলাম।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
অপেক্ষায় রইলাম।
অপেক্ষায় রইলাম ...
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
যারা মন্তব্য করেছেন, উৎসাহ দিয়েছেন, তাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ
সময় নেন, ধৈর্য্য ধরেন। ব্যস্ততার কিছু নেই।
স্বীকার করি, এখন সময়টা অস্থির, আশঙ্কার... কিন্তু দেশ এরচেয়েও অনেক বেশি অস্থির সময় আর আশঙ্কার রাত পার করে এসেছে। কিভাবে এসেছে তা বোধহয় জাতি ভুলে গেছে। এই ভুলে যাওয়া ইতিহাসটাই হয়তো মনে পড়ে যাবে আপনার উপন্যাস পড়ে।
সুন্দর সময়ে ফেরার লড়াইয়ের অনুপ্রেরণা হয়তো থাকবে।
শুভকামনা রইলো। অনেকদিন ধরে অপেক্ষা করে আছি উপন্যাসটার...
হতাশ হইয়েন না
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
"হাল ছেড়ো না---,
হাল ছেড়ো না বন্ধু বরং কন্ঠ ছাড়ো জোরে----"
____________________________
আপনার দ্বারা লেখাটা হবে সুহান, অপেক্ষায় আছি সেই উপন্যাসের -
facebook
তুমি অবশ্যই পারবে
------------
'আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
অপেক্ষায় থাকলাম।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
নতুন মন্তব্য করুন