মাতৃভীতি

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি
লিখেছেন সুবিনয় মুস্তফী (তারিখ: শনি, ০৮/১২/২০০৭ - ৩:০৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বয়স তখন দশের মত হবে, ক্লাস ফাইভে পড়ি। স্কুলে আমার এক বন্ধু ছিল, মনিপুরীপাড়ার ছেলে, নাম স্ট্যান। মহা ফক্কর। সেই স্ট্যানের কাছেই আমার প্রথম তালিম - নারী পুরুষের রমণ ক্রিয়া কিভাবে সম্পন্ন হয়, কথ্য ভাষায় এই ক্রিয়াকে কি কি নামে অভিহিত করা হ্য়, চ-শব্দের প্রয়োগ কোন কোন ক্ষেত্রে উপযুক্ত, উক্ত শব্দের কি কি ভ্যারিয়েশান হতে পারে, রমণ ক্রিয়ায় আসলে কি ঘটে এবং কিভাবে - এই সমস্ত বিষয়ে পিএইচডি প্রাপ্ত আমার বন্ধু স্ট্যান। টিফিনের সময় দোলনার ধারে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তার বিশাল জ্ঞানসমুদ্র থেকে কয়েক ফোঁটা জ্ঞান সে আমাকে দান করলো। আমি তো মোটের উপর বিশ্বাসই করতে পারলাম না যে নারী পুরুষ এই রকম আশ্চর্য রকমের বিশ্রী কাজে লিপ্ত হতে পারে। তাই আমি শালার কথা চাপা বলেই উড়িয়ে দিলাম।

এখানে উল্লেখযোগ্য যে আমার হাইপার-পরহেজগার পিতামাতা সেই আমলে বাসায় ভিসিআর-এর বিরুদ্ধে যেই দন্ডাদেশ জারি করেছিলেন, তা আজ ২০০৭ পর্যন্ত বলবত আছে, এবং সেই নিষোধাজ্ঞা পরে স্যাটেলাইট টিভির উপরেও আরোপিত হয়। এই কারনে বাল্য বয়সে ভিডিও-র মাধ্যমে রমণ ক্রিয়ার খুঁটিনাটির সাথে পরিচিত হওয়ার কোন সুযোগ পাইনি। এটা সেই যুগের কথা যখন চুমাচুমির দৃশ্যও বিটিভি-র সেন্সররা অবলীলায় ঘ্যাচাং করে দিতো। (বাই দ্য ওয়ে, আপনাদের কি ধারণা? ম্যাকগাইভার কি কোন মেয়েরে চুমাইতো? আর থান্ডারক্যাট্‌সের চিটারা আর লায়নো? ওদের কি কেস?)

তো স্ট্যানের পাঠদান শেষে সেই দিন যথারীতি বাসায় ফিরলাম। আমার আধ-ডজন ভাই বোন, বেশীর ভাগই আমার ছোট। সবাই এক টেবিলে পা দুলিয়ে দুলিয়ে দুপুরে ভাত খাওয়ার রীতি ছিল আমাদের। খাওয়ার সময় 'রেস' লাগতাম, কে সবার আগে শেষ করতে পারে, তার কম্পিটিশান। আমি তরকারি (বিশেষ করে পটল) একদম সহ্য করতে পারতাম না, চান্স পেলেই খোলা জানালা দিয়ে সেই পটল উঠানে ফালানোর তক্কে তক্কে থাকতাম। একটা বিল্লি ছিল, যদি খায়। তরকারি ফেলার কাজটা করতে হতো ভাইদের অগোচরে, ওরা দেখতে পেলে মায়ের কাছে নালিশ যাওয়ার ঘোর আশংকা আছে ('আম্মা আম্মা, মেজ ভাইয়া পটল ফালাইয়া দিছে!' ইত্যাদি। বদখত সব পোলাপান।) আমার জন্যে এহেন নালিশের কোন সুফল নেই, সবই কুফল।

স্ট্যানের থেকে দীক্ষা নিয়ে ঐ দিন বাসায় ফিরে দুপুরে খেতে বসেছি। প্লেটে আবারও পটল, আমার পছন্দ হচ্ছে না। তরকারি ফেলার ধান্দা করছি, ইতিউতি তাকাচ্ছি, জানালা দিয়ে পটল ছুঁড়ে মারার এঙ্গেল এবং স্পীড মনে মনে হিসাব করছি - কিন্তু আমার ছোট ভাই আমার মতিগতি টের পেয়ে গেলো। সে গম্ভীর স্বরে বল্লো, 'ফেললে আম্মারে কইয়া দিমু।' সাধারনতঃ এই কথা শুনলে আমি প্ল্যান বাতিল করে দিতাম। কিন্তু ঐদিন কোন এক কারনে আমি বিচলিত হলাম না। হঠাৎ আমার মাথায় এসেছে, বাহ এই তো ভালো সুযোগ। আমার নতুন শেখা শব্দমালা ছোট্টনের উপর একটু প্র্যাকটিস করে নেই। নতুন এক আগ্রাসী থ্রেট খেলে সে হয়তো পিছিয়ে যাবে।

তাই আমি চোখ-মুখ কুঁচকে (একটু নীচু স্বরে) ছোট্টনকে বল্লাম, 'তুই কইলে তোরে একদম চুইদ্দা দিমু।'

চেষ্টা সত্ত্বেও কথাটা বোধ হয় একটু জোরেই বেরিয়ে গিয়েছিল। সাথে সাথে রান্নাঘরে ঘটাং-ঘটাং শব্দে প্লেট-পাতিল পড়ে যাওয়ার শব্দ পেলাম। তার আধা-সেকেন্ড পরে ধুপধাপ পা-ফেলার আওয়াজ। তার আধা-সেকেন্ড পরে কিচেন থেকে আমার মা-জননীর আবির্ভাব - ভয়ংকর রণমুর্তি তার, জোন অফ আর্ক বা মা দুর্গাও তার কাছে হার মানে। চোখের পলকে তিনি আমার কাছে পৌঁছে গেলেন, হঠাৎ টের পাই লোহার সাঁড়াশী যেন আমার দুই গাল চেপে ধরেছে। আমি কিছু বলতে পারছিনা, কিছু বুঝতেও পারছিনা, তার আগেই আমার মায়ের গ্র্যানাইটের আঙ্গুলের তীব্র চাপে আমার মুখ খুলে গেলো। আমার মাথার চুল তার অন্য হাতের শক্ত মুঠিতে ধরা, মাথা ঘুরানোর কোন স্কোপ নেই, শুধু অস্পষ্ট স্বরে গাঁই-গুঁই করতে পারছি তখন। তিনি সোজা আমার মুখ-গহবরে হাত ঢুকিয়ে দিয়ে আমার মুখে যে আধা-চিবানো খাবার ছিল, সেটা বাইরে ফেলে দিতে লাগলেন। আর সাথে সাথে বলে যাচ্ছেন 'বাইর কর, বাইর কর, শয়তান! এই রকম জঘন্য কথা আমার যেই পোলা কইতে পারে, তার আমার ভাত খাওয়ার দরকার নাই! বাইর কর তুই!'

আমি প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেছি, কোনমতে আর্তনাদ করে বল্লাম 'আমি কি কইসি?' আম্মার জবাব এলো (তিনি তখনো আমার মুখের উপর নিদারুন অত্যাচার চালাচ্ছেন) - 'তুই কি কইসোস মানে??? আর কোনদিন যদি তোর মুখে এই রকম বাজে কথা শুনছি, তাইলে খাওয়া তো বন্ধই, তোরে আমি মাইরাই ফালামু। তোরে আমি ঘরের থেকা বাইর কইরা দিমু!' আগে মেরে তারপরে ঘর থেকে বের করে দেবেন, নাকি উল্টাটা - এই সিকোয়েন্স আমার কাছে ঠিক পরিস্কার হলো না। কিন্তু এই নিয়ে আর বেশী প্রশ্ন করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না বুঝলাম। আম্মা তার ভয়াবহ হুশিয়ারি দিয়ে সেবারের মত আমাকে ছেড়ে দিলেন। কিন্তু আমার যা শিক্ষা হওয়ার, তা ততক্ষণে হয়ে গেছে। বলাই বাহুল্য, যে মা-বাবার সামনে আর কোনদিন চ-শব্দের ক্ষীণতম প্রয়োগও আমি কখনো করিনি।

(আমার মায়ের চরম ডিসিপ্লিনারী শাসনের দুটা বড় উদাহরণ আছে। এইটা একটা। ঐদিন কলাপাতায় খাবার টেবিলে ধ্রুব জানতে চেয়েছিলেন ওয়াইন একদমই খাই কি না - তার জবাবে অন্য গল্পটা বলেছিলাম। প্রায়ই আমার শৈশবের কথা মনে পড়লে সেই স্বৈরশাসনের কথা মনে পড়ে। কই গেলো সেই সব!)


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

আমি বই পড়তে গিয়ে কোন শব্দ না বুঝলে ভাইদের জিজ্ঞাসা করতাম। একদিন রাতে সবাই খাচ্ছে, আমি খাওয়া শেষ করে বিছানায় শুয়ে পড়ছি সেবা প্রকাশনীর শিকার গল্প সংকলন, সম্ভবত শিকার-২। সেখানে কেনেথ অ্যান্ডারসনের একটা গল্প আছে, সঙ্গম চিতা। সঙ্গম একটা জায়গার নাম, সেখানে দুই নদী এসে মিলেছে, সেটা আরো কয়েক পাতা উল্টালেই জানা যেতো। কিন্তু কৌতূহল দমন করতে না পেরে চেঁচিয়ে প্রশ্ন করলাম, "ভাইয়াআআআআ, সঙ্গম মানে কীঈঈঈ?"

টেবিলে টুংটাং শব্দ থেমে গেলো, একেবারে নিস্তব্ধতা হিরন্ময়, কয়েক সেকেন্ড পর শুনলাম আমার বাবা বলছেন গম্ভীর স্বরে, "তোমার ভাই কী যেন জানতে চায়।"

আমার ভাই খাওয়া ফেলে ধুপধাপ করে উঠে এসে প্রথমেই আমার হাতের বইটা উল্টেপাল্টে দেখলেন। শিকারের বই দেখে বোধ করি একটু বিরক্তই হলেন। তারপরে বললেন, "কীসের গল্প এটা?"

আমি বললাম, "চিতাবাঘের।"

ভাই বললেন, "আচ্ছা। চিতাবাঘের তো বাচ্চা হয়, জানোই তো ...।" তারপর কিছু জটিল ব্যাখ্যা শুরু করলেন, যার কিছুই বুঝলাম না।

একটু পরে পড়তে পড়তে আবিষ্কার করলাম যে সঙ্গম আসলে একটা জায়গার নাম, এর মানে হচ্ছে দুই নদীর মিলনস্থল।

কয়েক বছর পর সঙ্গম শব্দের গূঢ়ার্থ আবিষ্কার করার পর মাথায় বাজ পড়েছিলো, হায় হায়, এ আমি কী করেছিলাম!


হাঁটুপানির জলদস্যু

অয়ন এর ছবি

জীবনানন্দের উদাসীনতা থেকে পাংকু বের হইয়া আসতাছে। পুরা চ'মার্কা পুস্ট দেঁতো হাসি

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

সুবিনয় ভাই:
মজা পাইলাম খুব। গতকাল পর্যন্ত আপনাকে আমার চাচার বয়েসি মনে করতাম। এখন মনে হচ্ছে - নাহ, অতো বড় না। একটু বড় ভাই টাইপ। সেই সাহসে নিচের মন্তব্য -

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

হাহাহাহা। ব্রা পরা = 'নোট করে পড়া'। এরেই কয় প্রত্যুতপন্নমতিত্ত!

-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

হিমু এর ছবি

বেশি নাম্বার পাওয়ার জন্য ঘরে ঘরে আজ ছেলেমেয়ে ব্রা পড়ছে ...


হাঁটুপানির জলদস্যু

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- আমি নিজে মনেহয় এরম কোন বেগতিক প্রশ্ন করি নাই। এটলিস্ট এখন মনে পড়তাছে না। তবে আমাদের পাশের মুন্সী বাড়ির এক পোলা এরকম একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিলো জনে জনে। ও একদিন সকলে ঘুম থেকে উঠেই তাদের লজিং মাস্টারকে জিজ্ঞেস করলো, 'স্যার স্বপ্নদোষ কি?' স্যারের মুখ কাচুমাচু। খেতে বসে সেখানে তার দুলাভাইকে জিজ্ঞেস করলো, "দুলাভাই স্বপ্নদোষ কারে কয়?"- দুলাভাই ঠান্ডা! তাদের আবার যৌথ পরিবার, খাওয়া দাওয়া সবাই একসাথে।

তার বড়ভাই আমার লগে চলে। সমস্যা শোনাইয়া সমাধান চাইলো। আমি কইলাম, তুই বড় ভাই মানুষ কী আর কইবি? যাইয়া ক, স্বপ্নে কোন দোষ করলে সেইটারেই কয় স্বপ্নদোষ। এইটা কইয়া হাতে মোকছোদুল মোমেনীন বইটা ধরাইয়া দিস। ব্যস কেল্লাফতে।

আর গালি দিয়া আমার অবস্থাও সুবিনয় কাকুর মতো হইছিলো। এক পোলারে গাইমারানিরপুত কইয়া গালি দিয়া যেই ফিরছি, দেখি মা ঘরের সিঁড়িতে। আমার মুখে চামচ দিয়া বাইরাইছিলো আর কইছিলো, 'ক আর জীবনে কাউরে গাইল দিবি?'
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

অয়ন এর ছবি

গাইমারানিরপুত মানে কি?

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- মানে কি কেমনে কৈ, একটা খাটাইশ্যা গালি এইটা জানি।
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

১৯৯৫ সালে চট্গ্রামের একটা বেসরকারী সংস্থা জরিপ করেছিল - কিশোর কিশোরীদের সাংস্কৃতিক মনন অবস্থান পর্যালোচনা। শহর ও মফস্বলের ক্লাস সিক্স থেকে ক্লাস টেনের ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে জরিপ। ফলাফলে সবচেয়ে বেশি পঠিত গল্পের বই/উপন্যাস ছিল - কাশেম বিন আবু বকরের "বোরখা পড়া সেই মেয়েটি", দ্বিতীয় হামিদুর রহমানের "ফুটন্ত গোলাপ"। পরে আমি ভীষণ আগ্রহে এ বই দুটি পড়েছিলাম।
"সুইট গার্ল" এর নামও শুনেছি বেশ। আপনার কাছে কপি আছে? স্ক্যান করে আপলোড করলে পড়ার সুযোগ পেতাম হাসি

হাসান মোরশেদ এর ছবি

এই গল্পটা কার কাছে যেনো শুনছিলামঃ

এক পিচচি মাইয়া তার বাপরে জিগাইলো-'আব্বা ধর্ষন মানে কি?' । বাপ তো পড়ছে মুশকিলে । কি কয়? শেষমেষ কইলো-'এই ধরো কোন পুরুষ মানূষ তোমারে হাত ধইরা টানাটানি করলো,জোরজবরদস্তি করলো- এইটারে কয় ধর্ষন'
মাইয়া কইলো-'বুঝছি'

কয়দিন পর স্কুলের ছুটির শেষে সকল পুলা মাইয়া চলে গেছে । ঐ মাইয়া বইসা বইসা গল্পের বই পড়তেছে । গল্প ও শেষ হয়না ।মাইয়া ও উঠেনা । দারোয়না কয়েকবার তাড়া দিছে । তাও যায়না । শেষ্মেষ বিরক্ত হইয়া তার হাত ধইরা টাইনা নিয়ে দিছে গেইটের বাইরে বার কইরা ।

মাইয়া তো কাঁনতে কাঁনতে বাপরে আইসা কই- 'আব্বাজান, দারোয়ান তো আমারে ধর্ষন করছে'
বাপে কয়-'কি করছে?'
-'ধর্ষন করছে,ধর্ষন'
শুইনা তো বাপজান রামদা হাতে লইয়া দৌড়াইয়া গেছে স্কুলে । দারোয়ান বেটা গেইট লাগাইয়া বাইরো হইবো । তার ঘাড়ে এক কোপ!
-----------------------------------------
মৃত্যুতে ও থামেনা উৎসব
জীবন এমনই প্রকান্ড প্রচুর ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

থার্ড আই এর ছবি

ভাই সক্কাল বেলা কি শুরু করলেন ??
চল্লিশ বছরের চক্কর থাইক্কা বাইর হইতে গিয়া এমন সুর সুরি দেয়া শুরু করলেন যে হাসতে হাসতে মারা যাচ্ছি।
------------------------------------
জল ভরো সুন্দরী কইন্যা, জলে দিছ ঢেউ।
হাসি মুখে কওনা কথা সঙ্গে নাই মোর কেউ।

-------------------------------
স্বপ্নকে ছুঁতে চাই সৃষ্টির উল্লাসে

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

বায়োলজীর টিচার বোর্ডে ব্যাঙের ছবি এঁকে বোঝাচ্ছেন,"এটা পা, এটা মাথা,... আর এটা পায়ু।"
আমাদের ক্লাসের এক পুংটা পোলা খুব নিষ্পাপ ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলো, "পায়ু মানে কী, স্যার?"
স্যারও কম যান না। তিনি অতি "সহজবোধ্য" বাংলায় বুঝিয়ে দিলেন শব্দটির অর্থ।

ভালো কথা। আমি আপনার যাবতীয় লেখার ভক্ত হয়ে পড়েছি। যদিও আপনার ছবি দেখে আর সবার মতোই টাসকি খাইয়া গেছি পুরা দেঁতো হাসি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

হেহেহ অনেক ধন্যবাদ। পাটি অর্গানাইজ কইরা ইমেজের দিক দিয়া বিরাট লস খাইয়া গেলাম দেখতাছি দেঁতো হাসি

আপনের কিয়েভের লেখা এখনো ঝুলায় রাখছেন, মনে করায় দিলাম আরেকবার চোখ টিপি

-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

পুতুল এর ছবি

প্রায়ই আমার শৈশবের কথা মনে পড়লে সেই স্বৈরশাসনের কথা মনে পড়ে। কই গেলো সেই সব!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

নিঝুম এর ছবি

সুবিনয়'দা চরম লেখসেন।বিশেষ কইরা ছোট্টন রে যা কইলেন...এইবার আমার একটা গোপাল ভাঁড়ীও কাহিনী শুনেন-

তখন সম্ভবত ক্লাস এইটে বা নাইনে পড়ি।কুয়াশা ভাইয়া,মাসুদ রানা আংকেল,তিন গোয়েন্দায়ালা দের বই ধুমসে পড়ি।আপনারা তো জানেনই সেবা প্রকাশনীর বই গুলার সাইজ।চিকন চাকন,সাস্থ্য জটিলতায় ভুগছে সারা বছর।এম্নিতেই তো বই গুলা আব্বার ভয়ে বহুত কষ্টে আসল বইয়ের গলি ঘু্পচি দিয়া চামে চিকনে পড়ি,একদিন ছোট ভাইয়ের অসাবধানতা বশত গডফাদারের (ফ্রেন্ড দের ভাষায় "টাইগার"। মাঝে মধ্যেই হালুম-হুলুম শব্দ করার কারনেই কিনা কে জানে...) কাছে ধরা খাইয়া গেলাম।আব্বা কাছে আইসা জিজ্ঞেশ করলো কি বই পরস?...চটি?আমি সজোরে মাথা নেড়ে বললাম ,জি আব্বা।(আমি ভাবসিলাম চিকন বইরেই আব্বা চটি বলতাসে।চটি'র মানে তখনো আমার জানা ছিল না)।টাইগার দেখি খুব বিব্রত হয়ে ও আচ্ছা ,ও আচ্ছা বলে সুরুত করে চলে গেলো।ছোট ভাই আর আমি আব্বার চরিত্রের এহেন বিপর্যয় দেইখা মর্মাহত হইলাম।কেননা আব্বারে দেখলেই আমি তিন নম্বুরি বেতের ব্যপারে পুরাপুরি রেডী থাকতাম ।

এর কয়েক দিন পর ক্লাসে বন্ধু হাসিব একটা বই নিয়া ধরা খাইলো।চারিদিকে ফিস ফাস আওয়াজ শুনলাম-চটি,চটি।এইটা কি এমন খারাপ জিনিষ সেইটাই বুঝতে না পাইরা বন্ধুগরে আমার কথা কইলাম।সবার সে কি হাসি...
পরে অবশ্য আব্বার সামনে ইজি হওয়ার জন্য অনেক কিছু করলাম,যেমন,আব্বা কাছে আইলেই্‌"বড় বড় মনীষিদের ছোট বেলার কথা",ছোটদের বুক অব নলেজ,রাসেল সাহেবের "নিজেকে জানো" এই টাইপ বই উচা কইরা পইড়া দেখানোর চেষ্টা করতাম।লাভ হইলো না।আব্বা ফিরাও তাকাইত না।
কাজের কাজ যা হই্লো ,

আগে আমি আব্বা রে দেইখা ভাগতাম,এখন বাবাজী আমারে দেইখা...

---------------------------------------------------------
ঘুম মানেও একধরনের বেঁচে থাকা...

---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন

মুজিব মেহদী এর ছবি

আমার নিজের এরকম কোনো গল্প নেই, তবে আমাদের দশ বছর বয়সী ছেলের আছে।
টিভি অ্যাডে ডেইলি কনডমের অ্যাড দেখতে দেখতে ক'দিন আগে ড্রয়িং রুমে এক নারী অতিথির সামনেই সে কথাটা পাড়ল, 'পাপ্পা, কনডম কী?' একা হলে লজ্জা পেতাম না। কিন্তু অতিথি থাকায় পেলাম বৈকি। অতিথি মনে হয় লজ্জা আমার চেয়ে একটু বেশিই পেলেন। আমাদের দু'জনের মুখের দিকে একবার করে তাকিয়ে তিনি উঠে ভেতর ঘরে চলে গেলে আমি ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি ওর কৌতূহল তখনো যথারীতি আছে। বাধ্য হয়ে বললাম যে, 'কনডম হলো বিবাহিত নারী-পুরুষের ব্যবহারে লাগে এমন একটি জিনিস, ওষুধও বলতে পার।' সে এরপর বলল, 'তোমরাও ব্যবহার কর?' আমি কতক্ষণ আমতা আমতা করে বললাম, 'হ্যাঁ, করি। কিন্তু তোমার এসব জানা অত জরুরি না। যাও, পড়তে বস। তোমার হোমওয়ার্ক আছে না?'
সে উঠে গেল, কিন্তু মনে হলো ওর মাথায় জিনিসটা তখনো ঘুরপাক খাচ্ছে। আবার কবে এরকম কোন প্রশ্নের মুখে পড়ব, আমরা সে ভয়েই আছি।
...................................................................
অসংখ্য 'নেই'-এর ভিড় ঠেলে
জ্বলজ্যান্ত 'আছে' খুঁজে পাওয়া হলো আসল ফকিরি

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

দুর্দান্ত এর ছবি

এখন ভাবেন, বাঙ্গালির প্রিয় পানিয়ের নাম চা না হইয়া চু হইলে কি বিপত্তি হইত।
ভার্সিটির মামুর কাসে কি চাইতেন?
সকালে ঘুম থেইকা উইঠা বাসার কামের পোলারে কি কইতেন?
কারো নরম হাতের বানানো মিঠা গরম খাইয়া ভাল লাগলে আরেক বার চাইতেন কেমনে?
---

সুবিনয় - চিতারা আর টাইগ্রার পুরাতন লটর পটর, লাইওন-ও ত সেদিনের সবায় কৈশরগত।

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

হাহা ফার্স্টে একটু মাথা চুলকাইতাছিলাম, এতক্ষনে বুঝলাম!

মামু - একটা চু দেন তো
ও বৌ - একটু চু দাও না

এবং ইত্যাদি...
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

লুৎফুল আরেফীন এর ছবি

অতি ছোট্ট বেলা থেকে আমার ভুতের প্রতি আগ্রহ। আমার কাছে কেউ গল্প শুনতে চাইলে আমি অধিকাংশ সময় যে গল্পটা বয়ান করতাম সেটা ছিল আমাদের বাড়ির পেছনের বেল গাছে বসবাসকারী এক গেরস্থালী ভূতের কেচ্ছা। মা বা ছোট চাচার কাছ থেকে কখনোও শুনেছিলাম হয়তো যে, পেছনের বেল গাছে একটা ভূত বসে থাকে। বলাবাহুল্য যে, অবাধ্যতা চরমে পোছালে ছোট্ট পোলাপাইনকে সাইজ করতে মায়েরা এইরকমের অনেক ভূতের আমদানী করে থাকেন।

কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে আমি যখন কাউকে গল্পটি রিপিট করতাম তখন গল্পে অনাবশ্যকভাবে আপত্তিকর শারীরিক বর্ণনা আমদানী করে ফেলতাম (ঢাকাই ফিল্মের পরিচালকদের মতোন!)। আমার সেই বর্ণনায় এক্সপ্লিসিটলি এডাল্ট কন্টেন্ট চলে আসতো। "জানো, আমাদের বাসার পেছনে বেল গাছে একটা ভূত থাকে! সেই ভূতের এত্তো বড় বড় চুল, মূলোর মতোন দাঁত আর এত্তো বড় বড় দুদু!!"

--অবশ্য গল্পের এই পর্বটুকু একবারই আমি আরাম করে বলতে পেরেছি। এরপরে প্রত্যেকবারই মা সতর্কভাবে কান খাড়া করে রাখতেন আর এই জায়গাটাতে পৌছার আগেই , "ওকে আব্বু, আর গল্প বলা লাগবে না, তুমি এখন ঘুমাবা" ইত্যাদি বলে আমাকে ক্ষান্ত করতেন বা সরিয়ে নিতেন আসর থেকে।

আরেফীন

হাসান মোরশেদ এর ছবি

মাকে ভয় পাবেন কি,আপনে তো উলটা মা কেই ভয়ে ভয়ে রাখতেন হাসি
-----------------------------------------
মৃত্যুতে ও থামেনা উৎসব
জীবন এমনই প্রকান্ড প্রচুর ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

নিঘাত তিথি এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

পড়লাম দারুন লেগেছে। আপনি তো আসলেই সবাইরে ভেলকি লাগাইলেন। আমি ভাবতাম আপনে ৪০+। এখন তো মনে হয় আমার বয়সীই!

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

সমববয়সী মানে, ৭২? চোখ টিপি

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

বিপ্লব রহমান এর ছবি

ওরে! দেঁতো হাসি


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।