সাত বছর আগের এক রাত...

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি
লিখেছেন সুবিনয় মুস্তফী (তারিখ: সোম, ২৫/০২/২০০৮ - ৩:৩৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

auto২০০১ সালের ফেব্রুয়ারী মাস। আমি দেশ ছেড়েছি ছয় মাস হয়। সদ্য ইন্ডিয়ানা থেকে টেক্সাস চলে এসেছি একটু উষ্ণতার খোঁজে - মানুষের, প্রকৃতির। বেশ প্রতিকূল সময় যাচ্ছে তখন। দেশ থেকে নিজের জমানো টাকা-পয়সা যা এনেছিলাম, তা সব শেষ। বাসায় যে টাকা চাইবো, সেই পরিস্থিতি নেই। টানাটানি আর টেনশন - এই তখন আমার জীবন।

এদিকে নতুন এক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি, ড্যালাসের অদূরে। একটা বৃত্তির আশায় আছি, কিন্তু তারা বলেছে যে প্রথম সেমিস্টারের ফলাফল দেখে তারপরেই বৃত্তি দেবে। আরো ছয় মাসের ধাক্কা।

এই ছয় মাস কিভাবে চলবে, সেই চিন্তায় আমি কাবু। একটা নয়, দুইটা কাজ নিয়েছি তখন। সকালে ক্লাস করি - অর্থনীতি, গণিত। বিকালে ক্যাম্পাসের admission office-এ একটা পার্ট-টাইম চাকরি করি। আর রাতে কাজ করি দোকানে। গ্যাস স্টেশনে নাইট শিফট, সারা রাত বিড়ি আর মদ বেঁচার ধাক্কা।

এসবের ফাঁকে ফাঁকে কোন রকমে পড়াশোনাটা গুছিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করি। লাইব্রেরীতে যাই, সন্ধ্যায় হোমওয়ার্ক করি। কিন্তু এতো চেষ্টার পরেও হয় না। টাকা যা কামাই, সেটা যথেষ্ট না ভার্সিটির বেতন দিয়ে খেয়ে-পরে চলার জন্যে। টাকার লেপ দিয়ে মাথা ঢাকি তো পা অনাবৃত থেকে যায়। আর পা ঢাকলে মাথা।

*

সেই সময়টায় - ২০০১-এর প্রথমার্ধ - আমি আরো তিনজন মানুষের সাথে রুম শেয়ার করতাম। মইন ভাই ওরফে মনা, ফয়সাল ভাই ওরফে 'ফশু', এবং রাসেল - যার সাথে আমি পরবর্তীতে আড়াই বছর এক সাথে থেকেছি, বর্তমানে আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধুদের একজন। ফ্ল্যাটটা অতিশয় ছোট ছিল। দশ ফুট বাই বিশ ফুট হবে - সেটার মধ্যেখানে দেয়াল ফেলে দুটো পিচ্চি রুম করা হয়েছে। সামনেরটা তথাকথিত 'ড্রয়িং রুম' - আর পিছনে বেডরুম। সেখানে মেঝেতে রাখা ম্যাট্রেসে তিনজন চাপাচাপি করে ঘুমাতো। বিছানা বসানোর কোন জায়গা ছিল না। আর আমি ঘুমাতাম সামনের ঘরে, সোফায় বা স্লিপিং ব্যাগে।

আমাদের পাশের ফ্ল্যাটগুলোর বাসিন্দা ছিল বেশীর ভাগই মেক্সিকোর আদম সন্তান। দক্ষিণে মার্কিন-মেক্সিকান সীমান্ত পেরিয়েছে এরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, পিছনে ফেলে এসেছে নিজ গ্রাম। আমেরিকাতে অবৈধভাবে প্রবেশ করে পরবর্তীতে কঠোর কায়িক পরিশ্রম করে ডলার উপার্জন করবে, এই হলো উদ্দেশ্য। হয়তো কন্সট্রাকশনের কাজ, বা গার্ডেনিং বা ল্যান্ডস্কেপিং। টেক্সাসের ঠা-ঠা রোদে হাড়-ভাঙা সেই খাটুনি। বা ফ্যাক্টরিতে কাজ হতে পারে, তামার তার বানানো নাইলে মরা মুরগী প্রসেসিং করা। আরো কত রকম কাজ এদের! এদের কাছেই মদ বেঁচতাম, নাইলে ফোন কার্ড -

"আমিগো, সার্ভেসা... বন্ধু, বিয়ার নেবো... ই উনা তার্হেতা - সিংকো দলার... আর একটা ফোন কার্ড - পাঁচ ডলার।"

কিভাবে আমি সেই বাড়িতে এসে হাজির হয়েছিলাম, একাধারে মেক্সিকানদের প্রতিবেশী আর দোকানী হয়েছিলাম, সেটা আরেক গল্প। শীতের প্যাঁচালের সিকোয়েল যেদিন লিখবো...

*

তবে আজকের কাহিনীটা একটু অন্য গোছের। ফয়সাল ভাই আর রাসেলও পড়াশোনার মাঝে দিনরাত কাজ করতো। এবং অমানুষের মতো খাটতে পারতো - মইন ভাই সবার থেকে বেশী। উনি ৯৬-এর শেয়ার বাজারে সিরিয়াস ধরা খেয়েছিলেন। সব খুঁইয়ে আমেরিকা চলে আসেন, একটা টুরিস্ট ভিসা নিয়ে। এরপর আর ফেরেননি। এই মানুষটাকে দেখেছি ভোর ছয়টা থেকে এক নাগারে রাত বারোটা পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছে। মাঝখানে মাত্র এক ঘন্টা খাওয়া আর ঘুমের ব্রেক। প্রতিদিন ১৭-১৮ ঘন্টা। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস। সেই মনা ভাই আজ কানাডায়।

ফয়সাল ভাই ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র। আমার মত উনিও অর্থনীতি লাইনের। পড়াশোনা জিনিসটা কখনোই তার বেশী পছন্দ না। দেশে বৌ/গার্লফ্রেন্ড (ঠিক শিওর না মহিলার তখনকার স্ট্যাটাস কি ছিল) - তার সাথে ফোনালাপ করতে করতেই ফশুর সব ফ্রি টাইম চলে যেতো। দেশে বামপন্থী রাজনীতি করতেন - ছাত্র ফ্রন্ট বোধ হয়, নাইলে ছাত্র সমাজ। তাই তার সাথে আমার পলিটিক্স নিয়ে দিনরাত বিতর্ক লেগেই থাকতো। ক্যাপিটালিজম, কমিউনিজম, সোশ্যালিজম। আরো নানা ইজম। সেই ফশুও আজ অস্ট্রেলিয়ায়।

আমাদের চারজনের পরিবারের একটা মাত্র গাড়ি ছিল। রাসেলের গাড়ি - পুরান একটা ছোট্ট মিৎসুবিশি, শাদা রঙ্গের। সেটাতে চেপে ঘুরতাম মাঝে-সাঝে। কত হাজার মাইল চড়েছি সেই গাড়িতে, হিসাব নেই। এসি কাজ করতো না, তাই জানালা নামিয়ে রাখতে হতো সব সময়। নাইলে টেক্সাসের চল্লিশ ডিগ্রি গরমে ব্রেন বাষ্প হয়ে যাওয়ার আশংকা।

*

সপ্তাহের বাজার করতে আমরা যেতাম কাছের এক ওয়ালমার্ট-এ। ২০ মিনিটের মতো ড্রাইভ, হাইওয়ের পাশে। ফুটবল স্টেডিয়ামের মত বিশাল সেই ওয়ালমার্ট - সেখান থেকেই কিনতাম পুরো সপ্তাহের বাজার-সদাই, তরি-তরকারী, মাছ-মাংস। ঘরের প্রয়োজনীয় যাবতীয় জিনিসও। পৃথিবীর সবকিছু কেনার ওয়ান-স্টপ শপ ছিল আমাদের ওয়ালমার্ট।

এই সাপ্তাহিক শপিং ট্রিপ আমরা করতে যেতাম অনেক রাতে। সারা দিন সবাই কাজ বা ক্লাস নিয়ে ব্যস্ত। তাই রাত ১২টা বা ১টার আগে এই ট্রিপ হাতে নেওয়া যেতো না। সুপারমার্কেট ২৪ ঘন্টাই খোলা থাকে, ওদিক থেকে চিন্তা নেই। তাই ফয়সাল ভাই, আমি আর রাসেল মধ্যরাতের নিশুতি ভেদ করে চলে যেতাম, সর্পিল টেক্সাস হাইওয়ের উপর দিয়ে সাঁই-সাঁই গতিতে, পুঁজির মহোত্তম মন্দিরে। ওয়ালমার্টে।

*

শুরুর দিকের ঘটনা। হয়তো ওয়ালমার্টে প্রথম কি দ্বিতীয়বারের মতো আমি যাচ্ছি। রাত প্রায় দেড়টা। গাড়ি চালাচ্ছেন ফয়সাল ভাই। প্যাসেঞ্জার সীটে আমি। পেছনে রাসেল।

আমাদের সেই উপশহর বেশ চুপচাপ এলাকা - অত রাতে রাস্তায় কোন গাড়ি ঘোড়া নেই। হয়তো কয়েক মিনিট অন্তর অন্তর একটা গাড়ি বা ট্রাক চলে যায়।

নির্জন এক রাস্তায় ট্রাফিক সিগনাল পড়লো। লাল বাতি। আশে-পাশে কোন গাড়ি নেই, কোন মানুষও নেই। এই এলাকায় কোন পুলিশও থাকবে না। আমি হলে গাড়ি টান দিয়েই চলে যেতাম। তবে ফয়সাল ভাইয়ের হাতে স্টিয়ারিং - উনি গাড়ি থামালেন। আমরা সবুজ বাতির অপেক্ষায়।

সেকেন্ড যায়...

দশ সেকেন্ড...

বিশ সেকেন্ড...

ত্রিশ সেকেন্ড... আধা মিনিট হয়ে গেলো - মরার লাইট কেন চেঞ্জ হয় না! আমি বেশ অধৈর্য হয়ে গেলাম। পিছনের সীটে রাসেল ট্রাফিক সিগনালের মা-বাপ তুলে গালি দিচ্ছে। ফয়সাল ভাই একাগ্র চোখে লাইট দেখছেন।

এক মিনিটের বেশী সময় পার হয়ে গেলো। এই লাইটে নিশ্চয়ই প্রবলেম আছে। কোন যান্ত্রিক ত্রুটি হবে ভিতরের কলকব্জায়, নাইলে কোন লাইট এতোক্ষণ ধরে লালে আটকে থাকার কথা না।

আমি বললাম -

- 'ফয়সাল ভাই, চলেন, এই লাইটে সমস্যা আছে। হুদা কামে আর কতো ওয়েট করবেন?'
- 'না আরেকটু দাঁড়াই, এখনই লাইট চেঞ্জ হয়ে যাবে।'
- 'আরে ভাই, প্রায় দুই মিনিট ধইরা খাড়ায় আছি আমরা! আশে পাশে তো কাউয়াও নাই। কে দেখবো? চলেন, কিছু হইবো না।'
- 'আরে দাঁড়াও না ভাই, এতো অধৈর্য কেন? কতোক্ষণই বা লাগবে। আমাদের তো কোন তাড়া নাই। সিগনালটা চেঞ্জ হতে দাও।'
- 'ধুর মিয়া, হুদাই বইসা আছি। কোন ট্রাফিক ক্যামেরা নাই এইখানে, কোন পুলিশও নাই। কোন গাড়ি নাই আশেপাশের দুই মাইলের মইধ্যে। সব ঘুমায় আছে। টান দিয়া গেলে কে দেখবো?'
- 'তোমাদের আসলে কোন ধৈর্য নাই। এই তো দেখো লাইটটা চেঞ্জ হয়ে গেছে। কতোক্ষণই বা ওয়েট করলাম আর? এই রওনা দিলাম আবার।'
- 'বেহুদাই বসায় রাখলেন দুই মিনিট। আরো আগেই যাইতে পারতেন কিন্তু।'

এইবার ফয়সাল ভাই বললেন -

- 'যুবায়ের তুমি কয়দিন হইছে আসছো? ছয় মাস?'
- 'হ।'
- 'আমি আসছি দেড় বছর হইছে। তুমি মাত্র নতুন আসছো দেশ থেকে, তাই এখনো সব কিছু বুঝতেছো না। আরো টাইম গেলে বুঝবা।'
- 'এইখানে না বুঝার কি আছে? সিগনালটা ব্রেক করলে কি আসলে কোন ক্ষতি হইতো?'

- না, তা হয়তো হইতো না। কিন্তু তুমি ব্যাপারটা একটু অন্যভাবে চিন্তা করো। ধরো আজকে আমি সিগনালটা ভাংতাম। রাত দেড়টা, কেউ নাই, তাই কোন প্রবলেম হতো না। কিন্তু ধরো, কালকে আমি সেই একই চিন্তা করে আবার এই একই সিগনালে টান দিলাম। হয়তো অন্য কোন সময়ে - রাত ১০টা বা ১১টা বাজে।

আজকে আমাকে কেউ দেখলো না। কিন্তু কালকে আমাকে আরেকটা গাড়ি দেখবে। আমার দেখাদেখি সেই ড্রাইভারও এই সিগনাল ভাংবে। পরশুদিন তার দেখাদেখি আরো দুইটা গাড়ি ট্রাফিল সিগনাল ভাঙার চিন্তা করবে। এবং তাদের দেখে আরো পাঁচটা গাড়ি। এইভাবে করে আসতে আসতে সবাই যদি সিগনাল ভাঙ্গা শুরু করে, তাইলে এক সপ্তাহ পরে এইখানে আর দেখা লাগবে না। সারাক্ষণ জ্যাম লেগে থাকবে। কেউ নিয়ম মানবে না, ট্রাফিক আর রাস্তায় চলতে পারবে না।

এইখানে খেয়াল করবা, সমস্ত ড্রাইভার রাস্তার নিয়ম কানুন মেনে চলে, সবচেয়ে ছোট নিয়মগুলাও। যেইখানে স্লো করতে বলে স্লো করে, স্টপ করতে বললে স্টপ। লাল লাইট মানে, জেব্রা ক্রসিং মানে। কেউ যদি আশে পাশে না থাকে, তাইলেও নিয়ম ভাঙে না। কেন বলো দেখি?

- আপনেই বলেন? আমার শুকনা জবাব।

- কারন এরা জানে আজকে নিয়ম ভাংলে কালকে তার খেসারত নিজেদেরই দিতে হবে। আজকে যেই রাস্তা পার হইতে দশ মিনিট টাইম লাগলো, কালকে সেই একই পথ পাড়ি দিতে গেলে আধ ঘন্টা যাবে গিয়ে জামে বসে থাকতে থাকতে। নিয়ম কিন্তু বানানো হইছে ওদের সুবিধার জন্যেই। এতোটুকু সেন্স ওদের আছে। আজকে নিয়ম ভাংলে এখন কুইক সুবিধা পাবা ঠিকই কিন্তু পরে গিয়া সেইটার মাশুল বুঝবা। এরা ছোটকাল থেকেই শিক্ষা পায় এইসব - নিয়মানুবর্তিতা কি জিনিস, ডিসিপ্লিন, শৃংখলা, সব এদের স্কুলে শেখানো হয়। সিভিক্স - নাগরিকবোধ। নাইলে এরা এতো উন্নতি করতে পারতো না।

তুমি তো মাত্র দেশ থেকে আসছো, তাই এইসব হয়তো বুঝবা না এখনো, কিন্তু কানেকশানগুলার কথা নিজেই চিন্তা কইরো।

ফয়সাল ভাইয়ের লেকচারের কোন জবাব সেদিন আমার মুখে আসেনি। তর্কে জেতার কোন চান্স তিনি আমাকে দেননি। পরে তার কথাগুলা নিয়ে অনেকবার ভেবেছি, বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন সময়ে। বুঝেছি যে উনি যা যা বলেছিলেন সেই রাতে, তার একটাও ভূল বলেননি। উন্নতি আসার প্রথম শর্তই শৃংখলা, নিয়ম মানা, আইন মানা। এই ফ্রেমওয়ার্কের বাইরে চলে আসলে দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন কি আসলে সম্ভব? শর্ট টার্মে কিছু লাভ হয়তো করা যায় - সময় বাঁচে বা টাকা জমে - কিন্তু সেই উন্নয়ন সমাজের অস্থি-মজ্জা পর্যন্ত পৌঁছাবে না। এই পরিবর্তনটা চিন্তা-ভাবনায় পরিবর্তন - মানসিকতায়, নাগরিকতায়। আদৌ কি সম্ভব?

সব সময়ই মনে হয় যে বিদেশে যতকাল যাবৎ আছি, যত পড়াশোনা করেছি, যত কাজ করেছি - কোনটা থেকেই এত কিছু শিখতে পারিনি, ফয়সাল ভাই সেই রাতে সেই ট্রাফিক লাইটের সামনে দাঁড়িয়ে যেই অতি মূল্যবান শিক্ষাটা আমাকে দিয়েছিলেন।

*

উন্নয়ন ও অর্থনীতি নিয়ে আমার আগ্রহ অনেক দিনের । এই বিষয়ে কিছু নতুন পোস্ট 'না বলা কথা' ব্লগে লিখেছি। প্রথম সিরিজটি আমাদের কৃষি নিয়ে। মডুদের অনুমতি সাপেক্ষে লিংক তুলে দিলাম - কৌতুহলী পাঠকরা পড়ে দেখতে পারেন এখানে আর এখানে


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

**********দিনমজুর***************
আপনার কৃষি নিয়ে লেখা পোস্ট পড়লাম, সেখানেই মন্তব্য করতাম - কিন্তু রেজিস্টার করতে গিয়ে দেখি আমার মেইল এড্রেসে কোন পাসওয়ার্ড এখন পর্যন্ত পাঠানো হয়নি।

দুটি বিষয় বলতে হচ্ছেঃ
১। এই কৃষি সেক্টরটিই কিন্তু আমাদের জনগোষ্ঠীর দুই তৃতীয়াংশের কর্মসংস্থান করছে। আপনি এই বৃহৎ কর্মসংস্থানের অর্থনৈতিক ভূমিকাকে গণনায় ধরেননি।
২। জিডিপির হিসাবটি কিরূপে নিরুপিত হয়??
সেটির আলোচনাটিও এখানে খুব দরকার।

যাহোক, আশা করি আপনি আমার কৃষি নিয়ে লেখা (সচলায়তনেই আছে!!) পড়ে দেখবেন ও মন্তব্য করবেন।

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

দিনমজুর ভাই,
আপনার সাথে তর্কে যাওয়ার যে খুব একটা ইচ্ছা নেই, তা হয়তো বুঝতে পেরেছেন। আপনার অনেক কথার সাথে সম্মতি প্রকাশ করি, আবার অনেক কথার সাথে করি না। আমি বিশ্বাস করি যে একটা জাতির উন্নতির দায়িত্ব সেই জাতিকেই নিতে হয়। বহির্বিশ্বের ষড়যন্ত্র এজন্যে কম খুঁজি - ষড়যন্ত্র যদি সত্যিও হয়, তারপরেও সেটা এক প্রকারের অজুহাতই মনে হয়। সমস্যা এবং তার সমাধান, এই বিষয়েও আপনার সাথে অনেক মতানৈক্য আছে। আমার মনে হয়েছে যে আপনি আপনার বিশ্লেষণ এবং চিন্তাধারায় অনেক বেশী ideological, অনেক বেশী hard-line। কার অ্যাপ্রোচ সঠিক আর কারটা বেঠিক, সেটা বিচার করার দায়িত্ব আমার না। তবে এই দুই অ্যাপ্রোচের মধ্যে তর্ক কতখানি ফলপ্রসূ হতে পারে, তা নিয়ে ঢের সন্দেহ আছে। আমি কৃষি নিয়ে যেই লেখাগুলো দিয়েছি, তা কোন এজেন্ডা থেকে লিখিনি। জনসংখ্যা বিস্ফোরণ থেকে মুক্তি পেতে হলে কৃষিখাত যে আদৌ কোন সমাধান নয়, সেটা এক লেখায় বোঝানো সম্ভব নয়। এজন্যেই সিরিজের সূত্রপাত। যুক্তি, তথ্য আর বিস্তর লিংক ছাড়া কোন লেখা দেওয়ার ইচ্ছা নেই। তবে এই নিয়ে বিষদ লেখালেখি ইতিমধ্যে হয়েছে - পৃথিবীর বড় বড় উন্নয়ন অর্থনীতিবিদরা তা লিখে গেছেন - তাদের আপনি নিওলিবারেল বলে গালি দেন বা না দেন। (এইসব নানা প্রকার খেলো লেবেল-এও বিশ্বাস করি না।) যাই হোক, ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা আরো জোরালো হোক, সেই কামনাই করি। ধন্যবাদ।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

হাসিব এর ছবি

টাকার লেপ দিয়ে মাথা ঢাকি তো পা অনাবৃত থেকে যায়। আর পা ঢাকলে মাথা।

এই অবস্থা আমারো গেছে ।

আজকে আমাকে কেউ দেখলো না। কিন্তু কালকে আমাকে আরেকটা গাড়ি দেখবে।

আমাগো এইখানে ফটুক তুইলা রাখবে । তারপর বাসায় জরিমানা পাঠায় দেবে ।

অতিথি লেখক এর ছবি

***********দিনমজুর**************
জিডিপি নিয়ে কটি প্রশ্নঃ
১। অভ্যন্তরীন অর্থনৈতিক যাবতীয় উতপাদনকে মানিতে কনভার্ট করার সিস্টেম কি? উতপাদিত কৃষি পণ্যের মূল্য কিভাবে নিরূপিত হয়? আন্তর্জাতিক বাজার অনুযায়ি, না দেশীয় বাজার অনুযায়ি, না-কি চাষী যে মূল্যে উতপাদিত পণ্য বিক্রয় করে সে দামে?
২। এই উতপাদনের যে অংশ মার্কেটে আসে না, (এখন পর্যন্ত পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় কৃষিই একমাত্র উতপাদনের সেক্টর যার একটা অংশ মার্কেটে না এসে সরাসরি ভোগ্য হয়)- সেটি কি জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত হয়?
৩। শুধু জিডিপি কি একটি রাষ্ট্রে অর্থনৈতিক অবস্থার সঠিক চিত্র দিতে পারে? ধরেন, ননপ্রোডাকটিভ সেক্টর যেসব আছে, সেগুলোর কর্মকাণ্ড কিভাবে বিচার করবেন? মানি সার্কুলেশন, ফ্লো এসবের প্রভাব কি?

বাকিটা পরে বলবো............

ধ্রুব হাসান এর ছবি

বরাবরের মতো সুন্দর ও ঝরঝরে বর্ণনা, সবারই মনে হয় প্রবাস জীবনের সুচনা প্রায় এক তবে আমার হালার এখনো স্ট্রাগল গেলনা, নুন আনতে পান্তা শেষ! তবে আপনার লেখাটা পইড়া আবার একটু চাঙ্গা হইলাম; কিন্তু একটা পরামর্শ দরকার, আমার পেছনে লেগে থাকা ভয়াভহ টাইপের ঘুমটা কেমনে তাড়ায় কন তো?

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

খবর কি ভাই? লং টাইম নো সি। সিপকে'র সাথে চলেন খানা-পিনা অর্গানাইজ করি আরেকটা। আপনের দাওয়াত কই?!
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

ধ্রুব হাসান এর ছবি

আবার বাসা বদলানোর ঝামেলায় পড়ে গেলাম, তবে যেদিন কবেন হেদিন আয়োজন হবে; শুধু উইক এন্ড ছাড়া (আপাতত এই টাইমে ব্যস্ততা একটু বেশী)। আর কেন গায়েব তা না হয় সাক্ষাতে কমুনে।

রাতুল এর ছবি

ভয়াভহ টাইপের ঘুমবিদদের জন্য:

প্রতিদিনের রূটিনে যদি খুব বেশী পরিবর্তন না থাকে তাহলে "ঘুমের একটু আগে টানা চার থেকে পাচ মিনিট বসে চোখ বুজে হিসাব করবেন কাল সকালে কিকি কাজ আছে।"
চোখ বুজে প্লান করা শেষ না ছাড়া ঘুমাবেন না।
প্লান টাকে ২বার ৩বার ৪বার এভাবে বিরক্ত হয়ে যাওয়া পর্যন্ত রিপিট করতে থাকুন।
এটা আমারে খুব কাজে দিছে!!

ধ্রুব হাসান এর ছবি

ধন্যবাদ ভাই, ট্রাই করে দেখুম নে!

বিপ্লব রহমান এর ছবি

চমৎকার লেখা। ... যাকে বলে জাঝা।

প্রবাস জীবনের 'স্ট্রাগল ইন সায়েন্স' এর বিষয়ে আগামীতে আরো লেখার অনুরোধ রইলো।...


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ভাল লাগছে। সবার চিত্রেই দেখি কাছাকাছি রকমের মিল। ডিসিপ্লিন না হলে কিছুই হবে না, ঠিক। ফরচুনেটলি এই ডিসিপ্লিনের কারণেই দেশে আমাকে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। আমি আমার বন্ধুদের মাঝেই দেখেছি ডিসিপ্লিন বলে তাদে কাছে কিছু নেই। লাইনে না দাঁড়িয়ে বিশেষ কসরতে আগেভাগে কাজ হাসিলেই তাদের আনন্দ। আমি তাদের বহু পশ্চাতে।
...............................
আমার লেখাগুলো আসে স্বপ্নের মাঝে; স্বপ্ন শেষে সেগুলো হারিয়ে যায়।

নিঘাত তিথি এর ছবি

চলুক
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

ক্যামেরার দৌরাত্ম্যে আজকাল আর লালবাতি মেরে দেওয়ার উপায় নেই। যথাসময়ে টিকেট এসে হাজির হয়ে যাবে।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

তাই নাকি? আমিতো জানতাম ক্যামেরা লাগানো থাকলে সেটা জানান দিয়েই লাগাতে হবে অর্থাৎ ক্যামেরা যে লাগানো আছে সেটা লালবাতির উপরে বা আশেপাশে লেখা থাকতে হবে। কানাডার যেসব এলাকায় থেকেছি সেখানে এমনই দেখেছি।
...............................
খাল কেটে বসে আছি কুমিরের অপেক্ষায়...

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

এখানে (জাপানে) দেখি লোকে গাড়ীতে একধরনের ডিটেকটর ব্যভার করে, যেটা রাস্তায় ক্যামেরা ঝুলানো থাকলে ৩০ মিটার আগে থেকে এ্যালার্মের মতো সিগনাল দেয় ,,, সেটা অবশ্য হাইওয়েতে বেশী কার্যকর, কারণ হাইওয়েতে স্পীড ক্রস করলে মিনিমাম ৭০০ ডলার গুনতে হবে মন খারাপ
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

জাহিদ হোসেন এর ছবি

চমত্কার লাগলো লেখাটি।
আপনিই কি যুবায়ের?_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

খুবই ভাল লাগলো। সুবিনয় তাহলে যুবায়ের? চোখ টিপি পরিচিত হয়ে ভাল লাগলো। দেঁতো হাসি

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

যুবায়ের মানে? ইনি কি যুবায়ের নামেও সচলে লেখেন নাকি? মনে হচ্ছে বেশি গেস করছি..
...............................
খাল কেটে বসে আছি কুমিরের অপেক্ষায়...

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

এখন গিট্ঠু খোলার দায়িত্ব সুবিনয় মুস্তফীর। দেঁতো হাসি

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

গিট্টু তাইলে খুলি - আমি আর ড্যালাসের মুহম্মদ জুবায়ের দুইজন ভিন্ন মানুষ।
উনি সিনিয়র, আমি জুনিয়র।
উনি ড্যালাসে, আমি লন্ডনে। (যদিও আমিও ড্যালাসে থাকতাম অনেক আগে, কিন্তু ওনাকে তখন চিনতাম না।)
উনি ফ্যামিলি ম্যান, আমি এখন পর্যন্ত না!
উনি শিক্ষক, আমি ওনার থেকে শিখি।

আর শেষ এবং সবচেয়ে বড় তফাত - উনি লেখেন জুবায়ের, আমি লেখি যুবায়ের!
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

শেষমেশ আমি শিক্ষক? মন খারাপ

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

রেজওয়ান এর ছবি

নিয়ম শৃঙ্খলার এই উদাহরণটি চমৎকার। এটি আসলেই একটি অভ্যাসের ব্যাপার। আর ব্যক্তিগত সততা এবং সম্মানবোধও পশ্চিমা সভ্যতার একটি উল্লেখযোগ্য ব্যাপার।

আমার কিছু ব্যবক্তিগত অভিজ্ঞতা আছে জার্মানীর। দোকানে খুচরা পয়সা সবাই পাই পাই ফেরত দেবে আপনি নিতে না চাইলেও। এমনকি রেস্টুরেন্টে ওয়েটার টিপস পর্যন্ত নেয় না। আর দামাদামির ব্যাপারে সাবধান। যেন এই ধারণাটি না প্রকাশ হয় যে সে অযথা বেশী চাচ্ছে। এমন ভাবে বলা উত্তম যে 'তোমার শেষ অফার কি' অথবা 'আমি এত হলে কিনতে পারব'। দোকানদার হয়ত বলল এটি হ্যান্ড মেড জিনিষ। আপনি সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাল বা কোন মন্তব্য করলে তার রেগে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। সঠিক জার্মান রক্ত হলে সে এই সততাটুকু রাখার চেষ্টা করে যে মিথ্যা কথা বলে কোন কিছু না বিক্রি করবে না।

ওদের সততার আরেকটি ব্যাপার - ভোগ্যপণ্যের ন্যুনতম কোয়ালিটি রাখার চেষ্টা করে। জার্মানীতে তৈরি ব্যাটারীচালিত ব্লাড প্রেসার মাপার যন্ত্র (সাধারণত ৫০ ইউরোর বেশী) যখন সেল এ ১০ ইউরোতে দেখবেন তখন নিশ্চিন্তে কিনতে পারেন। কারন কমদামী জিনিষে হয়ত কোয়ালিটি ১৯-২০ হবে কিন্তু কখনই চাইনিজ মালের মত রদ্দি হবেনা। মেইড ইন জার্মানি হলে কোয়ালিটি পাক্কা যত সস্তাই হোক।

আর প্রযুক্তি তাদের অনেক সাহায্য করে সততা রক্ষায়। জার্মানীর পেট্রোল পাম্পগুলি প্রায় সবই আনম্যান্ড সেল্ফ সার্ভিস (ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা থাকে)। আমি কখনও কাউকে টাকা না দিয়ে তেল ভরে চলে যেতে দেখিনি।

"এখানে (জাপানে) দেখি লোকে গাড়ীতে একধরনের ডিটেকটর ব্যভার করে"

ওটি কিনতে এক গাদা টাকা খরচ না করে বরং পোর্টেবল স্যাট নেভিগেটর কেনা ভাল। কিছু মডেলে এখন স্পিড রাডার ওয়ার্নিং সুবিধা দেয়া থাকে। আরও থাকে স্পিড লিমিট ওয়ার্নিং যা খুবই একটি দরকারী জিনিষ অচেনা যায়গায় ভ্রমনে।

পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

সুবিনয় ভাইঃ
এরকম আরো কিছু লিখেন। আমরা পড়ি ।

দ্রোহী এর ছবি

চমৎকার একটা লেখা !


কি মাঝি? ডরাইলা?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।