জন্মদিন

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি
লিখেছেন সুবিনয় মুস্তফী (তারিখ: বুধ, ১৯/০৩/২০০৮ - ৫:২৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

জানতে পারলাম আমার এক বন্ধুর জন্মদিন ছিল। অফিসের কলিগদের খাওয়াতে নিয়ে গিয়েছিল। বিল দিয়েছে ১২,০০০ টাকা।

আর তার কিছুক্ষণ পরেই পড়ি এই খবরআর এই খবর। চালের দাম অনবরত বেড়েই চলেছে। ভারত সরকার চাল রপ্তানীর উপর বিধিনিষেধ বসিয়েছে। ভারতের মোটা চাল - যেটা গরীবরা খেয়ে বেঁচে থাকে। স্থলপথ দিয়ে যেটা আমাদের দেশে আসে।

আমাদের সরকারী গবেষকরাই বলছেন যে শুধু নুন দিয়ে ভাত খেতে গিয়ে গরীব পরিবারগুলো এখন তাদের ৮০% শতাংশ আয় নিঃশেষ করে ফেলছে। বাকি ২০% দিয়ে কি করা সম্ভব?

রায়ট আর মারামারি লাগাটা সময়ের ব্যাপার মনে হচ্ছে। অন্যান্য দেশে হয়েছে ইতিমধ্যে। আফগানিস্তানে, মিশরে - বিচ্ছিন্নভাবে। হঠাৎ করে হয়তো কোন একটা র‌্যান্ডম ঘটনা থেকে শুরু হবে। সেটাই বিদ্যুৎ বেগে ছড়িয়ে পড়বে চারিদিকে।

আর এইদিকে অভিজাত রেস্তোরায় অল্প কয়েকজনের লাঞ্চের বিল উঠছে ১২,০০০ টাকা। আমি ভাবি এই সব ছাইপাশ বুলশিট কেন লিখে যাই। শুধু শুধুই। টোটালি ফাকিং পয়েন্টলেস। এর থেকে চোখ কান তালা মেরে বাইরে গিয়ে লাইফ এঞ্জয় করাটাই বোধ হয় ভালো ছিল। এই সব জানতে হতো না। এই সব বালছালও লেখতে হতো না। বুলশিটের পাহাড় জমেছে শুধু, আর কিছুই হয়নি।


মন্তব্য

রাগিব এর ছবি

এসব খবর পড়ি, আর দুবেলা পেট ভরে খেতে গিয়ে অপরাধী অনুভব করি নিজেকে। আমাকে পড়ালেখা শিখিয়েছে যারা, সেই লাখো কৃষক আজ আধপেটা খেয়ে থাকছে। আপনার যেমন মনে হয়েছে, সেরকম আমারো মনে হয়, বন্ধুদের মতো এসব ভুলে গিয়ে লেক্সাস, প্রিয়াস, অথবা লাখ কয়েক ডলারের বাড়ির গল্প কিংবা ঈদে কত যাকাত দেয় কে, সেই প্রতিযোগিতায় গা ভাসাতে পারলেই হয়তো ভালো থাকতাম। যেই নুন খেয়েছি তার স্বাদ মুখে লেগে আছে, তাই আয়নায় নিজের ভরাপেট খাওয়া চেহারা দেখতে লজ্জ্বা লাগে চরম।

----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
http://www.ragibhasan.com

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

দ্রব্যমূল্যের এরকম শনৈঃ শনৈঃ ঊর্ধ্বগতির কারণ কি কি?
প্রতিকারের কি কি উপায় সরকার নিতে পারে?

এটা নিয়া আলোচনা করা যায়? কি ভাবছেন?

তাহলে শুরু করুন @ মুস্তফী (আপনার বিশ্লেষনটা জানতে চাচ্ছি)
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

বাদশা,

চালের দাম বাড়ার পেছনে কারনের অভাব নেই - সিডর আর বন্যা, তেলের দাম আর রুপির দাম, বড় বড় উৎপাদক দেশে নগরায়ন আর উন্নয়ন, তাদেরও প্রডাকশন সংকট আর মূল্যস্ফীতি সবই আছে এর মধ্যে।

অশনি সংকেত শিরোনামে একটা সিরিজ অলরেডি শুরু করেছি অন্যত্র। মডুদের অনুমতি সাপেক্ষে তার লিঙ্ক তুলে দিলাম। প্রথম দুটো পোস্টে চালের মূল্যস্ফীতির বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরেছি। তবে ইচ্ছে আছে পরবর্তীতে এই বিশ্বব্যাপী খাদ্য ক্রাইসিসের পুংখানুপুংখ বিশ্লেষণে যাবার।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

ধন্যবাদ মুস্তফী

পড়লাম আপনার বিশ্লেষণগুলো
তারমানে কি এই দাঁড়াচ্ছে যে অদূর ভবিষ্যতে এই দাম কমার কোন লক্ষণ নেই?...সরকারেরও কিছু করার নেই?...এই সরকার জনসমর্থিত নয় বলে ধরা খেয়েছে ... নির্বাচিত সরকার এসেও কিছু করতে পারবেনা?...অন্যকথায় এখন যদি দেশে নির্বাচিত সরকার থাকত তাহলেও কিছু হতোনা?

আরেকটা জিনিস আমার কাছে দুর্বোধ্য লাগছে ,,, জাপানের মার্কেটে চালের দাম সেহারে বাড়েনি ,,,৫% থেকে ১০%!!!!
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

"নির্বাচিত সরকার এসেও কিছু করতে পারবেনা?" অনেকাংশে তাই। সমস্যাটা বিশ্বব্যাপী রূপ নিয়েছে। গণতন্ত্রী, অগণতন্ত্রী সব সরকারই এই সমস্যা নিয়ে মহা হিমশিম খাচ্ছে। রাশিয়া ও চীন, দুই দেশেই মূল্যস্ফীতিকে ২০০৮ সালের public enemy no. 1 সাব্যস্ত করা হয়েছে।

তবে তত্ত্বা-সরকার আরো কিছু গাধামি করেছে। কাঁচা বাজার উচ্ছেদ করাতে খাবারের দাম আরো বেড়েছে। একেবারেই বেদরকারী ছিল এই পদক্ষেপ। বাজার চলে বিভিন্ন লেভেলে - গরীব লোক কিনে রাস্তা থেকে, বড়লোক কিনে এসি দেওয়া দোকান থেকে পলিথিনে মোড়ানো প্যাকেজিং-এ। গরীবদের বাজার উচ্ছেদ করে দিলে সেই দ্রব্যের মূল্য বাড়তে বাধ্য। অর্থনীতিবিদ ফখরু এই সহজ সত্যটা কেমনে মিস করলো, আমার বোধগম্য না।

এখন আশায় থাকতে হবে সামনের ধানের সীজন যেন ভালো যায়। কৃষি সেক্টরের রিফর্মের দিকে নজর দেওয়াও জরুরী হয়ে পড়েছে। তবে সেই বিষয়ে এখনো পড়াশোনা করছি।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

দিগন্ত এর ছবি

এগুলো যত পড়ি পৃথিবীতে তত নিজেকে ছোট বলে মনে হয়। এত বড় পৃথিবীতে কারোরই কি কিছু করার নেই?


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

শেখ জলিল এর ছবি

দ্রব্যমূল্যের বিহিত না হলে জনগণকেই তার বিহিত করতে হবে। একটু জেগে ওঠার অপেক্ষা!

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

পড়ে খুবই লজ্জা পেলাম। জানিনা আমরা কোথায় চলেছি আর এই পথেরই বা শেষ কোথায়।

রাতুল এর ছবি

মনে পড়ে গেল আহসান হাবীবের "ধন্যবাদ" কবিতাটা।

বসের মেয়ের জন্মদিন ভেবে গরীব কেরানী বসের বাসায় চকলেট নিয়ে গিয়ে দেখে বসের কুকুরের জন্মদিন----- সেই ঘটনাটা।

বায়োফুয়েল যে কিভাবে পুরা দুনিয়া ব্যাপী খাবার সংকট তৈ্রী করবে তা ফিদেল কাস্ত্র প্রায় এক বছর আগেই বলেছিলেন। প্রথম আলোতে পড়েছিলাম। তখন ও বুঝতে পারিনি আর এক বছরে চালের দাম দেড়্গুন হয়ে যাবে।

কে জানে সামনের বছর হয়ত তিনগুন হয়ে যাবে!!

বিপ্লব রহমান এর ছবি

.ভাবতেই ভয় হয়, আগামীতে কি হতে যাচ্ছে!

সরকারেরই কর্তাব্যাক্তি আকবর আলী তো বলেই ফেলেছেন, দেশে নীরব দুর্ভিক্ষ চলছে। আর এ সবের প্রভাব পড়বে আইন - শৃঙ্খলার ওপর। সর্বত্র দেখা দেবে অস্থিরতা। খবরের লিঙ্ক।

অন্যদিকে মইনের ঘোড়াগুলি আজই দেশে এসে পৌঁছেছে। নিন্দুকেরা বলে, ইম্পোর্টেড সিক্স হর্স পাওয়ার!


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

http://sotacit.wordpress.com/2008/03/18/butenis-bitches-deliver-boeing-payback/

দেখেন বিমান আর বুটেনিস। Neo-colonialism একেই বলে। হাসবো না কাঁদবো?
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

পরিকল্পনাহীন একটা দেশে এরচেয়ে ভালো কিছু আশা করা অন্যায়। সবাই নিজের দুই টাকার স্বার্থে দেশকে লাখ টাকার বাঁশ দিয়ে যায়।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

চাওলের দাম তো একলা শুধু বাড়ে না... সঙ্গে বাড়ে সবকিছুর দাম... রিক্সাভাড়া ট্যাক্সিভাড়া বাড়িভাড়া সব...
সেই সুবাদে সরকার সিদ্ধান্ত নিছে সরকারী কর্মচারীদের বেতন বাড়াবে... তাহলে বেসরকারীরা আর কৃষকরা কি চুষবে? ঘোড়ার অণ্ড? সেই ক্ষেত্রে ঘোড়া অনেকগুলা লাগবো।

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

Inflation এর থেকেও বেশী ভীতিকর জিনিস হলো জনসাধারণের মনে inflation expectations প্রোথিত হয়ে যাওয়া। ভবিষ্যতে উত্তরোত্তর মূল্যস্ফীতির আশংকা, যা বর্তমানে জিনিস-পত্রের দাম আরো উপরে ঠেলে দিতে সাহায্য করে। আমরা বোধ হয় সেইদিকেই এগুচ্ছি অতি দ্রুত। এর চূড়ান্ত পরিণতি গিয়ে দাঁড়ায় বল্গাহীন মূল্যস্ফীতি - ১০% ছাড়িয়ে বছরে ২০-৩০% পর্যন্ত যেতে পারে। আর খুব জঘন্য অবস্থা হলে জিম্বাবুয়ের গত তিন-চার বছরের চেহারা দেখুন।

গরীবের জন্যে এ রকম মূল্যস্ফীতি কপালে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করার মতই। যেই লোকের আয় ৫০০০ টাকা সে মাসে ১০০০ টাকার খাবার কিনতেই পারে। তারপরেও হাতে বেশ কিছু বাকি থাকে, বাকি মাস চলে যায় কোনভাবে।

কিন্তু যার আয় ১২০০ টাকা, তার জন্যে ৭০০ টাকার খাবার কিনলেও পরিবার নিয়ে বাকি মাস চালানো মুশকিল হয়ে পড়ে। এই জন্যেই food price inflation আমাদের জন্যে খুবই বিপজ্জনক। কারন আমাদের সমাজে ১২০০ টাকার মানুষই বেশী।

সরকার যে কি করছেন inflation expectations কমাতে, সেটা জানা নেই। এই নিয়ে সিরিজ আরো বর্ধিত করার ইচ্ছে আছে।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

আপনার সাথে ডিসকাস করে মজা আছে ,,,,খুবই টু দ্য পয়েন্ট এবং বোধগম্য ,,,,আমি অর্থনীতি পড়িনাই ,,, কোনদিন পড়িনাই!! চোখ টিপি

এই যে ইনফ্লেশন এক্সপেকটেশনের কথা বললেন, এটাতে মিডিয়ার অবদান কতটুকু? ,,,আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা বলে বেশ আছে ,,, এই ইনফ্লেশন এক্সপেকটেশন কমানোর জন্য মিডিয়া কোন ভূমিকা রাখতে পারে?

সরকার কি কি পদক্ষেপ নিতে পারে? ,,, আপাততঃ মাথায় যেটা আসছে সেটা হলো ফড়িয়াদের নিয়ন্ত্রণ ,,,, কিন্তু ফড়িয়ারা যে লার্জ স্কেলে এবং লার্জ স্পেসে বিরাজ করে, এই নিয়ন্ত্রণের ইনফ্রা সরকারের আছে কিনা, সেটা নিয়েও সন্দেহ আছে ,,, তবে যতটুকু আছে সেটা নিয়ে নেমে পড়া উচিত ,,, ড়্যাবের এখন পাড়ার ছিঁচকে মাস্তানের চেয়ে ফড়িয়া নিয়ন্ত্রণে মনোযোগ দেয়া উচিত
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

এই বিষয়টা আসলে এত ব্যাপক যে শুধু মন্তব্যে তার প্রতি সুবিচার করা অসম্ভব! কয়েকটা বড়-সড় পোস্ট ছাড়া উপায় নাই...

আপডেট - UN official says Bangladesh needs help in coping with global price rises (International Herald Tribune)

পড়ে দেখার মতো পুরোটা। আরব দেশগুলো থেকে খাদ্য কেনার ব্যাপারে আর্থিক সহযোগিতা চাওয়া হচ্ছে। আর কত শরমিন্দা হওয়া লাগবে দুনিয়ার কাছে?
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

সবজান্তা এর ছবি

একটা হিসাব শুনেছিলাম, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রের পেছনে কত লাখ টাকা যেন খরচ হয় ( হুবহু খেয়াল নেই, তবে সংখ্যাটা বিশাল , রাগিব ভাই কিংবা অন্য কেউ হয়ত বলতে পারবেন )। আমার মাঝে মাঝে খুব হতাশ লাগে। যে দেশের লোক দু বেলা পেট পুরে খেতে পায় না, তারা টাকা দিয়ে আমাকে রাজকীয় এই পড়ার খরচ যোগাচ্ছেন। বিনিময়ে আমি তাদের কি দিবো ? জি আর ই দিবো, বাইরে চলে যাবো, আর কোন দিন দেশে আসবো না, আর কথায় কথায় দেশকে 'ডিসগাস্টিং' বলবো, বিস্ময় প্রকাশ করবো এত ধূলা, দূষণ আর দুর্নীতির মধ্যে মানুষ কি ভাবে থাকে !!

খুব ভালো মতই জানি, আজ থেকে বছর খানেক পর এক খারাপ লাগাটাও থাকবে না।

আমি জানি লেখার সাথে মন্তব্যটা প্রাসঙ্গিক হোল না, তবু বললাম।

কতটা অকৃতজ্ঞ আমরা এই তথাকথিত শিক্ষিত বাঙ্গালীরা !!
-----------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ

দিগন্ত এর ছবি

সম্পূর্ণ প্রাসঙ্গিক কথা। ব্রেন-ড্রেনের একটা সীমা আনা দরকার ... কিছু টাকা শোধ করে যাওয়া অন্তত।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

খুব একটা একমত হতে পারলাম না আসলে। প্রথমত - 'দেশ প্রেম'-এর মূলা দেখিয়ে আপনি একটা মানুষকে সারা জীবন কম টাকার ঘানি টানাতে পারবেন না। মানুষের loyalty বা স্বার্থ-চিন্তা প্রথমত নিজের প্রতি, তারপরে নিজের পরিবারের প্রতি, এবং তারপরে সমাজ ও দেশের প্রতি। যেই বুয়েট গ্র্যাজুয়েট দেশ ছেড়ে চলে গেল, আমেরিকা বা ইউরোপে একটা ভালো চাকরি জুটিয়ে দেশে বাপ-মাকে ভালো বাসায় তুলে দিল, ভাই-বোনদের ভালো স্কুল-কলেজে ঢোকার সুযোগ করে দিল, তাকে আপনি কিভাবে বিচার করবেন? শুধুমাত্র দেশপ্রেমের আহবানের জন্যে তার বাপ-মাকে সে চিরজীবন একটা পচা বাসা বা ভাই-বোনদের সাধারণ মানের শিক্ষা দিয়ে তৃপ্ত থাকতে পারে না। এইখানে নিজস্ব ambition-এরও ব্যাপার আছে। অনেক বুয়েট ছাত্রকে বলতে শুনেছি যখন ড্যালাস ছিলাম -- তাদের আক্ষেপ, দেশে তাদের কোন মূল্যায়ন নেই, ৫,০০০ টাকা বেতনের চাকরি পেতেও অনেক কষ্ট করতে হয়। আর এরা হলো দেশের টপ মেধা। অপর দিকে আমেরিকাতে মাস্টার্স করলেই মাসে ৫,০০০ ডলারের চাকরি। ওকে কি আপনি দোষ দেবেন?

যখন ফিরে আসার পরিস্থিতি তৈরী হয়, তখন মানুষ আপনা-আপনি ফিরে আসে। এককালে কোরিয়া আর তাইওয়ানের শিক্ষিত অভিবাসী প্রচুর ছিল আমেরিকাতে। যেই ঐ দেশগুলা উন্নত দুনিয়ার কাছাকাছি চলে গেল -- ৭০, ৮০-র দশকে -- সেই ওদের অভিবাসীরাও ফিরে যেতে শুরু করে। এই ট্রেন্ড আরো অনেক জায়গায় দেখা গেছে এর পরে - চীনা এবং ভারতীয়রা নিজ দেশে চলে যাচ্ছে ভালো বেতন আর কাজের অঢেল সুযোগ দেখে। বৃটেনে ২০০৪ সালের পরে লক্ষ লক্ষ পোলিশ পোলাপান এসেছিল। তারাও আজকে ফিরে যাচ্ছে কারন পোল্যান্ডের অর্থনীতি একেবারে রমরমা হয়েছে ইদানীং।

রাজনৈতিক আর অর্থনৈতিক নেতাদের ব্যর্থতার দায়িত্ব তাদেরকেই নিতে হবে। দেশে বিনিয়োগ আর কর্মসংস্থান তৈরী করতে তারাই ব্যর্থ হয়েছেন, কারন দেশ লুটতে তারা এতোই ব্যস্ত ছিল। (তাদের বাচ্চা কাচ্চারা তো একটাও দেশে নাই, তাই দেশে তাদের কোন ইন্টারেস্টও নাই লুটপাট করা ছাড়া।) সুশাসন আর উন্নয়ন যদি সত্যি সত্যি শুরু হয়, তাহলে হাজার হাজার লোক মনের তাগিদেই ফিরে আসবে। তাদের ঠেলা দিতে হবে না।
------------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

সবজান্তা এর ছবি

সুবিনয় মুস্তফী ভাই, আপনার সাথে একমত। কিন্তু তারপরও আমার মনে হয়, একটু কোথায় যেন বাঁঝে।
আমি তো জানিই দেশে আমার সঠিক মূল্যায়ন নেই, তা সত্বেও আমিতো দেশের লোকের টাকাতেই পড়ছি। যারা দেশের বাইরে আছেন, তারা সবাই যদি তাদের শিক্ষার সমমূল্যের টাকাও বুয়েটকে ফিরিয়ে দেন , তাহলেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাগারগুলি আরো আধুনিক এবং নিখুঁত হবে।

এটা শুধুই একটা উদাহরণ। বাস্তবে আরো এমন অনেক ভাবেই তারা দেশকে সাহায্য করতে পারেন। অবশ্য অনেকেই করেন, তাদের সাহয্যের কথা উল্লেখ না করা অকৃতজ্ঞতা হয়ে যাবে। আর শুধু বুয়েট না সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেই কথাটা খাটে।

এমনভাবে টাকা নিয়ে, হঠাৎ উধাও হয়ে গেলে কেমন যেন চক্ষু লজ্জা লাগে !!
------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

আহা, এই চক্ষুলজ্জা যদি আমাদের রাজনৈতিক-সামরিক-আমলাতান্ত্রিক লুটেরাদের সামান্য পরিমাণেও থাকতো!

মূল পোস্টে সুবিনয় মুস্তফীর আত্মধিক্কার সেই কারণেই।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

রাগিব এর ছবি

"ফিরিয়ে দেয়া" কিন্তু কেবল টাকা দিয়ে না, অনেকভাবেই করা যায়। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে আধুনিক গবেষণার অনেক খবরই রাখা হয় না ।।। সেখানে যদি ব্ছরে কেউ একটা লেকচারও দেয়, ছাত্ররা অনেক কিছু জানতে পারে।

সমস্যাটা মানসিকতার। যাকাতে কত টাকা দেয়, রবিবারের পেটপুরে বিলাসী দাওয়াতে তা আলোচনা করবে সবাই, কিন্তু নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কিছুই করবেনা। উল্টো দেশের শিক্ষাব্যবস্থার বদনাম করবে একগাদা।

----------------
গণক মিস্তিরি
ভুট্টা ক্ষেত, আম্রিকা
http://www.ragibhasan.com

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

অতিথি লেখক এর ছবি

লজ্জা লাগতে লাগতে যখন একদম গা সওয়া হয়ে যায়, তখনি লজ্জার একটা নতুন ধাপ আসে, বেহায়া হতে পারি না পুরাপুরি , লজ্জার আর শেষ হয় না...

- খেকশিয়াল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।