টার্মিনেটর আর কালাশনিকোভ বন্দুক

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি
লিখেছেন সুবিনয় মুস্তফী (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৫/০৩/২০০৯ - ৬:১৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বছরের শুরুতে কেউ যদি আমাকে বলতো যে মার্চের প্রথম সপ্তাহে এসে চাকরি-বাকরি অক্ষত থাকবে, তাহলে কিছুটা অবাকই হতাম। ২০০৯ সাল যে ইট্টু খারাপ যাবে, এই বিষয়ে তেমন কোন সন্দেহ ছিল না। গত ডিসেম্বরে যখন অফিসের ক্রিসমাস পার্টি অনুষ্ঠিত হলো - লন্ডনে এর মোদ্দা কথা হলো পাড়-মাতাল হয়ে রেস্টুরেন্টের টেবিলের তলায় পড়ে থাকার একটা অফিশিয়াল অজুহাত - তখন আমি আমার চারিদিকে তাকাই আর ভাবি, বন্ধুগণ, সামনের বছর সবার দেখা পাবো তো?

এই ভয় পুরোপুরি অমূলক নয়। আমি রিসার্চ বিভাগে কাজ করলেও আমার বৃহত্তর কম্পানী গত বছরখানেক ধরে বেশ নাজুক পরিস্থিতিতে আছে। যাকে বলে হাই-রিস্ক সেক্টর, এই কম্পানী তেমন একটা সেক্টরেরই অংশ। কমার্শিয়াল প্রপার্টি। বাজার যখন চাঙ্গা ছিল, তখন এরা বহুত টাকা পয়সা বানিয়েছে। আগে মূলত ইউকে-ভিত্তিক কম্পানী ছিল, এখন বিস্তৃত হতে হতে আরো অনেকগুলো দেশে অফিস গেড়েছে। বুম-এর সময়ে শেয়ারের দাম যেমন বেড়েছিল, সাথে সাথে বেড়েছিল কম্পানীর ডিরেক্টরদের জেল্লা-জৌলুস। সবাই দামী স্যুট-টাই, কাফ-লিংক পরিহিত। কথায় কথায় ফরেন ট্রিপ দেয়, সেমিনার কনফারেন্সে যায়। উইকেন্ডে রাগবি খেলে। সবচেয়ে বড় হুজুর যিনি, তিনি স্বয়ং রাণীর সাথে ছবি তোলেন।

আমি তখন নতুন ঢুকেছি - শুধু দেখি আর চোখ ডলি।

দেড় বছর আগে অনেকগুলো ছোট-খাটো টেকওভার শেষ করে কম্পানীর হুজুরেরা ঠিক করলেন যে এবার আরো বড় দাও মারবেন। তারা আরেক প্রতিপক্ষকে টার্গেট করলেন, নাম তার ডোনাল্ডসন। একে কিনে ফেলতে হবে। যেমন কথা তেমন কাজ। ডোনাল্ডসন কম্পানীর উপরে hostile takeover আক্রমণ শুরু হলো।

ঐ কম্পানীর বেশীর ভাগ লোকজন চায়নি যে আমাদের কাছে বিক্রি হয়ে যাক। অনেক কর্মচারী রাগ করে চাকরি ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। কিন্তু তাদের উপরের লেভেলে একটা ছোট গ্রুপ ছিল, সিনিয়র লোকজন, যারা এই বিক্রিটাকে জোরে-সোরে পুশ করে। ওদের নিজেদের স্বার্থও ছিল নিশ্চয়ই - নতুন কম্পানীতে বড় পোস্ট পাওয়া যাবে। তাই ব্যাংক থেকে বিরাট লোন করে ডোনাল্ডসন-কে কেনা হলো। ৪০ মিলিয়ন পাউন্ডের টেকওভার। বড় প্রেস কনফারেন্স, সাংবাদিক ফটোগ্রাফার, মিডিয়া বিবৃতি, সবকিছুই ছিলো।

শেয়ার বাজার তখন তুঙ্গে। তখনকার যারা কম্পানীর বড় হুজুর ছিলেন, তারা সেই সময়ে একেকজন (চুপিচুপি) হাফ-মিলিয়ন, এক মিলিয়ন পাউন্ডের মত শেয়ার বিক্রি করে দিলেন। নীচের স্তরের কর্মচারীরা কেউ জানতো না। একদিন অফিসের এক কলীগ ই-মেইলে লিংক পাঠিয়ে বললো, দেখো কি ঘটছে। লিংক খুলে দেখি শেয়ার বিক্রির খবর - মোটামুটি চুপিসারেই ঘটেছে - দুই-একটা পেপার ছাড়া আর কেউ খবরটা রিপোর্ট করেনি।

*

বাজার ক্র্যাশ করার ঠিক আগের মুহুর্তে ব্যাংক থেকে ৪০ মিলিয়ন পাউন্ড ধার করে অন্য কম্পানী কিনলে কি হতে পারে, এর পরের ঘটনা তাই শেখায়।

ডোনাল্ডসন টেকওভারের সময়ে আমাদের শেয়ারের দাম ছিল ৮ পাউন্ড ৩৫ পয়সা। তারপরে থেকে নচিকেতার ভাষায় 'অবিরত বুকে রক্তক্ষরণ'। নামতে শুরু করলো দাম। বাজার এই টেকওভারের খবরটাকে আসলে খুব একটা ভালো চোখে দেখেনি। এত দাম দিয়ে কেনার কি দরকার ছিল? এত ধার করা কি উচিৎ কাজ হয়েছে? নতুন কম্পানীর যেই প্রধাণ সম্বল - তার দক্ষ কর্মীগুলো, আর তাদের কন্টাক্ট আর কানেকশন - তারা তো অনেকেই আর নেই। তাহলে কম্পানী কিনে আসলে লাভ কি হলো? ইত্যাদি হাজারো প্রশ্ন।

প্রশ্নবাণে জর্জরিত শেয়ার নামতে নামতে নামতে নামতে মাটিতে এসে ঠেকলো। ১২ মাসের মাথায় ২ পাউন্ড ৩৫-এ ঠেকলো, আর তারপরে শুরু হলো একদম ফ্রি-ফল। এক পাউন্ডের বাধা পেরিয়ে অবশেষে গত ক্রিসমাসের সময় শেয়ারের দাম এসে ঠেকলো কেবল ২০ পয়সায়। সামনে কোন পাউন্ডের বালাই নেই আর।

টেকওভার করতে যেমন বললাম মোট খরচ হয়েছিল ৪০ মিলিয়ন। আর এখন শেয়ার পতনের পরে এমন অবস্থা হয়েছে যে পুরো কম্পানী বিক্রি করে দিলেও ২০ মিলিয়ন পাউন্ড পাওয়া যাবে না।

*

সেই যে হুজুরেরা, তাদের একে একে করে চাকরি নট হওয়া শুরু হলো। প্রথমেই চাকরি গেলো প্রাক্তন সি ই ও-র। নাম মার্ক, যথেষ্ট বয়স হয়েছিল তার, তাই চামে চামে সম্মানজনক রিটায়ারমেন্ট নিয়ে সে চলে গেল। তার অধীনস্থ প্রধান যে দুই চ্যালা ছিল, রবার্ট আর কিলিয়ান, এর পরে তাদের পালা। রবার্ট খুব কেতা-দুরস্ত পাবলিক, সারাক্ষণ বাহারি বো-টাই পরে থাকে। ওকে বোর্ড থেকে অপসারণ করা হলো। কিলিয়ান, আইরিশ লোক, হাসি-খুশী কিন্তু প্রচন্ড উচ্চাভিলাষী। বলা হতো ৫-১০ বছর পরে ওকেই সি ই ও বানানো হবে। সেই কিলিয়ান-ও সম্প্রতি ধরাশায়ী হয়েছে।

এদের গলা কাটার কাজটা যে করেছে, সেই লোকের নাম পল ইড্‌জিক (Idzik)। কম্পানীর নতুন সি ই ও। মার্কিন নাগরিক, এককালে শুনেছি খুব ভালো টেনিস খেলতো। প্রফেশনাল সার্কিটে যাওয়ার মতলব ছিল, পরে শেষ মুহুর্তে এমবিএ করে কাজে নেমে পড়ে, খেলোয়াড়ী জীবনকে বিদায় দিয়ে। লম্বা চওড়া লোক, প্রচন্ড বদমেজাজী - ফাক, শিট, এইসব কথা ছাড়া নাকি মুখে কোন কথা ফুটে না তার। সাপের মত চোখ, সরীসৃপের মতই নীরব আর দ্রুত তার চলাফেরা। তাকে নীচের তলায় যেই কয়েকবার দেখেছি, একটিবারও ভূলেও তার মুখে কোন হাসি দেখিনি।

কম্পানীতে ওর অনেক ডাকনাম চালু আছে। আমরা ডাকি দ্য টার্মিনেটর। কারন জয়েন করেই সে প্রথম যে কাজটি করলো, তা হলো ৩০০ লোকের চাকরি খাওয়া। এদিক সেদিক অনেকগুলো অফিস বন্ধ হয়ে গেলো। গ্রীস, অস্ট্রিয়া, পর্তুগাল। ইউকে-র ভেতর কিছু ছোটখাটো রিজিওনাল অফিস। তার কথা হলো বড় হুজুরদের লাট সাহেবের মত আচরণই কম্পানীকে মাটিতে টেনে নামিয়েছে। সেই ঠাট-বাট বন্ধ করতে হবে। ইড্‌জিক নিজে কখনো স্যুট পড়ে ঘোরে না, আর বো-টাই পরিহিত রবার্ট-কে সে ইতিমধ্যে এক হাত করে নিয়েছে।

ঐদিন লাঞ্চের সময় ক্যান্টিনে আইরিশ কিলিয়ান-কেও দেখলাম। যেই লোক সারাক্ষণ উচ্চ স্বরে কথা বলতো, দরাজ গলায় হাসতো, তাকে দেখে মনে হলো ভেজা বেড়াল, মা মারা গেছে এমন মলিন মুখ।

*

এদের সরিয়ে দিয়ে টার্মিনেটর তার নিজের লোক নিয়ে এসেছে। একজন তুর্কী, নাম সের্কান। আরেকজন ইসরায়েলী, নাম আইজাক। এই দুজনই আগে টার্মিনেটরের সাথে অন্যত্র কাজ করেছে। আবার এদের কেউই ইংরেজ নয়, তাই আগেকার সেই রাগবি খেলা আর রাণীর সাথে ফটো তোলার সংস্কৃতিতে এদের কোন বিশ্বাস নেই, কোন প্রয়োজনও নেই। কেউ কাজ ছাড়া কিছু চেনে না।

এদের মধ্যে যে আইজাক, সেই আমার ডিপার্টমেন্টের নতুন প্রধাণ। পুরো নাম আইজাক ক্রিমোলোভ্‌স্কি। পূর্ব ইউরোপীয় ইহুদি, অনেক আগে ওর পরিবার অভিবাসী হয়ে ইসরাইলে চলে যায়। শুনেছি এই লোক দেখতে-শুনতে ভালো হলেও আসলে তা না। এককালে ইসরায়েলী আর্মিতে প্যারাট্রুপার ছিল। ভীষণ মেধাবী, ভীষণ হিসাবী। কে কি করছে, সারাক্ষণ তার উপর আইজাকের কড়া নজর আছে। প্রয়োজনে অধীনস্থ কারো মাথাই সে খেতে আপত্তি করবে না, হোক সিনিয়র বা জুনিয়র।

আইজাকের পুরো নাম অনেকে ঠিকমতো উচ্চারণ করতে পারে না। তাই ওকেও ডাকনাম দেয়া হয়েছে। এই নামটা আমার বেশ পছন্দ - আইজাক কালাশ্‌নিকোভ। AK 47 বন্দুকের সাথে নাম মিলিয়ে নাম। ফেব্রুয়ারীতে লোক ছাঁটাই হবার পরে এখন জোর গুজব চলছে যে জুন-জুলাইয়ে আরো এক রাউন্ড ছাঁটাই আসছে। এই কালাশনিকোভ-এর গুলিতে তখন অনেকেই ঝাঁঝরা হয়ে মারা যাবো। আমি যেহেতু নেগেটিভ খবরকে সাধারণত ১০ দিয়ে গুণ করি, তাই ভাবছি যে এপ্রিল মে মাসেই হয়তো লে-অফের খেলা আবার শুরু হয়ে যাবে।

এই রাউন্ডে কোনভাবে পার পেয়েছি। নেক্সট রাউন্ডেও যে পাবো, এমন কে বলতে পারবে। আমার চেনা দুই বাঙ্গালির চাকরি (অন্য কম্পানীতে ছিল এরা) অলরেডি চলে গেছে। এদের মধ্যে একজন কপালগুণে নতুন কাজ পেয়ে গেছে, আরেকজন এখনো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে। আর আজকে আমার সহকর্মী এঞ্জেলা আমাকে জানালো যে ওর স্বামীর চাকরি চলে গেছে। কোন এক ব্যাংকের আইটিতে কাজ করতো। গতকাল কাটা পড়েছে। বেচারী সকাল থেকে তাই বিমর্ষ।

প্রশ্ন হলো আমি কেন কাজ-কাম বাদ দিয়ে ব্লগিং করছি! কারন আমার যেই ম্যানেজার - টনি, বা ফ্যাট টনি - সে আজকে ছুটি নিয়েছে। টনি আবার পুরোদস্তুর সমকামী। নিজেকে ও নিজেই fag বলে ডাকে, সংকোচহীন গলায়। তবে পুরোপুরি ভালো লোক। ভালো কাজ জানে, সবাই তাই সমীহ করে চলে। সে চায় আমি আরো একটু বেশী দায়িত্বশীল হই। আরো একটু বেশী খবরদারী করি। কিন্তু কোন এক কারনে আমি সেই তাগিদ অনুভব করি না। এভাবেই দিন কেটে যাচ্ছে। দেখা যাক আর কত দিন...


মন্তব্য

শাহেনশাহ সিমন [অতিথি] এর ছবি

কে জানে আমাদের উপরেও কোন্দিন........

হাসিব এর ছবি

গত দুইমাসে আমি প্রতি সপ্তায় কারো না কারো চাকরি যাবার খবর শুনি মন খারাপ

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

জার্মানীতেও?

ভালো কথা, আপনার ভোখেনব্লাট কি হইলো?
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

সৌরভ এর ছবি

মন খারাপ


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

সবজান্তা এর ছবি

আপনেরা তো বয়সকালে আইসা এই চাকরির মঙ্গা দেখতেছেন, আমাগো দিকটা একটু ভাইবা দেখেন মন খারাপ

যখন বুয়েটে ঢুকলাম, ইঞ্জিনিয়ার স্পেশালি ইলেক্ট্রিক্যালের পোলাপানের চাকরির অভাব নাই, মোবাইল কোম্পানী তখন পারলে পাশ করার আগেই কোম্পানীতে ঢুকায়া ফালায়।

নানারকম মৌজমাস্তির পর পাশ কইরা দেখি, সেই চাকরির নদী শুকায়া কাঠ, রীতিমত ফুটবল খেলা যায়।

ওইদিন থিসিস জমা দিতে স্যারের রুমে গেছি। আমার সুপারভাইজার আবার ডিপার্টমেন্টের সিনিয়ার মোস্ট। তার রুমে গ্রামীনফোনের এক টেকনিক্যাল ডিভিশনের ম্যানেজার, কী কামে যেন আসছেন। স্যার তাঁরে বললেন, আমার ছাত্রদের কিছু চাকরি বাকরি দাও। উনি শুকনা হাসি দিয়া কইলেন, সিভি মেইল কইরেন, আর আমগো দিকে তাকায়া কয়, মোবাইল কোম্পানীর অবস্থা বেশ খারাপ। শুধু মোবাইলের ভরসায় থাইকেন না, খুঁজতে থাকেন।

কই খুঁজুম ! সব জায়গায় একই হাহাকার !!

কেন যে পাশ করলাম মন খারাপ


অলমিতি বিস্তারেণ

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

খালি কমেন্টেই দেখি ৫টা মন খারাপ জমা পড়সে!

তয় আপনেরা ইঞ্জিনিয়ার মানুষ। তার উপর মোবাইলের লাইন। আপনেগো লং-টার্মে ভয়-ডরের কোন কারন নাই। হয় ছয় মাস বইসা থাকবেন, নাইলে নয় মাস। হয় দেশে চাকরি পাইবেন, নাইলে বিদেশে। ব্যাচেলার্স হইয়া গেলে একটা মাস্টার্স নামায় দিবেন। বিশেষ টেনশন করার কোন জরুরত নাই। বরং চিপায় আছি আমরা - ফাইন্যান্স বা ইকো'র মতন মাল বেঁইচা যারা ভাত খাই!
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

রানা মেহের এর ছবি

চাকরীর বাজার যে আর কবে ভালো হবে
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

আরিফুর রহমান এর ছবি

আমি খালি ভাবি, ব্রিটিশ নাগরিকেরা নাহয় চাক্রি গেলে জব-সীকার'স ভাতা পায়! ভিসায় কুফা লাগানো ওয়র্ক পার্মিট আর টায়ার ১ বিদেশী লোকগুলার চাক্রি গেলে তাদের কি উপায়!!

নেন.. আরেকটা মন খারাপ নেন!

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

ওয়ার্ক পারমিটের জব গেলে অল্প কিছুদিনের একটা গ্রেস পিরিয়ড পায়।

টিয়ার ১-এর চাকরি গেলে কি হয়, জানা নাই। জানা দরকার যদিও। পারলে জানাইয়েন।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

রানা মেহের এর ছবি

টায়ার ১ এর চাকরী গেলে কিছুই হয়না।
সময়মতো চাকরী জুটিয়ে
ভিসা বাড়ানোর আগে যতটাকা বেতন দেখানো দরকার
ততটাকা দেখালেই হয়।

না দেখাতে পারলে কী হয় জানা নেই মন খারাপ (আরেকটা দিলাম)
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

অমিত এর ছবি

সিলিকন ভ্যালির অবস্থা খুব খারাপ। এইখানে লোকজনের ডানে বায়ে চাকরি যাচ্ছে। যাদের এখনও যায় নাই, তাদের অবস্থাও সুবিধার না। অফিসে যাওয়ার আগে ভাবতে ভাবতে যায় যে আজকে পুরো দিনটা শেষ করতে পারবে না কি। ইন্টেলের কয়েকজন শুনলাম টেক্সাস চলে গেছে।

অমিত এর ছবি
সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

জটিল ছবি!
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

লেখাটা একদম ব্লগৈছে।

ভাই রে, নৈতিক-অনৈতিক সব কিছু করতে রাজি, তবু চাকরি পাই না। ক্যাম্পাসের ক্যারিয়ার ফেয়ারে রিক্রুটারের দিকে এগিয়ে গেলাম -- ৫ হাত দূর থেকেই বলে দিল, চাকরি নাই কোন, কপাল ভাল থাকলে অক্টোবরের পর দেখা যাবে।

ফার্স্ট ইন্টারভিউ-এ বলে যে টিকে গেছি, সাইটে নিয়ে যাবে। সাইটে নেয়ার কথা এলেই পল্টি খায়। অন্যরা কেউ বলে আরো অভিজ্ঞতা চাই, কেউ বলে হায়ারিং ফ্রিজ... ৫ টা বছর... ৫ টা বছর ঘানি টেনে আজকে এই অবস্থায়। মুখ দিয়ে অজান্তেই গালি বের হয়ে আসে।

নেন, আমিও একটা দিয়ে গেলাম... মন খারাপ

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

ও পি টি থাকতে থাকতে যদি বাজার টার্ন করে, তাহলে আশা করি সমস্যা হবে না। তবে নিশ্চিত ব্যাক-আপ প্ল্যান রাইখো আর কি। সবই তার লীলা-খেলা।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

তিনি তো লীলাটুকু নিজের জন্য রেখে খেলাটা আমাকে নিয়ে খেলছেন! এখানেই কবি নীরব। মন খারাপ

ধুসর গোধূলি এর ছবি
সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

'মহীনের ঘোড়াগুলি'র একটা গান আছে -

যত পেশা আছে দেখছি ভেবে, ভিক্ষে করাই বেশ...

মনের কথা কইসেন।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

রণদীপম বসু এর ছবি

আহ, টেনশনলেস পেশা সেরা পেশা ! সেক্ষেত্রে আমরা সেরাই বটে...

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

আরাফাত রহমান এর ছবি

ভাইজান সরকারি একটা চাকরি খুঁজেন। তাইলে দেখবেন চিন্তা নাই। আমাগো দেশে দেখেন না ......

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

ইচ্ছা আছে এই ঘোড়াড্ডিমের প্রাইভেট সেক্টরের চাকরি ছেড়ে দেয়ার। তবে সেই খায়েশ কবে বাস্তবায়িত হবে, বলা যাচ্ছে না। দোয়া রাইখেন!

আপনার নামটা তো হেব্বি!
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

দিগন্ত এর ছবি

আমাদের এখানে প্রথম দফায় ১৪০০ লোক ছেঁটেছে। অনেক ১২-১৪ বছরের অভিজ্ঞ লোকজন কোম্পানী থেকে বেরিয়ে গেছে। নতুন চাকরির প্রায় কোনো সম্ভাবনা নেই। প্রতি ছ'মাসে আরো দু'দফায় ১৮০০ করে লোক ছাঁটাই করা হবে। সুতরাং, সবাই জান লড়িয়ে কাজ করছে। আমার ব্লগে পোস্টানো কমে গেছে ... চাকরি চলে গেলে আমি দেশে ফিরে সমুদ্রের ধারে এক মাস বিশ্রাম নেব। বড় ক্লান্ত লাগে আজকাল ... মন খারাপ


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

জব মার্কেট ফোরকাস্ট আসলেই খুব খারাপ। উদাহরণ -
- ইউ এস এ - এখন বেকারত্বের হার ৭,৬%। সামনের বছর নাগাদ ১০%-এ চলে যাওয়ার চান্স আছে।
- ইউ কে - বর্তমানে বেকারের সংখ্যা ২ মিলিয়্ন, আরো দেড় মিলিয়্ন যোগ হবে এর উপর, নিশ্চিত ভাবেই ১০% ক্রস করনে এখানে।
- আর হাউজিং বাবলের আরেক চরম উদাহরণ স্পেন - ১৪% বেকারত্ব অলরেডি হয়ে গেছে, ভয় পাচ্ছে সবাই - সেটা কি ২০% হবে?! ২০% বেকারত্ব ইউরোপে, ভাবাই যায় না।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

কীর্তিনাশা এর ছবি

মন খারাপ

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

শাহান এর ছবি

দুর্দান্ত লেখা ! আপনার ঝরঝরে লেখা সবসময়ই উপভোগ্য ।

এইখানে উল্লেখ করা "মানুষখেকো মেক্সিকান সাহিত্যিক-এর গল্প" তো আর পাইলাম না ।

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

হায়রে -- কি আর বলবো -- প্রিয় জুবায়ের ভাই হাসপাতালে যাবার আগে যেই শেষ পোস্টগুলো লেখেছিলেন, তার একটা ছিল সচলের সবার অসম্পূর্ণ লেখাগুলোর একটা তালিকা।

সেই নির্মম লিস্টে সবচেয়ে বেশী অসমাপ্ত সিরিজ আর অসম্পূর্ণ লেখার জন্য গোল্ড মেডাল না পেলেও নিশ্চিত টপ থ্রি-তে আমি ছিলাম! জীবনটাই আসলে এক গাদা অসমাপ্ত কাজের তালিকা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

ছিলাম এই আমিও। তখনও হিমু ভাইয়ের চা-খাওয়া রোগ শুরু হয়নি, তাই সম্ভবত মুর্শেদ ভাই স্বর্ণ পেয়েছিলেন। আমার বোধহয় রৌপ্য পদকের মত কিছু জুটেছিল।

জুবায়ের ভাইয়ের তাগাদায়ই "নিজস্ব ধাঁচের গণতন্ত্র"টা শেষ করেছিলাম। আমার মাপের চেয়ে অনেক বড় কিছুতে হাত দিয়ে বেশ শঙ্কিত ছিলাম। সেই বকা আর ফোনে অনুপ্রেরণা না পেলে কোনদিন সিরিজটা শেষ হত না। আমারও ভাঙা হত না ব্যক্তিগত একটা গ্লাস সিলিং।

"প্রথম যাযাবর"টাও শেষ করতে বলেছিলেন জুবায়ের ভাই। আজই ঘর গোছাতে গিয়ে সেই ডায়েরিটা সামনে পড়লো। দেখি, ওটাও শেষ করে ফেলবো। বাকি থাকবে শুধু "হারিকেন, ..."। তাহলেই জুবায়ের ভাইয়ের সেই খেলাপীর খাতা থেকে অধমের নাম কাটা যাবে অবশেষে।

শাহান যে কী মনে করিয়ে দিলা... এই মানুষটার কাছে আমার অনেক ঋণ, সে-জন্যই একটু খোঁচা লাগলেই অনেক কিছু মনে পড়ে যায়। আমরা যে কী হারিয়েছি, তা আমাদের অনেকেই জানি না।

শামীম এর ছবি

চাকরী যদি না থাকে, কৃষি খামার দিলে কীরকম হবে (যদিও এ বিষয়ে জ্ঞান শূণ্যের কোঠায়)?
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

সাইফ এর ছবি

এই মার মার কাট কাট আর ভালো লাগে না। তবে হেলথ সেক্টরে এতটা খারাপ অবস্থা হয় নাই। কিন্তু রিসার্চে ফান্ড নাই বলে কিসু কাট ছাট করতেসে, একই ভাবে, টাকা নাই বলে বেস কিছু চাকরিও তারা খেয়েছে, কিনতু অন্যদের তুলনায় তা খুবই কম, সমস্যা হচ্ছে আমাদের মত যারা বাইরে থেকে এসে এখানে ঢুকার চেষ্টা করছে :(। বাঘাদার মত বলতে ইচ্ছা করে, "শালার ডিপ্রেশম"

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।