এমনি এমনি

শ্যাজা এর ছবি
লিখেছেন শ্যাজা (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৬/০৮/২০০৯ - ১০:২৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বৃষ্টির শব্দে ঘুম ভাঙল আজ খুব ভোরবেলায়৷ আধোঘুমে ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না, শব্দটা বৃষ্টির নাকি জানলার ওপাশের আধখানা শেষ হওয়া বাড়িটির ছাদের জমানো জল গড়ানোর৷ খানিক এপাশ-ওপাশ করে আরো একটু ঘুমিয়ে নেওয়ার ইচ্ছে থাকলেও ঘুম আর এলো না৷ কানে ততক্ষণে পরিষ্কার রিমঝিম বৃষ্টি৷ যাহ৷৷ আজকেও বাজার যাওয়া হল না৷ তার মানে আজকেও ডিম আর ডাল?! আর যা বৃষ্টি পড়ছে, বুয়ার তো আজকেও নিশ্চিত ছুটি! সব গেল! হড়বড়িয়ে জানলার পর্দা সরিয়ে বাইরে তাকিয়ে বোঝা গেল, এ বৃষ্টি শিগগির থামার জন্যে নামেনি৷ ঘড়ির কাঁটা যদিও বলছে বেলা হয়েছে কিন্তু বাইরে তাকিয়ে সেটা বোঝার উপায় নেই৷ আধো আলো আধো অন্ধকারে সকাল যেন আড়মোড়া ভাঙছে সবে৷ ঝুম বৃষ্টিতে সব জলছবি৷

বাইরে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই আমি চোখের সামনে ডিম দেখতে পেলাম, সাদা সাদা ডিম! ক'দিন ধরেই চলছে এই। রোজই বাজারে যাবো যাবো করেও আর হয়ে উঠছে না আর ডিমও সমানে চলছে কিন্তু মুখে আর রুচছে না, বাজারে যেতেই হবে তাছাড়া বাজারে আজকে নিশ্চয়ই ভাল মাছ পাওয়া যাবে, নতুন পানির সব মাছ নিশ্চয়ই এসেছে আর ইলিশ! হয়ত ধরা-ছোঁয়ার দামের মধ্যে ইলিশও পেয়ে যেতে পারি এমন বাদল দিনে! এই বৃষ্টিতে ক'জন বাজারে যাবে আজ তাও সপ্তার এই মাঝখানে? আজকে বাজারে ভাল মাছ না উঠেই যায় না! মাছ আর ডিমের মাঝখানে কলিং বেলে ডাকে সুইপার, একবারের বেশি দু'বার সে বেল বাজাবে না, আর দরজা খুলতে মিনিটখানেক দেরি করলেও তার টিকির দেখা আর পাওয়া যাবে না বলে আমি উঠেই পড়ি জানলার ধার ছেড়ে৷ বৃষ্টিবিলাস এই সকালবেলায় নয়৷

-----

শবে বরাত৷

সন্ধে থেকেই বাজি-পটকা ফুটছে দূরে দূরে। হালকা হলেও শব্দ শোনা যায় একের পর এক বাজি পোড়ার, উৎসবের আওয়াজ শোনা যায় দূর থেকে হলেও।

হুম৷ আজকে বরাতের রাত৷ সারারাত জেগে নামাজ পড়ার রাত৷ একশ রাকাত নফল নামাজ বা তারও বেশি৷ যে যত পড়তে পারে৷ সারাদিন ধরে নানান রকমের হালুয়া বানিয়ে সন্ধেবেলায় দরজার বাইরে অপেক্ষারত সব ভিখিরিদের রুটি-হালুয়া বিলি করার রাত৷ না৷ এ'বাড়িতে কোনো ভিখিরি আসে না, না দিনে না সন্ধেয়৷ এ'পাড়ায় বোঝাও যায় না, কোনদিন শবে বরাত আর কোনদিন ঈদ৷ শুধু শাবে বরাতের সন্ধেয় বাজি-পটকা ফোটে দূরে দূরে.. হালুয়া আমি এখনও বানাই তবে সে শুধু নিজে খাওয়ার জন্যে৷ খানিকটা ছোলার ডালের, খানিকটা মুগ ডালের আর খানিকটা সুজীর৷ ব্যস৷

এমন সব দিনে আমার পুরনো সব কথা মনে পড়ে৷ পুরনো সেই দিনের কথা সেই কি ভোলা যায়৷ নাহ৷ ভোলা যায় না..

সে'বছর শবে বরাতের আগের দিন আমরা বাড়ি যাই, দেশের বাড়ি৷ যেখানে আমার দাদা-দাদী থাকেন৷ আব্বা বেশ কিছু নতুন জামা-কাপড় কিনে নিয়ে গিয়েছিলেন, অনেকগুলো শাড়িও৷ শবে বরাতে তো কেউ নতুন জামা-শাড়ি পরে না, কেন কে জানে আব্বা সেবার সকলের জন্যে নিয়ে এসেছিলেন৷ তার মধ্যে একটা নতুন শাড়ি ছিল আমার চাচীর৷ বায়না করে বসলাম, আমিও শাড়ি পরব, নতুন শাড়ি পরে নামাজ পড়ব! আমর বয়স তখন কত? আট-নয় হবে বোধ হয়৷ সারাদিন ধরে চাচী রান্নাঘরে, চালের রুটি, হালুয়া আর রোজকার রান্না৷

আমার দাদীর একটা স্পেশাল হালুয়া ছিল, সেটা দাদী নিজেই বানাতেন, এমনিতে দাদীকে রান্নাঘরে যেতে দেখিনি কখনো কিন্তু শবে বরাতের ওই স্পেশাল হালুয়া দাদী নিজে বানাতেন৷ বিশাল এক হাঁড়ির মধ্যে একটু মোটা করে চালা চালের গুড়োকে ঘিয়ের মধ্যে নেড়ে নেড়ে চিনি আর গুড় মিশিয়ে একটা হালুয়া বানাতেন দাদী, গোটা গোটা গরম মশলা আর কিশমিশ। সেই হালুয়া আর কাওকে বানাতে দেখিনি কোথাও, এখন অবশ্য চাচী বানায়, কিন্তু আর কেউ না৷ এমনকি আম্মাও না! ফকফকে সাদা চালের গুড়োর হালুয়াতে লাল রং আনার জন্যে দাদী চিনির সাথে গুড় মেশাতেন৷ তো সারাদিন ধরে রান্না হল কয়েক পদের হালুয়া, রুটি, মাংস৷ এমনিতে আমাদের বাজারে সব সময় গরুর মাংস পাওয়া যেত না, বিশেষ বিশেষ দিনে গরু জবাই হত তখন, তো শবে বরাতে বাজারে গরু জবাই হত, দাদা সকাল সকাল বাজার থেকে নিয়ে আসতেন সদ্য জবাই হওয়া গরুর মাংস৷ পুরো বাড়ি জুড়ে মিশ্র এক গন্ধ, হালুয়া, মাংস সেঁকা চালের রুটির গন্ধ৷ সব মিলিয়ে গোটা বাড়ি জুড়ে শুধু খাবারের গন্ধ৷ দুপুরের পর থেকেই লোক আসতে শুরু করল হালুয়া-রুটি খেতে৷ বড় বড় সব থালা-কুলোর উপর পুরনো খবরের কাগজ বিছিয়ে ভাগ দিয়ে রাখা হল সব হালুয়া রুটি, তিনখানা করে রুটি আর তার উপর দাদীর বানানো সেই হালুয়া এক খাবলা করে৷ সেই কোরবানির সময় থালায় করে মাংস রাখা হয় না? দশ-বারোটা করে ভাগ এক একটা থালায়? সব বাড়ি বাড়ি বিলে হবে বলে? এও ঠিক সেই রকম৷ এক একজন আসে, তার হাতে একটা করে রুটি-হালুয়ার ভাগ তুলে দেওয়া হয়৷ সন্ধে পর্যন্ত চলে এই রুটি হালুয়া বিলি৷ কোথা থেকে যে আসত সব মানুষ! এখনও কী আসে..

তিনসন্ধের সময় সূর্য যখন ডুবি ডুবি করছে, দাদী তখন জামা কাপড় নিয়ে পুকুরপারে রেডি, গোসল করবে বলে৷ শবে বরাত-শবে কদরের সন্ধেয় গোসল করলে পানির ফোঁটার সাথে সাথে সব পাপও ঝরে পড়ে যায় শরীর থেকে৷ আমিও গোসল করি দাদীর সাথে, পুকুরে গোসল করতে আসে আমাদের পাড়ার আরো সব মেয়ে-বউরা৷ এমনি সময়ে আমাদের পুকুরে আমার চৌধুরানী দাদী অন্য কাওকে নামতে না দিলেও এই রকম সব বিশেষ দিনগুলোতে দাদী কাওকে কিছু বলে না৷ ঝপাঝপ দু-তিনখানা করে ডুব দিয়ে সদ্য নেমে আসা অন্ধকার পারে দাঁড়িয়ে ভিজে কাপড় ছেড়ে শুকনো কাপড় জড়িয়ে এক ছুটে বাড়ি, মাগরিবের নামাজের সময় বড় কম আর মাগরিবের আগেই পড়ে নিতে হবে তাহিয়াতুল অজুর নামাজ, তারপর মাগরিব৷ সারাদিন রোজা রেখে, হালুয়া- রুটি বানিয়ে বিলি করে সকলেই মোটামুটি ক্লান্ত৷ তারমধ্যেই রোজা খোলার ইন্তেজাম৷ আর তারপর আবার নামাজ৷

এশার নামাজের আগে অব্দি খানিক বিশ্রাম, আর তারপর বরাতের রাতের নামাজ, তা সে তো চলবে সারারাত ধরে৷ চাচীর নতুন শাড়ি পরে আমিও রেডি সারারাত নামাজ পড়ার জন্যে৷ সেদিন সারারাত চাচীকে প্রচন্ড জ্বালিয়েছিলাম৷ রুকুতে গিয়ে চাচীকে জিজ্ঞেস করা, চাচী, এরপর? বা সেজদা গিয়ে জানতে চাওয়া, কি পড়ব এখন? শেষমেশ বিরক্ত চাচীর বলে ওঠা, আমি যা করি, সাথে সাথে সেটাই কর, কিছু পড়তে হবে না তোকে! মাঝরাত পেরিয়ে রাত যখন ভোরের দিকে আমদের তখন একশত রাকাত নামাজ পড়া শেষ! সে আমার প্রথম পড়া একশ রাকাত নামাজ! আমাদের বাসায় আমরা, ভাই-বোনেরা সন্ধে থেকে মাঝরাত পর্যন্ত হই হুল্লোড় করে ঘুমিয়ে পড়তাম, শবে বরাতে সারারাত জেগে নামাজ পড়া সেই প্রথম, চাচীর সাথে৷ আমি আর চাচী তখন বাড়ি থেকে বেরোই হাঁটব বলে৷ পায়ে পায়ে জড়ায় নতুন শাড়ি, বারে বারেই হোঁচট খাই বলে দুই হাতে শাড়ি যতটা তোলা যায়, তুলে হাঁটি৷সুনসান রাত। চাঁদের আলোয় ভেসে যাচ্ছে চরাচর।পায়ের তলায় শিশিরে ভেজা ঘাস, খালি পায়ে ভেজা ঘাসের উপার দিয়ে আমরা হাঁটি। এ'উঠোন ও'উঠোন ঘুরে আমরা ছোট্ট পাড়াটা ঘুরে যাই কবরস্থান অব্দি৷ বাঁশঝাড়ে ঢাকা কবরস্থানে ঢুকতে আমি দিনের বেলাতেও রাজী নই কিন্তু চাঁদনী রাতের শেষ প্রহরে কী করে যেন নির্ভয়ে দাঁড়িয়ে থাকি কবরস্থানের সামনে, একটু দূরে দূরে কবর সব, ভেঙে মাটি ঢুকে যাওয়া কবরের সামনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে চাচী প্রার্থনা করে, কি বুঝে কে জানে নিশুথ রাতে নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকি আমি কবরেস্থানের সামনে৷

------

আজকে চাচীর কথাও খুব মনে পড়ছে। চাচী খুব অসুস্থ।


মন্তব্য

প্রজাপতি [অতিথি] এর ছবি

ছোটবেলার শবে বরাতের অনেক স্মৃতি তাজা হয়ে গেল আপনার লেখা পরে।

কাকতাড়ুয়া [অতিথি] এর ছবি

আচ্ছন্ন হলাম। আপনার চাচীর জন্য শুভ কামনা। উনি দ্রুত সুস্থ্য হয়ে উঠুন।

স্বপ্নহারা এর ছবি

ভিন্ন ধর্মী হওয়া সত্ত্বেও শবে-বরাত আমার জন্য খুব মজার ছিল! সব প্রতিবেশির বাড়ি থেকে মজার খাবার আসত, বাজি ফোটানো ত ছিলই। আরেকটা কারণে আমার দিনটা পছন্দ ছিল, ওইদিন পড়তে বসতে হতনা...সবার সাথে ঘুরার পারমিশন ছিল...দেঁতো হাসি

লেখার প্রথমে খাওন-দাওনের কথা কইয়া সমস্যায় ফেলে দিলেন, এই প্রবাসে পাই কই!

শেষটুকু পড়ে বিষাদে আচ্ছন্ন হলাম...!

-------------------------------------------------------------
স্বপ্ন দিয়ে জীবন গড়া, কেড়ে নিলে যাব মারা!

-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...

বিষন্ন এর ছবি

শবেবরাতের সময় এবাড়ী-ওবাড়ী থেকে রুটি হালুয়া আসতো। অনেকে আবার মিষ্টি হালুয়া রান্না করার সময়ে একচিমটি লবণ দেন। একবার এক বাসা থেকে আসা হালুয়া চাখতে গিয়ে দেখা গেল তাতে লবণের মাত্রা কিন্চিত বেশী। ফাজিল ছোটভাইটি সেটি খেয়ে মন্তব্য করলো,"আম্মা-এটা বোধহয় সামুদ্রিক হালুয়া।"

অমিত আহমেদ এর ছবি

শবে বরাত বলতেই তিনটা জিনিস বুঝতাম ছোটবেলায়।

এক, রাত্তিরে পড়তে হবে না।
দুই, মহল্লায় দোস্তদের সাথে পটকা আর বাজি পোড়াবো।
তিন, মসজিদে নামায পড়ার ওছিলায় দোস্তদের সাথে গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডা চলবে।

আর হালুয়া-টালুয়া তো আছেই হাসি


ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফ্লিকার | ইমেইল

সাইফ তাহসিন এর ছবি

একদম মনের কথা কইলেন দেঁতো হাসি
সাথে বুটের ডালের হালুয়া আর চালের গুড়া দিয়ে বানানো রুটি খাইছে

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

ধর্মের আসল জিনিস গুলো বাদ দিয়ে আমরা কিভাবে আজেবাজে জিনিস নিয়ে সময় ও শ্রম নষ্ট করি শবে বরাত তার ১ নাম্বার উদাহরণ। শবে বরাতের মতো ভুয়া জিনিস নিয়ে আমার কম্পাইল করা একটা লেখা আছে। ইংরেজীতে থাকায় লেখাটা দিতে পারছিনা। বাংলা করব ভাবছি। দেখি সময় পাই যদি।

অমিত আহমেদ এর ছবি

পিপি'দা শবে বরাত নিয়ে ধর্ম কি বলে জানিনা। তবে শবে বরাত আমার কাছে ভালোই লাগে। বাসায় ভালো রান্না হয়। ভিখিরি পেটপুরে রুটি-হালুয়া খেতে পায়। মানুষ দান খয়রাত করে। রাতে মানুষ হিন্দি চ্যানেল না দেখে নামায পড়ে, কিংবা পরিবারের সাথে সময় কাটায়। বিকেলে সবাই প্রিয়জনের কবর জিয়ারতে যায়, কিংবা তাদের মনে করে।

আমি বরং হজ্জ্বে কেনো মানুষ সময় ও শ্রম নষ্ট করে সেটা বুঝতে পারি না। সেটা নিয়ে একটা লেখা দিলে মন্দ হয় না। হাসি


ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফ্লিকার | ইমেইল

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

হজের ব্যাপারটা ধর্মীয় একটা রীতি যেটা সামর্থবানদের জন্য অবশ্যপালনীয়। আর শবে বরাত হলো বানানো একটা জিনিস যেটা ধর্মে ঢুকানো হয়েছে। ভালো দিক হলো এখন মানুষ ইন্টারনেট থাকার কারণে অনেক কিছু জানতে পারছে।

হালুয়া রুটি তো ভালো জিনিস, তবে ধর্মের আসল আচরণগুলা ঠিকমতো পালন করা আগে জরুরী (যারা মানেন টানেন আরকি)। হাসি

সাবিহ ওমর এর ছবি

শবে বরাতের ছুতায় যদি কিছু ইবাদত-বন্দেগী হয়, আমি মনে করিনা এতে দোষের কিছু আছে।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

হা হা.. ঠিকআছে।

সাইফ তাহসিন এর ছবি

বস, আপনার কথার একদম সাথে একমত, ফতোয়া দিয়া বানানো একটা উৎসব হইল শবে বরাত, তবে হালুয়া খাইতে ব্যাপক মজা লাগে দেঁতো হাসি

=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

ভূঁতের বাচ্চা এর ছবি

অনেকদিন পর কিছু লিখলেন শ্যাজাদি। আপনার লেখা পড়ার জন্য আমরা তীর্থের কাকের মতন বসে থাকি।
আজকে সকালে উঠেই হালুয়া খেলাম। গাজরের হালুয়া আর বুটের হালুয়া। অনেকে আবার এই দিনে রোজা রাখে কিন্তু আমি রাখিনি। চালের গুড়োয় তৈরি যে হালুয়াটার কথা বললেন সেটা খেতে খুব ইচ্ছে করছে। আমার নানী অসাধারণ বানান এই হালুয়াটা। আমার মা ততোটা ভাল পারেন না। অনেকদিন খাইনি এই ধরনের হালুয়া।
-----------

--------------------------------------------------------

রানা পাল এর ছবি

সামরান, অনেকদিন পর তোমার লেখা পড়লাম। কি ভালো যে লেখ তুমি। সব যেন চোখের সামনে দেখতে পাই। তিন সন্ধ্যে - কথাটা প্রথম শুনলাম। এ কথাটার অর্থ কি?

আরিফ জেবতিক এর ছবি

আহা, আগের মতো শবেবরাত আর হয় না ।

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

হ ! এইবার শবে বরাতে কোন পটকার আওয়াজই পেলাম না ।
মনে পড়ে গেলো বালকবেলার চাইনিজ বোম,মরিচা, রকেট আর তারাবাতির কথা ।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আমাদের শবে বরাতের প্রস্তুতি শুরু হইতো আগের বছরের কোরবানী ঈদ থেকে। গরুর ভুড়ি থেকে ঝিল্লি শুকানো দিয়ে শবে বরাতের আয়োজন শুরু।
শবে বরাত মানে ছিলো সারা রাতের মাস্তি। বছরে এই একটাই রাত, যে রাতের পুরোটা বাড়ির বাইরে বৈধ ভাবে থাকার অনুমতি।
পকেট ভর্তি মোররা... তারাবাতি ছেড়ে দিতাম মেয়েদের জন্য... পটকা থাকতো আমাদের। তাপর শুরু মাস্তানি। প্রথম অভিযান কোন মসজিদে কী রান্না হইতেছে সেই খোঁজ দিয়া। তারপর ভিন পাড়ায় গিয়ে মাস্তানি করে আসা। আমাদের বানানো মোররাই যে দশ মহল্লার সেরা সেইটা গায়ের জোরে হইলেও প্রমাণ করতে হইবো। নাইলে ইজ্জত থাকে না তো। এই করতে গিয়া মারামারি।
বিগত দিনের খেলার মাঠের গণ্ডগোলের প্রতিশোধের জন্যও এই রাত্রি বিশেষ উপাদেয় ছিলো।
আর এই রাতের বিশেষ ফজিলত হইলো চুরি বিদ্যা। আস্ত একটা রাইত বাইরে থাইকা চুরি না করলে তো বৃথা। সাধারণত ফল ফলাদিই চুরি হইতো। কিন্তু একবার বিরক্ত হয়া গেছিলাম। ফল আর কতো চুরি করা যায়। সিদ্ধান্ত হইলো পুরা মহল্লায় যতো টুলেট লেখা সাইনবোর্ড আছে, সেইগুলা চুরি করতে হইবো। করলাম। মহল্লায় কোনো টুলেট থাকলো না। তারপর খানা দানা কইরা ভোরবেলা ভাবলাম এখন এই সাইনবোর্ডগুলা দিয়া কী করুম? বাজারের রাস্তায় ফালায়া রাইখা আসলাম।
সকালে মুরুব্বীরা বাজার করতে গিয়া যার যার সাইনবোর্ড নিয়া বাড়ি ফিরলো আমগোরে গালি দিতে দিতে...

আহারে... শবে বরাতের সেই টেস এহন নাই... সব কেরম ঝিমায়ে গেছে...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

বইখাতা এর ছবি

খুব ভালো লাগলো আপনার স্মৃতিচারণ। নিজের ছেলেবেলার কিছু কথা মনে পড়ে গেল। আপনার চাচীর জন্য প্রার্থনা - দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন তিনি।

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

চমৎকার লেখা।

আপনার চাচীর দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।

মৃন্ময় আহমেদ এর ছবি

মনে পড়ে যায় কতোকিছু ক্রমান্বয়ে

=========================================
নিজেকেই নিজে চিনি না, পরকে চেনার মিছে বাহানা

'

=========================================
নিজেকেই নিজে চিনি না, পরকে চেনার মিছে বাহানা

দুষ্ট বালিকা এর ছবি

খুব সুন্দর লিখেছেন! সব যেন নিজের চোখে দেখলাম! আপনার চাচীর আরোগ্য কামনা করি।

--------------------------------
কাঠবেড়ালি! তুমি মর! তুমি কচু খাও!!

**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।

মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।