ধর্মের ঢোল বাজলো, দেরিতে হলেও

সবজান্তা এর ছবি
লিখেছেন সবজান্তা (তারিখ: সোম, ২৩/০৬/২০০৮ - ৩:৪০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

গত কয়েকদিনের কুফা কাটিয়ে অবশেষে জয়ের দেখা পেলাম ইউরোতে। বাংলাদেশ সময় রাত ৩টা বেজে ২৯ মিনিটেও তাই বেশ ফুরফুরে লাগছে।

ইতালী-স্পেন এর খেলা। যদিও ইতালী টুর্নামেন্টের শুরু থেকে তেমন ছন্দে নেই, আর স্পেন তার উল্টোভাবেই বেশ ভালো মেজাজে - কিন্তু তাতে কী ? সবাই জানে যে, গ্রুপের পারফরম্যান্সের কোন দামই নেই নকআউটে, অন্তত আগের খেলাগুলি তেমন সাক্ষ্যই দেয়। ইতালীর জয় নিশ্চিত ধরেই তাই খেলা দেখতে বসেছিলাম।

ইতালী খেলার মধ্যে তেমন কোন চোখে পড়ার উন্নতি করতে পারেনি, বরং সারাটা খেলাই খেলেছে দুর্বল দল হিসেবেই। যদিও ১২০ মিনিটের স্কোরলাইন ০-০, কিন্তু তা সব কিছু ব্যাখ্যা করে না। সারা খেলাতেই ইতালী ধুঁকেছে, বল ছিলো স্পেনের খেলোয়াড়দের পায়েই। ইতালী যে কয়েকবার বল পেয়েছে প্রায় সে কবারই তাদের সবচেয়ে বড় অভিশাপের নাম লুকা টনি। এত পরীক্ষিত একজন খেলোয়াড় কিভাবে বার বার শুধু মাত্র পা বাঁধাতেই ভুল করে, সেটা নিয়ে নিশ্চয়ই গবেষণা হতে পারে। বেশ কয়েকবার নিশ্চিত গোলের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছে ইতালী ভাগ্যের সহায়তায়, আর কয়েকবার ডিফেন্সের সহায়তায়। তবে সবচেয়ে দৃষ্টিকটু ছিলো প্রথমার্ধে ইতালীর ডি বক্সের মধ্যে স্পষ্ট একটা ফাউল না দেওয়া। মনে মনে ভাবছিলাম, এমন অবিচার কি সইবে কপালে ?

নাহ, যা ভেবেছিলাম তাই হয়েছে। দেরিতে হলেও ধর্মের ঢোল বেজেছে, ক্যাসিয়াস পাঁচটার মধ্যে দুটো শট আটকে দিয়ে স্পেনকে নিয়ে গিয়েছে সেমি ফাইনালে, প্রায় চব্বিশ বছর পর।

পুনশ্চঃ অবশ্য একটা বিপদ হল। রাশিয়ার খেলার ফ্যান হয়ে গিয়েছি গত কাল, সেমিতে তাই রাশিয়ার বিপক্ষে সমর্থন করতে বেশ কষ্ট হবে।


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

কাসিয়াস চালু খেলসে গোটা খেলা। রেফারির কাজকারবার একটু চোখে ঠেকেছে। দেল পিয়েরোকে আরো মিনিট কুড়ি আগে নামালে এমন কোন ক্ষতি হতো না। রাউলের অভাব পূরণ করেছে ভিয়া। গুইজা আর সিলভা গোটা খেলায় অমার্জনীয় সব ভুল করেছে। জামব্রোত্তা না থাকলে ইতালি অনেকগুলি গোল খেতো। কামোরানেসির কপাল খারাপ ছিলো গোটা খেলা জুড়েই। আমার চোখে এখনও ভাসে ইতালিয়া নব্বইয়ের ইতালি দল। মালদিনি, দোনাদোনি, শিলাচি ... একেকজন আগুনের মতো খেলসিলো সেই টুর্নামেন্টে। আজকের ইতালি দল একেবারেই নিষ্প্রভ। খুব ভালো লাগলো স্পেনকে সেমি ফাইন্যালে যেতে দেখে। বেচারাদের কপাল সবসময় খারাপ থাকে। তবে রাশিয়ার সাথে খুব বেশি আশা দেখছি না। একটাই ভরসা স্প্যানিয়ার্ডদের, গতি।


হাঁটুপানির জলদস্যু

সবজান্তা এর ছবি

নব্বইয়ে খুব ভালো ফুটবল বুঝতাম না, সবাই খেলা দেখতো আমিও দেখতাম। ইতালি আমার প্রিয় ছিলো চুরানব্বইয়ে, ব্যাজিও'র সেই আকাশমুখী পেনাল্টি কিক , এখনও চোখে ভাসে !

স্পেন আমার একটু বড় বেলার পছন্দ । দেখা যাক কত দূর কি করে... ...


অলমিতি বিস্তারেণ

সবজান্তা এর ছবি

নাম পাল্টায়া হারাধন রাইখা ফালান চোখ টিপি


অলমিতি বিস্তারেণ

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

মুহা-হা-হা-হা... আমি আজকেও জিতছি! ইতালি "খারাপ" খেলেছে বলবো না, বরং চিরন্তন ইতালীয় ফুটবল খেলেছে। ডিফেন্স মোটামুটি শক্ত ছিল, প্রত্যেকেই কাউকে না কাউকে মার্ক করে রেখেছিল। ইতালি অনুভব করেছিল আন্দ্রেয়া পিরলোর। পিরলো শুধু যে আক্রমণ আর রক্ষণের মধ্যবর্তী তা নয়, আক্রমণমনস্কতা আর রক্ষণমন্সকতারও সঞ্চালক। এখানেই ধরাটা খেয়ে গেছে। লুকা টোনির ফিনিশিং নিয়ে এই খেলায় কোন অভিযোগ করার নেই, কারণ কোন বলই জুৎ মত পায় নাই বেচারা। একই আফসোস ডাভিড ভিয়ারও থাকার কথা।

রেফারিং নিয়ে কিছু বলার নেই। পুরো টুর্নামেন্টেই যা-তা রেফারিং হচ্ছে, এবং তা যথারীতি বড় দলগুলোর পক্ষে যাচ্ছে।

স্পেন ও হল্যান্ড গ্রুপ পর্যায়ে খুব ভাল খেললেও তাদের গোলগুলো ছিল কাউন্টার-অ্যাটাক নির্ভর। ইতালি একদমই উপরে না ওঠায় স্পেন সেই সুযোগ পায়নি।

চাচ্ছিলাম না গ্রুপ পর্যায়ের খেলার কোন রিম্যাচ হোক, তবু আশা করছি স্পেন-রাশিয়া খেলাটা অন্তত আগের মত ভাল হবে। আন্দ্রেই আরশাভিন আছে এখন রাশিয়ার দলে। ৪-১ স্কোরলাইন দেখে যেমনটা মনে হয়, আমার মতে রাশিয়া তার চেয়ে অনেক বেশি প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল সেই খেলায়।

সবজান্তা এর ছবি

মু হা হা , আজকে আমিও জিতছি !

লুকা টনির ফিনিশিং নিয়ে অভিযোগ করার কিছু ভিত্তি আমি পাই। গতকাল রাতের খেলায় ইতালীর যে সামান্য কয়েকটা গোলের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, তার সিংহভাগ নষ্ট হয়েছে লুকা টনির জন্য। ক্রস করা বলগুলিতে শুধু মাত্র আলতো পা ছোঁয়ালেই বল জালে ঢোকে, আর তিনবার এরকম চান্স মিস করেছে লুকা টনি।

ইতালীর সারা খেলায় খুব বেশি সুযোগ আসলে আসেনি, তাই এগুলোই বেশ বড় হয়ে যাচ্ছে।


অলমিতি বিস্তারেণ

রেনেট এর ছবি

খেলা শেষ হওয়ার পরে এসে আমি আইজকাও জিতছি - এরকমের চাপাবাজী বনধ করেন! সেমির আগে ঠিক কইরা কন আপনি কোন দল। তারপর আমরা দেখুমনে আপনি হারলেন না জিতলেন চোখ টিপি
-----------------------------------------------------
We cannot change the cards we are dealt, just how we play the hand.

---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

সংশয়ে দমে না আনন্দিত দর্শক! চোখ টিপি

৪ টা দলই পছন্দের, তবে সাপোর্ট করবো তুরস্ক আর রাশিয়া। একটা দল শেষ পর্যন্ত লেগে থাকতে পারে, আরেকটা দল তো এখন ইউরোপের ব্রাজিল! তুরস্কের খেলোয়াড় নেই, আর জার্মানির কাছে সাইজে পিছিয়ে। হারলেও তুরস্ক ওটায়। আর স্পেন এবার রাশিয়ার কাছে ডুববে, দেখেন!

ss এর ছবি

ডেল পিয়েরোর ভালোই ফ্যান ছিলাম , কিন্তু কালকের খেলাতে কেন যেন অনেক চেষ্টার পরও ভালো লাগলো না - কিন্তু থ্রি চিয়ারস ফর ইটালি !

সবজান্তা এর ছবি

তাইলে আপনি কোন্দল ? চিন্তিত


অলমিতি বিস্তারেণ

মুশফিকা মুমু এর ছবি

হুমম আমি ইতালিকে সাপর্ট করতাল গত ওয়ার্ল্ডকাপের আগ পর্যন্ত, কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার সাথে ওভাবে চিট করে জেতার পর থেকে ওদের ওপর ফিলিংস চলে গেসে মন খারাপ , এখন ইটালি যার সাথেই খেলুক যত ভালো বা খারাপই খেলুক আমি অন্য দল। সো গো নেডারল্যান্ড, রাশিয়া, জার্মানি, তুর্কি হাসি
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

সবজান্তা এর ছবি

ইতালির চোট্টামি আর অভিনয় নতুন কিছু না।

আমার এক কট্টর ইতালী সমর্থক বন্ধুকে আমি একবার এই বলে খেপিয়ে দিয়েছিলাম যে,

"ইতালী যে সোফিয়া লরেন আর রবার্ট ডি নীরোর মত পৃথিবী কাঁপানো অভিনেতাদের জন্মস্থান, সেটা ইতালীর এখনকার খেলোয়াড়দের দেখলেই বোঝা যায় ! "


অলমিতি বিস্তারেণ

রেনেট এর ছবি

দুনিয়ার সবচেয়ে বড় চোট্টা হল জার্মানরা। শালাদের অস্কার পাওয়া উচিত।
-----------------------------------------------------
We cannot change the cards we are dealt, just how we play the hand.

---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে

সবজান্তা এর ছবি

শতভাগ সহমত হাসি

ইতালীরে চোট্টা বলছি মানে এই না যে জার্মান চোট্টা না, বরং ওরা চোট্টার বাপ চোখ টিপি

জার্মানরে দেখতে পারি না সেই নব্বই এর ফাইনাল থিকা, পুরা বদ ওইগুলা।


অলমিতি বিস্তারেণ

দিগন্ত এর ছবি

ইউরপের সব দলই এরকমভাবেই চোট্টা করে সুযোগ পেলেই। এটা নতুন কিছু না। আমি এখনও রাশিয়ার সমর্থক হয়ে গেছি। গুস হিডিঙ্ক বছর বছর যা করে দেখাচ্ছে, ওর গলায় একটা পদক যাওয়াই উচিত।


হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল।


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

অমিত আহমেদ এর ছবি

হিডিঙ্ক একটা জিনিস বটে!


ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল

রেনেট এর ছবি

টুর্নামেণ্টের শুরু থেকেই ইটালি ও স্পেন সাপোর্ট করছি। এমনই কপাল, দুই দল একই কোয়ার্টার ফাইনালে পড়ে গেল।
ইটালী গোটা টুর্নামেন্টেই ভালো খেলেনি। তাদের বিশ্ববিখ্যাত ডিফেন্সের সেই ধার ছিল না এবার। সম্ভবত ক্যানভারো ছিল না বলেই। ইটালির খেলা দৃষ্টি সুখকর নয় জানি, কিন্তু তারপরও সাপোর্ট করি!
আর গতকালের খেলায় স্পেন যোগ্য দল হিসাবেই জিতেছে। ট্রাইবেকারে বুফন vs ক্যাসিয়াসের লড়াই ছিল দেখার মত। পুরো খেলাতেই দুই গোল্কিপার অসাধারাণ কিছু সেভ করেছে।
৯০ বিশ্বকাপে গায়কোচিয়া, জেংগাদের দেখে গোলকিপারদের ভক্ত হয়ে গেছি।
ইটালী যখন নেই, স্পেনের পক্ষেই আমার বাজী। রাশিয়ার খেলা ভালো লেগেছে, হিডিঙ্গকেও পছন্দ খুব, কিন্তু টুর্নামেন্টের মাঝে এসে আমি দল পাল্টাই না হাসি
স্পেন থাকলে আছি, নাইলে নাই।
-----------------------------------------------------
We cannot change the cards we are dealt, just how we play the hand.

---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে

হিমু এর ছবি

আমি চাই রাশিয়া বা স্পেন এবার কাপ জিতুক।


হাঁটুপানির জলদস্যু

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ছোটবেলা থেকাই কেন জানি আমার ইতালির ফুটবল দলটারে নাপছন্দ। হয়তো বালিকারা ইতালির ফুটবলারদের রূপের মুগ্ধ বলে এক ধরনের ঈর্ষা কাজ করতো। ইতালি হারায় তাই খুশিই হয়েছি। কিন্তু কষ্ট পেলাম সবজান্তার মন্তব্যে

ইতালী যে সোফিয়া লরেন আর রবার্ট ডি নীরোর মত পৃথিবী কাঁপানো অভিনেতাদের জন্মস্থান, সেটা ইতালীর এখনকার খেলোয়াড়দের দেখলেই বোঝা যায় !

মনিকা বেলুচ্চিরে আপনে গোনাতেই ধরলেন না?!?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সবজান্তা এর ছবি

ড্যামিট ! বিশাল মিস্টেক !

অবশ্যই Irreversible মনিকা বেলুচ্চিরে গোনাতে ধরি আমি চোখ টিপি


অলমিতি বিস্তারেণ

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

স্পেনের প্রথম খেলা দেখেই এদের ভক্ত হয়ে গেছি। কিন্তু সে তুলনায় পরে ওরা তেমন ভাল খেলেনি। আমি তুরস্ক আর স্পেনের দলে। ইতালীকে কোনকালেই ভাল লাগেনি। এদের স্টাইলই হল ফাকতালে গোল দেয়া। এবার ভাল কোন স্কোরার নাই, তাই গোলও নাই। নব্বইয়ের ইতালী আর এখনকার ইতালির মধ্যে পার্থক্য আমার কাছে এটুকুই মনে হয়। ডিফেন্স সেই আগের মতই শক্ত। অসহ্য লাগে এদের খেলা দেখতে। কাখেলোয়াড়ের মত খেলা।

তবে রাশিয়ার খেলা ঐদিন সবচেয়ে ভালো লেগেছে। খুবই পরিকল্পিত খেলেছে তারা।

জি.এম.তানিম এর ছবি

আমি ৯৪ থেকে ইতালির সাপোর্টার। সেই ফাইনালে পেনাল্টিতে হারার কথাও মনে আছে। এর আগের খেলায় একটু সংগঠিত দেখা গেলেও এই খেলাতে আবার ছাড়াছাড়া লেগেছে। দেল পিয়েরোকে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বসিয়ে রাখার কারণ বুঝি নাই। ক্যানাভারো না থাকায় ডিফেন্স অনেক দুর্বল ছিল!
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।