আমি কখনো মানুষ হতে চাই নি

সৌরভ এর ছবি
লিখেছেন সৌরভ (তারিখ: শুক্র, ৩০/০৫/২০০৮ - ১১:১৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমি কখনো মানুষ হতে চাই নি। আমি পাখি হতে পারতাম অথবা ফুল কিংবা সূর্যমূখী ফুলের গাছ। সবুজ পাতায় আর ডালপালায় ছড়ানো কোন মহাকায় বৃক্ষও হতে পারতাম হয়তোবা। মাছ হয়ে সাঁতরে বেড়ানোর সুযোগ দিলেও হয়তো আমি আক্ষেপ করতাম না এভাবে।
আমি বুঝে গেছি, মানুষ হওয়ায় বড্ড কষ্ট।

দুর্ভাগ্যবশতঃ মানুষ হয়ে জন্ম নিয়ে ফেলায় সামান্যতম গর্ববোধ হয় না আমার। মস্তিষ্কে ভাবনা নামের অনুভূতির বিকাশ হওয়ার বয়েস থেকে আমি দ্বিতীয় কোন মানুষের যাপিত জীবনের প্রতি ঈর্ষাবোধ করি নি। পরিপাটি পোশাকের আড়ালে লুকিয়ে থাকা মানুষকে আমার ভীষণ অশ্লীল বোধ হয় সবসময়।

মানুষ হয়ে গেছি বলেই ভেজা মেঘেদের দেখে আমার কক্ষণো প্রেমভাব জেগে ওঠে না। ক্ষুদ্র মাছরাঙা পাখিদের দেখে আমি ঈর্ষাবোধ করি, পুরো পৃথিবী ভিজে যাবার পরেও একটা গা ঝাড়া দিলেই যার গায়ের সমস্ত ভেজা বৃষ্টি হেসে ওঠে খলখল করে। বৃষ্টির সাথে এইরকম ঈর্ষনীয় সম্পর্ক আমার কাছে অদ্ভূত মনে হয় সবসময়।

অথবা আমি শালিক হতে পারতাম, শীতের হালকা রোদে আধা-ঘোমটা নতুন বউয়ের ফেলে দেয়া মুড়ি বা চাল-ভাজার লোভে লাফিয়ে পড়তাম গেরস্থের উঠোনে। কিন্তু, আমি লজ্জ্বা মাখানো মাছরাঙা হতে পারি নি, শালিকও নয়।

মানুষ হিসেবে যাপিত জীবন আমার কাছে দুঃস্বপ্ন আর অনাকর্ষণীয় বোধ হয়।
শালিক অথবা মাছরাঙা কিংবা আমার রোজকার হাঁটার পথের মহাকায় বৃক্ষটি যন্ত্রণাময় স্মৃতি লালন করে না।
স্বপ্নময় শৈশবের নস্টালজিয়া অথবা সম্ভাবনাময় সময়ের ব্যর্থতা তাদেরকে পোড়ায় না। মানুষ হিসেবে প্রতিনিয়তই নানান যন্ত্রণায় পুড়তে থাকার নিয়তি আমার কাছে অসহনীয় মনে হয়।

-
মে ২৯, ২০০৮


মন্তব্য

দ্রোহী এর ছবি

"বিষন্ন বালক" তার সুনাম অক্ষুন্ন রেখেছেন।


কি মাঝি? ডরাইলা?

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

সূর্য্য পূর্ব দিকে উদিত হয়ে পশ্চিম দিকে অস্ত যায়, এরকম করে করেই সচলে পোস্টানো হচ্ছিলো না। গত দু'সপ্তায় পড়া আর কমেন্ট করাও কমে গেছে। আজ ভাবছিলাম - ছাড়ি কিছু একটা হাবিজাবি।

সকালে সুপান্থ'দার দুইটা ভেজা পোস্ট পড়ে স্মৃতিকাতর হয়ে আছি। এর উপরে বিষন্ন বালকের যন্ত্রণা যাপন। শোক-তাপ পুড়ে সময়ের আগুনে।

ঈশ্বর যদি একবার জিজ্ঞেস করতেন, 'মানুষ হতে চাও?'

হায়!!!

কনফুসিয়াস এর ছবি

হুম, আমি হয়তো মানুষ নই, মানুষগুলো অন্যরকম, সাপ দেখলে দৌড়ে পালায়...
----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আহ্... অমলকান্তির মতো রোদ্দুর হইতে পারতাম...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

ইলেকট্রন প্রোটনের পারমুটেশন কম্বিনেশনে মানুষ হইয়া বেশি লস হয় নাই। মাছরাঙা হইলে কাঁচা মাছ খাইতে হইতো, আস্ত কই মাছ কাঁচা খাওয়া ধুম রিস্কি। ছোটবেলা সুঁতা দিয়া ফাঁদ বানাইয়া শালিক ধরতাম। নিজে শালিক হইলে কবে আবার আমার কোন ক্লোনের হাতে ধরা পইড়া পঞ্চভূতে মিলাইয়া যাইতাম, সচলে ব্লগিং করাও হইতো, এমন আবেগী লেখাও পড়া হইতো না।

জ্ঞানের বোঝা অনেক সময় অসহ্য মনে হয়। তয় দিনের শেষে, অজ্ঞানতা কোনো কামের কথা নয়। মরলে জাইনা-শুইনাই মরুম।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- বালকরে ধরে জোর করে বিয়ে দিয়ে দেয়া অতীব জরুরী বিষয় এখন। তবে পাত্রী নিয়া আকাল দেখা দিলেও দিতে পারে। সেক্ষেত্রে আমার জন্য বরাদ্দকৃত মাননীয় দ্রোহী মেম্বারের দুইখান শ্যালিকা হতে আমি বিষণ্ণবালককে একখানা সম্প্রদান কারক করিতে উদ্যত হলাম।

বলেন - কবুল।

লেখা নিয়ে কিঞ্চিৎ দোটানা এইবার প্রকাশ করি। মাছ যে মানুষ হইতে চায় না তার গ্যারান্টী কি? বাদশাহ সোলায়মানের লগে ইমেইলে যোগাযোগের সিসটেম থাকলে একটা ইমেইল ঠুকে জিজ্ঞেস করে নেওয়া যেতো উঠান থেকে ফুরুৎ করে চালের খুদ মুখে তুলে নিয়ে যাওয়া শালিকটা কি লাজুকরাঙা বউটার মতো ঘোমটা মাথায় চলতে চায়!

সম্ভব তো না জানা। সম্ভব হইলে তখন দেখা যাইতো একটা টেংরা সৌরভ কিংবা একটা ফিঙে আরণ্যক মানুষ হওয়ার আক্ষেপ করেই যাচ্ছে কেবল।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

তীরন্দাজ এর ছবি

ধুসরের সাথে সহমত প্রকাশ করে আমারও একই প্রশ্ন। কাব্যিক গদ্য হিসেবে লেখাটি অসাধারণ হৃদয়গ্রাহী।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

সবজান্তা এর ছবি

লেখাটা যথারীতি চমৎকার।

বিষন্নতাময়, কাব্যিক গদ্যকে এবার নাম এসেছে সৌরভ গদ্য নামকরণ করার। ধারে কাছেও কাউকে দেখা যাচ্ছে না এ ব্যাপারে উনার সাথে প্রতিদ্বন্দিতা করার জন্য।

জাঝা


অলমিতি বিস্তারেণ

রণদীপম বসু এর ছবি

সৌভাগ্যবশত মানুষ হইবার জন্মযন্ত্রণা হইতে বঞ্চিত হন নাই বলিয়া উহাকে দুর্ভাগ্য ভাবিতেছেন কেন ?
এই যে ভাবিতে পারিতেছেন, ইহাই আপনার মানুষ হইবার সার্থকতা।
বিষন্নতা একটি রোগ, ইহাও ভাবিতে হইবে। অতিশীঘ্র একজন রমণীডাক্তারের আবশ্যক হইয়াছে আপনার, উহাও বুঝিতে হইবে। আর এই বুঝিতে পারাটাই মানুষ হইবার এবংবিধ সমস্যারও সৃষ্টি করিয়াছে, বিশেষ করিয়া অকালপক্ক বালক-বালিকাদের ততোধিক কাচা হৃদপিণ্ডজাতিয় বিশেষ সংবেদনশীল স্থানে।
কামনা করি অচিরেই আরোগ্যলাভ করিবেন।

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

ভীষন ভাবে মন ছুঁয়ে যাওয়া লেখা।
কিশোরবেলায় যখন প্রচুর ওয়েস্টার্ণ পড়তাম, আমার খুব ইচ্ছে হতো হয়ে যাই কোন বুনো মাসট্যাঙ বা স্ট্যালিয়ন...
আর খোলা অরণ্যে...

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

মুশফিকা মুমু এর ছবি

খুব মন খারাপ হয়ে গেল মন খারাপ আপনার জন্য সুখ আর আনন্দ কামনা করছি।
-------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

ভালো লাগলো লেখাটা। শুভ কামনা।

অতিথি লেখক এর ছবি

"মানুষ হিসেবে প্রতিনিয়তই নানান যন্ত্রণায় পুড়তে থাকার নিয়তি আমার কাছে অসহনীয় মনে হয়।"
মানুষের বোধ আছে। সহনশীলতা আছে। বাধা অতিক্রম করার দুর্ণিবার মনোভাব আর চেষ্টা আছে। অবিরাম বাধা বিঘ্ন অতিক্রমনের মধ্য দিয়েই সে পৌঁছুতে চেষ্টা করে লক্ষ্যে, পাখিদের সেই বোধ নেই। প্রকৃতির ও সেই বোধ নেই। তাদের দুঃখ বা আনন্দের কিছু নেই। আহার এবং প্রজননই সার।
ধন্যবাদ।
-জুলিয়ান সিদ্দিকী

শাহীন হাসান এর ছবি

উপদেশ দেবার ধৃষ্টতা রাখে না এ কলম।
কয়েকটি পংক্তি শুধু :

নিখিলবিষ আমি পান করেছি
আমার জন্মসুন্দর মা ও বাবার জন্য
হাসি মুখে।
যদিও জন্মকে প্রসন্ন বলতে পানি নি,
গ্রহণ করেছি শুধু ...।
ভাল-থাকবেন।
....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

রায়হান আবীর এর ছবি

সৌরভ রোদ্দুর হতে চেয়েছিল।
---------------------------------

নিঝুম এর ছবি

যন্ত্রণা গুলো খুব কাছে এসে বাজল। মন খারাপ টারাপের মত বাজে ব্যাপার আর নাই।
---------------------------------------------------------
পৃথিবীর সব সীমান্ত আমায় বিরক্ত করে। আমার বিশ্রী লাগে যে, আমি কিছুই জানিনা...

---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍গাছ, পাখি বা মাছের জীবন আপনার রোমান্টিক মনে হচ্ছে (গ্রামের মাঝি বা জেলে নিয়ে শহুরে রোমান্টিকতার মতোই, যা বাস্তবতা থেকে শত যোজন দূরে) আপনি মানুষ বলেই । মানুষ বলেই পারছেন এতো সুন্দর করে নিজের অনুভূতি টাইপ করে সচলায়তনে ছেড়ে দিতে। এতোটা হা-হুতাশ আমার কাছে রীতিমতো অবান্তর মনে হয়। এটা নেহাতই দুঃখবিলাস। আর দুঃখবিলাসেই আপনার আনন্দ, আমি তা নিশ্চিত আন্দাজ করতে পারি।

আমার মন্তব্য পড়ে রাগ না করলেই খুশি হবো। আসলে এতো বেশি হতাশার কথা, যার অনেকটাই স্বরচিত, পড়তে ভালো লাগে না।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর? চিন্তিত

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

তিথীডোর এর ছবি

গুরু গুরু

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

লেখাটা সুন্দর। কিন্তু আমিও ধুসরদার কথাই তুলতাম, আমার মানব জীবন যে অন্য কেউ চায় না তার কী প্রমাণ? আর যত যাই হোক, আমি বারবার মানুষ হয়েই জন্মাইতে চাই। নাইলে এইভাবে ভাবতে পারতাম না, এইভাবে দেখতে পেতাম না, এইভাবে চাইতে পারতাম না, সকিছুই ভিন্নকম হতো, আর আমার অন্তত ভিন্নতার দরকার নাই আসলে, মন্দটা, ভালোটা, আনন্দটা, কষ্টটা সবটা মিলেই আমার জীবন, আমি এইটা নিয়েই খুশি, হাসি রাশি রাশি। হাসি

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।