বাংলা ভাষা

শুভাশীষ দাশ এর ছবি
লিখেছেন শুভাশীষ দাশ (তারিখ: সোম, ০৯/০৮/২০১০ - ৯:০০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:


বাংলা আমাদের মুখের ভাষা। লেখার ভাষা। এই ভাষার শ্রী বাড়ানোর কাজে লেখক কবি গবেষকেরা বিস্তর অবদান রেখেছেন। তবে সব দিক দিয়ে একটি ভাষার যেভাবে এগোনো প্রয়োজন বাংলা ভাষা সেইদিকে এগিয়ে গেলেও কয়েক জায়গায় গলদ রয়ে গেছে। বিজ্ঞানশিক্ষা থেকে শুরু করে অন্যান্য শিক্ষায় ও গবেষণায় বাংলা ভাষার ব্যবহার এখনো কম। স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষায় এদেশে ইংরেজি ভাষার উপর নির্ভরতা বেশি। বাংলায় অনুবাদ সাহিত্য বেশ দুর্বল। অর্থনীতি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান থেকে শুরু করে অন্যান্য ক্ষেত্রে সঠিক পরিভাষা তৈরি করতে সীমাবদ্ধতা চোখে লাগে। কিছু জায়গায় যেসব অনুবাদ করা জিনিসপত্র পাওয়া যায়, সেগুলো ভাষার দুর্বোধ্যতার জন্য সাধারণ মানুষের মনে স্থান নিতে পারেনি।

বাংলা ভাষা নিয়ে লেখা প্রবন্ধগুলোর মধ্যে বঙ্গদর্শন পত্রিকায় ১২৮৮ সনে প্রকাশিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর প্রবন্ধটি বেশ গুরুত্বের। আহমদ ছফার একটি প্রবন্ধ এক্ষেত্রে সাথে নেয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ। প্রবন্ধটির নাম ‘বাংলা ভাষাঃ রাজনীতির আলোকে’। শাস্ত্রী মহাশয় শুরু করেছেন দুই বর্গের লোকের আচরণ নিয়ে। একদল বাংলা ভাষায় সংস্কৃত ছাড়া ভিন্ন ভাষার শব্দের প্রবেশ দেখলে রেগে যান। অন্য গোত্রের লোকেরা এই ভাষায় সংস্কৃত শব্দের অনুপ্রবেশ দেখলে বিরক্ত হন।

… এখন আমরা গরিব, দাড়াঁই কোথা? আমরা ইংরেজি পড়ি আমাদের অর্ধেক ভাবনা ইংরেজিতে। আমরা কলম ধরিলেই ইংরেজি কথায় ইংরেজি ভাব আইসে। সংস্কৃত আমরা যা পড়ি, তাতে সে ভাব ব্যক্ত হয় না। বাংলার বিদ্যা বিদ্যাসাগরের 'সীতার বনবাস', আর বঙ্কিমবাবুর নবেল কয়খানি। তাতেও তো কুলায় না। নতূন কথা গড়ি এমন ক্ষমতাও নাই। তবে আমাদের কী হইবে। হয় কলম ছাড়িতে হয়, না-হয় যেরূপে পারি মনের ভাব ব্যক্ত করিয়া দিতে হয়। নিজের কথায় নিজের ভাব আমি ব্যক্ত করিব, তাহাতে অন্যের কথা কহার স্বত্ব কতদূর আছে জানি না। কিন্তু পূর্বোক্ত দুই দলের লোক দুই দিক হইতে কুঠার লইয়া তাড়া করেন। সুতরাং এক এক সময়ে বোধ হয় "...তত্র মৌনং হি শোভতে", কিন্তু আবার যখন অঙ্গুলিকন্ডূয়ন উপস্থিত হয়, তখন না লিখিয়াও থাকিতে পারি না। বিশেষ এই যে, যখন কর্তব্যবোধে কোনো কার্যে প্রবৃত্ত হওয়া যায়, তখন পাচঁ জনের কথায় তাহা হইতে নিরস্ত্র হওয়া নিতান্ত কাপুরুষের কাজ। যেকোনো ভাষাই হউক, যেকোনো রচনাপ্রণালীতেই হউক, যদি দুটা ভালো কথা বলতে পারি, পাচঁ জনের ভয়ে চুপ করিয়া থাকিব কেন?...

হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মতে বাংলায় যাঁরা লিখছেন তাঁরা এ ভাষা ভাল করে শেখার আগেই লেখায় দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। অনুবাদ করার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা একধরণের দায়সারা অনুবাদ করেই ক্ষান্ত হয়েছেন। অন্য ভাষা থেকে নিজের ভাষার কোন লেখা নামাতে যে বিশেষ শ্রম এবং নিরীক্ষার প্রয়োজন তা করার গরজ কেউ দেখাননি।

...আবার যখন অনুবাদদিগের এইরূপ দীর্ঘছন্দ সংস্কৃতের "নিবিড় ঘনঘটাচ্ছন্দের" নদ, নদী, পর্বত, কন্দরের অসম্ভব বাড়াবাড়ি হইয়া উঠিল, যখন সংস্কৃত, ইংরেজি পড়া অপেক্ষা বাংলা পড়ায় অভিধানের অধিক প্রয়োজন হইয়া পড়িল, তখন কতকগুলি লোক চটিয়া বলিলেন, এ বাংলা নয়। বলিয়া তাহাঁরা যত চলিত কথা পাইলেন, তাহাই লইয়া লিখিতে আরম্ভ করিলেন। ইহাঁদের সংখ্যা অল্প, কিন্তু ইহাঁরা সংস্কৃতের সং পর্যন্ত শুনিলে চটিয়া উঠেন। এমন-কি ইহাঁরা সংস্কৃতমূলক শব্দ ব্যবহার করিতে রাজি নন। অপভ্রংশ শব্দ, ইংরেজি শব্দ, পারসি শব্দ ও দেশীয় শব্দের দ্বারা লিখিতে পারিলে সংস্কৃত শব্দ প্রাণান্তেও ব্যবহার করেন না। এই গেল আর-এক দলের কথা। সুতরাং এই উভয় দল যে পরষ্পরবিরোধী হইবেন, এবং বঙ্গীয় লেখকগণকে ব্যতিব্যস্ত করিয়া তুলিবেন, আপত্তি কী?...

বাংলা ভাষায় সংস্কৃত শব্দ ঢোকানোর প্রবণতা একটা বিশেষ গোষ্ঠীর ছিল। অন্য গোষ্ঠী সেটা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে আকচার আরবি, পারসি শব্দ বাংলার মধ্যে ঢুকিয়ে সেটার শোধ তুলতে আগ্রহী। ফলে কারো প্রবণতা সুস্থতার মধ্যে দিয়ে যায়নি। ভাষা একটা চলন্ত ব্যাপার। জোর খাটানো সেখানে চলে না। ফলে অনর্থক অন্য ভাষা থেকে ধার করা শব্দ জোর করে ঢোকানো হলে সেটা বেশিকাল টেকে না। ঝরে যায়।

আহমদ ছফা তাঁর প্রথম প্রবন্ধ শুরু করেছেন বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানের বইয়ের অভাব নিয়ে। বাংলা ভাষা নিয়ে যাঁরা হল্লা বাঁধাতে কসুর করেন না, এই ভাষায় লেখা বিজ্ঞানের বই-পুস্তক কোথায় এই প্রশ্নের উত্তর দিতে না পেরে পিঠটান দেন। নানা অপ্রয়োজনীয় কারণের দিকে অনর্থক মন দিতে গিয়ে আসল জায়গায় হাত দিতে কেউ এগিয়ে আসেননি।

… বাংলাভাষায় বিজ্ঞানের বই নেই। অর্থনীতি, রাষ্ট্রতত্ত্ব, সমাজতত্ত্ব, ইতিহাস এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর পঠন এবং অনুশীলনযোগ্য কোন পুস্তক লেখা হয়নি। এসব নিরেট সত্য কথা। এতবেশি সত্য যে, এই কঠিন সত্যের মুখোমুখি লাঠি মেরে বাংলা চালাতে চায় সেরকম অত্যুৎসাহী লোকদের অপরিমিত আবেগ উৎসাহও ফুটো বেলুনের মতো চুপসে যায়। তর্কের খাতিরে ধরে নেয়া যাক, বাংলাভাষায় বিজ্ঞানের বই নেই, লেখা হয় না এই দোষটা কার? বাংলাভাষার? না বিজ্ঞান শাস্ত্রের? অনুরূপ প্রশ্ন অর্থনীতি, রাষ্ট্রতত্ত্ব এবং অন্যান্য বিষয়ের উপরও করা যায়। কতেক ভাষা পৃথিবীতে আছে যেমন আফ্রিকার হটেনটটদের ভাষা। ঐ ভাষার প্রকাশভঙ্গি এতই সীমিত যে প্রকৃতি বিজ্ঞানের কথা দূরে থাক, মনের সামান্য ভাব অনুভবেরও শব্দে প্রকাশ করা যায় না। পরিবর্তে অঙ্গ-ভঙ্গি এবং হাত-পায়ের নানারকম মুদ্রা ব্যবহার করতে হয়। প্রতিটি বস্তুকে আলাদা আলাদাভাবে প্রকাশ করার জন্য যে বিশেষ ভঙ্গি এবং শব্দ সম্ভারের প্রয়োজন, তার সহস্রাংশের এক অংশও ঐ ভাষাতে নেই। … এখানে একটা কথা পরিষ্কার করে নিতে চাই। কোন অনুন্নত উপজাতি যদি তার সংস্কৃতি এবং ভাষার মান নানা আধুনিক টেকনিক অবলম্বন করে উন্নত করে, তারই মাধ্যমে যদি আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা করতে প্রয়াস প্রযত্ন নিয়োজিত করে তার কথা আমি তুলছি না। সাধারণভাবে শুধু আমি বলেছি, এই ভারতীয় উপমহাদেশেরও অনেকগুলো ভাষা এখন যেমন আছে তেমনি ধরে নিলে তার মাধ্যমে আধুনিক বিজ্ঞান, দর্শন ও অন্যান্য বিষয়ের চর্চা করা একরকম অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাভাষা কি একটা তেমন ধরণের ভাষা? বাংলাভাষার প্রকাশ করার ক্ষমতা কি সত্যি সত্যি সংকুচিত? কথাটি নির্মোহ দৃষ্টিতে আবেগ অনুভূতি কিছুটা তথাকথিত দেশপ্রেম বর্জন করে খতিয়ে দেখার অপেক্ষা রাখে।…

এই দোষটা আহমদ ছফা কিছুটা চাপিয়েছেন বাংলা ভাষার ওপর। বাকি কিছু অংশ বাংলাভাষা-ভাষী মানুষদের ওপর। প্রথমত, বাংলাভাষাতে আগে থেকেই বিজ্ঞান-চর্চার কোন বালাই ছিল না। এই ভাষায় সাথে ভিন্ন ভাষার পুরো ভিন্ন কোন বিষয়ের অবতারণা করার কঠিন শ্রমসাধ্য পথে কেউ খুব একটা অগ্রসর হন নি। অল্প আয়াসে অন্য ভাষাতেই জ্ঞান নেয়ায় আগ্রহী হয়েছেন।দ্বিতীয়ত, অন্য ভাষার জ্ঞান-বিজ্ঞানকে বাংলা ভাষায় আনার কাজটি করার কথা যাঁদের ছিল তাঁরা সেটা একদমই করেন নি। ব্যতিক্রম চেষ্টা যে কেউ কেউ করেননি তা নয়। তবে দীর্ঘ মেয়াদে সেখানে সফলতা আসেনি। এর মূল কারণ বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানশিক্ষার দিকে ঝুঁকে থাকা ব্যক্তিদের ব্যবহৃত বাংলায় যথেষ্ঠ দুর্বলতা ছিল। এসব লেখা সাধারণ পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায় নি। তা সত্ত্বেও ১৯২০-৫০ সালের দিকে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানচর্চার একটা প্রবণতা ছিল। পরে সেটা ধারাবাহিকভাবে হয়নি।

… আমরা শুনেছি বিজ্ঞানী জগদীশচন্দ্র বসু তাঁর সমস্ত দুরূহ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের ফর্মুলা বাংলাভাষায় লিপিবদ্ধ করতে তীক্ষ্ণ আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। এজন্য তিনি নাকি নানা সংস্কৃত প্রতিশব্দ ও তৈরি করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত তাঁকে ঐ উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা বর্জন করতে হয়। কারণ সেই সময়ে বাংলাভাষার মাধ্যমে বিজ্ঞান শিক্ষা দেবার কোন চল ছিল না। বাংলাতে লিখলে সাধারণ লোকের দুর্বোধ্য এই বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারে পাঠক পাওয়া যেত না। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, কোন বিষয়ের উপর প্রগাঢ় জ্ঞান থাকা এবং সেই বিষয়কে বাংলাভাষার মাধ্যমে প্রাঞ্জলভাবে প্রকাশ করার ক্ষমতা থাকাটাই জীবনের সর্বক্ষেত্রে বাংলা প্রয়োগ করার একমাত্র হেতু হতে পারে না। সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক অবস্থাটিকেও বিচার করে দেখতে হবে। কোন জ্ঞান কিংবা বিদ্যা অনিবার্য সামাজিক চাহিদার পর্যায়ে না এলে সমাজে তার চল হয় না, হতে পারে না। এই একই কারণে ইয়ং বেঙ্গলের যুগে ড. রাজেন্দ্রলাল মিত্র ‘তত্ত্ববোধিনী’ পত্রিকার অক্ষয়কুমার দত্ত এবং ড. মহেন্দ্র লাল সরকার প্রমুখ বাংলাভাষার মাধ্যমে বিজ্ঞান শিক্ষা দেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করলেও বাঙালি সমাজে তা চালু হতে পারেনি। …

ব্রিটিশ শাসনের সুদীর্ঘকাল বাংলা ভাষায় নানা কাজ হলেও সর্বাংশে শিক্ষিত লোকদের মধ্যে ইংরেজির প্রতি প্রীতি বেশ জোরালো ছিল। ইংরেজি শিক্ষার প্রসারে এদেশের মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় মুখিয়ে ছিলেন। বাংলার দিকে তাঁদের অমনোযোগ ছিল আশংকাতীত। শাস্ত্রী মহাশয়ের প্রবন্ধে দেখি।

… ইংরেজরা এ দেশ দখল করিয়া ভাষার কিছুমাত্র পরিবর্তন করিতে পারেন নাই। কিন্তু তাঁহারা বহু-সংখ্যক আদালত স্থাপন করায় এবং আদালতে উর্দুভাষা প্রচলিত রাখায় বাংলাময় পারসি শব্দের কিছু অধিক প্রাদুর্ভাব হইয়াছিল মাত্র। সাহেবেরা পারসি শিখিতেন, বাংলা শিখিতেন। দেশিয়েরা দেশীয় ভাষায় তাহাঁদের সহিত কথা কহিতেন। সুতরাং ইংরেজি কথা বাংলার মধ্যে প্রবিষ্ট হইতে পারে নাই। যাহাঁরা ইংরেজি শিখিতেন বা ইংরেজের সহিত অধিক মিশিতেন দেশের মধ্যে প্রায়ই তাহাঁদের কিছুমাত্র প্রভুত্ব থাকিত না।

কথক মহাশয়েরা বহু-কালাবধি বাংলায় কথা কহিয়া আসিতেছেন। তাঁহারা সংস্কৃত ব্যবসায়ী কিন্তু তাঁহারা যে ভাষায় কথা কহিতেন তাহা প্রায়ই বিশুদ্ধ বিষয়ী লোকের ভাষা। কেবল জমকালো বর্ণনাস্থলে ও সংস্কৃত শ্লোকের ব্যাখ্যাস্থলে ব্রাহ্মণ পন্ডিতি ভাষার অনুসরণ করিতেন।

আমাদিগের দুর্ভাগ্যক্রমে যে সময়ে ইংরেজ মহাপুরুষেরা বাঙালিদিগকে বাংলা শিখাইবার জন্য উদ্যোগী হইলেন, সেই সময়ে যে-সকল পন্ডিতের সহিত তাঁহাদের আলাপ ছিলো তাঁহারা সংস্কৃত কালেজের ছাত্র। তখন সংস্কৃত কালেজ বাংলায় একঘরে। ব্রাহ্মণ পন্ডিতেরা তাঁহাদিগকে যবনের দাস বলিয়া সঙ্গে মিশিতে দিতেন না। তাঁহারা যে সকল গ্রন্থ পড়িতেন তাহা এ দেশমধ্যে চলিত ছিল না। এমনকি দেশীয় ভদ্রসমাজে তাঁহাদের কিছুমাত্র আদর ছিল না। সুতরাং তাঁহারা দেশে কোন্ ভাষা চলিত কোন্ ভাষা অচলিত, তাহার কিছুই বুঝিতেন না। হঠাৎ তাঁহাদিগের উপর বাংলা পুস্তক প্রণয়নের ভার হইল। তাঁহারাও পন্ডিতস্বভাবসুলভ দাম্ভিকতাসহকারে বিষয়ের গুরুত্ব কিছুমাত্র বিবেচনা না করিয়া লেখনী ধারণ করিলেন।…

অনুবাদ কর্মের কাজ যোগ্য লোকের হাতে পড়ে নি। যাঁরা কিছু কিছু অনুবাদের কাজ শুরু করলেন ভাষা দুর্বোধ্যতার কারণে সেটা বাতিলের খাতায় চলে গেল অচিরেই। অনুবাদকর্মে ব্যবহার করা কিম্ভূত বাংলার উদাহরণ দিয়েছেন হরপ্রসাদ শাস্ত্রী।

… “তুষারমন্ডিত হিমালয়, গিরিনিঃসৃত নির্ঝর, আবর্ত্তময়ী বেগবতী নদী, চিত্তচমৎকারক ভয়ানক জলপ্রপাত, অযুতসম্ভুত উষ্ণপ্রস্রবণ, দিকদাহকারী দাবদাহ, বসুমতীর তেজঃপ্রকাশিনী সুচঞ্চল শিখা-নিঃসারিণী, লোলায়মানা জ্বালামুখী, বিংশতিসহস্র জনের সন্তাপনাশক বিস্তৃত-শাখা-প্রসারক বিশাল বটবৃক্ষ, শ্বাপদনাদে নিনাদিত বিধি বিভীষিকাসংযুক্ত জনশূন্য মহারণ্য, পর্বতাকার তরঙ্গবিশিষ্ট প্রসারিত সমুদ্র, প্রবল ঝঞ্জাবাত, ঘোরতর শিলাবৃষ্টি, জীবিতাশাসংহারক হৃৎকম্পকারক বজ্রধ্বনি, প্রলয়শঙ্কাসমুদ্ধাবক ভীতিজনক ভূমিকম্প, প্রখররশ্মিপ্রদীপ্ত নিদাঘমধ্যাহ্ণ, মনঃপ্রফুল্লকরী সুধাময়ী শারদীয় পূর্নিমা, অসংখ্য তারকামন্ডিত তিমিরাবৃত বিশুদ্ধ গগনমন্ডল ইত্যাদি ভারতভূমিসম্বন্ধীয় নৈসর্গিক বস্তু ও নৈসর্গিক ব্যাপার অচিরাগত কৌতুহলাক্রান্ত হিন্দুজাতীয়দিগের অন্তঃকরণ এরূপ ভীত, চমৎকৃত ও অভিভূত করিয়া ফেলির যে, তাঁহারা প্রভাবশালী প্রাকৃত পদার্থ-সমুদয়কে সচেতন দেবতা জ্ঞান করিয়া সর্বাপেক্ষা তদীয় উপাসনাতেই প্রবৃত্ত থাকিলেন।” (অক্ষয়কুমার দত্ত রচিত ‘ভারতবর্ষীয় উপাসক সম্প্রদায়’ প্রথম ভাগ, ১৮৭০ খৃ., উপক্রমণিকা)। এ ভাষায় মন্তব্যপ্রকাশ নিষ্প্রয়োজন। …

হরপ্রসাদ শাস্ত্রী যেসব বিষয়ের কথা বলেছেন আহমদ ছফা তাঁর প্রবন্ধে সেগুলোর আগপাশতলা বর্ণনা করেছেন। ছফা মনে করেন ভাষাকে ভাল করে সমাজের মধ্যে ঢুকাতে গেলে সমাজকে ভাঙ্গার প্রয়োজন দেখা দিতে পারে। মানে বিপ্লব। সমাজ বিপ্লব।

… বাংলাভাষাকে এই বাংলাদেশেরই জনগণের মধ্যে চালু করতে হলে বাংলাভাষার মত বাঙালি সমাজকেও ভেঙেচুরে নতুন করে গড়তে হবে, সমাজের ভাঙাগড়া রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ীভূত এবং অর্থনীতি হবে তার নিয়ামক শক্তি। বর্তমানে যে ধরণের পুঁজিবাদী সামন্ত প্রভাবিত ও সাম্রাজ্যবাদী আর্থিক সম্বন্ধের জটাজালের মধ্যে এই দেশের মানুষের জীবন প্রতিনিয়ত পিষ্ট হচ্ছে, তাকে একেবারে নতুন করে ঢালাই করতে হবে। এই নতুনভাবে ঢালাই করার কাজটিকে বলা যেতে পারে সমাজবিপ্লব। …

সর্বস্তরে বাংলা চালুর যে প্রণোদনা আমাদের দেশে চালু আছে বিপ্লবী আহমদ ছফা তার অন্তঃসারশূন্য চেহারার ধারণা দিয়েছেন।ব্রিটিশ শাসনের বুক থেকে উৎপন্ন বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত সুবিধাভোগী শ্রেণী নিজের ভাষার দিকে যথেষ্ঠ নজর দেয়নি। অন্ধ অনুকরণে মেতে ছিল বললে ভুল বলা হবে না। কেউ কেউ অনুকরণ করেছে পশ্চিম বাংলার লেখকদের। ভাষা একটা সামাজিক শক্তি। একটা জাতি নিজে থেকে তার ভাষাকে নষ্ট করতে বদ্ধপরিকর না হলে কোন সাম্রাজ্যবাদী শক্তি এসে সেই ভাষাকে ধ্বংস করতে পারে না। ভাষাই পারে সমাজের মধ্যে জমে থাকা ময়লা দূর করে প্রাণ ফোটাতে। ভাষা যদি সমাজের সাথে সম্পর্কহীন হয়ে যায় তবে টিকে থাকা তার জন্য দায় হয়ে পড়ে। সামাজিক জীবনের উন্নতি ঘটাতে না পারলে ভাষার লাবণ্য বাড়ানো অসম্ভব। সমাজব্যবস্থা কৃত্রিমতার উপরে ভর করে গড়ে না উঠলে সেখান থেকে ভালো কিছু আশা করা যায় না।

… পৃথিবীর প্রতিটি সমৃদ্ধিশালী ভাষা বিশেষ বিশেষ ঐতিহাসিক পর্বে সামাজিক জীবনের সমৃদ্ধায়নের সংগ্রামে এই হাতিয়ারের ভূমিকা গ্রহণ করেছে। রোমান সাম্রাজ্যের সঙ্গে ইংল্যাণ্ডের বিরোধ যখন চরমরূপ ধারণ করে পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের কাঠামো থেকে বহির্গত হয়ে ইংল্যাণ্ড যখন স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে মাথাতুলতে চেষ্টা করছিল, সেই সময়ে ইংল্যাণ্ডের ভক্ত খ্রিস্টানদের ধর্মতৃষ্ণা নিবারণ করার জন্য ল্যাটিন বাইবেলের ইংরেজি অনুবাদ করেছিলেন উইক্লি। ইংরেজ জনগণের গল্প শোনার আগ্রহ চরিতার্থ এবং রস-পিপাসা মিটাবার জন্য চসার ‘ক্যান্টারবেরিস টেলস’ রচনায় প্রবৃত্ত হয়েছেন। পাদরি পুরোহিতের উৎপাতে যখন জীবন জীবনযাত্রা অতীষ্ঠ হয়ে উঠেছিল, মানুষের জিজ্ঞাসা প্রবৃত্তিকে ধর্মের নামে চারদিক থেকে দাবিয়ে দেয়া হচ্ছিল তারই প্রতিবাদে আধুনিক বস্তুবাদী দর্শনের পূর্বসূরী লর্ড বেকন তাঁর অভিজ্ঞতাভিত্তিক দর্শনের সন্দর্ভগুলো রচনা করেন। হবস্ এবং লকের রাজনৈতিক রচনা রাষ্ট্র-বিজ্ঞানে বর্তমান কালে ক্ল্যাসিক মর্যাদা লাভ করেছে। কিন্তু সেগুলো যে সময়ে রচিত হয়েছিল, তাঁরা কোন রাজনৈতিক মতামতের পক্ষাবলম্বন বা বিরোধিতা করার জন্য কলম ধরেছিলেন। অর্থশাস্ত্রী এডাম স্মিথকে অর্থশাস্ত্রের অন্যতম ব্যক্তিত্ব বলে স্বীকার করে নেয়া হয়। তিনিও সামন্ত অর্থনীতির বিরুদ্ধে বুর্জোয়া অর্থনীতির মহমাকীর্তন করার জন্য এবং অবাধ বাণিজ্যনীতির প্রতি গণসমর্থন আদায় করার জন্যই ‘ওয়েলথ অব দ্যা নেশন’ গ্রন্থ লিখেছিলেন। …

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রাজা রামমোহন রায় বিধবা বিয়ে, সহমরণ প্রথা নিবারণ এসব সামাজিক আন্দোলনে বাংলা ভাষাকে কাজে লাগিয়েছিলেন।তা না হলে সমাজের ভেতরে তার প্রভাব পড়তো না। পরে বাংলা ভাষা এবং সংস্কৃতির যেটুকু শ্রী বেড়েছে তার পেছনে ছিল সামাজিক আন্দোলন।

জ্ঞানের প্রথম কাজ হল এই সমাজ ব্যবস্থা যে মিথ্যের উপর দাঁড়িয়ে আছে, তা দেখিয়ে দেয়া। যাঁরা প্রকৃত জ্ঞানী, জ্ঞানকে মানবসমাজের সম্পদ মনে করেন তাঁদের কাজ হওয়া উচিত অজ্ঞানতার উপর যে সমাজ দাঁড়িয়ে আছে তা ভাঙ্গার কাজে অংশগ্রহণ করা। কেননা শ্রেণীবিভক্ত সমাজে ব্যাপক হারে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চল হলেও সেই জ্ঞান-বিজ্ঞান শ্রমিক-কৃষককে শোষণের হাতিয়ারে পরিণত করে। শিল্পী, সাহিত্যিক, দার্শনিক এবং বৈজ্ঞানিকরা শোষক শ্রেণীর সেবাদাসে পরিণত হতে বাধ্য হয়। তাঁদের প্রতিভাকে অপরের লোভ প্রবৃত্তি চরিতার্থতা করার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করতে দিতে হয়। অথচ প্রতিভার দানে জগত সুন্দর, সুখকর এবং মানবসমাজ ভ্রাতৃত্বপূর্ণ এবং প্রতিস্নিগ্ধ হওয়ার কথা। কিন্তু তার বদলে মানুষের সৃজনশক্তিরই সাহায্য নিয়ে একদল মানুষ সমাজের অন্যান্য মানুষদের দাস-গোলামে পরিণত করে। পৃথিবীকে কারাগারে বানিয়ে রাখে। …

ইংরেজি শিক্ষার প্রতি এই প্রবল অনুরাগের পেছনে কোন মানসিকতা কাজ করে আহমদ ছফা সেদিকে আমাদের দৃষ্টি ফেরান। মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ঔপনিবেশিক মন-মানসিকতাকে।

ইংরেজরা যে শ্রেণীটি তৈরি করে দিয়ে গেছে সেই শ্রেণীটি এখনো এই দেশের প্রাণশক্তিকে বুকে পা দিয়ে দাবিয়ে রেখেছে। এই দাবিয়ে রাখার জন্য তারা সাম্রাজ্যবাদী, সম্প্রসারণকামী যে-কোন দেশের সঙ্গে আঁতাত গড়ে তুলতে পিছপা হবে না। বর্তমানে ইংরেজির ছদ্মবেশে হামেশা যা দেখি তা হল ঔপনিবেশিক মানসিকতা। এই ঔপনিবেশিক মানসিকতা ঔপনিবেশিক অর্থনৈতিক পদ্ধতি থেকে দিনে দিনে প্রাণরস আহরণ করছে। এই ঔপনিবেশিক মানসিকতাই বাংলা ভাষার সবচেয়ে বড় শত্রু। তা যতদিন পর্যন্ত দূর করা না যায় বাংলাভাষা এবং সংস্কৃতি কখনো গণমুখী রূপ পরিগ্রহ করবে না। যে অর্থনৈতিক ভিত্তি এই ঔপনিবেশিক মানসিকতাকে টিকিয়ে রেখেছে তা প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে জনগণের মুখের ভাষাকে টুঁটি টিপে ধরছে এবং জনগণের প্রগতিশীল সংস্কৃতিকে শ্বাসরুদ্ধ করে রাখছে। সম্পূর্ণরূপে ভেঙে না ফেলা পর্যন্ত তা আপনাআপনি দূরীভূত হবে না। এই পদ্ধতিকে বর্তমানের মত চলতে দিয়ে বাংলাভাষার উন্নতির জন্য অশ্রুপাত করা রুগ্ন ছেলের চিকিৎসা না করে শিয়রে বসে কাঁদুনি গাওয়ার সামিল। এইসব ঔপনিবেশিক মানিসিকতা এবং তার অর্থনৈতিক ভিত্তি ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়ার কাজে এই বাংলাভাষাকেই হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। ইংরেজি, ফরাসি, রুশ প্রত্যেকটি ভাষা ইতিহাসে বিশেষ বিশেষ পর্যায়ে এই ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। বাংলাভাষাকেও বাংলাদেশের প্রতি ইঞ্চি ইঞ্চি এবং প্রতিটি মন লড়াই করে জয় করতে হবে। বাংলার সমাজ-বিপ্লবের প্রথম শোণিত বাংলাভাষার শরীর থেকেই নির্গত হবে। …

নিজেদের দেশকে ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্র বলি, অথচ এদেশের উচ্চশিক্ষা অন্য ভাষার খুঁটির ওপর দাঁড়িয়ে। আহমদ ছফা আর হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর প্রবন্ধ থেকে এটা পরিষ্কার- শিক্ষাকে ঠিকঠাক মানুষের মাথায় ঢোকাতে দেশি ভাষার ব্যবহারের বিকল্প নেই। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে বাংলা ভাষাচর্চা আমরা অনেকদূর এগিয়ে নিতে পারি। আন্তর্জাল একটা শক্তিশালী মাধ্যম। একাকী কাজের চেয়ে দলবদ্ধ প্রচেষ্টায় কাজ অনেক দূর এগোতে পারে। বাংলা উইকি অনুবাদের জন্য লোকের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আমরা কাজ করছি। তবে গতি অনেক কম। অনুবাদ চর্চা আর সাথে সেটার সুসম্পাদনা করার ক্ষেত্রে আরো বেশি খাটতে হবে। বিদেশে বা দেশে যাঁরা গবেষণা করছেন, তাঁরা তাদের গবেষণার বিষয় বাংলার সহজে লিখে ব্লগ চর্চা বা পত্রিকায় প্রকাশ কিংবা বই প্রকাশ করতে পারেন । স্নাতক বা স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অনেক বেশি বাংলা বই প্রয়োজন। কেউ কেউ এগিয়ে আসুন।

সূত্র

১। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী রচনা-সংগ্রহ দ্বিতীয় খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুস্তক পর্ষৎ, ২০০০
২। আহমদ ছফা রচনাবলি- দ্বিতীয় খণ্ড – সম্পাদনা নূরুল আনোয়ার (খান ব্রাদার্স এন্ড কোম্পানি , ফেব্রুয়ারি ২০১০)

ফিরেঃ লেখাটা অপূর্ব সোহাগ সম্পাদিত ''দাহপত্র'' পত্রিকার তৃতীয় সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। বেশ কিছু জায়গা সম্পাদনা ও পরিবর্ধন করে এখানে দিলাম।


মন্তব্য

নিবিড় এর ছবি

আপনার লেখাটা পড়ে কয়েকদিন আগে দেখা একটা ঘটনা না বলে পারছি না। পরীক্ষা ছিল তাই ক্লাসের ধার না ধরা এক বন্ধু পরীক্ষার দিন কয়েক আগে নোটের সন্ধানে এখানে সেখানে ঘুরছিল। কথায় কথায় জানাল যে এইবার বাংলায় সবগুলো কোর্স পরীক্ষা দিবে। ভাল কথা। তো পরীক্ষার সময় সিট পড়ল আমার পাশে, লিখতে লিখতে দেখি ব্যাটা ইংরেজীতে খাতা ভর্তি করছে। পরীক্ষার পরে প্রশ্ন করলাম, কি ব্যাপার সিন্ধান্ত বদলালি কেন? উত্তর দিল বাংলায় প্রয়োজনীয় জিনিস জোগাড় করা ব্যাপক ঝামেলার কাজ তার থেকে ইংরেজীতে তৈরি নোট পাওয়া যায়, ঐটা পড়েই পরীক্ষা দিয়ে দিলেই হল।


মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

সেটাই।

---------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

ফারুক হাসান এর ছবি

সেটাই। হতাশার ব্যাপার যে ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্র হয়েও বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চা, লেখা, প্রকাশনা -এগুলো যেন সূদুর পরাহত।

এটাও ঠিক, বর্তমানে ইংরেজিই হচ্ছে বিজ্ঞান প্রসারণের মূল ভাষা। যে কোন নতুন আবিস্কার, উদ্ভাবন, কিংবা প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার খবর ইংরেজিতে না প্রকাশ করলে তা ছড়িয়ে পড়ার ও বৈজ্ঞানিক সমাজে গ্রহনযোগ্যতা পাবার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়। কিন্তু তাই বলে কি আমরা বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চা করবো না? অবশ্যই করব এবং সেটা করাই সমুচিত। যেমন - পাটের জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের পেটেন্ট করতে হবে ইংরেজিতে, যাতে এর পেছনের অবদান এবং গুরুত্বের স্বীকৃতি বাংলাদেশই পায়। কিন্তু এ সম্পর্কিত জ্ঞান বিতরণ, মানব সম্পদ উন্নয়ন, পাঠদান ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে আমাদের বাংলাকেই কাজে লাগাতে হবে। সমাজকে বিজ্ঞানমনষ্ক করতে বিজ্ঞানের জয়ধ্বনি করতে হবে মাতৃভাষাতেই। এর বিকল্প নেই। আজকে যে কিশোর তার পক্ষে কেবল মাতৃভাষার উপর ভর করেই বিজ্ঞানের জগতে প্রবেশ ও বিচরণ করার অনুপ্রেরণা পাওয়া সম্ভব, বাংলা ভাষার বই পড়েই কেবল সে জগদীশ চন্দ্র বসু, সত্যেন বোস, মনিরুজ্জামানদের উত্তরসূরী হবার প্রেরণা খুঁজে পাবে।

ব্লগ হতে পারে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান ছড়িয়ে দেবার একটা বড় হাতিয়ার। যে ছেলে বা মেয়েটি পিএইচডি করার ফাঁকে ফাঁকে ব্লগ পড়ছে বা লিখছে তাকে তার নিজের বিষয়ে বাংলায় একটা বই লিখতে বললে হয়ত লিখবে না, কিন্তু অনায়াসেই কিছু কিছু বিষয় সহজবোধ্য ভাষায় লিখে পোস্ট করবে, সানন্দেই। তাই বাংলা ব্লগে বিজ্ঞান বিষয়ে লেখার পরিমাণ বাড়ানো উচিত এবং পাঠকদের উচিত এরকম লেখাকে আরো উৎসাহিত করা।

আমার মতে, বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান লেখা ও চর্চায় বাংলা পত্রিকাগুলো একটা বড় ভূমিকা রাখতে পারে। খুব বেশি ঝামেলা না নিয়েই এটা তারা করতে পারে। পড়াশোনা নামে পুরো একটা পৃষ্ঠা বরাদ্দ থাকে প্রায় প্রতিটি পত্রিকাতেই। কিন্তু এতে কাজের কাজ কিছুই হয় না, শিক্ষার্থীদের জন্য যেই পৃষ্ঠাটি সেটি তারাই পড়ে কিনা এতে আমার ঘোর সন্দেহ আছে। অথচ এই পৃষ্ঠাকেই কিন্তু আমরা কাজে লাগাতে পারি। নোট বইয়ের মত অংকের সমাধান তুলে না দিয়ে হয়ত কাউকে দিয়ে বিজ্ঞানের মজার কোন বিষয়ের উপর লিখিয়ে নিতে পারি, প্রকাশ করা যেতে পারে বৈজ্ঞানিক অনুবাদ, সাম্প্রতিক আবিস্কারের সংবাদ, বিজ্ঞানীদের সাক্ষাতকারের অনুবাদ, কুইজ, ইত্যাদি।

আফসোস, এত বড় একটা সুযোগ পত্রিকাওয়ালারা নিবে না। এর বদলে তারা ছাপাবে বাঁদরের বাঁশ বেয়ে উঠার সমাধান।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

১। বাংলায় বিজ্ঞানচর্চা বাড়ানো দরকার। ব্লগ সেখানে ভালো ভূমিকা রাখতে পারে।

২। ক্রিয়েটিভ লেখায় হাত দেয়ার আগে অনুবাদে হাত মকশো করা যায়।

৩। বাংলাদেশের পত্রিকাগুলোর লেখাপড়া বিভাগ মনে হয় পপি গাইডের লোকজন চালায়।


-----------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

বর্তমানে যেসব যন্ত্রপাতি আবিষ্কার হচ্ছে, এগুলোর কোনো বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে না। জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে দিনে দিনে অনেক অনেক বিদেশী শব্দ। এতোটাই নিত্য যে এগুলোকে আর বিদেশী শব্দ বলাই যাবে না কদিন পরে। একসময় আমাদের প্রয়োজনীয় সবগুলো বস্তু আর অভ্যাসের নাম হয়ে যাবে বিদেশী শব্দে। মন খারাপ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

আমরা মাঝেসাঝেই নিজেদের মধ্যে একটা খেলা খেলি,কে কতক্ষণ কোন ইংরেজি শব্দ না আউড়ে কথা চালিয়ে যেতে পারে। এই আপাত হাস্যকর খেলার মধ্য দিয়েই কিন্তু বেশ কিছু অভিনব পারিভাষিক শব্দ আমরা আবিষ্কার করেছিলাম।

অদ্রোহ।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

নানা কিম্ভূত পারিভাষিক শব্দের পরিবেশনে অনুবাদের কাজে এই দুরবস্থা।

----------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

জয় বাংলা ...

চিত্তচমৎকারক অথচ ভয়ানক পরিভাষার থিকা মুক্তি চাই।
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

এই রকম একটা লিস্ট করা যায় যেসব শব্দের পারিভাষিক শব্দ শুনতে বলতে পড়তে ফালতু লাগে। এক সাথে অনেকের মতামত পাওয়া গেলে একটা ভালো শব্দ পাওয়া যাবে -তখন সেই ভয়ানক পারিভাষিক শব্দ থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।

--------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

পুতুল এর ছবি

ভাল লাগলো আপনার দেশ চিন্তা।

ইংরেজরা যে শ্রেণীটি তৈরি করে দিয়ে গেছে সেই শ্রেণীটি এখনো এই দেশের প্রাণশক্তিকে বুকে পা দিয়ে দাবিয়ে রেখেছে। এই দাবিয়ে রাখার জন্য তারা সাম্রাজ্যবাদী, সম্প্রসারণকামী যে-কোন দেশের সঙ্গে আঁতাত গড়ে তুলতে পিছপা হবে না। বর্তমানে ইংরেজির ছদ্মবেশে হামেশা যা দেখি তা হল ঔপনিবেশিক মানসিকতা।

এখানেই কিন্তু মুল সমস্যা।

এই দেশে (জার্মান) লেটিন এবং প্রচীন গ্রীস ভাষা এখনো অনেক স্কুলে বাধ্যতামূলক। পদার্থ বিজ্ঞান, জীব বিজ্ঞান, গণিত, রসায়ন এই জাতীয় বিষয় বাদে অন্যকোন কলা ভিত্তিক বিশ্ববাদ্যালয় পর্যায়ে পড়তে হলে লেটিন বাধ্যতামুলক। চিকিৎসা বিজ্ঞানেও লেটিন বাধ্যতামুলক। এর ব্যাতিক্রম অবশ্যই আছে। লেটিন না জানা কোন ছাত্র জার্মান ভাষা বা সাহিত্য পড়তে হলে কমপক্ষে তিনটি বিদেশী ভাষা জানতে হবে।

এখন ভাবি মুসলিম হিসাবে আরবী বাধ্যতামূলক না হয়ে সংস্কৃত নেয়ার চয়েস থাকা উচিৎ। অবশ্য আমাদের দেশে সব হাইস্কুলেই হিন্দু ছাত্র কম বলে সংস্কৃতই নাই।
বাধত্যমূলক প্রথমিক শিক্ষাটাই এখনও উটুপি মনে হয়।

বিজ্ঞান ছেড়ে সাহিত্যের অনুবাদের কথা বলি। বিজ্ঞান অনুবাদ করতে হলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ছাত্র হতে হয়।

কিন্তু অনুবাদ সাহিত্যের জন্য কেবল ইংরেজি জানলেই চলে। সে কারণে ভাল (জার্মান থেকে) অনুবাদ পাওয়া কঠিন। আর আমাদের দেশের পাঠক কবি, সাহিত্যিক, বা নাম আছে এমন লোক না হলে তো পয়সা দিয়ে অনুবাদ পড়ে না। নতুন অনুবাদক সুযোগ পাবে কী করে!

কিন্তু ব্লগে বা এই সচলায়তনেই অন্তত কয়েকজন বাংলায় বিজ্ঞান নিয়ে লিখছেন। আমরা সবাই মিলে উৎসাহ দিলে তাঁরা একটু নিয়মিত হবেন আশা করি।

অবশ্য বাংলায় বিজয় শব্দটা লেখা একটু জটিল হয়ে গেছে। জব্বার সাহেব বিজয় শব্দটা কিনে নিয়েছেন। আচ্ছা, লেটিন হরফেও কি এই ধরণের জটিলতা আছে? মেক বা অন্য প্রগ্রামে লিখা মাইক্রোতে পড়া যায়? নাকী অন্য কোন টুল দিয়ে ইয়ে করে নিতে হয়? একটা ভাষা জনপ্রিয় করতে এই (অভ্র বিজয় কেলংকারি, এখানে বিজয় অভ্রর বিপক্ষে মামলা করে একটা কলংক করেছেন) জটিলতাগুলোও কমানো দরকার।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

ব্লগে বা এই সচলায়তনেই অন্তত কয়েকজন বাংলায় বিজ্ঞান নিয়ে লিখছেন। আমরা সবাই মিলে উৎসাহ দিলে তাঁরা একটু নিয়মিত হবেন আশা করি।

সেটা করতে হবে। আর অনুবাদে আরো বেশি বেশি লোকের এগিয়ে আসতে হবে।

---------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

রাগিব এর ছবি

বাংলা উইকির বিজ্ঞান বিষয়ক নিবন্ধগুলোতে অবদান রাখার জন্য সচলদের কাছে পুনর্বার অনুরোধ জানাই।

ব্লগে যদি আধা ঘণ্টা সময় দেন, ফেইসবুকে দেন ১ ঘণ্টা, তার চেয়ে অনেক কম সময়, দিনে ৫টা মিনিট বাংলা উইকিতে দেন। বিজ্ঞান বিষয়ের নিবন্ধের বিষয়শ্রেণীতে সব নিবন্ধের তালিকা পাবেন। আপনি যে বিষয়ে জানেন, সেই বিষয়ের একটা নিবন্ধে দিনে ৫টা মিনিট সময় দেন। অধিকাংশ নিবন্ধের বামের দিকের কলামে ইংরেজি উইকির সংশ্লিষ্ট নিবন্ধের লিংক দেয়া আছে। সেইটা থেকে ১টা প্যারা হলেও অনুবাদ করে দেন। ১ প্যারার সময় না থাকলে ১টা বাক্য দেন। তাতেও হবে।

অনেক অনেক বার এই অনুরোধ করেছি, কিন্তু আরো অনেকবার করবো। ১০০ জনকে বলে ১জনের সাহায্যও যদি পাই, ইন্টারনেটে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান বিষয়ক তথ্য এগিয়ে যাবে কিছুটা হলেও। এই ব্যাপারে আমরা বাংলা উইকির কর্মীরা নাছোড়বান্দা হাসি

----------------
গণক মিস্তিরি
মায়ানগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | টুইটার

----------------
গণক মিস্তিরি
জাদুনগর, আম্রিকা
ওয়েবসাইট | শিক্ষক.কম | যন্ত্রগণক.কম

পুতুল এর ছবি

রাগিব ভাই,
কি্ছুদিন আগে এই লেখাটা লিখেছিলাম। এর কোন অংশও যদি কোন কাজে আসে, তাহলে আমাকে জানান। আমি সেই অংশ বা পুরো লেখাটাও উইকির উপযোগী করে দিতে পারব। অবশ্য এর মধ্যে নিজেও চেষ্টা করবো উইকিতে নিবন্ধন করতে।
**********************
ছায়া বাজে পুতুল রুপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কি দোষ!
!কাঁশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

পান্থ রহমান রেজা এর ছবি

লেখাটা দাহপত্রেই পড়েছিলাম। আবার পড়লাম। ভালো লাগলো।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

হাসি

-------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

১. কর্মসূত্রে একবার চীনে গেলে সেখানকার এক কারখানাতে উৎপাদন বিষয়ক জোর আলোচনায় বসতে হয়েছিল। আলোচনায় উপস্থিত আমি বাংলা আর অল্প-স্বল্প ইংরেজী বলতে পারি, প্রতিপক্ষের একজন চীনা ভাষা আর আমার চেয়ে কম ইংরেজী বলতে পারেন। বাকিরা কেবল চীনা ভাষা বলতে পারেন। আলোচনার এক পর্যায়ে কারখানার প্রধান প্রকৌশলী (যিনি ইংরেজীতে একটা বাক্য বলতে পারেন না, বা বোঝেন না) কিছু একটা প্রশ্ন করলেন। ইংরেজী জানা জন প্রশ্নটা অনুবাদ করে দিলেন, "তুমি তো এক জন প্রকৌশলী, তুমি ইংরেজী জানলে কীভাবে? তুমি কী বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ার পর ইংরেজী শিখেছ"? আমি জানালাম ইংরেজী আমাকে প্রথম শ্রেণী থেকে পড়তে হয়েছে আর প্রকৌশলবিদ্যা শেখার পুরোটাই ইংরেজীতে পড়তে হয়েছে। সেই ভদ্রলোকের প্রতিক্রিয়া ছিল, "প্রকৌশলবিদ্যা ইংরেজীতে পড়তে হবে কেন, সেটাতো নিজের ভাষাতেই শেখা যায়"। যন্ত্রকৌশলে স্নাতকোত্তর ডিগ্রীধারী ঐ ভদ্রলোকের এই কথা শুনলে আমরা কী উত্তর দেব?

উচ্চতর শিক্ষার ক্ষেত্রে ভাষার বাধা রাখা শিক্ষা সংকোচন নীতির একটি অংশ। এটি চিন্তা-ভাবনা করেই রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে যে বাধাগুলো আসে তাও ঐ নীতিরই অংশ।

২. বাংলা জানেন না কিন্তু ইংরেজী জানেন এমনসব মানুষের সামনে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে আমি এবং আমার সহকর্মীরা পুরো বাংলায় কথা বলার চেষ্টা করি। সে চেষ্টার কালে দেখা যায় অনেক শব্দ বা বাক্‌ধারার বাংলাটা আমাদের জানা নেই অথবা আদতেই বাংলায় অমন শব্দ নেই। তখন আমাদেরকে বানানো শব্দে কথা বলতে হয় যেগুলো প্রায়ই হাস্যকর হয়ে যায়। আমার মনে হয় বিদেশি ভাষা (তা যে ভাষারই হোক, মায় সংস্কৃত পর্যন্ত) থেকে যে শব্দগুলো বাংলায় চলে এসেছে, বহুলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে সেগুলোকে জোর করে অনুবাদ করার দরকার নেই। গৃহিত শব্দের ক্ষেত্রে বানান ও ব্যকরণবিধি বাংলা বানান ও ব্যকরণবিধি অনুসরণ করেই হওয়া উচিত। রেলবাবু বা হেডমাওলানার মত নতুন শব্দও গড়ে ওঠা দরকার।

ভাষা জীবনের শব্দময় প্রকাশ। যেখানে জীবন স্বতঃস্ফূর্ত আর গতিশীল সেখানে ভাষাকে গতিহীন আর কঠিন নিগড়ে বাঁধার দরকারটা কোথায়?



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

১। আমাদের আগের প্রজন্ম সেটা করে নাই। আমরা না হয় শুরু করি। আপনার কাছ থেকে যন্ত্রকৌশলের এক দুইটা বাংলা বই চাই। হাসি

২।

আমার মনে হয় বিদেশি ভাষা (তা যে ভাষারই হোক, মায় সংস্কৃত পর্যন্ত) থেকে যে শব্দগুলো বাংলায় চলে এসেছে, বহুলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে সেগুলোকে জোর করে অনুবাদ করার দরকার নেই।

তবে ভয়ানক কিছু পারিভাষিক শব্দ বাংলায় ঢুকে গেছে- সেগুলোর একটা বিহিত প্রয়োজন।

-----------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

দ্রোহী এর ছবি

আফসোস! বাংলা ভাষাটাও ঠিকঠাক বলতে, লিখতে শিখলাম না। মন খারাপ


কি মাঝি, ডরাইলা?

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

চিন্তিত

-----------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

দ্রোহী এর ছবি

চিন্তিত ক্যান? আমি শুদ্ধ বাংলায় কথা বলতে পারি না। কথাটা বিশ্বাস হয় না?


কি মাঝি, ডরাইলা?

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

সেইটাই কন। শুদ্ধ বাংলা। সেটা আমিও পারি না।

--------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

ফারুক হাসান এর ছবি

কিছুটা অটঃ optimization এর সুন্দর বাংলা প্রতিশব্দ কী হতে পারে? শ্রেষ্ঠকরণ কেমন জানি ইয়ে শোনায় খাইছে

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

উৎকর্ষায়ণ চোখ টিপি
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

উৎকর্ষায়ণ ও লিখতে বা বলতে বা শুনতে কেমুন যেন! মন খারাপ

--------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার

দ্রোহী এর ছবি

কিন্তু উৎকর্ষায়ণই সবচেয়ে লাগসই শব্দ।


কি মাঝি, ডরাইলা?

ফারুক হাসান এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ। উৎকর্ষায়ন মনে হয় চলতে পারে হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।