দস্তয়েভ্‌স্কির লগে

শুভাশীষ দাশ এর ছবি
লিখেছেন শুভাশীষ দাশ (তারিখ: সোম, ১৮/০৪/২০১১ - ৭:৪০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমরা তিন বন্ধু একসাথে হলেই একযোগে দস্তয়েভ্‌স্কিকে দেখি। ব্যাটা গোগলের রঙওঠা একটা ওভারকোট পরে থাকে সবসময়। এটা নিয়ে আমরা প্রায় হাসাহাসি করি। ঢাকায় গরম শীত সবকালেই তার গায়ে এই একই ওভারকোট দেখে আমরা তার নাম দেই শীতল রক্তবিশিষ্ট দস্তয়েভ্‌স্কি। আমাদের মধ্যে আজম দস্তয়েভ্‌স্কির প্রায় সব লেখাই পড়েছে, খালি ব্রাদার্স কারমাজভ ছাড়া। রবি বড় ও জটিল উপন্যাস পড়তে ভালোবাসে। দস্তয়েভ্‌স্কির ছোটোখাট লেখাগুলো না পড়লেও ব্রাদার্স কারমাজভ তার পড়া বলে সে প্রায় দাবি করে। আজম একটু গাঁইগুঁই করলেও আমি নির্বিবাদে মেনে নিই। আমি দস্তয়েভ্‌স্কির লেখালেখির সাথে পরিচিত নই একেবারেই। আজমের বহু জোরাজুরিতে ‘শুভ্র রাত’ নামে তাঁর একটা ছোটোগল্পের অনুবাদ পড়েছি । তাও ‘সাওয়ারিয়া’ দেখার পরে।

দস্তয়েভ্‌স্কি আটাশ বছর বয়সে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি পেয়েছিলেন। ফায়ারিং স্কোয়াডে দাঁড়িয়ে গুলি খাওয়ার আগে আগেই তার মৃত্যুদণ্ড মাফ হয়। এরপরে তিনি আরো একত্রিশ বছর বাঁচেন। আজমের কথাগুলো শেষ হওয়া মাত্র আমরা দস্তয়েভ্‌স্কিকে দেখতে পাই। বিশ্রী রকমের চেহারা আর গায়ে সেই একই ওভারকোট। রবি বলে- চল গিয়ে কথা বলি। আমি একদমই আগ্রহী হই না। আজম আমাকে পাত্তা না দিয়ে বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠে। আমরা তার পিছনে পিছনে চলতে শুরু করলে দস্তয়েভ্‌স্কি তার হাঁটার গতি বাড়িয়ে দেয়। আমরাও বাড়াই। আমি একটু পিছিয়ে থেকে হাঁটার গতি বাড়াই। গলি ও তস্য গলির মধ্যে হঠাৎ করেই আমরা তাকে হারিয়ে ফেলি। রবি চুপ থাকলেও আজম রেগে ওঠে। গালাগালি শুরু করে। আমি আরো কিছুটা হেঁটে ওদের দলে ভিড়ি।

আড্ডায় ফিরে গেলে রবি বলে- সামনের সপ্তাহে আমাদের পাঠচক্রে রেইমন্ড কারভারকে ঢোকাবো ভাবছি।


মন্তব্য

সংসপ্তক এর ছবি

গোগল এবং দস্তয়ভস্কি। আর লাগে কি।

.........
আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

হ। আর কিছু লাগে না।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

সাওয়ারিয়া ওঁয়া ওঁয়া

১৮ শতকের পর unreason হারায়া গেছে। ফুকো প্রভৃতি ইতিহাসবিদ madness নিয়া চিন্তিত। তাদের কৃত অর্থে পাগলেরা সামাজিক প্রাণী। শিল্পীরা অসামাজিক। ফুকোকে ওভারকোট কর্লাম।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

আমার বোঝার ভুল হৈতে পারে। ফ্রয়েডের সাইকো-অ্যানালাইসিসে unreason কিছুটা পাই।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

দস্তয়েভ্‌স্কির গায়ে গোগলের ওভারকোট হয় কীভাবে? একবার তিনি সম্মান করে সে কথা বলেছিলেন তাই? গোগলের একটা ওভারকোট আছে বটে তবে সেটা দস্তয়েভ্‌স্কির গায়ে লাগার কথা না।

অটঃ শিরোনামে "লগে" শব্দটা দেখলে পৌণেপাৎলুন দাদার কথা মনে পড়ে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

পৌনে পাৎলুন আর মোস্তফা ফাচুকির লাইগা কি স্বভাষা পরিত্যাগ কর্তে হৈবো?


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

স্বভাষা পরিত্যাগ করতে বলিনি। পৌণেপাৎলুনের কোবতের বইয়ের শিরোনামে "লগে" ছিল বলে এই শিরোনামটা পড়ার সময় সেকথা মনে হয়েছিল। ক্রিয়াপদ তো বটেই কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশেষ্য বা সর্বনাম লেখার সময় মুখের ভাষাটাকে লাগসই মনে হলে সেটা লেখাকে আমি দুষনীয় মনে করি না। তবে সেখানে জোরাজুরি করলে আপত্তি আছে। মুখের ভাষার বানানের রূপটি প্রমিত নয় বলে ("হের লাইগা" নাকি "হ্যার লেইগা") লেখার ক্ষেত্রে লেখকভেদে তার রূপটা পালটে যেতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে বিভ্রান্তিও আসতে পারে। তবে ভাষা তো বহতা নদীর মতো সেখানে ছড়ার পানি বা ঝর্ণার পানি যোগ হলে ধারা সমৃদ্ধ হবে; আর কচুরীপানা যোগ হলে তা ভেসে চলে যাবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

হ। দস্তয়েভ্‌স্কির ঐ কথা থেকেই।

We all come out from Gogol's "Overcoat"

মনোজ এর ছবি

লেখার আকার ছোট বাট্, আনন্দটা পেলাম বড় চলুক হাসি

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

পড়ার জন্য আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

ফায়ারিং স্কোয়াডে দাঁড়িয়ে গুলি খাওয়ার আগে আগেই তার মৃত্যুদণ্ড মাফ হয়।

রিফ্লেক্ট পাবলিকেশন কর্তক প্রকাশিত 'দস্তয়েভ্‌স্কি রচনাবলী'র কাঞ্চন বসু লিখিত ভূমিকায় বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে এভাবে,

সকাল হতেই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার সব ব্যবস্থা শুরু হয়ে গেল। বন্দীদের স্নান করানো হলো, তাদের প্রার্থনা হলো, তারপর নিয়ে যাওয়া হলো বধ্যভূমিতে। সেখানে দ্রিমি দ্রিমি তালে বেজে চলেছে ড্রাম, ফায়ারিং স্কোয়াডের লোকেরা সব প্রস্তুত, যাজক উচ্চারণ করে চলেছে তাঁর শান্তিবাণী। কয়েদীদের চোখ বেঁধে দেওয়া হলো, তাদের মধ্য থেকে তিনজনকে নিয়ে যাওয়া হলো ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে, হাত পিছমোড়া করে বেঁধে দেওয়া হলো শক্ত খুঁটির সঙ্গে। সৈনিকদের হুকুম দেয়া হলো 'তৈরি হও।'
প্রথম তিনজনের মধ্যে দস্তয়েভ্‌স্কি ছিলেন না, তাঁর পালা এলো দ্বিতীয় দলে। তিনি প্রতিটি মুহূর্ত গুণে চলেছেন, নিজেকে প্রস্তুত করে নিচ্ছেন শান্ত শীতল মৃত্যুর কাছে আত্মসমর্পণ করার জন্য। তখন তাঁর কাছে প্রতিটি সেকেণ্ড মনে হচ্ছে যেন একটা ঘন্টা, প্রতিটি মিনিট মনে হচ্ছে একটা দিন।
এভাবেই কেটে গেল বেশ কিছুক্ষণ। তিনি ও অন্যান্য বন্দীরা অপেক্ষা করছেন, এই বোধহয় ডাক এলো। কিন্তু না, কেউ তাদেরকে ডাকছে না। কেউ বলছে না, এসো, মৃত্যুদূতের মুখোমুখি হও।
আসলে ওদিকে তখন চলছে আর এক ষড়যন্ত্র। জার নিকোলাস মনে মনে ঠিক করে রেখেছেন এই সব অবাধ্য বিপ্লবীদের তিনি এমন শাস্তি দেবেন যে-শাস্তির কথা দুনিয়ার মানুষ এর আগে কখনো চিন্তাও করতে পারেনি। সে শাস্তি হচ্ছে মৃত্যু নয় মৃত্যু জন্য প্রহর গোনানো। তাই, একেবারে চরমতম মুহূর্তে, যখন প্রতিটি বন্দী স্থির নিশ্চিত যে এবার তাদের ডাক পড়বে মৃত্যুর কাছে আত্মসমর্পণের, তখনি ঘোষণা করা হলো জার তাদের মৃত্যুদণ্ড রদ করেছেন, পরিবর্তে তাদেরকে দেয়া হয়েছে চার বছরের কঠোর সশ্রম কারাদণ্ড।
এ আঘাত যে মৃত্যুদণ্ডের জন্য প্রতীক্ষারত বন্দীদের কাছে কী দারুণ আঘাত তা মাত্র একটি ঘটনা থেকেই বোঝা যায়। সেদিন জারের আদেশ ঘোষিত হবার সাথে সাথেই বন্দীদের মধ্যে একজন উন্মাদ হয়ে যায়; সে আর কখনোই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে না।

আমারও একখানা পুরনো মলাটের 'দস্তয়েভ্‌স্কি রচনাবলী' আছে। ওটার দিকে তাকালে সত্যই মনে হয় গোগলের রঙওঠা ওভারকোট গায়ে ট্রেনের তৃতীয় শ্রেণীর কামরায় বসে আছেন মিশকিনরূপী দস্তয়েভ্‌স্কি। এই হয়ত মূর্ছা যাবেন।

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।