ক্রমে আসিতেছে

শুভাশীষ দাশ এর ছবি
লিখেছেন শুভাশীষ দাশ (তারিখ: শনি, ৩০/০৪/২০১১ - ১:২২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বিষ্যুৎবারে সন্ধ্যা ঠিকই নামে। রাত আটটার আগেই বাবা আমার ব্যাগ রেডি করে রাখে। বোবা দরজার কাছে চুপ করে বসে থাকে। অনুপদের বাসায় শান্ত হয়ে থাকার কথা একবার মাত্র বলে বোবার হাতে আমাকে দিয়ে আস্তে করে দরজা বন্ধ করে দেয়। আমার সামনে তখন ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, গাছমণ্ডলী আর পুকুর ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। বোবা হাঁটতে থাকলে আমিও তার সাথে চলতে শুরু করি। কুকুর ভোলা কিছুক্ষণ কুঁইকুঁই করে আমার সাথে এসে পরে আবার বাবার বন্ধ দরজার সামনে গিয়ে বসে পড়ে। হয়তো হাইও তোলে।

পুকুরটার কাছাকাছি আসলে বোবার হাঁটার গতি একটু কমে। এই পুকুরের ঠিক মাঝ বরাবর গত সপ্তাহে ডুবে মারা গেছে পাগলী নেলি। বোবা তখন বাবার জন্য সিগারেট আনতে পুকুরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। এই আসন্ন মৃত্যদৃশ্য সে অখণ্ড মনোযোগে চুপচাপ দেখতে থাকে। খানিক বাদে অন্যরা এসেও তার সাথে যোগ দেয়। বোবা পুকুরের পাশে একদম দাঁড়িয়ে পড়ে। আমরা দুইজনেই মাঝপুকুরে অন্য কোনো গোলযোগ দেখতে পাই না। একটু পরে আবার হাঁটা শুরু করি।

আমাদের গ্রামে আরো তিনটে পুকুর। সেগুলোতে নিয়মিত বিরতিতে মরতে থাকে গ্রামের বেশ কয়েকজন মেয়ে। মাঝে মাঝে দুপুরে, বিকেলে কিংবা সন্ধ্যায় কাজের সময় বোবাকে খুঁজে না পেলে বাবা পুকুরের পাড়গুলোতে একবার চক্কর দিয়ে দেখে আসে। কোনো না কোনো পুকুরপাড়ে মৃত্যুদৃশ্যের আসন্নতায় বুঁদ হয়ে থাকা অবস্থায় বোবাকে পাওয়া যায়। তখন তাকে প্রায় জোর করে ঘরে ফেরাতে হয় কিংবা কাজে পাঠাতে হয়।

বাবাকে আমি মাঝে মাঝে প্রশ্ন করি। আমাদের গ্রামের মেয়েদের পুকুরে ডুবে মারা যাবার কারণ জিজ্ঞেস করলে বাবা কিছুটা সময় নেন। উত্তরটা আমিও কিছুটা জানি। স্কুলে আদিল বলেছে- মৃত মেয়েগুলোর বুক হঠাৎ ফুলে গেছে। গ্রামের ছেলেরা সেটা ধরতে চাইলে মেয়েরা সেটা ধরতে দেয় না। পরে জোর করে ওদের বুকে হাত দেয় বলে মেয়েগুলো লজ্জায় পুকুরে ডুবে মরে। আদিলের সব কথা আমার বিশ্বাস হয় না। আদিলের উত্তরের কথা বাবাকে জানতে দেই না। বাবা কিছুক্ষণ পরে বলে, মেয়েগুলো পিঁপড়ের কামড়ের বিষের জ্বালা সহ্য করতে পারে না বলে পানিতে ডুবে মারা গেছে। বাবার কথাও পুরো বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয় না।

বাবার কথা বিশ্বাস না হলেও আমি পিঁপড়েদের এড়িয়ে চলি। এদিকে বোবা একটানা হেঁটে চলে। পথের পাশে অন্য একটা পুকুর এলে আবার সটান দাঁড়িয়ে যায়। আমিও থামি। এবারো সুনসান, পুকুরের ঠিক মাঝে অর্ধেক চাঁদের চেহারা। আকাশের দিকে তাকিয়ে আমি বাকি অর্ধেক দেখি। বোবা প্রবল মনোযোগে কিছু একটার অপেক্ষা করে। আমার হাত মুঠো করে ধরে রাখা হাতে টান দিই। বোবা মুখে আঙুল দিয়ে আমাকে চুপ করতে বলে। পাশের বাড়িতে কোনো পিচ্চি তিনের নামতা পড়ছে পাড়া কাঁপিয়ে। একটানা একঘেঁয়ে হারিকেনের আলো, বেড়া, তুলসি গাছ, খড়ের চালা, আম গাছ, কাঁঠাল গাছ, মেঠো রাস্তা, আবছা আবছা সব অন্ধকার দেখতে দেখতে আমি প্রবল প্রকাণ্ড গলায় নয়ের নামতা পড়তে শুরু থাকি। তিনের নামতা চুপ করে থেকে আমার নামতা শোনে। বোবা তাও নিঃশব্দে অপেক্ষা করতে থাকে।


মন্তব্য

সাফি এর ছবি

আদিলের অংশ আসার আগে পর্যন্ত ধরে নিয়েছিলাম গল্পবলিয়ে মেয়ে। আসলে কি ছেলে? গল্প ভাল লেগেছে

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

গল্পটা একটু জোর করে শেষ করা হয়েছে বলে মনে হলো। বর্ণনার খুঁটিনাটি চমৎকার। তবে গল্পটা আরেকটু বাড়া দরকার ছিলো।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

হ্যাঁ, আরো বাড়ানো যেত।

আয়নামতি1 এর ছবি

আপনি নয়ের নামতা পারেন খাইছে

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

পারি তো

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

চলুক

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

ফাহিম হাসান এর ছবি

গল্পের শেষটা ধরতে পারলাম কিনা বুঝতে পারছি না। কিন্তু পড়ে শেষ করার পর অন্যরকম একটা অনুভূতি হল। আমার মনে থাকুক একটু ধোঁয়াশা।

আর গল্পের প্রথম লাইনটা পড়ে স্তব্ধ হয়ে গেলাম। আপনি প্রথম লাইনে যে ধাক্কা দেন সেইটা অন্যরকম। এর আগেও গুড, বেটার, বেস্ট নিয়ে তিন প্যারাগ্রাফের প্রথম লাইন লিখছিলেন। কানে এখনো বাজে।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

পাঠক নিজের মতো একটা কিছু বুঝে নিলেই ভালো।

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

রানা মেহের এর ছবি

তাড়াহুড়ো করে লেখা?

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

হ্যাঁ।

নীলকান্ত এর ছবি

শুভাশীষ'দার গল্পগুলো কেমন জানি অন্যরকম।
৫ তারা।
হাসি


অলস সময়

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।