আমাদের একটা ঋত্বিক ছিল !

সুজন চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন সুজন চৌধুরী (তারিখ: শনি, ০৪/১১/২০১৭ - ১১:৫৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ছবিটা লিখতে গিয়ে মনের কথাগুলো রেখার সাথে মিশে গেল। এভাবেই রইলো কথাগুলো,এভাবেই থাক।
আজকে ঋত্বিক ঘটকের ৯২তম জন্মদিন,জন্মদিন প্রতীতি কাকিমারও (প্রতীতি দত্ত,ঋত্বিক ঘটকের জমজ বোন)।কাকিমা একবার আমাকে ঋত্বিকের কিছু পুরনো ফটো দেখিয়েছিলেন বেশিক্ষণ দেখতে পারিনি, ঋত্বিকের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায় না, ভীষণ অপরাধবোধ হয়, প্রচণ্ড একটা আক্রোস তৈরী হয় পোষাকী মানুষগুলোর উপর। আক্রোসটা প্রকাশ করতে পারি না, ভাষাটা জানি না আমি। ঋত্বিক জানত, প্রকাশ করেও গেছে। আজকে জোর করে তাকিয়ে ছিলাম অনেকক্ষণ ওর দিকে। অসহ‌্য যন্ত্রণা হলো।মনে পড়লো প্রতীতি কাকিমার শাড়ীতে লেখা ঋত্বিকের উপন্যাসটার কথা ....
শুভ জন্মদিন প্রতীতি কাকিমা,ঋত্বিক-কেও তথৈবচ।


মন্তব্য

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

"কোথাও একটা ভালো দেশ আছে, সেখানে মানুষ মানুষকে ভালোবাসে। সে দেশ কোথায় জানি না, কিন্তু তার কথা আগে মনে আসে।"
শুভ জন্মদিন ঋত্বিক ঘটক...
আর সুজনদা, আপনার আঁকা নিয়ে নতুন করে আর কী বলার আছে?

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সুজন চৌধুরী এর ছবি

এই লোটা ৭১ সালে কোলকাতার পার্ক স্ট্রীটে রাস্তার উপর গামছা বিছায়া আমাদের জন‌্য টাকা তুলতো।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

১৯৭১ সালে কলকাতার কোন কোন মহাজনকে হাজার সাধ্যসাধনা করেও বাংলাদেশের জন্য করা কোন অনুষ্ঠানে আনানো যায়নি, কোন বিবৃতি দেননি, তাদের করা সৃষ্টিকর্মেও বাংলাদেশ নামক দেশটা বা তাদের মুক্তিসংগ্রাম কখনো আসেনি। বাংলাদেশের ভেতরে চলা গণহত্যা, ভারতে দেড়-দুই কোটি শরণার্থীর মানবেতর জীবনযাপন, তাদের চাপে নাভিশ্বাস ওঠা পশ্চিমবঙ্গ-ত্রিপুরা-মেঘালয়-আসামের মানুষের জীবনযাত্রা ঐসব গজদন্তের মিনারে বাস করা মহান সৃজনশীল মানুষকে একটুও স্পর্শ করেনি। অন্তত তাদের উদ্যোগে অথবা সৃষ্টিকর্মে তার প্রতিফলন পাওয়া যায়নি। তবু তাদের নামে আমরা গদগদ হয়ে যাই। আর যারা আমাদের জন্য সাধ্যাতীত করে গেছেন তাদের বেশির ভাগ জনের নামই আমরা মনে রাখিনি।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

ঋত্বিক ঘটকরে আমরা আজীবন মাতাল আর পাগলা হিসেবেই চিনে গেলাম। এই অহোরাত্র মাতাল মানুষটা কিভাবে এতোগুলো অসাধারণ চলচ্চিত্র নির্মাণ করলেন, কিভাবে পুনে ফিল্ম ইন্সটিটিউটের ভাইস প্রিন্সিপাল পর্যন্ত হলেন, পদ্মশ্রী হলেন ভারতের, এতো লিখলেন অনুবাদ করলেন পরিচালনা করলেন নাটক? তাঁর বিপুল কর্মময় এবং কীর্তিময় জীবনটার কথা আমরা ভুলে যাই

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

গত মাসে পুরনো পড়া রিভিশন দেবার মতো করে নাগরিক, অযান্ত্রিক, মেঘে ঢাকা তারা, কোমল গান্ধার, সুবর্ণরেখা আবার দেখলাম। ঋত্বিকের মুভি দেখায় আমার একটা উপলদ্ধি হচ্ছে 'আগের বার অনেক কিছু বুঝিনি, অনেক কিছু মিস করে গেছি'। যেমন এই দফা মনে হলো কাহিনী, সিনেমাটোগ্রাফি, আবহ সঙ্গীত, চিত্রায়ণ, অভিনয় - সব মিলিয়ে 'অযান্ত্রিক' সারা দুনিয়ায় যে কোন কালে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানোর মতো একটা মুভি। এই রকম নতুন নতুন উপলদ্ধি মনে হয় কখনো শেষ হবার নয়।

আজকের এই শুভ দিনে 'যুক্তি, তক্কো আর গপ্পো' দেখতে হবে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সুজন চৌধুরী এর ছবি

আসলেই কয়েকবার দেখা লাগে। 'অযান্ত্রিক'টা আমার ভীষণ প্রিয় বেশ কয়েকবার দেখেছি, প্রতিবারই মনে হয় এটাতো আগে খেয়াল করা হয়নি।'অযান্ত্রিক' নিয়ে সত‌্যজিৎ রায়ের অসাধারণ একটা রিভিউ পড়েছিলাম কোথাও। ছবিটা যেদিন মুক্তি পায়,সেদিন ঋত্বিক নিজে গিয়ে সত‌্যজিৎ রায় কে নিয়ে এসেছিলেন সিনেমাটা দেখানোর জন্য, সেই গল্প প্রতীতি কাকিমার কাছে শুনেছিলাম। ঐ গাড়ীটাকে রাখা হয়েছিল হলের দরজার উপর ব্যানার খাটানোর বদলে।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এই মন্তব্যটা পড়ে মনে হলো এই কথাগুলোই আমি আসলে বলতে চাই!

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

তাপস শর্মা এর ছবি

আপনি ছিলেন, আপনি আছেন, আপনি থাকবেন। আপনি ছিলেন মেঘের নেপথ্যে, আপনি আছেন কোন এক অধিকতর বাস্তবতায়, আপনি থাকবেন ব্রাত্যজনের মিছিলে। আপনার মতো ঐ অসংখ্য 'বেমালুম রিফিউজি' বনে যাওয়া মানুষদের হাহাকার যতদিন থাকবে ততদিন আপনি থাকবেন। আপনি আছেন নিয়ম ভাঙার আঁতুড়ঘরে। আপনি থাকবেন চির-ক্ষুধার এক চিমটি খাদ্যে। আমি দেখি আজন্ম বুকের পাঁজরে বয়ে চলা বঙ্গদেশে পাবনার কোন এক অখ্যাত ভিটেমাটিতে আজও গুটি গুটি পায়ে হেঁটে যাচ্ছে ভবা পাগলা... ভবার অন্তরের প্রতিটি পোড়া স্থান তখনো জ্বলে উঠে যখন কেউ বলে - 'ঐসব পার্টিশান ফার্টিশান আজকাল আর চলেনা'। আগুনঝড়া চোখের বিস্ফোরণে উত্তর আসে - 'ফার্টিশান? ফার্টিশান'রে বাঞ্চোৎ?'...কিংবা চিৎকার করে প্রকাশ করেন ক্ষয়ে ক্ষয়ে ধ্বংস হয়ে যাওয়া প্রাণের জ্বালা - ''বাঙলারে কাটিবারে পারিছ কিন্তু দিলটারে কাটিবারে পার নাই'' ... পুরাণে বলে নীলকণ্ঠ নামের মানুষটি ছিল আধা উন্মাদ। যদি সে আধা উন্মাদ হয়ে থাকে আপনি তাহলে পূর্ণ উন্মাদ হে আমার সময়ের নীলকণ্ঠ। এই উদ্ভট সমাজ আপনাকে কোনদিনও মেনে নেয়নি, দেয় নি যথার্থ মর্যাদা, কিন্তু তাতে আপনার কিচ্ছুটি ছেঁড়া যায়না আমি জানি; কারণ আপনিই বলে গেছেন “দর্শক ফ্লপ করেছে, আমার চলচ্চিত্র নয়”... এই কথাটার সামান্য এক্সটেনশন করে বলতে চাই; শুধু দর্শক নয় সমগ্র জগত ফ্লপ করেছে আপনাকে জানতে, বাঙালি জাতি ফ্লপ করেছে, ফ্লপ করেছে আপনাকে অসুস্থ বলে নিজেকে সুস্থ দাবী করা প্রতিটি হিপোক্রেট...

আমার প্রতিটি সত্তাজুড়ে ছায়া হয়ে মিশে থাকে এই মানুষটা। মনে হয় তাঁকে ধারণ করি নিজের অনির্মিত প্রতিটি হাহাকারে...

জন্মদিন শুভ হোক ঋত্বিক ঘটক। মনের শূন্যতায় আজও মলিন ছাই হয়ে উড়ে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের দুটো কথা –

"এখন নিশ্চিন্ত, মৃত আর ভয় দেখাতে আসবে না
সুদুরের পথে ফেলে দীর্ঘ ছায়া দাঁড়াবে না দ্বারে
ভিতরে ভাঙবে না অস্থি, ঘরবাড়ি – সন্ন্যাসী-সংসার
কিছুই করবে না যাতে মানুষের পাপস্পর্শ আছে।
আছে আছে বলে তুমি, যেখানে যা নেই দিতে গেছো।
পূর্ণতা পাঁঠার আর শূন্য খাঁ-খাঁ তোমারই সন্ন্যাসী
যা ছিলো, যখন ছিলো তীব্র হয়ে ছিলো তা পাথরে
রূপ ও হৃদয় রক্ত স্বেচ্ছাচার উন্মাদ প্রাণের
ভরশা ও ভয় ছিল পাশাপাশি – নিশ্চিন্ত এখন
উপদ্রুত বাংলাদেশ, আর কেউ নেই যে কড়কাবে
বিদ্যুচ্চাবুকে এই মধ্যবিত্তি, সম্পদ, সন্তোষ মানুষের।
তুমি গেছো, স্পর্ধা গেছে, বিনয় এসেছে
পোড়া পাথরের মতো পড়ে আছো বাংলাদেশে,
পাশে ঋত্বিক, তোমার জন্যে তুচ্ছ কবি আর্তনাদ করে।"

সুজন চৌধুরী এর ছবি

হুম, কবিতার নাম 'ঋত্বিক , তোমার জন্য'।
শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ঋত্বিক বিষয়ে একটা দারুণ লেখা পড়েছিলাম কোথাও। এখন আর খুঁজে পাইনা।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

বাংলা ভাগের মর্মযাতনা ঋত্বিকের চেয়ে বেশী কেউ ভোগ করেছেন কিনা জানা নেই, করলেও প্রকাশে ঋত্বিকের চেয়ে কেউ এগিয়ে নেই এটা বলতে পারি। আমৃত্যু মেনে নিতে পারেননি দেশভাগের বাস্তবতা। ঋত্বিকই একমাত্র পরিচালক যাঁর সবগুলো চলচ্চিত্র বারবার দেখার সুযোগ হয়েছে আমার। দেখে বরাবর একটা কথাই মনে পড়ে এই মানুষটা বড় বেশী অবিচারের শিকার। পশ্চিমবঙ্গ তাঁর প্রতি আরেকটু সহনশীল হতে পারতো।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

সোহেল ইমাম এর ছবি

সুন্দর ছবি।

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

মাহবুব লীলেন এর ছবি

সুজন্দা মনে হয় দাড়ি ছাড়া কারো ছবি এই পয়লা আকলেন

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।