টুকরো টুকরো লেখা ৬

সুমন চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন সুমন চৌধুরী (তারিখ: বিষ্যুদ, ৩০/১০/২০০৮ - ১১:১২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

anonymaanonyma

অনেক দিন হলো লিখতে পারছি না। মাঝে কয়েকবার কি সব শুরু করে আবার লগআউট করেছি। সচলের বাইরেও যে খুব সচল আছি তাও না। সবদিকেই একধরণের স্থবিরতা, অনেকটা আজকের আবহাওয়ার মতো। সকাল থেকে টিপ টিপ বৃষ্টি। সেই সাথে ভোঁতা ধরণের ঠান্ডা। বৃষ্টি কমে এলে বের হবার উদ্যোগ নিলেই তেজ বাড়ে। তিন ঘন্টার ব্যবধানে তিনবার এই ঘটনার পরে বাইরে যাবার প্ল্যান বাদ দিয়েছি। সচল-ফেইসবুক-ব্লগস্পট আর চেনা পরিচিত কিছু কমিউনিটি ব্লগ প্ল্যাটফর্মে এলোমেলো ঘোরাফেরা করে আবার জমে থাকা কাজের গাট্টি খুব যত্ন করে খুলে ততোধিক যত্নে পুনরায় গিট্টু মেরে রেখে দিলাম। এরকমই নিস্পৃহ দিনকাল। তীব্র অভিমানে বনে ফিরে যায় হাতি। সময়ের মতো বালছাল সে আর টানতে রাজি না। এর থেকে জলহস্তিবাহী ভেলাও আরামপ্রদ ওর কাছে।

১.

সপ্তাহ দুই থেকে মেজাজ খানিক বেশী খারাপ হয়ে আছে কতিপয় মোল্লার দাবীর মুখে বিমানবন্দর থেকে লালন শাহ্ র ভাস্কর্য সরিয়ে নেওয়ার ঘটনায়। সব মিলিয়ে ঐ দাবীর সমর্থকরা অন্তত সংখ্যার জোরেও নিজেদেরকে ভ্রুক্ষেপিত হবার মতো যোগ্যতায় না থাকলেও সরকার একরকম যেন আহ্লাদ করে ভাস্কর্য সরিয়ে নিলো। এরপর শুরু হলো এর প্রতিবাদে এবং সমর্থনে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে বিশ্লেষন আর অবধারিতভাবে ত্যানাপ্যাচানি আর কাঠিবাজী। বেশ কিছু বিজ্ঞবৎ কমেন্ট পড়ে মনে হচ্ছিল জোট সরকারের আমলে ছাগলের প্রোজেক্টে কি কৃষ্ণবঙ্গের বদলে রামছাগলের জ্যামিতিক চাষ হয়েছে? আমি কিন্তু দেশে থাকতে পথেঘাটে রামছাগল কদাচিৎ দেখতাম। এখন নেটজগতে হাঁটতে বেরোলে রীতিমতো মাস্ক লাগে।

টেবিলের উপর হাতের সামনেই সংবিধান। ১৯৭৫ পরবর্তী জলপাই শাসকরা সংবিধানের প্রথম পাতায় একটা আর ১৯৮৮ সালে ভিতরের পাতায় দুইটা লাইন পাঞ্চ করেছে ঠিকই। কিন্তু সংবিধানের মূল শরিরটা এখনো সেকুলার। এখনো যে কোন ধর্মপরিচয়ের ব্যক্তি যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রধাণ বিচারপতি, প্রধাণমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি যে কোন কিছু হতে পারেন। এখনো আমাদের সবুজ পাসপোর্টে ধর্মপরিচয়ের উল্লেখ থাকে না। দেশের প্রাতিষ্ঠানিক নাম এখনো পিপলস্ রিপাবলিক অফ বাংলাদেশ। এই ব্যাপার গুলি আর কতদিন থাকবে বা রাখা যাবে সেটা আলাদা প্রসঙ্গ। এগুলি হচ্ছে অসমাপ্ত মুক্তিযুদ্ধের লুঠ হওয়া অর্জন গুলি থেকে কোনমতে টিকে থাকা কিছু ছিটেফোঁটা। যতদিন এগুলির অস্তিত্ব আছে অন্তত ততদিন আইনের দৃষ্টিতে শরিয়ত কোন বিবেচ্য হবার কথা নয়। কিন্তু তারপরেও হচ্ছে। হয়ে চলেছে। যিনি হওয়াচ্ছেন তাঁর পাছা ভর্তি টাকা, হাতে হালফ্যাশানের মানুষমারা কাঠি। যাদের দিয়ে ঘটাচ্ছেন তাঁরা প্রতাড়িত দুর্ভাগা মানুষ। তাঁদেরকে পথে নামাতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন মাদ্রাসা লাইনের নেতৃস্থানীয় কিছু জানোয়ার। না জানোয়ার না। জানোয়াররা প্রতারনা করে না। প্রতারনা শুধুমাত্র সভ্য মানুষ, আশরাফুল মখলকাতের সাধ্য। মাদ্রাসার যে এক দঙ্গল ছাত্র সেদিন দড়ি ধরে টানাটানি করেছে, ভাস্কর্য সম্পর্কে তাঁদের কোন বক্তব্য নেই। তারা শুধুমাত্র মাদ্রাসার ছাত্র হিসেবে মাও.নূর হোসেন জাতীয় ঠগজোচ্চরের নির্দেশ পালন করেছে। এই ছাগুপালকে উস্কে দেবার পেছনে জলপাই ক্ষেতের চিপায় কোন মতলববাজী চলছে সেটা আরো দিন কতক গেলেই পরিস্কার হবে। কাঠিবাজীর উপকথাগুলি পড়তে পড়তে বুঝলাম ছাগলের খোঁয়াড়ের কেয়ারটেকার খুব দু:শ্চিন্তায় আছেন। রীতিমতো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। আপাতত দু্ইটা পয়েন্ট তারা বের করতে পেরেছেন :

ক) দড়ি ধরে ভাস্কর্য টানাটানি করার ঘটনা আসলে সাবোলতের্নো'র প্রতিবাদ!!!!!!!!!!??????????
খ) ঐ ভাস্কর্যটা ভালো না ঐটা ভাইঙ্গা ফালানো উচিত

তাঁদের এই অভিসন্দর্ভ থেকে আমিও বুঝলাম, মানুষ তিনপ্রকার :

ক) আদিম মানুষ (যারা বাল রাখে)
খ) আধুনিক মানুষ (যারা বাল ফালায়)
গ) উত্তরাধুনিক মানুষ (যারা ঐ ফালানো বাল টোকাইয়া আঁটি বান্ধে)

২.

কিছুদিন ধরে সচলে পাকিস্থান নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। একাত্তরের অবস্থান থেকে আমরা সকল পাকিস্থানীকে ঘৃণা করবো কি করবো না ইত্যাদি। বাস্তবে কিন্তু সেভাবে ঘৃণা করা হয়েও ওঠে না। যেটা থাকে সেটা ঘৃণার কাছাকাছি একটা অনুভুতি। সেটার ঐতিহাসিক ভিত্তি এতই শক্তিশালী যে চাইলেই তাকে নীতিকথায় উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। দুটো বিষয় এখানে খুব জরুরি, প্রথমত: পাকিস্থানের প্রতি ঘৃণা উদ্রেককারী ঘটনা অতিশয় নিকট অতীতের; দ্বিতীয়ত: পাকিস্থানী সেনাবাহিনি আর তার সহযোগীদের কৃতকর্মের প্রতিশোধ আমরা নিতে পারিনি, যা বহুলাংশে নিতে পেরেছিল বার্লিন দখলকারী রেড আর্মী। আমরা প্রতিশোধ নিতে পারা দুরের কথা প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতি বিজয়ের মুহুর্তেই জনগণের বিজয়কে ছিনতাই করেছে। প্রতিশোধ দূরে থাক ৩০ লক্ষ মানুষ হত্যাকারী আর ২ লক্ষ নারীধর্ষণকারী পাকিস্থানী সেনা সদস্যদের রীতিমতো জামাই আদর করে বাড়ি পৌছে দেবার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। দেশের খুনিরা দেশেই নিরাপদে থাকে। তার পরিণতি আজ আমাদের কোথায় পৌছে দিয়েছে দিচ্ছে এই ক্ষোভ, আমাদের মধ্যে পাকিস্থানীদের প্রতি ঘৃণার জায়গা তৈরী করে রেখেছে। এটা সুখকর না দু:খজনক, উচিত না অনুচিত এইসব বালছাল ৩০০৩ রাত ধরে জাবর কাটা যেতে পারে। তাতে ঘৃণায় কোন কার্যকর আঁচড় পড়ার সম্ভাবনা অল্প।

৩.

গত সপ্তাহে আবার একটা জার্মান ছবি দেখলাম "আনোনুইমা" নামে। বার্লিন পতনের পথে পোস্টডাম দখলকারী রেড আর্মির হাতে শহরে অবশিষ্ট কিছু নারীদের নির্যাতিত হবার কাহিনি। একজন জার্মানের তৈরী বলে সেখানে পক্ষপাত তো ছিলোই। তবুও একটি মাত্র সংলাপের জন্য তাঁকে ক্ষমা করতে পারি। রেড আর্মীর এক মেজর আনোনুইমাকে বার্লিন দখলের আনন্দে রাস্তায় উৎসবরত সৈন্যদের দেখিয়ে বলে,

.....ঐ যে ওদের দিকে তাকিয়ে দেখো, কত দুরদুরান্ত থেকে এসেছে। সেই ভ্লাডিভস্টক থেকে বাল্টিক সাগর, আজারবাইজান, তুর্কমেনিস্থান, কাজাখস্থান, তাজিকিস্থানের কত নাম না জানা প্রত্যন্ত এলাকা থেকে এসেছে। এদের কারো বউকে মেয়েকে তাদের চোখের সামনে ধর্ষণ করা হয়েছে, কারো পুরো পরিবারকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে, কারো পুরো গ্রাম ধরে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ার করা হয়েছে। ওরা কোনদিন জানতোও না জার্মানী কোথায় বা এই নামে আদৌ কোন দেশ আছে, জার্মান বলে আদৌ কোন জাতি আছে। কিন্তু তাঁদের কথা তোমরা জানতে। তোমরা সচেতনভাবে আমাদের উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছ....


মন্তব্য

হিমু এর ছবি

আপনারে ফোন্দিয়া পাইতেসিনা। মেসেজ পাঠ করেন আপনার প্রভুর নামে, যিনি আপনাকে সৃষ্টি করেছেন।


হাঁটুপানির জলদস্যু

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

হাজারটা কথা অল্প কিছু শব্দে বলে দিলেন, বদ্দা।

তুলিরেখা [অতিথি] এর ছবি

রোজই শুনি বদ্দা (বড়দা?)। ভেবে পাই না কে হতে পারেন! আজ জানা হয়ে গেলো। হাসি

মুজিব মেহদী [অতিথি] এর ছবি

ক) আদিম মানুষ (যারা বাল রাখে)
খ) আধুনিক মানুষ (যারা বাল ফালায়)
গ) উত্তরাধুনিক মানুষ (যারা ঐ ফালানো বাল টোকাইয়া আঁটি বান্ধে)

অতুলনীয় এই বর্গীকরণ।

তবে আমার মন হয় আরেক জাতের মানুষ আছে, যারা বালের গোড়ায় সার ও জল ছিটিয়ে বালের উৎপাদন বাড়ায়। এদের কী নাম দেয়া যায়?

সুমন চৌধুরী এর ছবি

প্রত্যুত্তোরাধুনিক



অজ্ঞাতবাস

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

... এই ক্ষোভ, আমাদের মধ্যে পাকিস্থানীদের প্রতি ঘৃণার জায়গা তৈরী করে রেখেছে। এটা সুখকর না দু:খজনক, উচিত না অনুচিত এইসব বালছাল ৩০০৩ রাত ধরে জাবর কাটা যেতে পারে। তাতে ঘৃণায় কোন কার্যকর আঁচড় পড়ার সম্ভাবনা অল্প।

আমারও আর কুনো কথা নাই এই বিষয়ে।

"আনোনুইমা" ছবিটা নিয়ে রুশ মিডিয়া বেশ উত্তপ্ত দেখলাম ক'দিন। দেখার ইচ্ছে আছে।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
একলা পথে চলা আমার করবো রমণীয়...

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

সুমন চৌধুরী লিখেছেন:
এটা সুখকর না দু:খজনক, উচিত না অনুচিত এইসব বালছাল ৩০০৩ রাত ধরে জাবর কাটা যেতে পারে। তাতে ঘৃণায় কোন কার্যকর আঁচড় পড়ার সম্ভাবনা অল্প।

একমত।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

রানা মেহের এর ছবি

"এটা সুখকর না দু:খজনক, উচিত না অনুচিত এইসব বালছাল ৩০০৩ রাত ধরে জাবর কাটা যেতে পারে। তাতে ঘৃণায় কোন কার্যকর আঁচড় পড়ার সম্ভাবনা অল্প।"

ঠিক এভাবে ঠিক এই কথাগুলো বোধহয় শুধু আপনিই বলতে পারেন
ধন্যবাদ
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

এটা সুখকর না দু:খজনক, উচিত না অনুচিত এইসব বালছাল ৩০০৩ রাত ধরে জাবর কাটা যেতে পারে। তাতে ঘৃণায় কোন কার্যকর আঁচড় পড়ার সম্ভাবনা অল্প।

চলুক
আনোনুইমা দেখার ইচ্ছা হচ্ছে... তবে আগে দেখে নিতে হবে ইংরেজি সাবটাইটেল পাওয়া যায় কী না... আমার জার্মান আবার অতোটা ভালো না তো... চোখ টিপি

সবজান্তা এর ছবি

বদ্দা আজকাল টোকা-টুকিতে বেশ ব্যস্ত আছেন মনে হয়। ওইদিন দিলেন আইসক্রীমের কাঠি টোকানির হিসাব, আর আজকে বাল টোকায়া আঁটি বান্ধার হিসাব।

পাকিস্তান বিষয়ে আপাতত ক্লান্ত হয়ে নীরবতা অবলম্বন করতেছি।


অলমিতি বিস্তারেণ

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

সিম্পলি সুপার্ব!! বক্তব্য এবং প্রকাশ!

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

সিম্পলি সুপার্ব!! বক্তব্য এবং প্রকাশ!

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

পুরো পোস্টে সহমত।
এই কথাগুলা আসলে এইভাবেই বলা উচিত।

শুধু সিনেমা বিষয়টা বাদে। এইটা দেখি নাই। ব্যস্ততায় সিনেমা দেখার কোনো সুযোগো নাই।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।