আম কোয়নিগস্ প্লাৎস্ :::: ১০

সুমন চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন সুমন চৌধুরী (তারিখ: শনি, ০৩/০৪/২০১০ - ১১:৪৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

পর্ব ৯

বোলিঙ ক্লাবের ঘুঁটির মতো বারান্দার রেলিং ঘেঁষে বীয়ারের সারি। শেষ দুটো বীয়ার নামিয়ে রেখে খালি বোতলগুলি তুলতে গেলে সোহাগ বলে,
- থাক ওগুলি সকাল পর্যন্ত। ভালো একটা ডেকোরেশান লাগতাছে।
- হ...এই দুইটা খালি হইলে ছবি তুইলা রাখতে হইবো।

কেইসের শেষ দুই বোতলের ঢাকনা খুলে সোজা চোখের দিকে তাকিয়ে "প্রৌস্ট" (চিয়ার্স!) করলো দুই বন্ধু।

দশটা বাজতে তিন মিনিট বাকি। এতক্ষণে আকাশে একরকম প্রাক-গোধুলীর আভাস। লোয়ভেনবেয়ার্গ পাহাড়ের কোল ঘেঁষে বাড-ভিলহেল্মসহোয়ের উপর হনুমানের সমুদ্রমন্থনের মতো একফালি রোদ। সূর্যের আলোর আয়ূ আজকের মতো আর মিনিট চল্লিশ।

- পর্বগুলি কেমন জানি ডেইলী নোটবুক হইয়া যাইতাছে না? ড্রামা কৈ?
- কোয়ালিটি জাজমেন্ট কৈরা তো আর ডেইলী সোপ হয় না।
- আরে কোয়ালিটির কথা কই না। ড্রামার কথা কই। দিনে তো অনেক ঘটনাই ঘটে। সব কিছু যেমন মনে কর বাথরূমে বা টয়লেটে যা ঘটে তাতো আর সবসময় নাটকীয় না। যদিও খাবারে ঝামেলা থাকলে টয়লেটে ক্রিটিক্যাল ফেনোমেনা জাগ্রত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল, এবং নাটক হিসাবে সেইটা কোনমতেই নিয়মিত প্যাকেটধারাবাহিকের চাইতে কম রোমাঞ্চকর না, তবুও এখনো পর্যন্ত এই নাটকীয়তাগুলি কেউ ধারণ করে নাই। বাথরূম দেখানো হয় শুধুমাত্র খুনখারাবী দেখাইতে গেলে।
- পয়েন্ট ছিল ড্রামা। তুই আবার টয়লেট টান দিলি ক্যান?
- খালি হৈয়া আইতাছি। কিছু বীয়ার রাইখা আসি।
- আইচ্ছা আয়। একটু ভাবি। নাটকের খোঁজ করি। তুই আইলে আমারো যাওয়া লাগবো।

সোয়া পাঁচ মিনিট পরে দুই বন্ধু আবারো বসে। রেলিঙে হেলান দিয়ে ম্যাট্রেসে পা ছড়িয়ে সোহাগ শুরু করে.....

(চতুর্থ পর্ব)

প্রথম দৃশ্য

জসীমের বাসা ক্যাম্পাসের একেবারে মাঝখানে। নোরা-প্লাটিয়েল স্ট্রাসে ৭। একটানা অনেকগুলি সিঙ্গেল রুম পার হয়ে তিনতলার কোনায় একটা পাঁচ জনের অ্যাপার্টমেন্ট। জসীমের প্রতিবশীরা আজকে নেই। সব কয়টা জার্মান। বেশীর ভাগ উইকেন্ডেই বাড়ি যায়। রান্নাঘরটা বেশ বড়। বাসা খালি থাকলে পার্টি করার জন্য চোস্ত জায়গা।

- এইটা বাসা? একতলার সদর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কুতুব জিজ্ঞাসা করে।
- তো কী মনে হয় তোমার?
- না মানে দেইখা মনে হয় কোন ডিপার্টমেন্ট।
- এই ক্যাম্পাসে লাল রঙের দালানগুলি বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট আর সবুজগুলি ডর্ম।
-ও।
কুতুবের বেঢপ সুটকেস তিনতলায় তুলতে বেশ কসরৎ করতে হলো।

- কী আছে এর মধ্যে? এতো ভারী ক্যান?
- এই অল্প কিছু বই.....
- কী এতো বই আনছো? ঢাকায় কি আইজকাইল জার্মান সাহিত্যের বইও পাওয়া যায় নাকি?
- আরে না। গোটা সাতেক ডিকশনারি।
- সাআআত টা?
- হ্যা...সলজ্জ্ব হাসি দেয় কুতুব।

জসীমের রূম নাম্বার ১১৫। লম্বা প্যাসেজের একেবারে শেষে বাম কোনায়। স্যুটকেস কোনমতে ঘরের এককোনায় ঠেসে দিয়ে সবাই এসে বসে রান্নাঘরে। একটা মাঝারি ডেগচি বের করে জসীম জিজ্ঞাসা করে,

- আমরা কয়জন টোটাল?
- গাবি আর শারমিনরে ধইরা বারোজন...
- হুম... তাইলে দেড় কেজি...না আরেক্টু বেশীই নেই...
মকবুল আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে বলে,

- এই চাইলের হিসাবে আমার বরাবর ঝামেলা বাজে, প্রায় প্রতিটা পার্টির পরে দেখা যায় এ্যাত্তোগুলি কইরা ভাত বাঁইচা যায়..কম পড়লে আবার বেইজ্জতি..
এইবার কুতুব মৃদুস্বরে জিজ্ঞাসা করে,
- পার হেড কত গ্রাম কইরা ধরেন?
- হুঁ...এই একশ পঁচিশের মতো...ক্যান?
- না ভাত বাঁচে কইলেন যে ঐটা ভাবতেছিলাম...
- তুমি যদি বেশী খাও অসুবিধা নাই...চাইল বেশী কইরাই নিছি..
- আমি কি আপনার ডুশে(বাথরূম) ব্যবহার করতে পারি?
- বুঝলাম না !
- গোসল করা যাবে এই বাসায়?
- তুমি মিয়া আইতে না আইতে জার্মান ছাড়া শুরু করছো

লাজুক হাসি দিয়ে কুতব বাথরূমে ঢোকে।

ক্যামেরা কুতুবের গায়ে শোয়ানটেক্সের স্যান্ডো গেঞ্জি থেকে বাথরুমের দেওয়াল বেয়ে চলমান শাওয়ারে পৌঁছায়।

দ্বিতীয় দৃশ্য

আমালিয়েন স্ট্রাসে ৪।

তিনতলায় বামদিকে তিনজনের অ্যাপার্টমেন্টে শারমিনের ঘর। শারমিন ছাড়া ঐ বাসায় আরো থাকে আনা স্মীডট্ আর সিলভিয়া ক্লুগ নামে দুই জার্মান ছাত্রী। আপাতত শারমিন একাই আছে। সব অর্থেই একা। আনা আর সিলভি গ্রীষ্মের ছুটিতে বাড়ি গেছে। মামা অবশ্য একবার বলেছিল ছুটির সময়টা ফ্রাঙ্কফুর্টে গিয়ে থাকতে। হাফহার্টেড প্রস্তাব। আর ব্যাপারটার মধ্যে কিছুটা বেবি সিটিঙের ব্যাপারও ছিল। মামাতো ভাই টুঙ্কু স্কুল থেকে ফিরে বাড়িতে একা। ছেলেকে জার্মানদের সাথে মিশতে দিতে মামামামী ভয় পায়। কিন্তু এর কোন বিকল্পও তারা তৈরী করেন নাই। কারণ টুঙ্কু তুর্কি-আরব পোলাপানদের ভয় পায়। তার সাথে রান্নাবাটি খেলতে হবে। অর্থাৎ ফ্রাঙ্কফুর্টে গেলে শারমিনের পুরা সামার ভ্যাকেশানটাই মাটি। একা না থাকার অন্য সম্ভাবনার মঞ্জিল এখনো শারমিনের নাগালের বাইরে কিংবা মঞ্জিলগুচ্ছ শারমিনকে বাগাতে পারছে না।

সশব্দে দরজা লাগিয়ে ঘরে ঢুকে টেবিলের উপর চাবি-মোবাইল-পার্স রাখতেই কলিং বেল। পাশের ফ্ল্যাটের ফ্রাউ বেকেনবাখ।

- ভাস ইস্ট ডাস ফুয়ার আইনে ফ্রেষহাইট? (এইটা কী ধরণের অভদ্রতা?)

- এন্টশুলডিগুঙ! ঈষ বীন আইগেন্টলীষ মুইডে দেসভেগেনস্ ...( মাফ করবেন আমি আসলে ক্লান্ত তাই...)

- ইয়ো... যী যিন্ড মুইডে...আলে যিন্ড ফেরদাম্ট মুইডে ... মাইন ফেরদাম্টার মান ভার আউখ মুইডে... যোগার বিস সুম টোড ...ভাস কাইন শোয়াইন ফেরস্টেট, দাস ঈষ আউখ মুইডে যাইন কান ... ( হ বুঝলাম আপনে ক্লান্ত...... দুনিয়ায় বাল সবাই ক্লান্ত...আমার বুইড়া হালায়ও ক্লান্ত থাকতো....এমন কি মরণ পন্তও ... কোনো শুয়ার বুঝেনা যে আমিও ক্লান্ত থাক্তারি ...)

- হালো! হিয়ার গেয়েন যী পার স্টুইক সু ভাইট! ঈষ হাব গেযাগ্ট ডাস এস বীসশেন লাউট ভার উন্ড ঈষ এন্টশুলডিগে মীষ দা ফুয়্যার... আবার হাবে ঈষ আবসলুট কাইন বক মিট ঈরার লেবেনস গেশিষ্টে মীষ সু লাঙভাইলেন ... গুটে নাখট্ ! ( হ্যালো ! এট্টু বেশী হইয়া যাইতেছে না? আমি কইলাম যে দরজা লাগানোর শব্দ একটু বেশি হইয়া গেছে আর আমি সেই জন্য দু:খিত ... কিন্তু আপনের জীবনের দাঁসতাঁয়ে শুইনা বোর হওনের টাইম নাই... গুড নাইট! )

দরজা লাগিয়ে ঘরে ফিরে এলেও বাইরে থেকে ফ্রাউ বেকেনবাখের হাঁউমাউ ভেসে আসে। ঘরের দরজা লাগিয়ে দিতে তিনিও হারিয়ে যান ধীরে ধীরে।

ধুপ করে খাটের উপর বসে কিছুক্ষণ হাঁটুতে মাথা গুঁজে থাকে শারমিন। গরম লাগছে। বাইরে মনে হয় এখন ত্রিশ ডিগ্রীর কাছাকাছি। টি-শার্ট খুলে বিছানায় ছুঁড়ে ফেললো। তার উপর ব্রা। শুধু এই বাড়তি জিনিসটার জন্যই মেয়েদেরকে কমপক্ষে পৌনে দুইগুণ বেশী গরম সহ্য করতে হয়। গলা থেকে নাভি পর্যন্ত ঘেমে উঠেছে। বাংলাদেশের মতো দরদর করে ঘাম না। প্যাঁচপ্যাঁচে ঘাম। ঘামের উপর তোয়ালে চালিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ায় শারমিন। একে একে জিন্স আর প্যান্টিও জমা হয় বিছানায়।

মুগ্ধ হয়ে নিজেকে দেখতে থাকে। জ্যামিতির মাপে সব ঠিকাছে। এক দিন্না একদিন জুটে যাবে জন আব্রাহামরূপী কোন ফাঙ্কি। তখন কুতুবের মতো মাঙ্কিদের আর চান্স থাকবে না। সেদিনের আরো অনেক কথা মনে পড়ছে।

তৃতীয় দৃশ্য

ক্যামেরা শাওয়ারের মুখে। পানি পড়তে শুরু করেছে। পুরোদমে। শারমিনের চুল ভিজে কাঁধ পর্যন্ত দেখা গেলো। বাথরূমের ছোট্ট জানালায় সূর্যাস্ত ....

(চলবে)


মন্তব্য

হাসিব এর ছবি

আরো একটু লম্বা হৈলে ভালো হৈতে । বিশেষ কৈরা জার্মান স্টাইলের কথা ধরলে তৃতীয় দৃশ্য এতো হুট কৈরা শেষ হৈতো না ।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

সবার জাগামতো মনোযোগ ...



অজ্ঞাতবাস

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- হ। আমিও তৃতীয় দৃশ্যের সংক্ষিপ্তকরণের তীব্র প্রতিবাদ জানায়ে গেলাম। অন্তত জনগণের চাহিদার দিকে চাইয়া হলেও এই দৃশ্যের লেন্থ লম্বা করোনের দরকার আছিলো।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

সুমন চৌধুরী এর ছবি

ধৈর্য ধরে থাকো সুনা ...



অজ্ঞাতবাস

সোহাগ [অতিথি] এর ছবি

ক্যামেরা তো শুধু শাওয়ারের মুখে থাকলে চলবে না, ইহা জর্মন দেশী সোপ। আরো গভীরে যাও!
চলুক। মাঝে বন্ধ করিস না।

সুমন চৌধুরী এর ছবি
সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এই লেখা কি সেন্সর বোর্ডে দিছিলেন? শেষটুক কাইট্টা দিছে?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সুমন চৌধুরী এর ছবি

বোর্ড এখনো শেষটুক দ্যাখে নাই দেঁতো হাসি



অজ্ঞাতবাস

শুভ [অতিথি] এর ছবি

ইয়ো... যী যিন্ড মুইডে...আলে যিন্ড ফেরদাম্ট মুইডে ... মাইন ফেরদাম্টার মান ভার আউখ মুইডে... যোগার বিস সুম টোড ...ভাস কাইন শোয়াইন ফেরস্টেট, দাস ঈষ আউখ মুইডে যাইন কান ,মনের কথাডা কইছেন গো ভাই!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।