আমি হয়তো আর কখনো লিখতামই না। না কলমে না কী-বোর্ডে। পুরনো জমে থাকা লেখাগুলি ২০০৬ এর ফেব্রুয়ারীতে আপলোড করেছিলাম কাফ্রী হিমুর প্ররোচনায়। গাত্রবর্ণের তীব্রতাই হয়তো এই রকম থিংক অ্যালাইকের যোগসূত্র। এর পরে চলছিল নানান রসিকতা খোঁচাখুঁচি তর্কাতর্কি এসবেই। নতুন কবিতা একেবারেই লিখিনি। এই সময় যা যা আপলোড করেছি সবই ১৯৯৭ থেকে ২০০২ এর মধ্যে লেখা। এই পর্যায়ে পরিচয় রাসেল আর তাঁর অসাধারণ ...আমি হয়তো আর কখনো লিখতামই না। না কলমে না কী-বোর্ডে। পুরনো জমে থাকা লেখাগুলি ২০০৬ এর ফেব্রুয়ারীতে আপলোড করেছিলাম কাফ্রী হিমুর প্ররোচনায়। গাত্রবর্ণের তীব্রতাই হয়তো এই রকম থিংক অ্যালাইকের যোগসূত্র। এর পরে চলছিল নানান রসিকতা খোঁচাখুঁচি তর্কাতর্কি এসবেই। নতুন কবিতা একেবারেই লিখিনি। এই সময় যা যা আপলোড করেছি সবই ১৯৯৭ থেকে ২০০২ এর মধ্যে লেখা। এই পর্যায়ে পরিচয় রাসেল আর তাঁর অসাধারণ বিদ্রুপক্ষমতার সাথে। একই সময় অন্য আরো একজনের তীর্যক উচ্চারণে পাঙ্খা হয়েছিলাম। তিনি আমাদের মুখফোড়। কিন্তু মুখফোড়ের কথা নানান ঐতিহাসিক কারণে আজ না, পরে বলবো। আলোচনা নিপাট কবিতায় সীমাবদ্ধ থাক।
২০০৬ সালের মার্চ মাসের শেষ দিকে সামুব্লগে শমিত নামে এক ভদ্রলোক লিখতে শুরু করলেন। কাকতাল কাকে বলে জানি না। তবে এটুকু নিশ্চিত যে আমার পোয়েটিক্সের সাথে এই লোকের দূরত্ব অন্তত কৌশলগতভাবে সবচাইতে কম। একেকটা কবিতা পড়ি আর মনে হয় হাতের কাছে পেলে আস্ত একটা ব্যারেল কিনে খাওয়াতাম। খেয়ে আবার বসতাম চাবি-পাটা নিয়ে। মার্চ মাসের শেষে তিনি যখন ফটোগ্রাফি দিয়ে শুরু করলেন তখনো দুই একদিন তেমন নজরে পড়েন নি। প্রথম চোখে আটকালেন মার্চের ২৭ তারিখে আমাদের বাথরুমগুলি সিরিজের শুরুতে। একেবারে টানা গদ্যে নিপাট পদ্য লেখা। পড়েই পাঠকের প্রথম উপলব্ধি হয় ছন্দের থাকা না থাকা শুধুই কানে বা চৈতন্য। কবিতা তাই যা গদ্য নয়। অথচ যার ব্যক্ত হওয়া খুবই জরুরি। অন্তত কবির কাছে জরুরি। তারপর বক্তব্যই খুঁজে নেবে পাঠক।
এই ফর্মুলাতে শমিতের কবিতা আমাকে খুঁজে পেলো। আমাদের বাথরুমগুলি সিরিজে সবচাইতে ছুঁয়ে যাওয়া কবিতা ছিল ২৮ মার্চ ২০০৬ এ লেখা তার পঞ্চম কিস্তি,
প্রতিবিম্ব উজ্জলতর হলে দেখা যায় অজস্র কাঁচছবি ঝুলছে বিদ্যুৎবারান্দা পেরিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা বিবি ও সাহেবের ছবিছাপ নম্র গোলামে আর সমবেত বাথরুমগণের লিঙ্গনির্ধারণ হয়ে গ্যাছে আরো আগে বাথরুমবারান্দা ও দরজা দেওয়াল জুড়ে ক'বছরে ভরে গ্যাছে লেবেল নির্দেশ । তাই সন্ধ্যার ঝোঁকে বাথরুম-বাথরুমীদের চাপা আলাপে রোজ ভরে ওঠে মহল্লা বার , কফিশপ , পুল আর মাঝরাতে হ্যান্ডসাম ছেলেবাথরুদের মাপা হিসি থেকে প্রকৃতই সুগন্ধ ভেসে এলে মেয়েবাথরুমগুলির গোপন ব্যস্ততায় ভরে যায় আলোকরিডোর ; গোলামদানীতে মেপে রাখা ছাঁচগোলাপের কারিকুরি । অথচ এখনো রাঙা টাই বাথরুমরীতি এক্সকিউজ মী বলে উঠে দাঁড়ালে এখানে কার্পেট লাইন পড়ে যায় টানাবাথরুম লাগোয়া খিলানে । জুতোর ময়লা লেগে বারংবার কাঁচসিলিং নোংরা হয়ে গেলে , মানুষের আয়নাফেরৎ পাপোষগুলি চমৎকার মুছে রাখে যাবতীয় টিস্যুলিপি , দাগ ও পালিশ । তারপর বাথরুম বদলিয়ে যায় ....
শমিতের কবিতা পড়ে চৈতন্যে খোঁচা লাগলো। বয়স হয়েছে তো কী? ভাবনাগুলি মগজে গুঁতালেই লিখে ফেলা যায়। সে বালই হোক আর ছালই হোক। দুটোই ঘোরতর ভূতপদার্থ। আসল কথা হচ্ছে অনুভবগুলিকে অনবরত রেকর্ড করে যাওয়া। কবিতাই হোক আর কথাসাহিত্যই হোক, সবই নানান মুখোশের ন্যারেশান। সুতরাং জরুরি হচ্ছে ধারাবাহিকভাবে বলে যেতে থাকা। এই ধারা'র সংখ্যাতাত্বিক বহমানতা রক্ষার দায় কবির না। কবির দায় শুধু নিজস্ব অভিজ্ঞতার ধারাবাহিকতায় নিজস্ব অনুভবগুলির ঠিকুজি টুকে রাখা।
এর আগ পর্যন্ত সামহোয়ারইনের ভার্চুয়াল কী-বোর্ড ব্যবহার করছিলাম। শমিতের কবিতার ধাক্কায় প্যাটরা খুলে বের করলাম বছর দুই আগে দেশ থেকে পাঠানো বিজয় লে-আউটের বাংলা কী-বোর্ড। ফোনটিকের পিন্ডি চটকে শুরু করলাম কী-বোর্ড দেখে দেখে বিজয়ে টাইপ করার অনুশীলন। অনুশীলনের উছিলায় নতুন করে কবিতা লেখার শুরু। ফজিলতে বিমলানন্দ ছাড়া আর কিছু না পাই অন্তত পরবর্তী কয়েক সপ্তাহের মাথায় বিজয় কী-বোর্ডের লে-আউট মাথায় গেঁথে গেলো। এই সময়ে একের পর এক কবিতা আপলোড করেছে শমিত আর আমি গপ্ গপ্ করে গিলেছি। আত্মসমর্পণ নামের এই কবিতাটি ,
বস্তুতঃ জড়িয়ে আছি ও আমার শিকড় ক্রমে
গাঢ় হচ্ছে ,
নেমে যাচ্ছে এই সব চৌকো পাথরে
একা ও সেই সঙ্গে অসম্ভব নীল
কোনো স্রোত ছুঁয়ে যাচ্ছে
শেষ সীমা , প্রান্তবর্তী মাঠ -
নিরীহ গমের ক্ষেত থেকে
তখনো উড়ে যাচ্ছে ছোটো ছোটো রেখা ।
এর মতো কবিতাগুলি, যেগুলো তাঁর তখনকার সাম্প্রতিক ধারার কবিতা না হলেও উপাদেয়। শমিত ছবিও আঁকেন চমৎকার। ঠিক যা লেখেন তাই আঁকেন। সব মিলিয়ে ভদ্রলোকের গুণে পাঙ্খা না হওয়া কঠিন। কিচাইনগাঁথা থেকে তিনি শুরু করলেন তাঁর সত্যিকারের ব্লগীয় কাব্যচর্চা।
এইভাবে ক্লিকফাঁদে দীওয়ানা হ'লে সত্যিই বড় বড় ঝটকা লাগে এসকল নেটযাপন , যেখানে নখাগ্রে ঝিলিক দেয় তামাম দুনিয়া আর মুখ ও মুখের বিকল্পে মুখোশ ও মুখোশেরও বিকল্পে পুনরায় অন্য মুখের ভীড়ে উড়ে যায় আমাদের সামাজিকতার টুপি ও খোলাচুল এই মেঘবন্দরে ছেয়ে যায় চামচা আকাশ । আমরা ভালো থাকি অথবা এভাবেই দাবী করি আমাদের ভালো থাকার সম্ভাবনাসমূহ সুতলিবদ্ধ পুত্তলিকার মতো , হাতে কাপড়ের তলোয়ার আর রাংতার মাথামুকুটে নাচতে থাকে গোপন ইশারার মতো রাষ্ট্রযন্ত্রের অনর্গল তাগিদে । অথচ দ্যাখো , এই প্রাঙ্গণে যেন অন্য কথা ছিলো , কথা ছিলো এবারে আমরা সকলে সিনেমা দেখবো পর্দার উলটো পিঠে আলোকিত থিয়েটারহলে সেইসব চাপা ও কৃষণ বর্ন ছবিগুলি , মানুষের চোখ থেকে বেরিয়ে আসা সাদা হলুদ বা কমলা কোনো রোদ না পেয়ে যেগুলি এখন শুকনো ও পাটল । এরকমই যেন কথা ছিলো তবে কার কথা কে ও কবে দিয়েছিলো সে প্রশ্নে এমনকি এ দামড়া আকাশব্যাপী আমাদের নিরন্তর তথ্যযাপনেও কোনো উত্তর থাকে না । ফলে এ চামচক্রান্তে যোগ দেয় প্রযুক্তিস্নেহ , আর মোয়া আসে চমৎকার , জনপ্রতি এক বা দুই , দিগন্ত জুড়ে দেখা দেয় আমাদের হাসিহাসি মুখ , যা কিনা ঘন ক্লোজআপে কিছুটা কৃতার্থ ও করজোড় তেলতেলে শব্দে ঘেরা সেই হারামী ভাস্কোর জাহাজের পোঁ শোনা থেকে ।
একেকটা লাইন একেকটা দৃশ্যকল্প, কখনো একেকটা শব্দও। মনে হলো অনেকদিন ধরে এরকম কিছু একটাই খুঁজছিলাম। কিচাইনগাঁথা আমার পড়া প্রথম ব্লগীয় কবিতার ধারাবাহিক। একটি বড় ক্যানভাসের ছবিতে তার শুরু ২০০৬ সালের ১২ এপ্রিল। আট কিস্তিতে শেষ। এরকম কবিতা সিরিজ বাংলাব্লগে বা ব্লগের বাইরেও কখনো পড়েছি বলে মনে পড়ে না। সম্পুর্ণ নতুন অনুভব। আমার রাসেলের হিমুর মুখফোড়ের সবার কী-বোর্ড ছুটলো একসাথে সাধু সাধু করে। ২০০৬ সালের জুনের পর থেকে ভদ্রলোক কেমন যেনো ঝিমিয়ে পড়তে শুরু করলেন। তারপর আস্তে আস্তে অনিয়মিত হয়ে পড়লেন ব্লগাবর্তে। কবিতার যে ফোয়ারা তুলেছিলেন মার্চের শেষে ব্লগীয় অনেকটাই রাজনীতির হানাহানির মুখে সেটা শ্লথ হয়ে গেল জুনের ২২জুন। সেদিনের শেষ কবিতাটি আমি এখনো মাঝে মাঝে সামহোয়ারিনে খুঁজেপেতে পড়ি। কবিতাটির নাম ছিল জাদুঘরকথা ..... এখন পর্যন্ত আমার মতে বাংলাব্লগজগতে পড়া সেরা কবিতা......
এখনো কাঁচস্ক্রীনে মাথা ঠুকলে এই দ্যাখো রক্ত ছেৎরে যায় আঙুলে হাতুড়ির ভর শীতলার অন্ধকারে ধুনো ধোঁয়া পাক মারে পোস্টারে এই দ্যাখো দেওয়ালে দেওয়ালে দিশেহারা আলোর হলুদে মিশে আমাদের চুপচাপ শিরা কাটা স্নানের ঠান্ডা নুন জমে এই দ্যাখো বাথটাবে সমূদ্রঝড় ওঠে প্রাণহানি উপকূল সীমান্ত জুড়ে উড়ে যায় আমাদের চাল চুলো বইখাতা তছনছ হলে এই দ্যাখো জাদুঘর বারান্দায় রাখা থাকে আমাদের কেটে ফ্যালা হৃৎপিন্ড
শমিত কিন্তু সচল। যদিও ক্যাঞ্জানি ল্যাখে কম
মন্তব্য
কবিতা তাই যা গদ্য নয়। অথচ যার ব্যক্ত হওয়া খুবই জরুরি। অন্তত কবির কাছে জরুরি। তারপর বক্তব্যই খুঁজে নেবে পাঠক।
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু
==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু
এই লোকরে কই পামু? সামুতে?
পাঙ্খা হইতাসে। পোয়েটিক্সে মিলের ব্যাপারটা নিয়া আরেকটু গ্যাজাইলে আরাম পাইতাম। আপনার চোখ দুইটা আরো ভালভাবে কাছে গিয়া দেখতে পারতাম।
জারি থাকুক। আমি আছি।
সামুর সার্চ ইঞ্জিনে শমিত লিখে সার্চ দিলেই পাবেন।
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
আপনে কিন্তু পাশ কাটাইতেসেন কইলাম। কবিতার পর কবিতা তুইলা দিয়া নিজের কথাটা আর কইতেসেন না। আপনার কথাটা জানানোর জন্যেই তো, নাকি? ঐটা জানান। ফাঁকি মাইরেননা।
যখন সংশ্লিষ্ট বোধ করেন, কিভাবে করেন, আপনার পোয়েটিক্স লয়া - এইগুলা লয়েও মাতম চাই। চাই কইলাম।
শমিতের সাথে দুই একবার বাতচিত হইছে সামুতেই, আরেক কবির কবিতায়। দু'এক লাইনে মন্তব্য সারেন, কিন্তু তাতেই সব বলে ফেলেন বলেই চোখে আটকেছিল। ব্লগে ঢুকে দেখেছিলাম বহু পুরানো লেখক। যা হয়, সময় করে পড়াই হয় নাই!
আপনাকে ধন্যবাদ সুমন ভাই, হদিস দিলেন, মনেও পড়লো। এখন খুঁজে পেতে পড়বো!
দ্রঃ রাসেলের হ্যাভেন অ্যান্ড আর্থের কবিতা অনুবাদ পড়লাম। তব্ধা পুরা-ই!!!
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
শমিতের সচলে লেখার লিঙ্কটা দেন না। এমন কবিতা, আহা!
শমিত সচলায়তন হবার কিছু আগ থেকেই ডুব মেরেছেন। কোথাওই লেখেন না। সচলে সব মিলিয়ে গুটিকয় মোটে পোস্ট।
এখানে পাওয়া যাবে।
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
এই সিজটা ভালো লাগছে।
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ধন্যবাদ
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
পড়তেছি...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
কাগু তোর ডেলিসোপ আবার চালু হইব কবে?
৮০ তেছে
অজ্ঞাতবাস
অজ্ঞাতবাস
সিরিজটা ভালো লাগতেছে...
একনিষ্ঠ ব্লগ পর্যবেক্ষক বদ্দার কাছ থেকে ব্লগ বিষয়ক আরও লেখা চাই।
( শুনলাম, আজকাল উত্তরাধুনিক লোকজন নাকি ২ মাস ব্লগিং করে ব্লগিতিহাস লেখা শুরু করেছে। তার বিপরীতে এই নির্মোহ সিরিজটাই চলুক)
আহ!
love the life you live. live the life you love.
নতুন মন্তব্য করুন