জাহাঙ্গীরনগরের ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন ১৯৯৮ (রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট)

সুমন চৌধুরী এর ছবি
লিখেছেন সুমন চৌধুরী (তারিখ: সোম, ১৪/০৭/২০০৮ - ৫:১৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

দশ বছর হয়ে এলো সেই ঘটনার। স্বাধীন বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাসে খুব প্রধাণ স্তম্ভ এই আন্দোলন। ফারুক ওয়াসিফ সেই সময়কার খুব প্রধাণ নেতৃস্থানীয়। আমি নিতান্তই ম্যাঙ্গো জনতা। তবু আন্দোলনের শরির আর প্রকৃত পর্যবেক্ষণে ম্যাঙ্গো অবস্থানের খানিক সুবিধা সবসময়ই থাকে। সেই ভরসাতে স্মৃতিচারণে সাহসী হলাম। বছর দুই আগে অন্যকোথাও বলেছিলাম এই কাহিনি। আজ ঘষামাজা করে নতুন করে আবারো বললাম। দুই কিস্তিতে শেষ করবো সাইজ আর ফর্ম দুইয়ের দোহাই দিয়ে। পাঠক ক্ষমা করবেন।

এক কিস্তিতে শেষ করতে পারবো কিনা জানিনা । আর আমার চাইতে বেশী করে এবং কাছ থেকে যারা আন্দোলনকে দেখেছেন তারা আরও ভালো বর্ণনা করতে পারতেন । এই ব্লগে দুজনকে চিনি যাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল । তারা হয়তো কখনও আলাদা পোস্ট করে বা নিদেন পক্ষে সম্পুরক মন্তব্য দিয়ে আমার অস্পূর্ণতাকে মেরামত করতে পারবেন । আমি রাজনীতি না করায় এবং জার্মান শিক্ষার্থে দুপুরের বাসে ঢাকায় চলে আসায় আমার অংশগ্রহণ ছিল ছাড়া ছাড়া । আর বন্যার জন্যে ভার্সিটি বন্ধ করে দেওয়ার পরে বাসায় চলে এসেছিলাম ।তাই অনেক কিছুই আসলে মিস করেছি । তবুও দেখা এবং শোনা মিলিয়েই প্রত্যক্ষ । তাই এটা নিয়ে লিখবার সাহস করছি । সেই সময়কার নেতৃস্থানীয়দের কেউ আমার লেখা পড়লে শুধরে দেবেন অবশ্যই । তবে কোন দলের অংশগ্রহণ ছিল , কোন দলের ছিল না এই বিষয়ে আমাকে শুধরে দেওয়ার কিছু নেই । কারণ সেখানে আমার জ্ঞান অনেক বেশী পরিস্কার ।আসলে ধর্ষণের মত নারী নির্যাতনের ঘটনা সর্বত্রই ঘটে । জাহাঙ্গীরনগরের সাধারণ ছাত্রদের প্রতিরোধের কারণেই বিষয়টি জাতীয় পর্যায়ে আলোচনায় এসেছে। এই প্রতিরোধের জন্যে জাহাঙ্গীরনগরের ছাত্র হিসেবে আমি গর্বিত। ধর্ষণের মতো অপরাধের প্রতিবাদ করার প্রকৃত উদাহরণ পাওয়া যায় শ্রমজীবি মানুষদের মধ্যে। মধ্যবিত্তের প্রবণতা হচ্ছে চেপে যাওয়া । জাহাঙ্গীরনগরের আন্দোলনটি মধ্যবিত্তের আন্দোলনই ছিল। তাই দীর্ঘ দিন চেপে রাখার পরে বিস্ফোরিত হলেও মধ্যবিত্তের সীমাবদ্ধতা কে ছাপিয়ে উঠতে পারেনি। এতে যতটুকু ব্যর্থতা ছিল তার পুরোটাই মধ্যবিত্তের ঠুনকো প্রগতির সীমাবদ্ধতার কারণে। সেই সীমাবদ্ধতা কিভাবে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বা আদৌ সম্ভব কিনা সেটা স্বতন্ত্র আলোচনার বিষয়। শুরুতে সেইসময় জাহাঙ্গীরনগরের রাজনীতির প্রেক্ষাপট বলা প্রয়োজন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার মাস ছয়েকের মাথায় ক্যাম্পাস ছাত্রলীগ দখল করে নেয়। এই দখল মোটামুটি দখলের সাধারণ নিয়মানুসারেই হয়েছিল। ছাত্রদলের একাংশ পালালো আর জুনিয়রদের একাংশ জয় বাংলা বলে পিঠ বাচালো । মুক্তিযুদ্ধের পর থেকেই জাহাঙ্গীর নগরের রাজনীতি ঘুরপাক খেয়েছে ছাত্রলীগের সাথে বামপন্থীদের দ্বন্দ্ব কে ঘিরে। এমনকি যে ছাত্র ইউনিয়ন যূগ যূগ ধরে লীগের লেজ ধরে জীবন ধারণ করে আসছে তারাও জাহাঙ্গীরনগরে লীগ বিরোধী হতে বাধ্য হয়েছে । ৪-৫ টি বাম সংগঠন, নারীবাদীদের বিভিন্ন সংগঠন এবং জাহাঙ্গীর নগর সাংস্কৃতিক জোট এরা সম্মিলিত ভাবে বরাবরই একটা গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থেকে গেছে । বৃহত্তর ঐক্য হয়েছে কেবল মাত্র শিবির ইস্যুতে এবং সেখানে ছাত্রদলের বৃহত্তর গ্রুপটি সবসময়েই বামপন্থীদের সঙ্গে গলামিলিয়ে শিবির বিরোধী আন্দোলন করেছে। মুক্তিযুদ্ধের পরে ছাত্রলীগের মেরুদন্ড ভেঙ্গে যাওয়ার পর থেকে ছাত্রলীগ আর সাংগঠনিক ভাবে সোজা হতে পারেনি । এই দলীয় চেহারার বাইরে অন্য আর একটি ফ্যাক্টার সেখানে কাজ করে । স্থানীয়-অস্থানীয় দ্বন্দ্ব । ১৯৯১-৯৬এ বি.এন.পির সময়ে এই দন্দ্ব চরম আকার ধারণ করে । জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলে সেই থেকে লোকাল-অ্যান্টি লোকাল বিরোধীতা স্থায়ী চেহারা নেয় । ছাত্রলীগের দখল প্রতিষ্ঠিত হবার পর প্রথম তারা যে সমস্যায় পড়ে, ছাত্রলীগের কোন লোকাল ফ্র্যাকশান ছিল না। যারা জয় বাংলা বলে দখলের সময়ে ডিগবাজী দেয় তাদের বেশীর ভাগই ছিল ছাত্রদলের লোকাল গ্রুপের। যারা শিবির আক্রমণের সময়ে তাদেরকে সহায়তা করেছিল। এরা ঐতিহাসিক কারণেই উগ্র ধরনের অ্যান্টি বাম অবস্থানে ছিল। এদের সঙ্গে ছাত্রলীগের মধ্যকার অ্যান্টিবামদের একধরনের সমঝোতা তৈরী হয়। এর ফলে আগে বি.এন.পি.র আমলে মুক্তিযোদ্ধা ছাত্র কমান্ডকে কেন্দ্র করে লীগের সাথে বাম সংগঠণগুলোর যে ঐক্য তৈরী হয়েছিল তা কিছুদিনের মধ্যেই হাওয়ায় মিলিয়ে যায় । দখলের রাজনীতিতে যেটা হয় লীগ আসলে দল নাই বা দল আসলে লীগ নাই ধরনের একটা অবস্থা। তো ঐ সময়ে দলের অ্যাক্টিভ গ্রুপটি অনুপস্থিত বা নিষ্ক্রিয় ছিল। সুতরাং প্রকাশ্যে বিরোধী দল বলতে তিনটি বামপন্থী ছাত্র সংগঠণ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট আর ছাত্র ফেডারেশন । ছাত্রলীগের হার্ড লাইনার রা মানে মূলত ছিচকে চোর মানসীকতার পোলাপানরা গোড়া থেকেই চড়াও হয় একাধারে বাম ছাত্র কর্মী এবং সাংস্কৃতিক সংগঠণ গুলোর উপরে। পুরনো সাসপেক্টেড শিবিরের অনেক পোলাপানকে ঐ সময়ে জেনে শুনে হল কমিটিতে জায়গা দেওয়া হয়। আর তখন জাতীয় রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের সথে জামাতের দহরম-মহরম চলছে। আঞ্চলিক রাজনীতির যাবতীয় টাকা-পয়সা হাতাতে ছাত্র লীগের সামনে তখন এছাড়া হয়তো কোন পথও ছিল না । লোকাল বলতে যাদের বোঝায় তারা আজন্ম মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী হলেও "টেকার গন্ধ" সবাইকে এক পতাকার নীচে নিয়ে আসে। তবে ছাত্র লীগে কিছু হতভাগা শেষ পর্যন্ত থেকে গিয়েছিল যারা মুক্তিযুদ্ধ-টুক্তিযুদ্ধের আবেগ ছাড়তে পারেনি। তারা ১৯৯৭ জুড়ে নানাভাবে চেষ্টা চালায় দলের নেতৃত্বে এসে পরিস্থিতি ম্যানেজ করতে। কিন্তু কেন্দ্রের এবং প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদত ছিল লুম্পেনদের পক্ষে। অপরদিকে যারা ছিল তারাও ধোয়া তুলসীর পত্র ছিল না । তবে তাদের নু্যনতম পজেটিভ মনোভাব ছিল, যেমনটা ছিল ছাত্রদলের অস্থানীয় গ্রুপটির । তো যাই হোক, ১৯৯৭ এ লীগের একটি গ্রুপ বামপন্থীদের সাথে সমবেত হয়েই ৩ নং ও ৪ নং ছাত্রী হলের নাম যথাক্রমে প্রীতিলতা এবং জাহানারা ইমাম রাখতে বাধ্য করে প্রশাসন কে । এর পরে ছাত্রলীগের কাউনসিল নিয়ে শুরু হয় সংঘাত । এক পর্যায়ে সভাপতি সমর্থক গ্রুপের একজন নিহত হয় । সাধারণ সম্পাদক সমর্থকেরা প্রথমে নিয়ন্ত্রণ পেলেও কিছুদিন পরে সভাপতি গ্রুপ ফিরে আসে কেন্দ্রের সমর্থনে। এই সভাপতি সমর্থক গ্রুপের বেশীর ভাগই ছিল হার্ড লাইনার। ছাত্রদল থেকে যোগ দেওয়া জসীম উদ্দিন মানিক কিছুদিনের মধ্যেই টপে উঠে যান এবং 1997 এর শেষের দিকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন । মানিক অবশ্য ছাত্রদলে যাওয়ার আগে ছাত্রলীগেও ছিলেন আবার তারও আগে তীতুমীর কলেজে ছাত্রদলও করেছেন । মানে প্রতিভাবান লোক আর কি । তো এই গ্রুপটি প্রথম থেকেই বিনা কারণে একতরফাভাবে বামপন্থীদের উপর চড়াও হয় । জোর করে মিছিলে নামানো , রাতে ঘরে ঢুকে তোষক পেচিয়ে মার-ধোর, ছাত্র নেতার পূণ্য নজরে পড়া কোন মেয়ের সঙ্গে ঘোরা অপরাধে গেস্টরূমে ঠ্যাঙ্গানো পরবতর্ী তওবা করানো এগুলো চলতে থাকে পুরোদমে । আমার মতো জ্ঞানীলোক হওয়ার সুযোগ গ্রাম থেকে আসা পোলাপানের ছিল না যে নেতাদের কৌশলে এড়িয়ে যাওয়া এবং মাঝে-মধ্যে বস খবরকি ইত্যাদি র মাধ্যমে পিঠ বাচাবে । তো এই অত্যাচার কিছুদিনের মধ্যেই বামের সীমা পার হয়ে নিরীহ পোলাপানের উপর শুরু হইলো ।ব্যাপারটা এমন অসহ্য অবস্থায় গিয়া পৌছাইল যে অনেকেই হলের সীট ছাইড়া ঢাকার বাসায় মানে যারা ঢাকার আরকি, আপ-ডাউন কইরা ক্লাস করা শুরু করলো । হলে থাকলেই কখন কোন বাটে পড়ে সবাই এই আতঙ্কে থাকতো । আমি ধরা খাই নাই চরম সুবিধা বাদী বইলাই । কারণ তখন রাজনীতি না করা বহুৎ পোলাপান খালি মিছিল না করার কারণে ধোলাই খাইছে । আমার রাজনীতি করার কোন ইচ্ছা ছিল না , মানে টিপিক্যাল সুবিধাবাদী ফ্রেমে চিন্তা করলে যেমন হয় আরকি । তাই মাইর এড়াইয়া চলার ক্ষেত্রে বহু ধরনের সৃষ্টিশীলতা ব্যবহার করতে হইতো । মাইর খাইতেছিল মুলত সহজ সরল পোলাপানগুলা । কোন এক ফার্স্ট ইয়ারের ছেলেকে ডেকে হয়তো নেতাজী বল্লেন , তগো কেলাসের অমুক মেয়েটার লগে আমার আলাপ করাইয়া দে বা রূম নম্বর দে ইত্যাদি । কোন বোকা ছেলে রাজী না হওয়া মাত্রই সোনার ছেলেরা রড নিয়ে চড়াও হতেন । আর বাম নেতা কমর্ীদের পিটানোর ব্যাপারে হলে হলে রুটিন ছিল । আজকে এই হলের এই ব্লক কালকে ঐ ব্লক ইত্যাদি । সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড রীতিমতো থমকে দাড়লো একই সাথে । যে সুন্দর ক্যাম্পাসের স্বপ্ন দেখে ভর্তি হয়েছিলাম তা উবে গেল পুরোপুরি । এর মধ্যে ১৯৯৭ এর ১১ ডিসেম্বর আমিন বাজারের ট্রাক ড্রাইভাররা ক্যাম্পাসের বাস ভাঙ্গায় (এই কাহিনি পরে বলবো ) শুরু হলো ট্রাক-ড্রাইভার বিরোধী আন্দোলন । স্বত্রস্ফুর্তভাবে শুরু হলেও বামনেতারা মিশে গেলেন স্রোতের সঙ্গে । সমস্যা হলো যে চোরাচালানের চান্দা খোর হবার কারনে ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে তখন ট্রাক মালিকদের ব্যপক প্রেম । ছাত্রলীগ প্রথমে স্রোতে ভয় পেলেও পরে ডাকা থেকে গ্রীন সিগনাল পেয়ে হুমকী দিতে শুরু করলো এবং ১৭ ডিসেম্বর সরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সামনে পুলিশ পেছনে ছাত্রলীগ সাধারণ ছাত্রদের দিলো রাম ধোলাই। এই ঘটনার মাধ্যমেই বলা যায় ছাত্রলীগের রাজনৈতিক আত্মহত্যার যে প্রক্রিয়া চলছিল তার ষোলকলা পূর্ণ হয় । আরন্দালন পুরোপুরি দমন হয়েগেলো নির্যাতনের মাত্রা অনেক অনেক বেড়ে যাওয়ায়। এমনকি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে শিক্ষকদের উপর হামলার বিষয়টি পর্যন্ত। আমার বহু বন্ধু-বান্ধব ভালো রকম আহত হলেন । আমাদের বিভাগীয় প্রধান ড.নাসিম আখতার হোসাইন, নৃবিজ্ঞান বিভাগের সাঈদ ফেরদৌস, মানস চৌধুরী এবং আরো অনেক শিক্ষক মার খেয়েছিলেন সেদিন । যাই হোক । ছাত্রলীগ ঐ পরিস্থিতিতে গায়ের জোরে জিতলেও । পোলাপান ভিতরে ভিতরে ফুসতে থাকলো । ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনের ইতিহাস লিখতে ঘিয়া মনে হইলো ই প্রেক্ষাপট জানানো খুবই জরুরি । নাইলে খবরের কাগজ পড়া জেনারেলাইজেশানের দিকে চইলা যাইতে পারে ।


মন্তব্য

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

ঠিক আসে, চালাও। পরে বিস্তারিত মনে হইলে জোড়া দিমুনে।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

জিফরান খালেদ এর ছবি

হুম।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

তবে জাহাঙ্গীরনগরের আন্দোলন অন্য একটা জিনিষকেও সামনে আনে যে, ১. ৯০ এর পর বুর্জোয়া ধারার ছাত্ররাজনীতি যে কী পরিমাণ দেউলিয়া আর গণবিরোধী হয়ে উঠছিল, জাবি-তে তার প্রমাণ হলো।
২. শিক্ষাঙ্গনে নতুন ইস্যুতে ছাত্র আন্দোলন সংগঠিত করা এবং সেই অর্চ্ছ্যুত প্রসঙ্গের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠাও জাহাঙ্গীরননগরিয়ানরাই করে। এর পরে সব ক'টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ইস্যুতে আন্দোলন হয় এবং জাবির আদলেই। অর্থাত একক সংগঠনের নের্তৃত্বে না হয়ে আন্দোলনের ইস্যুকে কেন্দ্র করে মঞ্চ নির্মাণের মাধ্যমে। যেমন: ধর্ষক প্রতিরোধ মঞ্চ, বর্ধিত বেতন-ফি প্রতিরোধ পরিষদ ইত্যাদি। এই ধারার আন্দোলন এনজিওদের সেকালে মুখে ফেনা তুলে ফেরা বিরাজনীতিকরণের ভাল জবাব হয়ে উঠেছিল।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

সেই ফেনার বিভিন্ন মাপের বুদবুদ এখনো বাতাসে উড়তাছে....



ঈশ্বরাসিদ্ধে:

সুমন সুপান্থ এর ছবি

মনযোগের সঙ্গে পড়লাম,আর অপেক্ষা করছি পরের পর্বের । এই রকম লেখা খুব দরকার । ধন্যবাদ আপনাকে সুমন চৌধুরী ।

---------------------------------------------------------

আমার কোন ঘর নেই !
আছে শুধু ঘরের দিকে যাওয়া

---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !

সবজান্তা এর ছবি

ভালো লাগলো পড়তে। পরের পর্ব জলদি ছাড়েন বদ্দা।


অলমিতি বিস্তারেণ

হাসিব এর ছবি

যৌন নিপীড়ন বিরোধী নীতিমালা
(প্রস্তাবিত)

আমরা এমন একটি সমাজে বাস করি যেখানে বিভিন্ন ধরনের নিপীড়ন, বৈষম্য, শোষণ ও বঞ্চনার মধ্যেই সংখ্যাগরিষ্ঠ নারী-পুরুষ, শিশু বৃদ্ধ দিনরাত অতিবাহিত করেন। জীবন ধারণের নু্যনতম প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহের জন্য প্রাণাতিপাত এবং সেইসঙ্গে অপমান ও নিরাপত্তাহীনতা এই নিয়েই বেশিরভাগ মানুষকে বেঁচে থাকতে হয়।

এগুলোর বিরুদ্ধে মানুষ লড়াইও করেছেন, করছেন বিভিন্নভাবে: ব্যক্তিগতভাবে, সমষ্টিগতভাবে। এই লড়াইয়ের ফলাফল হিসেবেই বিভিন্ন দেশে আগের তুলনায় আইনগতভাবে অনেক অধিকার স্বীকৃত হয়েছে। সামাজিক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার কারণে এসব অধিকারের পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি তবে তা নি:সন্দেহে মানুষের লড়াইয়ের ক্ষেত্রকে অনেক জোরদার করেছে।

অনেকরকম নিপীড়নের মধ্যে গুরুতর একটি হচেছ যৌন নিপীড়ন, যার শিকার আমাদের সমাজে বিশেষভাবে নারী। বিভিন্ন বয়সের, বিভিন্ন শ্রেণীর নারী এই নিপীড়নে বিপর্যস্ত। পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থা, নিয়মাবলী, মতাদর্শ, বৈষম্যমূলক আইন, দৃষ্টিভঙ্গী ইত্যাদি এই নিপীড়নকে সহায়তা করে।

গত দুদশকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী হিসেবে, শিক্ষক হিসেবে, কর্মকর্তা-কর্মচারী হিসেবে, শ্রমিক হিসেবে নারীর অংশগ্রহণ অনেক বেড়েছে। এই বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পরিবার ও সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলোতেও যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের ঘটনা বেড়েছে, যার কিছু কিছু এখন সংবাদপত্রেও প্রকাশিত হচ্ছে।

আমরা বিশেষভাবে লক্ষ্য করি যে, নিপীড়নের একটি বিশেষ ধরন হিসেবে যৌন নিপীড়ন ব্যাপকমাত্রায় জারী থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ক্ষেত্রের হাজারো রকমের আইন কানুন, নীতিমালা থাকলেও নির্দিষ্টভাবে যৌন হয়রানি বা নিপীড়ন বিরোধী নীতিমালা বা আইনকানুন নেই। এরফলে যৌন হয়রানি বা নিপীড়ন যা
• একজন ব্যক্তিকে চিরজীবনের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত করে,
• তাঁকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে,
• তাঁর উপর স্থায়ী মানসিক চাপ সৃষ্টি করে,
• তাঁর আত্নবিশ্বাস বা আত্নপ্রত্যয়ে হানি ঘটায়,
• শিক্ষা বা পেশার ক্ষেত্রে বিঘ্ন সৃষ্টি করে কিংবা তাঁকে চিরস্থায়ীভাবে শিক্ষা বা কর্মপ্রতিষ্ঠান ত্যাগে বাধ্য করে,
• জীবন সংশয় সৃষ্টি করে বা স্থায়ী শারীরিক ক্ষতির সৃষ্টি করে, এবং
• এমনকি জীবনহানি ঘটায়;
সেই হয়রানি বা নিপীড়নকে আলাদাভাবে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এখনও বিবেচনা করা হয়না। অনেকসময় ক্ষমতাবানদের কাছে এসব হয়রানি বা নিপীড়ন হাসিঠাট্টার বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়। কখনও কখনও ঘটনা দৃষ্টিগ্রাহ্য হলে বা প্রতিবাদ জোরদার হলে অপরাধীকে 'নৈতিক স্খলন' বা 'শৃঙ্খলা ভঙ্গের' কারণে অভিযুক্ত করা হয়। এতে অপরাধকে সেভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়না যেভাবে তা হয়রানি/নিপীড়নের শিকার ব্যক্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তদুপরি তদন্ত, শুনানী বা শাস্তি প্রদানের প্রক্রিয়া এত দীর্ঘসূত্রীতার শিকার হয় যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এর আর কোন কার্যকরিতা থাকে না।

যৌন হয়রানি বা নিপীড়ন বলতে কি বোঝায় ?
যৌন হয়রানি বা নিপীড়ন অনেকভাবে ঘটে থাকে। কথা, শারিরীক স্পর্শ, মানসিক বা শারীরিক আঘাত ইত্যাদিভাবে এবং অনেকসময় পরোক্ষভাবেও হয়রানি বা নিপীড়ন হয়ে থাকে। এখানে এগুলোকে নিম্নোক্তরূপে উপস্থিত করা যায়:
• যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ/ বিদ্বেষমূলক অঙ্গভঙ্গী, কটূক্তি, টিটকিরি এবং ব্যঙ্গবিদ্রুপ।
• প্রেম ও যৌন সম্পর্ক স্থাপনের ব্যাপারে চাপ প্রয়োগ কিংবা এমন আচার আচরণ বা হুমকি প্রদান যাতে ভীতি সৃষ্টি হয়।
• যৌন আক্রমণের ভয় দেখিয়ে কোন কিছু করতে বাধ্য করা বা ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনযাপন, শিক্ষা বা কর্মজীবন ব্যাহত করা।
• যৌন উস্কানিমূলক, বিদ্বেষমূলক বা উদ্দেশ্যমূলকভাবে কুৎসা রটনার জন্য ছায়াছবি, স্থিরচিত্র, চিত্র, কার্টুন, প্রচারপত্র, উড়োচিঠি, মন্তব্য বা পোষ্টার ইত্যাদি প্রদর্শন বা প্রচার।
• সম্মতির বিরুদ্ধে শরীরের যেকোন অংশ যেকোনভাবে স্পর্শ করা বা আঘাত করা।
• ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌন সম্পর্ক স্থাপনের উদ্যোগ বা স্থাপনের উদ্দেশ্যে বল বা চাপ প্রয়োগ, ব্ল্যাকমেইল, প্রতারণা, ভয় প্রদর্শন, জালিয়াতি, সুযোগ গ্রহণ বা আঘাত করা।
যৌনতাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিজের স্বার্থসিদ্ধি বা কোন কাজে ব্যবহার করা।
ধর্ষণ।

কেন এ সম্পর্কে ভিন্ন নীতিমালা দরকার?
যৌন হয়রানি বা নিপীড়নের বিরুদ্ধে নীতিমালা থাকার প্রয়োজন
প্রথমত: যৌন হয়রানি বা নিপীড়ন যে একটি দন্ডনীয় গুরুতর অপরাধ সেটা নির্দিষ্ট করবার জন্য।
দ্বিতীয়ত: যারা আক্রান্ত এবং ক্ষতিগ্রস্ত, তাদের মধ্যে একটি নিরাপত্তাবোধ এবং বিচারের প্রতি আস্থা সৃষ্টির জন্য। এবং
তৃতীয়ত: প্রথম থেকেই যাতে সবাই এই অপরাধের ফলাফল সম্পর্কে সতর্ক থাকে সেটি নিশ্চিত করবার জন্য।

এই নীতিমালার লক্ষ্য
এই নীতিমালার বিশেষ লক্ষ্য থাকবে:
১. যৌন হয়রানি বা নিপীড়নকে সুনির্দিষ্ট অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা।
২. অভিযোগ প্রদানের নিরাপদ ও সহজ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
৩. অপরাধীদের প্রয়োজনীয় শাস্তি প্রদান ও সকলের নিরাপত্তা বিধানের আইনগত ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নির্দেশ করা।

৪. বিচারের ব্যবস্থা সুনির্দিষ্ট ও ত্বরান্বিত করা।
৫. বিচার চাইবার কারণে বিচারপ্রার্থীদের হয়রানি, হেয় ও নিগৃহিত করাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে সুনির্দিষ্ট করা। নীতিমালা যাদের প্রতি প্রযোজ্য
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এই নীতিমালা যাদের প্রতি প্রযোজ্য হবে তারা হলেন:
• বিশ্ববিদ্যালয় ও সংযুক্ত স্কুল ও কলেজের ছাত্রছাত্রী
• বিশ্ববিদ্যালয় ও সংযুক্ত স্কুল ও কলেজের শিক্ষকবৃন্দ
• বিশ্ববিদ্যালয় ও সংযুক্ত স্কুল ও কলেজের কর্মকর্তা- কর্মচারীবৃন্দ
• বিভিন্ন কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে বসবাসকারী সকল মানুষ
• বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কর্মরত বিভিন্ন পেশার মানুষ
• বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্য দিয়ে যাতায়াতকারী নারী-পুরুষ (বিশেষত: যদি যাতায়াতের সময়কালে কোন ঘটনা সংঘটিত হয়।)

অভিযোগ প্রদান ও শাস্তি নির্ধারণের পদ্ধতিসমূহ:
যৌন হয়রানি বা নিপীড়নকে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে অপরাধীকে শাস্তি প্রদান এবং আক্রান্তের জন্য যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করবার জন্য নিম্নোক্ত ব্যবস্থাবলী গ্রহণ করতে হবে।
• অভিযোগ প্রদান যৌন হয়রানি বা নিপীড়নের শিকার ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ যাতে সহজে, বিনা বাধায় এবং নির্ভয়ে কোথাও তার বা তাদের উপর হয়রানি বা নিপীড়নের ঘটনা জানাতে পারেন সেজন্য যথাযথ প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা থাকতে হবে। এই ব্যবস্থায় কয়েকটি শর্ত অবশ্যই পূরণ করতে হবে:
১. অভিযোগকারী/দের নাম পরিচয়ের গোপনীয়তার নিশ্চয়তা থাকতে হবে।
২. অভিযোগকারী/দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
• অভিযোগ কেন্দ্র
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অভিযোগ প্রদানের জন্য সিনেট অনুমোদিত কাঠামোর অধীনে সিন্ডিকেট দুস্তরে অভিযোগ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করবে। প্রতিটি কেন্দ্র দুবছর মেয়াদী হবে। তবে যুক্তিসঙ্গত কারণ সৃষ্টি হলে সিন্ডিকেট অভিযোগ কেন্দ্র পুনর্বিন্যস্ত করতে পারবে। প্রথম পর্যায়ে বিভিন্ন অনুষদ/ইন্সস্টিটিউট/হল/স্কুল-কলেজ ক্ষেত্রে একটি করে অভিযোগ কেন্দ্র থাকবে। এই অভিযোগ কেন্দ্র গঠিত হবে ঐ স্ব স্ব ক্ষেত্রের একজন শিক্ষক/একজন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও একজন ছাত্র/ছাত্রী সমন্বয়ে।
এই অভিযোগ কেন্দ্র অভিযোগ প্রাথমিক যাচাইয়ের পর বিষয়টি অনানুষ্ঠানিকভাবে সমাধান করবার মতো কিনা তা বিচার করবেন। সেভাবে সমাধান করবার মতো না হলে তিনদিনের মধ্যে তা কেন্দ্রীয় অভিযোগ কেন্দ্রে প্রেরণ করবেন।
• যৌন নিপীড়ন আদালত
যৌন নিপীড়ন আদালতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক/কর্মকর্তা কর্মচারীদের প্রতিনিধি ছাড়াও বহি:স্থ এক বা একাধিক ব্যক্তি থাকবেন। বহি:স্থ ব্যক্তি আইন বিশেষজ্ঞ হওয়া বাঞ্ছনীয়। এই আদালত অভিযোগ তদন্ত করবার জন্য প্রয়োজনীয় শুনানী, তথ্য সংগ্রহ, প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পর্যায়ের দলিলপত্র পর্যালোচনার ক্ষমতার অধিকারী হবে। তাদের কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিস চাহিবামাত্র সকল সহযোগিতা প্রদানে বাধ্য থাকবে। আদালত তদন্ত পরিচালনায় অভিযোগকারী/দের পরিচয় গোপন রাখবেন। প্রত্যক্ষ সাক্ষ্যপ্রদানে কেউ সমস্যা বোধ করলে পরিচয় গোপন রেখে বা পরোক্ষভাবে যাতে কেউ তথ্য সরবরাহ করতে পারে তার ব্যবস্থা রাখতে হবে। আদালত সর্বোচ্চ তিনমাসের মধ্যে তদন্ত কাজ শেষ করে তাদের রিপোর্ট এবং অপরাধীর শাস্তির নির্দিষ্ট সুপারিশ সিন্ডিকেটকে প্রদান করবে।
• শাস্তি
যৌন নিপীড়ন আদালত-এর সুপারিশ অনুযায়ী সিন্ডিকেট সর্বোচ্চ এক মাসের মধ্যে অপরাধীর শাস্তি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত প্রদান করবেন। অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী যৌন হয়রানি সৃষ্টিকারী বা নিপীড়ক কিংবা মিথ্যা অভিযোগকারীদের কমপক্ষে নিম্নোক্ত শাস্তি দেয়া যেতে পারে।
ক. মৌখিক সতর্কীকরণ
খ. লিখিত সতর্কীকরণ
গ. লিখিত সতর্কীকরণ ও তা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সর্বত্র প্রচার
ঘ. এক বছরের জন্য বহিষ্কার ও প্রচার
ঙ. দুই বছরের জন্য বহিষ্কার ও প্রচার
চ. চিরতরে বহিষ্কার ও প্রচার
ছ. প্রচারসহ চিরতরে বহিষ্কার ও শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে প্রাপ্ত সনদপত্র বাতিল
জ. চিরতরে বহিষ্কার, শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে প্রাপ্ত সনদপত্র বাতিল এবং সকল শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানে এ বিষয়ক তথ্য সরবরাহ। কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য, অন্যান্য সকল প্রতিষ্ঠানে
অবহিত করা।
ঝ. চিরতরে বহিষ্কার, শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে প্রাপ্ত সনদপত্র বাতিল, সকল শিক্ষা ও কর্ম
প্রতিষ্ঠানে এ বিষয়ক তথ্য সরবরাহ এবং রাষ্ট্রীয় আইনের অধীনে অধিকতর শাস্তি প্রদানের জন্য পুলিশের কাছে হস্তান্তর। কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য চাকুরিচু্যত করা, অন্যান্য সকল প্রতিষ্ঠানে অবহিত করা এবং রাষ্ট্রীয় আইনের অধীনে অধিকতর শাস্তি প্রদানের জন্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কাছে হস্তান্তর।

মিথ্যা অভিযোগ
যদি প্রমাণিত হয় যে, অভিযোগ ভিত্তিহীন কিংবা কোন এক বা একাধিক ব্যক্তিকে হেয় বা হেনস্থা করবার জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে সাজানো অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে তাহলে অভিযোগকারী বা অভিযোগকারীদেরই, যৌন নিপীড়কের জন্য প্রযোজ্য, বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আদালত বিষয়টি নিয়ে যথাযথ তদন্ত করে প্রযোজ্য শাস্তির সুপারিশ করে সিন্ডিকেট-এর কাছে রিপোর্ট জমা দেবে।

শিক্ষা/পরামর্শ/জনমত গঠন
যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন বন্ধের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক নীতিমালার অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল হল, অফিস ও বিভাগে এই নীতিমালার ব্যাপক প্রচার করতে হবে। সংবিধানের ধারা অনুযায়ী সকলের মতপ্রকাশ, চলাফেরা, পড়াশোনা ও কাজের নিশ্চয়তা বিধানের জন্যও যথায়থ শিক্ষা, পরামর্শ ও জনমত গঠনের প্রক্রিয়া থাকতে হবে। এসবের পক্ষে, সহমর্মী, পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল একটি পরিবেশ তৈরির জন্য সার্বিক শিক্ষা, প্রচার ও জনমত সংগঠনের কাজকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।

সুমন চৌধুরী এর ছবি
সুমন চৌধুরী এর ছবি

হাসিব এইটারে আলাদা পোস্ট হিসাবে দিতে পারো।



অজ্ঞাতবাস

হাসিব এর ছবি

হাড্ডির এক কোনায় এই নীতিমালার খসড়াটা পৈড়া আছিলো । এই পোস্টটা দেইখা ইউনিকোডিত কৈরা ফেললাম ।
এই খসড়া নীতিমালাটা বানানো হৈছিলো তখন । আমি যদ্দুর জানি এই খসড়াটা কর্তৃপক্ষ মাইনা নেয় নাই । ফারুক ওয়াসিফ হয়তো এই প্রস্তাবিত নীতিমালার শেষ পরিণতি নিয়ে কিছু আলোকপাত করতে পারবেন ।

পুনশ্চ: বিশাল টেক্সট পেস্ট করায় কেউ বিরক্ত হৈলে ক্ষমাপ্রার্থী । আমি নীতিমালাটা এখানে পেস্ট করলাম সুমন যে দলিলটা লিখতেছে সেইটার একটা সংযুক্তি হিসেবে ।

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

হাসিব, ঠিক এ মুহূর্তে জাহাঙ্গীরনগরের শিক্ষার্থীরা পঞ্চম বা সপ্তম যৌন নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলন করছে। নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক সানির হ্যারাসমেন্টের প্রতিবাদে। এর আগে তা ছিল শিক্ষক মোস্তফা, তানভীরের বিরুদ্ধে। তার আগে আনিস, বরগত গং-য়ের ক্যাম্পাস দখল,তার আগে মানিক।
জাবির শিক্ষক সমিতিও যৌন নিপীড়ন বিরোধী নীতিমালার খসড়াটা গ্রহণ করেছে, সাবেক ভিসিও বলেছে, ''আমরা একমত, কিন্তু বোঝেন তো পরিস্থিতি যা, তাতে একটা দেরি হচ্ছে।''
এভাবে টালবাহানার মধ্যে দিয়ে গড়াচ্ছে সময় ও সংবাদ।
হাসিব আপনি অনিয়মিত কেন?

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

হাসিব এর ছবি

মানসিক অশান্তিতে আছি একটু । নিজেরে একটু সময় দিতে হবে । লেখায় ও মন্তব্যে এইজন্যই অনিয়মিত । পাঠে নিয়মিতই আছি ।

ভালো কথা, বর্তমান ছাত্র রাজনীতির গতিপ্রকৃতি জানতে ইচ্ছুক । কাদের কাদের মোর্চা কাজ করছে এখন ? নতুন নতুন অনেক নাম দেখি । এই ঐক্যগুলোর/দলগুলোর পেছনে কারা আছে ? একটা পোস্ট দেয়া কি সম্ভব ?

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এই আন্দোলনে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহনকারী এবং নেতৃস্থানীয়রা যেহেতু এখানে বিরাজ করতেছেন... তাহলে আপনারা জোড়াতালি দিয়ে এর একটা পূর্ণাঙ্গ রূপ দাঁড় করায়ে ফেলতে পারেন। এই আন্দোলনটারে বাংলাদেশে স্বাধীনতা পরবর্তী ছাত্র আন্দোলনগুলার অন্যতম মনে হয় আমার। দশ বছর হইলেও তাজা আছে এখনও... পূর্ণাঙ্গ একটা ইতিহাস তৈরি করে ফেললে কিন্তু ভালোই হয়... অন্তত একটা ইবই হোক...
দুইয়োধিক কিস্তি চলতেই পারে মনে হয়।

এই কথাটা হয়তো আপনাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ঠেকবো না... কারন আপনারা কাছ থেকা দেখছেন... কিন্তু আমরা তখন খালি পত্র পত্রিকা পইড়াই জানছি... আর বাংলাদেশে ধর্ষন নামাঙ্কিত যে কোনও কিছু একটা থাকলে তাই নিয়াই এক ধরনের বিকৃতি হয়... পত্রিকাগুলাও করে... আমজনতা তাতে আরো রঙ চড়ায়...

রঙহীন একটা চিত্র দেখনের ইচ্ছাটুকু জানাইলাম আরকি...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

দশ বছর হয়া গেলো কেমনে কেমনে। এই নিউজ যখন বাইর হয়, তখন আমি মাত্র পাশ কইরা চাকরিতে ঢুকছি। সকালে পেপার পড়ার সময় দেখতাম জাবিতে আন্দোলন। দেখতাম গ্রুপের নাম - কিলার গ্রুপ, রেপিস্ট গ্রুপ।

একটা জিনিস ঐবার আমার চোখ খুইলা দিছিল। তখন আ-লীগ গভমেন্টে। তাগো একটা ছাত্রনেতা এমন জঘন্য অপরাধ করার পরেও কোন বিচার হইলো না। পোলা নাকি ইন্ডিয়া পালায় গেছিল শুনছিলাম। আমি তখন পেপার বিছরাইতাম। আমগো যে এত এত আঁতেল, প্রগতিশীল পাবলিক, "স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি" না কি জানি কয় - আমি খালি খুঁজতাম এরা এই অপরাধের শাস্তি চাইয়া কোন শোরগোল করছে কিনা। কোন বিবৃতি মিটিং মিছিল অনশন করছে কিনা নূর, রামেন্দু, সিরাজুল জাতীয় প্রফেশনাল মিছিল-বিবৃতি-অনশন-ওয়ালারা। সুফিয়া কামাল তখনও জিন্দা, আমি খুঁজতাম আমগো পয়লা নাম্বার ফেমিনিস্ট আইকন কোন কিছু কইছে কিনা ছাত্রলীগের ক্যাডারের বিচার চাইয়া। এতগুলা মাইয়ার ইজ্জত যে লুটলো, কেউ তো একটা কিছু কইবো?

কিন্তু আমার যদ্দূর মনে পড়ে ওগো থেকা কিছু দেখি নাই, কিছু পড়িও নাই। হয়তো আমার দেখায় ভূল হৈছিলো - কেউ ভিন্ন জানলে আমার ভূল শুধরায় দিয়েন। আমি তখন ভাবতাম যে আইজকা আওয়ামী লীগ পাওয়ারে বইলা একটা আওয়ামী-পন্থী লোকও এত বড় একটা অনাচারের বিরুদ্ধে জোরেশোরে কোন রা-শব্দ করলো না। এইগুলা তাইলে কেমুন আঁতেল, আর কেমুন বুদ্ধিজীবি? এগোই কি 'জাতির বিবেক' কয়?

সেই বেলায় 'জ্ঞানপাপী' শব্দটার মানে বুঝছিলাম। এইটাও বুঝছিলাম যে আইজকা এই মানিক যদি কোন গুলশানের বড়লোকের মাইয়া বা এমপি-মিনিস্টারের মাইয়ার ইজ্জত লইয়া লুটাপুটি খেলতো, তাইলে ঐ শুয়োরের বাচ্চারে ধইরা হয় লুলা বানায় ফালাইতো নাইলে চৈদ্দ শিকের ভিতরে ঢুকাইতো।

কিন্তু রেপ তো করছে সাধারণ মাইনষের মাইয়ারে। এমপির মাইয়া আর ফকিন্নির মাইয়ার ইজ্জতের মইধ্যে যে অনেক তফাত আছে, ঐ বেলায় শিখছিলাম।

তয় ওরপরে আর ঐ আঁতেল, বুদ্ধিজীবিগো কোন কথায় কোন ভ্যালু আছে বইলা বিশ্বাস করি নাই। জাতির বিবেক না কোন বাল।
------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

হাসিব এর ছবি

১.
সিরাজুল বলতে কাকে বুঝালেন ? প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ? তাকে প্রফেশনাল মিছিল-বিবৃতি-অনশন-ওয়ালাদের দলে ফেললেন দেখে আশ্চর্য হলাম । ঢাবিতে তাকে সব আন্দোলনে আমাদের পাশেই মিছিলে দেখতাম মনে পড়ে ।

২.
সুফিয়া কামাল ফেমিনিস্ট নেত্রী ছিলেন ?! এই তথ্যটাও নতুন ।

৩.
মন্তব্যের মূল সুরে ভিন্নমত নেই ।

সবজান্তা এর ছবি

আমিও কিছুটা সহমত। প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ( ইংরেজীর অধ্যাপক, তাই না ? ) কে আমি তেমন তকমা লাগানো সুশীল বলে জানতাম না, বরং অনেক বেশি আসল কাজের লোক বলেই শুনেছি।

এ ব্যাপারে কেউ কিছু জানলে জানায়েন।


অলমিতি বিস্তারেণ

সুমন চৌধুরী এর ছবি

ইন্ডিয়া না...মানিক মনে হয় ইটালী গেছিল..কারে জানি একটা চিঠিও লিখছিল ঐখান থিকা।
বাকি কমেন্টে (বিপ্লব)



ঈশ্বরাসিদ্ধে:

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

সেসময় আমরা জাতীয় স্তরের কোনো বুদ্ধিজীবীকেই পাইনি আনু, সিরাজ, উমর ছাড়া। পরে মামুনুর রশীদসহ আরো কয়েকজনকে পেয়েছি।
প্রসঙ্গ যখন উঠলোই, তখন বলতে ইচ্ছে করছে, আজকে ছফা ও ইলিয়াস বেঁচে থাকলে এই দুজনেই অনেকের মেরুদণ্ডের নমনীয়তাকে ধমকের ওপর সোজা রাখতে পারতেন।

কিন্তু সরাসরি আমাদের বিরুদ্ধে লিখেছিলেন প্রয়াত ওয়াহিদুল হক ও সন্তোষ গুপ্ত। তাঁরা এটাকে আওয়ামী সরকারকে বিব্রত করার চক্রান্ত ধরে নিয়েছিলেন। যেভাবে আওয়ামীপন্থিদের অনেকেই সমালোচনাকে ষড়যন্ত্র বলে বুদ্ধি ও চেতনার পরিশ্রম থেকে রেয়াত নেন।
সুবিনয় ভেতর থেকে এসব দেখেননি সম্ভবত, কিন্তু ওই একটি ঘটনাতেই উনি সঠিকভাবেই বুঝতে পেরেছিলেন যে, এই বুদ্ধিজীবীদের বিরাট অংশই কেবল মেকিই নয় ভড়ং।

প্রত্যেকেই তো সীমাবদ্ধ। আর বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী মাত্রই সীমাবদ্ধ, হয় অপরের কাছে নয়তো নিজের কাছে। এদের মধ্যে সিরাজ স্যারের সীমাবদ্ধতা আলোচনা করা যেত, যদি তার মাপে তাঁর কাছাকাছি কেউ থাকতো। খেয়াল করবেন, আমি কিন্তু হুমায়ুন আজাদকে এ তালিকায় রাখতে চাই না। তিনি অনন্য কিন্তু আদর্শ নন আমার কাছে। মনে রাখতে অনুরোধ করি, তাঁর ওপর হামলার পরে আওয়ামী বা ইন্টেলুকচুয়ালরা নয়, বিরাট ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগের গোড়ায় আমরা ছিলাম।

বদরূদ্দীন উমর বা আনু মুহাম্মদকে এ পদে রাখলাম না, কারণ তাঁরা কেবল ব্যক্তি নন, কাউন্টার-প্রতিষ্ঠান ও আদর্শের প্রতিভূ।
যাই হোক সেসময় ভেতরে বাহিরে এমনকি বামপন্থিদের ভেতরেওআমাদের বোঝাতে হচ্ছিল যে, নারীর ওপর যৌন আক্রমণ বা অবমাননা, সাংস্কৃতিক বা নৈতিক প্রশ্ন নয়। তাতে নারীর আরো অবমাননাই হয়। এটা একটা ক্রিমিনাল এবং রাজনৈতিক অপরাধ। ক্রিমিনাল নিপীড়ন অর্থে, রাজনৈতিক পুরুষালি সন্ত্রাস অর্থে। দ্বিতীয়ত, এটাও এক বিরাট সামাজিক-রাজনৈতিক ইস্যু। তৃতীয়ত, প্রশ্নটা কেবল নারীর নয় এটা পুরুষেরও সমস্যা। নারী এখানে 'সম্ভ্রম' হারায় না, কারণ সম্ভ্রম কেউ কেড়ে নিতে পারে না, যদি না কেউ নিজে নিজে না হারায়। আক্রান্ত নারী সেখানে হারায় তার সমগ্র শরীর-মনের নিরাপত্তা, স্বাভাবিকতা ও অটুট মর্যাদা।

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

২ সেপ্টেম্বর এঞ্জিও ঘরানার কিছু আঁতেল, সাথে শামসুর রাহমান, আসাদুজ্জামান নূররাও ছিলেন, আহ্লাদি কথাবার্তা বইলা গেছিলেন। ফিডার দিয়া ছাগলের দুধ খাওয়ার মতো।

ওয়াহিদুল হক/সন্তোষ গুপ্তদের আমি একটু অন্য কাতারে ফেলব, কারণ তারা আওয়ামী তোষন কইরা কিছু কামাইতে পারেন নাই। নিতান্তই নিজেদের ভুল রাজনৈতিক বিশ্বাসের জায়গা থিকা আমৃত্যু আওয়ামী লীগের মতো প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর গুণ গাইয়া গেছেন। তাঁদের দুইজনেরই আবার অনেক ইউনিক ভালো কাজ আছে। সেগুলি তাঁরা নি:স্বার্থভাবে করছেন। তার জন্য প্রাপ্য শ্রদ্ধা তাঁরা পাবেন। কিন্তু রাজনীতি এমনই নিষ্ঠুর বিষয় যে রাজনৈতিক অপরাধ জনগণ শেষ পর্যন্ত ক্ষমা করে না। সে যেই করুক না কেন।



ঈশ্বরাসিদ্ধে:

সৌরভ এর ছবি

পড়ছি।
রাষ্ট্রের শাসক নিজেই যখন ধর্ষকদের সমর্থকে পরিণত হয়, সেই সময়ের গল্প।


আহ ঈশ্বর, আমাদের ক্ষোভ কি তোমাকে স্পর্শ করে?


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍হায় রে, কতো কিছু জানা ছিলো না আমার!

পরের পর্বে যাচ্ছি।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর?

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।