এখন অস্থির সময়

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি
লিখেছেন সৈয়দ আখতারুজ্জামান (তারিখ: বুধ, ১১/০৬/২০০৮ - ১০:৫১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আজকাল অধিকাংশ রাত কাটে নিদ্রাহীন
পক্ষাঘাতগ্রস্ত সিংহের মতো শুয়ে থাকি
যৌবনের সিংহময় স্মৃতিগুলো হুংকার দিয়ে ওঠে তন্দ্রা কাঁপিয়ে
আমি শূন্যে হাত ছুঁড়ে তাড়া করি অলীক মাছিদের
আর উদ্ভট সব স্বপ্নের ভেতর দেখি -
বাকশক্তিহীন সেই পশুরাজ জীবনের ভারে ক্রমশ কুঁজো হতে হতে
ডুবে যাচ্ছে মাটির ফাটলে

আজকাল অধিকাংশ রাত কাটে অতীতের পাথুরে দেয়ালে কান পেতে
গৌরবময় বর্ণমালার গুঞ্জন শুনতে পাওয়ার আশঙ্কায়
স্নায়ুগুলো টান টান হয়ে থাকে
টের পাই অস্বস্তির ছারপোকা বেড়ে গেছে বিছানায়, ঘুম আসে না
হাঁটু জল পানি দেখি ঘরের ভেতর
দেখি ঢোঁরা সাপ পেঁচিয়ে ধরেছে খাটের পায়া
মাথার ওপর ছাদ নেই - আকাশটা যেন তোবড়ানো, ভিখিরির থালা
কোঁকিয়ে উঠে পাশ ফিরে শুই, অজান্তে হাত বাড়াই, কোথাও নেই কেউ
বুঝি আমাকে নিয়ে ডুব-খেলায় মেতেছে দুঃস্বপ্নেরা
এ খেলা শেষ হবে কবে? এ খেলার শেষ কি নেই?

মৃত্যু-হিম ঠান্ডা তোষকটা যেন চোরাবালি মনে হতে থাকে
সময়ের কানে কানে ফিসফিস করে কথা বলে বিপর্যস্ত ইন্দ্রিয়গুলো
আমি সে কথার ভাষা জানি না। তবু বুঝে ফেলি -
অন্ধকারের মধ্যেও বেড়ে যাচ্ছে আরো অন্ধকার
নিস্তব্ধতার বুকের ভেতর জমাট বাঁধছে গাঢ় নিস্তব্ধতা
তবে কি এই সেই অস্থির সময়!
তবে কি এই সেই মুসার ওপর তাওরাত নাজিল হওয়ার পূর্বক্ষণ!
তবে কি এই সেই জিব্রাইল আবির্ভূত হওয়ার আগে হেরা পর্বতের গুহার আবহ!
তবে কি এই সেই নিয়তির স্রষ্টা-দর্শন!

নিয়তির আগ্রাসী হা টের পাই শিয়রের কাছে
বাড়িয়ে দিয়েছে তার লোমশ লম্বা হাত এই হৃৎপিন্ডের দিকে
ঢুকিয়ে দিয়েছে তার বিয়াক্ত নখর এই চোখের ভেতর
আর আমি অন্ধ মায়া হরিণের তৃষ্ণা বুকে নিয়ে রাতভর
অরণ্যের ভেতর লাফিয়ে ছুটছি ঝর্ণা জলের খোঁজে
এ ছোটার শেষ কি নেই?
এ তৃষ্ণা কি আমৃত্যু ফিরবে তাড়া করে?


মন্তব্য

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

আরেকটি সৈয়দ আখতারুজ্জামানীয় কবিতা! হাসি
এত সুন্দর সুন্দর সব কথা ... পড়লেই মনটা কেমন যেন করে। কিছু লাইনে নিজের সাথে মিল পাই, কিছু লাইনে পরিচিত কারো। সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে এ যেন খুব আপন কারো স্বগোতক্তি! আপনার লেখা আরো গতিময় হোক, এই প্রত্যাশায় ...

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ, অতন্দ্র প্রহরী। আসলে এখন সময়টাই যেন কেমন অস্থির, অন্য রকম। ভালো লাগছে না কোনোকিছুতেই। খুব বেশি ভালো লাগার মতো কিছু ঘটছেও না আশেপাশে।

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

কবি, কবিতা দীর্ঘতর হচ্ছে। তার মানে ক্লান্তি আসছে খুব শীঘ্রই। সাধু সাবধান! রাশ টেনে ধরতে হবে এখনই। এখনই।
কবিতার আকার সীমাবদ্ধ রাখাটাও কিন্তু আরেকটি অলঙ্কার।
______________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

কবিতার আকার সীমাবদ্ধ রাখাটাও কিন্তু আরেকটি অলঙ্কার।
অতি খাঁটি কথা।

অতিথি লেখক এর ছবি

অসম্ভব সুন্দর একটা কবিতা!
আপনি ঈর্ষনীয়ভাবে এর চিত্রকল্প এঁকেছেন। এ যে আমারই কথা। কত বার মনে মনে ভেবেছি। কত রাত এমন যন্ত্রনায় নির্ঘুম কাটিয়েছি। কিন্তু আপনি আমার সেই অব্যক্ত অনুভূতির ভাষা দিলেন। ভিখিরর তোবড়ানো থালার মতো আমার ভেতরটাও খাঁ খাঁ করছে। পাঁচ তারা দেয়ার ক্ষমতা নাই। তবে অন্তর থেকে আকাশের সমস্ত তারা এই কবিতার জন্য নির্দ্বিধায় দিয়ে দিলাম।

পরশ পাথর

কীর্তিনাশা এর ছবি

বরাবরের মতো সুন্দর। তবে দোস্ত এত মন খারাপ করা কবিতা লিখিস ক্যান? সকালে এরকম কবিতা পড়লেই মন খারাপ হয়ে যায়। আমি লিখতে বারন করছি না। তবে মাঝে মাঝে একটু অন্য স্বাদও চাই।

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

তাই? তবে তাই হোক!

পুতুল এর ছবি

"এ তৃষ্ণা কি আমৃত্যু ফিরবে তাড়া করে?"
আমারতো তাই মনে হয়।

সময়ের পালে হাওয়া লাগিয়ে অনেকেই অনু-পরমানু গল্প লিখে চলেছে। পরমানুর চেয়ে ছোট জিনিসটি যেন কী? মনে পড়ছে না বা এখনো সঙ্গা তৈরী হয়নি। কিন্তু পরমানুর চেয়ে ছোট সাইজের গল্প কোবতে লেখা শুরু হয়ে গেছে।

আমার কাছে একেবারেই/নিতান্তই সাধারণ পাঠক হিসাবে কবিতাটি অপ্রয়োজনীয ভাবে লম্বা মনে হয়নি।

**********************
কাঁশ বনের বাঘ

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

খাস দিলে কই, মনডায় বড় শান্তি পাইলাম।

শেখ জলিল এর ছবি

আমি অন্ধ মায়া হরিণের তৃষ্ণা বুকে নিয়ে রাতভর
অরণ্যের ভেতর লাফিয়ে ছুটছি ঝর্ণা জলের খোঁজে
...কবির এ তৃষ্ণা তো মিটবার নয়...

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।