অনন্ত সময় ধরে অন্ধ ও বধির

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি
লিখেছেন সৈয়দ আখতারুজ্জামান (তারিখ: রবি, ১৫/০৬/২০০৮ - ৫:৩৪অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

(সুদীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর কবিতা না লেখার পর প্রথম লেখা কবিতা)

বহুদিন মাথার ওপরে ছাদ
ছাদের ওপর আকাশ অন্ধকার
বহুদিন পূর্ণিমার চাঁদ দেখা হয়নি, অমাবস্যাও না
বহুদিন এই পা স্পর্শ করেনি মাটি
এই হাত ছোঁয়নি কোনো পাতার শরীর
বহুদিন নদীতে জোয়ার আসেনি
নৌকাগুলো বহুদিন মুখ থুবড়ে আটকে আছে চরে
বহুদিন গাছে ফুল ফোটেনি
একটা সবুজ পাতাও জন্মেনি কোনো ডালে
বহুদিন বাড়ির পুকুরে একটা পুঁটিও সাঁতার কাটেনি
দশদিক অন্ধকার করে কতকাল বৃষ্টি আসেনি
কতকাল এ দেহ ভেজে নাই বর্ষার জলে
কতদিন কতদিন কারো কোনো সাড়া শব্দ নেই
দরজার কড়া নাড়েনি নুলো ভিখিরিও
বহুদিন গাজী স্যারের কথা মনে পড়েনি
মনে পড়েনি পাড়াগাঁয়ের ছেলেবেলার কোনো মুখ
বহুদিন মনে পড়েনি আমাদের বাড়ির পাশের নদীটাকে
কিংবা রতন মাঝির ছই-তোলা নৌকার লম্বা বাঁশের লগি
অথবা পথ চলতে চলতে যাদের হাসির কাছে
ঋণী হয়ে আছি - একবার বিদ্যুত ঝলকের মতোও
তাদের মুখগুলো মনে পড়েনি -
সকাল-সন্ধ্যা যারা ছিলো প্রাণের দোসর -
তাদের কে কোথায় কিভাবে ছিটকে সরে গেছে স্ফুলিঙ্গের মতো
কতকাল কতকাল তাদের চিরউদ্দীপ্ত মুখ
আর চঞ্চল চোখের পলক আমার মনে পড়েনি

মনে হয় অনন্ত সময় ধরে অন্ধ ও বধির হয়ে আছি।


মন্তব্য

স্নিগ্ধা এর ছবি

আখ্‌তার - খুব ভালো ! সত্যি ! যদ্দূর মনে পড়ে আপনার প্রথম কবিতা (সচলায়তনে) ছিলো আপনার প্রেমিকা --> স্ত্রীকে নিয়ে লেখা। এই কবিতাটাও সেটার মত সুন্দর।

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

ধন্যবাদ স্নিগ্ধাদি। জ্বি, ঠিকই বলেছেন। তবে ঐ কবিতাটা আমার অনেক অনেক প্রিয় একটা কবিতা।

কীর্তিনাশা এর ছবি

ওরে ওরে ওরে !
কবিতার আবেগে কাঁপছি থরো-থরে!

দারুন হয়েছে!

-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

আমি যাই কই!

তারেক এর ছবি

আপনার সবগুলো কবিতাই ভীষণ ভালো লাগছে। কেমন একটা হু হু বিষণ্ণ সুর বুক খামছে ধরে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

সময়টাও যা যাচ্ছে না - বলার মতো নয়!

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

কই পালাই! মাঝে মাঝে অবশ্য হাসি আনন্দেরও হয়, হয় না? তবে কদাচিত - এটা সত্যি।

বিপ্রতীপ এর ছবি

ছুঁয়ে গেলো...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
বিপ্রতীপ ব্লগ | ফেসবুক | আমাদের প্রযুক্তি

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

ধন্যবাদ বিপ্রতীক ভাই... আপনার লেখা কই ভাই?

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

মনে হয় অনন্ত সময় ধরে অন্ধ ও বধির হয়ে আছি।

আপনার প্রত্যেকটা কবিতা এত্ত সুন্দর আর হৃদয়ছোঁয়া হয়, যে কি বলব তা! আগেও বলেছি, কবিতা আমি ঠিক বুঝি না, কিন্তু আপনার কবিতা পেলে সঙ্গে সঙ্গে পড়ে ফেলি। আর কেন যেন মনে হয় আপনার কবিতা আমার জন্য তেমন একটা দুর্বোধ্য নয়! হাসি

খুব ভাল লাগল। এরকম আরো অনেক অনেক কবিতা আপনি আমাদের নিয়মিত উপহার দিয়ে যান, এই প্রত্যাশা রইল।

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

আহা! আমি আরো কেনো ভালো লিখতে পারি না! আপনার এমন হৃদয় কাড়া মন্তব্যের যোগ্য লেখা ভবিষ্যতেও লিখতে পারবো তো!

মুশফিকা মুমু এর ছবি

আপনার পাঠক একজন কমেনি খাইছে
ভাল লাগল, দেশের কথা মনে পড়ল মন খারাপ
-------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

জেনে খুব খুশি হলাম। অনেক ধন্যবাদ।

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

আমি আর কি কহিবো!
বিভিন্ন পত্রিকার সাময়িকীতে বড় কবিদের কবিতা পড়ে বুঝতে পারি না। কেমন যেন দায় সারা। নিষ্প্রাণ। কেবল এখানেই কিছুটা- আপনি আরো ক'জন- কবিতায় প্রাণ প্রতিষ্ঠায় গলদঘর্ম। তবুও আশা জাগে। প্রেরণা পাই। কাব্যদেবীর নূপূর ঝঙ্কার শ্রুতিতে দূরাগত হলেও চলমান।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

যাহা কহিলেন তাহা মর্মে আসিয়া সুবাস ছড়াইয়া দিয়া গেলো। আপনিও যে আমাদের সহযাত্রী কবি!

নুশেরা তাজরীন এর ছবি

অতন্দ্র প্রহরী আর জুলিয়ান সিদ্দিকীর কথায় ডিটো দিলাম। একইসঙ্গে প্রতি পো্স্টে একটা নতুন ও একটা আগে লেখা- এরকম জোড়ায় জোড়ায় কবিতার দাবী জানালাম।

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

কোনো এক অদ্ভূত কারণে কোনো পুরানো লেখাই আমার আর ভালো লাগে না। নির্দ্বিধায় পৃথিবীর এ যাবতকালের জঘন্যতম লেখা বলে মনেহয়। এ রকম অসংখ্য লেখা (১৯৯৬ সালের আগ পর্যন্ত সমস্ত লেখা) আমি ছিঁড়ে কুটিকুটি করে ফেলে দিয়েছি। তাই আমার কবিতার সংখ্যা খুব অল্প।
ইদানিংকালের যা কিছু আছে তাই।
আর কিছু নাই।

শেখ জলিল এর ছবি

বহুদিন পর সচলে লিখে লেখনীর অন্ধ ও বধিরতা দেখছি সত্যিই কেটেছে। দারুণ হচ্ছে নতুন লেখাও..চলুক আরও..

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

কেটেছে নাকি? অনেক ধন্যবাদ জলিল ভাই। তবে হৃদয়ের সলিল ভেজানো আপনার পদ্যমালা কিন্তু বেশ কমিয়ে দিয়েছেন বলে মনে হচ্ছে।

স্পর্শ এর ছবি

দারুণ ভাই!! সত্যিই দারুণ !!!
....................................................................................
অতঃপর ফুটে যাবার ঠিক আগে হীরক খন্ডটা বুঝলো, সে আসলে ছিল একটা মামুলি বুদবুদ!


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

সৈয়দ আখতারুজ্জামান এর ছবি

ধন্যবাদ ভাই। লেখাটা যে আসলেই ভালো হয়েছে এ নিয়ে বেশ সন্দেহ ছিলো। এখন সন্দেহ দূর হয়েছে।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।