রবির বিদেশিনীর খোঁজে

তারেক অণু এর ছবি
লিখেছেন তারেক অণু (তারিখ: রবি, ৩০/০৯/২০১২ - ৬:২০পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

378156_10151167932125497_1473565211_n

আমি চিনি গো চিনি তোমারে, ওগো বিদেশিনী
তুমি থাকো সিন্ধুপারে, ওগো বিদেশিনী ।।

তোমায় দেখেছি শারদ প্রাতে, তোমায় দেখেছি মাধবী রাতে,
তোমায় দেখেছি হৃদি-মাঝারে, ওগো বিদেশিনী ।।

আমি আকাশে পাতিয়া কান, শুনেছি শুনেছি তোমারি গান,
আমি তোমারে সঁপেছি প্রাণ, ওগো বিদেশিনী ।

ভুবন ভ্রমিয়া শেষে, আমি এসেছি নূতন দেশে,
আমি অতিথি তোমারি দ্বারে, ওগো বিদেশিনী ।।

গানটা প্রথম শুনেছিলাম হয়ত শৈশবের কোন এক উজ্জলে শরতের সকালে, যখন বাংলার আকাশে পেঁজা তুলোর মত ভেসে যায়, পদ্মা পারের চিরল বাতাস এসে কাপিয়ে দেয় আমাদের বাড়ীর সুউচ্চ নারকেল গাছের পাতা, বাবা-মার ঘরের ক্যাসেট প্লেয়ার থেকে ভরাট কণ্ঠ ভেসে আসে নাম না জানা গায়কের, কেঁপে কেঁপে যেন কি এক আকুল আবেদন তিনি নিবেদন করে চলেছেন সেই বিদেশিনীর প্রতি। শুনলাম গানটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা, আমার সোনার বাংলার লেখক তিনিই। বসার ঘরের দেয়ালে ঝুলানো ছোট্টকাল থেকে দেখে আসা একদঙ্গল শুভ্র কেশ- গুম্ফ-শ্মশ্রু শোভিত যে মানুষটিকে দেখলে জগদীশ্বরের ঈশ্বরের কথা মনে পড়ত, সেই মানুষটিই রবি ঠাকুর। যার ছবি দেখে এক গৃহকর্মী মাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন উনি আমার দাদামশাই নাকি!

চারিদিকে এত মানুষ থাকতে কোথাকার কোন বিদেশিনী কে নিয়ে এমন আকুতিপূর্ণ, আবেগে মোড়া গান লিখতে গেলেন কেন তিনি? খুব পছন্দ হয়ে ছিল বোধ হয় ভিনদেশীকে!

সেই সময় যে কোন রকম খেলার জ্বরে আক্রান্ত, বাড়ীতে রাখা হত তিন-তিনটি খেলার পত্রিকা- ক্রীড়ালোক, ক্রীড়াজগত এবং খেলার ভুবন। তারই কোনটাতে একদিন দেখি এক ফিচারের শিরোনাম চিনি চিনি, ওগো বিদেশিনী! নিচে আর্জেন্টাইন টেনিস তারকা গ্যাব্রিয়েলা সাবাতিনির ছবি, কিছু তথ্য। সেখানেই প্রথম বারের মত পড়লাম সাবাতিনিরই দেশের বিখ্যাত কবি ভিত্তোরিয়া ওকাম্পোর নাম, ফিচারটিতে উল্লেখ ছিল সেই ভিত্তোরিয়াকে উদ্দেশ্য করেই রবি ঠাকুর আমি চিনি গো চিনি তোমারে গানটি লিখেছেন। যাচ্চলে, কোথায় বাংলা আর কোথায় আর্জেন্টিনা? সেখানের কবির সাথে বাংলা ভাষার সূর্যের দেখা হলই বা কি করে, কথাই বা হল কখন? উত্তর সহজ- রবি ঠাকুর আর্জেন্টিনা গিয়েছিলেন! উরেব্বাস, সেই সময়ে!

তা তো বটেই- সর্বকালের সেরা বাঙ্গালী পর্যটক মনে হয় ঐ চিরতরুণ মানুষটিই- ঘোড়ার গাড়ী আর জাহাজে চেপে ঘুরেছেন জাপান থেকে মেক্সিকো, ইরান থেকে আমেরিকা, রাশিয়া থেকে শুরু করে ইউরোপের কোথাও বাদ দেন নি, কাজেই আর্জেন্টিনাই বা বাকী থাকবে কেন! তা আবার ছিলেন সেখানে দীর্ঘ দুই মাস! তা কোথায় ছিলেন সেখানে? কোথায় আবার, যে বিদেশিনীর আমন্ত্রণে বুয়েন্স আইরেস গিয়েছিলেন তারই আতিথ্যে! তাই গেল জানুয়ারিতে ল্যাতিন আমেরিকা ভ্রমণের সময় যখন আর্জেন্টিনাতে অবস্থান করছিলাম তখন অন্যতম প্রধান গন্তব্য ছিল রবি ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো।

এখানে একটা কথা আগেই বলে নিই, ভিত্তোরিয়া ওকাম্পোর সাথে পরিচয় হবার ৩০ বছর আগেই রবীন্দ্রনাথ আমি চিনি গো চিনি তোমারে, ওগো বিদেশিনী গানটি রচনা করেছিলেন, কাজেই সেটি যে বিদেশিনীর স্মৃতি মনে করেই হোক না কেন, আমাদের এই ল্যাতিন কবির মুখশ্রী মনে করে রচিত নয়! পরবর্তীতে পূরবী কাব্যগ্রন্থটি রবীন্দ্রনাথ তার সেই ল্যাতিন গুণমুগ্ধ কবিকেই উৎসর্গ করেছিলেন, এমনকি তার একটি বাংলা নামও দিয়েছিলেন- বিজয়া। ধারণা করা হয় নিচের গানটি রবীন্দ্রনাথ বিজয়াকে মনে করেই লিখেছিলেন----

সুনীল সাগরের শ্যামল কিনারে
দেখেছি পথে যেতে তুলনাহীনারে॥
এ কথা কভু আর পারে না ঘুচিতে,
আছে সে নিখিলের মাধুরীরুচিতে।
এ কথা শিখানু যে আমার বীণারে,
গানেতে চিনালেম সে চির-চিনারে॥
সে কথা সুরে সুরে ছড়াব পিছনে
স্বপনফসলের বিছনে বিছনে।
মধুপগুঞ্জে সে লহরী তুলিবে,
কুকুমকুঞ্জে সে পবনে দুলিবে,
ঝরিবে শ্রাবণের বাদলসিচনে।
শরতে ক্ষীণ মেঘে ভাসিবে আকাশে
স্মরণবেদনার বরনে আঁকা সে।
চকিতে ক্ষণে ক্ষণে পাব যে তাহারে
ইমনে কেদারায় বেহাগে বাহারে॥

বুয়েন্স আইরেস শহরতলীর এক কোণে বসে সেদিনের বিকেলের পরিকল্পনা চলছে, সাথে পুরনো সাথী দুই মেক্সিকান ইসাইয়াস এবং হুয়ান, নতুন জোটা বন্ধু ব্রাজিলের তরুণ ম্যাথিয়াস এবং ফেসবুকে আমার অনেক দিনের পরিচিত পুরনো বন্ধু আর্জেন্টিনার মহিলা মারিয়া হোসে দ্য ফিগুরেইদো। মারিয়াকে অনেক আগে থেকেই পইপই করে বলে রেখেছি ওকাম্পো এবং রবির স্মৃতি বিজড়িত স্থানে যেতেই হবে। ভদ্রমহিলার শখ রক ক্লাইম্বিং করা, কিন্তু পেশায় গায়িকা। খুবই উচ্ছল এবং অ্যাডভেঞ্চারপ্রবন, আমার বয়সী একটা ছেলে আছে তার, কিন্তু ছেলের চেয়ে তারই যেন জীবন নিয়ে উৎসাহ অনেক বেশী, তাই চলে এসেছেন আমাদের তার শহর ঘুরিয়ে দেখাতে।

ভিত্তোরিয়া ওকাম্পোর বাসভবন বিখ্যাত ভিয়া ওকাম্পো ( Villa Ocampo) আজ ইউনেস্কোর অন্তর্গত জাদুঘর, শহরকেন্দ্র থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরের সান ইসিদ্রো মহল্লায় অবস্থিত। ট্রেনে চেপে যাওয়াটাই সহজ, কিন্তু যাতায়াতের দূরত্ব শুনে বাকী তিন তরুণ চুপসে চুপিসারে জানিয়ে দিল এই সময়টুকু তারা কোন ক্যাসিনো বা পানশালায় কাটাতে চায়, কি দরকার কবির বাড়ীতে যাবার, তা তিনি যখন চিরবিদায় নিয়েছেন অনেক আগেই! মানে মানে মারিয়াকে নিয়ে চটজলদি ট্রেনে চেপে সান ইসিদ্রা যাত্রা শুরু করতে হল, হাতে খুব বেশী সময় নেই। জাদুঘর বন্ধ হয়ে গেলে বিশাল কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে!

অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে মারিয়াও আগে কোনদিন ভিয়া ওকাম্পোতে যায় নি, বাড়ীর বেশী কাছে কিনা! তাই ষ্টেশনে নামার পর বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করে মূল গন্তব্যের দিকে এগোতে হল। মহল্লাটি বেশ, খুব নিরিবিলি, গাছে ছাওয়া বিশাল এলাকা নিয়ে স্থাপিত অভিজাত ভবনের ভরা, বোঝাই যাচ্ছে বেশ পয়সাওয়ালা লোকেদের এলাকা। এরপর সাইনবোর্ড থেকে ভিয়া ওকাম্পো খুঁজে বাহির করা যাও বা গেল, দরজায় পা দিতে দিতে বন্ধ হবার সময় হয়ে গেছে ততক্ষণে! টিকেট বিক্রেতা ক্লান্ত মুখে সৌজন্যের হাসি ঝুলিয়ে বললেন আজ আর কোন দর্শনার্থী জাদুঘর দর্শন করতে পারবে না!

398582_10151199683135497_409652540_n

কি কথা! এতক্ষণে অরিন্দম কহিলা বিষাদে! মারিয়া অবশ্য স্বভাবসিদ্ধ মিষ্টি কথায় তাদের মুহূর্তের মাঝেই ম্যানেজ করে ফেলল এই বলে যে বাংলাদেশ থেকে অতিথি এসেছে, রবি ঠাকুরের ভাষার লোক! যদি এতদূর এসে অন্তত ভিয়া ওকাম্পোর মূল ভবন আর বিখ্যাত বাগানটি দেখে যেতে না পারে তাহলে দেশের মুখ থাকে! দুই প্রহরী অবশ্য সৌজন্যে ত্রুটি করল না, হয়ত বাংলাদেশ নামটা জাদুর কাঠির মতই তাদের হৃদয়ে আলোড়ন তুলতে সক্ষম হয়েছিল, বলল- টিকেটের পয়সা দিতে হবে না, সব কিছু বন্ধ হতে এখনো মিনিট পনের বাকী, এর মাঝেই ভবনের চারপাশ আর বাগানটা ঘুরে এস, আর তোমার দেশের সেই কবি কিন্তু বাগানেই খুব সময় কাটাতেন!

419840_10151268219735497_1907156948_n

আর কি, মূল ফটক পেরোতেই ঘন সবুজের বন্যা, যেন চির হরিৎ বৃষ্টিঅরণ্য যার মাঝে ময় দানবের তৈরি লাল-খয়েরি এক চমৎকার ভবন। শুনলাম কবি ভিত্তোরিয়ার বাবা ম্যানুয়েল ওক্যাম্পো ১৮৯১ সালে সুদৃশ্য বাড়ীটি নির্মাণ করেছিলেন।

IMG_7630

এটি পরবর্তীতে হয়ে উঠেছিল কবি-সাহিত্যিকদের নিয়মিত আড্ডার স্থান। কেবল রবি ঠাকুরই নন, নানা সময়ে এখানে এসেছেন প্রিয় লেখক আলব্যেয়ার কামু, প্রিয় কবি ফেদেরিকো গার্সিয়া লোরকা, বিখ্যাত গ্রাহাম গ্রিন, আদ্রে মালরো, ইগর স্ট্রাভিনস্কি, লেখকদের লেখক খ্যাত হোসে লুই বোহের্স সহ অনেক পরিচিত মুখ,

IMG_7631

IMG_7621

এই বাগানেই হয়ত মেটে উঠতেন তারা নব সৃষ্টির আনন্দে, সাহিত্যের ঝঙ্কারের উম্মাদনায়। বিশাল সব মহীরুহ, এখানেই আমাদের রবি প্রত্যহ তার বিজয়াকে নিয়ে আলাপচারিতায় মগ্ন হতেন, লিখতেন কবিতা- এই একই আকাশের নিচে, যেখানে রবির প্রিয় নদী পদ্মার পারেরই একজন আজ দাড়িয়ে আছে।

IMG_7638

কি ছিল তাদের মধ্যকার সম্পর্ক, এই নিয়ে অনেক অনেক লেখা আছে, একাধিক বই রচনা হয়েছে, এমনকি আর্জেন্টিনায় একটি চলচ্চিত্র নির্মাণেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আগ্রহীরা কেতকী কুশারি ডাইসনের এই লেখাটি পড়ে দেখতে পারেন। শুধু জেনেছিলাম এই বাড়ীতেই রবির থাকার ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলেন ভিত্তোরিয়া, কিন্তু তার বাবা বেঁকে বসায় কাছেই এক বাড়ীতে রবির থাকার ব্যবস্থা করা হয়, যেখানে থেকে প্রায় প্রতিদিনই তিনি এখানে আসতেন বন্ধুর সাথে আলাপচারিতায় মেতে ওঠার জন্য।

IMG_7613

বারান্দায় একটি আরাম কেদারা শূন্য পড়ে আছে, সেটি কবি ভিত্তোরিয়া ব্যবহার করতেন।

IMG_7663

জাদুঘরের ভিতরে প্রবেশ না করতে পারায় সেখানে সংরক্ষিত ১২,০০০ বইয়ের সংগ্রহ এযাত্রা আর দেখা হল না, কিন্তু জানালা দিয়ে চোখে পড়ল ভিত্তোরিয়া ওকাম্পোর শ্রেষ্ঠ সাংস্কৃতিক কীর্তি- সাহিত্য পত্রিকা SUR, রবিকে নিয়ে লেখা একাধিক বইও চোখে পড়ল।

IMG_7659

বাড়ীর বারান্দায় একাধিক চেয়ার বেষ্টিত অবস্থায় টেবিল দেখে বেশ রোমাঞ্চ হল, এখানেই হয়ত চা-চক্রে বসতেন বাংলায় জন্ম নেওয়া বিশ্বমানব, যিনি বন্ধু খুঁজে পেয়েছিলেন দেশ ছাড়িয়ে মহাদেশে।

IMG_7625

গুনগুন করে একটু গলাও সেধে নিলাম ভুবন ভ্রমিয়া শেষের লাইনটুকু আনমনে গেয়ে। সাথের পেশাদার গায়িকা অবাক হয়ে বললেন- তুমি গান গাও দেখি? একেবারে পাহাড়ি ঝর্ণার মত গান! ( বিশ্বাস করুন- ঠিক এই কথাটিই বলেছিল), উত্তরে একটু গাম্ভীর্য নিলেই বললাম- গান গায় না এমন কোন বাঙ্গালী নেই।

IMG_7666

উদ্যানটি বিশাল, ১১,০০০ বর্গ মিটার আয়তনের! নিঃসন্দেহে কবির পায়চারীর জন্য উপযুক্ত জায়গা। বরাদ্দ পনের মিনিট পার হয়ে গেছে, আমরা গেট দিয়ে বের হয়ে আবার যাত্রা শুরু করলাম, না বুয়েন্স আইরেসের দিকে না, দিনের আসল গন্তব্যের দিকে।

IMG_7630

খবর পেয়েছি রবি ঠাকুর এখানে যে বাড়ীতে মূলত অবস্থান করেছিলেন তা জনসাধারণের জন্য উম্মুক্ত না, সেই বাড়ীর মালিক ইউরোপ নিবাসী বিধায় দরজায় কড়া নেড়েও লাভ নেই, কিন্তু বাড়ীটি যে রাস্তায় অবস্থিত, তার নামকরণ করা হয়েছে রবীন্দ্রনাথের নামেই। তাই আপাত অভিযান সেই রাস্তার নামের সাইনবোর্ডের খোঁজে।

মারিয়া এই মহল্লায় নতুন, সে চোখ মটকে বুদ্ধি দিল- কোন তরুণী দেখলে তুমি যেয়ে জিজ্ঞাসা করবে, কোন লোক দেখলে আমি যেয়ে জিজ্ঞাসা করব। হয়ত এভাবেই দ্রুত পাওয়া যেতে পারে। তিন-চারজনকে জিজ্ঞাসা করে সুবিধের হল না, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বা ট্যাগোর শুনলেই তারা বলে এত বড় নামের কোন রাস্তা নেই! ততক্ষণে জেদ চেপেছে ভীষণ- আলবৎ রাস্তা আছে, এই অঞ্চলেই আছে। সূর্য ডোবার আগ পর্যন্ত খুঁজে ঠিকই বাহির করে ফেলব সমস্ত গলি-উপগলি- তস্যগলি খুঁজে।

এই প্রতিজ্ঞা অবশ্য মিনিটে তিনেকের বেশী টিকল না, একটা রাস্তার নাম দেখলাম R. TAGORE ,

IMG_7675

বোঝা হয়ে গেল এটির সন্ধানেই আমরা ব্যস্ত, রবীন্দ্রনাথকে সংক্ষেপে R বানিয়ে রেখেছে, তাতেই যত বিপত্তি! কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা পেলাম সেই বাড়ীর যেখানে থাকতেন আমার মাতৃভাষার সবচেয়ে বড় শিল্পী। এককালে অজানা, অচেনা দেশে আজও সযত্নে বুকে রেখে লালন করে চলেছে তার একদা উপস্থিতির চিহ্ন। জয় হে বিশ্বমানব।

398151_10151175386095497_132873071_n

( এই পোস্টটি আমার আর্জেন্টিনার বিদেশিনী মেলিনা, হিমেনা এবং মিলাগ্রোসের জন্য।
Hola Rosas de Mendoza, Fue un tiempo precioso que teníamos. Todo lo que desea, nos reuniremos de nuevo pronto. saludos-- Amigo de Bengala )


মন্তব্য

ইফতেখার  এর ছবি

এক মগ কফি নিয়ে 'আমি চিনি গো চিনি' গান শুনতে শুনতে নিজের বাঙ্গালী স্বত্তা উপভোগ করলাম আপনার লেখা পড়ে।

তারেক অণু এর ছবি

যাই, আমিও কফির কাপ নিয়ে বসি!

খেয়া'দি এর ছবি

অণু, অসাধারণ!!!

তারেক অণু এর ছবি

অনেক আগেই তো লিখতে বলেছিলেন, আজকে সময় পেলাম

অতিথি লেখক এর ছবি

ভিত্তোরিয়া ওকাম্পোর নাম জানতাম না। পারলে মারিয়াকে সালাম জানায় দিয়েন। উনি না থাকলে ভিয়া ওকাম্পো ঘুরে দেখা হত না। অসাধারণ লেখা।
-রু

তারেক অণু এর ছবি

দিলাম সালাম!

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

যার ছবি দেখে এক গৃহপরিচারিকা মাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন উনি আমার দাদামশাই নাকি!

- এখানে 'গৃহপরিচারিকা' শব্দটিকে 'গৃহকর্মী' বা 'গার্হস্থ্যকর্মী' করে দিন।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

তারেক অণু এর ছবি

তথাস্ত দাদা!

অতিথি লেখক এর ছবি

হয়ত বাংলাদেশ নামটা জাদুর কাঠির মতই তাদের হৃদয়ে আলোড়ন তুলতে সক্ষম হয়েছিল, বলল- টিকেটের পয়সা দিতে হবে না, সব কিছু বন্ধ হতে এখনো মিনিট পনের বাকী, এর মাঝেই ভবনের চারপাশ আর বাগানটা ঘুরে এস, আর তোমার দেশের সেই কবি কিন্তু বাগানেই খুব সময় কাটাতেন!

আহা, মনটা স্নিগ্ধ হয়ে গেলো গো দাদা।

-অয়ন

তারেক অণু এর ছবি
নিরবতা এর ছবি

চলুক

তারেক অণু এর ছবি
যুমার এর ছবি

চলুক

তারেক অণু এর ছবি
আলোকিতা এর ছবি

যখন ক্লাস সেভেনে পড়ি,আমার রবি-প্রেমে খোঁটা দেবার জন্যে কেউ ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর নাম নিয়েছিল।সেই থেকে আজ পর্যন্ত এই মহিলার নাম শুনলেই মেজাজটা কেমন চিড়বিড়িয়ে উঠে!!ঝকঝকে ছবিগুলোও মেজাজটা ভাল করতে পারলো না !!!

তারেক অণু এর ছবি

উনার ছবি কিন্তু দিলাম না !

স্যাম এর ছবি

দারুন অণু দা আবারো------
অণুর ব্লগ - ভালতো হবেই - এ ধারণা অলরেডি পাকাপোক্ত য়ামার মনে- সেই ধারণার চেয়েও ভাল লেগেছে পুরো লেখাটি -
ভাল লিখতে লিখতে আপনার বিরক্ত লাগেনা? খাইছে

আচ্ছা ল্যাটিন আমেরিকায় একটা শর্ট ট্যুর এর জন্য মিনিমাম কতদিন এর পরিকল্পনা করা উচিত? বা ৪ সপ্তাহ সময়ে কতটুকু ঘোরা যাবে?

আপনার সুস্বাস্থ্য কামনা করি - বেশি করে যেন ঘুরতে পারেন আর আমাদের জন্য লিখতে পারেন ।

তারেক অণু এর ছবি

আমাদের ট্যুর ছিল মাত্র ৩ সপ্তাহের! অন্তত ১ মাসে নিয়ে যাওয়া উচিত, পেরুর জন্যই ১০ দিন।
দেখি পরের বার কয়েক মাস থাকার চেষ্টা করব।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

এতকালের মুগ্ধতার উপর রঙিন প্রলেপ পড়লো আজ। এতদিন ওকাম্পোর ঘরবাড়ির সব সাদাকালোতেই কল্পনা করতাম। হাসি

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

তারেক অণু এর ছবি

সাদাকালো করে দিব নাকি? খাইছে

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

দারুন! দারুন!! দারুন!!!

তারেক অণু এর ছবি
মন মাঝি এর ছবি

ওকাম্পোর সান্নিধ্য বাদ্দিলে রবিবুড়োর আর্জেন্টিনা ভ্রমণ কিন্তু সম্পূর্ণ মসৃন ছিল না। ওকাম্পোরই বন্ধু আরেক বিখ্যাত আর্জেন্টনিয়ান ও আপনার ভাষায় "লেখকদের লেখক" বলে খ্যাত হোসে লুই বোহের্স কিন্তু রবীন্দ্রনাথকে ভালই নাস্তানাবুদ করেছিলেন। তিনি চরম রবীন্দ্রবিরোধী ছিলেন এবং তাঁকে নিয়ে ব্যপক ব্যঙ্গবিদ্রুপ করতেন বলেই মনে হয়। আপনার লিঙ্কিত কেতকী কুশারি ডাইসনের লেখাটা থেকে একটা উদ্ধৃতি দিচ্ছি -

Jorge Luis Borges, the noted Argentine writer who belonged to the Sur circle, is well-known for his notorious joky comment that Tagore was ‘a hoaxer of good faith or, if you prefer, a Swedish invention’ (referring to the Nobel Prize).

বোর্হেস রবীন্দ্রনাথকে কোন মাপেরই লেখক বা কবি বলে মনে করতেন না, এবং রবীন্দ্রনাথের নোবেল-প্রাপ্তি তার কাছে অসহনীয় ছিল। তার মতে রবি ছিলেন নদী-ফুল-লতাপাতা নিয়ে অতি সস্তা, নিম্নমানের, প্যানপ্যানে (কর্নি ও কিচ) ও মূল্যহীণ ৩য় শ্রেণীর ফালতু পদ্য লেখক। এইরকম এক লোককে দেয়া ওকাম্পোর অমন উচ্ছসিত আতিথেয়তাও তার মোটেই পছন্দ হয়নি। মার্কিন ভ্রমণ লেখক পল থরোর সাথে এক সাক্ষাতে (খুব সম্ভবত ১৯৭০-এর দশকে) তিনি এইসব কথা বলেছিলেন, যা থরোর "দি প্যাটাগোনিয়ান এক্সপ্রেস' বইটাতে উল্লেখিত আছে। থরো রবীন্দ্রনাথের হয়ে সাফাই গাইতে গিয়ে অনুবাদের দূর্বলতার যুক্তি দিয়েছিলেন। এর জবাবে বোর্হেসের বক্তব্য ছিল, বাংলার মত একটা প্রিমিটিভ টাইপের রুডিমেন্টারি ভাষা স্প্যানিশ অনুবাদে আরও শক্তিশালীই হতে পারে কেবল, অনুবাদে কোন গুনাগুন হারানোর প্রশ্নই আসে না!

অনেক আগের পাঠস্মৃতি থেকে লিখছি, তাই একটু এদিক-ওদিক হওয়া অসম্ভব নয়। তবে মোটামুটি এরকমই ছিল তার বক্তব্য। রবীন্দ্রনাথের সাথে মনে হয় আর্জেন্টিনা ভ্রমণের সময় তার ব্যপক সাহিত্যিক ঝগড়াঝাটিও হয়েছিল সামনাসামনি।

ওকাম্পোর রবীন্দ্র-প্রেমের কাহিনি পড়লে তাই অবধারিত ভাবেই কেন জানি বোর্হেসের রবীন্দ্র-বিদ্বেষের কথা মনে পড়ে যায় আমার। আমার শুধু একটাই কৌতূহল চাড়া দেয় মাথায়, এটা কি বোর্হেসের নিছকই একটা শিল্পসাহিত্য সংক্রান্ত মত বা রুচিপার্থক্য ছিল - নাকি এর মধ্যে অন্য কোন রকম জেলাসি-টেলাসি লুকিয়ে ছিল? দেঁতো হাসি

****************************************

তারেক অণু এর ছবি

থরোর "দি প্যাটাগোনিয়ান এক্সপ্রেস পড়েছিলাম, প্রায় এমনই বোহের্স জানিয়েছিলেন আড্ডার সময়, সেই সাথে এও বলেছিলেন যদি রবি নোবেল পুরস্কার না পেতেন তাহলে হয়ত ভিত্তোরিয়া তার প্রতি এতটা উতলা হতেন না। কিন্তু তার অনেক আগের সাক্ষাৎকারে তিনিই আবার রবির লেখার উচ্চ প্রশংসা করেছিলেন। ব্যাপারটি আসলেই অদ্ভুত।

এই নিয়ে রাজু আলাউদ্দিনের একটা লেখা পড়েছিলাম বেশ আগে।

অতিথি লেখক এর ছবি

বরাবরের মতই অসাধারণ লেখা। চলুক
অর্জেন্টিনিয়ান বান্ধবীর সাথে প্লান করছিলাম ওর ওখানে গেলে কি কি দেখতেই হবে। 'অর্জেন্টিনায় রবি ঠাকুর' ও লিস্টে যোগ হল।
ভাল থাকুন।
ইমা

তারেক অণু এর ছবি

খালি বান্ধবীর কথা বলেই যাচ্ছেন! সে কোথায়?

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

"আমার বয়সী একটা ছেলে আছে তার" - ইয়ে, তো সেই ছেলের বয়স কতো? চিন্তিত

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

তারেক অণু এর ছবি

আমার সমান খাইছে , আর আমি তার বয়সী

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

ইয়ে, মানে...

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

তারেক অণু এর ছবি

চউ দার (চরম উদাস ) চেয়ে বয়সে ছোট, অনেক ছোট শয়তানী হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

গড়াগড়ি দিয়া হাসি গড়াগড়ি দিয়া হাসি

তারেক অণু এর ছবি
হিল্লোল এর ছবি

যথারীতি দুর্দান্ত হয়েছে। অগুনতি মুগ্ধতা জানিয়ে গেলাম। চলুক

তারেক অণু এর ছবি

ধন্যবাদ।

আরজু পনি এর ছবি

তুমি গান গাও দেখি? একেবারে পাহাড়ী ঝর্ণার মতো গান হাসি

বইয়ের সংগ্রহে দেখি ভার্জিনিয়া উলফের লেখাও আছে-

অসাধারণ বর্ণনা- পুরাই হিংসিত

উত্তম জাঝা!

তারেক অণু এর ছবি

অনেক বইই ছিল, আলাদা ভাবে খেয়াল করি নাই।

অতিথি লেখক এর ছবি

পড়তে পড়তে হারিয়ে গিয়েছিলাম।।।

অসাধারণ বলেছেন। নতুন করে অনেক কিছু জানতে পারলাম।

তারেক অণু এর ছবি

হারায়ে আবার কোথায় যাবেন! আমাদের সাথেই থাকেন।

রংতুলি এর ছবি

যদিও মন খারাপ নিয়ে লেখাটা পড়তে হলো... খুব, খুব ভালো লাগলো!

তারেক অণু এর ছবি

আগেই লিখে ছিলাম, সেই বীভৎস ঘটনাগুলোর পরে লিখতে পারতাম না।

অতিথি লেখক এর ছবি

গান গায় না এমন কোন বাঙ্গালী নেই

হক কথা গুরু গুরু

তারেক অণু এর ছবি
অতিথি লেখক এর ছবি

অভিজিৎ রায়ের একটা লেখা পড়ার পর ভাবলাম কবিগুরু আর ওকাম্পোকে নিয়ে ঘাটাঘাটি করি। তাতেই পেয়ে গেলাম আপনার এই অসাধারণ লেখা।

কবিগুরুকে নিয়ে আরো লেখা চাই।

শুভকামনা হাসি

রাসিক রেজা নাহিয়েন

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।