মানকচুর জিলিপি খেতে খুব সুস্বাদু হয়। আর ওলের পান্তুয়া । শুনেছিলেন কোনদিন? আজ্ঞে লজ্জার কিছু নেই, আপনি কেন , কেউই শুনেন নি আগে! এর রান্নার বুদ্ধি সবার আগে আসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মাথায়, তাঁর পরামর্শ অনুসারে খাবার তৈরি করে দেখা গেল মানকচুর জিলিপি সাধারণ জিলিপির চেয়ে অনেক ভালো খেতে।
এক অনুষ্ঠানে ডিমের কালিয়াটা মুখের কাছে তুলে পচা গন্ধ পাওয়ায় তিনি তা না খেয়ে, আবার গৃহস্বামী লজ্জা পাবে তাই ফেলেও না দিয়ে, সকলের চোখ এড়িয়ে দাঁড়ির ফাঁক দিয়ে আচকানের ভিতরে চালান করে দিয়েছিলেন, অন্যদিকে গুরুদেবকে খেতে দেখে সেই পচা কালিয়া কোনমতে খেয়েছিলেন ক্ষিতিমোহন সেন! খাওয়া শেষে রবি ঠাকুরের ফিসফিস ’তাড়াতাড়ি চল, ফিরে গিয়ে সাফসুতরো হতে হবে!’
এতদিন জমে ছিল ৮০ পাতার ক্ষুদে আকারে বইখানা, যেখানে রবি ঠাকুরের সাহিত্য নয়, বরং তাঁর পোশাক ( আলখেল্লা), রান্না, পাঠাভ্যাস, বিদেশের নানা অভিজ্ঞতা ও বাড়ি তৈরির বাতিকের করা উল্লেখ পেয়েছে।
সম্ভবত যে মানুষটিকে নিয়ে আজ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশী বই বাংলায় প্রকাশ পেয়েছে তিনি রবি ঠাকুর, এবং আগামী ১০০ বছরে যে সেই বইয়ের সংখ্যা আরও নিযুতগুণ বৃদ্ধি পাবে তাও এই অশান্ত, প্রকৃতিবিনাশী, লোভী সময়ে বার বার রবি ঠাকুরের কাছেই আশ্রয় খুঁজে ফেরা মানুষের আর্তিতেই বোঝা যায়।
কলকাতার ‘পত্রলেখা’ থেকে ২০১১ সালে প্রকাশিত হয়েছে শান্তা শ্রীমানীর ‘ সহজ রবীন্দ্রনাথ’। মূল্য ৬০ ভারতীয় রূপী মাত্র।
মজার মজার সব অজানা তথ্য আছে এখানে, বিশেষ করে রবি ঠাকুরের আলখেল্লা কীকরে গগনঠাকুর দেশী-বিদেশী রীতি মিলিয়ে তৈরি ডিজাইন করলেন, কোন বিখ্যাত পার্টিতে রবি ঠাকুরের নেতৃত্বে ঠাকুর বাড়ীর ছেলেরা ধুতি পরে খালি পায়ে হাজির হয়েছিলেন, তিনি কিভাবে ঋতু বদলের সাথে সাথে পোশাক বদল করতেন, নানা ধরনের রান্নার করা জন্য কেমন বায়নাক্কা ধরতেন এমন আড়ালের সব ঘটনা।
৫ মহাদেশের ৩৩ দেশ ( বা অধিক) ভ্রমণ করা রবি ঠাকুরের খুব স্নিগ্ধ কিছু ঘটনা বিশেষ করে শিশুদের সাথে তাঁর খুনসুটি সে হোক আমেরিকা বা ইতালিতে তা উঠে এসেছে। বিশ্বযুদ্ধে নিহত সৈনিকের ডায়েরিতে তাঁর কবিতা লেখা দেখে, সৈনিকের মা তাঁর সাথে যোগাযোগ করেন। অনেক দেশের সাধারণ মানুষ ও পণ্ডিতেরা তাঁর জোব্বাপরা অবয়ব, দীর্ঘ দাঁড়ি, মায়া ভরা দৃষ্টি দেখে যীশু খ্রিষ্ট বলে মনে করেছিলেন, এবং তাঁর সভাকে বাইবেলের দৃশ্য বলেই উল্লেখা করেছিলেন এমন কিছু ঘটনার উল্লেখ আছে রেফারেন্স সহ, যার জন্য অনেকেই যেই জোব্বার প্রান্তে চুমু দেবার জন্য লাইন ধরে দাঁড়িয়ে যেত।
কয়েক জায়গায় অন্য রবীন্দ্রনাথকে পাওয়া যায়, যেখানে স্ত্রীর অকালবিয়োগের পর কিভাবে ভোজনরসিক রবীন্দ্রনাথ অন্যান্য খাওয়াদাওয়া ছেড়ে কেবল ভেজানো ছোলা , ভেজানো মুগ ডাল খেয়েই জীবন ধারণ করতেন ও পরবর্তী সারা জীবনই মূলত নিরামিষাশী হয়ে উঠেন সেই রবিকে দেখি আমরা। স্ত্রী বিয়োগের পর বাচ্চাদের নিয়ে প্রাতঃরাশের সময় মায়ের মতই দুধের পাত্র পরিজ, কাটা ফল, জ্যাম ইত্যাদি মিশিয়ে তাদের পরিবেষণ করতেন পরম মমতায়। এমনকি স্ত্রী বিয়োগের পরেই তিনি আসলে ধুতি ছেড়ে আলখেল্লা পড়ার দিকে মনোনিবেশ করেন, কারণ তাতে ঝামেলা অনেক কম ।
আরেকটা তথ্য জানা গেল, অন্য অনেক কিছুর মতই বাংলায় গৃহনির্মাণের সময় কাঁচের ব্যবহার থাকলেও, কাঁচকে অন্যতম প্রধান উপাদানে ব্যবহারের রীতি শুরু হয়ে রবি ঠাকুরের মাধ্যমেই! তিনি মনে করতেন কাঁচের দেওয়ালের মাধ্যমে ভিতর-বাহির, অন্তর্জগৎ-বহির্জগতের মিলন ঘটে!
ও গুরুদেব, যত দিন যায়, যতই জানি,আমাদের বিস্ময় বাড়িয়া যায় তোমার দিকে চেয়ে।
মন্তব্য
ওহ্, শেষ নেই তাকে জানার, শেষ নেই আবিষ্কার করার। আর যতই পড়ি ক্ষুধা যেন মেটে না। ধন্যবাদ অনু'দা। এই বইটার হদিস জানতাম না।
আঘ্রাণ প্রান্তর
আমিও না, কলেজ ষ্ট্রীটে ঘুরঘুর করতে করতে পেয়ে গেলাম
facebook
মিষ্টির নামটা তো পান্তুয়া জানতাম।
লে হালুয়া, জীবনে খেয়েছিই কম, বানান ভুল হয়েই গেছে! ঠিক করে দিচ্ছি জনাব।
তা শেষ কবে পান্তুয়া বানিয়েছেন?
facebook
আমি মিষ্টি খাইও না, বানাইও না।
এটার কোনো ছবি থাকলে আংরেজি শিরোনাম দেওয়া যেতো Thakurcade (টাগোর বানানটা দেখলেই গা জ্বলে)।
Thakurcade
facebook
নবনীতা দেবসেন শিশুকালে তাঁর বাড়ীতে নিমন্ত্রণ খেতে গিয়ে পোলাও খাবার বায়না ধরেছিলেন। পোলাও সেদিন রাঁধা হয়নি। রবিঠাকুর তাঁর পুত্র বধূকে বুদ্ধি দিলেন সাদা ভাতে কমলার কোয়া, বাদাম কিসমিস আর ঘি দিয়ে পোলাও বানিয়ে দিতে। নবনীতা সে পোলাও খেয়ে ঠাণ্ডা হয়েছিলেন।
এটা পড়েছিলাম, ভালো বুদ্ধি
facebook
ওলের পান্তুয়া খাবার পর গলা কুটকুট করার ব্যাপার ছিলো কি?
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
ছিল না ভাই
facebook
নতুন মন্তব্য করুন