হলোকাষ্ট ও পোল্যান্ডের এক ভদ্রমহিলা

তীরন্দাজ এর ছবি
লিখেছেন তীরন্দাজ (তারিখ: সোম, ০২/০৬/২০০৮ - ১:২৬অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ডাখাউ কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের মানুষমারা গ্যসচুল্লীডাখাউ কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের মানুষমারা গ্যসচুল্লীপোল্যান্ড থেকে এসেছেন ভদ্রমহিলা। আশির কাছাকাছি বয়েস। মুখের বলিরেখায় অভিজ্ঞতা ও যুদ্ধক্লান্ত জীবনের এতোটা পথ পেরিয়ে আসার ছাপ। তবুও চলাফেরায় বেশ শক্ত বলেই মনে হলো। মিউনিখ থেকে সামান্য দূরে ডাখাউ কনসেনট্রেশন ক্যম্পের সামনে বেশ ভীড়। শরতের স্নিগ্ধ সকালের গায়ে মালিন্য পড়তে পারে জেনেও এতগুলো মানুষ হিটলার ও তার নাজী বাহিনীর বর্বরতাকে স্মরণ করতে এসেছেন, ভেবে অবাক হলাম।

আমাদের গাইড ক্যাম্পে ঢোকার দরজায় সে সময়কে স্মরণ করে বেশ ছোটখাট একটা বক্তৃতা দিলেন। নানা ঘটনা ও ইতিহাসের বর্ণনার পর জানালায় আঙ্গুল তুলে বাইরের ব্যারাকগুলো দেখিয়ে সবার মনযোগ আকর্ষন করলেন।

ঠিক তক্ষুনি কথা বলে উঠলেন ভদ্রমহিলা,
- ঠিক! ঠিক, ওখান থেকেই ভয়াবহ চেঁচামেচি শুনতে পেতাম আমরা!

আমাদের সবার দৃষ্টি আর মনোযোগ গাইডকে ছেড়ে মহিলার উপরেই পড়ল। মনে হল, তাতে কিছুটি অপ্রস্তুতই হলেন তিনি। নিজেকে ভীড়ের মাঝে আড়াল করতে করতে বললেন।

- জানি, ভাল করেই জানি! অনেক সময় এখানে কাটিয়েছি, আমি জানবো না তো কে জানবে? কী এক ভয়ংকর সময়....! আমরা কি মানুষ ছিলাম?

গাইড গলাখাকারি দিয়ে আবার নিজের দিকে মনযোগ কেড়ে নিলেন। বাকী দেড় ঘন্টা ক্যাম্পের ভেতরে ও চত্তরে ঘুরে বেড়ানোর সময়ে সরাসরি কিছুই বললেন না ভদ্রমহিলা। শুধু আপন মনেই একা একা বিড়বিড় করে গেলেন।

বেরিয়ে আসার পর ভদ্রমহিলাকে ঘিরে ছোটখাট একটি ভীড় জমে গেলো। এড়িয়ে যেতে চাইলেও সফল হতে পারলেন না তিনি। নানা ধরণের প্রশ্ন করলেন অনেকে। তিনি সে সব প্রশ্নের উত্তরও দিলেন। একজন বললেন,

- আপনি যে চেঁচামেচির কথা বললেন, সেটা আমার মনে লেগেছে খুব। আহা! কতোটা অত্যাচার হলে মানুষ এতোটা চেঁচামেচি আর আর্তনাদ করে! এটাই বোধহয় আপনার সবচেয়ে কষ্টকর স্মৃতি।

এবার মনে হলো কিছুটা রেগে গেলেন ভদ্রমহিলা। একটা অবর্ননীয় অস্থিরতা ফুটে উঠল চেহারায়।

- আপনারা কি কিছুই জানেন না? ইতিহাস পড়েন নি একেবারেই? কয়েদীরা আর্তনাদ করেবে কোন শক্তিতে? কতো কঠিন অত্যাচার, কী নিদারুন বর্বরতার শিকার ওরা! তাদের চেঁচামেচি আর আর্তনাদের কোন ক্ষমতা ছিল কি? আমি তো পাহারাদারদের হাঁকডাকের কথা বলছি! আর আপনারা উল্টো বুঝেছেন! ওরা ওখানে ঘুরে ঘুরে যেভাবে চেঁচিয়ে নানা আদেশ আর গালাগালি দিত কয়েদীদের, তা এখনও যেন কানে দু:সপ্ন হয়ে বাজে!

বলেই ভীড় ঠেল আর কোন প্রশ্নের সুযোগ না দিয়ে এগিয়ে গেলেন ভদ্রমহিলা।


মন্তব্য

অতিথি লেখক এর ছবি

লাইফ ইজ বিউটিফুল ছবির কথা মনে পরে গেল। কনসেনট্রেশন ক্যাম্প যে কি জিনিস ছিল তা এই ছবিটা দেখলে কিছুটা বোঝা যায়। আবার দ্যা পিয়ানিস্ট ছবিটা দেখলেও বোঝা যায়।

সত্যি বলতে - মোটামুটি লাগলো আপনার আজকের লেখা।

কীর্তিনাশা

তীরন্দাজ এর ছবি

সবসময় ভালো লেখা কি হয়?
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

স্পর্শ এর ছবি

কিছু ডকুমেন্ট্রি ফিল্ম দেখেছিলাম কন্সেন্ট্রেশন ক্যাম্প এর! একটা অপ্রা উইনফ্রেশোও ছিল কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প নিয়ে।
আসলে এরকম ঘটনা এখনো ঘটে! ঘটছে আমরা তার খোজ পাইনা শুধু। মন খারাপ
আমরা তো 'মানুষ'।
[][][][][][][][][][][][][][][][][][]
ওরে বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর,
এখনি, অন্ধ, বন্ধ, কোরো না পাখা।


ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...

মাহবুব লীলেন এর ছবি

পিয়ানিস্ট ফিল্ম দেখার অভিজ্ঞতা থেকে কিছুটা অনুমান করতে পারি

স্নিগ্ধা এর ছবি

তীরন্দাজ - আমাকে যদি ভার দেয়া হতো আপনার সবচাইতে ভালো গল্পটা বেছে দেয়ার, আমি নির্দ্বিধায় এটাকে নিতাম।

"গল্প শুধু গল্প নয়" - কার কথা মনে পড়ছে না, কিন্তু এই কথার চেয়ে সত্যি কিছু আর হয় না।

শুধু রচনাশৈলী, শুধু শেষের চমক, শুধু নাড়া জাগানো বিষয় - না শুধু এসব নয় - গল্পটা এত ভালো কারণ আবারো মনে পড়িয়ে দিলো - যে অত্যাচার করে, যে ফিরে আসে আর যে লেখে - সবাই 'আমি' হতে পারে।

তীরন্দাজ এর ছবি

আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। খুব খুশী লাগছে আপনার মন্তব্য পড়ে।

**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

নুশেরা তাজরীন এর ছবি

আপনারা কি কিছুই জানেন না? ইতিহাস পড়েন নি একেবারেই?

মনে হলো এই ভর্ৎসনা আমাকেই করা।
শুধু ক'টা তারা দিয়ে এমন লেখার পূর্ণ মূল্যায়ণ হয়না, তবু তাই করতে হলো।

তীরন্দাজ এর ছবি

আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ নুশেরা!

**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার তো মনে হয় এখনকার গুয়ানতানামোর সেই কারাগার একই ঘটনার সাক্ষী।

ইতিহাস কেবলই লেখা হয় বিভিন্নভাবে। কিন্তু ঘটনাগুলো তেমন একটা রদবদল হয় না।

১৯৭১সালে আরো ভয়াবহ ব্যাপার ঘটেছে আমাদের দেশে। কিন্তু ইতিহাস সেটা নিজেই গিলে ফেলেছে। আমাদের সামনে উম্মুক্ত করতে সাহস পায়নি। বা তাকে উম্মুক্ত করতে দেওয়া হয়নি।
-জুলিয়ান সিদ্দিকী

অতিথি লেখক এর ছবি

একটা কঠিন সত্য উঠে এসেছে।

'কয়েদীরা আর্তনাদ করবে কোন শক্তিতে?'

শুধু অত্যাচার ছাড়া আর কিছুই পেত না তারা। খাবার পেত না। আর্তনাদের শক্তি পাবে কোথায়?
লিখনশৈলী অসম্ভব সুন্দর। ধন্যবাদ।

জিজ্ঞাসু

শাহীন হাসান এর ছবি

- আপনারা কি কিছুই জানেন না? ইতিহাস পড়েন নি একেবারেই? কয়েদীরা আর্তনাদ করেবে কোন শক্তিতে?
প্রকৃত ইতিহাসের খোঁজ কজনেই বা রাখেন, আবার কতটুই বা লেখা হয়, বিশুদ্ধ ইতিহাস?
খুব ভাল-লেখা। ধন্যবাদ, তীরন্দাজ।
....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

....................................
বোধহয় কারও জন্ম হয় না, জন্ম হয় মৃত্যুর !

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍কনসেনট্রেশন ক্যাম্প বিষয়ক এক সোভিয়েত ছবির কথা মনে পড়ে গেল। সিনেমায় যা দেখিয়েছে, তার দশ ভাগ সত্য হলেও তা অকল্পনীয় ভয়ংকর।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর? চিন্তিত

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

রায়হান আবীর এর ছবি

অসাধারণ বক্তব্যের চমৎকার একটা গল্প।
---------------------------------

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

তীরন্দাজকে অজস্র ধন্যবাদ।
তবে দয়া করে ভুল বুঝবেন না,
শরতের স্নিগ্ধ সকালের গায়ে মালিন্য পড়তে পারে জেনেও এতগুলো মানুষ হিটলার ও তার নাজী বাহিনীর বর্বরতাকে স্মরণ করতে এসেছেন, ভেবে অবাক হলাম।
মহিলাটি অবাক হয়েছিল কারণ তিনিও জানেন, এটি বিশ্ব ঐতিহাসিক ঘটনা। পৃথিবী যেমন সূর্যের চারদিকে ঘোরে এটা তেমন সত্য। মন্তব্যে দেখলাম তিনজনই তিনটি সিনেমা দেখেছেন এ নিয়ে। বাংরাদেশের যাদেরই টিভি দেখা হয় (বিটিভি সহ) তারাই হলোকস্ট না বোঝেন ইহুদী নিধন জানেন। কারণ এটা ২য় বিশ্বযুদ্ধের পরের প্রধান রাজনৈতিক ইস্যু এবং কালচারাল প্রোডাক্ট।
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এর যদি এক কণাও কাজ হতো তাহলে আজ বাংলাদেশ অন্যরকম হতো। বিশ্বের লোক দল বেঁধে বেঁধে আমাদের বধ্যভূমিগুলো দেখতে আসতো। এর সঙ্গে দরকার হতো বাঙালিদের সঙ্গে পশ্চিমাদের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধুত্ব।
গুয়ানতানামোর কথা এ বন্ধু বলেছেন, এরকম আরো চলছে। দুই কোটি ল্যাটিন আমেরিকানকে যে ৗপনিবেবিশিক যুগে মেরে ফেলা হলো আর কিনা মেল গিভসন অ্যাপোক্লিপস বানিয়ে দেখান যে, ইওরোপীয়রা সেখানে সভ্যতা এনেছিল। আজ দুনিয়াজুড়ে অথর্ব ও বিভ্রান্ত (তখনকার ইহুদীদের মতো কিছুটা) মুসলিমদের বিরুদ্ধেও যে আরেকটা হলোকস্ট ঘটাবার দামামা বাজানো হচ্ছে, আমি সেদিকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করে যাচ্ছি।
মনে রাখছি যে, কেবল ইরাক-আফগানিস্তান আর বসনিয়া মিলিয়ে প্রায় ২৫ লাখ মানুষ মারা গেছে গত এক দশকে।


মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

তীরন্দাজ এর ছবি

ফারুক ওয়াসিফ
আপনার দীর্ঘ ও সুচিন্তিত মন্তব্যের জন্যে অসংখ্য ধন্যবাদ। ভুল বোঝার কোন কারণই থাকতে পারে না।

যেসব বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন আপনি, তার সাথে আমার অবশ্যই সহমত রয়েছে। তবে এখানে এই গল্পে একটি বিষয়ই তুলে ধরতে সক্ষম হয়ছি আমি। আর গল্পের অনেক ঘটনাই সত্যি সত্যি ঘটেছে। আমাকে বেশ নাড়াও দিয়েছি।

"হিটলারের উচিত ছিল সব ইহুদীদের মেরে ফেলা!", বাংলাদেশের বিভিন্ন পরিচিতজনের এই বক্তব্যের বিরুদ্ধে অনেক তর্ক করতে হয়েছে আমাকে।

শরতের স্নিগ্ধ সকালের গায়ে মালিন্য পড়তে পারে জেনেও এতগুলো মানুষ হিটলার ও তার নাজী বাহিনীর বর্বরতাকে স্মরণ করতে এসেছেন, ভেবে অবাক হলাম।

আসলেই এমন একটি দিনে দর্শনার্থীর সংখ্যা কম থাকারই কথা। নিজেদের কৃতকর্মের প্রতি জার্মানরা আমাদের থেকে অনেক সচেতন হলেও, এদের ভেতরেও যথেষ্ট সুবিধাবাদি চিন্তা আছে আর সব মানুষের মতোই। এদেরজকে কিছুটা চিনি বলেই এত মানুষ এমনি এক দিনে আশা করি নি।

আমাদের মতামত নিয়ে মনে হয় আমাদেরই মুশকিল হয়েছে। আমি নিজেও, উগ্র মৌলবাদীদের পছন্দ করি না, আবার যেভাবে মুসলিমদের ধ্বংস করা হচ্ছে, তাকেও সমর্থন করি না। আমরা বুশের রাজনীতি ও যুদ্ধনীতিকে ঘুণা করি, আবার অন্যদিকে সাদ্দামের কর্মকান্ডকেও সমর্থন করতে পারি না। সেটা নাহয় আমাদের অনেক সমস্যার মাঝে একটি।

মনে রাখছি যে, কেবল ইরাক-আফগানিস্তান আর বসনিয়া মিলিয়ে প্রায় ২৫ লাখ মানুষ মারা গেছে গত এক দশকে।

এর মাঝে কতো শিশু রয়েছে, যারা যুদ্ধ কাকে বলে, সেটাই জানে না। এই অন্যায়, নির্যতন আর গনহত্যার কথা ভেবে শরীরের রক্ত হিম হয়ে যায়। এসব কি ভোলা যায় কখনো?

**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

ও বলতে ভূলে গেছি, আলা রেনের একটা ছবি আছে নাইট এন্ড ফগ নামে, হলোকস্ট নিয়ে। আমার কাছে এটা হলোকস্ট নিয়ে সেরা ছবি।


মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

পুতুল এর ছবি

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিভীষিকা নিয়ে আরো লেখা চাই তীরুদার কাছে।
**********************
কাঁশ বনের বাঘ

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

রেজওয়ান এর ছবি

অতিথি লেখক লিখেছেন:
১৯৭১সালে আরো ভয়াবহ ব্যাপার ঘটেছে আমাদের দেশে। কিন্তু ইতিহাস সেটা নিজেই গিলে ফেলেছে। আমাদের সামনে উম্মুক্ত করতে সাহস পায়নি। বা তাকে উম্মুক্ত করতে দেওয়া হয়নি। -জুলিয়ান সিদ্দিকী

জার্মানীতে এইসব কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প অতি যত্ন সহকারে রাখা। স্কুল কলেজের ছেলেমেয়েদের এখানে নিয়ে আসা হয় যাতে তারা বুঝতে পারে কি অন্যায় করা হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এমন কোন বৃহৎ মিউজিয়াম (বেসরকারী মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর ছাড়া) নেই। ইতিহাস স্মরনেরও চেষ্টা নেই।

নিও নাৎসীরা ১৯৯২ সালে বার্লিনের ওরানিয়েনবুর্গ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে ইহুদী ব্যারাক আংশিক জ্বালিয়ে দিয়েছিল। জার্মানীতে একমাত্র ইহুদী স্থাপনাগুলোতে (জাদুঘর ও সিনাগগ) এখন কঠোর সিকিউরিটি থাকে (নিও নাৎসীদের ভয়ে)। সরকার এগুলি রক্ষা করতে বদ্ধ পরিকর।

অথচ আমাদের দেশে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ তো দুরের কথা স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টায় রত সবাই।

ধন্যবাদ তীরন্দাজ আপনার লেখার জন্যে। ওরানিয়েনবুর্গেও দেখেছি এক বুড়ো এসে সবাইকে বর্ণনা করে কেমন ছিল সেই সময়টি। শুনেছি কন্সেন্ট্রেশন ক্যাম্পে কাছের মানুষ ছিল এমন মানূষও আসেন দর্শকদের সাবধান করতে আর যেন এমন অপরাধ না হয়।

পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?

তীরন্দাজ এর ছবি

অনেকদিন পর আপনাকে দেখলাম রেজওয়ান। ভলো লাগলো! ধন্যবাদ!

আমাদের মনোভঙ্গীই অন্যরকম, ইতিহাস সংরক্ষন তো দূরের কথা। আমাদের অনেকেই (বেশীরভাগই) বলে, "নাজীরা যদি সমস্ত ইহুদীদের মেরে ফেলতো, তাহলেই ভাল হতো।"

যাদের ভেতরে মানবতাবোধের সাধারণ জ্ঞান ও বোধ কাজ করে না, তারা আবার নিজেদের ইতিহাস কি করে সংরক্ষন করবে! বললে বেশ কঠিন হয়ে যায়, তবে ভুল হবে না। "জার্মানীতে যে সব বাংলাদেশীদের দেখি, তাদের যা চরিত্র, সাদা জার্মান হলে তাদের বেশীরভাগই নাজী হতো!" সাধারণভাবে তারা সেসব দলকে সমর্থন করে, যারা বিদেশীদের প্রতি সহানুভূতি সম্পন্ন। তবে শুধুমাত্রই নিজেদের সুবিধার্থে।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

অতিথি লেখক এর ছবি

আসলে সত্য কার পক্ষে যায় ইহুদি না মুসলমান তা বিবেচনা করে তো একজন লেখক লেখেন না। লেখক সত্যকে তুলে ধরার চেষ্টা করেন। কয়েকমাস আগে অরুন্ধতি রায় বিশ্বের সমসাময়িক জুলুমবাজদের দ্বারা সংঘটিত বিভিন্ন গণহত্যার ব্যাপারে লিখেছিলেন। পড়ুন এখানে। লেখাটিতে একটা উদ্ধৃতি আছে এমন "Denial is saying, in effect," says Professor Robert Jay Lifton, author of Hiroshima and America: Fifty Years of Denial, "that the murderers did not murder. The victims weren't killed. The direct consequence of denial is that it invites future genocide."
এই কথার সূত্র ধরে বলা দরকার বাঙলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ও এদেশের রাজাকার, আলবদর, আল শামস্ দের দ্বারা সংঘটিত গণহত্যাগুলো আমরা এভাবেই denial এর মধ্যে রেখে যাচ্ছি। যা আমাদের ভবিষ্যতে আরও গণহত্যা ডেকে আনতে পারে।

জিজ্ঞাসু

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

একমত। অরূন্ধতির ঐ লেখাটা এখানেই সংক্ষেপিত অনুবাদ করে দিয়েছি আমার ব্লগে, দেখতে পারেন।
http://www.sachalayatan.com/faruk_wasif


মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

তীরন্দাজ এর ছবি

সহমত! লেখকের এ স্বাধীনতাটুকু অবশ্যই থাকা দরকার!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

@ তীরন্দাজ।
আপনার লেখা এবং ঐ ইহুদী বৃদ্ধার আচরণে যে শান্ত সংহত পবিত্র আবেব দেখলাম তা ছুঁয়ে যায়। আলা রেঁনের যে ছবিটার কথা বললাম, ওটা দেখে কেঁদেছিলাম। কেন জানেন? আমি শেষে ভুলে গিয়েছিলাম এটা কোন গণহত্যার ছবি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের, আর্মেনিয়ার নাকি বাংলাদেশের?


মনে হয় তবু স্বপ্ন থেকে জেগে
মানুষের মুখচ্ছবি দেখি বাতি জ্বেলে

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

তীরন্দাজ এর ছবি

ফারুক ওয়াসিফ
আলা রেঁনের ছবিটার আমি দেখিনি। তবে এখানে থাকার কারণে আরো অনেক ছবিই দেখেছি। জার্মানরা নিজেদের পুরোনো ইতিহাসে দৃষ্টিপাতের প্রশ্নে কার্পণ্য করে না একেবারেই। "সিন্ডলারস্ লিষ্ট' আমাকে ছুঁয়েছে সবচেয়ে বেশী। হয়তো এখানে কিছুটা আশার আলোক ছিল বলেই হয়তো।

আমিও ভুলে যাই, এটা কোন দেশের নির্যাতিতদের কাহিনী। আমরা সবাই যদি এভাবে ভুলে যেতে পারতাম, আর জানতাম নির্যাতিতদের আলাদা কোন জাতি নেই, তাহলে এ নির্যাতনই থাকতো না আর। তবে এটা দূরাশা, এটা তো বলাই বাহুল্য!

**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

স্নিগ্ধা লিখেছেন:
তীরন্দাজ - আমাকে যদি ভার দেয়া হতো আপনার সবচাইতে ভালো গল্পটা বেছে দেয়ার, আমি নির্দ্বিধায় এটাকে নিতাম।

"গল্প শুধু গল্প নয়" - কার কথা মনে পড়ছে না, কিন্তু এই কথার চেয়ে সত্যি কিছু আর হয় না।

শুধু রচনাশৈলী, শুধু শেষের চমক, শুধু নাড়া জাগানো বিষয় - না শুধু এসব নয় - গল্পটা এত ভালো কারণ আবারো মনে পড়িয়ে দিলো - যে অত্যাচার করে, যে ফিরে আসে আর যে লেখে - সবাই 'আমি' হতে পারে।

এটা আমারও মত ।

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

তীরন্দাজ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

অসাধারণ!
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

তীরন্দাজ এর ছবি

ধন্যবাদ! কেমন আছেন বলাই ভাই?

**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

মোটামুটি আছি, তিরুদা। রোদে পুড়ে ক্রিকেট খেলে, চর্বি-মাংস এড়িয়ে ওজন কমাচ্ছি, জিপিটি ধীরে ধীরে সহনীয় মাত্রায় আসছে। ফুল ফিটনেস ফিরে পেতে একটু সময় লাগছে, তবে হিমুর বলে ছক্কা মারার মত ফিট অলরেডি হয়ে গেছি। হাসি

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।