তুষারের ভাই ও একটি আইডেন্টিটি কার্ড

তীরন্দাজ এর ছবি
লিখেছেন তীরন্দাজ (তারিখ: সোম, ১৮/১১/২০১৩ - ৬:১৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বছরখানেক পর দেশে। বন্ধু শাজাহানের শান্তিনগরের বাসায় ভুড়িভোজন হলো। তারপর গল্প করতে করতে বিকেল অতিক্রম। এবার ফেরার পালা। রিকশা নিলাম একটা। সেটি বারবারই আটকে যায় ট্রাফিক জ্যামে। আমি নিজের ভাবনায় নিমগ্ন থেকেই এদিক সেদিক তাকাই। পুব-পশ্চিমে উড়াউড়ি, কাছের মানুষ, দূরের মানুষ, ঢাকার রাস্তাঘাট- রাজনীতি, এগুলোই তো পরবাসী জীবনের নাইয়র ভাবনা। এরই মাঝে সামনের রিক্সা থেকে এক লোক বলে উঠলেন,

- স্লামালিকুম ভাই। আমাকে চিনতে পারছেন?

সালামের উত্তর দিয়ে ঢাকার রাস্তার আলো আঁধারের মাঝে চমকে ফিরে তাকালাম। তিরিশ থেকে পঁয়ত্রিশের মতো বয়েস। বেশ ফিটফাট চেহারা ও পোশাক। কিন্তু পরিচিত বলে মনে হলো না। সালামের উত্তর দিয়ে সেটিই জানালাম তাকে।

- আমার নাম জহির। আমি শান্তিবাগের তুষারের বড়ো ভাই। চিনলেন না আমাকে?
- না।
- আপনি শান্তিবাগে থাকেন না।
- আমি শান্তিবাগেই থাকি।
- আমি তুষারের বড়োভাই।
- আমি তুষারকেও চিনি না।
- সত্যিই চিনেন না?
- না, চিনলে তো আগেই বলতাম!

অনেকটা বিরক্ত উত্তর আমার। তারপরও কাউকে চিনতে না পারার এক অস্বস্তি ঘিরে থাকল আমাকে। জ্যামে মাঝে মাঝে আটকে এগিয়ে চলল রিকশা। একমসয় লোকটির কথা ভুলে নিজের ভাবনায় ডুবে গেলাম আবার।

জ্যাম পেরিয়ে শহিদবাগের সামনে এসে বাঁদিকে মোড় নিল আমার রিকশা। রাজারবাগ পুলিশ ফাঁড়ির সামনে বেশ অন্ধকার। জ্যামও কমে এসেছে অনেকটা। পেছন থেকে একটি রিকশা এসে থামল আমার রিকশার সামনে। রিকশা থেকে নেমে সেই একই লোক আমার সামনে নেমে হাত বাড়িয়ে দিল।

- আপনি আমাকে চিনতে পারলেন না, তাই ভালো করে আলাপ করতে এলাম।
- আলাপ করার তো কিছুই নেই। আমার মনে পড়ছে না, ব্যাস!
- আমি তুষারের বড়োভাই।
- হ্যা, সেটি কয়েকবারই শুনলাম।
- তুষারের কথা আপনার মনে নেই?
- না।
- আমাকেও চিনতে পারছেন না?
- না।

এবার আরও দুজন এগিয়ে এলো অন্ধকার ফুঁড়ে। একজন বলল,
- ও যা বলে, করবেন। নইলে বিপদ আছে।
- কী ব্যাপার! আমি তাকে চিনতে পারছি না বলে বিপদ হবে কেন?
- সে টা পরে দেখবেন।

বলেই সামনে থেকে সরে গেল লোকটি। আগের লোকটি তখনও আমার হাত ধরে দাঁড়িয়ে। আমার বিরক্তি তখন চরমে। বললাম,
- যথেষ্ট হয়েছে। আপনাকে ও আপনার ভাইকে আমি চিনি না। এবার হাত ছাড়েন, বাড়ি যাব।

এবার আরেকটু কাছে এগিয়ে এলো লোকটি। মনে হলো কোনো গোপন কথা যেন বলতে চাইছে।

- আমি একটা কথা বলছি, ভলো করে শোনেন!
- হ্যা, শুনছি।
- আমাকে চিনতে পারছেন না।
- হ্যা, এইমাত্রই তো চিনলাম। আপনি জহির, তুষারের ভাই। কিন্তু তুষারকে আমি চিনি না।
- তুষারকে চেনার কোনো দরকার নাই আপনার।
- ঠিক, তাহলে হাত ছাড়েন, বাড়ি যাই
- বাড়ি তো যাবেনই। তার আগে একটা কথা শুনে যান।
- বলুন, শুনছি।
- তুষার-টুসার কিছু নয়!
- তাহলে কী?
- আমি একটা সন্ত্রাসী দলের লোক। খবর পেয়েছি, আপনার কাছে এক লাখ টাকা আছে। তাই আপনাকে ধরেছি।

লোকটি কথা শুনে হঠাৎ বেশ আওয়াজ করেই হেসে ফেললাম। হাসি শুনে যেন একটু চমকেই উঠল লোকটি। এক লাখ টাকা নেই, মিথ্যে বলতে হচ্ছে না, সেটি ভেবেই হয়তো আমার এই হাসি। হাসতে হাসতেই বললাম,

- এক লাখ টাকা আমার কাছে নেই! আপনাকে কে এই খবর দিয়েছে? তুষার? খবরটি একেবারেই ভুল।
- এক লাখ টাকা নেই আপনার কাছে?
- না, ব্যাগ খুলে দেখতে পারেন।।
- আমাকে চিনতেও পারছেন না।
- আপনি নিজেই তো বললেন, আপনি তুষারের ভাই, এক সন্ত্রাসী।
- তার মানে, আপনি আমাকে চেনেন?
- আপনাকে এইমাত্র চিনলাম, আপনি জহির, তবে তুষারকে আমি মনে করতে পারছি না।
- কিন্তু আমাকে তো চিনলেন।
- হ্যা, আপনি সন্ত্রাসী, কিন্তু আমার কাছে এক লাখ টাকা তো নেই।
-
এই আলো আঁধরের মাঝেই কেমন এক হতাশার ছায়া দেখতে পেলাম লোকটির চেহারায়। সেই সাথে একটু অপ্রস্তুত ভয় ভয় ভাব। “ঠিক আছে ভাই, যান!”, বলে রিকশাওয়ালাকে ইশারা দিল এগিয়ে যাবার জন্যে। আমিও ধীরে ধীরে বাড়ি ফিরে এলাম।

কার কবলে পড়েছিলাম, সেটা তো বলাই বাহুল্য। কিন্তু কী কারণে আমাকে ছেড়ে দিল, সেটি খুঁজে বের করতে গিয়ে কোনো কুল কিনারা পেলাম না। ঢাকার রাস্তায় হাইজ্যাকাররা এত সহজে কাউকে ছেড়ে দেয়, এমন কখনোই শুনিনি। হতে পারে, সন্ত্রাসীর সামনে হাসতে পারে, এমন কাউকে সন্ত্রাসীরাও আজ অবধি পায়নি। তাতেই হয়তো ঘাবড়ে গিয়ে ছেড়ে দিয়েছে। পরে, আরও ভাবনা চিন্তার পর আসল কারণটি খুঁজে বের করলাম। এরা যে সন্ত্রাসী, সেটি বুঝতে ঢাকার মানুষের এতোটা সময় লাগার কথা নয়। কিন্তু আমাকে তা বোঝাতেই বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে ওদের। নইলে সন্ত্রাসীর সামনে কোন গর্দভ এমন ভাবে হাসতে পারে? আমাকে আটকে এতোটাই বিব্রত লোকটি, যদি সন্ত্রাসীদের কোনো আইডেন্টিটি কার্ড থাকতো, সেটিই বের করতো। তাই মনে হয়, সন্ত্রাসীদের জন্যে আইডেন্টিটি কার্ড চালু করা দরকার। তাতে ওদেরও সুবিধা হয়, আমরাও সহজেই ওদেরকে চিনতে পারব।

এর পর আরও তিনদিন ঢাকায় ছিলাম। সন্ধ্যার পর আমার ভাইবোনেরা আমাকে কখনোই আর একা বেরুতে দেয়নি। অথচ মতিঝিলে আমার বড়োবোনের বাড়িতে শহীদবাগের মোড় পেরিয়ে রাজারবাগের সামনে দিয়েই আসাযাওয়া করতে হয়। সেখানে যাবার জন্যে সার্বক্ষণিক পাহারাদার পেলাম। সে বেশ ভীতু চরিত্রের মানুষ হিসেবে পরিচিত আমারই ছোটোবোন।


মন্তব্য

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

প্রায় একই রকম ঘটনা মাসখানেক আগে ঘটেছিল আমার এক বন্ধুর ক্ষেত্রে, বেইলী রোডে। সালাম, কেমন আছেন, আমাকে চিনতে পারছেন, এই রিক্সা থাম, এইসবের পর তাকে বলা হল আপনি অমুক না? অমুক কোম্পানীতে চাকুরী করেন না? আমার বন্ধুর না বোধক জাবাবে তারা বললো- আমরা তো আর একটু হলেই আপনার মাথা ফুটা করে ফেলতাম, ঠিক আছে, চলে যান। আমার বন্ধুও এই ঘটনার কোন কূল কিনারা করতে পারে নাই।

তীরন্দাজ এর ছবি

আমার কাছ থেকে একবার নিয়েছিল অনেক আগে চিটাগং থেকে। তবে পরে ওদেরকে খুঁজে বের করে সবই ফিরে পেয়েছিলাম। এবার তো ছেড়েই দিল।

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

এস্কিমো এর ছবি

অবাক হয়ে দেখলাম আমার এখনও সচলে মন্তব্য করার অধিকার আছে। ধন্যবাদ জনাব মডারেটর।

যাই হোক - লেখাটা পড়ে কিছু বলার জন্যে হাত নিশপিশ করছিলো। আপাতত ধন্যবাদ দিচ্ছি লেখার জন্যে।

লেখতে চাই ..কিন্তু কি লিখবো?

তীরন্দাজ এর ছবি

আপনাকে অনেক দিন পর দেখে মন ভালো লাগছে। ভালো থাকবেন। লিখুন এস্কিমো।

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

গান্ধর্বী এর ছবি

হো হো হো

তীরন্দাজ এর ছবি

দারুন হাসি!!!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হু, এমেচারের হাতে পইড়া বাইচা গেছেন... আমি এই স্টাইলে ঠ্যাক খাইছিলাম নিজের হলের গেইটে... ভরদুপুরে... শরমের কথা মন খারাপ

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

তীরন্দাজ এর ছবি

ওরা এমচার না। পরে ওদের খোঁজ বের করেছিলাম। কয়েকজন মিলে প‌্যাদানি দিতে গিয়েছিল। কিছু নেয়নি বলে ছেড়ে দিতে বলেছি।

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

অতিথি লেখক এর ছবি

ক্যাপ্টেন'স ওয়ার্ল্ড থেকে মাঝরাতে রিক্সায় করে হলে ফেরার পথে আমরা তিনবন্ধু আটকা পড়েছিলাম। সবকিছু নিয়ে কেবলমাত্র রিক্সাভাড়ার সমান টাকা ফেরত দিয়ে রিক্সায় তুলে দিয়েছিল আমাদের। দয়ালু ছিনতাইকারী হাসি

শব্দ পথিক
নভেম্বর ১৮, ২০১৩

তীরন্দাজ এর ছবি

হ্যা, এরকম কথাও শুনেছি মাঝে মাঝে।

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

মাহবুব লীলেন এর ছবি

আমি দুয়েকবার এরকম ধরাখেয়ে দৌড় টৌড় লাগিয়ে বেঁচে গেছি। পরে একদিন সন্ধ‌্যায় বেইলি রোডের মোড়ে তিনটা ছেলে জোরে সালাম দিলো আর আমওি লাগালাম আরো জোরে দৌড়... ওরা পিছনে আসলো না কিন্তু বাসায় এসে ইমেইল খুলে দেখি একটা মেইল- ভাই পরিচিত দেখে সালাম দিলাম। কিন্তু আপনে আমাদের ছিনতাইকারী ভেবে লাগাইলেন দৌড়...

তীরন্দাজ এর ছবি

লীলেন, আপনার কাহিনী আমারটার চাইতেও মজার।

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

গৌতম এর ছবি

আমারে একবার ধরেছিলো- একই স্টাইলে- শান্তিনগর বাজার থেকে একটু সামনে এগিয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে লাইব্রেরির সামনে নাকি আমার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল, সেই পরিচয় দিয়ে। মোবাইল আর শ-তিনেক টাকা গিয়েছিল সেবার।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

তীরন্দাজ এর ছবি

আমার সাথে মোবাইল, ক্যামেরা, কয়েক হাজার টাকাও ছিল। এরা কিছুই দেখেনি। তবে এক লাখ টাকা ছিলনা সত্যি সত্যিই।

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

ইনতেখাব আদনান শাকিব এর ছবি

দুইবার পড়েছিলাম ছিনতাইকারীর কবলে। দুইবারই ছিন্তাইকারীরা কেন জানি আমাকে ছেড়ে আমার বন্ধুকে নিয়েই ব্যস্ত ছিল।মোবাইল কোনবারই নেয়নি, একবার নিয়েছিল মানিব্যাগ। সাথে ছিনতাইকারিকে চিনতে না পারার জন্য ঝাড়ি।তবে দিনদুপুরে যে ট্রিপল মার্ডার করে তাকে চিনতে না পারাটা হাল্কা বেয়াদবি বলা যায়।সেজন্য ঝাড়িটা আমার প্রাপ্য ধরে নিয়েছিলাম।

শাকিব

তীরন্দাজ এর ছবি

তাহলে আমার বিরাট ভাগ্য। ছিনতাইকারী না পারার জন্যে ঝাড়ি খেতে হয়নি।

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

মেঘলা মানুষ এর ছবি

@মাহবুব লীলেন ভাই, তাও সাবধানে থাকেন।

একটা সত্য ঘটনা (শোনা):

পাশের রিকশা থেকে সালাম দিল কেউ একজন সেলিমকে, কুশলাদিও জিজ্ঞাসা করল।
সেলিম ঘটনা বুঝেই রিকশা থেকে নেমে উল্টা দিকে দৌড়।
পাশের রিকশা থেকে চিৎকার,"আরে, ভাই দৌড়ান ক্যান? আমরা তো আপানরা পরিচিত, ছিনতাইকারী না"
সেলিম ভুল বুঝতে পেরে ফেরত আসে।
পাশের রিকশার আরোহীরা এবার কাছে এসে হাত ধরে বলে,
"আমরা আসলেই ছিনতাইকারী, একটু আগে মিথ্যা বলছি।
ছিনতাইকারীরা সত্য কথা বলবে, এইটা ক্যামনে চিন্তা করলেন?"

বেচারা সেলিম! গড়াগড়ি দিয়া হাসি

শুভেচ্ছা হাসি

তীরন্দাজ এর ছবি

অনেকটা ডবল-এজেন্টদের মতো ...!!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

তীরন্দাজ এর ছবি

রক্ষকই তাহলে ভক্ষক! এধরণের ঘটনা অনেকবার শুনে থাকলেও প্রতিবারই দুঃখজনক

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

নীড় সন্ধানী এর ছবি

বেচারা সেলিম! হো হো হো

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি জীবনে একবারি ছিনতাই কারীর হাতে পড়েছিলাম, তবে সেটা পুলিশ ছিনাতইকারী। হো হো হো
রাতে হাঁটার অভ্যেস ছিলো পুরোনো, ১/১১ সরকারের সময়টাতে আমি আর একবন্ধু হাঁটছিলাম চট্রগ্রামের টাইগারপাস দিয়ে, একটা পুলিশ গাড়ি এসে থামলো, পরিচয় জিজ্ঞেস করলো। বললাম, বললো ভাইজানদের সাথে থানায় যেতে হবে? সাথে আইড়ি কার্ড ছিলো না, অনেকক্ষন বুঝালাম। কিছুই বুঝেনা, পরে স্যারের সাগরেদ বললো পকেটে যা আছে দিয়ে যেন কেটে পড়ি। দুই পকেটে ১২৩০ টাকার মতো ছিলো, সেটাকে বিসর্জন দিয়ে বাসায় ফিরলাম।

মাসুদ সজীব

অমি_বন্যা এর ছবি

আমি এখন পর্যন্ত এই চক্করে পড়িনি। তবে আপনার গল্পের মানুষদের মত কেউ আচরণ করলে আপনার লেখার কথা মনে পড়বে। আর সেই বুঝে কাজ করে নিব আশা করি

তীরন্দাজ এর ছবি

একটু ভেবে চিন্তে করবেন বন্যা। আমার হয়তো কপাল ভালো ছিল সে মুহূর্তে ...

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

এক লহমা এর ছবি

কি সাংঘাতিক!

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

তীরন্দাজ এর ছবি

আসলেই বেশ সাংঘাতিক অবস্থায় পড়েছিলাম, যদি এখন ভাবি ...।

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

মন মাঝি এর ছবি

আমি জীবনে একবারই মামুদের খপ্পরে পড়েছিলাম অনেক বছর আগে। মহাখালি ওয়্যারলেস থেকে রাত্রি বেলায় টেম্পুতে করে বাড়ি ফেরার সময়। পুরা টেম্পুই আসলে মামুদের ছিল। ১ নম্বর থেকে এই উদ্দেশ্যেই আস্ত টেম্পু নিয়ে বেরিয়েছিল। ড্রাইভার, তার পাশে বসা দু'টো লোক, পিছনে যাত্রী ঢুকার রাস্তায় ঝুলতে থাকা পিচ্চি এবং ভিতরে চার কোনায় বসা ৪/৫ জন লোক সবাই মামু এণ্ড গং। যাত্রীদের বসিয়েছিল নিজেদের ফাঁকে ফাঁকে। টেম্পু কিছুদুর যাওয়ার পরই চারপাশ থেকে কতগুলি হাত এসে আমাদের সবার (যাত্রীদের) কোমর বেষ্টন করে ফেলল পরম ভালবাসায়, সেইসাথে ঠেকল চাকু। অন্য কিছু হাত ঢুকে গেল পকেটে পকেটে। একজনে হাতে নাচতে থাকল রিভলবার। তবে এযাত্রায় আমার ম্যাক্সিমাম লস ছিল ১০০ টাকা। হাতে একটা সদ্য উপহার পাওয়া খুবই দামী ঘড়ি ছিল। একজন ভাতিজা্র চোখ সেদিকে পড়ায় আমি বললাম - এটা নিয়ে আর কি করবেন, সেকেণ্ড-হ্যাণ্ড মাল - এই কয়দিন আগে ফার্ম গেটের ফুটপাথ থেকে মাত্র ৫০-৬০ টাকায় কিনেছি। এত সস্তা মাল ছিনতাই করলে আপনার মহান পেশারই বেইজ্জতি হবে! ভাতিজা আমার হাত ধরে অন্ধকারের মধ্যে সেটা উলটে-পাল্টে দেখে ছেড়ে দিল। বিশ্বাস করল মনে হয়। বোধহয় ছাত্র মানুষ বলে একটু দয়াও করল। পরে বিজয় সরনীতে নামিয়ে দিল - সাথে বাড়ি ফেরার জন্য ২০টি টাকাও দিয়ে দিল।

নাহ্‌, মামুরা আসলেই বড় দয়ালু আর মানবতাবাদী ছিল। কি দিনকাল পড়েছে এখন! এখনকার ছেলেপিলেদের জন্য দুঃখ হয় - এমন দয়ালু-মায়াবী চোর-ছ্যাঁচ্চড়-ডাকাত-ছিনতাইকারী আর দেখা যায় না। আমাদের যুগটা আসলে স্বর্নযুগ ছিল!

****************************************

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাই এই যে আপনি সহি সালামতে বেচে গেলেন এখন আপনার উচিত আমাদের সবাইকে খাইয়ে শোকোরানা আদায় করা।

অভিমন্যু .
________________________
সেই চক্রবুহ্যে আজও বন্দী হয়ে আছি

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

আমি একবারই পড়েছিলাম - গায়ে ধাক্কা লাগিয়ে সরি বলে হাত ধরে ফেলেছিল - সেই হাত আর ছাড়াতে পারি না! উল্টো "ভাই ভালো আছেন?" বলে আরো দুইজন দুই দিক থেকে এসে দৌড় দেয়ার সব পথ বন্ধ করে দিয়েছিল! টাকা পয়সা, মোবাইল যা ছিল সব তো গেছিলও, সাথে উপরি হিসেবে গেছিল বিয়ের আংটি টা! সাক্ষী দাদার মত আমার এই ঘটনাও দিনে দুপুরে! খাইছে

____________________________

নীড় সন্ধানী এর ছবি

একবার সন্ধ্যার মুখে মুখে চট্টগ্রামের প্রবর্তক মোড় পেরুতে গিয়ে সামনে রিকশা আর মানুষ পার হবার সময় আমার টেক্সি গতি কমালে সামনে থেকে একজন এসে দুম করে টেক্সিঅলাকে বললো, ঐ আমার গায়ে ধাক্কা দিলি কেন? অথচ আমি পরিষ্কার দেখলাম ধাক্কাটাক্কা কিছু দেয়নি। সে টেক্সিঅলার সাথে ঝগড়া লাগিয়ে টেক্সি দাড় করালো এবং ওপাশ থেকে আরো একজন বা দুজন উদয় হলো। টেক্সিওয়ালার সাথে ঝগড়া করলেও একজন আমার দিকে এসে মোলায়েম সুরে বললো, ভাই কই যাবেন, আমি একটু আপনার সাথে যাবো, সামনে নেমে যাবো। তখনো টেক্সিতে গ্রিল চালু হয়নি। আমি বুঝে ফেললাম ঘটনা কোনদিকে যাচ্ছে। হঠাৎ করে টেক্সিওয়ালাকে লক্ষ্য করে এমন একটা অকথ্য লোকাল ভাষার হুংকার দিলাম(খা-পো তুই টেক্সি দাড় করায়ে এখানে তামশা করতেছস আর ওদিকে আমার কামের বারোটা বাজতেছে। জলদি চালা), টেক্সিওয়ালা ভড়কে গিয়ে টান দিল, আর মেহমানরা আস্তে সরে পড়লো। আর আমি মনে মনে হাঁপ ছাড়লাম নাটকটার শেষ দেখে। দেঁতো হাসি

এসব মেহমান নগর জীবনের নিত্য ব্যাপার হয়ে গেছে।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

অতিথি লেখক এর ছবি

২৬ বছর চলছে এই শহরে, তবে এমন ঘটনার স্বাক্ষী এখনো হতে পারিনি আমি। আফসোস্‌।
তবে, পরিচিত একজনের এমন একটি ঘটনা জানি আমি। সেটাই শেয়ার করছি।
পরিচিত সেই ভদ্রলোকও রিক্সায় ছিলেন এবং যথারীতি জ্যামের মধ্যে। সামনের রিক্সা থেকে ঘাড় কাত করে অপরিচিত এক যুবক সালাম দিলে তিনিও সশব্দে সালামের উত্তর দিলেন। এরপর সামনের রিক্সা থেকে দুজন যুবক নেমে তাঁর কাছে এগিয়ে এলে তিনি হাসিমুখে জানতে চান তাদের পরিচয়। উত্তরে ফিসফিস করে তাদের একজনের বলা কথাটা শুনেই উনি বাঁজখাই গলায় চিৎকার করে ওঠেন এই বলে, 'হারামজাদা, এই লাইনে নামছস্‌ আর উস্তাদরে চিনস্‌ না? আমার কাছে আইছস্‌ মাল খসাইতে? ধর্‌ হালার পোলাগো।' উনার এই প্রতিআক্রমণে দিশেহারা হয়ে যুবক দুজন পালিয়ে বাঁচে। উল্লেখ্য যে, এটা শুধুই ছিলো উনার একটি ট্রিক। বাস্তব জীবনে উনি একজন পরিবহন ব্যবসায়ী।

শুভেচ্ছা জানবেন তীরন্দাজ।
আযাচিত কোন তীর যেন আপনাকে লক্ষ্য না বানায়।

---------------------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।