অণোরণীয়ান থেকে মহতোমহীয়ান (১১)

তুলিরেখা এর ছবি
লিখেছেন তুলিরেখা (তারিখ: বুধ, ১১/১১/২০০৯ - ৩:২২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আগের পর্বে কথা হচ্ছিলো স্ট্রিং তত্ত্ব নিয়ে। কালাবি-ইয়াউ কমপ্যাক্টিফিকেশন অবধি এসেছিলো। প্রথমে কালাবি-ইয়াউ কমপ্যাক্টিফিকেশনকে অনন্য মনে হচ্ছিলো, মনে হচ্ছিলো মাত্র একভাবেই বুঝি গোটানো যায়। কালাবি-ইয়াউ স্পেসের ব্যাপারটা গাণিতিক ভাবে আগেই জানা ছিলো, যেহেতু গণিতজ্ঞেরা নিজেদের আদর্শ কাল্পনিক জগতে বাস করেন, প্রয়োগ নিয়ে মাথা ঘামান না, তাই ওনারা এ জিনিস প্রয়োগ কোথাও হতে পারে টারে বলে ভাবেন নি। পদার্থবিজ্ঞানীরা এদের কাজে লাগিয়েছেন স্ট্রিং এর বাড়তি মাত্রা গোটাতে।

যে দুজন গণিতজ্ঞের নাম অনুসারে এই গাণিতিক কৌশলের নাম (ইউজেনিও কালাবি আর শিং তুং ইয়াউ) তাদের একজন ইয়াউ সব শুনেটুনে বললেন আর মাত্র একভাবে কেন, বহুশত রকম ভাবে কমপ্যাক্টিফিকেশান হতে পারে। এখন আবার একেক ভাবে গোটালে একেকরকম কণা আর মিথস্ক্রিয়া সমূহ তৈরীর সম্ভাবনা দেখা দেয়। তাহলে কী জিনিস বা নিয়ম রয়েছে যা কিনা তিন সেট কণা আর চেনা মিথস্ক্রিয়াগুলো দেয়?

মনে রাখতে হবে আমাদের কণা-গবেষণাগারে যে তিন সেট কোয়ার্ক পাওয়া গেছে তারা হলো আপ ডাউন চার্ম স্ট্রেঞ্জ টপ বটম। আবার লেপ্টনও পাওয়া গেছে তিন সেট- ইলেকট্রন, মিউয়ন আর টাউ, সঙ্গে তাদের নিজেদের নিজেদের নিউট্রিনোগুলো। তাহলে রহস্যটা কী? কী সেই জটিল নিয়ম যা কিনা এই এদেরই তৈরী হতে শুধু সাহায্য করে, অন্য অনেক হাজার হাজার নানা ধরনের কোয়ার্ক আর লেপ্টন নয়?

একটা বিশেষরকম কালাবি-ইয়াউ কম্প্যাক্টিফিকেশন ঠিক এই তিন সেট কণা দেয়। এটাই কি তাহলে সঠিক পথ নাকি কাকতালীয়? কোনো কারণ নেই কেন একটা বিশেষ কম্প্যাক্টিফিকেশনই দেখা দেবে অন্য আরো হাজারো সম্ভাবনা থাকতে। বিরোধীরা রেগে গিয়ে বললেন সব গোঁজামিল, আগে থেকে উত্তর জানা থাকায় নানারকম কায়দাকৌশলে অঙ্ক মিলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রমাণ কোথায় যে ঐরকমটাই হয়?

এদিকে শুধু এই সমস্যাই তো না, আরো সমস্যা আছে। কোনোরকম কণা যদি নাও থাকে তাহলেও একেবার খটখটে শূন্য স্পেসও শূন্য নয়, আছে ভ্যাকুয়াম এনার্জী। এই শূন্য শুধু শূন্য নয় ব্যাপারটা খুব ঝামেলার, স্পেসের এই ভ্যাকুয়াম এনার্জী মহাবিশ্বকে হয় ত্বরিত গতিতে প্রসারিত করতে থাকে বা ত্বরিত গতিতে সঙ্কুচিত করতে থাকে(ভ্যাকুয়াম এনার্জী ধনাত্মক হলে প্রসারণ আর ঋণাত্মক হলে সঙ্কোচন )।

আইনস্টাইনের জেনারেল রিলেটিটিভিটির সমীকরণ একেবারে প্রথমে খুব ঝামেলায় ফেলেছিলো তাঁকে, সমীকরণ বলছিলো মহাবিশ্ব হয় প্রসারণশীল নয় তো সঙ্কোচনশীল হবে। তখন জানাও ছিলো না আমাদের মহাবিশ্ব প্রসারিত হচ্ছে, ত্বরণ তো জানা গেল আরো অনেক পরে। আইনস্টাইনের দরকার ছিলো স্থিতিশীল মহাবিশ্ব, যা কিনা প্রসারিত বা সঙ্কুচিত কিছুই হয় না। তো তিনি চটপট নিজের সমীকরণে একটা ধ্রুবক জুড়ে দিয়ে এই প্রসারণ-সঙ্কোচনের ঝামেলার হাত থেকে রেহাই পান। তিনি বললেন এই ধ্রুবক কাজ করবে অনেকটা ভ্যাকুয়াম এনার্জীর মতন, প্রসারণ সঙ্কোচনের সম্ভাবনাকে নাকচ করবে, মহাবিশ্বকে স্থিতিশীল রাখবে। তার মজার ব্যাপার হলো তাঁর এই ধ্রুবক জুড়ে মহাবিশ্বের স্থিতিরক্ষার কয়েক বছর পরেই জ্যোতির্বিজ্ঞানী হাবল আবিষ্কার করলেন আমাদের মহাবিশ্ব প্রসারিত হচ্ছে। শুনে আইনস্টাইন চটপট ধ্রুবক নিলেন সরিয়ে, বললেন, "আহা আগে তো জানা ছিলো না যে মহাবিশ্ব প্রসারিত হয়! এখন আর এই ধ্রুবকের দরকার নেই। আর গোলমাল কোরো না, যাও সবে নিজ নিজ কাজে।"

তারপরে ভালোই চলছিল, লোকে আরো নানা কিছু আবিষ্কার টাবিষ্কার করলো, জেনারেল রিলেটিভিটি আর কোয়ান্টাম মেকানিক্স দুই নিয়েই অনেক মাজাঘষা হলো, চমকপ্রদ সব সমাধান বেরিয়ে মাথা ঘুরিয়ে দিলো। কোয়ান্টাম ফিল্ড থিওরি এলো, কোয়ান্টাম ইলেকট্রোডাইনামিকস এলো, কোয়ান্টাম ক্রোমোমোডাইনামিকস এলো। এলো স্ট্যান্ডার্ড মডেল। ক্রমে স্ট্রিং থিওরি এলো।

এদিকে জেনারেল রিলেটিভিটি নিয়ে কাজ করতে করতে একখান সমাধান বের হয়েছিলো যাকে বলা হয় ব্ল্যাক হোল। মহাবিশ্বের স্থানকালে এমন এক বিন্দু যেখানে স্থানকালের বক্রতা হয়ে গেছে অসীম, যেখান থেকে কোনো খবরই আর আসতে পারে না, যাকে গণিতের ভাষায় বলে সিঙ্গুলারিটি। এইসব নিয়ে গবেষণা চললো অনেক, নানা চমকপ্রদ সব কান্ডকারখানা দেখা দিতে লাগলো। জেনারেল রিলেটিভিটির সঙ্গে সামান্য কোয়ান্টাম ফিল্ড থিওরির মিশেল দিয়ে স্টিফেন হকিং বললেন কোয়ান্টাম তত্ত্ব সত্য হলে ব্ল্যাকহোলের ঘটনাদিগন্তের পাশ থেকে বিকিরণ আসবে, সেই বিকিরণ হলো কণার স্রোত। হকিং রেডিয়েশন নাম দেওয়া হলো সেই বিকিরণের।

এদিকে সেই যে ধ্রুবক? আইনস্টাইন তাকে মুছে দিয়েছিলেন? সে ফিরে এলো কবর থেকে নতুন জীবন নিয়ে। তখন ১৯৯৮ সালে। জ্যোতির্বিদেরা আবিষ্কার করলেন আমাদের মহাবিশ্ব ত্বরিত গতিতে প্রসারিত হচ্ছে।

(চলন্ত )
ছবিসূত্র : আন্তর্জাল


মন্তব্য

তুলিরেখা এর ছবি

মন্তব্য নেই দেখে মনে হয় পাঠকদের লেখাটা পছন্দ হয় নাই। মনে হয় লেখাটা তেমন ভালো ও নয়, টেকনিকাল কচকচিই বেশী যদিও চেষ্টা ছিলো মোটামুটি গল্পের মতন বলারই। বুঝতে পারছি তা হয় নি। খুবই দুঃখিত। নীড়পাতার স্পেস আটকে রাখতে চাই না। সরিয়ে নিজের পাতায় নিয়ে যাবো আর কয়েক ঘন্টা পরে।
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

কৌশিক [অতিথি] এর ছবি

তুলি, আপনার লেখা খুজে খুজে পড়ি। ভাল লাগে। এটাও ভাল লাগল।

তুলিরেখা এর ছবি

ধন্যবাদ কৌশিক।
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

তুষার [অতিথি] এর ছবি

অনেকদিন পর আবার সচলকে গুতানোর টাইম পেলাম। আপনার লেখা পড়তে খুব ভাল লাগে। যদিও বুঝতে একটু সময় লাগে, তবে সেটা complex topic এর জন্য। কিন্তু পড়ে খুব ভাল লাগে তাই আগের গুলাও খুইজা খুইজা পড়লাম। থাইমেন না প্লীজ :)।

তুলিরেখা এর ছবি

আইচ্ছা, সে নাহয় নাই থামলাম,কিন্তু নীড়পাতা আটকাইয়া রাইখা তো লাভ নাই। বেশী কম্প্লেক্স জিনিস হইলে নিজের পাতায় রাখমু। হাসি
-----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

...অসমাপ্ত [অতিথি] এর ছবি

সবকিছুই যে বুঝেছি এমন নয়... তবে ভ্যাকুয়াম এনার্জীর ধারণাটা পরিস্কার হল না একেবারেই।

কোনোরকম কণা যদি নাও থাকে তাহলেও একেবার খটখটে শূন্য স্পেসও শূন্য নয়, আছে ভ্যাকুয়াম এনার্জী।

....তবে আপনার সিরিজটার নিয়মিত পাঠক হলাম।

তুলিরেখা এর ছবি

হ্যাঁ কোয়ান্টাম ফিল্ড থিওরি অনুসারে একেবারে শূন্য স্থানেও অতি ক্ষুদ্র সময়ের জন্য কণা-প্রতিকণা জোড় তৈরী হয় আর মিলিয়ে যায়। শূন্য শুধু শূন্য নয়, অসংখ্য রকমের কণার সম্ভাবনায় পরিপূর্ণ।
শুধু তাত্ত্বিক ব্যাপার না, এক্সপেরিমেন্টেও ধরা যায়। ল্যাম্ব শিফট, কাসিমির এফেক্ট --এইসব এই ভ্যাকুয়াম এনার্জীর জন্যই তো।
----------------------------------------------
কোন্‌ দূর নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।