নৈরঞ্জনা(৫)

তুলিরেখা এর ছবি
লিখেছেন তুলিরেখা (তারিখ: রবি, ০৮/০৭/২০১৮ - ৭:৪৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

৫।
"সবুজবীথি" থেকে বার হয়ে আবার একটা ছায়াশীতল রাস্তা, সেই রাস্তা দিয়ে গিয়ে পৌঁছলাম একটা বড়ো দিঘির কাছে, নির্জন ঘাটের কাছে ছায়া মেলে দাঁড়িয়ে আছে এক মস্ত ঝুরি নামানো বট। বটের ছায়ায় বসলাম সবাই।

ডক্টর আদিত্য বললেন, "এই দিঘিটা খুব প্রাচীন, সেই বিষ্ণুযশের আমলের। এর নাম হেমাইদিঘি। এর একটা খুব অদ্ভুত ইতিহাস আছে। কিংবদন্তীও বলা যায়। এই দিঘি যখন কাটা হয় তখন নাকি কিছুতেই জল উঠছিল না, অনেক শান্তি স্বস্ত্যয়ন করেও কিছু হল না। শুকনো গর্ত পড়ে রইলো। তারপরে নাকি কোন এক জ্যোতিষী বললেন একটি অষ্টম-গর্ভের সন্তান উৎসর্গ করলে নাকি জল আসবে। এক দরিদ্র দম্পতির অষ্টম সন্তান হেমা বলে একটি বারো বছর বয়সের মেয়েকে নাকি বলি দেওয়া হয় শুকনো দিঘির মধ্যে নিয়ে, তারপরেই নাকি হু হু করে জল উঠে দিঘি ভর্তি হয়ে যায়। সেই থেকে নাম হয় হেমাইদিঘি। "

অবাক হয়ে শুনছিলাম, আড়চোখে কাশ্মীরার দিকে চেয়ে দেখি ওর চোখে জল চিকচিক করছে। ডক্টর আদিত্য বললেন, "মনে হয় ব্যাপারটা পুরোপুরি সত্যি না। হয়তো দিঘি শুকনো ছিল অনেককাল, হয়তো হেমা বলে কেউ সত্যিই মারা গিয়েছিল অন্য কোনো ঘটনায়, এদিকে হয়তো কোনোভাবে দিঘি পূর্ণ হয়েছিল জলে, বর্ষার জলে বা মাটির নিচের কোনো জল-উৎসের মুখ থেকে বাধা সরে যাওয়ায়। তারপরে এই দুই ঘটনা মিলে গিয়ে মানুষের মুখে মুখে গড়ে ওঠে গল্প।"

কাশ্মীরা দিঘির কালো জলের চোখ রেখে কেমন আচ্ছন্নের মতন বলে, "কেন শুধুই গল্প বলে ভাবছেন? সেই অত পুরনো আমলে তো এইরকম মানুষ উৎসর্গ করা হত,নানারকম ধর্মীয় ব্যাপারে বা নানাধরণের গোপণ প্রথা হিসেবে, তাহলে দিঘিতে জল আনার জন্যই বা কেন করা হবে না? দরিদ্র মানুষেরা তো তখন ছেলেমেয়ে বিক্রিও করতো শুনেছি দুর্ভিক্ষের সময় বা অন্য কোনো কঠিন সময়ে। হয়তো এখানেও সেরকম কিছু-"

ডক্টর আদিত্য হাসলেন, বললেন, "আরে কাশ্মীরা তুমি দেখছি খুব সিরিয়াসলি নিয়েছ ব্যাপারটা। সত্যিই, নিশ্চিত করে জানার তো উপায় নেই, এ তো প্রামাণ্য ইতিহাস নয়, মৌখিক একধরণের সমান্তরাল ইতিহাস বলা যায়। তবে তোমাদের আরেকটু আশ্বস্ত করতে পারি কিংবদন্তীর বাকীটা বলে। এই গল্পের আরেকটু অংশ আছে। হেমা বলে সেই মেয়েটির মা নাকি সেই জ্যোতিষীর কাছে গিয়ে বলেন উৎসর্গীকৃতা কন্যা তাঁকে স্বপ্নে দেখা দিয়ে বলেছে যে সে বেঁচে আছে। দিঘির নিচে নাকি পাতালগুহা আছে, সেই গুহার মধ্যে সে আছে এক দেবীর সঙ্গে। সামনের অমাবস্যার মধ্যরাতে ঐ দিঘিতে ডুব দিয়ে এক ডুবে নিচে পৌঁছলে মণিরত্নময় সেই গুহার মুখ খোলা পাওয়া যাবে। গুহার অন্য মুখ অনেক উঁচুতে, সেই মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসতে পারবে তারা। কিন্তু মন্ত্রসিদ্ধ ব্যক্তিই কেবল যাবার অধিকারী। জ্যোতিষী মন্ত্রসিদ্ধ, তিনিই একমাত্র যেতে পারেন। এখন যদি তিনি করুণা করে গিয়ে কন্যাটিকে উদ্ধার করে আনেন। "

একটু থামেন ডক্টর আদিত্য, কাশ্মীরা এখন দিঘির দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বড়ো বড়ো করে চোখ মেলে চেয়ে আছে ডক্টর আদিত্যের দিকে, উনি থেমে গেলে সে অস্ফুটে বলে, "তারপর?"

" তারপর আর কী? মিলনান্ত কাহিনীতে যেমন হয়, তেমন হল। জ্যোতিষী মহাশয় অমাবস্যার মধ্যরাত্রে দিঘিতে ডুব দিয়ে সেই পাতালগুহায় পৌঁছলেন আর ভিতরে পেলেন সেই হেমাকে। সে সেখানে মহাসুখে আছে দেবীর কাছে। দেবীকে প্রসন্ন করে হেমাকে নিয়ে গুহার অন্য মুখ দিয়ে বার হয়ে এলেন জ্যোতিষীমহাশয়, সঙ্গে প্রচুর ধনরত্নও আনলেন। তারপরে হেমা তার নিজের ভাগের ধনরত্ন নিয়ে নিজের দরিদ্র বাবামায়ের কাছে ফিরে গেল, সকলে সুখে শান্তিতে বাস করতে লাগলো। ঐ ফেয়ারি টেলে যেমন হয়, লিভড হ্যাপিলি এভার আফটার।"

গল্প শেষ করে হা হা করে হাসতে লাগলেন ডক্টর আদিত্য। তারপরে হাসি থামিয়ে বললেন, "এইবারে বলো,এইসব কিংবদন্তী নয় তো কী?"

এবারে কাশ্মীরাও হাসলো, বললো, "সুন্দর গল্প। আর কোনো গল্প নেই এই দিঘি নিয়ে? এরকম নির্জন কেন দিঘি? কেউ জল নিতে কি স্নান টান করতে আসে না?"

ডক্টর আদিত্য একটু চুপ করে রইলেন দিঘির জলের দিকে চেয়ে, তারপরে আস্তে আস্তে বললেন, "আগেকার দিনে হয়তো স্নান টান করতো লোকে এই দিঘিতে। এখন তো রানিং ওয়াটার সাপ্লাই প্রত্যেকের বাড়ীতে, এখন আর কেনই বা দিঘিতে আসবে?চলো হে, এইবারে ওঠা যাক। দুপুরের খাওয়াদাওয়ার সময় হয়ে এলো। তোমাদের স্নান টান কি সকালেই হয়ে গিয়েছে নাকি করবে? আমার আবার খাবার আগেই স্নানের অভ্যাস।"

আস্তে আস্তে বললাম, "চলুন ওঠা যাক তবে। আমার তো স্নান হয়ে গিয়েছে ভোরে।"

কাশ্মীরা উঠে দাঁড়িয়েছিল ইতিমধ্যে, বললো, "আমারও স্নান হয়ে গিয়েছে ভোরেই। চলুন যাওয়া যাক। "

তিনজনে চলতে থাকি, প্রথমে ডক্টর আদিত্য, তারপরে কাশ্মীরা, তারপরে আমি। যেতে যেতে একবার মুখ ফিরিয়ে দিঘিটাকে দেখলাম, গা কেমন শিরশির করে উঠলো। বড্ড বেশী মনে পড়িয়ে দেয় নিস্তারিণী পুকুরের কথা। আহ, সেই স্মৃতি আমি ভুলতে চাই, ভুলতে চাই। অথচ বারে বারে নানা রূপে হানা দেয়। আমি পালাতে চাই, পালাতে পারি না। ওহ, মনাই, কেন তুই-

এই দিঘির পাড়ে আর বেশীক্ষণ থাকলে হয়তো আমি এমন কিছু করে বসতাম বা বলে বসতাম যা সামলানো কঠিন হত। ভালোই হয়েছে ফিরে যাবার প্রস্তাব ডক্টর আদিত্যই করলেন বলে।
জোর করে মনকে সংযত করে ফিরতে থাকি আস্তে আস্তে। কাশ্মীরা একসময় পিছনে তাকিয়ে আমাকে অনেকটা পিছিয়ে পড়তে দেখে অবাক হয়ে যায়। থেমে পড়ে। বলে, "কী হলো আবীর? "

আমি গতি বাড়িয়ে ওর কাছে পৌঁছলে ও বলে, "কী হলো অত আস্তে হাঁটছিলে কেন? শরীর খারাপ লাগছে নাকি?"

আমি জোর করে হেসে বলি, "আরে নাহ। আসলে এই এত সবুজ, এমন রোদ্দুর ছায়া,এমন সুন্দর হাওয়া দিচ্ছে-এইসব কেমন নস্টালজিক করে দিল হঠাৎ। তার উপরে ঐসব অদ্ভুত কিংবদন্তী গল্প।"

ডক্টর আদিত্য অনেক এগিয়ে গিয়েছিলেন, আমাদের অনেক পিছিয়ে পড়তে দেখে ওখান থেকেই চেঁচিয়ে বললেন, " কী হলো তোমাদের?"

আমি চেঁচিয়ে বলে দিলাম, "আপনি বাড়ি চলে যান । আমাদের তো স্নান হয়েই গিয়েছে। আমরা আস্তে আস্তে প্রাকৃতিক শোভা দেখতে দেখতে এগোই। ভাববেন না, দুপুরের খাওয়ার জন্য ঠিক সময়ে পৌঁছে যাবো।"

উনি হা হা করে হেসে বললেন, "ঠিক আছে। আমি তাহলে এগোই। তোমরা কিন্তু দেরি কোরো না।" বলেই হনহনিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলেন।

কাশ্মীরা বলে, "সত্যিই আবীর, আদিত্যনগর এক আশ্চর্য ব্যাপার । আমার কল্পনাতেও ছিল না এরকম একটা জায়গায় ডক্টর আদিত্যের বাড়ি। পুরো যেন ইতিহাসের মধ্যে ঢুকে পড়েছি। ডাইনে বাঁয়ে ইতিহাস আর কিংবদন্তী। থ্যাংক্স আবীর, আমাকে এখানে নিয়ে আসার জন্য।"

আস্তে করে বলি "ধন্যবাদের কী আছে মীরা, আমাদের আসা তো একটা প্রয়োজনেই।"

কাশ্মীরা আমার কন্ঠস্বরের নিরুত্তাপ উদাসীনতা বুঝতে পারে। নরম গলায় বলে, "কী হয়েছে তোমার? ঐ দিঘির ওখান থেকেই দেখছি কেমন যেন ডিপ্রেসড লাগছে তোমায়। কী হয়েছে?"

আমি মাথা দু'দিকে নাড়িয়ে যেন ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে দিতে চাই স্মৃতিবেদনা,অনাবশ্যক জোর দিয়ে বলি, "কিচ্ছু হয় নি আমার। মীরা, কবিতা শুনবে?"

ও অবাক হয়ে চেয়ে থাকে। ওর সম্মতির অপেক্ষা না করেই আমি শুরু করে দিই,
“ এই এখানে বৃষ্টি লিখি ঐ ওখানে রোদ
এই ঝগড়ার ঝড় ওঠে তো ঐ সব শোধবোধ।
এই এখানে একলা দুপুর দিঘির পাড়ে চুপ
ঐ ওখানে সন্ধ্যাবেলায় দীপের পাশে ধূপ।
এই লিখেছি নীল আকাশে উড়ছে রঙীন ঘুড়ি
আবার লিখি রথের মেলায় লালনীল সব চুড়ি।
আবার লিখি চোখ চলে যায় নীলসাগরের শেষে
ঐ যেদিকে সূর্য নামে রঙরাখালের দেশে।
এই তো লিখি রাত হয়েছে তারায় তারায় ভরা
ঐ তারাদের মধ্যে কোথায় হারানো সেই তারা?
বাড়ির ভিতর অচিনঘরে অচেনা সেই সুর
এত এত কাছেই সে ঘর আবার অনেক দূর! ”

কাশ্মীরা ঝিকমিকে হাসি হেসে বললো, "বাহ, সুন্দর। তুমি কি মুখে মুখে বানালে নাকি এখনই?"

আমি মাথা নাড়াই, বলি, "না, অনেকদিন আগের কবিতা। একজন আমায় বলেছিল। হঠাৎ মনে পড়ল। "

গাছের পাতার ছায়াজাল আঁকা রোদ্দুরের মধ্য দিয়ে হাঁটতে থাকি আমরা। একজোড়া কাঠবেড়ালী খেলা করছিল একটা আমগাছের গোড়ায়, আমাদের দেখে তরতর করে গাছে উঠে পড়লো।

কাশ্মীরা আনমনে বলে, "ঐ দিঘির গল্পটা আশ্চর্য। আমি যেখানে জন্মেছিলাম, জীবনের প্রথম দশ বছর যেখানে ছিলাম, সেই গ্রামেও এরকম একটা দিঘি ছিল। সেই দিঘির গল্পটাও অনেকটাই এরকম। কী অদ্ভুত, না?"

ওহ, আবার সেই দিঘি! যতবার ওটার প্রসঙ্গ থেকে দূরে যেতে চাই, ততবার ওটাই দেখি এসে পড়ে। কথা ঘোরানোর জন্য বললাম, "ঐ গ্রাম থেকে তারপরে বুঝি শহরে চলে এসেছিলে তোমরা? তোমার লেখাপড়ার সুবিধের জন্য? ভালো স্কুলে ভর্তি হলে শহরে?"

প্রসঙ্গ বদলে যাওয়ায় কাশ্মীরা একটু অবাক হয়, তারপরে বলে, "নাহ, আমরা গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলাম। আমাদের গোটা পরিবার। শুধু আমাদের পরিবারই না, প্রতিবেশী পরিবারগুলোও। সে এক বিরাট কাহিনি। থাক এখন সেকথা। পরে কখনো সুযোগ এলে বলবো।"

ডক্টর আদিত্যের বাড়ীর কাছাকাছি এসে গিয়েছিলাম, আরেকটু এগিয়েই বাড়ীর ফটক। তারপরে লম্বা রাস্তা বাগানের মধ্য দিয়ে, তারপরে বাড়ীর সম্মুখ বারান্দা। বারান্দাটাও চমৎকার, দুটো মস্ত বড়ো বড়ো দোলনা-চেয়ার বারান্দায়। বারান্দা ঘিরে ঝোলানো টবে কত যে ফুলের গাছ আর লতা!

বারান্দায় উঠে দোলনা চেয়ারে বসলাম। কাশ্মীরা বসল না, আলতো পায়ে ঘুরতে ঘুরতে গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে ঝোলানো টবের ফুল-পাতায় আলতো আলতো হাত বোলাতে লাগলো। আমি চুপ করে বসে দেখছিলাম আর শুনছিলাম। কাশ্মীরার গানের কথাগুলো একদম অচেনা আমার কাছে, কিন্তু কী আশ্চর্য করুণ গানের সুরটা ! শুনতে শুনতে আমি চোখ বুজে ফিরে যাচ্ছিলাম অন্য এক স্থানে, অন্য এক কালে।

ডক্টর আদিত্যের সর্বক্ষণের গৃহসহায়ক মনোহর, যাকে উনি মনোহরদা বলে ডাকেন, এসে আমাদের ডাকলেন, "দিদিমণি, দাদাবাবু, আপনারা ভিতরে আইসে বসেন গো। স্যর এই আইলেন বইল্যা।"
আমরা ভিতরে ঢুকে বসার ঘরের সোফায় বসি। পাশের নিচু টেবিলে পত্রপত্রিকার স্তূপ, তার থেকেই একটা তুলে নিয়ে আলগা চোখ বোলাতে থাকি।

সদ্যস্নাত, পাটভাঙা পাজামা-পাঞ্জাবি পরা ডক্টর আদিত্য এলেন মিনিট পাঁচেক পরেই। চমৎকার লাগছিল ওঁকে। বয়সের ছাপ একেবারেই পড়েনি শুধু মাথার চুল কিছুটা লবণমরিচ হওয়া ছাড়া। এত এত হৃদয়বিদারক অভিজ্ঞতার কোনো চিহ্নও নেই ওঁর যুবকের মতন টানটান মুখে। সময় যেন সাবধানে একটু একটু হাত বুলিয়ে বয়ে গিয়েছে ওঁর চারপাশ দিয়ে।

কাশ্মীরাও আমারই মতন মুগ্ধচোখে তাকিয়ে ছিল ওঁর দিকে, উনি হা হা করে হেসে বললেন, "আরে কী হল? তোমরা কি প্রথম দেখছো নাকি আমায়?"

সম্বিৎ ফিরে পেয়েই হাতের ম্যাগাজিনে নজর দেবার চেষ্টা করি।

ডক্টর আদিত্য বলেন, "রুদ্র আসছে আর একটু বাদেই। এইমাত্র ফোন করেছিল। ওর জন্য অপেক্ষা করি একটু?"

এই কথা বলতে বলতেই ডাইনিং এর দিকে গিয়ে ওঁর পাচক প্রসন্নকে বলে এলেন, "প্রসন্নদা, তুমি তাহলে টেবিলে খাবার দিতে থাকো। আমরা বসবো আর কিছুক্ষণ পরেই।" নির্দেশ দিয়ে ফিরে এসে সেদিনের খবরের কাগজটি নিয়ে বসলেন সোফায়।

রুদ্রদীপ এসে পৌঁছল মিনিট দশেক পরে। সেও সদ্যস্নাত, পাটভাঙা জামাকাপড় পরা, একদম ফ্রেশ।

খাবার টেবিলে আমরা চারজন বসলাম, যত্ন করে হাসিমুখে পরিবেশন করছিলেন প্রসন্নদা। এঁর নামটি সার্থক, মুখে হাসিটি লেগেই আছে। আর রান্না? সে অপূর্ব! এই আদিত্যনগরে যতবার এসেছি ততবারই এই প্রসন্নদার রান্না আমার কাছে মনে হয়েছে ঈশ্বরের আশীর্বাদ।

সবাই সুগন্ধী চালের ভাত, বেগুনভাজা, ঝুরি ঝুরি করে কাটা আলুভাজা,মাছের মাথা দিয়ে মুগের ডাল, সজনে ডাঁটা-টোম্যাটো-আলুর তরকারি, মাখোমাখো ঝোলওয়ালা বেশ ঝালঝাল মুরগীর মাংস, চাটনি, দই, মিষ্টি সবকিছু দিয়ে দুপুরের খাওয়া খেলাম!

এই পরিবেশে যতবার আসি, কেমন একটা পারিবারিক জীবনের স্নেহস্পর্শ যেন পাই। সেই ভুলে যাওয়া শৈশব-কৈশোর, সেই স্কুল কলেজের দিনগুলো মনে পড়ে। সেইসব দিনে, সোম থেকে শনিবার পর্যন্ত স্কুল কলেজ আফিস সব খোলা থাকতো,শুধু রবিবারে ছুটি থাকতো। রবিবারের দুপুরের খাওয়াগুলো এরকমই ভরপুর আয়োজনের হতো। মাসীর রান্নার হাতটিও ছিল ভারী চমৎকার! কোথায় চলে গেল সেইসব দিন!

একটা ঝড় যেন আমাকে উড়িয়ে নিয়ে ওসব থেকে কতদূরে ফেলেছে, তারপরে ক্রমাগতই একটার পর একটা নতুন ঝড় এখান থেকে ওখানে আছড়িয়েছে। শান্ত,স্নিগ্ধ কোনো আশ্রয় আর জোটেনি তারপর।

(চলমান)


মন্তব্য

আয়নামতি এর ছবি

গপাং করে নিলেম গল্পটা পাওয়া মাত্রই। গ্যাপ পড়ায় ঘটনার সূত্রের খেই ধরতে আগের পর্বে গিয়ে উঁকি দিয়ে নিয়েছি।

তুমি এই গল্পের ভাষাটা একটু অন্যভাবে লিখছো কী দিদি? তোমার ভাষায় আলগা এক ধরনের মায়া থাকে, যা পড়লেই বোঝা যায় এইটা 'তুলিরেখা'র লেখা। এই গল্পটায় আরেক তুলিরেখাকে পাওয়া যাচ্ছে যেন। ভালো লাগছে পড়ে, বুঝলে!

তাড়াহুড়োতে কিছু টাইপো থেকে গেছে দিদি।
আর এই লাইনটায় কাশ্মীরা হবে না? দেখো তো একটু " আমি গতি বাড়িয়ে ওর কাছে পৌঁছলে ও বলে, "কী হলো এত আস্তে হাঁটছ কেন?শরীর খারাপ লাগছে নাকি?" ফার্স্ট হবার জন্য মিষ্টিমণ্ডা কিছুমিছু দিবা না দিদি? দেঁতো হাসি

তুলিরেখা এর ছবি

লুচি আর ঘুগনি নাও। হাসি

"হাঁটছিলে" করে দিলাম ওখানে।

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

সোহেল ইমাম এর ছবি

পড়ছি, চলুক লেখা। চলুক

---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।

তুলিরেখা এর ছবি

ধন্যবাদ। আপনারা পড়লে তবেই তো লেখা সার্থক! হাসি

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

সুমন চৌধুরী এর ছবি

চলুক।

পর্তেছি।

তুলিরেখা এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ ।

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

অতিথি লেখক এর ছবি

পড়ছি, পড়ছি-----তারপর "চলমান" । চলুক।
সিল্ককটন

তুলিরেখা এর ছবি

হ্যাঁ, ধারাবাহিক তো। হাসি

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।